পাসপোর্ট ভুল সংশোধন করার নিয়ম ২০২২ - পাসপোর্টের ভুল সংশোধন বা পাসপোর্ট পরিবর্তন করার নিয়ম — একটি দেশের পাসপোর্ট সেই দেশের পরিচয় বহন করে। পাসপোর্ট হচ্ছে একটি দেশের সরকার কর্তৃক অনুমোদিত ভ্রমণ বিষয়ক দলিল তার নাগরিকদের জন্য। দেশের ভিতরে তার নাগরিকত্বের প্রমাণ স্বরূপ জাতীয় পরিচয়পত্র থাকলেও দেশের বাহিরে সে কোন দেশের নাগরিক তার পরিচয় বহন করার মাধ্যম হচ্ছে পাসপোর্ট।
বর্তমানে হাতে লেখা পাসপোর্টের বদলে মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট বা এমআরপি ব্যবহার করা হচ্ছে যার নীতিমালা চালু হয়েছিল ২০১২ সাল থেকে। জলছাপের সাহায্যে ছবির নিচে লুকানো থাকে আবেদনকারীর ব্যক্তিগত তথ্য। পাসপোর্ট আবেদন করার ক্ষেত্রে আবেদনকারীর সকল তথ্য জমা নেয়া হয়।
এ সকল তথ্য জাতীয় পরিচয়পত্রের সাথে সামঞ্জস্য রেখে করলে ভালো হয়না হলে পরবর্তীতে ঝামেলা পোহাতে হয়। এ তথ্য প্রদানে ভুল হলে তখন জটিলতা সৃষ্টি হয় সে সময় প্রয়োজন পড়ে সংশোধনের। আজকে আমরা জানবো পাসপোর্টের তথ্য সংক্রান্ত যে ভুলগুলো হয় সেই ভুলগুলো সংশোধনের উপায় সম্বন্ধে। চলুন জেনে নেই পাসপোর্ট ভুল সংশোধন করার নিয়ম ২০২২ সম্পর্কেঃ
পাসপোর্টে যে ভুলগুলো পরিলক্ষিত হয়
পাসপোর্ট তৈরির পর প্রায়শ যে সব ভুলগুলো ধরা পড়ে তা হল নামের বিড়ম্বনা। নামের জটিলতার বিড়ম্বনায় পড়তে হয় অনেক আবেদনকারীকে। তাছাড়া পিতা-মাতার নামের আংশিক ভুল বা পিতা মাতার নামের পূর্ণাঙ্গ ভুল ও পরিলক্ষিত হয়। পাসপোর্টে জন্ম তারিখের ভুল ও সচরাচর দেখা যায়। তাই পাসপোর্ট আবেদনের সময় ভালোভাবে সতর্কতার মাধ্যমে নির্ভুলভাবে আবেদন ফরম পূরণ করা অতীব জরুরী বিষয়, আর যদি পাসপোর্টে ভূল ধরা পড়ে তাহলে ভিসা জটিলতার সৃষ্টি হতে পারে।
আরো পড়ুনঃ অনলাইনের মাধ্যমে জমির মালিকানা যাচাই | অনলাইনের মাধ্যমে জমির পর্চা বের করার নিয়ম
পাসপোর্ট পরিবর্তন বা পাসপোর্ট সংশোধন করার নিয়ম
পাসপোর্ট সংশোধন করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। পাসপোর্ট রি-ইস্যুর জন্য আবেদন করতে হবে যদি কোনো ধরনের পরিবর্তন বা সংশোধনের প্রয়োজন দেখা দেয়। পাসপোর্টে নামের বানান সংশোধন বা পাসপোর্টের নাম পরিবর্তন, পাসপোর্টে পিতা বা মাতার নামের আংশিক পরিবর্তন বা সংশোধন, অথবা পিতা বা মাতার নামের পূর্ণ সংশোধন বা পরিবর্তন ও জন্ম তারিখ সংশোধন বা পরিবর্তন সম্পূর্ণরূপে বন্ধ ছিল পাসপোর্ট অধিদপ্তর ও বাংলাদেশ ইমিগ্রেশন এর পক্ষ থেকে।
এই সকল ধরনের পরিবর্তন করার কারণে একই ব্যক্তি একের অধিক পাসপোর্ট ইস্যু করে, যার ফলস্বরূপ দেশের বাইরে দেশীয় ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তরের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হয়। কেউ যদি নিজের নাম, পিতা ও মাতার নাম বা জন্ম তারিখের তথ্য পরিবর্তন করতে চায় তাহলে তাদের প্রতি সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের সম্পৃক্ততা সম্পর্কে জড়ানোর সন্দেহ প্রবণতা সৃষ্টি হয়।
তাই বাংলাদেশ ইমিগ্রেশন পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে থাকা বাংলাদেশী দূতাবাস প্রতিনিধিদের সিদ্ধান্তের প্রতি মত পোষণ করে নাম ও জন্ম তারিখ সংশোধন বা পরিবর্তনের সকল আবেদনের নীতিমালা বন্ধ করে দিয়েছিল। তখন শুধু কেউ চাইলে তার পেশা, স্থায়ী ঠিকানা বা বৈবাহিক অবস্থার তথ্য পরিবর্তন করতে পারতো।
তবে গত ৯ ই ডিসেম্বর ২০২১ ইং নতুন প্রজ্ঞাপন জারির মাধ্যমে জানানো হয় যে এখন জাতীয় পরিচয় পত্রের ভিত্তি অনুসরণ করে পাসপোর্ট সংশোধন বা পরিবর্তন করা যাবে। আবেদনকারী যে এলাকায় বা জেলায় বসবাসরত অবস্থায় আছে সেই জায়গার পাসপোর্ট অফিস বরাবর লিখিত আবেদন করতে হবে এবং হলফনামার প্রয়োজন হবে।
আরো পড়ুনঃ পাসপোর্ট চেক করার নিয়ম ২০২১ | অনলাইনে পাসপোর্ট চেক করার নিয়ম
পাসপোর্ট সংশোধন বা পাসপোর্ট পরিবর্তনের জন্য যা প্রয়োজন
আবেদনকারীর নাম অথবা জন্ম তারিখ সংশোধন বা পরিবর্তনের জন্য প্রয়োজন হবেঃ ১।আবেদনকারীর জাতীয় পরিচয় পত্র ও কপি ২। জাতীয় পরিচয়পত্র না থাকলে আবেদনকারীর জন্ম নিবন্ধন এর মূলকপি বা অনলাইন কপি ৩। জেডিসি পরীক্ষার সার্টিফিকেট অথবা এসএসসি পরীক্ষার সার্টিফিকেট অথবা এইচএসসি পরীক্ষার সার্টিফিকেট। নিকাহনামা যদি থাকে ইত্যাদি। তবে জন্ম তারিখ সংশোধন সর্বোচ্চ পাঁচ বছর পর্যন্ত করা যাবে।
পিতা ও মাতার নামের আংশিক বা সম্পূর্ণ সংশোধন বা পরিবর্তনের জন্য যা প্রয়োজন হবে- ১।আবেদনকারীর জাতীয় পরিচয় পত্র ২। আবেদনকারীর এসএসসি পরীক্ষার সার্টিফিকেট অথবা এইচএসসি পরীক্ষার সার্টিফিকেট ৩। আবেদনকারীর পিতার বা মাতার জাতীয় পরিচয় পত্র এর কপি।
স্থায়ী ঠিকানা পরিবর্তন করতে হলে পুলিশ প্রতিবেদন নতুন করে করতে হবে। এ ছাড়া কেউ যদি বর্তমান ঠিকানা সংশোধন বা পরিবর্তনের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে থাকে তাহলে পুলিশ প্রতিবেদন প্রয়োজন হবে না। পেশা পরিবর্তন বা সংশোধনের প্রয়োজনীয়তা দেখা দিলে সে ক্ষেত্রে কর্মক্ষেত্রের প্রত্যয়নপত্র জমা করতে হবে, এবং এর সাথে প্রাতিষ্ঠানিক পরিচয় পত্রের ফটোকপি ও যুক্ত করতে হবে।
বৈবাহিক অবস্থা পরিবর্তন বা সংশোধনের প্রেক্ষিতে নিকাহনামা বা তালাকনামা যুক্ত করতে হবে আবেদনপত্রের সাথে। পাসপোর্টের তথ্য সংশোধন বা পরিবর্তন করার ক্ষেত্রে এক কপি সত্যায়িত নতুন আবেদন পত্র ও এক কপি রি ইস্যু ফরম জমা করতে হবে।
আরো পড়ুনঃ অনলাইনে জিডি করার নিয়ম | জিডি করুন ঘরে বসে
সোনালী ব্যাংক, ব্যাংক এশিয়া, ঢাকা ব্যাংক, প্রিমিয়ার ব্যাংক, ওয়ান ব্যাংক ও ট্রাস্ট ব্যাংক এর মাধ্যমে আবেদন পত্র জমার জন্য ফি নেয়া হয়। এই ফি জমা নেয়ার পর একটি রিসিট দেয়া হয় যা পরবর্তীতে ফরম পূরণের সময় প্রয়োজন হবে। ৩,৪০০/= টাকা দিতে হবে ২১ দিনের সাধারন সময় অনুযায়ী পাসপোর্ট নেওয়ার জন্য।
আর যদি জরুরি ভিত্তিতে কারো পাসপোর্ট প্রয়োজন হয় তাহলে তাকে ৬,৯০০/= টাকা দিতে হবে ৭ দিনের মধ্যে পাসপোর্ট নিজের কাছে পাওয়ার জন্য। তথ্য সংশোধনের আবেদনপত্র অনলাইনের মাধ্যমে বের করার পর পূরণ করে জমা দিতে হবে। www.dip.gov.bd এই লিঙ্কে গিয়ে পাসপোর্ট সংশোধন বা পরিবর্তনের আবেদন ফরম টি ডাউনলোড করে নিতে হবে।
সঠিকভাবে ফরমটি পূরণ করার পর আবেদন ফরম সমেত যে তথ্য পরিবর্তন বা সংশোধন করতে ইচ্ছুক, আবেদনকারী সেই তথ্য অনুযায়ী যা যা প্রয়োজন সেই সমস্ত কাগজ গুলো নিয়ে পাসপোর্ট অফিসে জমা দিতে হবে। আবেদনকৃত ফরমে যে মোবাইল নাম্বার দেয়া থাকবে সেই নাম্বারে মেসেজ আসলে আবেদনকারী পাসপোর্ট অফিস থেকে পাসপোর্ট সংগ্রহ করে নিতে পারবে।
আরো পড়ুনঃ অনলাইনে বিবাহ রেজিস্ট্রেশন যাচাই