আপনি যদি বাজারে আসা নতুন লেটেস্ট আইফোন, পিক্সেল এবং স্যামসাং ডিভাইস সমূহ ব্যবহার করে থাকেন তাহলে আপনি স্মার্ট ফোনের মধ্যে একটি অপশন থাকে সেটি সম্পর্কে আপনি হয়তো জানেন না। তা হচ্ছে ই- সিম (E-SIM) কার্ড।
ই-সিম কার্ড হচ্ছে ট্র্যাডিশনাল সিম কার্ডের স্মার্ট বা নতুন ভার্সন। যেখানে ডিভাইসের মাদারবোর্ডের সাথে আগে থেকে লাগানো থাকে। যেমন আপনি দেখতে পারবেন আপনার স্মার্টফোনে এনএফসি লাগানো আছে।
বাজারে নতুন আইফোন, পিক্সেল, স্যামসাং ইত্যাদি লেটেস্ট ফোনগুলো আগের সকল স্মার্টফোন থেকে বা আগের অন্যান্য ফোনের চেয়ে সম্পূর্ণ আলাদা। কেননা এই স্মার্ট ফোন গুলোতে গ্রাহকরা প্রথমবারের মতো পাবেন নতুন ডুয়েল সিম কার্ডের ব্যবহার।
কিন্ত এর থেকে বড় সুবিধা হচ্ছে আইফোন ইউজাররা ব্যবহার করতে পারবেন ডুয়েল সিম কার্ডের ব্যবহার। আইফোনে থাকবে ফিজিক্যাল সিমের পাশাপাশি ই-সিম ব্যবহার করার সুবিধা। এই দুটি সিমের নাম্বার থাকবে সম্পূর্ণ আলাদা আলাদা। যেখানে ইউজার পাবেন সম্পূর্ণ দুটি আলাদা কানেকশন।
এই সব নতুন প্রযুক্তি খুব তারাতারি জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। তবে আর জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি পাবে যখন এই স্মার্টফোন গুলাে আরো মিড রেঞ্জে বা মিডিয়াম কম দামের ফোনে এই ই-সিম (SIM CARD) এর সাপোর্ট দেখা যাবে বাজারে।
এখন হইতো আপনি প্রশ্ন করবেন ই-সিম কার্ড কি, কিভাবে কাজ করে এবং এটি কতটা ভালো আর এটার কি কি সুবিধা এবং অসুবিধা আছে। তো আজ আপনি এই পোস্টের মাধ্যমে জানতে পারবেন যে ই-সিম কার্ড কি। চলুন তাহলে দেখে নিয়া যাক;
ই-সিম কার্ড কি (E-SIM CARD)
ই-সিম কার্ড এর পূর্ণরুপ হচ্ছে এম্বেডেড সিম কার্ড (Embedded SIM Card)। ই-সিম হচ্ছে ডিজিটাল এম্বেডেড সিম কার্ড (Embedded SIM Card)। আপনার ফোনে থাকা ট্রাডিশোনাল সিম কার্ডটি যেভাবে যে প্রযুক্তিতে কাজ করে আপনার ফোনকে সেল নেটওয়ার্কের সাথে কানেক্ট করে থাকে ঠিক একইভাবে ই-সিম কার্ড ও একই স্টাইলে কাজ করে থাকে। ই-সিম (E-SIM CARD) গুলো সাধারণ যেকোন সিম কার্ডের থেকে ১০ গুণ ছোট হয়ে থাকে।
এই সিম কার্ড গুলাে অন্যান্য সিম কার্ডের মতো করে ফোনে ভরানো হয় না বরং যেখানে স্মার্ট ফোনগুলো তৈরি করা হয় সেখানে মাদারবোর্ডের সাথে এক সঙ্গে সংযুক্ত করে লাগানো হয়ে থাকে। তাই জন্য এই সিম কার্ডকে স্মার্ট ফোনের হার্ডওয়্যারের মধ্যে ধরা হয়। আর হ্যাঁ এই ফোনটির সিম কার্ড কে বাহির করা যায় না সম্ভব না।
আইফোন এক্সএস এবং আইফোন এক্সেএস মাক্স এ এই প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে এবং আইফোন ১১ এবং আইফোন ১১ প্রোতে এই ই-সিম কার্ড ব্যবহার করা হয়েছে। পিক্সেল৩, পিক্সেল৩ এক্সএল এবং নতুন পিক্সেল৪ এবং পিক্সেল এক্সএল ৪ স্মার্টফোনে এই ই-সিম সাপোর্ট করে।
এই সিম কার্ড টি খোলা ও লাগানোর প্রয়োজন পরে না। অর্থাৎ এই সিম কার্ড এর নাম্বার আপনি পরিবর্তন করতে পারবেন না বা এক অপেরাটর থেকে অন্য অপেরাটরে মুভ করতে পারবেন না। এই পদ্ধতি ভার্চুয়াল রি-রাইটেবল এর মানে এটি ইচ্ছা মতো আলাদা আলাদা সিম রাইট করতে পারবেন এবং আগের সিম আপনি আনইন্সটল করতে পারবেন। অর্থাৎ ই-সিম কার্ড (E-SIM CARD) লাগানো আরও বেশি সহজ।
এর জন্য আপনাকে অপেরাটর কাস্টমার কেয়ারে যেতে হবে না আপনাকে নতুন কোন ফিজিক্যাল সিম কার্ড কিনে আনতে হবে না। আপনি শুধু কল করে বা অপেরাটরে কোন অ্যাপ ডাউনলোড করে নতুন সিম রেজিস্টার করতে পারবেন এমনকি ফোনের সাথে সেট করে নিতে পারবেন। এই ই-সিম কে সাধারণত বিশেষ করে ফোন ডুয়েল সিম ফিচার চালু করার জন্য ব্যবহার করা হয়। অর্থাৎ এই সিম কে ট্র্যাডিশনাল সিম কার্ডের রিপ্লেস হিসেবে ব্যবহার করা হয়।
আইফোন, পিক্সেল, স্যামসাং ফ্লাগশিপ প্রিমিয়াম ফোন গুলোতে সাধারণত একটি করে ফিজিক্যাল সিম কার্ড সাপোর্ট থাকে। তাই জন্য এই ফোন গুলোতে ই-সিম (E-SIM) ব্যবহার করে ডুয়েল সিম এর সুবিধা গ্রহন করা যায়। বর্তমানে বিশ্বে প্রায় সকল মোবাইল কোম্পানি গুলা ই-সিম সাপোর্ট করে থাকে।
আমাদের পাশের দেশ ভারতে ক্যারিয়ার ই-সিম ব্যবহার করে। তবে আপনার যদি আইফোন ১১, পিক্সেল, স্যামসাং ফ্লাগশিপ ফোন গুলাে থাকে আর যদি আপনার মোবাইল অপেরাটর সাপোর্ট করে করে তাহলে আপনি ই-সিম (E-SIM) কার্ড ব্যবহার করতে পারবেন।
ই-সিম (E-SIM) কিভাবে কাজ করে
ই-সিম কার্ড স্মার্টফোনের হার্ডওয়্যারের একটি অংশ। আর আপনি অপেরাটর প্রোফাইল ডাউনলোড না করা পর্যন্ত এটি অ্যাক্টিভেট হবে না। এত দিন পর্যন্ত আইফোনে স্মার্টওয়াচ কানেক্ট করার জন্য ব্লুটুথ ব্যবহার করা হতো, কিন্ত ই-সিম (E-SIM) এর কারণে স্মার্টওয়াচ, ফিটনেস ব্যান্ড, বা যেকোন ওয়্যারয়েবল ডিভাইস সরাসরি মোবাইল নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে আপনি আপনার ফোন ব্যবহার করতে পারবেন। অর্থাৎ যে নাম্বার আইফোনে দেয়া আছে সেই একই নাম্বার আপনি অ্যাপল ওয়াচ ব্যবহার করতে পারবেন।
ই-সিম(E-SIM) এর সুবিধা
আইফোন এক্সএস এবং এক্সএস মাক্স ফোন দুটি অ্যাপলের প্রথম দুটি ডুয়েল স্মার্টফোন। এই দুটি সিমে এক সাথে দুটি কোম্পানির দুটি আলাদা নাম্বার ব্যবহার করা যাবে। স্মার্টফোন দুটি সিম স্ট্যান্ডবাই মোডে থাকবে এর ফলে এক সাথে ফোন দুটি কল চলে আসলে তা রিসিভ করা এবং ডায়াল করা যাবে। আইফোন এক্সএস এবং এক্সএস মাক্স এ দুটি সিম এর সুবিধা থাকবে ঠিকই কিন্ত ফোন শুধু একটি সিম কার্ড ভরতে হবে আর একটি সিম ভরতে হবে না। কারন ফোনে আগে থেকে একটি সিম কার্ড ভরা থাকবে।
ই-সিম (E-SIM) এর প্রথম সুবিধা হলো এটি অনেক ছোট সাইজের, আমরা জানি ন্যানো সিম কার্ড খুব ছোট কিন্ত এই ই-সিম কার্ড তার থেকে ৩ গুণ ছোট। অর্থাৎ ন্যানো সিম কার্ড এর থেকে ই-সিম কার্ড ৩ গুণ ছোট এবার আপনি কিছুক্ষণ চিন্তা করুন যে তাহলে এই ই-সিম E-SIM কার্ড কত ছোট।
ই-সিম E-SIM কার্ড ফোনের মাদারবোর্ডের সাথে লাগানো থাকে বিধায় ফোনটিতে অনেক যায়গা ফাকা হয় বা স্পেস বাচানো সম্ভব হয়। যার ফলে ফোন ব্যাটারি আরও বড় লাগানো সম্ভব হয় এবং আলাদা অনেক যন্ত্রপাতি লাগাতে সুবিধা হয়।
ই-সিম কার্ড খোলার জন্য আপনাকে বা ইউজারকে সাথে করে ক্লিপার নিয়ে ঘুরতে হবে না। আর ফোনে সিম নেই তো সিম খোলার কথা আছে কই থেকে। আপনি যদি কখন ও দেশের বাহিরে ঘুরতে যান তাহলে ই- সিমের মাধ্যমে সেখানকার লোকাল সিমের নাম্বার নিতে পারবেন। ই-সিম কার্ড বা ফ্ল্যাগশিপ ফোন আপনি সহজেই ওয়াক এবং পার্সোনাল আলাদা করতে পারবেন।
ভারতে ই-সিম ব্যবহার
আইফোন নির্মাতা অ্যাপল বলে দিয়েছে ভারতে শুধুমাত্র দুটিমাত্র টেলিকম কোম্পানি এয়ারটেল এবং রিয়ালেন্স জিও। এই দুটি টেলিকম কোম্পানি আইফোন এক্সএস এবং এক্সএস ম্যাক্স এর ই-সিম ফিচার সাপোর্ট করবে। রিয়ালেন্স জিও ও ইয়ারটেল আগে থেকে ভারতে অ্যাপল ওয়াচ সিরিজ ৩ বিক্রি করে আসছে। অ্যাপল এই সিরিজ ৩ ওয়াচে ফোন ছাড়া আপনি কল রিসিভ করতে পারবেন।
ই-সিম (E-SIM) কার্ড এর অসুবিধা
ই-সিম কার্ড এর বড় অসুবিধা হচ্ছে আপনি ফোন পরিবর্তন করলে ফিজিক্যাল সিমের মত জাস্ট এক ফোন থেকে অন্য ফোন সিম পরিবর্তন করতে পারবেন না। যদি আপনার স্মার্ট ফোনটি নষ্ট হয়ে যায় কিন্ত আপনি চাচ্ছেন যে এই সিমটি খুলে অন্য আরেকটি ফোন লাগাবেন কিন্ত আপনি এই কাজটি করতে পারবেন না।
আপনি যদি চান সিম খুলে আপনি আপনার মডেমে লাগাবেন বা অন্য কোন ডিভাইসে লাগাবেন কিন্ত আপনি সেই কাজটি ই-সিম কার্ডের দারা করতে পারবেন না। ভবিষ্যৎ এ যদি ই-সিম বেশি জনপ্রিয়তা লাভ করে সেক্ষেত্রে আর নতুন টেকনোলজি আসতে পারে তখন ই-সিম কে এক ফোন থেকে অন্য ফোনে ট্রান্সফার করা যাবে। তখন হয়তো জাস্ট কিউআর কোড স্কান করে সিম অন্য ফোনে ট্রান্সফার হয়ে যাবে। তবে এই ক্ষেত্রে আরেক সিকিউরিটি দেখা যাবে।
বর্তমানে যে দেশ গুলোতে ই-সিম সুবিধার আইফোন ব্যবহার করা যাবে
- অস্ট্রিলিয়া
- কানাডা
- ক্রোশীইয়া
- ভারত
- স্পেন
- যুক্তরাজ্য
- যুক্তরাষ্ট্র
- চেজ রিপাবলিক
- জার্মানি
- হাঙ্গেরি
- বাংলাদেশ
তো আজ এই ছিল আমার কাছে ই-সিম (E-SIM CARD) নিয়ে বিস্তারিত। আর আমি বলতে পারি ই-সিম হচ্ছে ভবিষ্যৎ আর এমন মতবাদ জানিয়েছেন ব্যবহারকারীরা। আর এই ই-সিম নিয়ে আপনার কি মতামত নিচে কমেন্ট বক্সে কমেন্ট করে জানিয়ে দিন। আর হ্যাঁ পোস্টটি ভালো লাগলে অবশ্যই শেয়ার করে আপনার বন্ধুবান্ধবকে দেখার সুযোগ করে দিন।
আর্টিকেল সম্পর্কিত তথ্য জানতে কমেন্ট করুন। আপনার প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।