এসইও কি (SEO কি) — এসইও অর্থাৎ সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন শব্দটির সাথে ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের সঙ্গে যুক্ত সবাই ভালোভাবে পরিচিত। এসইও অর্থ সার্চ ইঞ্জিন অপ্টিমাইজেশন যা ওয়েবমাস্টার সার্চ ইঞ্জিন রেজাল্ট পেজের মাধ্যমে ওয়েবসাইটের ভিজিটরের পরিমাণ ও গুণগত মান বৃদ্ধি করে। আমরা আজকের এই আর্টিকেলে আলোচনা করবো এসইও কি (SEO কি) এবং কিভাবে ওয়েবসাইটের এসইও করতে হয়।
এসইও কি | seo কী?
এসইও (SEO) হলো যে পদ্ধতিতে কোন ওয়েবসাইটের পেজকে কোন নির্দিষ্ট কি-ওয়ার্ডের ভিত্তিতে সার্চ ইঞ্জিনের মাধ্যমে গুগল, বিং, ইয়াহু, ডাকডাকগো সহ অন্যান্য সকল সার্চ ইঞ্জিন গুলোতে প্রথম পেজে অবস্থান করানো হয়। কিন্তু বর্তমান সময়ে বেশিরভাগ অনলাইন মার্কেটগুলো গুগল সার্চ রেজাল্টের অসাধারণ কিছু অ্যালগরিদমের জন্য গুগল সার্চ ইঞ্জিনকেই মূলত উদ্দেশ্য করে তাদের ওয়েবসাইটকে এসইও SEO করে থাকে।
কেননা বর্তমান সময়ে গুগল সার্চ ইঞ্জিনে সবচেয়ে বেশি পরিমাণ সার্চ করা হয়ে থাকে। অর্থাৎ সহজ কথায় বলতে গেলে, সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন (Search Engine Optimization) বা এসইও SEO হলো, সার্চ ইঞ্জিনের অপটিমাইজেশনের মাধ্যমে ওয়েবসাইটকে সার্চ ইঞ্জিনের প্রথম পজিশনে আনার জন্য একটা প্রযুক্তিগত কৌশল।
সার্চ ইঞ্জিন কি | এসইও এর কাজ কি
সহজ কথায় বলতে গেলে, সার্চ ইঞ্জিন হলো ইন্টারনেটে কি-ওয়ার্ডের মাধ্যমে নির্দিষ্ট ভাবে কোনো কিছু খোঁজার জন্য যেখানে কোনো কিছু লিখে সার্চ করলেই আমরা নির্দিষ্ট যে উত্তর বা তথ্য পেয়ে যাই। যেমন গুগল সার্চ ইঞ্জিনে যেকোনো প্রয়োজনে আমরা কিছু সার্চ করে থাকি। এখন আপনার মনে প্রশ্ন থাকতেই পারে যে সার্চ ইঞ্জিন কিভাবে কাজ করে?
যেকোনো ওয়েবসাইট এর প্রত্যেকটি পেজ ভিজিট করার মাধ্যমে সকল প্রকার ডাটাবেজ গুগল সার্চ ইঞ্জিন রোবট তাদের ডাটাবেজে সেভ করে রাখে এবং পরবর্তীতে যখন গুগল সার্চ ইঞ্জিনে সার্চ করা হয় তখন সার্চ ইঞ্জিনে ইনডেক্সডকৃত ডাটাগুলো থেকে রেজাল্টসমূহ প্রথম পেজে চলে আসে। কোন ওয়েবসাইটকে যত বেশি এসইও ফ্রেন্ডলি করা হবে সেই ওয়েবসাইট তত বেশি সার্চ রেজাল্টে আসবে সবচেয়ে বেশি প্রথমের দিকে থাকার সম্ভাবনা থাকে।
যখন কোন ব্যাক্তি সার্চ ইঞ্জিনে কোন একটি নির্দিষ্ট কি-ওয়ার্ডের মাধ্যমে সার্চ করে থাকে। তখন যে সার্চ রেজাল্টে যে ওয়েবসাইটটি সবথেকে প্রথম দিকে আসে এবং উপরে আসার কারণ হলো সেই ওয়েবসাইটের কন্টেন্ট এর গুণগতমান অনেক সুন্দর সাজানো গোছানো ও সর্বোপরি এসইও ফ্রেন্ডলি করা। আর সব থেকে ভালো মানের কন্টেন্ট গুলোকেই সার্চ ইঞ্জিন সবচেয়ে প্রথমের দিকে দেখায় এই ভাবে পর্যায়ক্রমে আস্তে আস্তে নিচের দিকে বা পরবর্তী পৃষ্ঠায় দেখাতে থাকে।
আপনি যদি আপনার নিজের ওয়েবসাইটকে সার্চ ইঞ্জিনের প্রথমের দিকে বা প্রথম পেজে আনতে চান তাহলে এই এসইও SEO সম্পর্কে ভালোভাবে জানতে হবে। প্রথমেই জানতে হবে যে এসইও SEO কত প্রকার এবং এসইও কি কি? সাধারণত SEO এসইও দুই প্রকার।
- অন পেজ এসইও (On-Page SEO)
- অফ পেজ এসইও (Off-Page SEO)
তবে হ্যাঁ সঠিকভাবে এসইও SEO দুই প্রকার তাহলোঃ
- অর্গানিক এসইও (Organic SEO)
- পেইড এসইও (Paid SEO)
অর্গানিক এসইও SEO এর মধ্যেই রয়েছে-
- অন পেজ এসইও (on-page SEO)
- অফ পেজ এসইও (off-page SEO)
অর্গানিক এসইও এবং পেইড এসইও কি?
অর্গানিক এসইও SEO বলতে বোঝায় সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশনের সকল ধরনের নিয়মকানুন আপনি যদি সঠিকভাবে অনুসরণ করেন তাহলে ওয়েবসাইটের পেজ সার্চ ইঞ্জিনের প্রথম পেজে দেখা যাবে। আর পেইড এসইও SEO বলতে বোঝায়, আপনি গুগল কোম্পানিকে পেমেন্ট করবেন আর আপনার ওয়েবসাইটের পেজকে স্বাভাবিক ভাবে সার্চ রেজাল্টের প্রথমে পেজে দেখাবে। আমরা অনেক সময় কোন কি-ওয়ার্ড দিয়ে সার্চ ইঞ্জিনে সার্চ করার পরে এমন কিছু কিছু ওয়েবসাইটকে প্রথমে পেজে দেখতে পাই যেগুলোর পাশে অ্যাড Ad লেখা থাকে। এগুলোকেই মূলত (Paid SEO) পেইড এসইও বলা হয়।
অন পেজ এসইও (On-Page SEO) ও অফ পেজ এসইও (Off-Page SEO) কি?
অন পেজ এসইও On-Page-SEO তে ওয়েবসাইটকে পুরোপুরি তৈরি করার জন্য যা কিছু করার প্রয়োজন হবে সব কিছুই অন পেজ এসইও On-page-seo এর মাধ্যমে করানো হয়ে থাকে। আর অফ পেজ এসইও Off-Page-SEO হলো মূলত একটা মার্কেটিং অর্থাৎ আপনার ওয়েবসাইটকে বিস্তারিত করার যে পদ্ধতি অবলম্বন করা হয় সেটাই হচ্ছে মূলত অফ পেজ এসইও Off-Page-SEO।
এসইও SEO করার জন্য দুইটা সেক্টর রয়েছেঃ
- হোয়াইট হ্যাট এসইও (White Hat SEO)
- ব্ল্যাক হ্যাট এসইও (Black Hat SEO)
হোয়াইট হ্যাট এসইও (White Hat SEO) বলতে বোঝায় ওয়েবসাইটকে সঠিক ভাবে পরিচালনার জন্য গুগল নির্দেশিত নিয়ম-কানুন কাজে লাগিয়ে ওয়েবসাইটকে সার্চ ইঞ্জিনে র্যাংকিংয়ের জন্য যেই নিয়ম অনুসরণ করা হয় সেটি মূলত হোয়াইট হ্যাট এসইও। অর্থাৎ এসইও SEO এর সকল ধরনের সঠিক নিয়ম অনুসরণ করাটাই মূলত হচ্ছে হোয়াইট হ্যাট এসইও White Hat SEO।
আর ব্ল্যাক হ্যাট এসইও (Black Hat SEO) হলো এসইও এর সকল ধরনের নিয়ম-কানুন ভঙ্গ করে যেভাবে ওয়েবসাইটকে র্যাংকিং বৃদ্ধি করা হয় সেটাই মূলত ব্ল্যাক হ্যাট এসইও (Black Hat SEO)। তবে হ্যাঁ বর্তমান সময়ে গুগলের আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সের জন্য ব্ল্যাক হ্যাট এসইও (Black Hat SEO) সঠিকভাবে কার্যকর হয়না। সেইজন্য সবাই তাদের ওয়েবসাইটকে সার্চ ইঞ্জিনের প্রথম পেজে আনার জন্য হোয়াইট হ্যাট এসইও (White Hat SEO ) পদ্ধতি অবলম্বন করে।
একটি ওয়েবসাইটকে কিভাবে এসইও (SEO) করা যায় তা একটি আর্টিকেলে বলে শেষ করা হবে না। ওয়েবসাইটের জন্য কিভাবে এসইও SEO করবেন এই ব্যাপারে বিনামূল্যে পরমর্শ নিতে পারেন এবং এসইও শিখে কিভাবে কত টাকা আয় করতে পারবেন তা আমাদের কাছ থেকে জেনে নিন (লিংক)। বর্তমান সার্চ ইঞ্জিনের তথ্য ও নিয়ম-কানুন অবলম্বন ওয়েবসাইটকে পরিচালনা করাই মূলত হচ্ছে এসইও SEO। প্রতিনিয়ত এসইও SEO এর বিভিন্ন সময়ের বিভিন্ন আপডেট এবং পরিবর্তন অবলম্বন করতে হবে। তবে হ্যাঁ কিছু কিছু বেসিক সেটিংসের মাধ্যমে এসইও SEO কাজ মূলত শুরু করা যায়।
- প্রথমে ওয়েবসাইটটিকে গুগল সার্চ ইঞ্জিনে বা গুগল সার্চ কনসোলে (Google Search Console) সাবমিট বা অ্যাড করতে হবে।
- এরপর বিং সার্চ ইঞ্জিনে অর্থাৎ বিং ওয়েবমাস্টার টুলে ওয়েবসাইট সাবমিট করে নিন।
- গুগল এনালাইটিক্সে(Google Analytics) অ্যাকাউন্ট তৈরি করতে হবে এবং সেখানে ওয়েবসাইটটি ভেরিফিকেশন করে নিতে হবে।
- আর যদি আপনি ওয়ার্ডপ্রেস ওয়েবসাইট ব্যবহারকারী হয়ে থাকেন তাহলে ওয়েবসাইটে Yoast SEO নামের একটি প্লাগিন ইন্সটল করে নিতে হবে।
- আপনার ওয়েবসাইটের ধরন সিলেক্টের মাধ্যমে আপনার নিশ অনুযায়ী প্রোডাক্ট সিলেক্ট করে নিন এবং কিওয়ার্ড নির্বাচন করে নিন।
- তবে র্যাংকিংয়ের জন্য দীর্ঘ কিওয়ার্ড নিয়ে কাজ করলে আরও ভালো হয়। ভালো কি-ওয়ার্ড রিসার্চ করার জন্য গুগল কিওয়ার্ড প্ল্যানারের সাহায্য নিতে পারেন।
- বিভিন্ন ধরনের অনলাইন ওয়েবসাইট ব্যবহার করে আপনার কম্পিটিটরদের যাচাই-বাছাই করার মাধ্যমে আপনি কি-ওয়ার্ড বাছাই করে নিবেন।
- এছাড়াও আপনি চাইলে এক্সপার্টদের মাধ্যমে এই কি-ওয়ার্ড রিসার্স করে নিতে পারেন।
- আর্টিকেল লেখার সময় সবসময় চেষ্টা করবেন আপনার আর্টিকেল URL যেন ছোট হয়।
- URL এর মধ্যে অবশ্যই আপনার কিওয়ার্ডটি ব্যাবহার করবেন।
- পোস্টের টাইটেলে অবশ্যই অবশ্যই কি-ওয়ার্ড টিকে ব্যবহার করবেন এবং H1, H2, H3 ট্যাগ ব্যবহার করবেন।
- আপনার আর্টিকেলে ছবি এসইও করে নিতে হবে এবং আর্টিকেলের মধ্যে প্রয়োজনীয় এক্সটারনাল এবং ইন্টারনাল লিংক অবশ্যই ব্যবহার করবেন এটি এসইও এর জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
- গুগল সার্চ কনসোল (Google Search Console) এর মাধ্যমে আপনার ওয়েবসাইটের Crawl Errors ডিটেক্ট করে নিবেন।
- গুগল আপনার ওয়েবসাইটকে কিভাবে দেখছে তা অবশ্যই ফাইন্ড আউট করবেন।
- আপনার ওয়েবসাইটটিকে অবশ্যই অবশ্যই এসইও ফ্রেন্ডলি করতে হবে বা রেস্পন্সিভ এবং মোবাইল ফ্রেন্ডলি হতে হবে।
- ওয়েবসাইটের ব্রোকেন লিঙ্ক থাকলে সেগুলি ঠিকঠাক করে নিতে হবে।
- আপনাকে অবশ্যই কোয়ালিটি সম্পূর্ণ কনটেন্ট লিখতে হবে কেননা আপনাকে জানতে হবে যে ওয়েবসাইটের জন্য কনটেন্ট হচ্ছে প্রাণ।
- আপনার ওয়েবসাইটে কন্টেন্টগুলো সম্পূর্ণভাবে বড় বড় করে লেখার চেষ্টা করুন। ওয়েবসাইটের আর্টিকেলের ওয়ার্ড হতে হবে মিনিমাম ৬০০ এর বেশি এবং সেটি সহজে বোধগম্য হয় এমন ভাষায় লিখতে হবে।
- প্রয়োজনে কনটেন্টের মধ্যে ছবি অথবা ভিডিও ব্যবহার করবেন।
- ব্যাকলিংক হচ্ছে মূলত আপনার ওয়েবসাইটের প্রচার বা প্রচারণার জন্যই ব্যবহার করা হয়।
- ওয়েবসাইট র্যাংকিং করার জন্য অবশ্যই আপনাকে গেস্ট পোস্ট ব্যবহার করতে হবে ওয়েবসাইটে ব্যাকলিংক করার জন্য।
- আপনার কম্পিটিটরদের ব্যাকলিংক যাচাই করে নিবেন।
- ফোরাম পোস্টিং করবেন আর সেখানে অনেক সমস্যার সমাধানও করে নিতে পারবেন।
- বিভিন্ন ব্লগের কমেন্টে আপনি আপনার ওয়েবসাইট এর লিঙ্ক কমেন্ট করুন এটাকে বলা হয় ব্লগ কমেন্ট।
- আপনার কন্টেন্ট লিস্টিং বা ডিরেক্টরিতে সংযুক্ত করতে পারেন।
সর্বশেষ যেটা বলবো এসইও (SEO) অর্থাৎ সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন এটা কিভাবে কাজের পরিপূর্ণ সমাধান বা শেষ নেই। কারণ বর্তমানে তথ্যপ্রযুক্তিতে গুগল অথবা বিভিন্ন সার্চ ইঞ্জিন প্রতিনিয়ত তাদের অ্যালগোরিদমকে আপডেট করেই যাচ্ছে। এইজন্য আপনার দরকার প্রতিনিয়ত আপডেট গুলো খোজ খবর রাখা।
আর সেইভাবে আপনার ওয়েবসাইটটিকে পরিচালনা করা এবং ভালো কনটেন্ট ব্যবহারের মাধ্যমে আপনার ওয়েবসাইটকে সার্চ র্যাংকিংয়ের প্রথম পেজে অবস্থান করাতে পারবেন। এছাড়া প্রয়োজনে Technical Care BD এর মাধ্যমেও আপনি এসইও বা আপনি নতুন ওয়েবসাইটের এসইও SEO করার জন্য সকল ধরনের সাহায্য পেয়ে যাবেন।