জুমার দিনের আমল - জুমার দিনের ১১ টি আমল

হাসিবুর
লিখেছেন -
0
জুমার দিনের ১১ টি আমল

আসসালামু আলাইকুম, প্রিয় বন্ধুগণ আশা করি আপনারা সকলেই ভালো আছেন। আজকের এই আর্টিকেলে আমি আলোচনা করবো জুমার দিনের ১১ টি আমল নিয়ে।

মুসলমানের জন্য জুমাবার হচ্ছে বিশেষ একটি দিন। এই জুম্মার দিনে বিশেষ কিছু আমল ও ফজিলত আছে। পবিত্র জুমার দিনে একটি সময় রয়েছে যে সময়ে বান্দা দোয়া করলেই আল্লাহ তায়ালা সঙ্গে সঙ্গে কবুল করে নেন।

আজকের আর্টিকেলে জুমার দিনের গুরুত্বপূর্ণ আমল সম্পর্কে লেখাটি মনোযোগ সহকারে শেষ পর্যন্ত পড়ার অনুরোধ রইল। জুম্মার দিনের সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ আমল হলো জুম্মার দিনে জুম্মার নামাজ আদায় করা।

নিচে আমরা ধারাবাহিকভাবে জুম্মার দিনের আমল ও ফজিলত বা জুম্মার দিনের গুরুত্বপূর্ণ আমল ও ফজিলত এবং জুমার দিনের আমল সমূহ ধারাবাহিকভাবে আলোচনা করেছি।

(toc) #title=(সূচিপত্র)

জুমার দিনের ১১ টি আমল

  1. দ্রুত ভোর বেলা ঘুম থেকে উঠা এবং জুমায় দ্রুত উপস্থিত হওয়া
  2. উত্তম রূপে গোসল করা বা পরিপাটি হওয়া
  3. ইমাম সাহেবের নিকটবর্তী হয়ে বসা
  4. মনোযোগ সহকারে খুৎবা শোনা
  5. চুপচাপ থাকা কোনো কথা না বলা
  6. জুম্মার দিনে আল্লাহ তায়ালার কাছে বেশি বেশি দোয়া করা
  7. জুম্মার দিনে বেশি বেশি দরূদ পাঠ করা
  8. সূরা কাহফ পাঠ করা
  9. সুগন্ধি ব্যবহার করা
  10. পায়ে হেটে মসজিদে যাওয়া
  11. কাতার ভেংগে সামনে না যাওয়া

১। দ্রুত ভোর বেলা ঘুম থেকে উঠা এবং জুমায় দ্রুত উপস্থিত হতে হবে

অন্যান্য দিনের চেয়ে পবিত্র জুম্মার দিনে একটু আগেই ঘুম থেকে উঠা। কিন্তু আমাদের জন্য দুঃখজনক হলেও সত্যি আমরা জুমাবার চলে আসলে আরও দেরি করে ঘুম থেকে উঠে থাকি এবং এত বেশি ফজিলত থেকে নিজেদেরকে বঞ্চিত রাখি। তাই আমাদের সকলের উচিত হাদিসের ফজিলত অর্জন করার লক্ষ্যে পবিত্র জুম্মার দিনে একটু আগে থেকেই ঘুম থেকে উঠা।

জুম্মার দিনে মসজিদে আগে আগে হাজির হওয়া প্রয়োজন। অর্থাৎ মসজিদে গিয়ে নামাজের জন্য অপেক্ষা করা, অন্যদের থেকে মসজিদের আগে যাওয়া। এছাড়াও মসজিদে আগে যাওয়ার বেশ ফজিলত আছে।

জুম্মার দিনে মসজিদে আগে প্রবেশ করার জন্য সবচেয়ে বড় ফজিলত হলো মসজিদে প্রবেশের পরে থেকে ফেরেশগণ উক্ত বান্দার জন্যে দোয়া করে থাকে যদি মসজিদ এর আদব রক্ষা করে অবস্থান করা হয়। তাই আমাদের সবাইকে পবিত্র জুম্মার দিনে মসজিদে আগে আগে প্রবেশ করা উচিত। জুমার দিনে আগে মসজিদে প্রবেশের উপরে হাদিসে গুরুত্বপূর্ণ বলা হয়েছে।

আরো পড়ুন: ফি আমানিল্লাহ অর্থ কি | ফি আমানিল্লাহ কখন বলতে হয়

২। উত্তম রূপে গোসল করা বা পরিপাটি হওয়া

অনেক আলেমগণ পরিপাটি বলতে বা গোসল করা দ্বারা উদ্দেশ্য করেছে। যারা বিবাহিত আছেন তারা সহবাস করে ভোর বেলা গোসল করবে এবং পরিপাটি দ্বারা চুল, মোচ এসকল অবাঞ্ছিত লোম কেটে ফেলবে।

আসল কথা হচ্ছে জুম্মার দিনে গোসল করে পবিত্র এবং পরিপাটি হওয়া। পবিত্র ও পরিপাটি হয়ে নিজেকে সেজেগুছে নিয়ে মসজিদে যাওয়া। কেননা জুমাবার হচ্ছে দরিদ্র মুসলিমদের জন্যে এক ধরনের হজ্বের দিন। সেজন্যে পবিত্রও পরিপাটি হওয়া অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ।

এছাড়া জুম্মার দিনে আমরা অনেক মানুষ যায়গায় একত্রিত বা সম্মিলিত হই সেই সময় গোসল না করে গেলে এটা আমাদের সকলের মাঝে জীবাণু বিস্তার করতে পারে শরীর থেকে গন্ধ আসতে পারে। তাই আমরা সবাই গোসল করে অর্থাৎ পরিস্কার ও পরিপাটি হয়ে মসজিদে যাবো।

৩। ইমাম সাহেবের নিকটবর্তী হয়ে বসা

যারা আগেই মসজিদে যায় তারা সাধারণত ইমাম সাহেবের কাছাকাছি বসবার সুযোগ পায়। ইমাম সাহেবের কাছাকাছি হয়ে বসলে সব আলোচনা ভালোভাবে শোনা এবং আলোচনা ভালোভাবে বোঝা সহজ হয়।

আর মুলত সেজন্য হাদিসে ইমাম অর্থাৎ খতিব সাহেবের নিকটবর্তী বসবার কথা বলা হয়েছে। কিন্ত হ্যাঁ অনেকেই মনে করতে পারেন যে বর্তমান সময়ে তো স্পিকার কিংবা মাইকে আলোচনা জোরে শ্রবণ যায়। তাদের জন্য একটি উদাহরণ হচ্ছে আলোর কাছে বসা এবং আলো দূর থেকে দেখাটা কিন্ত মোটেও এক না।

ইমাম সাহেবের কাছে বসলে মনের মাঝে আলাদা জাগানিয়া সৃষ্টি হয়। ইমাম সাহেবের কথাগুলো মনোযোগ সহকারে শুনতে ইচ্ছে হয় আর পরবর্তীতে সেগুলো আমল করতে ইচ্ছে জাগে। তাই যথাসম্ভব জুম্মার দিনে ইমাম সাহবের নিকটবর্তী বসে আলোচনা শ্রবণ করা উচিত।

আরো পড়ুন: মহানবী সা এর বিড়ালের নাম কি | নবীজির বিড়ালের নাম

৪। মনোযোগ সহকারে খুৎবা শোনা

হাদিসে বর্ণিত আছে জুম্মার দিনে আমল ও ফজিলতের ৪ নাম্বার হচ্ছে মনোযোগ সহকারে আলোচনা অর্থাৎ জুম্মার দিনে মনোযোগ সহকারে খুৎবা শ্রবণ করা। অন্য কাউকে খুৎবা শুনতে ডিস্টার্ব না করা। খুৎবা চলাকালীন সময়ে কোনো ধরনের কথাবার্তা না বলা।

চুপচাপ রেখে মনোযোগ দিয়ে খুৎবা শোনা। যখনি আমরা জুম্মার খুৎবা মনোযোগ সহকারে শ্রবণ করতে পারবো তখন আমাদের সেই সকল বিষয়ে আমল করার ইচ্ছাটিও বেড়ে যাবে। তাই জুম্মার দিনে খুতবার সময় চুপ থেকে আলোচনা শোনা।

৫। চুপচাপ থাকা কোনো কথা না বলা

জুম্মার দিনে দেখা যায় যে ইমাম সাহেব খুৎবা দিচ্ছেন কিন্ত তারমধ্যে অনেকেই কথা বলে, এদিক সেদিকে ইশারা দেয়। এমনকি বাচ্চাদেরকে ধমক দিয়ে থাকে। মনে রাখবেন এই কাজগুলো করা যাবে না।

জুম্মার খুৎবার চলাকালীন কোনো ধরনের কথা বলা এবং ইশারা দেয়া যাবেনা। জুম্মার খুৎবা শোনা বা জুম্মার দিনে আলোচনা শোনা ওয়াজিব। জুম্মার দিনে খুৎবার সময়ে ইশারা অথবা কাউকে ধমক দেয়া এই কাজগুলো ওয়াজিব তরক করার শামিল। তাই আমাদের উচিত খুৎবার সময়ে চুপচাপ হয়ে।

৬। জুম্মার দিনে আল্লাহ তায়ালার কাছে বেশি বেশি দোয়া করা

হাদিসে রয়েছে, পবিত্র জুম্মার দিনে হচ্ছে এমন একটি সময় রয়েছে যখনি কোনো বান্দা দোয়া করে তখন আল্লাহ তায়ালা সেই উক্ত দোয়া সঙ্গে সঙ্গে কবুল করেন। তবে হ্যাঁ দোয়া কবুল হওয়ার সময়টা কখন তা হাদিসে নির্দিষ্ট ভাবে বলা হয়নি ঠিক লাইলাতুলকদের মতো।

যেন মানুষ জুম্মার দিনে সারাক্ষণ আল্লাহ তায়ালার ইবাদত এবং দোয়ায় মশগুল থাকে। তবে হ্যাঁ বেশিরভাগ উলামায়ে কেরামগণ ইসলাম মতো দিয়েছেন এই সময়টি হচ্ছে আসরের নামাজের পরে থেকে মাগরিবের আজান পর্যন্ত সময়েই হয়ে থাকে।

কিন্ত বাস্তবে সেটা আমাদের ক্ষেত্রে দেখা যায় তার উল্টো। আমাদের বেশিরভাগ মানুষ জুম্মার দিনে আসরের পরে বিভিন্ন খেলা ধুলা আড্ডায় ব্যস্ত হয়ে থাকি। শুক্রবার সাপ্তাহিক ছুটির দিন তাই বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দিয়ে থাকি।

সোশ্যাল গেট টুগেদার কিংবা পারিবারিক আড্ডা। মোট কথা পবিত্র জুম্মার দিনে আসরের পরের সময়টা আমাদের বেশিরভাগ মানুষ হেলায় খেলায় নষ্ট করে থাকি। আমাদের সবাইকে আল্লাহ তায়ালা সঠিকভাবে আমল করার তেীফিক দিন।

আরো পড়ুন: নামাজ না পড়ার ১৫ টি শাস্তি - নামাজ না পড়ার শাস্তি

৭। জুম্মার দিনে বেশি বেশি দরূদ পাঠ করা

দরূদ শরীফের ফজিলত বলে শেষ দেয়া যাবেনা। আমাদের প্রিয় নবী হযরত মোহাম্মাদ (সঃ) আল্লাহর রাসূলের প্রতি দরূদ পড়লে উনার কোন ধরনের লাভ ও ক্ষতি নেই। কিন্তু যদি আমরা আমাদের প্রিয় নবীর প্রতি দরূদ পাঠ করি তাহলে আল্লাহ তায়ালা আমাদের প্রতি রহমত ও বরকত নাজিল করবেন।

তাছাড়াও হাদিসে রয়েছে যে ব্যক্তি রাসূল (সাঃ) এর প্রতি ১ দরূদ পড়ে আল্লাহর রাসূল (সাঃ) সেই ব্যক্তির প্রতি ১০ বার দুরূদ পাঠ করেন। তাছাড়া দরূদ পাঠ করার মাধ্যমে আল্লাহর রমহমতে অনেক জটিল ও কঠিন থেকে কঠিন ধরনের বিপদ থেকেও মুক্তি পেয়ে যেতে পারেন।

তাই আমাদের সকলের উচিত জুম্মার দিন সহকারে অন্যান্য দিনে বেশি বেশি কিংবা অনবরত দরূদ পাঠ করা। অন্যান্য সময়ে দিনে অন্তত ২০০ বার করে দরূদ পাঠ করুন। প্রত্যেকবার দরূদ পাঠ করলে ফেরেশতাগণ আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে আপনার পাঠ করা দরূদ পৌঁছে দেন আর আপনার নাম, মা ও বাবার নাম বলে দেন। সুবহানাল্লাহ।

তাই আমাদের সকলের উচিত বেশি বেশি দরূদ পাঠ করা। তাইতো আমাদের প্রিয় নবী হযরত মোহাম্মাদ (সাঃ) আল্লাহর রাসূল (সাঃ) বলেছেন তোমরা জুম্মার রাতে ও জুম্মার দিনে বেশি বেশি দরূদ পাঠ করো।

৮। সূরা কাহফ পাঠ করা

হাদিসে আসছে সূরা কাহফ বান্দার জন্যে কিয়ামতের দিন নূরের ভুমিকা পালন করে থাকবে। বান্দার জন্যে সুরা কাহাফ নূর হবে। তাছাড়া দাজ্জালের ফিৎনা থেকে আল্লাহ তায়ালা বান্দাকে হেফাজত করবেন। তাছাড়া আরেকটি হাদিসে আছে সুরা কাহফ পাঠকারীর জন্যে ১ জুমা থেকে আরেক জুমার মাঝখানের সময়কে নূর দ্বারা পরিপূর্ণ করে দেয়।

৯। সুগন্ধি ব্যবহার করা

পবিত্র জুম্মার দিনে হালাল আতর, সুগন্ধি জাতীয় কিছু ব্যবহার করা হচ্ছে সুন্নত। তবে হ্যাঁ কারও শরীরে এলার্জির সমস্যা থাকে তাহলে তাদের ব্যবহার করা সুন্নত না।

আরো পড়ুন: আতরের নামের তালিকা - আতরের নাম ও দাম

১০। পায়ে হেটে মসজিদে যাওয়া

পায়ে হেটে মসজিদে যাওয়ার জন্যেই মূলত জুম্মার দিনে আমল ও ফজিলতগুলো বলা হয়েছে। তাই মসজিদে জুম্মার দিনে পায়ে হেটে যাওয়া সুন্নত তবে মনে রাখবেন কারও কোনো সমস্যা থাকলে সেটা অন্য ব্যপার।

১১। কাতার ভেংগে সামনে না যাওয়া

জুম্মার দিনে অনেকেই আছেন যারা সবার শেষে মসজিদের এসে সবাইকে ডিংগিয়ে সবার আগে গিয়ে বসার চেষ্টা করে। এই কাজটি করা মােটেও উচিত নয়। এই কাজ করা দ্বারা মানুষের মাঝে অনেক কষ্ট হয়।

১২। তাহিয়াতুল মসজিদ আদায় করা

এটা জুম্মার দিনের খাস আমল নয়। কিন্তু মসজিদে আগে আগে প্রবেশ করে তাহিয়াতুল মসজিদ আদায় করতে পারেন। এটা হচ্ছে অনেক সওয়াবের আমল। এছাড়াও জম্মার দিনে অনেক বেশি বেশি কুরআন তিলাওয়াত এবং নফল সালাত কাদায় করে নিতে পারেন।

১৩। জুমার নামাজ আদায় করা

জুমার দিনের গুরুত্বপূর্ণ আমল হচ্ছে জুমার সালাত আদায় করা। হাদিস শরীফে আছে, যে ব্যক্তি আলসেমি করে পর পর ৩ জুম্মায় অংশগ্রহণ করে না তাঁর জন্যে আল্লাহ তায়ালা হেদায়েতের নূর কেড়ে নেন অর্থাৎ সেই ব্যক্তির অন্তরে মহর কিংবা সিল মেরে দেন। যার কারণে সেই ব্যক্তি হেদায়েত থেকে অনেক দূরে সরে যায়।

প্রিয় নবী হযরত মোহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর গুরুত্বপূর্ণ হাদিস। যে ব্যক্তি জুম্মার দিনে ভোরে উঠে সঠিকভাবে গোসল করে পরিপাটি হয়ে দ্রুততার সাথে মসজিদে হাজির হলো এবং ইমাম সাহেবের নিকটবর্তী যায়গায় বসলো জুমার খুৎবা কিংবা মসজিদে আলোচনা মনোযোগ সহকারে শ্রবণ করলো এবং মসজিদের চুপচাপ থাকলো।

তাহলে সেই ব্যাক্তিকে আল্লাহ তায়ালা বাসা থেকে মসজিদের দিকে আসার প্রতি কদমে ১ বছর রোজা রাখার ও ১ বছর রাত জেগে ইবাদত করার সওয়াব সেই ব্যক্তির আমল নামায় দিয়ে দিবেন। সুবহানাল্লাহ।

আরো পড়ুন: কিভাবে দোয়া করলে আল্লাহ কবুল করেন

লেখকের শেষকথা

আল্লাহ তায়ালা মুসলিম উম্মাহকে জুমার দিনের সুন্নত আমলগুলো নিয়মিত করার এবং জুমার দিনের মতো প্রতিদিন পাঁচ ওয়াক্ত সালাত মসজিদে এসে আদায় করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

আপনার মতামত জানান এখানে

0 কমেন্ট

আর্টিকেল সম্পর্কিত তথ্য জানতে কমেন্ট করুন। আপনার প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

কমেন্ট করুন (0)

#buttons=(Ok, Go it!) #days=(20)

Our website uses cookies to enhance your experience. explore more
Ok, Go it!