কি খেলে মোটা হওয়া যায় | কি খেলে দ্রুত মোটা হওয়া যায় | মোটা হওয়ার জন্য প্রতিদিনের খাদ্য তালিকা — কি খেলে মোটা হওয়া যায় সেটা সম্পর্কে অনেক এই জানতে চায়। সারা বিশ্বের এক তৃতীয়াংশ মানুষ যেখানে তাদের অতিরিক্ত ওজন কমাতে ব্যাস্ত থাকেন সেখানে কারও কাছে ওজন বৃদ্ধি করাটাই যেন হয়ে উঠছে বেশ উদ্বিগ্নের ব্যাপার। ওজন বৃদ্ধি করার জন্য আছে বেশ কয়েকটি খাবার। কি খেলে মোটা হওয়া যায় বা মোটা হওয়ার খাদ্য তালিকা নিয়ে ইউটিউব এবং গুগলে রয়েছে হাজার হাজার কন্টেন্ট। তাছাড়াও আপনি বিভিন্ন জায়গাতে সার্চ করলে দেখতে পারবেন মোটা হওয়ার অভিনব সকল পদ্ধতি। তবে হ্যাঁ মোটা হওয়ার যত ধরনের পদ্ধতিই থাকুক না কেন? মোটা হওয়ার জন্য খাবারের কোনো বিকল্প নেই। আজকের এই আর্টিকেলে কি খেলে মোটা হওয়া যায় সেসকল বিষয় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করবো।
প্রাকৃতিক ভাবে কিংবা খাবার গ্রহণ করার মাধ্যমে মোটা হওয়ায় হচ্ছে সবচেয়ে শ্রেয়। প্রাকৃতিক ভাবে বা খাবার গ্রহণ করার পদ্ধতি ব্যতীত মোটা হওয়ার জন্য অন্যান্য সকল পদ্ধতি অনুসরণ করলে সেটা শরীরের জন্যে খানিকটা ঝুঁকিতে থেকেই যায়। তাই আমার পরামর্শ হবে মোটা হওয়ার জন্য যথাযথ পরিমাণে খাবার গ্রহণ করাটাই হবে শ্রেষ্ঠ পদ্ধতি। এক্ষেত্রে কি খেলে মোটা হওয়া যায় বা কোন কোন খাবার গুলো গ্রহণ করতে হবে সেটা নিয়ে বেশিরভাগ মানুষ দ্বিধাদন্দে ভুগেন।
কি খেলে মোটা হওয়া যায় সেটার একটি নির্দিষ্ট খাবার তালিকা থাকলে কেমন হবে বলুন তো? প্রিয় পাঠক আজকের এই আর্টিকেলে আমরা এমন কয়টি খাবারের নাম উল্লেখ করেছি যেগুলো গ্রহণ করে আপনাকে মোটা হতে সাহায্য করবে। প্রিয় পাঠক চলুন তাহলে জেনে নেই কি খেলে মোটা হওয়া। অনুগ্রহ করে আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়ুন।
কথায় আছে "স্বাস্থ্যই সকল সুখের মূল"। সুস্থ্য দেহে সুন্দর মন, সুস্বাস্থ্যের অধিকারী মানুষ মানসিক ভাবে কিন্ত বেশ চাঙ্গা ও সতেজ থাকেন। তাই আমাদের সবাইকে স্বাস্থ্য নিয়ে সচেতন থাকতে হবে। একজন স্বাস্থ্য সচেতন মানুষ সব সময় তার খাদ্য তালিকাতে নজর রাখেন। নিত্যদিনের খাবার তালিকায় সুষম খাদ্য, আমিষ, শর্করা, কার্বো-হাইড্রেড সমৃদ্ধ খাবার তালিকাভুক্ত করেন। আপনিও চাইলে আপনার প্রতিদিনের খাবার তালিকায় এমন কিছু উপাদান যুক্ত করতে পারেন যা আপনাকে মোটা হতে সহায়তা করবে। তবে হ্যাঁ তার পূর্বে কি খেলে মোটা হওয়া যায় সেটা আপনাকে জানতে হবে। চলুন জেনে নেই কি খেলে মোটা হওয়া যায়।
দুধ ও মধু
মোটা হওয়ার জন্য দুধ এবং মধু একটি কার্যকরী উপদান। রাতে ঘুমানোর পূর্বে একগ্লাস গরম দুধের সঙ্গে কিছু মধু মিশিয়ে খেয়ে ঘুমিয়ে পড়ুন। এভাবে নিয়মিত ১ মাস দুধ পান করুন আর নিজেই দেখুন চমক। মোটা হওয়ার জন্য দুধ এবং মধু গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করে।
কিসমিস
এটা হয়তোবা অনেকেরই অজানা যে, মোটা হওয়ার জন্য সবচেয়ে কার্যকরী খাবার হচ্ছে কিসমিস। কিসমিসে রয়েছে এমন সব উপাদান যা, শরীরের শক্তি যোগাতে এবং ওজন বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। ওজন বাড়াতে কিসিমিস খুবই ভালো কাজ করে। প্রতিদিন নিয়ম করে রাতে ঘুমানোর পূর্বে একটি গ্লাসের মাঝে কিসমিস ভিজিয়ে রাখুন। একমুঠো কিসমিস সাথে কিছু ছোলা বুট ভিজিয়ে রাখুন সকাল বেলা ফজরের পড়ে দেখবেন কিসমিস এবং ছোলা বুটগুলো ফুলে টসটসে হয়ে আছে।
সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠেই খালি পেটে সেগুলোকে খেয়ে নিন। সেগুলোর সাথে ভিজানো পানিটাকেও সেই সঙ্গে খেতে পারেন। এই ভাবে নিয়মিত ১ থেকে ২ মাস খেলে দেখবেন আপনার শরীরের ওজন পূর্বের চেয়ে অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে এবং শরীর পূর্বের চেয়ে অনেক সুন্দর এবং শক্তিশালী হবে। তাই নিয়মিত ভেজানো কিসমিস ও বুট এবং ছোলা এভাবে প্রতিদিন ১/২ মাস খান আর নিজেই নিজের পরিবর্তন দেখুন।
আরও পড়ুনঃ গেজ রোগের ঘরোয়া চিকিৎসা
খিচুড়ি/ভুনা খিচুড়ি
খিচুড়িতে থাকা প্রোটিন এবং কার্বোহাইড্রেড মোটা হতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। ভুনা খিচুড়ি খেলেও আপনার ওজন বৃদ্ধি পাবে। খিচুড়ি তৈরির অপরিহার্য উপাদান ডালে আছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি, ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, ফসফরাস, খাদ্য আঁশ এবং আ্যামাইনো এসিড এবং খিচুড়ির সঙ্গে যদি অল্পকিছু সবজি মিশিয়ে রান্না করা হয় তাহলে এটা পরিপূর্ণ ব্যালেন্সড খাবারে পরিনত হয়। আপনি প্রতিদিন সকালে এক প্লেট খিচুড়ির সাথে একটা করে ডিম খাওয়ার অভ্যাস করুন। এভাবে নিয়মিত খিচুড়ি খেতে পারলে আপনি দ্রুত মোটা হতে পারবেন। কোনো ধরনের ঔষধ সেবন ছাড়াই। তাই মোটা হওয়ার জন্য প্রতিদিন সকালবেলা খিচুড়ি খাওয়ার অভ্যাস করতে পারেন।
আলু/সিদ্ধ আলু
আমরা কমবেশি সকলেই জানি যে আলু/সিদ্ধ আলু শরীরের ওজন বৃদ্ধি করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা করে। যেসকল খাবার খেয়ে মোটা হওয়া যায় তারমধ্যে অন্যতম একটি খাবার হচ্ছে আলু। আলুতে থাকা শর্করা পাশাপশি রয়েছে ফাইবার, খনিজ লবন, উদ্ভিদ এবং প্রানিজ প্রোটিন রয়েছে। এই খাবারটিকে বিভিন্ন খাবারের সঙ্গে ব্যবহার করে রান্না করা যায়।
আলুতে শর্করার প্রতি ১০০% আলুতে রয়েছে ১৯ গ্রাম শর্করা, উদ্ভিদ প্রোটিন ২ গ্রাম, ২.২ গ্রাম খাবার আশ, খনিজ লবণ ০.৫২ গ্রামের মধ্যে পটাশিয়াম লবণই রয়েছে ০.৪২ গ্রাম এবং ভিটামিন রয়েছে ০.২ গ্রাম। তাই মোটা হতে চাইলে প্রতিদিনের খাবার তালিকাতে আলুর গুরুত্ব দিতে হবে। এছাড়া আলু ভর্তা কিংবা প্রতিদিন যদি ২টা করে সিদ্ধ আলু খেতে পারেন তাহলে অনেক উপকৃত হবেন। এছাড়াও আলুতে এমন অনেক উপাদান রয়েছে যেগুলাে আপনাকে দ্রুততার সাথে মোটা ও স্বাস্থ্যবান হতে সহায়তা করবে।
গরুর মাংস
যেসকল খাবার খেলে মোটা হওয়া যায় তারমধ্যে গরুর মাংস অন্যতম একটি খাবার। গরুর মাংস প্রোটিন সম্পূর্ণ উৎস। মানব শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় ভিটামিন, ফ্যাটি এসিড, খনিজ লবণ গরুর গোস্তে পাওয়া যায়। যা শরীরের ওজন বৃদ্ধি করতে এবং স্বাস্থ্যবান হতে সহায়তা করে। যদি আপনি স্বাস্থ্যবান বা মোটা হতে চান তাহলে গরুর মাংস খান তবে এটা নিয়ম মাফিক খাবেন। আমরা মোটামুটি সকলেই মনে করি যে, গরুর গোস্ত একটি ক্ষতিকর খাবার যা আমাদের এড়িয়ে চলা প্রয়োজন।
মূলত এড়িয়ে চলা বলতে এটাকে কম মাত্রায় খাওয়া দরকার। স্বাভাবিকভাবে গরুর মাংসের টুকরোর ২ থেকে ৩ টুকরো খাওয়া যেতে পারে এটা গরুর গোস্ত খাওয়ার সাধারণ মাত্রা। আর কারণ অতিমাত্রায় গরুর মাংস খেলে উপকারের চেয়ে ক্ষতির পরিমাণটাই বেশি হবে। দৈনিক গরুর মাংস খাওয়ার নিরাপদ মাত্রা হচ্ছে ৩ আউন্স অর্থাৎ ৮৫ গ্রাম। সহজ কথায় বলতে গেলে ৩ থেকে ৪ টুকরা।
ডিম
যদি আপনি ওজন বৃদ্ধি করতে চান বা মোটা হতে চান তাহলে আপনার ডিম খাওয়াটা হবে অপরিহার্য বিষয়। প্রতিদিনের খাবার তালিকায় ডিম রাখাটা খুবই উপকারী। ডিমে আছে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন।শরীরের ওজন বৃদ্ধি করতে বা মোটা হতে প্রোটিন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এছাড়াও ডিমের কুসুমে বিদ্যমান প্রয়োজনীয় ক্যালরি শরীরের ওজন বৃদ্ধি করতে খুবই সাহায্য করে। তো ডিম তো আপনি মোটামুটি প্রায় সময়ই খান তাইনা? আজ থেকে আপনি ডিম নিয়মিত খাবেন। একদিনও ডিম খাওয়া মিস করবেন না। কেননা ডিমে আছে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন। আর শরীরের ওজন বৃদ্ধি করার জন্য প্রোটিন খুবই উপকারি। আর ডিমের কুসুমে আছে প্রচুর পরিমাণ ক্যালরি যা আপনাকে দ্রুত মোটা হতে সহায়তা করবে।
আরও পড়ুনঃ ফুসফুস ইনফেকশনের লক্ষণ | ফুসফুস সংক্রমণের লক্ষণ
ভাত/ভাতের মার ও রুটি
যে সকল খাবার খেলে মোটা হওয়া যায় তারমধ্যে সবচেয়ে পরিচিত খাবার হলো ভাত। ভাতে আছে প্রচুর পরিমাণে কার্বোহাইড্রেড। সমাজ সংস্কৃতির কারণে আমাদের নিত্যদিনের খাবার তালিকায় ভাত থেকে যায় এটি একটি ভালো দিক। তবে সব থেকে ভালো হয় যদি আপনি ভাতের ফ্যানা নিয়মিত ভাবে খেতে পারেন। অনেকেই আবার এটিকে মার বলে থাকে। যদি আপনি নিয়মিত ভাতের গরম মার ও রুটি খান তাহলে আপনার স্বাস্থের উন্নতি হবে। কারণ সবচেয়ে বেশী কার্বোহাইড্রেট পাওয়া যায় ভাত এবং রুটিতে তাই মোটা হতে চাইলে প্রতিদিন ভাত এবং রুটি খান।
বাদাম
বাদাম আপনাকে স্বাস্থ্যবান বা মোটা হতে সহায়তা করবে। যখনি আপনার খিদে লাগবে তখন মুঠ ভরে বাদাম খেয়ে নিন। বাদাম হচ্ছে ওমেগা-৩, ফ্যাটি অ্যাসিড, ক্যালরি, ফাইবার, প্রোটিন ও ভিটামিন-ই সমৃদ্ধ খাবার। এটি শরীরের ওজন বৃদ্ধি করতে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। তাই নিয়মিত ভাবে বাদাম খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন।
বিরিয়ানি
হ্যাঁ, আপনি ঠিকই দেখেছেন। বিরিয়ানি মোটা হতে সহায়তা করে। যদিওবা এটি একটি খরচ সাপেক্ষ ব্যাপার তবে যদি আপনি সময় সুযোগ পান তাহলে বিরিয়ানি খাওয়ার অভ্যাস করতে পারেন। প্রতি ২/৩ দিন পর পর বিরিয়ানি খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে পারলে ১ থেকে ২ মাস পর আপনি নিজেই নিজের শরীরের পরিবর্তন বুঝতে পারবেন।
ঘি এবং মাখন
ওজন বৃদ্ধি করতে চাইলে বা মোটা হতে চাইলে স্নেহজাতীয় খাবার খাওয়া অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। আর স্নেহজাতীয় খাবারের মধ্যে অন্যতম খাবার হচ্ছে মাখন এবং ঘি। ঘি এবং মাখনে আছে প্রচুর পরিমাণে ক্যালরি। যা শরীরকে প্রয়োজনীয় পুষ্টি যোগান দেয়। তবে হ্যাঁ অতিরিক্ত ঘি এবং মাখন খেলে হার্টের ক্ষতিও কিন্ত হতে পারে, তাই পরিমাণ মাফিক ঘি এবং মাখন খান।
প্রচুর শাকসবজি
দেহের ওজন বৃদ্ধি করতে এবং সুস্বাস্থ্য বজায় রাখার জন্য শাকসবজির কোনো বিকল্প নেই। তাই আমাদের শাকসবজি খাওয়ার প্রতি অনীহা থাকলে চলবে না। ওজন বৃদ্ধি করতে চাইলে বা মোটা হতে চাইলে আমাদের নিয়মিত বেশি বেশি করে শাকসবজি খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে।
ফলের রস
যেসকল খাবার খেলে মোটা হওয়া যায় তারমধ্যে অন্যতম উপাদান হচ্ছে ফলের রস। আপনি নিয়মিত সকাল এবং বিকেল বেলা ফলের রস খান দেখবেন অতি দ্রুততার সাথে আপনি স্বাস্থ্যবান বা মোটা হয়ে গেছেন। এছাড়াও আপনি দ্রুত মোটা হতে চাইলে নিয়মিত কলা, মিষ্টি কুমড়া সহ এই জাতীয় বিভিন্ন ধরনের বেশী বেশী শাক সবজি খাবেন। মোট কথা যদি আপনি অতি দ্রুততার সাথে স্হায়ীভাবে মোটা হতে চান তাহলে আপনাকে প্রচুর পরিমাণে ক্যলরি যুক্ত খাবার খেতে হবে। যেকোনো কিছু খাবেন তৃপ্তি সহকারে খাবেন। যদি আপনি নিয়মিত তৃপ্তিসহকারে খাবার খান আশা করি আপনি স্বাস্থ্যবান হবেন ইনশাআল্লাহ।
শেষ কথা
উপরোক্ত আলোচনা করা খাবারগুলো ব্যতীত আরও অনেক খাবার আছে যেগুলো ওজন বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। যেমনঃ যেকোনো ধরনের ভাজা খাবার, চিকেন ফ্রাই, পাউরুটি ইত্যাদি। এছাড়াও নানা রকম ফলের রস, পাস্তা, নুডুলস ইত্যাদিও ওজন বৃদ্ধি করতে বা মোটা হতে সাহায্য করে। তাই যদি আপনি মোটা হতে চান তাহলে এই খাবারগুলো আপনার প্রতিদিনের খাবার তালিকায় তালিকাভুক্ত করে নিন।
আরও পড়ুনঃ পেট ব্যাথা কমানোর উপায় | পেট ব্যাথা কমানোর ঘরোয়া উপায়
আর্টিকেল সম্পর্কিত তথ্য জানতে কমেন্ট করুন। আপনার প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।