ভিপিএন কিভাবে আয় করে — ভিপিএন বা ভার্চুয়াল প্রাইভেট নেটওয়ার্ক হল পাবলিক নেটওয়ার্কে নিরাপদে তথ্য আদান-প্রদানের জন্য একটি এনক্রিপটেড কানেকশন। যার মাধ্যমে ইউজার নিজের আইডেন্টিটি গোপন রেখে ইন্টারনেট এক্সেস করতে পারে। এতে করে কোন থার্ড পার্টি ওয়েবসাইট ইউজারের ইন্টারনেট অ্যাক্টিভিটি ট্র্যাক করতে পারেনা। ভিপিএন এর আরেকটি বড় সুবিধা হচ্ছে এটি ইউজারদের ব্লক ওয়েবসাইট বা কনটেন্ট দেখার সুযোগ করে দেয়। সার্ফ সার্কের ডেটা অনুযায়ী মোট 31 শতাংশ ইন্টারনেট ব্যবহারকারী বর্তমানে বিভিন্ন সাইট ও কন্টেন্টের আক্সেস কানেক্টিভিটি ও সিকিউরিটির জন্য ভিপিএন ব্যবহার করছেন।
বিশ্বজুড়ে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীরা তাদের প্রাইভেসি এবং সিকিউরিটি নিয়ে সচেতন হচ্ছেন। যার ফলে ইউজারদের মধ্যে ভিপিএন ব্যবহার করার প্রবণতা বাড়ছে। কিন্তু ইন্টারনেটে প্রাইভেসি ও সিকিউরিটি মেন্টেন করার জন্য ব্যবহৃত ভিপিএন সফটওয়্যার গুলো কিভাবে আয় করে। ভিপিএন কিভাবে আয় করে জানতে হলে আমাদের আজকের এই আর্টিকেলটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়তে থাকুন।
ভিপিএন এর যাত্রা শুরু হয় 1996 সালে। সে সময় microsoft-এর কিছু এমপ্লয়ী এক ধরনের peer-to-peer টানেলিং প্রোটোকল বা পিপিটিপি ডেভেলপ করে। পিপিটিপি মূলত একটি কম্পিউটার এবং ইন্টারনেটের মধ্যে সিকিউর প্রাইভেট কানেকশন মেইনটেইন করতে সহায়তা করে। শুরুর দিকে ভিপিএন শুধুমাত্র ব্যবসায়ীক প্রতিষ্ঠান এবং বিভিন্ন দেশের সরকার এবং ওপেন সোর্স নেটওয়ার্ক থেকে ডেটা সিকিউর করার জন্য ব্যবহার করতো। সময়ের সাথে সাথে এই পিপিটিপি টেকনোলজির পেছনের কন্সেপ্টি রেভিলিউশনের মাধ্যমে বর্তমানের ভিপিএন ডেভেলপ হয়েছে।
আরও পড়ুনঃ সার্ভে কি | সার্ভে করে ইনকাম | অনলাইন সার্ভে করে আয়
বিশ্বব্যাপী ইন্টারনেটের ব্যবহার বাড়ার সাথে সাথে ভিপিএন সাধারণ মানুষের কাছে জনপ্রিয় হতে শুরু করে। GlobeNewsWare এর একটি তথ্যসূত্রে 2020 সালে গ্লোবাল ভিপিএন মার্কেট সাইট এস্টিমেট করা হয়েছিল ৩৫ বিলিয়ন ডলারের বেশি। অন্যদিকে Statista এর আরেকটি তথ্যসূত্রে মোট ভিপিএন ইউজারের 62 শতাংশ পুরুষ এছাড়া Global Web Index এর তথ্যমতে 39% ভিপিএন ইউজারদের বয়স 16 থেকে 22 বছর। ভিপিএন কিভাবে কাজ করে তা জানতে হলে আমাদের দুটি টার্ম সম্পর্কে জেনে রাখা উচিত। ১। ভিপিএন লোকেশন ২। ভিপিএন সার্ভার লোকেশন।
ভিপিএন একজন ইউজারের নেটওয়ার্ক ট্রাফিক অন্য একটি সার্ভারে ট্রান্সমিট করে দেয় যা কয়েক হাজার মাইল দূরেও হতে পারে। যে দেশ বা লোকেশনে সার্ভারটি প্লেস করা হয় তাহলো ভিপিএন সার্ভার লোকেশন। অপরদিকে যে স্থানে প্রোভাইডার বা কোম্পানি লোকেটেড সেটাকে বলা হয় ভিপিএন লোকেশন। যখন কেউ তার নেটওয়ার্ক ভিপিএন এর মাধ্যমে কানেক্ট করে তখন ইউজারের ট্রান্সমিট হওয়া ট্রাফিক কারো পক্ষেই অ্যাক্সেস করা সম্ভব হয়না। এমনকি ইউজারের ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার ইন্টারনেট অ্যাক্টিভিটি কোনোভাবেই অ্যাক্সেস করতে পারেনা। বিশ্বজুড়ে ভিপিএন এর এত জনপ্রিয়তার পেছনে কিছু কারণ এরমধ্যে ব্লক কনটেন্টের আক্সেক্স এবং ডেটা প্রাইভেসি অন্যতম।
এছাড়াও প্রতিষ্ঠানগুলো বিভিন্ন লোকেশনে থাকা ব্রাঞ্চের সকল ইমপ্লয়িদের একটি সেন্ট্রাল নেটওয়ার্কের আওতায় আনতে ভিপিএন সার্ভিস ব্যবহার করে থাকে। রাশিয়া, চীনসহ মধ্যপ্রাচ্যের দেশসমূহ স্ট্রেইট ইন্টারনেট পলিসি মেনটেন করা হয়। এসব দেশ থেকে অনেক ওয়েবসাইট বা কনটেন্ট অ্যাক্সেস করা সম্ভব হয়না। ফলশ্রুতিতে এসব দেশে ভিপিএন ব্যবহারকারী তুলনামূলক বেশি।
Global Web Index এর ডেটা অনুযায়ী 2020 সালের ভিপিএন ব্যবহারকারীর ভিত্তিতে 61% ইউজার নিয়ে ইন্দোনেশিয়া সবার শীর্ষে রয়েছে। এরপরে 45% ইউজার নিয়ে ইন্ডিয়ার অবস্থান দ্বিতীয়। অন্যদিকে বিশ্বের শীর্ষ দশ ভিপিএন ব্যবহারকারীদের মধ্যে মধ্যপ্রাচ্যের মধ্যে ৩ টি দেশ রয়েছে। যার মধ্যে সৌদি আরবের ইউজার সংখ্যা 44 শতাংশ, সংযুক্ত আরব আমিরাত বা UAE এর 42 শতাংশ এবং তুর্কির 40% ভিপিএন ইউজার সংখ্যা।
আরও পড়ুনঃ ভিডিও দেখে টাকা ইনকাম | ভিডিও দেখে টাকা ইনকাম বিকাশে পেমেন্ট ২০২১
Surfshark এর একটি তথ্যসূত্রে বিশ্বের টোটাল ইন্টারনেট ইউজারদের মধ্যে 31% কোনো না কোনো ভিপিএন সার্ভিস ব্যবহার করে থাকে। এছাড়া Global Web Index এর একটি তথ্যসূত্রে 62% ডেস্কটপ ইউজার এবং 64% মোবাইল ইউজার প্রতিদিনই ভিপিএন সার্ভিস ব্যবহার করছে। ইন্টারনেট পেনিট্রেশন রেট বাড়ার সাথে বেড়েছে ডেটার প্রাইভেসির জন্য স্ট্রং প্রটোকলের প্রয়োজনীয়তা। সাইবার সিকিউরিটি ইনসাইডারের ডেটা অনুযায়ী 93% সাইবার সিকিউরিটি প্রফেশনালরা ক্লাউড সিকিউরিটি নিয়ে বেশ কন্সার্ন্ট। 2020 সালে মোট 4.9 বিলিয়নেরও বেশি ফর্ট অ্যাটাক হয়েছিলো। যার মধ্যে ডিরেক্ট হিউম্যান সাইবার অ্যাটাক সহ বট ও মোবাইল অ্যাটাক ও অন্তর্ভুক্ত।
Statista এর তথ্যসূত্রে 50 শতাংশেরও বেশি ইউজাররা পাবলিক ওয়াই-ফাই ব্যবহার করার সময় প্রাইভেসি প্রটেক্ট করার জন্য ভিপিএন ব্যবহার করে থাকে। Security.org এর অ্যানালাইসিস অনুসারে 2021 সালের কিছু টপ রেটেড ভিপিএন সার্ভিস এর মধ্যে রয়েছে এক্সপ্রেস ভিপিএন, নর্ড ভিপিএন, আইপি ভ্যানিস ইত্যাদি।
এছাড়াও সার্ফসার্ক, Hotspot Shield, প্রাইভেট ইন্টারনেট আক্সেস এর মতো ভিপিএন সার্ভিস গুলো বেশ জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। Forbes এর তথ্যসূত্রে 2016 সালে ভিপিএন সার্ভিস প্রোভাইডার গুলো 15 বিলিয়ন ডলারেরও বেশি রেভিনিউ জেনারেট করেছিল। অন্যদিকে Statista এর আরেকটি তথ্যসূত্রে 2019 সালের ভিপিএন এর সারা বিশ্বের মার্কেট সাইজ ছিল 25 বিলিয়ন ডলারের বেশি। যা 2027 সাল নাগাদ ৭৫ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। অন্যদিকে এটলাস ভিপিএন এর তথ্য অনুসারে 2020 সালে শুধুমাত্র টপ দশটি ভিপিএন সার্ভিসের ইন-অ্যাপ কেনার মাধ্যমে ২৩ মিলিয়ন ডলার রেভিনিউ জেনারেট হয়।
ভিপিএন কিভাবে আয় করে?
ভিপিএন প্রোভাইডাররা সাধারণত দুই ধরণের সার্ভিসের মাধ্যমে রেভিনিউ জেনারেট করে থাকে। একটি হচ্ছে প্রিমিয়াম এবং অন্যটি ফ্রি-প্রিমিয়াম। প্রিমিয়াম সার্ভিস এর ক্ষেত্রে ভিপিএন সার্ভিস প্রোভাইডাররা ইউজারদেরকে সরাসরি সাবসক্রিপশন চার্জ করে থাকে। অপরদিকে ফ্রি-প্রিমিয়াম সার্ভিস এর ক্ষেত্রে ভিপিএন সার্ভিস প্রোভাইডাররা অ্যাড দেখানো এবং ইউজারদের ব্যক্তিগত তথ্য ম্যানেজ করে। এই সেই সকল তথ্য বিক্রি করে দেয়ার মাধ্যমে টাকা ইনকাম করে থাকে।
Express VPN, Nord VPN, Private Internet Acces এর মত ভিপিএন সার্ভিসগুলো ইউজারদেরকে মূলত সাবস্ক্রিপশন-ফি এর বিনিময়ে সেবা দিয়ে থাকে। প্রিমিয়াম ইউজারদের সাবসক্রিপশন ফি ফ্রি ভিপিএন প্রোভাইডারদের রেভিনিউ এর মূল সোর্স। পেইড ভিপিএন সার্ভিসগুলো ইউজারদেরকে আনলিমিটেড প্রাইভেট নেটওয়ার্ক আক্সেসের পাশাপাশি স্ট্রং ডেটা প্রটেকশন ও এনক্রিপশন, এন্টিভাইরাস ও ম্যালওয়্যার প্রোটেকশন এবং অ্যাড ব্লকিং এর মতো বেশ কয়েক ধরনের ফিচার প্রোভাইড করে থাকে। যার বিনিময়ে এসব সার্ভিস প্রোভাইডাররা ইউজারদেরকে মাসিক বেসিসে সাবস্ক্রিপশন চার্জ করে থাকে।
আরও পড়ুনঃ VPN ব্যবহার করলে ফেসবুক আইডি হারাবেন | কি করলে ফেসবুক আইডি SAFE থাকবে
পেইড ভিপিএন সার্ভিস গুলোর মধ্যে বেশ কয়েকটি ভিপিএন ইউজারদেরকে লিমিটেড কিছু ফিচার ট্রায়াল বেসিসে ব্যবহার করার সুযোগ দিলেও নির্ধারিত সময়ের পর সম্পূর্ণ এক্সেক্স বাতিল হয়ে যায়। এছাড়া ভিপিএন প্রোভাইডাররা অনেক ক্ষেত্রে বিভিন্ন ই-কমার্স বা বিজনেস এর জন্য পেমেন্ট সিস্টেম হ্যান্ডেল করা এবং ইল্লিগ্যাল আক্সেক্স থেকে সেনসিটিভ ডেটা সিকিউর রাখার মতো সার্ভিস দিয়ে থাকে। পেইড ভিপিএন ছাড়া বাজারে আরো অনেক ভিপিএন আছে যেগুলো পেইড সার্ভিস এর বিপরীতে লিমিটেড আক্সেক্স ও ফিচারস সহ ফ্রিতেই সার্ভিস দিয়ে থাকে।
এ ধরনের ভিপিএন সার্ভিসগুলো ইউজারদের প্রাইভেট নেটওয়ার্ক সেবার বিপরীতে ইউজারদের বিভিন্ন তথ্য কালেক্ট করে থাকে। এক্ষেত্রে বিভিন্ন সার্ভিসগুলো ইউজারদের ইমেইল আইডি, লোকেশন এবং কন্টাক্ট ইনফর্মেশন এর পাশাপাশি ইন্টারনেটে একজন ইউজারের হিস্ট্রি অ্যাক্টিভিটি এবং ব্যবহার সম্পর্কিত সকল তথ্য কুকিজ, ওয়েব বিগেন, এবং পিক্সেল ইন্সার্ট করার মাধ্যমে কালেক্ট করে থাকে। পরবর্তীতে এসব ডেটা ভিপিএন সার্ভিস গুলো বিভিন্ন থার্ড পার্টির কাছে বিক্রি করে রেভিনিউ জেনারেট করে।
থার্ড পার্টিগুলো ভিপিএন সার্ভিসগুলো থেকে এসব ডেটা কালেক্ট করে বিভিন্ন অ্যানালিটিক্স টুল ব্যবহার করে ইউজারদের অনলাইন বিহেভিয়ার এনালাইজ করে থাকে। যা পরবর্তীতে অ্যাড প্লেসমেন্টের ক্ষেত্রে অ্যাডভারটাইজারদের জন্য বেশ কার্যকরী। ইউজারদের ব্যক্তিগত তথ্য বিক্রি করার পাশাপাশি ভিপিএন সার্ভিস প্রোভাইডারা ইউজারদের অ্যাড দেখানোর মাধ্যমেও রেভিনিউ জেনারেট করে থাকেন।
ভিপিএন সার্ভিসগুলো পপ আপ অ্যাড, আনস্কিপ অ্যাবল অ্যাড, ব্যানার অ্যাড সহ আরো বেশ কয়েক ধরনের অ্যাড শো করে থাকে। এ ধরনের এড করার শো করার ক্ষেত্রে ভিপিএন সার্ভিস প্রোভাইডাররা ইউজারদের অনলাইন অ্যাক্টিভিটি এবং বিহেভিয়ারের উপর ভিত্তি করে ইউজারের জন্য রিলেভেন্ট অ্যাড শো করে। যার জন্য ভিপিএন গুলো অ্যাড পাবলিশারদের কাছ থেকে রেভিনিউ কালেক্ট করে।
বর্তমানে সব ধরনের বিজনেস এবং পার্সোনাল অ্যাকটিভিটি অনেকটাই ইন্টারনেট নির্ভর হয়ে যাওয়ার কারণে ইনফরমেশন এবং ডেটা শেয়ারিং বাড়ার সাথে সাথে প্রাইভেসি এবং সিকিউরিটি ইস্যু গুলো বেড়্রেছে। যার ফলে গত ১ দশকে ইন্টারনেট ইউজারদের মধ্যে ভিপিএন ব্যাবহার করার প্রবণতা বৃদ্ধি পেয়েছে এবং ফলশ্রুতিতে ভিপিএন ইন্ডাস্ট্রি এর গ্রোথ ছিলো বেশ লক্ষণীয়।
আরও পড়ুনঃ ২০২১ সালের ৫টি সেরা ভিপিএন VPN | সেরা ৫ ভিপিএন অ্যাপ
আর্টিকেল সম্পর্কিত তথ্য জানতে কমেন্ট করুন। আপনার প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।