কম্পিউটার গেমসের ক্ষতিকর প্রভাব — ‘কম্পিউট’ শব্দের অর্থ হলো গনণা করা। আর ‘কম্পিউটার’ শব্দের অর্থ গণনাকারি যন্ত্র। পূর্বে কম্পিউটারকে কেবলমাত্র গণনাকারি যন্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা হলেও বর্তমানে এটিকে কেবল গণনা করার কাজেই নয়। আধুনিক এই যুগের বলতে গেলে সকল আধুনিক প্রযুক্তি এই কম্পিউটারের সহায়তায় তৈরি করা হয়েছে। বিজ্ঞানকে বাদ দিয়ে যেমনি ভাবে আধুনিক যুগ কল্পনা করা যায়না তেমনি ভাবে কম্পিউটার কেউ বাদ দিয়ে বিজ্ঞানকে কল্পনা করা যায়না।
কাজেই কম্পিউটারকে বলতে পারি আধুনিক বিজ্ঞানের ভৌত ভিত্তি। বর্তমানে প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রেই কম্পিউটারের ব্যবহার পরিলক্ষিত করা যায়। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে শুরু করে অফিস-আদালত এমনকি উপার্জনের মাধ্যম হিসেবে বর্তমানে কম্পিউটারকে ব্যবহার করা হচ্ছে। জীবনকে সহজ ও স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করতে বিনোদন অপরিহার্য। কম্পিউটারকে কেউ কেউ বিনোদন হিসেবেও ব্যবহার করে থাকেন। এর মাধ্যমে ছবি, ভিডিও, অডিও, টিভি দেখা সহ এক কথায় কম্পিউটারকে বিনোদন উৎস কেন্দ্র বলা যেতে পারে। খেলাধুলা ও শারীরিক ব্যায়াম স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী।
খেলাধুলার মাধ্যমে মানুষের মন প্রফুল্ল থাকে। সেই খেলাধুলা যদি ঘরে বসে খেলা যায় তাহলে কার না ভালো লাগে আধুনিক বিজ্ঞানের এ যুগে কম্পিউটারে এমন সব সফটওয়্যার তৈরি করা হয়েছে যা এক সময় মানুষের কল্পনা ছিল কিন্তু তা আজ বাস্তবে রূপান্তর সম্ভব হয়েছে। একজন ব্যক্তি যদি ফুটবল খেলতে চায় তবে সে তার কম্পিউটার দিয়ে সরাসরি অনলাইনে যেকোনো সময় খেলতে পারে। একজন ব্যক্তি যদি ক্যারামবোর্ড খেলতে চায় তাও সে সরাসরি তার বন্ধুদের সাথে অনলাইনে কম্পিউটারে খেলতে পারবে।
এমন কি একজন ব্যক্তি অনলাইনে যেকোনো ধরনের খেলায় প্রতিযোগিতায় অংশ গ্রহণ করতে পারে।কিন্তু ওই খেলাধুলোর মাধ্যমে একজন ব্যক্তির যেমনে মন প্রফুল্ল রাখতে পারে তেমনি ভাবে এই খেলায় হতে পারে তার জন্য হুমকি স্বরূপ। প্রিয় পাঠক, আজ আমরা এই আর্টিকেলে কম্পিউটার গেমস খেলার ক্ষতিকর প্রভাব নিয়ে আলোচনা করবো।
কম্পিউটার গেম কি
কম্পিউটার গেম হলো এক ধরনের সফটওয়্যার যা কম্পিউটার বা ডিভাইসে ইনস্টলেশন করে সেটআপ করতে হয়। এটি বিভিন্ন ধরনের সফটওয়্যার ভিত্তিক গেমস হতে পারে। এক্ষেত্রে সেটি নির্ভর করে এর সফটওয়্যার কনফিগারেশনের উপরে। বর্তমানে এর গেমের সফটওয়্যার কনফিগারেশনে আধুনিক থ্রিডি মুড যুক্ত হওয়ায় কম্পিউটার বা পিসিতে সবকিছু বাস্তব মনে হয়। এর মাধ্যমে যেকোনো প্রতিযোগিতা মূলক খেলা যেমনঃ গাড়ি অথবা মোটরসাইকেল প্রভূতি সবকিছুই বাস্তব অনুভূত হয়।
কিভাবে কম্পিউটার গেমস ডাউনলোড করা হয়
প্রতিটি ডিভাইস মোবাইল বা কম্পিউটার যেটাই হোক এর নিজস্ব কিছু ফাংশন রয়েছে। কিছু কিছু অ্যাপ রয়েছে যেগুলো মোবাইল অথবা কম্পিউটার যেটাই হোক অ্যাকাউন্ট তৈরি করে লগইন করতে হয়।এদের মধ্যে অন্যতম একটি অ্যাপ হচ্ছে গুগল প্লে স্টোর। প্রথমেই এই গুগল প্লে স্টোরে একটি অ্যাকাউন্ট ক্রিয়েট করতে হবে। এরপর সেই গুগল প্লে স্টোর থেকে পছন্দমতো প্রিয় গেমসটি ইন্সটল করতে হবে। তবে কিছু কিছু গেমস এর কনফিগারেশন হাই হওয়ায় এটি মোবাইল বা স্মার্টফোন এমনকি কিছু কিছু পিসিতেও ইনস্টল না হতে পারে। এক্ষেত্রে সেই ডিভাইসটির র্যাম তুলনামূলকভাবে অনেক কম হওয়ায় গেমস সাপোর্ট হয়না।
কম্পিউটার গেমস খেলার পক্ষে
একজন ব্যক্তির পক্ষে সারাদিন একটানা কাজ করা সম্ভব নয়। সে যদি একটানা কাজ করে যায় তাহলে জীবন আর স্বাভাবিক থাকা সম্ভব নয়। আর তাই জীবনকে একটু আনন্দময় করতে প্রয়োজন একটু বিশ্রাম। খেলাধুলার মাধ্যমে এই অবসর সময়কে আনন্দময় করা সহজ হয়। এতে মনের সম্পূর্ণ অবসাদ দূর করা যায়। এক্ষেত্রে কম্পিউটারের গেম খেলার মাধ্যমে এই ঘাটতি পূরণ করা যায়। কম্পিউটারে বিশেষ করে প্রতিযোগিতামূলক খেলার মাধ্যমে মানুষের মস্তিষ্কের স্নায়ুকোষ গুলো খুবই কার্যকর ও কর্মক্ষম থাকে। এতে করে মানসিক ও শারীরিক ক্লান্তি ভাব দূর করা সম্ভব।
কম্পিউটার গেম খেলার সুফল
সুফল শব্দটি দ্বারা বুঝায় এমন একটি কাজ যার দ্বারা পরবর্তীতে উপকৃত হওয়া যায়। কম্পিউটার গেম খেলার সুফল বলতে কম্পিউটারের গেম খেলার উপকারিতা বুঝায়। আবার কম্পিউটার গেম খেলার উপকারিতা বলতে বোঝায় গেম খেলে যে আনন্দ পাওয়া যায় কিংবা ক্লান্তি থেকে অবসাদ দূর করা।একজন ব্যক্তির কম্পিউটার গেমস খেলার মাধ্যমে মানসিক প্রশান্তি ও ঘটে। তাই এ দৃষ্টিকোণ থেকে কম্পিউটার গেমস খেলার সুফল রয়েছে।
কম্পিউটার গেম আসক্তি কি
কম্পিউটার গেম আসক্তি কি তা জানার আগে আমাদের আগে জানতে হবে ‘আসক্তি’ শব্দটি দ্বারা কি বুঝায়? ’আসক্তি’ শব্দটির অর্থ কোনো কিছুর স্বাভাবিক মাত্রা থেকে তার প্রতি অতিরিক্ত ভাবে অনুপ্রাণিত হয়ে কিছু করা। প্রতিটি কাজ, অনুভূতি, ভালোলাগা প্রভূতির একটি স্বাভাবিক মাত্রা রয়েছে। যখনই কেবল এগুলো স্বাভাবিক মাত্রা থেকে বেশি হবে তখনই কেবল আসক্তি হয় না বরং যদি প্রবলভাবে এর মাত্রা থেকে দূরে থাকে তাহলে সেটি আসক্তি নামে গণ্য হবে।
বর্তমান প্রজন্মের কাছে এই আসক্তি শব্দটি খুবই পরিচিত। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে তরুণ প্রজন্ম বা শিশু-কিশোররা বর্তমানে কম্পিউটার গেমে আসক্ত হচ্ছে। বর্তমানে সকলের কাছে অতি পরিচিত গেমস বা খেলা হল ফ্রী ফায়ার এবং পাবজি। এইটি শুধু মোবাইল দিয়ে নয় বরং কম্পিউটার দিয়েও সম্ভব। তরুণ প্রজন্ম এই খেলার প্রতি চরম ভাবে আকৃষ্ট হয়ে প্রায় ধ্বংসের মুখে পড়তে চলেছে।
যেই বয়সে একটি কিশোর মাঠে খেলাধুলা বা দৌড়াদৌড়ি করবে ঠিক সেই বয়সেই সে কিশোর আজ ফ্রি ফায়ার কিংবা পাবজি এর মধ্যে আসক্ত। এটি এক দিনে সম্ভব হয়নি। ধীরে ধীরে খেলতে খেলতে এর প্রতি আসক্ত সৃষ্টি হয়। তাই আমরা অভিবাবক হিসেবে যারা রয়েছে তাদের উচিত তাদের সন্তানদের সঠিক পর্যবেক্ষণ করা। যাতে তার সন্তান মোবাইল কিংবা কম্পিউটার গেমসে আসক্ত না হয়।
কম্পিউটার গেমে আসক্তির ভয়াবহতা
কম্পিউটার গেমে আসক্তি একজন ব্যক্তির জীবন একজন সুস্থ স্বাভাবিক মানুষের মতো অতিবাহিত হয় না। একজন কম্পিউটার গেমে আসক্তি ব্যক্তি যেকোনো বয়সের এই রোগ হতে পারে। এক্ষেত্রে যদি শিশু-কিশোররা এই গেমে আসক্তি হয় তাহলে তাদের ক্ষেত্রে ভয়াবহতা খুবই বেশি।কারণ আজকের শিশু কিশোররা বর্তমানের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম। ভবিষ্যতে তারা দেশকে সঠিকভাবে পরিচালনা করবে। কিন্তু তারা যদি এখন থেকেই আসক্ত হয়ে যায় তাহলে তাদের ভবিষৎ অন্ধকার ছাড়া আর কিছুই নয়।
গবেষণায় দেখা গেছে, একজন কম্পিউটার গেম আসক্ত ব্যক্তির খিটখিটে হয়। সে প্রায় রাগান্বিত থাকে।স্বাভাবিকভাবে কথা বললেও হঠাৎ রেগে ওঠে। এমনকি একজন আসক্তি ব্যক্তি দ্বারা সমাজে চুরি ছিনতাই ডাকাতি এমনকি খুন পর্যন্ত হতে পারে। তাই যারা কম্পিউটার গেম খেলে অভ্যস্ত তাদেরকে যথাযথ পর্যবেক্ষণ করতে হবে যাতে আসক্তির শব্দটি তার নিজের মধ্যে না জন্মায়।
কম্পিউটার গেমের ক্ষতিকর প্রভাব
কম্পিউটার গেমস খেলার উপকারিতার চেয়ে কম্পিউটারের গেমসের ক্ষতিকর প্রভাবই বেশি। বাহ্যিক দৃষ্টিকোণ থেকে কম্পিউটার গেমসের সীমিত সময়ের জন্য স্বাচ্ছন্দ্যবোধ বা আনন্দ ভালো লাগলেও পরবর্তী সময়ে ভালোলাগা থেকেই বেশিরভাগ ক্ষেত্রে আসক্ত হয়। বিশেষ করে শিশু কিশোররা এই গেমে আসক্ত হয়ে পড়ালেখা কে পিছিয়ে যাচ্ছে। এছাড়াও এর ফলে সামাজিক মূল্যবোধের অবক্ষয় হচ্ছে। দীর্ঘক্ষণ কম্পিউটারে গেমস খেলার মাধ্যমে চোখের দৃষ্টিশক্তি হ্রাস পায়। একটানা কম্পিউটার গেমস খেলতে থাকলে মস্তিষ্কের নিউরনের এক্সজোন ও ডেনড্রাইট অকেজো কিংবা কর্মক্ষম হয়ে পড়ে। এর ফলে ব্যক্তির উপস্থিত বুদ্ধি কমতে থাকে। সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে ব্যর্থ হয়।
কম্পিউটার গেম খেলার কুফল
প্রযুক্তির সঠিক ব্যবহার যদি আমরা না করতে পারি তাহলে এই প্রযুক্তি আমাদের কল্যাণের বিনিময়ে অকল্যাণ কিংবা ধ্বংসের কারণ হবে। কম্পিউটার গেমস খেলার মাধ্যমে সামান্য একটু আনন্দ পাওয়া গেলেও বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এটি ভয়ানক বা বিপদজনক কারণ হয়ে ওঠে। এর মাধ্যমে যুবসমাজ ধ্বংসের মুখে পড়তে চলেছে। বিশেষ করে যুবসমাজের নৈতিক সামাজিক মানবিক মূল্যবোধের অবক্ষয় ঘটেছে। তাই যুবসমাজকে সমাজের বিরাট শক্তিতে পরিণত করতে চাইলে এখন থেকেই এর বিরুদ্ধে উদ্যোগ নিতে হবে।
আর্টিকেল সম্পর্কিত তথ্য জানতে কমেন্ট করুন। আপনার প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।