ক্যালসিয়াম যুক্ত খাবার — শরীর বৃদ্ধির জন্য ক্যালসিয়াম জাতীয় খাবার অপরিহার্য। শরীরের সঠিক ভাবে বৃদ্ধির জন্য ক্যালসিয়াম একটি জরুরি উপাদান। আমাদের চারপাঁশে প্রচুর পরিমাণের ক্যালসিয়াম জাতীয় খাবার রয়েছে কিন্তু আমরা অনেকেই সেসকল ক্যালসিয়াম যুক্ত খাবার চিনি না বা জানিই না ক্যালসিয়াম জিনিসটা মূলত কি? শরীরে ক্যালসিয়ামের অভাবে বিভিন্ন ধরনের অসুখ দেখা দিতে পারে।
ক্যালসিয়ামসমৃদ্ধ শাক
লালশাক, পালংশাক, কচুশাক ও মেথিশাক। এছাড়াও সবুজ শাকের মাঝে আছে সামান্য পরিমাণে ক্যালসিয়াম।
ক্যালসিয়ামে ভরপুর সবজি
কচুরলতি, কাঁচা কলা, বিট, মটরশুঁটি, কচু, কলার মোচা, কচুরমুখী, শজনে ডাঁটা, মুলা, বাঁধাকপি, রসুন, চালকুমড়া, সূর্যের তাপে শুকানো টমেটো, শালগম, ঢ্যাঁড়স, পেঁয়াজ, মিষ্টি আলু, লেটুসপাতা, ধনেপাতা, ওল, মিষ্টি কুমড়া, শিম, বরবটি ও করলা।
আরও পড়ুনঃ রসুন খাওয়ার উপকারিতা | রসুন খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা
ক্যালসিয়ামে পূর্ণ ফল
কাঠবাদাম, পিয়ারস, পেয়ারা, কমলালেবু, কাজুবাদাম, তরমুজ, মাল্টা, জলপাই, আপেল, খেজুর, চালতা, কলা, আনারস, আঙুর, আতা, পেঁপে, ডুমুর, কাঁঠাল, বাতাবিলেবু, নাশপাতি, বরই, আখরোট, আলু বোখরা, আম, লিচু, জাম ও স্ট্রবেরি।
যেসব খাবারে রয়েছে ক্যালসিয়াম
গরু-ছাগলের দুধ, মাখন, ডিম, পনির, ছানার মিষ্টি, ইয়োগার্ট, দই, কড লিভার অয়েল, জলপাইয়ের তেল, কলিজা, গরু, খাসি ও মুরগির মাংস।
ক্যালসিয়ামে পূর্ণ মাছ
ছোটো মাছের কাঁটায় আছে প্রচুর ক্যালসিয়াম। আর মাছের মধ্যে ঢ্যালা, মলা, কাচকি, কই, শিং, মাগুর, ও কোরাল। ওষুধ ছাড়া সংরক্ষণকৃত শুঁটকি মাছ, সামুদ্রিক মাছের মধ্যে স্যামন, টুনা, সারভিন, ক্যাভিয়ার, ম্যাককেরেল ইত্যাদি। বড় মাছের তুলনায় ছোট মাছে এবং সামুদ্রিক মাছে ক্যালসিয়ামের পরিমাণ তুলনামূলকভাবে বেশি। সকল রকম খাবারের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ক্যালসিয়াম আছে দুধ এবং দুধ দিয়ে তৈরি খাবারের মাঝে।
বাদাম | কোন বাদামে ক্যালসিয়াম বেশি
চিনাবাদামে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ প্রোটিন যা দেহ গঠনে এবং মাংসপেশি তৈরিতে সহায়তা করে। বাদামে ভিটামিন ‘বি’ আছে পর্যাপ্ত। প্যাকেটজাত বাদাম, চানাচুরের বাদাম বা বাজারের খোলা বাদামে পুষ্টিগুণ কমে থাকে অনেকখানি। তাই খোসা ছাড়িয়ে বাদাম খাওয়াটাই উত্তম। এতে আছে খনিজ লবণ ম্যাগনেশিয়াম যা শরীর বা দেহের জন্য জরুরি। শরীরে রক্ত তৈরির প্রধান উপাদান হচ্ছে আয়রন। আয়রন সুষ্ঠুভাবে তৈরি হওয়ার জন্যে বাদাম রাখে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা।
ক্যালসিয়ামের অভাবজনিত লক্ষণ
পেশী সংকোচন
শরীরের হিমোগ্লোবিনের মাত্রা ঠিক থাকা এবং পর্যাপ্ত পানি পান করার পরেও যদি নিয়মিত মাংশপেশী সংকুচিত হতে থাকে অর্থাৎ খিঁচুনি ধরে তাহলে বুঝতে হবে যে শরীরে ক্যালসিয়ামের অভাব রয়েছে।
আরও পড়ুনঃ মধু খাওয়ার উপকারিতা | মধু খাওয়ার উপকারিতা কি
হাড় ঘনত্ব কম
বয়স বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে হাড়ের মিনারেলাইজেশন জরুরী হয়ে যায়। শরীরে ক্যালসিয়ামের পরিমাণ কম হলে হাড়ের ঘনত্বও কমে যায়। ফলে ত্বকের উপরে বিরূপ প্রভাব ফেলে। অস্টিওপরোসিস কিংবা হাড় ছিদ্র হয়ে যায়। যার কারণে হাড় ভঙ্গুর হয়ে যায়।
দৃঢ়তাহীন নখ
নখ শক্ত অথবা দৃঢ়তা বৃদ্ধিতে ক্যালসিয়াম গুরুত্বপূর্ণ বা অত্যাবশ্যকীয়। যদি শরীরে ক্যালসিয়ামের পরিমাণ কম হয় তাহলে নখ নরম, ভঙ্গুর এবং দৃঢ়তাহীন হবে।
দাঁত ব্যথা
আমাদের শরীরের শতকরা ৯০% ক্যালসিয়াম দাঁত এবং হাড়ে জমা থাকে। যদি ক্যালসিয়াম কমতে থাকে বা ক্যালসিয়াম কমে যায় তাহলে দাঁত এবং হাড় ব্যাথা করতে পারে।
মাসিক বা পিরিয়ড জনিত ব্যথা
শরীরে ক্যালসিয়ামের অভাব হলে মহিলাদের মাসিকের সময়ে তীব্র ব্যাথা হয়। কারণ, মাংশপেশীর কাজ যথাযথভাবে সম্পূর্ণ করতে ক্যালসিয়ামের বিশেষ ভূমিকা আছে।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম
ক্যালসিয়াম শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। শরীরে ক্যালসিয়ামের ঘাটতি হলে জীবাণু অথবা প্যাথোজেন মোকাবেলা করার শক্তি হ্রাস পায়।
স্নায়ুবিক সমস্যা
শরীরে ক্যালসিয়ামের অভাবে বিভিন্ন ধরনের স্নায়ুবিক সমস্যা, মাথাব্যথা হতে পারে। ডিপ্রেশন, ইনসোমনিয়া এবং ডেমেনশিয়াও হতে পারে।
হৃদস্পন্দন বৃদ্ধি
ক্যালিসিয়াম হৃদপিণ্ডের সঠিক কার্য পরিচালনার জন্য অত্যাবশ্যকীয়। এটি কম হলে হৃদস্পন্দন বৃদ্ধি পাবে। ক্যালসিয়াম হৃদপিণ্ডকে রক্ত পাম্প করতে সাহায্য করে। যদি উপরোক্ত লক্ষণগুলো প্রকাশ পায় তাহলে আপনার ডাক্তারের সঙ্গে পরামর্শ করবেন। তিনি রক্ত পরীক্ষা করার পরামর্শ দিবেন। ক্যালসিয়ামের অভাব মোকাবেলায় নিয়মিত ক্যালসিয়ামযুক্ত খাবার কিংবা পুষ্টিকর সাপ্লিমেন্ট খাওয়ার পরামর্শ দিতে পারে।
আরও পড়ুনঃ মধু ও রসুন এর উপকারিতা