এন্ড্রোয়েড মোবাইলে ইংরেজিতে কথা বলার পর তা যেমন অটোমেটিক কী-বোর্ডে টাইপ হয় ঠিক তেমনি বাংলায় কথা বলার পর সেই কথাটি যদি এন্ড্রোয়েড মোবাইলে বাংলা ভাষায় টাইপিং হতো তাহলে আমাদের জন্য কতই না ভালো হতো। আর বর্তমানে এখন থেকে ঠিক তেমনটি হবে। এন্ড্রোয়েড স্মার্টফোনের ছোট স্ক্রিনে বাংলা টাইপ করা অনেক এর কাছে ঝামেলা মনে হয়। তাই বাংলা ভয়েস টাইপিং (Bangla Voice Typing) এর মাধ্যমে মুখে কথা বলে সহজেই বাংলা টাইপ করা যাবে।
আজ আমরা আপনাদের সামনে কয়েকটি বাংলা ভয়েস টাইপিং কীবোর্ড নিয়ে এবং এসব এর ফিচারসমূহ আলোচনা করবো। যা ব্যবহার করার ফলে আপনার স্মার্টফোন লেখালেখির মধ্যে আসতে পারে আমূল পরিবর্তন। চলুন তাহলে জেনে নেই বাংলা ভয়েস টাইপিং কীবোর্ড এর সুবিধাসমূহ ;
বাংলা ভয়েস টাইপিং এর নানান রকম সুবিধা রয়েছে। যেমন;
১. বাংলা ভয়েস টাইপিং ব্যবহার করার ফলে খুব দ্রুত অনলাইনে চ্যাটিং করে বন্ধুবান্ধবদের কে চমকে দেয়া যায়। বাংলা ভয়েস টাইপিং ব্যবহার করে এতো দ্রুত অন্যের দেয়া মেসেজ এর রিপ্লাই দিতে পারবেন যে যাতে যে কেউ অবাক হয়ে যাবে।
২. অনেক এই আছেন যাদের টাইপ করতে ইচ্ছে করে না অথবা টাইপ করার মতো হাতে সময় নেই তাদের জন্য এই বাংলা ভয়েস টাইপিং অনেক বেশি কাজের।
৩. এছাড়া যারা ব্লগিং বা লেখালেখির কাজে জড়িত তাদের জন্য এই বাংলা ভয়েস টাইপ আশীর্বাদ স্বরূপ। বাংলা ভয়েস টাইপিং ব্যবহার করার ফলে নিমেষেই অনেক বড় বড় আর্টিকেল লিখে ফেলতে পারেন। এছাড়া বিভিন্ন কমেন্ট, সোশ্যাল মিডিয়া পোস্ট লেখার জন্য ভয়েস টাইপ অনেক বেশি কার্যকরী।
৪. ৯৯% বাংলা ভয়েস টাইপ নিশ্চিত নির্ভুলতা করার পাশাপাশি এটি প্রতি ১ মিনিটে ৩৫০ টি বাংলা টাইপ করতে পারবে বা সক্ষম। বাংলা ভয়েস টাইপ এর ব্যবহার খুব সহজ যার ফলে এটি যেকোন বয়সের মানুষ খুব সহজে ব্যবহার করতে পারবে। যা দারা ব্যাক্তির মুল্যবান শক্তি ও সময় সঞ্চিত করবে।
৫. সোশ্যাল মিডিয়া পোস্ট, কমেন্ট, গল্প লেখা, বন্ধুবান্ধবদের সাথে খুব সহজে দ্রুততার সাথে মেসেজ এর রিপ্লে দেয়া বাংলা ভয়েস টাইপিং কল্যাণে তা সহজ থেকে সহজতর করে দিচ্ছে।
৬. বাংলা ভয়েস টাইপ এর মাধ্যমে হিজিবিজি টাইপিং এবং বিরক্তিকর ঝামেলা থেকে খুব সহজেই মুক্তি পেতে পারেন। টাইপিং এর ক্ষেত্রে বাংলা ভয়েস টাইপিং এর সুবিধা ভোগ করা যাবে।
একবার ভেবে দেখুন তো, কোন অক্ষর টাইপ না করে শুধু মুখে বললেই তা টাইপিং করা যাচ্ছে আর এটি করেই আপনি নিমিষেই বড় বড় আর্টিকেল ও গল্প লিখতে পারছেন। কতই না সহজ তাই না।
আপনার কি বাংলা টাইপ করতে ইচ্ছে করছে না। অথবা আপনার হাতে টাইপ করার মতো সময় পাচ্ছেন না। এমন সময় গুগল এর তৈরি করা স্পীচ-টু-টেক্সট সুবিধাটি অনেক কার্যকর। তবে এতো দিন ধরে এই বাংলা টাইপ সুবিধাটি যুক্ত ছিলো না। স্পীচ-টু-টেক্সট গুগল নতুন করে ১৪ আগস্ট ৩০টির মতো ভাষা যুক্ত করেছে। এর মধ্যে রয়েছে আমাদের বাংলা ভাষা। আর এই কারনে গুগলের তৈরি করা এই সুবিধাটি ব্যবহার করে খুব সহজে মুখে বাংলায় কথা বলে সহজে টাইপ করা যাবে।
এই সুবিধার পাশাপাশি আপনি বাংলা ভাষায় উচ্চারন করে গুগলে সার্চ করে যেকোন কিছু খোঁজা যাবে নিমিষেই। গুগল এটিকে বলেছে টাইম কম এবং কথা বেশি।
গুগল কর্তৃপক্ষ তারা তাদের একটি ব্লগ পোস্টের মাধ্যমে জানিয়েছে, এসকল ভাষা যুক্ত করতে স্থানীয় ভাষাভাষীদের কথার নমুনা সংগ্রহ করতে হয়। আর এই সম্পূর্ণ প্রক্রিয়া শব্দ শুনে বা টাইপ বা খোঁজার প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ হয়ে থাকে মেশিন লার্নিং এর মাধ্যমে। বর্তমানে গুগল তাদের মেশিন লার্নিং পদ্ধতি আগের থেকে অনেক বেশি উন্নত করেছে।
বাংলা ভাষার পাশাপাশি গুগল এর তৈরি করা এই কীবোর্ডে ১২০টির বেশি ভাষাভাষীর মানুষ এই সুবিধা ব্যবহার করতে পারবে। এই কীবোর্ডে বাংলা ভাষাভাষীর পাশাপাশি উর্দু, তামিল, মারাঠি, তেলেগু, নেপালি সহ এতে বিভিন্ন প্রাচীন ভাষা সংযুক্ত করা হয়েছে। এতে আরও নতুন করে ১৯টি ভাষা যুক্ত করা হয়েছে।
- Glide Typing: এর সাহায্য আপনি অনেক দ্রুততার সাথে টাইপ করতে পারবেন
- Voice Typing: মুখে কথা বলার মাধ্যমে বা ভয়েস এর মাধ্যমে টাইপ করতে পারবেন
- Google Search and Share: কীবোর্ড এর মাধ্যমে আপনি গুগলে কোন বিষয় সার্চ দিয়ে সেটি আবার শেয়ার করতে পারবেন
- Emoji Search: এই কীবোর্ড এর মাধ্যমে আপনি ইমোজি সার্চ করতে পারবেন
- Google Translate: জিবোর্ড কীবোর্ড এর মাধ্যমে আপনি যেকোন ভাষাকে Translate করার সুবিধা পাবেন
- Search and Share GIFs: Gifs গিফস শেয়ার করতে পারবেন
- Multilingual Typing: এই কিবোর্ড এর মাধ্যমে আপনি চাইলে খুব সহজে নিমিষেই ভাষা পরিবর্তন করতে পারবেন। বাংলা ভাষা ছাড়াও এই কিবোর্ডে রয়েছে ১২০টির মতো ভাষা আর এই কারনে আপনার পছন্দের ভাষাটি খুব সহজে টাইপ করতে পারবেন
- মোবাইল ফোনে বাংলা ভয়েস টাইপিং চালু করার জন্য প্রথমে গুগল প্লে "Google Play Store" থেকে জিবোর্ড "Gboard" কীবোর্ডটি ডাউনলোড করে নিতে হবে।
- এরপর স্মার্টফোনের সেটিংসে থেকে লাঙ্গুয়েজ অ্যান্ড ইনপুট "Language And Input" অপশনে যেতে হবে তারপর কারেন্ট কীবোর্ড হিসেবে Gboard কীবোর্ডটি সিলেক্ট করতে হবে।
- এরপর জিবোর্ড Gboard এ গিয়ে বাংলা ভাষা নির্বাচন করতে হবে।
- আবার লাঙ্গুয়েজ অ্যান্ড ইনপুট "Language And Input" অপশনে ফিরে এসে গুগল ভয়েস টাইপিং এ প্রবেশ করুন।
- এরপর সেখান থেকে ইনরেজি অপশন বন্ধ করে দিয়ে বাংলা ভাষা চালু করে নিন।
- প্রথমে আপনার ফোনের গুগল অ্যাপটি (Google App) আপডেট করে নিতে হবে। যদি গুগল অ্যাপ (Google App) আপডেট করা থাকে তাহলে আর তা আপডেট করার প্রয়োজন নেই
- এরপর গুগল প্লে স্টোর (Google Play Store ) থেকে Ridmik Keyboard ডাউনলোড করে তা ইন্সটল করুন। আর যদি Ridmik Keyboard আপডেট করা থাকে তাহলে আর তা আপডেট করার প্রয়োজন নেই
- তারপর আপনি গুগল অ্যাপ Google App ওপেন করুন এবং সেখানে সেটিংসে (Settings) গিয়ে ভয়েস Voice, তারপর লাঙ্গুয়েজ Language এ ক্লিক করতে হবে
- এখান থেকে বাংলা "বাংলাদেশ" একটু চাপ দিয়ে ধরে তা ছেড়ে দিন
- এসকল কাজ করার পর তা সেভ Save করুন তারপর No Thanks দিয়ে বেড়িয়ে আসুন
- এরপর আপনি যেখানে মেসেজ টেক্সট করবেন বা যেখানে বাংলা ভয়েস টাইপ করবেন সেখানে যেমন ম্যাসেঞ্জার অথবা মেসেজ বক্সে দিয়ে কীবোর্ড পরিবর্তন করে Ridmik Keyboard সেটআপ করুন। আর যদি আন্ড্রইয়েড এর English Keyboard থাকে তাহলে কীবোর্ড এর স্পেচ কী চাপ দিয়ে ধরে Change Keyboard এ চাপ দিয়ে ধরে Ridmik Keyboard সিলেক্ট করে দিন
- তারপর Ridmik Keyboard এর, কমা অপশনে চেপে ধরে ইনপুট Input অপশনে যান। এরপর সিলেক্ট ইনপুট মেথড Select Input Method থেকে "Google Voice Type" গুগল ভয়েস টাইপ সিলেক্ট করুন
- এরপর আপনি যখন বাংলায় কথা বলবেন তখন অটোমেটিক বাংলায় টাইপ হতে থাকবে
আর্টিকেল সম্পর্কিত তথ্য জানতে কমেন্ট করুন। আপনার প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।