কম্পিউটারে কিভাবে ভাইরাস প্রবেশ করে — কম্পিউটার ভাইরাসের উৎস ও বিভিন্ন প্রকার ভাইরাস এবং বিভিন্ন ধরনের এন্টিভাইরাসের নাম ও কম্পিউটারকে ভাইরাসের অ্যার্টাক থেকে বাঁচার উপায় গুলো আলোচনা করবো আজকের এই আর্টিকেল। কেননা যেকোন সময় আপনার অজান্তেই আপনার কম্পিউটার ভাইরাস অথবা ম্যালওয়্যার দ্বারা আক্রান্ত হতে পারে। ভাইরাস হচ্ছে কম্পিউটারের এক ধরনের কৃত্রিম প্রোগ্রাম সফটওয়্যার। যা কম্পিউটার সিস্টেমের মাধ্যমে প্রবেশ করে কম্পিউটারের ক্ষতি সাধন করে। ভাইরাস/ম্যালওয়্যার হ্যাকাররা তৈরী করে থাকে। যার মাধ্যমে কম্পিউটারের ক্ষতি এবং বিভিন্ন তথ্য হ্যাকাররা হাতিয়ে নেয়। তাই আজ এই আর্টিকেলের মাধ্যমে জানবো কম্পিউটারে কিভাবে ভাইরাস প্রবেশ করে ও ভাইরাস থেকে বাঁচার উপায়।
কম্পিউটার ভাইরাস
যে বিষয়গুলি আমাদের জেনে রাখা প্রয়োজন তা হচ্ছে কিভাবে কম্পিউটারে ভাইরাস প্রবেশ করে, কিভাবে ভাইরাস আক্রমন করে, ভাইরাস কিভাবে ছড়ায় ও কিভাবে ভাইরাস কম্পিউটারের ক্ষতি করে, ভাইরাস চেনার উপায় সহ বিস্তারিত। আশা করি ভাইরাস থেকে বাঁচার উপায় গুলো জেনে আপনার ল্যাপটপ বা কম্পিউটারকে ভাইরাস মুক্ত করতে পারবেন।
কিভাবে কম্পিউটারে ভাইরাস প্রবেশ করে | ভাইরাস এর উৎস
বর্তমান সময়ে কম্পিউটারে সব চেয়ে বেশি ভাইরাস প্রবেশ করে ইন্টারনেটের মাধ্যমে। এই জন্য ইন্টারনেট ব্যবহার করার সময় আমাদের সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। কেননা যেকোন ওয়েবসাইট এর মাধ্যমে যেকোন সময় ভাইরাস কম্পিউটারে প্রবেশ করতে পারে। এন্টিভাইরাস ছাড়া ইন্টরনেট থেকে কম্পিউটারে কোন সফটওয়্যার ডাউনলোড অথবা গেম ডাউনলোড করা এবং কম্পিউটারে ইনস্টল করা থেকে বিরত থাকতে হবে। কোন সফটওয়্যার ইনস্টল করার সময় উইন্ডোজ ডিফেন্ডার নোটিফিকেশন সর্তকতার প্রতি লক্ষ্য রাখা জরুরি।
ল্যাপটপ অথবা ডেক্সটপে পেনড্রাইভ অথবা অন্যান্য ডিভাইস কানেক্ট করার পর ওপেন করার পূর্বে স্ক্যান করে নিতে হবে। ডিরেক্ট প্রেনড্রাইভ কম্পিউটারে লাগানোর পরে সরাসরি ফাইল ওপেন করা যাবে না। বেশি প্রয়োজন হলে কম্পিউটারের বামে ড্রাইভ থেকে ওপেন করতে হবে। পার্সোনাল প্রেনড্রাইভ সিকিউর কম্পিউটার ছাড়া অন্য কোন কম্পিউটারে প্রবেশ করানো উচিত নয়। যেকোন প্রকার এক্সারট্রানাল ডিভাইস যেমন; মেমরিকার্ড, পেনড্রাইভ, ডিভিডি, মোবাইল কম্পিউটারে সংযুক্ত করার পূর্বে সর্তক হতে হবে ডিভাইসে ভাইরাস আছে কিনা তা স্ক্যান করে জেনে নিতে হবে। কেননা এই ধরনের ডাটা-আদান প্রদান করা ডিভাইসের মাধ্যমে কম্পিউটারে বেশি বেশি ভাইরাস প্রবেশ করে থাকে।
কম্পিউটার ভাইরাস মুক্ত রাখার উপায়
যদি ল্যাপটপ ও ডেক্সটপ ভাইরাসে আক্রান্ত হয় তাহলে যেকোন ধরনের ফ্রি অথবা প্রিমিয়াম আন্টিভাইরাস ব্যবহার করে কম্পিউটার স্ক্র্যান করে নিতে হবে। ফ্রি এন্টিভাইরাস এভাস্ট এবং প্রিমিয়াম এন্টিভাইরাস হিসেবে Norton Antivirus, Avira Antivirus, Panda Antivirus, E-Scan, Kaspersky Antivirus ইত্যাদি ব্যবহার করতে পারেন। কম্পিউটারে কোন ভাইরাস প্রবেশ করে থাকলে তাহলে আপনাকে এন্টিভাইরাস দিয়ে স্ক্যান করে নিতে হবে। প্রয়জনে ফুল ড্রাইভ স্ক্যান করতে হবে। এছাড়াও সুরক্ষার জন্য প্রয়োজনে আপনার কম্পিউটারের আক্রান্ত ফাইলটি ফরম্যাট দিতে হবে। ভাইরাসে আক্রান্ত হলে রেজিস্ট্রি টুলস এবং ফোল্ডারের প্রোপার্টিজের সঠিক ব্যবহার করে বিভিন্ন অপশন ফেরত আনা যেতে পারে। সম্ভব হলে নতুন করে কম্পিউটারে অপারেটিং সিস্টেম ইন্সটল করতে হবে।
কম্পিউটার ভাইরাস আক্রান্ত হওয়ার লক্ষণ | কম্পিউটার ভাইরাস কিভাবে কম্পিউটারের ক্ষতি করে
১। ল্যাপটপ কম্পিউটার এবং ডেক্সটপ কম্পিউটার স্লো হয়ে যাবে। প্রোগ্রামের স্পীড অনেক কমে কমে যাবে২। কম্পিউটারে কোন কাজ করার সময় তা ধীরে ধীরে কাজ করবে এবং তা আটকে আটকে যাবে কম্পিউটার হ্যাং করবে। মাউস ও কিবোর্ড কোন কাজ করবে না
৩। কম্পিউটার চালু করার সময় বেশি সময়ের প্রয়োজন হবে এবং কম্পিউটার বন্ধ করার জন্য সময়ও বেশি সময় লাগবে
৪। ল্যাপটপ কম্পিউটার ও ডেক্সটপ কম্পিউটার অটোমেটিকভাবে রিস্টার্ট ও প্রোগ্রাম ওপেন করলেও পিসি রিস্টার্ট হতে পারে
৫। সিস্টেমে থাকা কন্ট্রোল প্যানেল এবং ফোল্ডার অপশন গুলো হাইড হয়ে যেতে পারে
৬। কম্পিউটারে ফাংশন পরিবর্তন করার সময় রেড সিগন্যাল দিতে পারে
৭। সিস্টেমে কাজ করার সময় বিভিন্ন নোটিফিকেশন আসতে পারে
৮। যেকোন ফোল্ডার অথবা যেকোন ড্রাইভ লক হতে পারে এর জন্য ডলার চাইতে পারে
৯। কোন ফোল্ডারে ক্লিক করার সাথে সাথে ক্রপ্ট হয়ে নষ্ট হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে
১০। কম্পিউটার সিস্টেমে নানান ধরনের নোটিফিকেশন আসতে পারে যেমন আইকন নোটিফিকেশন
১১। কোন ফোল্ডারে ক্লিক করা সাথে সাথে একাধিক ট্যাব বা উইন্ডো হতে পারে
১২। কম্পিউটারে ড্রাইভ ডিলিট করতে পারবেন না হার্ড ডিস্ক ড্রাইভে ব্যাড সেক্টর তৈরী হওয়ার সম্ভাবনা থাকে
১৩। কম্পিউটারে মেমোরিকার্ড, প্রেনড্রাইভ লাগানোর সঙ্গে সঙ্গে শর্টকাট ফাইল তৈরী হতে পারে
কম্পিউটার ভাইরাসের তালিকা
১। ক্রিপ্টোলকার — CryptoLocker২। আইলাভইউ — ILOVEYOU
৩। মাইডুম — MyDoom
৪। স্ল্যামার — Slammer
৫। স্টাকসনেট — Stuxnet
৬। ঝড় কৃমি — Storm Worm
৭। সাসার এবং নেটস্কি — Sasser & Netsky
৮। আনা কৌনিকিকোভা — Anna Kournikova
৯। ক্লপ রানসমওয়্যার — Clop Ransomware
১০। জাল উইন্ডোজ — Fake Windows
১১। জিউস গেমওভার — Zeus Gameover
১২। রাস ম্যালওয়্যার আক্রমণ — RaaS
১৩। নিউজ ম্যালওয়্যার — News Malware
১৪। সামাজিক প্রকৌশলী — Fleeceware
১৫। আইওটি ডিভাইস — IoT Device
১৬। সামাজিক ইঞ্জিনিয়ারিং — Social Engineering
১৭। ক্রাইপটুজ্যাকিং — Cryptojacking
১৯। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা — Artificial Intelligence
কম্পিউটার এন্টিভাইরাসের নাম | কম্পিউটার এন্টিভাইরাসের তালিকা
১। নর্দন অ্যান্টিভাইরাস প্লাস — Norton Antivirus Plus
২। এফ-সিকিউর অ্যান্টিভাইরাস নিরাপদ — F-Secure Antivirus SAFE
৩। ফ্রি এভাস্ট এন্ট্রিভাইরাস — Free Avast Antivirus
৪। ক্যাসপারস্কি অ্যান্টিভাইরাস — Kaspersky Anti-Virus
৫। ট্রেন্ড মাইক্রো অ্যান্টিভাইরাস সুরক্ষা — Trend Micro Antivirus+ Security
৬। ওয়েবরুট সিকিউর অ্যানিহয়ার এন্টিভাইরাস — Webroot Secure Anywhere
৭। ইএসইটি এনওডি 32 অ্যান্টিভাইরাস — ESET NOD32 Antivirus
৮। জি-ডেটা অ্যান্টিভাইরাস — G-Data Antivirus
৯। কমোডো উইন্ডোজ অ্যান্টিভাইরাস — Comodo Windows Antivirus
আর্টিকেল সম্পর্কিত তথ্য জানতে কমেন্ট করুন। আপনার প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।