ড্রাইভিং লাইসেন্স করার নিয়ম | ড্রাইভিং লাইসেন্স করার নিয়ম ২০২১ — আপনার গাড়ি চালানোর অভিজ্ঞতা আছে কি-না বা আপনি গাড়ি চালাতে দক্ষ কি-না তা যাচাই করার একমাত্র মাধ্যম হচ্ছে আপনার ড্রাইভিং লাইসেন্স। আপনি যদি ড্রাইভিং লাইসেন্স ছাড়া রাস্তায় অবৈধভাবে গাড়ি চালান তাহলে আপনাকে জরিমানা গুনতে হবে। একটি দেশের সচেতন নাগরিক হিসেবে প্রতিটি যানবাহন চালকদের ড্রাইভিং লাইসেন্স করা অত্যন্ত জরুরি।
অনেকেই মনে করেন একটি ড্রাইভিং লাইসেন্স করতে অনেক ঝামেলা। কিন্তু কথাটি সম্পূর্ণ ভুল। আপনি চাইলে খুব সহজেই আপনার নির্দিষ্ট মোটর যানের জন্য ড্রাইভিং লাইসেন্স করে নিতে পারবেন। আজকের এই আর্টিকেলটিতে ড্রাইভিং লাইসেন্স করার নিয়ম, ড্রাইভিং লাইসেন্স করার নিয়ম ২০২১, ড্রাইভিং লাইসেন্স নবায়ন করার নিয়ম, ড্রাইভিং লাইসেন্স অনলাইন কপি ডাউনলোড, ড্রাইভিং লাইসেন্স চেক ২০২১, ড্রাইভিং লাইসেন্স পরিক্ষার প্রশ্ন ইত্যাদি নানা বিষয়ে বিস্তারিত ভাবে আলোচনা করা হয়েছে। আশা করি এই আর্টিকেলটি পড়ার মাধ্যমে আপনার মাথায় থাকা ড্রাইভিং লাইসেন্স সম্পর্কিত ভুল ধারনাগুলো পরিষ্কার হয়ে যাবে।
ড্রাইভিং লাইসেন্স করার নিয়ম ২০২১
ড্রাইভিং লাইসেন্স দুই ভাবে করা যায়। যথাঃ একটি হচ্ছে অফলাইন পদ্ধতি এবং আরেকটি হচ্ছে অনলাইন পদ্ধতি। প্রিয় পাঠক আমরা এখন আপনাকে দেখাবো কিভাবে আপনি অনলাইনে ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য আবেদন করবেন। চলুন তাহলে দেখে নেই কিভাবে অনলাইনে ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য আবেদন করবেনঃ
অনলাইনে ড্রাইভিং লাইসেন্স করার পদ্ধতি
১। সর্বপ্রথম আপনাকে আপনার মোবাইল অথবা কম্পিউটারের যেকোনো একটি ব্রাউজারে গিয়ে এই লিংকে ক্লিক করুন অথবা ব্রাউজারে এই লেখাটি https://bsp.brta.gov.bd/ সার্চ করুন।
২। লিংকে গিয়ে প্রথমে উপরের দিকের “নিবন্ধন” নামের অপশনটিতে ক্লিক করতে হবে।
৩। তারপর আপনাকে আপনার জাতীয় পরিচয়পত্র, পাসপোর্ট এবং জন্মনিবন্ধনের স্ক্যান কপি সঠিক ভাবে নির্ধারিত ফরমে পূরণ করতে হবে।
৪। অবশ্যই ফরমের সাথে দুই কপি ছবি জমা দিতে হবে এবং এই ছবির সাইজ হবে ৩০০/৩০০।
৫। বাংলাদেশ সরকারের আওতাধীন মেডিকেল অফিসার কর্তৃক মেডিকেল সার্টিফিকেট ফাইলের স্ক্যান কপি জমা দিতে হবে। মনে রাখবেন এই ফাইলের ম্যাক্সিমাম স্পেস ৩০০ কিলোবাইটের বেশি যাতে না হয়।
৬। এরপর আপনাকে ড্রাইভিং লাইসেন্সের ধরন সেট করতে হবে। আপনি যে ধরনের গাড়ি লাইসেন্স নিতে চান, তার নির্ধারিত ফি বিআরটিএ নির্ধারিত ব্যাংকে জমা দিতে হবে।
৭। টাকা দেয়ার রশিদের স্ক্যান কপি জমা দিতে হবে।
৮। নূন্যতম ড্রাইভিং ৩ মাস শেখার সনদের পাশাপাশি লিখিত, মৌখিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হবে।
৯। সকল তথ্য সঠিক ভাবে পূরণ করে সাবমিট করতে হবে।
অফলাইনে ড্রাইভিং লাইসেন্স করার পদ্ধতি
আমি এখন অফলাইনের নিয়মসমূহ আলোচনা করব। আপনি যদি ড্রাইভিং লাইসেন্স পেতে চান সেক্ষেত্রে আপনাকে নিচের নিয়মসমূহ অনুসরণ করতে হবে।
২। সর্বপ্রথম আপনাকে আপনার নিকটস্থ বিআরটিএ (BRTA) অফিস কার্যালয়ে যেতে হবে।
৩। অবশ্যই জাতীয় পরিচয় পত্র, পাসপোর্ট জন্ম নিবন্ধনের কপি ও দুই কপি পাসপোর্ট সাইজের ছবি নিয়ে যেতে হবে।
৪। বাংলাদেশ সরকার অনুমোদিত রেজিস্টার্ড ডাক্তার হতে অনুমোদনকৃত মেডিকেল সার্টিফিকেট নিয়ে যেতে হবে।
৫। বিআরটিএ অফিস থেকে আপনাকে ফরম দেওয়া হবে।
৬। এসব তথ্যাদি পূরণ করে আপনাকে ব্যাংক বরাবর আপনি যে লাইসেন্স করতে চান তার উপর নির্ভর করে টাকা জমা করতে হবে।
৭। ড্রাইভিং শেখার ৩ মাসের অধিক ড্রাইভিং করার সনদের পাশাপাশি আপনাকে লিখিত এবং মৌলিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হবে।
৮। সকল তথ্যাদি পূর্ণ করে নির্ধারিত ব্যাংকে টাকা জমা দিয়ে সেই রশিদ সহ ফর্ম পূরণ করে কর্তৃপক্ষের নিকট জমা দিতে হবে।
৯। সবকিছু যাচাই-বাছাই করার পর আপনাকে তারা ড্রাইভিং লাইসেন্স পাওয়ার জন্য উপযোগী বা অনুপোযোগী মনে করলে নির্ধারিত সময়ে জানিয়ে দিবে।
উপরোক্ত পদ্ধতি অনুসরণ করে আপনি এভাবেই খুবই সহজে আপনার নির্দিষ্ট ড্রাইভিং লাইসেন্স করে নিতে পারবেন।
ড্রাইভিং লাইসেন্স করার খরচ
১। পেশাদার স্মার্টকার্ড ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য আপনাকে ৫ বছরের মেয়াদ সহ মোট গুনতে হবে ১৬৮০ টাকা।
২। অপেশাদার স্মার্টকার্ড ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য আপনাকে ৫ বছরের জন্য মোট গুণতে হবে ২৫৪২ টাকা।
৩। লার্নার ড্রাইভিং লাইসেন্সের ক্ষেত্রে হালকা মোটর যানের জন্য আপনাকে ৩৪৬ টাকা ফি দিতে হবে।
৪। আবার লার্নার ড্রাইভিং লাইসেন্সের ক্ষেত্রে মোটর যানের পাশাপাশি আরেকটি হালকা মোটর যানের জন্য আপনাকে ৫১৮ টাকা ফি দিতে হবে।
ড্রাইভিং লাইসেন্স নবায়ন করার নিয়ম ২০২১
মনে রাখবেন ড্রাইভিং লাইসেন্স সময়ের মধ্যে নবায়ন করা সবচেয়ে উত্তম। আপনি খুব সহজেই আপনার মেয়াদোত্তীর্ণ ড্রাইভিং লাইসেন্স নবায়ন করার জন্য আবেদন করতে পারবেন। একটি পেশাদার ড্রাইভিং লাইসেন্সের মেয়াদ থাকে ০৫ বছর এবং একটি অপেশাদার ড্রাইভিং লাইসেন্সের মেয়াদ থাকে ১০ বছর। পেশাদার এবং অপেশাদার উভয় ক্ষেত্রে ড্রাইভিং লাইসেন্স নবায়ন করার জন্য যেসব কাগজপত্র প্রয়োজন।
১। নির্ধারিত ফরমে আবেদন।
২। রেজিস্টার্ড ডাক্তার প্রদত্ত মেডিকেল সার্টিফিকেট।
৩। ন্যাশনাল আইডি কার্ড/জন্ম সনদ/পাসপোর্টের সত্যায়িত ফটোকপি।
৪। নির্ধারিত ফি জমাদানের রশিদ।
৫। পেশাদার ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য পুলিশি তদন্ত প্রতিবেদন।
৬। সদ্য তোলা এক কপি পাসপোর্ট ও এক কপি স্ট্যাম্প সাইজ ছবি।
অপেশাদার ড্রাইভিং লাইসেন্স নবায়ন করার নিয়ম ২০২১
১। যদি আপনার অপেশাদার ড্রাইভিং লাইসেন্সের মেয়াদ শেষ হওয়ার ১৫ দিনের মধ্যে নবায়ন করতে চান তাহলে আপনার খরচ হবে ২৪২৭ টাকা।
২। যদি আপনার মেয়াদ উত্তীর্ণের ১৫ দিন পার হয়ে যায় তাহলে আপনাকে প্রতি বছরের জন্য ২০০ টাকা করে জরিমানা গুণতে হবে।
৩। আপনার মেয়াদোত্তীর্ণের সময়ের উপর ভিত্তি করে নির্দিষ্ট ব্যাংকে টাকা ডিপোজিট করে আপনার নিকটস্থ বিটিআরসি অফিসে যেতে হবে।
৪। আপনার নিকটস্থ বিটিআরসি কর্তৃপক্ষ হতে চাহিদা মোতাবেক চাওয়া সকল কাগজপত্র সঠিকভাবে জমা দিতে হবে। যেসব কাগজ লাগবে তা উপরে বর্ণনা করা হয়েছে।
৫। যদি আপনার সকল কাগজপত্র ঠিকঠাকভাবে থাকে তাহলে সেই একই দিনে আপনার কাছ থেকে বায়োমেট্রিক অর্থাৎ ডিজিটাল স্বাক্ষর, আঙ্গুলের ছাপ ইত্যাদি নেওয়া হবে।
৬। আপনার ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রিন্টিং শেষ হলে আপনাকে বিটিআরসি অফিস থেকে মেসেজের মাধ্যমে জানিয়ে দেওয়া হবে।
পেশাদার ড্রাইভিং লাইসেন্স নবায়ন করার নিয়ম ২০২১
১। পেশাদার ড্রাইভিং লাইসেন্স ধারীদের ক্ষেত্রে একটি পুনরায় ব্যবহারিক পরীক্ষার আয়োজন করা হবে।
২। আপনাকে পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হবে। উত্তীর্ণ হওয়ার পর ড্রাইভিং লাইসেন্সের মেয়াদ শেষ হওয়ার ১৫ দিনের মধ্যে হলে ১৫৬৫ টাকা এবং ১৫ দিন পার হয়ে গেলে প্রতি বছরের জন্য ২০০ টাকা করে জরিমানা গুণতে হবে।
৩। বিটিআরসি কর্তৃপক্ষ আপনার কাছ হতে যেসকল কাগজপত্র চাইবে তা সঠিকভাবে জমা দিতে হবে। যেসব কাগজ লাগবে তা উপরে বর্ণনা করা হয়েছে।
৪। যদি আপনার সকল কাগজপত্র ঠিকঠাকভাবে থাকে তাহলে সেই একই দিনে আপনার কাছ থেকে বায়োমেট্রিক অর্থাৎ ডিজিটাল স্বাক্ষর, আঙ্গুলের ছাপ ইত্যাদি নেওয়া হবে।
৫। আপনার লাইসেন্স নবায়ন হয়ে গেলে তারা আপনাকে মেসেজের মাধ্যমে জানিয়ে দিবে।
ড্রাইভিং লাইসেন্স চেক 2021 — অনলাইনে ড্রাইভিং লাইসেন্স চেক ২০২১
ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য আবেদন করার পরে সেটা প্রিন্টিংয়ের কোন পর্যায়ে রয়েছে সেটা জানার জন্য আবেদনকারীকে ড্রাইভিং লাইসেন্স সংশ্লিষ্ট অফিসে গিয়ে জানতে হতো। যার কারণে গ্রাহকের সময় এবং যাতায়াত খরচের অনেক টাকা অপচয় হতো। এই সমস্যা সমাধানের জন্য মোবাইল ফোনে মেসেজের মাধ্যমে ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রস্তুতের স্ট্যাটাস সম্বন্ধে জানার প্রক্রিয়া চালু করছে। যার কারণে আবেদনকারী বর্তমান সময়ে ঘরে বসে থেকে তার হাতে থাকা মোবাইল ফোনের মেসেজের মাধ্যমে ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রস্তুতের স্ট্যাটাস সম্বন্ধে জানতে পারবে।
সেবা গ্রহণ প্রক্রিয়া
মোবাইল ফোনের মেসেজ অপশনে গিয়ে টাইপ করুন DL<Space>Reference no এবং মেসেজটি পাঠিয়ে দিন ২৬৯৬৯ নম্বরে। যেমনঃ আপনার ড্রাইভিং লাইসেন্সের রেফারেন্স নম্বর যদি DM2P045 হয় তবে মেসেজে টাইপ করবেন এভাবেঃ DL DM2P045। তারপর ২৬৯৬৯ এই নাম্বারে মেসেজ সেন্ড করবেন। ফিরতি মেসেজে আপনার ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রিন্টিংয়ের বর্তমান স্ট্যাটাস জানানো হবে।
অনলাইনে ড্রাইভিং লাইসেন্স চেক করার জন্য আপনি গুগল প্লে স্টোরে থেকে এই অ্যাপটি আপনার স্মার্টফোনে ইনস্টল করুনঃ ড্রাইভিং লাইসেন্স দেখার অ্যাপ ডাউনলোড করুন এখানে ক্লিক করে। এই অ্যাপটি ব্যবহার করার মাধ্যমে আপনি খুবই সহজে ড্রাইভিং লাইসেন্স চেক করতে পারবেন। এই অ্যাপে আপনার জন্ম তারিখ এবং ড্রাইভিং লাইসেন্স নাম্বার ব্যাবহার করে খুবই সহজে আপনার কাঙ্ক্ষিত ড্রাইভিং লাইসেন্স চেক করতে পারবেন।
আর্টিকেল সম্পর্কিত তথ্য জানতে কমেন্ট করুন। আপনার প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।