অনলাইনে বিবাহ রেজিস্ট্রেশন যাচাই | বিবাহ রেজিস্ট্রেশন যাচাই করার নিয়ম — বর্তমানে বাংলাদেশের অনেক মানুষই বিয়ে করার সময় তা রেজিস্টার করান না। অনেকেই বিয়ে রেজিস্ট্রেশনকে গুরুত্বহীন মনে করেন। কিন্তু আপনাদের অবগতির জন্য জানানো যাচ্ছে যে বিয়ে রেজিস্ট্রেশনের গুরুত্ব অপরিসীম। যদি আপনি বিয়ে করার পর তা রেজিস্ট্রেশন না করেন তাহলে আপনার বিয়ে করার কোনো দলিল রইল না।
নতুন বিবাহ রেজিস্ট্রেশন হচ্ছে আপনার বিয়ের প্রামাণ্য দলিল। আর এরই পরিপ্রেক্ষিতে ১৯৭৪ সালে বিয়ে নিবন্ধন ও তালাক সম্পর্কে একটি নতুন আইন প্রণয়ন করা হয়। আইন অনুযায়ী আপনাকে অবশ্যই বিয়ে করার পর তা নিবন্ধন করতে হবে।
মূলত যিনি বিয়ে করান তাকে বলা হয় নিকাহ রেজিস্ট্রার। যদি আপনি আপনার বিয়ের দিন একজন নিকাহ রেজিস্ট্রারের মাধ্যমে বিবাহ সম্পন্ন করে থাকেন তাহলে আপনাকে অবশ্যই সেই দিনই তৎক্ষণাৎ আপনার বিয়ের রেজিস্ট্রেশন নিশ্চিত করতে হবে। যদি আপনি কোনো মাওলানা বা হুজুরের মাধ্যমে বিয়ের সম্পর্ক করে থাকেন, তাহলে আপনাকে অবশ্যই মনে করে বিয়ের পরবর্তী 30 দিনের মধ্যে একজন নিকাহ রেজিস্ট্রারের কাছ থেকে আপনার বিয়ের নিবন্ধন করে নিতে হবে।
মনে রাখবেন বিবাহ রেজিস্ট্রেশন কেবলমাত্র স্বামীর দায়িত্ব। এক্ষেত্রে কোনভাবেই স্ত্রীর উপর কোনোরূপ দোষারোপ করা যাবেনা। কেননা আইন অনুযায়ী স্বামীকেই বিয়ের রেজিস্ট্রেশনের কাজ সম্পন্ন করতে হবে। যদি স্বামী অবহেলাজনিত বা যেকোনো কারণে নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে বিয়ে রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন না করেন তাহলে তাকে আইন অনুযায়ী দুই বছরের বিনাশ্রম কারাদণ্ড বা তিন হাজার টাকা পর্যন্ত জরিমানা দিতে হবে।
বিবাহ রেজিস্ট্রেশন করার নিয়ম ও সুযোগ-সুবিধা
বিবাহ রেজিস্ট্রেশন করার সবচেয়ে ভালো উপায় হচ্ছে যেদিন বিবাহ সম্পন্ন হবে সেদিনই রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন করে ফেলা। ফলে পরবর্তীতে আপনার আর কোনো বিবাহ নিয়ে ঝামেলা হবেনা। কিন্তু যদি আপনি কোনো সমস্যা বা ঝামেলায় পড়ে থাকেন তাহলে আপনাকে বিয়ে করার পরবর্তী ৩০ দিনের মধ্যেই আপনার বিবাহ রেজিস্ট্রেশন অবশ্যই সম্পন্ন করতে হবে।
কিন্তু একটি পরিসংখ্যান হতে জানা গেছে যে, বিয়ে করার পর অনেক মানুষই বিবাহ রেজিস্ট্রেশন করতে ভুলে যায়। পরবর্তীতে অনেক মানুষই আবার কাজি অফিসে গিয়ে বিবাহ রেজিস্ট্রেশন করা ঝামেলা মনে করে। তাই যেদিন বিবাহ হবে সেদিনই বিবাহ রেজিস্ট্রেশন করা সবচেয়ে উত্তম।
সব সময় মনে রাখবেন আপনার বিয়ে করার একমাত্র প্রামাণ্য দলিল রয়েছে এই বিবাহ রেজিস্ট্রেশন। যদি কোনো কারণে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে কোনরকম বিভেদ অথবা কোনো রকম সন্দেহের সৃষ্টি হয় তাহলে এই বিবাহ রেজিস্ট্রেশন সনদের কোনো বিকল্প নেই। কোন জায়গায় ভ্রমণের সময় বা কোনো হোটেলে থাকার সময় এই বিবাহ রেজিস্ট্রেশন আপনার অনেক কাজে লাগবে। অনেক বড় বড় হোটেলে বিবাহ রেজিস্ট্রেশন সনদ ছাড়া সেখানে কাপলদের এক রুমে থাকতে দেয়া হয়না।
এছাড়াও যদি স্বামী স্ত্রীর উপর সন্তান ভরণ-পোষণের দায়িত্ব ছেড়ে দেয়। অথবা স্ত্রীর সাথে প্রতারণা করে বা স্ত্রীর বিনা অনুমতিতে নতুন বিয়ে করে ফেলে, তাহলে এই বিবাহ রেজিস্ট্রেশন সনদ অনেক কাজে লাগবে। যদি স্ত্রী স্বামীর বিরুদ্ধে প্রতারণার মামলা করতে চায়, তাহলে আদালত প্রথমেই তার কাছে বিয়ের প্রমাণ হিসেবে নিকাহনামা চাইবে। সুতরাং বুঝতেই পারছেন বিয়ে রেজিস্ট্রেশন করা ঠিক কতটা জরুরি।
বিয়ে রেজিস্ট্রেশনের ক্ষেত্রে কাজির কাজ হলো নিকাহনামার প্রতিটি ঘর পূরণ করানো। তবে মিথ্যা তথ্য দেয়ার জন্য কাজি দায়ী নন। কারণ সব তথের সত্যতা খুজে নেয়া কাজির পক্ষে সম্ভব নাও হতে পারে। তিনি শুধু যাচাই করে নিবেন যে, তথ্যগুলোর কোথাও কোনো অসামজস্যতা আছে কিনা যা পরবর্তীতে সন্দেহের সৃষ্টি করে।
যেমন ছেলে বা মেয়ের বয়স নির্ধারণের ক্ষেত্রে তিনি জন্ম নিবন্ধন লিপি দেখতে পারেন। তবে কাজি যদি ইচ্ছাকৃত কোনো ভুল করেন অথবা নিজের দায়িত্ব যথাযথ সতর্কতার সাথে পালন না করেন অথবা দায়িত্বে অবহেলা করেন অথবা নিকাহনামার ঘরগুলো ঠিকভাবে পূরণ না করেন, তবে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য জেলা প্রসাসন বা জেলা রেজিস্টার বরাবর আবেদন করা যাবে।
বিবাহ রেজিস্ট্রেশন ফি
বাংলাদেশের বেশিরভাগ মানুষেরই বিশেষ করে গ্রাম এলাকার মানুষের বিবাহ রেজিস্ট্রেশন ফি সম্পর্কে কোনো ধারণা নেই। তাই অনেক সময় তারা অতিরিক্ত ফি দিয়ে বিবাহ রেজিস্ট্রেশন করে ফেলেন। অনেক লোকাল কাজী রেজিস্ট্রেশনের জন্য অতিরিক্ত ফি নিয়ে থাকেন।
সুতরাং এসব প্রতারণা থেকে বাঁচতে হলে আমাদের অবশ্যই বিবাহ রেজিস্ট্রেশন ফি সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা রাখতে হবে। আর প্রতারণা থেকে বাঁচতে হলে আপনারা সরকার নিয়োজিত কাজি বা নিকাহ রেজিস্ট্রার হতে বিবাহ রেজিস্ট্রেশন করতে পারেন।
দেনমোহরের প্রতি হাজারে ১২-৫০ টাকা করে আপনাকে ফি দিতে হবে। মনে রাখবেন দেনমোহর যাই হোক না কেন বিবাহ রেজিস্ট্রেশন ফি কখনোই ২০০ টাকার কম হবেনা। অর্থাৎ সর্বনিম্ন ২০০ টাকা হতেই হবে। আর যদি দেনমোহর ৪ লক্ষ টাকার অধিক হয় তাহলে পরবর্তী প্রতি ১ লক্ষ টাকার জন্য একশত টাকা হারে ফি প্রদান করতে হবে। মনে রাখবেন বিয়ের রেজিস্ট্রেশন ফি শুধুমাত্র স্বামীকেই প্রদান করতে হবে।
শেষ কথা
বিবাহ রেজিস্ট্রেশন স্বামী এবং স্ত্রী উভয়ের জন্য অত্যন্ত জরুরী। কেননা এটিই একমাত্র বিয়ের প্রামাণ্য দলিল। সুতরাং বাংলাদেশের একজন সচেতন নাগরিক হিসেবে আমাদের সকলের উচিত সঠিক সময়ে এবং সঠিক কাজি হতে বিবাহ রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন করা। মনে রাখবেন স্বামী-স্ত্রী জনিত যেকোনো সমস্যার জন্য এই বিয়ের রেজিস্ট্রেশন সনদ বা নিকাহনামার গুরুত্ব অপরিসীম।
বিশেষ দ্রষ্টব্যঃ আপনাদের সকলের অবগতির জন্য জানানো যাচ্ছে যে, এখন পর্যন্ত অনলাইনে বিবাহ রেজিস্ট্রেশন যাচাই করার কোনো প্রক্রিয়া বের হয়নি। কিন্তু তবুও আমরা আশা করছি যে এই আর্টিকেলটির মাধ্যমে আপনি বিবাহ রেজিস্ট্রেশন সম্পর্কে অনেকাংশ ধারণা পেয়েছেন। যদি ভবিষ্যতে কোনো সময় অনলাইনে বিবাহ রেজিস্ট্রেশন যাচাই করার নিয়ম চলে আছে তবে আমরা এই আর্টিকেলের মাধ্যমে আপনাদেরকে জানিয়ে দিবো।
আর্টিকেল সম্পর্কিত তথ্য জানতে কমেন্ট করুন। আপনার প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।