অনেকেই আছেন যারা আখের রস খেতে অনেক পছন্দ করেন। আখের রস খাওয়ার ব্যাপারটি বর্তমানে অধিক জনপ্রিয় ও পছন্দনীয় একটি ব্যাপার হয়ে গিয়েছে। আখের রস খাওয়ার মাধ্যমে শরীরের বিশেষ উপকার হয়ে থাকে। আজকে আমরা আমাদের আর্টিকেলে আখের রসের উপকারিতা বা আখের রস খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে আপনাদের সাথে আলোচনা করবো।
আখের রস সাধারণত এক বিশেষ গুণ সমৃদ্ধ হয়ে থাকে। আখের খোসা ছাড়ানো একটু কষ্টকর হলেও আমরা অনেকেই আখের রসটা পান করতে অভ্যস্ত। বিশেষ করে গরমের দিনে এটি আমাদের শরীরে এক গুরুত্বপূর্ণ উপকার সাধন করে থাকে।
আমাদের দেশে পর্যাপ্ত পরিমাণ আখের চাষ হয়ে থাকে। এখন গ্রামবাংলা ছাড়াও শহরের বিভিন্ন জায়গায় অলিতে গলিতে আখ খুঁজে পাওয়া যায়। শহরের নানা পথে ঘাটে বিভিন্ন রকম যন্ত্র দিয়ে আখের খোসা ছাড়িয়ে শুধুমাত্র আখের রস পান করতে দেয়া হয়। আখের রসকে সাধারণত আমরা এক ধরনের বিশেষ শরবত হিসেবে পান করে থাকি।
এক গ্লাস আখের রস আমাদের শরীরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ উপকার করে থাকে। আখের রস আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি সহ আমাদের শরীরে থাকা খারাপ কোলেস্টেরল কমিয়ে দিতে দ্রুত কাজ করে থাকে।
তাছাড়া আখের রস পান করা আমাদের শরীরের জন্য বহু উপকার বয়ে আনে। আখের রসে বিভিন্ন মানের ভিটামিন ও মিনারেল রয়েছে। আখের রসে বিশেষ জিংক রয়েছে, পটাশিয়াম, আয়রন, প্রচুর মাত্রায় ফসফরাস ও ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম থায়ামিন এবং অনেক ভালো পরিমাণে অ্যামাইনো এসিড আছে। এই উপাদান গুলো আমাদের শরীরে বিভিন্ন উপকার হয়ে থাকে। তাই আখের রস সম্পর্কে জানতে লেখাটি শেষ পর্যন্ত মনোযোগ সহকারে পড়ুন এবং আখের রসের উপকারিতা ও অপকারিতা জেনে নিন।
(toc) #title=(এক নজরে সম্পূর্ণ লেখা পড়ুন)
আখের রসের উপকারিতা
- পানিশূন্যতা দূর করে
- হজম শক্তি বৃদ্ধি করে
- লিভারের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি পায়
- দেহে শক্তি বৃদ্ধি করে
- দাঁতের উপকার সাধন হয়
- ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকে
- আখের রস ক্যান্সার প্রতিরোধ করে
- আখের রস হৃদরোগ প্রতিরোধ করে
- ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করে
- আখের রস গর্ভাবস্থায় উপকারী
১. আখের রস খেলে পানিশূন্যতা দূর হয়
আমাদের শরীরে এক ধরনের পানিশূন্যতা দেখা যায় সেই পানিশূন্যতাকে বলা হয় ডিহাইড্রেশন। তবে এমন অবস্থায় যদি আখের রস পান করা হয় তবে শরীরে পানিশূন্যতা আর দেখা যায়না। পানিশূন্যতার কারণে আমাদের শরীরে ক্লান্তি ও মাথা ঘোরা শুরু হয়ে যায়। আপনি যদি এক গ্লাস বা তার কম পরিমাণে আখের রস গ্রহণ করতে পারেন, তাহলে খুব দ্রুত আপনি এই পানিশূন্যতা কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হবেন।
আরো পড়ুনঃ কাজু বাদাম খাওয়ার নিয়ম ও উপকারিতা
২. আখের রস খেলে হজম শক্তি বৃদ্ধি পায়
আপনি যদি কয়েকদিন নিয়মিতভাবে আখের রস পান করে থাকেন, তাহলে আপনার শরীরের এক বিশেষ উপকার সাধন করে থাকবে। আপনার শরীরে হজম ক্ষমতা দ্রুত বৃদ্ধি করবে কয়েক দিন নিয়মিত আখের রস পানের মাধ্যমে। আখের রসের মধ্যে থাকা পটাশিয়াম নামক পদার্থ যা আপনার শরীরে হজম শক্তি বাড়াতে মুখ্য ভূমিকা পালন করে থাকে।
৩. আখের রস লিভারের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি করে
আপনি যদি আখের রস পান করে থাকেন, তাহলে আপনার শরীরের বিভিন্ন উপকার সাধনের মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ উপকার সাধন হলো আপনার লিভারের ক্ষমতা বৃদ্ধি করা। সাধারণত আয়ুর্বেদশাস্ত্র সম্পর্কিত অধিকাংশ বইয়ের মাঝে উল্লেখ আছে যে, লিভারকে সুস্থ রাখতে আখের রস দারুন কাজ করে।
আর এই কারণেই এটি জন্ডিসের জন্য বিশেষ ওষুধ হিসেবে কাজ করে থাকে। যদি আপনি আপনার লিভারের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি করতে চান, তবে অবশ্যই প্রতিদিন এক গ্লাস করে আখের রস পান করুন। তাহলে আপনার লিভারের কার্যক্ষমতা খুব দ্রুত বৃদ্ধি পাবে।
আরো পড়ুনঃ ইসবগুলের ভুসি খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা
৪. আখের রস দেহে শক্তি বৃদ্ধি করে
যদি আপনি শরীরে দুর্বলতা বোধ করে থাকেন, তাহলে আপনি আখের রস পান করতে পারেন। কেননা আখের রস পানের মাধ্যমে আপনার শরীরে আপনি দুর্বলতা দ্রুত কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হবেন। আখের রস পানের মাধ্যমে আমরা আমাদের কাজ করার শক্তিকে বাড়িয়ে তুলতে পারে। আমাদের শরীরে প্রচুর পরিমাণ এনার্জি বৃদ্ধি করতে সাহায্য করবে। আর তাই আপনি যদি আপনার শরীরের দুর্বলতা কাটাতে চান তাহলে অবশ্যই পান করুন আখের রস।
৫. আখের রস দাঁতের উপকার সাধন করে
শরীরে থাকা একটি অন্যতম অঙ্গ দাঁতকে ভালো রাখতে চান তাহলে অবশ্যই আখের রস পান করুন। দাঁতকে ভালো রাখতে যেসব বিভিন্ন পুষ্টিকর খাবার রয়েছে তারমধ্যে আখের রস একটি অন্যতম পানীয়। তাই আপনি আপনার দাঁতকে ভালো রাখতে চাইলে আপনার প্রতিদিনের খাবারের তালিকায় রাখতে পারেন আখের রস।
আরো পড়ুনঃ মুলতানি মাটির উপকারিতা ও অপকারিতা
৬. আখের রস খেলে ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকে
আপনি যদি আপনার অতিরিক্ত ওজনকে কমানোর ব্যাপারে দুশ্চিন্তায় ভুগতে থাকেন, তাহলে আপনি নিশ্চিন্তে আখের রস পান করতে পারেন। আখের রস পানের মাধ্যমে আপনার শরীরের অতিরিক্ত ওজনকে যথেষ্ট নিয়ন্ত্রণ করে দেবে। আপনি যদি নিয়মিতভাবে আখের রস পান করতে পারেন, তবে তা আপনার ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকবে।
৭. আখের রস খেলে ক্যান্সার প্রতিরোধ করা সম্ভব
ক্যান্সারের মতো মরণব্যাধি রোগ সম্পর্কে আমরা হয়তো সবাই কমবেশি জেনে থাকি। এই মরণব্যাধি রোগটিকে হয়তো নিরাময় করা সম্ভব নয়। কিন্তু আমরা যদি একটু চেষ্টা করি, বা কিছু নিয়ম অনুসরণ করে চলি তাহলে আমরা এই রোগটিকে প্রতিরোধ করতে পারি। এই রোগটিকে প্রতিরোধ করতে হলে আমাদের শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে হবে।
তবে এই আখের রসে উপস্থিত থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট আমাদের শরীরে ক্যান্সার প্রতিরোধ করতে এক বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। তাই আমাদের সকলের উচিত হবে নিয়মিত ভাবে আখের রস পান করা। যার মাধ্যমে আমরা আমাদের শরীরকে সুস্থ রাখতে পারি।
আরো পড়ুনঃ ড্রাগন ফলের উপকারিতা ও অপকারিতা
৮. আখের রস খাওয়ার মাধ্যমে হৃদরোগ প্রতিরোধ করা সম্ভব
বর্তমান সময়ে হৃদ রোগ বা হার্ট অ্যাটাক একটি মারাত্মক রোগ হিসেবে বর্ণিত হয়ে আছে। এই হার্ট অ্যাটাক বর্তমানে যেকোনো বয়সের মানুষেরই হচ্ছে সাধারণত হার্টের গতি কম বা বেশি হলে মানুষ হূদরোগে আক্রান্ত হয়ে থাকে। তবে বিশেষজ্ঞ ডাক্তারগণ তারা তাদের অভিমত ব্যক্ত করেছেন আখের রস পানের মাধ্যমে প্রতিহত করা সম্ভব। আপনি যদি নিয়মিত আখের রস পান করে থাকেন তাহলে, আপনি হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি মুক্ত থাকতে পারেন।
৯. আখের রস ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করে
আমাদের দেশে বর্তমানে ডায়াবেটিস রোগীদের সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলছে। তবে অনেকেই মনে করে থাকে যে ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য আখের রস খাওয়া ক্ষতিকর হয়ে থাকে। তবে এরকম কিছু ধারণা ঠিক নয় কেননা আখের রস পান করলে তা ডায়াবেটিস কমাতে সাহায্য করবে। তবে আপনি আখের রস কতটুকু পরিমাণ গ্রহণ করবেন তা ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করে করবেন।
আরো পড়ুনঃ জ্বরের এন্টিবায়োটিক ট্যাবলেট এর নাম ও দাম
১০. আখের রস গর্ভাবস্থায় উপকারী
সাধারণত গর্ভবতী মহিলাদের আখের রস খাওয়ানো মাধ্যমে এক বিশেষ উপকার সাধন হয়ে থাকে। আখের রসে থাকে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন ও খনিজ পদার্থ তাদের গর্ভে থাকা বাচ্চাকে সুস্থ রাখতে সহায়তা করে। তাছাড়াও আখের রসে একপ্রকার বিশেষ অ্যান্টি অক্সিডেন্ট রয়েছে গর্ভাবস্থায় গর্ভবতী মহিলাকে ব্যাকটেরিয়া ও ছত্রাক আক্রমণ থেকে রক্ষা করে থাকে।
আখের রসের অপকারিতা
- অতিরিক্ত সেবনে ডায়াবেটিসের ঝুঁকি থাকে
- বেশি পান করলে ওজন বৃদ্ধি হতে পারে
- এলার্জি সমস্যা হতে পারে
- পেটের সমস্যা হতে পারে
- দাঁতের ক্ষয় হওয়ার সম্ভাবনা থাকে
- পেটের সমস্যা কারণ হতে পারে আখের রস
আমি ইতিমধ্যে জেনেছি আখের রস প্রাকৃতিক এবং পুষ্টিকর পানীয়, কিন্ত আখের রস অতিরিক্ত খাওয়ার কারণে শরীরে কিছু অপকারিতা দেখাতে দিতে পারে। নিচে আখের রসের অপকারিতা উল্লেখ করা হলো:
১. ডায়াবেটিসের ঝুঁকি
আখের রসে থাকে প্রচুর পরিমাণে প্রাকৃতিক চিনি, যা রক্তে শর্করার পরিমাণ দ্রুত বৃদ্ধি করতে পারে। যা একজন ডায়াবেটিস রোগীর জন্য ক্ষতির কারণ হতে পারে এবং তাদের রক্তে শর্করা নিয়ন্ত্রণের ব্যাঘাত ঘটাতে পারে।
২. অতিরিক্ত খেলে ওজন বৃদ্ধি হতে পারে
আখের রসে ক্যালোরির পরিমাণ বেশি থাকে। অতিরিক্ত আখের রস খেলে শরীরের ওজন বৃদ্ধি হতে পারে, বিশেষ করে যদি আপনি আখের রস খাওয়ার পর নিয়মিত ব্যায়াম না করেন।
৩. দাঁতের ক্ষয় হতে পারে
আখের রসে মধ্যে থাকা চিনি দাঁতের ক্ষয় করে এমন ব্যাকটেরিয়া গুলোকে বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। তাই নিয়মিত আখের রস খেলে দাঁতের ক্ষয় হওয়ার ঝুঁকি বাড়তে থাকে।
৪. পেটের সমস্যা
কারো কারো ক্ষেত্রে দেখা হায়, আখের রস খেলে পেটে অস্বস্তি বোধ, গ্যাসের সমস্যা, বমি বমি ভাব এবং পেট খারাপের মতো সমস্যা হতে পারে।
৫. অস্বাস্থ্যকর ভাবে তৈরি করা হয়
দেখা যায় রাস্তার ধারে তৈরি আখের রস গুলো বেশিরভাগ সময় অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে তৈরি করা হয়। এতে করে রস গুলোতে দূষণ এবং জীবাণুর পরিমাণ বেশি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
৬. অ্যালার্জি সমস্যা হতে পারে
কারো কারো ক্ষেত্রে আখের রস খাওয়ার কারণে অ্যালার্জির সমস্যা দেখা দিতে পারে এবং ত্বকের ফুসকুড়ি, চুলকানি এবং শ্বাসকষ্টের মতো লক্ষণ গুলো হতে পারে।
আরো পড়ুনঃ আলকুশি পাউডার খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা
পরিশেষে
যদি আপনি আপনার শরীরকে সুস্থ রাখতে চান, তবে নিয়মিত আখের রস পান করার চেষ্টা করুন কেননা আখের রস শরীর জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি পানীয়। যদি প্রতিদিন নিয়মিত আখের রস পান করে থাকেন তাহলে আপনার শরীর বিশেষভাবে সুস্থ থাকবে বলে আশা করা যায়। তবে আখের রস নিঃসরণের পর দশ থেকে পনেরো মিনিটের মধ্যে পান করে নেওয়াটাই উত্তম। যদি আপনি এটাকে ফ্রিজে রেখে দেন তাহলে আপনি এর যথেষ্ট কার্যকারিতা হারিয়ে থাকবেন।
আর্টিকেল সম্পর্কিত তথ্য জানতে কমেন্ট করুন। আপনার প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।