নতুন নিয়মে যুক্তরাজ্যের স্টুডেন্ট ভিসা — আমরা সবাই জানি যুক্তরাজ্যে স্টুডেন্ট ভিসা পাওয়া কতটা কঠিন। কিন্তু আস্তে আস্তে ব্রিটেন সরকার বাইরের দেশগুলোর জন্য স্টুডেন্ট ভিসা প্রক্রিয়া সহজ করতে যাচ্ছে এবং এই কার্যক্রম অনেকাংশ বাস্তবায়নও হয়েছে। অর্থাৎ বাইরের দেশ থেকে আগত স্টুডেন্ট ভিসার জন্য আবেদনকারী শিক্ষার্থীদের প্রতি ব্রিটেন সরকার অনেকাংশ ছাড় দিচ্ছে।
ব্রিটেন সরকার প্রতিবছর স্টুডেন্ট ভিসায় শিক্ষার্থীদের উপর একটি সীমাবদ্ধতা আরোপ করে থাকে। অর্থাৎ প্রতি বছর শুধুমাত্র ছয় লাখ শিক্ষার্থীরা স্টুডেন্ট ভিসায় ব্রিটেন যেতে পারতো, কিন্তু সুখবর এই যে এখন এর কোনো নির্দিষ্ট সংখ্যা নেই। অর্থাৎ ছয় লাখ শিক্ষার্থীর সীমাবদ্ধতা ব্রিটেন সরকার হতে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। সুতরাং বিদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য বর্তমানে ব্রিটেনে অনেক ছাড় দেওয়া হচ্ছে।
নতুন স্টুডেন্ট ভিসা পদ্ধতিতে যা যা থাকছে
১। বর্তমানে ব্রিটেনের স্টুডেন্ট ভিসা এছাড়া পরিবর্তন এসেছে। যেমন তাদেরই একটি ঘোষণা থেকে জানা গিয়েছে ‘টিয়ার ফোর স্টুডেন্ট’ ভিসা পরিবর্তিত ৪০ পয়েন্ট থেকে ৭০ পয়েন্ট করা হয়েছে। (সিএএস) প্রাপ্ত পেপারে ৫০ পয়েন্ট পাশাপাশি ল্যাংগুয়েজে ১০ পয়েন্ট এবং ১০ পয়েন্ট মেইনটেন্যান্স ফান্ড এভাবে মোট ৭০ পয়েন্ট করা হয়েছে।
২। এছাড়াও ব্রিটেনে স্টুডেন্ট ভিসায় যারা পি এইচ ডি করতে যাবেন, তাদের জন্য রয়েছে একটি মহা সুসংবাদ। ব্রিটেনে স্টুডেন্ট ভিসায় যারা পি এইচ ডি করতে যাবেন তাদের জন্য আর থাকছে ভিসার সর্বোচ্চ ৮ বছরের সময় সীমা। এছাড়াও স্টুডেন্ট ভিসায় এক বছর পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের কোন মেইনটেনেন্স ফান্ড দেখাতে হবে না।
৩। অনেকেরই ইচ্ছা থাকে পড়াশোনা শেষ করার পর একটু ভ্রমণে যাওয়ার। তাদের জন্য সুসংবাদ এই যে আপনি এখন চাইলেই ব্রিটেনে পিএইচডি করার পর তিন বছর এবং মাস্টার্স শেষ করার পর দুই বছর অতিরিক্ত সময় ব্রিটেনে থাকতে পারবেন।
৪। এছাড়াও এশিয়া বাদে ইউরোপ থেকে আগত শিক্ষার্থীদের জন্যও একই বিধান প্রযোজ্য হবে। আমরা সবাই জানি এই পরিবর্তন ৫ অক্টোবর এ শুধুমাত্র ইউরোপ ব্যতীত শিক্ষার্থীদের জন্য নির্ধারণ করা হয়েছিল। কিন্তু ব্রিটেন সরকারের তথ্যমতে পহেলা জানুয়ারি হতে ইউরোপের শিক্ষার্থীদের জন্যও স্টুডেন্ট ভিসায় অন্যান্য কন্টিনেন্টালগুলোর মতো ঠিক একই বিধি-নিষেধ আরোপ করা হবে।
৫। ব্রিটেনের সরকারের নিয়ম অনুযায়ী এখন আর কোনো ভিসার ক্ষেত্রে ভেদাভেদ থাকবে না। এখন থেকে বিশ্বের যেকোনো দেশের শিক্ষার্থীরা এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও সেনজেনভুক্ত দেশ নতুন নিয়ম অনুযায়ী সমানভাবে বিবেচিত হবেন। ব্রিটেনে স্টুডেন্টদের ক্ষেত্রে এখন আর কোনো সময়সীমা নির্ধারণ করা হবে না অর্থাৎ ভিসা ক্যাপ সম্পূর্ণরূপে প্রত্যাহার করা হয়েছে।
৬। বৃটেনের বাইরের অর্থাৎ বিদেশি শিক্ষার্থীরা ব্রিটেনে তাদের নির্দিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের কোর্স শুরু হওয়ার ৬ মাস আগে ভিসার জন্য আবেদন করতে পারবেন। আর যারা আগে থেকেই ব্রিটেনে রয়েছেন তারা তাদের নির্দিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়ে কোর্স শুরু হওয়ার তিন মাস আগে আবেদন করতে পারবেন।
৭। নতুন ভিসা পদ্ধতি অনুযায়ী বর্তমানে ব্রিটেনে স্টুডেন্ট ভিসায় আগত শিক্ষার্থীরা সেখানে পূর্বের তুলনায় বেশি দিন থাকতে পারবেন। যদি আপনি ব্রিটেনে স্টুডেন্ট ভিসায় গিয়ে সেখানে সম্পূর্ণ ডিগ্রী কমপ্লিট করতে চান, তাহলে আপনি সেখানে মোট পাঁচ বছর থাকতে পারবেন। আর যদি আপনার কোনো ডিগ্রির প্রয়োজন না পড়ে অর্থাৎ শুধুমাত্র কোর্স করার জন্য যান তাহলে আপনি সেখানে শুধুমাত্র দুই বছর থাকতে পারবেন।
৮। আগের স্টুডেন্ট ভিসা পদ্ধতিতে অনেক বাধ্য বাধকতা থাকলেও বর্তমানে তা অনেকাংশে শিথিল করা হয়েছে। সনাতন ভিসা পদ্ধতিতে শিক্ষার্থীরা সর্বোচ্চ ৮ বছর পর্যন্ত সেখানে অবস্থান করতে পারতো। তবে তা বর্তমানে ব্রিটেন সরকার হতে প্রত্যাহার করা হয়েছে। নতুন স্টুডেন্ট ভিসা পদ্ধতিতে আপনি এখন চাইলেই আপনার ভিসার মেয়াদ বাড়াতে পারবেন। তবে এক্ষেত্রে আপনার পড়াশোনার কারণ দেখাতে হবে।
৯। নতুন স্টুডেন্ট ভিসা পদ্ধতিতে যদি আপনার কোর্স ছয় মাসের বেশি হয় তাহলে আপনি ব্রিটেনের সরকারের নির্দেশ অনুযায়ী ছয় মাস আগে ব্রিটেনে প্রবেশ করতে পারবেন। আর যদি আপনার কোর্স ৬ মাসের কম হয় তাহলে ব্রিটেন সরকারের নিয়ম অনুযায়ী আপনি শুধু মাত্র এক সপ্তাহ আগেই ব্রিটেনে প্রবেশ করতে পারবেন।
১০। নতুন স্টুডেন্ট ভিসা অনুযায়ী আপনারা ব্রিটেনে পড়াশোনার পাশাপাশি সেখানে পার্টটাইম কাজ ও করতে পারবেন। তবে আপনার ঠিক কতক্ষণ কাজ করবেন এক্ষেত্রে কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে। আপনারা এই সকল ধরনের সীমাবদ্ধতা আপনাদের ভিসায় পেয়ে যাবেন।
যুক্তরাজ্যের স্টুডেন্ট ভিসা আবেদনের নিয়ম
১। প্রথমেই একজন শিক্ষার্থীকে তার পছন্দের ইউনিভার্সিটিতে ঠিক মতো আবেদন করতে হবে। তার কাঙ্খিত ইউনিভার্সিটি শিক্ষার্থীর তথ্য এবং যোগ্যতা যাচাই করে সে অনুযায়ী আমন্ত্রণপত্র দিবে।
২। মনে রাখা জরুরী যে কেবলমাত্র ইউনিভার্সিটি থেকে অফার লেটার বা আমন্ত্রণ পত্র পাওয়ার পরই একজন শিক্ষার্থী যুক্তরাজ্যে স্টুডেন্ট ভিসায় আবেদন করতে পারবে। এক্ষেত্রে তাদের সরকারি ওয়েবসাইট (https://www.gov.uk/apply-to-come-to-the-uk) তে ভিসার জন্য আবেদন করতে হবে।সঠিকভাবে অনলাইনে আবেদন করার পাওয়ার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ হতে শিক্ষার্থীকে একটি রেফারেন্স নাম্বার দেয়া হবে।
৩। আপনাকে অবশ্যই রেফারেন্স নাম্বার নিয়ে বাংলাদেশে অবস্থিত VFS সেন্টারে অ্যাপোয়েন্টমেন্ট নিতে হবে। তারপর সেখান এ ফিঙ্গারপ্রিন্ট ও ছবি তুলে আসতে হবে। মনে রাখবেন ভিসা সেন্টারে সাধারণত ৪০ হাজারের মতো ভিসা ফি জমা দিতে হয়।
৪। যদি শিক্ষার্থীর কাগজপত্রের কোনো ধরনের ঘাপলা অথবা কোন অসুবিধা থাকে। তাহলে তারা এই ঘাপলা বা অসুবিধা দূর করতে আপনার সাথে সরাসরি যোগাযোগ করবে। এক্ষেত্রে তারা স্কাইপে মিটিং করতে পারে। অথবা অনেক সময় আপনি বিনা ইন্টারভিউতে আপনার কাঙ্খিত স্টুডেন্ট ভিসা পেয়ে যেতে পারেন যা ইদানিং লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
শেষ কথা
সুতরাং আপনি যদি ব্রিটেনে স্টুডেন্ট ভিসায় যেতে চান তাহলে আপনার আর সময় নষ্ট করা ঠিক হবে না। কেননা এই সুযোগ বার বার আসবে না। ব্রিটেন সরকার তাদের ভিসার নিয়ম যেকোনো সময় পরিবর্তন করতে পারে। তবে নতুন ভিসায় অনেক সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হয়েছে সুতরাং আপনার উচিত হবে এই সুযোগ সুবিধা কে কাজে লাগানো।
আপনি খুব সহজেই ঘরে বসেই যুক্তরাজ্যের যেকোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য আবেদন করতে পারবেন। যুক্তরাজ্যের সকল বিশ্ববিদ্যালয় আবেদনকারীদের জন্য অনেক সুযোগ-সুবিধা থাকে এবং তারা নিজ দায়িত্বে আপনাকে গাইড করবে। সুতরাং আপনি আপনার পছন্দের বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে যোগাযোগ করে আপনার আবেদনটির সম্পন্ন করে ফেলুন।
এক্ষেত্রে আপনি আপনার কাঙ্খিত বিশ্ববিদ্যালয়ের সরাসরি ফোন নাম্বারে অথবা ই-মেইলে যোগাযোগ করতে পারেন। মনে রাখবেন এই আর্টিকেলটির তথ্যগুলো ব্রিটেন সরকারের স্টুডেন্ট ভিসা আইন অনুযায়ী লেখা হয়েছে এই আইন যেকোনো সময় পরিবর্তন বা পরিমার্জন হতে পারে।
আর্টিকেল সম্পর্কিত তথ্য জানতে কমেন্ট করুন। আপনার প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।