মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখার উপায় | মানসিক স্বাস্থ্য রক্ষার মৌলিক বিষয় কি — আমাদের আজকের এই আর্টিকেলে আলোচনা করা মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখার উপায় গুলো মেনে চলুন, দেখবেন জীবন কতখানি সুন্দর। মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখা চাইলেই সম্ভব, মানসিক স্বাস্থ্যের দিকে লক্ষ্য রাখাটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, যা আপনাকে আপনার মানসিক স্বাস্থ্যের সঙ্গে সঙ্গে শারীরিক সুস্থতার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। প্রতিদিনের কিছু উপায় বা পদ্ধতি অনুসরণ করলেই মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখা সম্ভব।
অনেকেই আছেন যারা শারীরিক সুস্থতার দিকে বেশি বেশি নজর দেয় এবং সেই তুলনায় মানসিক স্বাস্থ্যের দিকে খেয়াল দিতে ভুলে যায়, আবার অনেকেই আছেন যারা জানেই না যে, মানসিক স্বাস্থ্য কি? মানসিক স্বাস্থ্য কাকে বলে? আমাদের শারীরিক সুস্থতা মূলত মানসিক স্বাস্থ্যের ওপরে অনেকখানি নির্ভর করে।
মানসিক স্বাস্থ্য যদি ভালো থাকে তাহলে আপনি সুস্থ সুন্দরভাবে জীবনযাপন করতে পারবেন। নিত্যদিনের কাজগুলোকে গুছিয়ে সুন্দরভাবে সম্পূর্ণ করতে পারবেন। এছাড়াও নিজের জন্যএ সময় বের করতে পারবেন, পরিবারের সদস্যদেরকে সময় দিতে পারবেন।
হঠাৎ করে কোনো চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হলে আপনি ভয় পাওয়ার পরিবর্তে সাহসটাই অনেক বেশি পাবেন, সেই চ্যালেঞ্জের অথবা যেকোনো সময় যেকোনো চ্যালেঞ্জের মোকাবিলা করতে পারবেন। মনোবিজ্ঞানীদের পরামর্শ অনুযায়ী এমন কয়েকটি উপায় রয়েছে যেগুলো মেনে চলা আমাদের সকলের প্রয়োজন। যা আমাদের মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখার জন্যে খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
বর্তমান সময়ে কাজকে এতটাই বেশি গুরুত্ব দিয়ে করা হচ্ছে, যে নিজের পৃথিবীটা ভুলে যেতে বসেছে সকলেই। আমাদের সবাইকে নিজেরদেরকে সময় দেয়ার প্রয়োজন রয়েছে, সেই সঙ্গে পরিবারেরও। আর হ্যাঁ মানসিক স্বাস্থ্যের অবনতির কারণ হচ্ছে মূলত আমাদের সকলের বেপরোয়া জীবনযাপন।
যেগুলো স্বাভাবিকভাবেই আমাদেরকে মেনে চলা উচিত, সেগুলোকে আমরা উপেক্ষা করে কর্মজীবনে এতটাই বেশি ব্যস্ত হয়ে পড়েছি যে মানসিক স্বাস্থ্যের দিকটা কোনো ধরনের গুরুত্বই দেইনা। মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখার উপায় গুলো কি কি, চলুন তাহলে জেনে নেই মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখার উপায় সম্পর্কে-
রুটিন মেনে চলা
প্রতিদিনের একটি রুটিন তৈরি করে নিন এবং সেই রুটিন অনুযায়ী প্রত্যেকদিন অতিবাহিত করুন। রুটিন অনুসারে জীবনযাপন করলে আপনি আপনার জন্য একটু হলেও সময় বাহির করতে পারবেন। যা কি-না আপনার মানসিক স্বাস্থ্যকে অক্সিজেনের যোগান দিবে। সকাল বেলা ঘুম থেকে ওঠা থেকে শুরু করে আর রাতে ঘুমাতে যাওয়া পর্যন্ত আপনি সেই রুটিন মেনে চললে আপনার জীবন অনেকখানি সহজ হয়ে উঠবে।
যারা নিয়মিত রুটিন অনুসারে জীবন-যাপন করে থাকেন তাদের মানসিক স্বাস্থ্য ও শারীরিক স্বাস্থ্য দুইটাই ভালো থাকে। রুটিন অনুসারে চলতে পারলে আপনার প্রতিদিনের কাজ আপনি প্রতিদিন সম্পূর্ণ করতে পারবেন। আর এতে করে আপনার কাজের চাপের পরিমাণ অনেকটাই হ্রাস পাবে আর নিজেকে বেশ ফ্রি মনে হবে। আপনি প্রাণ খুলে দীর্ঘ নিঃশ্বাস নিতে পারবেন যেটা আপনার মানসিক স্বাস্থ্যের জন্যে অনেক উপযোগী।
নিয়মিত ব্যায়াম করা
আমাদের শরীর মূলত চলাফের করার মাধ্যমে সচল থাকে। কিন্ত বর্তমান সময়ে দু-এক পা হাটতে গেলেই যেন মানুষের দম বন্ধ হয়ে যাওয়ার মতো অবস্থা, গাড়ি ব্যতীত কেউ যেন চলতেই পারেনা। তাই নিয়ম করে শারীরিক সুস্থতা এবং মানসিক সুস্থতার দিকে লক্ষ্য রেখে বাড়িতে অথবা বাহিরে একটু করে হলেও ব্যায়াম করার অভ্যাস করুন। নিয়মিত ব্যায়াম করার ফলে শরীরে অনেক ধরনের রোগ বালাইকে কাছে ঘেষতেই দেয়না। প্রতিদিন কমপক্ষে ৩০ মিনিট সময় করে হাঁটাচলার অভ্যাস গড়ে তুলুন।
নিয়মিত ব্যায়াম করা আপনার ঘরের যেকোনো কাজ করার ক্ষেত্রে হোক কিংবা কোথাও যাওয়ার ক্ষেত্রে। প্রতি এক সপ্তাহে হয়তো প্রতিদিন ব্যায়াম করা সম্ভব হবেনা, তবুও আমার পরামর্শ থাকবে অন্ততপক্ষে প্রতি সপ্তাহে ৪ থেকে ৫ দিন করে ব্যায়াম করুন। ব্যায়াম হচ্ছে শারীরিকভাবে সক্রিয়তা এবং মানসিক ভাবে সুস্থ থাকার চাবিকাঠি। কারন হচ্ছে, যেকোনো ধরনের শরীরচর্চা বা ব্যায়াম মানবদেহে সুখের অনুভূতি সৃষ্টিকারী হরমোন এর নিঃসরণ ঘটিয়ে থাকে। তাই শরীর ও মন ভালো ভালো রাখার জন্য নিয়মিত ব্যায়াম করুন।
স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস
নিয়মিত স্বাস্থ্যকর খাওয়ার খাদ্যাভ্যাস গড়ে তুলুন, আপনার ১য়া রুটিনের মাঝে থাকতে হবে। প্রতিদিন সবুজ শাক-সবজির এর পাশাপাশি রঙিন ফলমূলকে আপন করে নিন। নিয়মিত সবুজ শাক-সবজির খাওয়ার পাশাপাশি ফলমুল খাওয়ার অভ্যাস করুন। ডাবের পানি, কলা, পটাশিয়াম সমৃদ্ধ খাবারগুলো যেগুলো মন ও মেজাজ ভালো রাখতে সাহায্য করে। তার সঙ্গে সঙ্গে ডার্ক চকলেট খেতে পারেন এটা মন ভালো রাখতে বিশেষ সাহায্য করে।
নিজের পছন্দ এবং শখকে গুরুত্ব দিন
সকলের নিজস্ব কোনো পছন্দ কিংবা শখ থাকে। কাজের চাপে সকল কিছু ভুলে গিয়ে নিজের জন্যে সময় বের করাটাই হয়ে ওঠেনা। কিন্তু সেটা বললে তো আর হবেনা, মানসিক স্বাস্থ্য ঠিক রাখার জন্য আপনার পছন্দ কিংবা শখকে ১০০% গুরুত্ব দিতেই হবে।
প্রতি সপ্তাহে ১ থেকে ২ দিনের মধ্যে কিছু সময় বার করুন আপনার শখ পূরণ করার জন্য কিংবা আপনার পছন্দমত কিছু করার জন্য। সেটা আপনার অনেক ধরনের শখ হতেই পারে, অবসর সময়গুলোতে একটু ইসলামি কথাবার্তা শুনুন, ঘরটাকে সুন্দর ভভাবে সাজানো, নিজের হাতে কোনো কিছু তৈরী করা, নিজের প্রতি যত্ন নেওয়া, নিজের পছন্দের কোনো বই পড়াশুনা কিংবা কোনো ভিডিও দেখা।
এই কাজগুলো করলে আপনার মন অনেকখানি ফ্রি হবে, যাতে করে আপনি আপনার মানসিক অবসাদ এবং নানা রকম চিন্তা থেকে মুক্তি পাবেন খুবই তাড়াতাড়ি। এগুলো আপনার মনের মাঝে আনন্দের অনুভূতি সৃষ্টি করে, যার কারণে সকল ধরনের দুঃচিন্তা ভুলতে আপনার বেশি সময় লাগবেনা। তাই নিজের জন্যে এটুকু সময় বাহির করতেই পারেন, আপনি যদি আপনি চান তবেই এটা সম্ভব।
পছন্দের মানুষগুলোর সঙ্গে গুণমান সম্পন্ন সময় কাটানো
এই বিষয়টা তো বেশিরভাগ মানুষ জানেন যে, পরিবেশ মানুষের মানসিক এবং শারীরিক সুস্থতার একমাত্র উপায়। আপনার চারপাশে মানুষগুলোই আপনার বন্ধুবান্ধব, পরিবার এবং আপনার শুভাকাঙ্ক্ষী, তাদের সঙ্গে কথা বলুন, তাদের সঙ্গে দৃঢ় সম্পর্ক স্থাপন করুন। এটা প্রমাণিত যেকারো মানসিক স্বাস্থ্য ভালো থকা নির্ভর করে সম্পূর্ণ তাদের ব্যক্তিগত সম্পর্কগুলোর গুণগত মানের উপরে। যেমন মানসিকতার মানুষের সঙ্গে আপনি মিশবেন আপনার মানসিক স্বাস্থ্য ঠিক তেমনি থাকবে।
টেকনোলজির ব্যবহার
বর্তমান সময়ে দাঁড়িয়ে মানুষ টেলিভিশন, কম্পিউটার, ল্যাপটপ, স্মার্ট ফোন ছাড়া যেন চলেই না। ৯০ দশকের পূর্বে এসকল কোনো কিছুই ছিলনা, তাই মানুষ একটা নিয়ম শৃঙ্খলার মধ্যে জীবন যাপন করতো। ভোরবেলা ঘুম থেকে উঠে ভোরের হাওয়া গায়ে লাগানো, রাতে জলদি খেয়ে-দেয়ে ঘুমিয়ে পড়া, সারাটা দিন শারীরিক পরিশ্রম করে কাজ করা, খেলাধুলা, আনন্দ-উৎসব সকল কিছুই ছিল অন্যরকম মাত্রায়।
কিন্তু বর্তমানে মানুষের চোখ আটকে পড়ছে স্মার্টফোন, কম্পিউটার, ল্যাপটপের স্ক্রিনের উপরে। যার ফলে বৃদ্ধি পাচ্ছে অনিদ্রাজনিত রোগ, দুশ্চিন্তা এবং মানসিক স্বাস্থ্যের বারোটা। তবুও নেশা হয়ে গিয়েছে এতটাই বেশি যে, এগুলো ব্যতীত মানুষ চলতেই পারেনা। আর এগুলোই হচ্ছে মূলত মানসিক স্বাস্থ্যের অন্তরায়।
সারাক্ষণ ইন্টারনেট বা অনলাইন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম, ল্যাপটপ, কম্পিউটার, স্মার্টফোন নিয়ে থাকতে থাকতে মানুষ ডিপ্রেশনের মতো অসুখে আক্রান্ত হচ্ছে। সারাক্ষণ এই সকল ডিভাইসের মধ্যে ব্যস্ত থাকলে আশেপাশে কি হচ্ছে সেটা খেয়াল থাকেনা। কেউ কোনো কথা বললে সেটা শোনার মতো কারো মানসিকতা থাকেনা। এতে করে একটা সামাজিক বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হচ্ছে।
কারও সঙ্গে মতবিনিময়, আলাপ-আলোচনা, কথাবার্তার মতো সময় বাহির করা হয়ে ওঠেনা। আর এগুলো সারাদিনে আমাদের জেগে থাকার বেশিরভাগ সময়টাই নষ্ট করে দিচ্ছে। সেই সময়টা হয়তোবা অন্য কোনো ভাল কাজের জন্য ব্যবহার করা যেত।
তাই অন্তত ঘুমানোর এক ঘন্টা আগে এই ধরনের প্রযুক্তির ব্যবহার থেকে আমাদেরকে বিরত থাকা প্রয়োজন। পরিবারের সঙ্গে সময় কাটানো, পরিবারের মানুষজনদের সকলের সুবিধা-অসুবিধা জানার সময়টুকু বের করা আমাদের সকলের প্রয়োজন।
শুধুমাত্র রাত্রে না দিনের বেলাতেও টেকনোলজির ব্যবহার সীমিত রাখা জরুরি। অনেকেই আছেন যারা ইন্টারনেটের মাধ্যমে অনেক কাজ সম্পূর্ণ করে থাকেন, সে ক্ষেত্রে সময়সীমা টাকে মাথায় রাখা জরুরি। কারণ মানসিক স্বাস্থ্যের দিকেও আমাদেরকে লক্ষ্য রাখতে হবে।
আর্টিকেল সম্পর্কিত তথ্য জানতে কমেন্ট করুন। আপনার প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।