শীতে ফর্সা হওয়ার উপায় - শীতে ফর্সা থাকার উপায় — শীত সাধারণত শুষ্ক আবহাওয়ায় সম্পূর্ণ মৌসুম। শীতে ত্বক আদ্রতা হারিয়ে ঋতুর ধরণ অনুযায়ী শুষ্ক হয়ে যায়।
যার কারণে ত্বকের উপর মৃত কোষের আস্তরণ পড়ে, যা ত্বককে আরো বেশি শুষ্ক দেখায় এবং ত্বক প্রাণহীনও কালো হয়ে যায়। শীতের শুষ্কতায় ত্বক তার উজ্জলতা হারাতে থাকে তাই বলা চলে শীতের মৌসুম আমাদের ত্বকের জন্য কঠোর।
শীতের তীব্রতা থেকে আরাম পাওয়ার জন্য আমরা রোদ পোহাতে ভালোবাসি, যা আমাদের ত্বকে নিয়ে আসে কালচে ভাব। আমাদের ত্বকের ভিতরে নিচের স্তরে মেলানিন থাকে।
যা ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করে ও ত্বকের রং বৃদ্ধি করে ফুটিয়ে তোলে। মেলানিন সূর্যের আলো থেকে ত্বককে রক্ষা করে। সূর্যের অতিবেগুনী রশ্মি ত্বকে পোড়া ভাব আনে।
সূর্যের আলোর প্রভাবে পরা পোড়া ভাব ত্বকের উপরের স্তর থেকে ত্বকের ভিতরের স্তরে ত্বরান্বিত হয় যার ফলে ত্বক কালচে দেখায়। বারবার সূর্যের আলো সংস্পর্শে আসার কারণে রোদে পোড়া ভাব আরো গাঢ় বর্ণ ধারণ করে এবং ত্বক কালচে হয়ে যায়। শীতে ত্বক আর্দ্রতা হারিয়ে শুষ্ক থাকার কারণে কালো ছোপ গুলো আরো বেশি দেখা যায়, যার কারণে দেখতে অনেকটা কালো লাগে।
আরো পড়ুনঃ আজকের সোনার দাম - আজকের সোনার দাম কত বাংলাদেশে
শীতে ত্বক উজ্জল ও ফর্সা রাখার উপায়
বিভিন্ন ধরনের বিউটি ক্রিমের পাশাপাশি অনেক ঘরোয়া উপাদানের মাধ্যমে ত্বক উজ্জ্বল, সুন্দর ও ফর্সা করা যায়। প্রাকৃতিক এসব উপাদানের মাধ্যমে রূপচর্চার করলে ত্বকের ক্ষতির আশঙ্কা কম থাকে।
অ্যালোভেরা - শীতে ফর্সা হওয়ার উপায়
অ্যালোভেরা জেল হচ্ছে প্রাকৃতিক ময়েশ্চারাইজার। অ্যালোভেরা জেল ত্বককে আদ্র করে, ত্বকের ব্রণ ও বলিরেখা দূর করে ত্বকের ফর্সা ভাব ফুটিয়ে তোলে। অ্যালোভেরা জেলে রয়েছে ভিটামিন সি, ই এবং বিটা ক্যারোটিন যা ত্বকের পুষ্টি জোগাতে সাহায্য করে এবং বয়সের ছাপ কমায়। এই জেল সাধারণত সব ধরনের ত্বকের জন্য উপযোগী। এটি ব্যবহারে ত্বকে চটচটে ভাব থাকেনা যদিওবা কখনো কখনো হালকা চুলকানি দেখা দিতে পারে তাই সঠিকভাবে এর পাতা থেকে জেল আলাদা করে ব্যবহার করতে হবে।
মুলতানি মাটি - শীতে ফর্সা থাকার উপায়
সাধারণত তৈলাক্ত ত্বকের জন্য মুলতানি মাটি খুবই কার্যকরী উপাদান। এটি ত্বক থেকে অতিরিক্ত তেল বা সিবাম অপসারণ করে ত্বকের উজ্জলতা ফিরিয়ে ত্বকের তেল চিটচিটে ভাব দূর করে ফর্সা ভাব ফুটিয়ে তুলে। বেশির ভাগ সময় শীতে ত্বকের তেল গুলো আস্তরনের মতো জমে থাকে। মুলতানি মাটি ত্বক থেকে ময়লা গভীরভাবে পরিষ্কার করতে সাহায্য করে, ফলে হয় আরো ফর্সা ও উজ্জ্বল। তবে যারা শুষ্ক ত্বকের অধিকারী তাদের মুলতানি মাটির ব্যবহার না করাই উত্তম। তাদের ত্বক আরোবেশি শুষ্কও রুক্ষ হয়ে যাবে।
আরো পড়ুনঃ থাইরয়েড কমানোর উপায়
মধু - শীতে ফর্সা হওয়ার উপায়
শীতের সময় মধুর গুণাগুণ গুনে শেষ করা যাবেনা। শীতে মধু খাওয়ার পাশাপাশি রূপচর্চার জন্য ও খুব জনপ্রিয়। মধু এমন একটি উপাদান যা সব ধরনের ত্বকের জন্য উপযোগী। শীতের সময় ত্বকের আদ্রতা ধরে রাখার জন্য ত্বকের ময়েশ্চারাইজার প্রয়োজন। মধু ত্বককে ময়েশ্চারাইজ করে ব্যাকটেরিয়া দূর করে ত্বক ভালো রাখে ও ত্বকের উজ্জলতা বৃদ্ধি করে ত্বকের ফর্সা ভাব ফুটিয়ে তোলে।
দুধ - শীতে ফর্সা থাকার উপায়
কাঁচা দুধ খুব ভালো টোনার হিসেবে কাজ করে। দুধ অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও ল্যাকটিক এসিডের ভরপুর রয়েছে। এটি মুখের কালো দাগ দূর করতে সাহায্য করে ফলে ত্বক ভেতর থেকে প্রাণবন্ত ও ফর্সা হয়ে উঠে। শীতকালে উজ্জল ও ফর্সা ত্বক পাওয়ার জন্য এটি একটি দুর্দান্ত ঘরোয়া উপাদান।
ডিম - শীতে ফর্সা হওয়ার উপায়
শারীরিক সুস্থতার পাশাপাশি ত্বক ভালো রাখতে ও ডিমের কোনো জুড়ি নেই। শুষ্ক, তৈলাক্ত এবং সংবেদনশীল ত্বকের অধিকারীরা তাদের ত্বকের সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য অনায়াসে ডিম ব্যবহার করতে পারবেন। ডিমের ফ্যাটি এসিড ও জলীয় অংশ ময়েশ্চারাইজারের কাজ করে। ডিমের সাদা অংশ ত্বকের পোর ছোট করতে সাহায্য করে। শীতে ত্বক ভালো রাখার জন্য যেসব ফেস মাস্ক তৈরি করা হয় তার মধ্যে ডিম ব্যবহার করলে তা আরো ফলপ্রসু হয়ে উঠবে।
নারিকেল তেল - শীতে ফর্সা থাকার উপায়
তৈলাক্ত ত্বকের অধিকারী যারা তাদের বাদ দিয়ে, যাদের ত্বক শুষ্ক, নিস্তেজ ও নিষ্প্রাণ তাদের জন্য নারিকেল তেল আশীর্বাদস্বরূপ। নারিকেল তেল খুব কার্যকরী দারুন ময়েশ্চারাইজার। এতে থাকা মিনারেল উপাদান গুলো ত্বকের কোষকে পুনরুজ্জীবিত করে, তখন ফর্সা কোমল ও মসৃণ। শীতের মৌসুমে কয়েক ফোটা তেল হাতে নিয়ে ক্রিমের মতো লাগালে ত্বক অনেক সময় পর্যন্ত ভালো থাকে।
আরো পড়ুনঃ গর্ভবতী মায়ের খাবার তালিকা
আলু ও টমেটো - শীতে ফর্সা হওয়ার উপায়
শীতে আরাম অনুভূতি নেওয়ার জন্য রোদে থাকাকালীন সময়ে ত্বকে যে রোদে পোড়া ভাব বা কালচে দাগ দেখা যায় তাতে আলু ও টমেটোর টুকরা নিয়ে ঘষলে খুবই উপকার পাওয়া যাবে। চোখের নিচে ফোলা কমাতে, ত্বকের শুষ্কতা দূর করে বলিরেখা দূর করতে সাহায্য করে টমেটো ও আলুর টুকরো। টমেটোর রসালো অংশের ভিটামিন ও মিনারেল ত্বকের কালচে ভাব দূর করে ত্বক করে ফর্সা ও সুন্দর।
দই - শীতে ফর্সা থাকার উপায়
দই-তে বিদ্যমান রয়েছে ল্যাকটিক এসিড যা ত্বকের মৃত কোষ দূর করতে সাহায্য করে। শুষ্ক ও নিস্তেজ ত্বকের জন্য প্রতিষেধক হিসেবে কাজ করে। যেহেতু শীতের সময় ত্বকের উপর মৃত কোষের আবরণ সৃষ্টি হয় তাই দইের বিভিন্ন ধরনের প্যাক ত্বকের মৃত কোষ দূরীকরণের মাধ্যমে ত্বক করে তোলে মসৃণ ও ফর্সা।
চালের গুড়া - শীতে ফর্সা হওয়ার উপায়
চালের গুড়াকে খুব ভালো ধরনের স্ক্রাবার হিসেবে ব্যবহার করা হয়। শীতের সময় ত্বকে যেহেতু মৃত কোষের সৃষ্টি হয়, তাই চালের গুড়া দিয়ে স্ক্রাবিং করলে এটি ত্বক পরিষ্কার করে মৃত কোষ তুলতে সাহায্য করে। এতে ত্বকে ফর্সা ভাব চলে আসে, নাকের ব্ল্যাকহেডস অপসারণেও এটি কাজ করে।
তবে শুষ্ক ত্বকে সরাসরি চালের গুঁড়া ব্যবহার করা যাবে না। চালের গুড়াতে রয়েছে ফেরিউলিক অ্যাসিড যা প্রাকৃতিক সানস্ক্রিনের কাজ করে। রোদে পোড়া ত্বক উজ্জল করতে এটি ভালো কাজ করে। চালে বিদ্যমান রয়েছে বিভিন্ন মিনারেল ও ভিটামিন যা ত্বককে ভিতর থেকে ফর্সা করে তোলে।
লেবু - শীতে ফর্সা থাকার উপায়
লেবুতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি যা ত্বকের কালো দাগ হালকা করতে সাহায্য করে। লেবুতে রয়েছে ত্বক ফর্সাকারী উপাদান যা ত্বকের গভীরে গিয়ে রং আরো উজ্জ্বল করে তোলে। এছাড়া শীতের সময় বাইরে বের হবার আগে ভালো মানের সানস্ক্রিন ব্যবহার করা উত্তম। তাছাড়া বড় ক্যাপ বা ছাতা ব্যবহার করে রোদে পোড়া ভাব দূর করা যাবে।
আরো পড়ুনঃ শীতে মুখের ত্বকের যত্ন
আর্টিকেল সম্পর্কিত তথ্য জানতে কমেন্ট করুন। আপনার প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।