ডাক্তারের মতে, খুব বেশি গরম আবহাওয়ার ফলে শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা নষ্ট হয়ে যায়। শরীরের তাপমাত্রা ১০৫ ডিগ্রি ফারেনহাইট এর বেশি হয়ে গেলে তাকে হিট স্ট্রোক বলা হয়। আপনি যদি এর রোগের প্রথমেই সতর্কতা অবলম্বন না করেন তাহলে এই সমস্যা আরও বেশি গুরুতর হয়ে যায়।
গরম কালে শরীর ক্লান্ত লাগার প্রধান কারণ হচ্ছে হিট স্ট্রোক। আবদ্ধ ঘরের মধ্যে বসে থেকে সারাদিন বা সারাক্ষন কাজ করার ফলে হিট স্ট্রেস হওয়ার অনেক বেশি সম্ভাবনা থাকে। বেশি বেশি ঘাম হলে শরীর ডিহাইড্রেটেড হয়ে যায় এবং অতিরিক্ত লোকালয়ের মধ্যে হিট স্ট্রোক হওয়ার সম্ভবনা থাকে। একদিকে প্রচন্ড গরমে, আর অন্যদিকে শুষ্ক আবহাওয়া, ঘেমে গিয়ে জেরবার অবস্থা। তাই যদি এই বিষয়ে শুরুতে সতর্ক না হওয়া যায় তাহলে সমস্যা আরও বেশি গুরুতর হয়। গরম কালে বাড়ে নানা ধরনের অসুখ-বিসুখ। তার মধ্যে একটি হলো হিট স্ট্রোক। হিট স্ট্রোক রোগে আক্রান্ত হতে পারে যে কোন বয়সের বা বড়-ছোট সকল বয়সের মানুষ।
হিট স্ট্রোক কি
গরমকালে একটি মারাত্মক সমস্যার নাম হলো হিট স্ট্রোক। ডাক্তারের মতে, খুব বেশি গরম আবহাওয়ায়র ফলে শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা হারিয়ে গিয়ে শরীরের তাপমাত্রা ১০৫ ডিগ্রি ফারেনহাইট এর চেয়ে বৃদ্ধি পেলে তখন তাকে হিট স্ট্রোক বলা হয়। স্বাভাবিক ভাবে রক্ত আমাদের শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ রাখতে ভূমিকা পালন করে।
যদি কোন কারণে শরীরের তাপমাত্রা বেড়ে যায় তাহলে ত্বকের রক্তনালি প্রসারিত হতে থাকে এবং অতিরিক্ত তাপ পরিবেশে বাহির করে দেয়। প্রয়োজনে ঘামের মাধ্যমে শরীরের তাপমাত্রা কমতে থাকে। কিন্তু অনেক বেশি গরম ও আর্দ্র পরিবেশে অনেক সময় অবস্থান নিলে বা পরিশ্রম করলে তাপ নিয়ন্ত্রণ করা আর সম্ভব হয়ে উঠে না। এর ফলে শরীরের তাপমাত্রা দ্রুততার সাথে বিপদসীমার উপরে চলে যায় যার ফলে হিট স্ট্রোক হয়।
হিট স্ট্রোকের লক্ষণ
তাপমাত্রা বৃদ্ধির সাথ সাথে দেহের মধ্যে নানা রকম প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। প্রাথমিক ভাবে হিট স্ট্রোকের পূর্বে অপেক্ষাকৃত কম মারাত্মক হিট ক্র্যাম্প অথবা হিট এক্সহসশন তৈরি হতে পারে। হিট ক্র্যাম্প তৈরির ফলে শরীরের মধ্যে মাংসপেশিতে ব্যাথা তৈরি হয়, শরীর দুর্বলবোধ হয় এবং প্রচণ্ড পানি পিপাসা লাগে। তারপরের ধাপে হিট এক্সহসশনে খুব দ্রুত শ্বাসপ্রশ্বাস, মাথাব্যাথা, শরীর ঝিমঝিম করা, বমি বমি ভাব, অসংলগ্ন আচরণ ইত্যাদি সৃষ্টি হয়। এই দুইটি ক্ষেত্রেই শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ ঠিক ভাবে থাকে এবং শরীর বেশি পরিমাণ ঘামতে থাকে। যদি এই রকম অবস্থায় দ্রুততার সাথে ব্যবস্থা গ্রহণ করা না হয় তাহলে হিট স্ট্রোক হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
হিট স্ট্রোক এর লক্ষণ গুলো হলো | মিনি স্ট্রোক এর লক্ষণ
- শরীরের তাপমাত্রা খুব তাড়াতাড়ি ১০৫ ডিগ্রিº ফারেনহাইট এর চেয়ে বৃদ্ধি পায়
- শরীরের ঘাম বন্ধ হয়
- ত্বক শুষ্ক ও লালচে বর্ণের ধারন করে
- নিশ্বাস অনেক বেশি দ্রুত হতে থাকে
- নাড়ির স্পন্দন ক্ষীণ ও তাড়াতাড়ি হয়
- রক্তচাপ কমতে থাকে
- মাথা ঝিমঝিম করা, অস্বাভাবিক আচরণ, খিঁচুনি ইত্যাদি লক্ষ্যেণ দেখা দেয়
- প্রস্রাবের কম হয়
- রোগী সেইক্ষেত্রে শকেও চলে যায়। এমনকি রোগী অজ্ঞান হয়ে যায় বা অজ্ঞান হয়ে জেতে পারে
হিট স্ট্রোক হলে করনীয়
- মারা যাওয়া এবং বেছে থাকা সম্পূর্ণ আল্লাহ তায়ালার হাতে। তবুও আমরা যদি গরমের সময় কিছু কিছু সতর্কতা অবলম্বন করি তাহলে হয়তো হিট স্ট্রোকের মতো বিপদজনক রোগ থেকে আল্লাহ তায়ালা আমাদের বেঁচে রাখতে পারেন।
- হিট স্ট্রোক প্রতিরোধ করার জন্য হালকা ও ঢিলেঢালা পোশাক পরিধান করুন। তবে কাপড় সাদা অথবা হালকা রঙের হতে হবে। সুতি কাপড় হলে আরো ভালো
- সম্ভব হলে ঘরের ভেতরে অথবা ছায়াযুক্ত ঠান্ডা স্থানে অবস্থান থাকুন
- বাইরে যাওয়ার জন্য রোদ বা অতিরিক্ত সূর্যের আলো থেকে মাথা ঠান্ডা রাখার জন্য টুপি, ক্যাপ বা ছাতা ব্যবহার করতে হবে
- বাহিরে যাঁরা কাজকর্ম করে, তারা অবশ্যই ছাতা অথবা মাথা ঢেকে রাখার জন্য কাপড় জাতীয় কিছু ব্যবহার করে নিবেন
- প্রচুর পরিমাণ পানি ও অন্যান্য তরল জাতীয় খাবার গ্রহণ করুন। হ্যাঁ মনে রাখবেন যে, গরমের সময় শরীরের ঘামের সাথে পানি ও লবণ দুইটাই বের হয়। তাই পানির সাথে সাথে অবশ্যই লবণযুক্ত পানীয় খাবার যেমন- ফলের রস, শরবত, খাবার স্যালাইন ইত্যাদিও গ্রহণ করতে হবে
- চা বা কফি কম পরিমাণ পান করুন
আর্টিকেল সম্পর্কিত তথ্য জানতে কমেন্ট করুন। আপনার প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।