মন ভালো রাখার উপায় — "মন" দেখা যাচ্ছে না বলে কি মন নেই নাকি”। মন ভালো রাখার উপায় জানার জন্যে সর্বদা মরিয়া আমরা সবাই। খুশি শব্দটা সম্পূর্ণ ভাবে মনের সঙ্গে সম্পর্কিত। সাধারণ অর্থে খুশি বলতে আমরা বুঝে থাকি মনের একটি অবস্থা। খুশির সংজ্ঞা সকলের কাছে এক নয়, একেক জনের কাছে একেক রকম। তবে বৈজ্ঞানিকরা খুশিকে আখ্যায়িত করেছেন রক্তপ্রবাহে কিছু বিশেষ হরমোনের উপস্থিতি হিসেবে।
দার্শনিকদের মতে আবার “খুশি” শব্দটি সম্পূর্ণ আপেক্ষিক। এটাকে একেকজন একেক রকম ভাবে সজ্ঞায়িত করেন। কারো কাছে খুশি বিত্ত বৈভবের মধ্যে, কারও কাছে খুশি হচ্ছে সাদাসিধে জীবনধারাতে। আবার কেউবা খুশি হতে চায় জীবনে সফলতার মধ্যে অর্থাৎ প্রাতিষ্ঠানিক দক্ষতা, যশ ও খ্যাতি এসকলের মধ্যে "খুশি" বা সন্তুষ্টি খুজতে, কেউবা চায় সাধারণ জীবনযাপন। যেখানে পরিপূর্ণ ভাবে বেচেঁ থাকার সকল স্বাদ নিতে পারবে, জীবনে উপভোগ করতে পারবে পৃথিবীর সব সৌন্দর্যকে।
কিছু মানুষ আছে যারা অর্থ বিত্তের মাধ্যমে তাদের মনের খুশি কিনতে চায়, আবার কিছু মানুষ আছে যারা চায় প্রকৃতির মধ্যে থেকে মনের সুখ খুঁজতে। কোনোপক্ষ কতটা সফল হচ্ছে আমরা সেটা বিচার করবো না। আমরা চেষ্টা করবো আপনাকে কিছু উপায় বলে দিতে যেগুলো অনুসরণ করে আপনি খানিকটা হলেও আপনার মনের “খুশি” নিশ্চিত করতে পারবেন।
মন ভালো রাখার উপায়
শরীরচর্চা | মন ভালো রাখার ব্যায়াম
শরীরচর্চা সহজ ভাষায় ব্যায়াম, নিয়মিত ব্যায়াম করলে যেমন আপনার শারীরিক সুস্থতা নিশ্চিত করে তার পাশাপাশি স্বাভাবিক হরমোন প্রবাহের কারণে আপনার মনকেও রাখবে চনমনে। প্রতিদিন একটি নির্দিষ্ট সময়ে খানিকটা শারীরিক ব্যায়াম বা যোগ ব্যায়াম যেমন আপনাকে দিবে এই ব্যস্ত জীবনের নানা ধরনের প্রেসার থেকে মুক্তি ঠিক তেমনি দেবে মানসিক সুস্থতাও।
ইতিবাচক মনোভাব | মন ফুরফুরে রাখার উপায়
প্রবাদে আছে "সৎসঙ্গে স্বর্গবাস, অসৎসঙ্গে সর্বনাশ" এই প্রবাদটি আপনার মনের বেলাতেও ১০০% ভাগ সঠিক। যদি আপনি নিজের দৃষ্টিভঙ্গি, আচার-আচরণ এসকলের মধ্যে একটু ইতিবাচক পরিবর্তন নিশ্চিত করতে পারেন তাহলে আপনার মনের সুস্থতার বেলাতেও ইতিবাচক ফলাফল দিবে।
পরিপূর্ণ ঘুম | মন ভালো রাখার উপায়
সঠিক সময়ে যথাযথ পরিমাণে ঘুম একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের জন্যে কোনো টনিকের থেকে কম নয়। সঠিক সময়ে পরিপূর্ণ ঘুম নিশ্চিত করে আপনার সুস্থ শরীরও সুস্থ মন দুটোই। বর্তমানে নিয়মিত ব্যস্ত জীবনের ক্লান্তি কাটিয়ে পরবর্তী দিন সেই একই ব্যস্ত কর্মস্থলে ফিরে যাওয়ার জন্য ৭ থেকে ৮ ঘন্টার বিরতিহীন ঘুম খুবই দরকার।
আরও পড়ুনঃ রাগ কমানোর সহজ উপায়
সহায়তা | মন মানসিকতা ভালো রাখার উপায়
পরিবার-পরিজন বন্ধুদের মানসিক ও আর্থিকভাবে সহায়তা করার চেষ্টা করুন। অন্যকে সাহায্য করার মধ্যে আছে অন্যরকম এক সন্তুষ্টি। ফুটপাতের ছোট ছেলে-মেয়েকে কিছু খাবার কিনে দিন, যে ছোট মেয়েটি আপনার কাছে এগিয়ে আসলো হাতে ফুলের গোছা নিয়ে তার কাছ থেকে দুটি ফুল কিনে নিন। রিকশাওয়ালা চাচাকে ৫ টাকা বেশি দেওয়াতে আপনার কোনো ক্ষতি নেই।
নিজেকে অনুমিত দিন
বড় হয়ে গেলেই আমাদের মধ্যে শিশু হারিয়ে যায়না বরং আমরা শিশুভাবকে গোপন করে রাখি ম্যাচিউরিটির দোহাই দিয়ে। নিজের মধ্যে শিশুকে জেগে তুলুন কালেভদ্রে। একটু খানি হাসুন, একটু খানি বোকামি করুন জেনে বুঝে। জীবনকে উপভোগ করার চেষ্টা করুন শিশুদের মতো। এতে করে মন ভালো থাকবে।
সন্তুষ্টি খুঁজে নিন | বিষন্ন মন ভালো করার উপায়
নিজের জীবনে সুখ খুঁজে নিন। অন্যের সফলতা দেখে ঈর্ষানীত্ব না হয়ে সেখান অনুপ্রেরণা খুঁজুন। অসুস্থ্য প্রতিযোগিতাকে পরিহার করুন। নিজের জীবনকে অন্যের জীবনের সঙ্গে তুলনা করা কমিয়ে নিজের জীবনের জন্য সুখকে খুজে নিতে শিখুন। সকল ধরনের হতাশা থেকে নিজেকে বিরত রাখুন।
ভুল — শিক্ষা | মন ভালো রাখার উপায় কি
আমাদের আদি পিতা আদম-হাওয়ার যুগ থেকেই মানব সম্প্রদায় ভুল করেই আসছে। আদম-হাওয়া সেই ভুলটুকু না করলে মনে হয় এই অপার সৌন্দর্য্যে ভরা সুন্দর পৃথিবীটাই কোনদিন সৃষ্টি হতোনা। প্রত্যেক মানুষ তার জীবনের সিদ্ধান্ত নেবার বেলায় ভুলত্রুটি করেই থাকে। বর্তমান সময়ে মানুষের সঙ্গে সুযোগ অনেক যে কারণে ভুলভ্রান্তি হবার সম্ভাবনাও বেশি। ভুলের জন্যে নিজেকে মানসিক কষ্ট না দিয়ে বরং চেষ্টা করুন সেখান থেকে শিক্ষা গ্রহণ করার।
সঙ্গ নির্বাচন | মন প্রফুল্ল রাখার উপায়
হাজার হাজার মানুষের ভিড়ে প্রকৃত বন্ধু খুঁজে নেয়া সঠিক জীবনসঙ্গী খোজা থেকে কোনো অংশে কম নয়। এমন মানুষের সাথে থাকুন যারা আপনার সঙ্গ পেয়ে তারা নিজেকে সন্তুষ্ট মনে করে এবং আপনাকে সাহস, অনুপ্রেরণা যোগায় মানসিক এবং আত্মিক উন্নতির পথে।
আরও পড়ুনঃ স্মৃতিশক্তি কেন হারায়? মনে রাখার ৯টি সহজ উপায়
সুখ → মনের শান্তি
অর্থ বিত্ত যশ হয়তোবা আপনাকে তথাকথিত সুখ দিবে। কিন্তু তার চেয়েও জরুরি হচ্ছে মনের সন্তুষ্টি এবং শান্তি। অর্থ বিত্তের পেছনে ছুটে মনের শান্তিকে খুইয়ে ফেলা নতুন কোনো কিছু নয়।
Self-care | নিজেকে ভালো রাখার উপায়
সর্বশেষ কথা হচ্ছে নিজের প্রতি যত্ন নেওয়া। নিজেকে অনেক বেশি সময় দিন। মনের কথা শোনার চেষ্টা করুন। প্রযুক্তির অন্তর্জালকে প্রতিমাসে একদিন হলেও বিরত রেখে নিজের সঙ্গকে উপভোগ করুন। সময় দিন নিজের আত্মীয়-স্বজন, পরিবারকে, যোগাযোগ করার চেষ্টা করুন এমন সকল বন্ধুদের সঙ্গে সময়ের ব্যবধানে যার সঙ্গে সম্পর্ক হয়ে গেছে ঠুনকো। সময় সুযোগ হলেই চেষ্টা করুন বন্ধু বা পরিবারের সঙ্গে ঘুরে আসতে পারেন দেশ অথবা দেশের বাহিরে। অথবা ঘুরে আসতে পারেন আপনার আশেপাশে থাকা কোনো বৃদ্ধাশ্রমে। আপনার উপস্থিতি হয়তোবা হতে পারে তাদের সাদাকালো জীবনের জন্যে আনন্দের খোরাক।
নিজের মনকে খুশি রাখার চাবিকাঠি সম্পূর্ণ আপনারই হাতে। আপনার মনকে আপনিই বুঝবেন, নিজের মনের কথাগুলোকে শুনুন। হয়তোবা হাত পায়ের মতো চাক্ষুষ রূপ নেই মনের। আর হ্যাঁ মনের সুস্থতা নিশ্চিত করা কিন্ত শরীরের সুস্থতা নিশ্চিত করার থেকেও কম গুরুত্বপূর্ণ নয়। খুশি থাকা হচ্ছে নিতান্তই আপেক্ষিক একটা বিষয়। আপনাকেই সর্বপ্রথম খুঁজে বাহির করতে হবে যে, কিসে আর কাদের মধ্যে আপনি নিজেকে খুশী দেখতে চান।
আরও পড়ুনঃ ওজন কমানোর উপায়
আর্টিকেল সম্পর্কিত তথ্য জানতে কমেন্ট করুন। আপনার প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।