কম্পিউটার নেটওয়ার্ক কি | কম্পিউটার নেটওয়ার্ক কত প্রকার — কম্পিউটার নেটওয়ার্ক হলো মূলত এমন একটি ব্যবস্থা যেখানে ২ কিংবা ততোধিক কম্পিউটার একসঙ্গে যুক্ত হয়ে থাকে। কম্পিউটার নেটওয়ার্ক ইউজাররা ফাইল, প্রিন্টার এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় কিছু সম্পদ শেয়ার করে ব্যাবহার করতে পারেন।
একজন আরেকজনের কাছে মেসেজ পাঠাতে পারেন এবং একটি কম্পিউটারে বসে অন্য আরেকটি কম্পিউটারে প্রোগ্রাম পরিচালনা করতে পারেন। একটি কম্পিউটার নেটওয়ার্কে মূলত ৩টি উপাদান থাকে। যেমনঃ নেটওয়ার্ক সফটওয়্যার, অ্যাপ্লিকেশন সফটওয়্যার ও নেটওয়ার্ক হার্ডওয়্যার।
নেটওয়ার্ক সফটওয়্যার
নেটওয়ার্ক সফটওয়্যার হলো কতোগুলো প্রোগ্রামের সমষ্টি যা নেটওয়ার্ক ইউজারের নিয়ম কিংবা প্রোটোকল কানেক্ট করে, যার ভিত্তিতে ১টি কম্পিউটার অন্য আরেকটি কম্পিউটারের সঙ্গে তথ্য শেয়ার করা বা তথ্য আদান-প্রদান করে অর্থাৎ কথা বলে। ফরম্যাটকৃত নির্দেশাবলী তথা প্যাকেট সমূহ আদান প্রদান করে এই প্রোটোকল গুলো রক্ষা করা হয়। প্রোটোকল গুলো ২ কম্পিউটারের নেটওয়ার্ক অ্যাপ্লিকেশন গুলোর মাঝে যৌক্তিক সংযোগ সৃষ্টি করে। ভৌত নেটওয়ার্কের মধ্যে দিয়ে প্যাকেট পরিচালনা করে এবং একই সাথে পাঠানো প্যাকেটের মাঝে সংঘর্ষের সম্ভাবনা যথাসম্ভব হ্রাস করার চেষ্টা করে।
অ্যাপ্লিকেশন সফটওয়্যার
অ্যাপ্লিকেশন সফটওয়্যার হলো কতগুলো ইন্টারফেস প্রোগ্রামের সমষ্টি। যার সাহায্য কম্পিউটার ইউজারকারীরা নেটওয়ার্কের সঙ্গে যুক্ত হয়ে নেটওয়ার্কে বিদ্যামান বিভিন্ন ফাইল শেয়ার করতে পারেন। এগুলো হচ্ছে ক্লায়েন্ট-সার্ভার অথবা পিয়ার টু পিয়ার আকারের হতে পারে।
নেটওয়ার্ক হার্ডওয়্যার
যেসকল ভৌত যন্ত্রপাতি কিংবা উপাদান একাধিক কম্পিউটারকে কানেক্ট করে, তাদেরকে একসঙ্গে নেটওয়ার্ক হার্ডওয়্যার বলা হয়ে থাকে। এদের মাঝে ২টি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হচ্ছে কম্পিউটারের সিগন্যাল বহনকারী ট্রান্সমিশন মাধ্যম ও অন্যটি হচ্ছে নেটওয়ার্ক এডাপ্টার। ট্র্যান্সমিশন মাধ্যম সাধারণত অপটিক্যাল ফাইবার কিংবা তারের তৈরি।
আর নেটওয়ার্ক অ্যাডাপ্টারের কাজ হচ্ছে ট্রান্সমিশন মাধ্যম এবং নেটওয়ার্ক সফটওয়্যারের মআঝে যোগসূত্র কানেক্ট করা। নেটওয়ার্কে ট্র্যান্সমিট করা তথ্য বিট আকারের অথবা বাইনারি সংখ্যার হয়ে থাকে, যাতে কম্পিউটার এর ইলেকট্রনিক বর্তনী খুবই সহজেই সেটা প্রক্রিয়া করতে পারে। কম্পিউটার নেটওয়ার্কের প্রকারভেদ।
কম্পিউটার নেটওয়ার্ক কত প্রকার
কম্পিউটার নেটওয়ার্ককে মূলত ৪টি ভাগে ভাগ করা হয়ে থাকে। যেমনঃ
১। LAN (Local Area Network)
২। WAN (Wide area network)
৩। PAN (Personal Area Network)
৪। MAN (Metropolitan Area Network)
১. লোকাল এরিয়া নেটওয়ার্ক | Local Area Network
LAN (লোকাল এরিয়া নেটওয়ার্ককে সংক্ষেপে LAN বলা হয়ে থাকে। একই বিল্ডিংয়ের মধ্যে কয়েকটি কম্পিউটার নিয়ে গঠিত নেটওয়ার্ককে মূলত বলা হয়ে থাকে লোকাল এরিয়া নেটওয়ার্ক। এই ধরনের নেটওয়ার্কের গঠন করা খুবই সহজ এবং এই নেটওয়ার্ক গঠন করার জন্য ব্যবহৃত ডিভাইস গুলোর মূল্য খুবই কম হয়ে থাকে। এই লোকাল এরিয়া নেটওযার্কে ব্যবহৃত ডিভাইস গুলো হচ্ছে সুইচ, হাব, রিপিটার ইত্যাদি। আমরা আমাদের দৈনন্দিন জীবনে Local Area Network অর্থাৎ LAN নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে থাকি।
ছোট থেকে মাঝারি আকারের অফিস-আদালত এবং ব্যবসা-বাণিজ্যে গুলোতে এই লোকাল এরিয়া নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে থাকি বা ব্যবহার করা হয়। লোকাল এরিয়া নেটওয়ার্কের মূল উদ্দেশ্য হয়ে থাকে ডিভাইস সমূহের পরস্পরের মাঝে তথ্য অ রিসোর্স শেয়ার করা। ছোট থেকে মাঝারি সাইজের অফিস গুলোতে LAN (লোকাল এরিয়া নেটওয়ার্ক) তৈরি করে মডেম, প্রিন্টার, স্ক্যানার ইত্যাদি ডিভাইসের জন্যে সাশ্রয় করা যেতে পারে।
২. ওয়াইড এরিয়া নেটওয়ার্ক | Wide Area Network
(Wide Area Network) ওয়াইড এরিয়া নেটওয়ার্ককে সংক্ষেপে WAN বলা হয়ে থাকে। দূরের ল্যানসমূকে নিয়ে গড়ে তোলা নেটওয়ার্ককে ওয়াইড এরিয়া নেটওয়ার্ক বলা হয়ে থাকে। সাধারণত ২টি ভিন্ন ভিন্ন দেশের মাঝে এই ধরনের নেটওয়ার্ক গড়ে তোলা হয়। এই ধরনের নেটওয়ার্কের ডাটা ট্র্যান্সফার স্পিড ৫৬ Kbps থেকে ১.৫৪৪ Mbps পর্যন্ত।
এধরনের নেটওয়ার্কের গঠন করা অনেক বেশি জটিল আর সাধারণত অনেক বড় ভৌগোলিক এলাকাকে নিয়ে বিস্তৃত। এই ধরনের নেটওয়ার্কে অর্থাৎ ওয়াইড এরিয়া নেটওয়ার্কে ব্যাবহার করা ডিভাইসগুলো হচ্ছে মডেম, রাউটার, ওয়্যান সুইচ ইত্যাদি।
৩. পার্সোনাল এরিয়া নেটওয়ার্ক | Personal Area Network
একটি পার্সোনাল এরিয়া নেটওয়ার্ক (PAN) একটি কম্পিউটার নেটওয়ার্ক। যা বিভিন্ন ব্যক্তিগত ডিভাইসের (কম্পিউটার, টেলিফোন, ডিজিটাল ডিভাইস ইত্যাদি) মধ্যে ডেটা ট্রান্সমিশনের জন্য এবং উচ্চ স্তরের নেটওয়ার্ক এবং ইন্টারনেটের সাথে সংযোগ স্থাপনের জন্য ব্যবহৃত হয়। কম্পিউটার বাস (USB এবং FireWire) দিয়ে প্যানগুলি তারযুক্ত করা যায়।
ব্লুটুথ, আইআরডিএ, ইউডব্লিউবি, জেড-ওয়েভ, জিগবি, বডি এরিয়া নেটওয়ার্কের মতো নেটওয়ার্ক প্রযুক্তি ব্যবহার করে একটি ওয়্যারলেস পার্সোনাল এরিয়া নেটওয়ার্ক (WPAN) তৈরি করা যায়। একটি পার্সোনাল এরিয়া নেটওয়ার্ক একক ব্যবহারকারীর চারপাশে আইটি ডিভাইসের আন্তসংযোগ পরিচালনা করে। সাধারণত, PAN এ ধরনের যন্ত্রপাতি অনুসরণ করে থাকেঃ Cordless Mice and Keyboards, Bluetooth Handsets, Cordless Phone।
৪.মেট্রোপলিটান এরিয়া নেটওয়ার্ক | Metropolitan Area Network
(Metropolitan Area Network) মেট্রোপলিটান এরিয়া নেটওয়ার্ককে সংক্ষেপে MAN বলা হয়ে থাকে। একই শহরের মাঝে অবস্থিত কয়েকটি ল্যানের সমন্বয়ে গঠন করা ইন্টারফেসকে মূলত বলা হয়ে থাকে মেট্রোপলিটন এরিয়া নেটওয়ার্ক বা সংক্ষেপে MAN। এই ধরনের নেটওয়ার্ক অর্থাৎ মেট্রোপলিটন এরিয়া নেটওয়ার্ক ৫০ থেকে ৭৫ মাইল পর্যন্ত বিস্তৃত হয়ে থাকে। এই নেটওয়ার্কর ডাটা ট্র্যান্সফার স্পীড গিগাবিট পর্যন্ত হতে পারে প্রতি এক সেকেন্ডে। এই ধরনের নেটওয়ার্কে ব্যাবহার করা ডিভাইসগুলো হচ্ছে সুইচ, রাউটার, মাইক্রোওয়েভ এন্টেনা ইত্যাদি।
আর্টিকেল সম্পর্কিত তথ্য জানতে কমেন্ট করুন। আপনার প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।