বাসা থেকে বের হয়েছেন হঠাৎ মনে হয় দরজাটা ঠিকভাবে লক করেছিলেন তো। চুলা কি এখনো জলছে, ফ্যানের সুইচ কি অন করা। অনেকে মনে করার চেষ্টা করেও মনে করতে পারছে না। এমনটা বারবার হতে থাকলে বুঝবেন আপনার ভুলে যাবার প্রবণতা আছে।
কিন্তু এ প্রবণতা শুধু আপনার আছে এমনটা নয়। আমাদের আশেপাশে থাকা অনেক মানুষ প্রতিনিয়তই এই ভুলে যাওয়ার প্রবণতা সাথে বসবাস করছেন। এক্ষেত্রে কি কোনো সমাধান নেই অবশ্যই আছে। সেগুলো কি জানতে যুক্ত থাকুন শেষ পর্যন্ত।
ভুলে যাওয়ার সমস্যা অনেক সময় বংশগত বা পারিবারিক হতে পারে। তবে স্মৃতিশক্তি উপর সবচেয়ে বেশি প্রভাব ফেলে আপনি কী খাবার খাচ্ছেন এবং আপনার জীবনযাত্রার মান কেমন। অনেক সময় খুব মানসিক চাপ বিষণ্নতা উদ্বেগজনিত রোগ থাকে কিংবা দীর্ঘ সময় ধরে ঘুমের সমস্যা হলে আমাদের স্মৃতিশক্তিতে এর বিরূপ প্রভাব পড়ে। সেই সঙ্গে ভিটামিন B20 এর অভাব থেকে পানিশূন্যতা, থাইরয়েডের সমস্যা, ধূমপান, মদপানের অভ্যাস কিংবা ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থেকে হতে পারে ভুলে যাওয়ার রোগ।
হৃদরোগ, উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস হরমোন ভারসাম্যহীনতার সমস্যা থাকলেও স্মৃতিশক্তির লোপ পেতে পারে। এছাড়া বয়স হওয়ার সাথে সাথে আমাদের স্মৃতি শক্তি ঝাপসা হতে শুরু করে। সময়মতো সচেতন না হলে এই হুটহাট ভুলে যাওয়ার সমস্যা ডিমানসিয়া এবং অ্যালজেইমার এর মত কঠিন সমস্যায় রূপ নিতে পারে বলে জানিয়েছেন মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞরা। আশার কথা হল আপনি যে কোন বয়সের স্মৃতিশক্তি বাড়াতে পারেন এজন্য মনে রাখতে হবে এই 9টি টিপস।
আরও পড়ুনঃ অসফল মানুষদের 6 টি অভ্যাস যা আপনার জানা দরকার
মস্তিষ্কে যেন জং না পড়ে সেজন্য কি খাচ্ছেন সেটা খুব জরুরী। আমাদের খাবারের 20 শতাংশ শর্করা ও শক্তি আমাদের মস্তিষ্কে যায়। মস্তিস্কে খাবার হচ্ছে অক্সিজেন এবং গ্লোকোজ। তাই বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ হচ্ছে এমন খাবার বেছে নিন যাতে পর্যাপ্ত পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট আছে। তাই যত পারুন ফল ও আরো শাকসবজি খান সম্ভব হলে প্রতিদিন 1 কাপ গ্রিন টি খেতে পারেন।
তার সাথে যুক্ত করতে হবে ওমেগা 3 ফ্যাটি এসিড যুক্ত খাবার। যেটা আপনি সামুদ্রিক মাছ এবং বাদামে পাবেন। আর সবচেয়ে জরুরি হলো অতিরিক্ত চিনি কার্বোহাইড্রেট আর কোলেস্টেরল যুক্ত খাবার এড়িয়ে যাওয়া। সে সঙ্গে ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা জরুরি।
আরও পড়ুনঃ মোবাইল সাথে রেখে ঘুমানো কতটা বিপদজনক
আমাদের মস্তিষ্কের মাঝামাঝি ইউ আকৃতির একটি অংশ আছে একে হিপোক্যাম্পাস বলা হয়। আমাদের মেমোরি কার্ড বা হার্ডডিস্ক। মানুষ যখন ঘুমায় তখন মস্তিষ্কের এ অংশ থেকে নতুন নিউরন কোষ জন্মাই। যার কারণে স্মৃতি প্রখর থাকে। তাই স্মৃতি ঠিক রাখতে অন্তত 7 থেকে 9 ঘণ্টা নির বিচ্ছিন্ন ঘুমের খুবই প্রয়োজন বলে জানিয়েছেন গবেষকরা। প্রতিদিন একটি নির্দিষ্ট সময়ে ঘুমাতে যান আর ঠিক নির্দিষ্ট সময়ে ঘুম থেকে উঠার চেষ্টা করুন।
তা ছুটির দিন হলেও যেন একই রকম নিয়ম হয়। এজন্য রাতে বা সন্ধ্যার পর চা ও কফি কখনও খাওয়া যাবে না। এছাড়া ঘুমানোর সময় অন্তত এক ঘণ্টা আগে থেকে নিজের মোবাইল ফোন বা ট্যাব অথবা ল্যাপটপ বা যে কোন ধরনের ইলেকট্রনিক্স ডিভাইস নিজের কাছে থেকে দূরে রাখতে হবে।
কারন ব্যায়াম করলে শরীর থেকে প্রোটিন নির্গত হয়। মস্তিষ্কে যে অংশটি স্মৃতি রক্ষায় কাজ করে প্রোটিন সেই অংশটিকে আরো চাঙ্গা করে তোলে। কিন্তু কোন কিছু মনে রাখার ক্ষেত্রে কতক্ষণ পর শরীর থেকে সেই প্রোটিন নিঃসৃত হচ্ছে সেটা বেশ জরুরী। তাই পড়াশোনার পরপরই নয় বরং চারঘণ্টা পর ব্যায়াম করুন। আরেকটি গবেষণায় দেখা গেছে কোনো কিছু হেটে হেটে মুখস্থ করলে সেটা বেশি মনে থাকে।
গবেষকরা বলছেন আমাদের মস্তিষ্ক তখনই ভালোভাবে কাজ করবে যখন এতে যথেষ্ট পরিমাণে অক্সিজেন প্রবাহিত হবে। কিন্তু ধূমপানের ফলে যেসব ভবনের মধ্যে দিয়ে মস্তিষ্কে অক্সিজেন পৌঁছায় সেগুলো বাধাগ্রস্ত হতে পারে। তাই ধূমপান করা সকলকে বাদ দিতে হবে। এছাড়াও বেশি পরিমান মদ পান করার ফলে মস্তিষ্কে হিপোক্যাম্পাস অংশ নষ্ট হয়ে যায়। তাই অতিরিক্ত মদ্য পান করা থেকে সকলকে সাবধান থাকতে হবে।
আরও পড়ুনঃ ফেসবুক আইডি সুরক্ষিত রাখার উপায়
যারা তার পরিবার ও বন্ধুদের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ করেন না তাদের স্মৃতিশক্তি দুর্বল হতে থাকে। এই কারণে মানুষের সাথে যোগাযোগ বাড়াতে হবে এবং সেই যোগাযোগ হতে হবে সামনাসামনি মোবাইল ফোনের মাধ্যমে নয়। নিজের পরিবার ও বন্ধু-বান্ধবদের সাথে সামনা সামনি নিয়মিত কথা বলুন দূরে কোথাও ঘুরতে যান আড্ডা দিন সবার সাথে মিলে হাসাহাসি করে আনন্দে মেতে থাকার চেষ্টা করুন।
ভালো হয় যদি শিশুদের সাথে সময় কাটাতে পারেন। আর যারা আপনাকে রাগিয়ে দেন বা মানসিক চাপ দেয় তাদেরকে আপনার কাছে আসতে দেবেন না।
আরও পড়ুনঃ হজম শক্তি বৃদ্ধির ঘরোয়া উপায় | হজম শক্তি কমে যাওয়ার কারন
এখন আপনি প্রশ্ন করতে পারেন চাইলে কি মানসিক চাপ কমানো সম্ভব। মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞরা বলছেন সম্ভব। আপনি হয়তো আপনার সাথে ঘটে যাওয়া দুর্ঘটনা উদ্বেগের কারণ গুলো রাতারাতি ঠিক করতে পারবেন না। কিন্তু আপনি এমন কিছু কাজ করতে পারেন যার কারণে স্ট্রেস হরমোন নিঃসরণ কম হয়।
প্রথমত ব্যক্তিগত কাজ হোক বা পেশা কোথাও বাড়তি চাপ নেবেন না। আবশ্যক কাজ গুলো অবশ্যই করবেন সীমার বাইরে গেলে না বলতে শিখুন। একসাথে অনেক কাজ না করে বিরতি দিয়ে দিয়ে করুন। কাজ যেমন জরুরি তেমনি জরুরি অবসর এই দুটোর মধ্যে ভারসাম্য আনতে হবে। মানসিক বিশেষজ্ঞরা অনুভূতি প্রকাশ করতে বলেছেন। হাসি-কান্না রাগ বিরক্তি কোন কিছু চেপে রাখবেন না। তাছাড়া বই পড়া, দাবা খেলা, দাবা খেলা পাজোল ইত্যাদির মত খেলা মস্তিষ্ককে শার্প করে।
আরও পড়ুনঃ রমজানের ক্যালেন্ডার ২০২১ | রমজান মাসের ক্যালেন্ডার ২০২১
চেষ্টা করুন নতুন কিছু শিখতে সেটা হোক নতুন কোন ভাষা, রান্নাবান্না গাড়ি চালানো ছবি আঁকা সাঁতার কাটা কিংবা বাগান করা। অর্থাৎ এমন কিছু যেটা আপনাকে উন্নত করবে সেই সঙ্গে যেটা আপনি উপভোগ করবেন। এতে আপনার মানসিক চাপ কমবে সেই সঙ্গে স্মৃতিশক্তি ভালো থাকবে।
নিয়মিত ধ্যান বা মেডিটেশন এর অভ্যাস করলে আপনার স্বাস্থ্যের ওপর বেশ ইতিবাচক প্রভাব পড়ে।এটি মস্তিষ্কের নিউরন কোষ বাড়াতে সাহায্য করে। তাইওয়ান এর কলেজ শিক্ষার্থীদের ওপর পরিচালিত এক গবেষণায় দেখা গেছে যারা নিয়মিত ধ্যান করেন তাদের স্মৃতিশক্তি ভালোভাবে কাজ করে।
কোন কিছু মনে রাখতে এর ছবির রং গন্ধ স্পর্শ এবং স্বাদের সাথে তথ্য মিলিয়ে মনে রাখার চেষ্টা করুন। এটাকে যেমন নেমোনিএক্স বলা হয়। যেমন ধরুন কারো বাসা কাঁঠালবাগানে কল্পনা করুন সেই মানুষটি কাঁঠালের একটি বাগানে দাঁড়িয়ে আছে। লিখুন কারন কোন কিছু লিখে রাখতে চাইলে সেটি মস্তিষ্কেও লেখা হয়েছে। আপনি যা মনে রাখতে চান সেটা উচ্চস্বরে পড়ুন।
আরও পড়ুনঃ ফেসবুক থেকে আয় করার উপায় | ফেসবুক থেকে আয় ২০২১
এছাড়া কোন একটি বিষয় কে ছোট ছোট আকারে ভাগ করে যদি ছন্দে ছন্দে মিলিয়ে তা মুখস্ত করা যায় তাহলে সেটা খুব সহজে মনে থাকবে। আবার সর্বোত্তম হয় শব্দের প্রথম অক্ষরটি দিয়ে ছন্দ বানিয়ে পড়া এটা করলে পড়া আপনার সহজে মনে থাকবে। সেই সঙ্গে যেটা আপনি মাত্র শিখেছেন সেটা কিছু সময় পর পর বিরতি দিয়ে প্র্যাকটিস করুন।
কিন্তু এরপরও যদি দেখেন আপনি হঠাৎ খুব স্বাভাবিক বিষয়গুলো ভুলে যাচ্ছেন, ভুলে গেছেন শব্দ, হারিয়ে ফেলছেন বাড়ির ঠিকানা ভুলে গেছেন। তাহলে দেরি না করে অবশ্য একজন মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন। কারণ এগুলো ডিমেনশিয়া লক্ষ্যেণ।
আর্টিকেল সম্পর্কিত তথ্য জানতে কমেন্ট করুন। আপনার প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।