স্মার্ট টিভি কেনার আগে করনীয় — একটা সময় ছিলো যখন কেউ বাড়িতে কোনো টিভি কিনে আনতো তখন সেই গ্রাম সহ আঁশেপাঁশের গ্রামগুলোতে হইচই পড়ে যেত। ঠিক সেদিন অনেক পূর্বেই চলে গেছে। বর্তমান সময়ে টিভি বিহীন আপনি ১টি বাড়িও খুঁজে পাওয়া প্রায় অসম্ভব। কালের পরিবর্তনে অন্য সকল টেকনোলজির মতো টেলিভিশন প্রযুক্তিতেও যুক্ত হয়েছে নিত্যনতুন আরেক অধ্যায়। চমকপ্রদ সকল টেকনোলজির মাঝে কোন টিভি বা টেলিভিশন আপনার জন্য ভালো হবে, তা অনেকেই শো-রুমে গিয়ে সঠিকভাবে বুঝতে পারেন না। শো রুমে গিয়ে টিভি কেনার আগে স্মার্ট টিভির দাম ও বিস্তারিত তথ্য সম্পর্কে জেনে নিতে পারবেন বিডিস্টল ডট কম থেকে। আপনাদের এই দ্বিধাকে কাটানোর জন্যে টিভির সকল বিষয়বস্তু সম্পর্কে এই আর্টিকেলে আলোচনা করবো।
ক্রিকেট, ফুটবল বিশ্বকাপ সহ নিত্যদিনের খবর, মুভি, গান, সিরিয়াল দেখা আমাদের জন্য খুবই দরকার। তাই একটি টিভি আপনার খুবই প্রয়োজন হতে পারে। কিন্তু হ্যাঁ সেই টিভি কি শুধুমাত্র ১-২ মাসের জন্যে ব্যবহার করবেন? মোটেও না। মিনিমাম ৫ থেকে ১০ বছর অথবা তারও বেশি সময় ধরে ১ টিভি আপনি ব্যবহার করতে চাইবেন। একটি টিভি ৫ থেকে ১০ বছর বা তারও বেশি সময় ধরে ব্যবহার করা সম্ভব, যদি আপনার কিছু বিষয় সম্পর্কে জানা থাকে।
স্বাভাবিকভাবে টিভি কিনতে আপনাকে যা মাথায় রাখতে হবে
আপনার বাজেট যদি নিতান্তই কম না হয়ে থাকে তাহলে আপনি 4K রেজুলেশনের ডিজিটাল টিভি ক্রয় করুন। টিভির সাথে যেসকল কাগজপত্র দেয়া থাকে সেগুলোকে ভালোভাবে পড়ে নিন আর এখান থেকে আপনি এই টিভির রেজুলেশনের মাত্রা জানতে পারেন। 8K রেজুলেশনের টিভি এড়িয়ে যাওয়াটাই উত্তম। বর্তমানে 8K টিভির মূল্য অনেক বেশি।
আর হ্যাঁ ১২০ হার্জ রিফ্রেশ রেটের কমে কোনো টিভি আপনি কিনবেন না। ফটো দেখানোর জন্যে একটি মনিটর প্রতি সেকেন্ডে কতবার রিফ্রেশ করতে পারে, তার পরিমাপকেই মুলত রিফ্রেশ রেট বলা হয়। আপনি সব সময়ের জন্য HDR টিভি ক্রয় করার চেষ্টা করবেন। এই টেকনোলজির টেলিভিশন গুলোতে ভিডিও অনেক ক্লিয়ার বা স্বচ্ছ দেখা যায়। বাজারে প্রচলিত LED-LCD টিভির তুললায় ও LED TV গুলো একটু বেশি দামের হলেও এই টিভি গুলো তুলনামূলকভাবে বেশ ভালো। আধুনিক টেকনোলজির চিকন পর্দার টিভি ক্রয় করলে সাথে আলাদা সাউন্ডবার ক্রয় করার চেষ্টা করুন। চিকন পর্দার টেলিভিশনে সাউন্ড সিস্টেম মনের মতো করে পাওয়া যায়না।
LCD, LED নাকি OLED
টিভি কেনার জন্য প্রাথমিক ধারণার পরে আপনাকে টিভি স্ক্রিন সম্পর্কে ভালোভাবে জেনে নিতে হবে। টিভির ভালো স্ক্রিন যদি চিনতে ভুল করেন তাহলে আপনার টিভি কেনার সকল আয়োজন মাটি। বর্তমান সময়ে এলসিডি (LCD) স্ক্রিনের জায়গাটি দখল করে নিয়েছে ওএলইডি (OLED) এবং কিউএলইডি (QLED) কিংবা প্লাজমা। স্ক্রিনের আরো একটি আধুনিক টেকনোলজি বাজারে আসছে। আর তা হচ্ছে মাইক্রো-এলইডি (Micro-LED)। তবে এই মাইক্রো এলইডি প্রযুক্তি বর্তমানে বাজারে পাওয়া যাচ্ছে।
এলসিডি (LCD) এর তুলনায় প্লাজমা টিভিতে স্বচ্ছ, পরিষ্কার এবং ঝকঝকে ছবি দেখা যায়। দ্রুতগতির খেলাধুলা দেখার জন্যে প্লাজমা টিভি সবথেকে ভালো। তবে মনে রাখবেন এই প্রযুক্তির টিভি অনেক বেশি বিদ্যুৎ খরচ করে। আর হা এলইডি টিভি (LED TV) এর সবথেকে বড় বৈশিষ্ট্য হলো এই টিভি বিদ্যুৎ খরচ সবথেকে কম ব্যবহার করে।
ওএলইডি (OLED) অর্থাৎ অরগানিক লাইট ইমিটিং ডায়োড ডিসপ্লে টেকনোলজি বাজারে অনেকটাই নতুন টেকনোলজি হিসেবে পরিচিত। সাধারণত এলসিডি টেলিভিশন থেকে এই টেকনোলজি ভিন্ন ধরনের। সবথেকে প্রাথমিক পার্থক্য হলো ওএলইডি (OLED) এর প্রতিটি পিক্সেল ভিন্নভাবে নিজস্ব আলো বাহির করে। অপরদিকে এলসিডি টেলিভিশনের আলো বাহির হয় (LED Backlight) এলইডি ব্যাকলাইট থেকে। মুলত এই পার্থক্যটাই ছবির কোয়ালিটি নির্ধারণ করে।
আরও পড়ুনঃ পুরাতন মোবাইল কেনার আগে যা জানা জরুরি
টিভির স্ক্রিনের সাইজ
কত ইঞ্চি টিভি নিজের জন্যে ভালো হবে তা নিয়েও অনেকেই আছেন যারা দ্বিধাদন্ডে থাকেন। স্ক্রিনের আকার নির্ধারন করতে হলে আপনি কত দূরে থেকে টিভি দেখবেন সেটি হিসেব করা প্রয়োজন। যদি আপনার টিভি দেখার দূরত্ব ৩ থেকে ৫ ফুট জায়গা হয়ে থাকে তাহলে আপনি ৩২ ইঞ্চি টিভি নিতে পারেন। এবং টিভি দেখার দূরত্ব যদি হয় ৬ ফুট তাহলে আপনি ৪০ ইঞ্চির টিভি কিনতে পারেন। এছাড়াও ৫ থেকে ৭ ফুট টিভি দেখার দূরত্ব হলে নিতে পারেন ৪৯ ইঞ্চি। ৬ থেকে ৮ ফুট জায়গা হলে ৫৫ ইঞ্চি। আর ৮ থেকে ১০ ফুট দূরত্ব হলে ৬৫ ইঞ্চির টিভি আপনার জন্য উপযোগী।
HD TV নাকি FULL HD
৮ ফুটের কম দূরত্ব থেকে টেলিভিশন দেখলে আমার মতে ফুল এইচডির টিভি উত্তম। আর যদি বেশি দূরে থেকে টেলিভিশন দেখেন তাহলে এইচডি টিভি নেয়া দরকার। এইচডি (HD) হচ্ছে ৭২০ পিক্সেল ইমেজ রেজুলেশন, আর সেখানে ফুল এইচডি (Full HD) হচ্ছে ১০৮০ পিক্সেল। আর 4K ইমেজ রেজুলেশন বলা হয়ে থাকে আল্ট্রা এইচডি (Altra HD)। আপনি যতবেশি পিক্সেলের টেলিভিশন ক্রয় করবেন সেখানে ছবি ততবেশি ভালো দেখতে পারবেন। আর হ্যা বাজেটের কারণে 4K টিভি কিনতে না পারলে ফুল এইচডি (Full HD) এর টিভি কেনা অনেক ভালো।
স্মার্ট টিভি কেনার পূর্বে এই বিষয় সম্পর্কে জানুন
মোবাইল ফোন যেমন স্মার্টফোন টেকনোলজিতে পরিণত হয়েছে, ঠিক তেমনিভাবে টেলিভিশনের ক্ষেত্রেও এমনটি ঘটনায় ঘটেছে। বর্তমান সময়ে তাই স্মার্ট টিভি কেনাটাই হবে বুদ্ধিমানের কাজ। স্মার্টফোনের মতো করে স্মার্ট টিভিতে ইন্টারনেট কানেকশন দিয়ে বিভিন্ন ধরনের অ্যাপ, সফটওয়্যার, ওয়েব ব্রাউজার ব্যবহার করা যায়। বেশিরভাগ টেলিভশনে ভিডিও স্ট্রিমিং সেবা যেমন- অ্যামাজন প্রাইম ভিডিও, নেটফ্লিক্স এবং ইউটিউব ইত্যাদি বিশেষ অ্যাপ্লিকেশান থাকে।
টিভি বা টেলিভিশন প্রস্তুতকারক কোম্পানিগুলি স্মার্ট টিভিতে ভিন্ন ভিন্ন সফটওয়্যার ব্যবহার করে থাকে। স্মার্ট টিভির মাঝে বর্তমানে বেশি জনপ্রিয় অ্যান্ড্রয়েড টিভি হচ্ছে এলজি ওয়েবওএস (LG WebOS), স্যামসাং টাইজেন (Samsung Tizen) এবং শাওমি প্যাচওয়াল (Xiaomi Patchwall)। এছাড়াও ফিলিপিস, সনি, শার্প ও টিসিএলের গুগল ডেভেলপড এন্ড্রয়েড টিভি পাওয়া যায়। অ্যাপ্লিকেশান ব্যবহারের জন্যে এই টিভিগুলো অনেক বেশি উপযোগী।
স্মার্ট টিভি কেনার পূর্বে দেখতে হবে ওয়াইফাই (ওয়্যারলেস) সুবিধা আছে কি-না। যে টিভিতে ওয়াইফাই সংযোগের সুবিধা, তাতে ইন্টারনেট ব্যবহার করতে পৃথক ডংগল লাগবে। স্মার্ট টিভি কেনার পূর্বে আরো দেখে নিতে হবে টিভিতে ইউএসবি পোর্টের সুবিধা আছে কি-না। ইউএসবি পোর্ট থাকলেই যে টিভিতে এক্সটার্নাল হার্ডড্রাইভ এবং পেনড্রাইভ সাপোর্ট করবে এমনটি কিন্ত না। স্মার্ট টিভি কেনার পূর্বে তা পোর্টেবল হার্ডডিস্ক অথবা কোন ধরনের ডিজিটাল ফরম্যাট সাপোর্ট করে সেটা অবশ্যই যাচাই-বাছাই করে নিতে হবে। বর্তমান সময়ে মার্কেটে এখন মানহীন টিভির সয়লাব যা আমাদের চোখের ক্ষতি করে। তাই টিভি কেনার পূর্বে দেখে নিতে হবে টিভিতে চোখের সুরক্ষাযুক্ত কাচ ব্যবহার করছে কি-না।
আরও পড়ুনঃ ল্যাপটপ নাকি ডেস্কটপ কোনটি কিনবেন | ডেক্সটপ ও ল্যাপটপ এর মধ্যে পার্থক্য
থ্রিডি টেলিভিশন কেমন হবে
বিগত কয়েক বছর পূর্বেও থ্রিডি টেলিভিশন ছিলো বিস্ময়কর ব্যাপার। থ্রিডি টিভি মার্কেটে রিলিজ হওয়ার পূর্বে বেশ আলোচনা-সমালোচনার জন্ম দেয়। কিন্তু সময়ের সাথে থ্রিডি টিভির জনপ্রিয়তা সে রকম ভাবে বৃদ্ধি পায়নি। থ্রিডি কনটেন্ট সহজলভ্য বিষয় নয়। এই টিভি দেখার জন্য আলাদা চশমার ব্যাবস্থা করতে হয়। অন্যথায় মাথাব্যথা অথবা চোখের ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। সুতরাং আপনি সহজেই বুঝতেই পারলেন থ্রিডি টিভি গুলোকে এড়িয়ে যাওয়া হবে আপনার জন্য উত্তম কাজ।
কোন ব্র্যান্ডের টিভি ভালো | আপনি কোন ব্র্যান্ডের টিভি কিনবেন
বর্তমানে বাংলাদেশের বাজারে দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক বিভিন্ন কোম্পানির টেলিভিশন পাওয়া যায়। টিভি ব্রান্ডের মাঝে ওয়ালটন, স্যামসাং, এলজি, সনি, ট্রান্সটেক, ভিশন, মাইওয়ান, সিঙ্গার, প্যানাসনিক, ইকো প্লাস, কনকা ব্রান্ডের টিভি অনেক বেশি জনপ্রিয়।
আসলেই আপনি কোন ব্র্যান্ডের টিভি বাড়িতে কিনে আনবেন?
টিভি কেনার জন্য এটা হলো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত। টিভি কেনার জন্য ঠিক এই সিদ্ধান্ত নেয়ার পূর্বে আপনাকে আরো কিছু বিষয় সম্পর্কে মাথায় রাখার প্রয়োজন হবে। কোন টিভির বাজার মূল্য এই সময় কেমন যাচ্ছে, সেই সম্পর্কে খোঁজ খবর নিন। বিভিন্ন উৎসবের পূর্বে অথবা বিশ্বকাপের মতো কোনো মেগা ইভেন্টের পূর্বে প্রায় সকল কোম্পানিগুলো দামে ভালোমানের ডিসকাউন্ট দেয়। এই সম্পর্কে আপনি তাদের ওয়েবসাইটে অথবা পত্রিকায় অ্যাড থেকে সহজেই মূল্য বা ডিসকাউন্ট সম্পর্কে জেনে নিতে পারেন। এরপর দেখবেন কোন টিভির ওয়ারেন্টি বা গ্যারান্টি শর্ত বেশি ভালো।
এই সকল সম্পর্কে বিস্তারিত জানার পরে শো-রুমে গিয়ে টিভি চালিয়ে ছবি এবং সাউন্ড দেখে নিতে হবে। ছবি এবং সাউন্ড থেকে টিভির সম্পর্কে মোটামুটি একটা ধারণা পাওয়া সম্ভব। বিভিন্ন এঙ্গেল থেকে আপনি টিভিতে ভিডিও দেখার চেষ্টা করুন।
অনেক সময় দেখা যায় পাশ থেকে টেভি দেখলে সেটা ঘোলা দেখা যায় অথবা ছবি এবং রং খানিকটা পরিবর্তন হয়ে যায়। এটা মুলত হয়ে থাকে ভিউয়িং এঙ্গেলের কারণেই। এক্ষেত্রে ভিউয়িং এঙ্গেল কম হলে পাশে থেকে দেখার কারনে টিভিতে ছবির রং পরিবর্তন হয়। আর ভিউয়িং এঙ্গেল বেশি হলে আপনি যতই পাশে থেকে টিভি দেখেন না কেন, ছবির রঙের কোনো ধরনের চেঞ্জ হবেনা। তাই বাড়িতে টিভি আনার সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করার পূর্বে এর ভিউয়িং এঙ্গেল পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে নিন।
একটি ভালো টেলিভিশনে পর্দায় সাদা রঙের কোনো সবুজ আভা থাকেনা। কালো রং বেশ ভালো পোক্ত দেখায়। ছবি দেখতে কত বেশি উজ্জ্বল দেখাচ্ছে তা খেয়াল করুন। টিভিতে সাউন্ড কত ভালো বা পরিস্কার ভাবে শোনা যাচ্ছে সেটা জানার চেষ্টা করুন। বেজ কতটা গভীর তা অনুধাবন করুন। ভোকাল উপেন ও পরিষ্কার কি-না, সেটা শুনুন। বক্সের মধ্যে থেকে সাউন্ড বের হচ্ছে নাকি যাচ্ছে অথবা চিকন সাউন্ড আসছে, এমনটি ঘটলে সেই টিভি কেনা বাদ দিন।
আর্টিকেল সম্পর্কিত তথ্য জানতে কমেন্ট করুন। আপনার প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।