ইমু হ্যাক থেকে বাঁচার উপায় | ইমু হ্যাক হলে কি করব — ইমু হচ্ছে জনপ্রিয় অডিও/ভিডিও কলিং এবং ইনস্ট্যান্ট মেসেজিং অ্যাপ। এন্ড্রয়েড স্মার্টফোন কিংবা আইওএস সকল ভার্সনেই ব্যবহার করা যায় এই বহুল ব্যবহৃত এবং জনপ্রিয় ইমু অ্যাপটি। বিশেষ করে প্রবাসী মানুষদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বাংলাদেশ এবং ভারতীয় উপমহাদেশে ইমু খুবই জন্রপিয়। অসাধারণ ইউজার এক্সপেরিয়েন্স, সহজ ইউজার ইন্টারফেস এবং অনেক গুলো প্রয়োজনীয় ফিচার সমৃদ্ধ এই অ্যাপের বর্তমান ইউজার সংখ্যা ৭১ লাখেরও বেশি।
হাই কোয়ালিটি অডিও-ভিডিও কল, ফ্রি এবং আনলিমিটেড মেসেজিং, ২জি/৩জি নেটওয়ার্ক থাকা সত্ত্বেও ভালো মেসেজিং সার্ভিস, গ্রুপ ভিডিও কল, ফ্যামিলি কল সহ ফটো/ভিডিও শেয়ারিং এর মাধ্যমে জনপ্রিয় হয়ে ওঠা ইমুর ব্যবহারকারীদের মধ্যে বর্তমানে ভয়ের কারণ হয়ে উঠেছে ইমু হ্যাকিং অর্থাৎ ভালো করে বলতে গেলে ইমু স্প্যামিং। আজকের এই আর্টিকেলে আমরা বিস্তারিত আলোচনা করবো কিভাবে ইমু স্পামিং থেকে বাঁচা যায় অথবা ইমু হ্যাক থেকে বাঁচার উপায় সম্পর্কে। ইমু হ্যাক থেকে বাঁচার উপায় সম্পর্কে জানার আগে জেনে নেই ইমু স্প্যামিং কি বা স্প্যাম কিভাবে হয়?
ইমু হ্যাক বা স্প্যাম কিভাবে হয়?
প্রথমত ইমু হ্যাকিং বলে প্রচলিত ঘটনা গুলোকে সত্যিকার অর্থে বলতে গেলে ইউজারের দুর্বলতাকে কাজে লাগিয়ে এক্সেস নেওয়া। কিন্তু পুরো ঘটনা কিভাবে ঘটে? প্রথমে হ্যাকার বা স্প্যামার কোনো ভাবে ইউজারের মোবাইল নাম্বার সংগ্রহ করে। সেটা হতে পারে সোশ্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বা অন্য কোনো প্রচলিত মাধ্যমে। তবে এক্ষেত্রে অপরিচিত মানুষকে নিজের কন্টাক্টে যুক্ত করার মাধ্যমে ইউজার প্রথমেই হ্যাকারকে সুযোগ করে দেয় তার মোবাইল নাম্বার প্রকাশ করার। যার ফলে বাকি কাজ হ্যাকারের জন্য হয়ে যায় খুবই সহজ।
মোবাইল নাম্বার সংগ্রহ করা হয়ে গেলে এরপরে সেই মোবাইল নাম্বার দিয়ে ইমু একাউন্টে হ্যাকার চেষ্টা করে লগইন করতে। কিন্তু ইমুতে নাম্বার দিয়ে লগইন করতে গেলে নাম্বার ভেরিফাই করতে হয় অর্থাৎ উক্ত নাম্বারে একটা OTP যায় সেটা ইউজারের কাছ থেকে জেনে নিতে পারলেই হ্যাকার তখন ইমুতে ঢুকতে পারবে।
কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে ইউজার কেন অচেনা কাউকে তার OTP দিবে? এখানেই আসে হ্যাকারের প্রতারণার দক্ষতা এবং তার প্রোফেশনালিজম। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে হ্যাকার ইউজারের মোবাইলে ফোন করে ইমু অথরিটি সেজে OTP কোড নেয়ার চেষ্টা করে। এক্ষেত্রে, মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে অসাবধান বা অসতর্ক ইউজারের কাছ থেকে OTP নেয়া খুবই সহজ। এবং একবার এক্সেস করতে পারলে ইউজার বুঝতেও পারবেনা যে তার একাউন্ট অন্য কোনো একজন ব্যবহার করছে। এবং যার ফলে হ্যাকার যেকোনো ধরনের কাজে উক্ত একাউন্ট ব্যবহার করতে পারে।
ইমু হ্যাক করলে কি কি বিপদ হতে পারে?
প্রথমত আমাদের অনেকের মনে প্রশ্ন জাগে হ্যাকার যদি ইমু হ্যাক করে তাহলে আমাদের কি কি সমস্যা হতে পারে? অথবা হ্যাকাররা আমাদের কি কি ক্ষতি করতে পারবে? তাহলে চলুন দেখে নেই ইমু আইডি হ্যাক হওয়ার পরে হ্যাকাররা কি কি ধরনের ক্ষতি করতে পারে।
১। প্রথমত আপনার সম্পূর্ণ কন্টাক্ট লিস্টের এক্সেস থাকবে হ্যাকারের কাছে। যার ফলে চাইলেই তাদেরকে ব্ল্যাকমেইল করতে পারবে।
২। ইমু চ্যাটে থাকা আপনার আগের মেসেজিং দেখে আপনাকে ব্ল্যাক মেইল করা হ্যাকারের জন্য খুবই সহজ কাজ।
৩। আপনার পার্সোনাল ডেটা বিক্রি করার মাধ্যমে বিভিন্ন এগ্রেসিভ ডেটা ব্রোকারের কাছ থেকে অর্থ নেয়া।
৪। মিথ্যা তথ্য ও গুজব ছড়িয়ে আপনার বদনাম করা সহ অপরাধের মতো ঘটনাও ঘটাতে পারে।
৫। আপনার একাউন্ট দিয়ে কোনো অপরাধ করে আপনাকে ফাঁসিয়ে দেয়ার মতো ভয়ংকর ঘটনাও ঘটতে পারে।
কিভাবে বুঝবো ইমু হ্যাক হয়েছে কি-না?
বেশ কিছু লক্ষণ আছে যার মাধ্যমে বুঝতে পারবেন আপনার ইমু একাউন্ট হ্যাক হয়েছে কি-না।
১। চ্যাট লিস্টে বা কন্টাক্ট লিস্টে কোনো অস্বাভাবিক কন্টাক্ট।
২। আপনার ইমু একাউন্টটি অন্য কোনো ডিভাইসে লগইন করা আছে কি-না চেক করা।
৩। চ্যাট লিস্টে এমন কোনো মেসেজিং হিস্টোরি যা আপনি করেননি সেরকম কিছু চোখে পড়া।
ইমু হ্যাক থেকে বাঁচতে কি করব?
“Protection is better than cure” - কথাটা এক্ষেত্রে যথার্থ। অর্থাৎ হ্যাক হবার আগেই সতর্ক হওয়া ভালো। সেক্ষেত্রে নিচের স্টেপ গুলো ফলো করতে পারেন।
১। প্রথমেই অচেনা অপরিচিত কাউকে আপনার চ্যাট লিস্টে এড করবেন না। কেউ মিথ্যা পরিচয় বা ফেক একাউন্ট দিয়ে মেসেজ করলে তাকে ইগ্নোর করাই বেটার।
২। আপনার প্রাইভেসি অপশন পাবলিক এভেইলেভল রাখবেন না অর্থাৎ খুব পার্সোনাল ডেটা শেয়ার থেকে বিরত থাকবেন।
৩। নিয়মিত চেক করবেন অন্য কোনো ডিভাইস থেকে লগইন হয়ে আছে কিনা।
৪। ভুলেও কখনো কোনো দিন কাউকে কোনো OTP (ওয়ান টাইম পাসওয়ার্ড) বা কোড দিবেন না। শুধু ইমু নয় বরং কোনো অ্যাপের কোনো OTP কাউকেই দেওয়া উচিত না।
ইমু হ্যাক হলে কি করব | ইমু হ্যাক হলে কি করনীয়
যদি ইতোমধ্যে আপনার ইমু একাউন্ট হ্যাক হয়ে থাকে তাহলে নিচের স্টেপ ফলো করে আপনার একাউন্ট রিকোভার করতে পারবেন।
স্টেপ-১ঃ প্রথমেই Setting অপশন থেকে Account & Security তে যাবেন।
স্টেপ-২ঃ এবারে Manage Devices অপশনে ক্লিক করলে আগে থেকে লগইন হয়ে আছে এমন সব ডিভাইসের নাম দেখাবে।
স্টেপ-৩ঃ যদি দেখেন অন্য কোনো ডিভাইস দেখাচ্ছে যেটা আপনি কখনো ব্যবহার করেননি তাহলে সেখানে ক্লিক করে "Delete” এ ক্লিক করুন।
স্টেপ-৪ঃ এবারে Delete এ ক্লিক করার পরে আপনার অরিজিনাল নাম্বারে একটা OTP কোড আসবে। সেটা বসিয়ে Yes প্রেস করলেই ওই ডিভাইস থেকে লগ আউট হয়ে যাবে।
স্টেপ-৫ঃ শুধু লগ আউট করাই সেফ পদ্ধতি নয়। এরপরে আবার Setting থেকে "Change Phone Number” থেকে আগের নাম্বার পাল্টে নতুন নাম্বার সেট করে নিন।
স্টেপ-৬ঃ এখন নাম্বার যদি পরিবর্তন না করতে চান সেক্ষেত্রে উপায় হচ্ছে একাউন্ট ডিলিট করে আবার নতুন একাউন্ট খুলে নেয়া। সেক্ষেত্রে Setting থেকে "Delete imo Account” এ ক্লিক করলেই ভেরিফিকেশন কোড বসানোর মাধ্যমে আপনি একাউন্ট সম্পূর্ণ ডিলিট করতে পারবেন।
ডিলিট হয়ে গেলে আপনার আর ভয় থাকবেনা কারণ হ্যাকার চাইলেও আর এই একাউন্ট ব্যবহার করতে পারবেনা। আর যেহেতু নতুন একাউন্ট তাই লগইন করতে গেলে তাকে আবার ভেরিফিকেশন কোড বসাতে হবে। এবং যেহেতু এখন আপনি সতর্ক হয়ে গেছেন আশা করি আপনি আর তাকে কোড দিয়ে বসবেন না।
শেষ কথা
এভাবেই অল্প কিছু স্টেপ এর মাধ্যমেই আপনি নিজের ইমু একাউন্ট হ্যাক থেকে সুরক্ষিত রাখতে পারবেন। তবে ভালো বুদ্ধি হচ্ছে হ্যাক হবার আগেই নিজেকে সেফ রাখা এবং সেজন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিয়ে আমরা উপরে আলোচনা করে এসেছি। আশা করছি আপনি ইমু ব্যবহারে আরো সতর্ক হয়ে উঠবেন এবং এরপরে ইমু হ্যাক থেকে বেচে থাকতে পারবেন। আপনার বন্ধুদের সঙ্গে শেয়ার করার মাধ্যমে তাদের সতর্ক করে তুলুন। ধন্যবাদ।