অনলাইনে ট্রেনের টিকিট – অনলাইনে ট্রেনের টিকেট কেনার নিয়ম – অনলাইনে ট্রেনের টিকেট কাটার নিয়ম ২০২২ — লাইনে দাঁড়িয়ে থেকে ট্রেনের টিকিট কাটার দিন এখন পেরিয়েছে গেছে। নিজের ঘরে বিছানায় বসেই অনলাইনে ট্রেনের টিকিট কাটছে এখন অনেকেই। ঘুরতে যাওয়া, দাদি বা নানি' বাড়ি যাওয়া বাচ্চাদের কত শখই না থাকে রেলস্টেশন প্লাটফর্মে। কিন্তু কষ্ট পোহাতে হয় অভিভাবকদের যারা লাইনে দাঁড়িয়ে থেকে ট্রেনের টিকিট সংগ্রহ করেন।
বাসায় বসে নিজের পছন্দ মতো সিট বেছে নেওয়ার মাধ্যমে অনায়েসেই অনলাইনে ট্রেনের টিকিট কাটা যাবে বাংলাদেশ রেলওয়ে দ্বারা পরিচালিত আ্যপ এবং ওয়েবসাইটের মাধ্যমে। বাংলাদেশ রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ পরিচালিত এই অ্যাপের মাধ্যমে সকাল ৬ টা থেকে রাত ১১ টা পর্যন্ত যেকোনো সময়ে থেকে টিকেট কাটা বা রিটার্ন করা অথবা সময় পরিবর্তন করা যাবে।
অবশ্যই যাতায়াতের সর্বোচ্চ ৫ দিন আগে ট্রেনের টিকেট কাটাতে হবে। এর আগে অগ্রিম টিকিট কাটার জন্য সময় সীমা ১০ দিন আগে থেকে ছিল। এখন তা পরিবর্তন করে ১০ দিনের পরিবর্তে ৫ দিন আগে করা হয়েছে। এছাড়াও কেউ যদি ট্রেনের টিকেট রিটার্ন করতে চায় তাহলে ৪৮ ঘণ্টা আগে তাকে এই টিকেট রিটার্ন করতে হবে এবং এর জন্য ২৫% কেটে রেখে বাকি টাকা ফেরত দেওয়া হবে।
আর ট্রেন ছাড়ার ৬ ঘণ্টা আগে যদি কেউ ট্রেনের টিকেট ফেরত দিতে চায় তবে তা ফেরত যোগ্য হবেনা এবং এর জন্য কোনো টাকা ফেরত পাওয়া যাবে না। ৪৮ ঘন্টা থেকে ১২ ঘন্টা ব্যবধানে কেউ যদি টিকেট ফেরত করতে চায় তাহলে সেই অনুযায়ী টাকা কেটে রেখে বাকি টাকা ফেরত দেওয়া হয়। প্রিয় পাঠক চলুন তাহলে জেনে নেই অনলাইনে ট্রেনের টিকিট - অনলাইনে ট্রেনের টিকিট কাটার নিয়ম সম্পর্কেঃ
অনলাইনে অ্যাপের মাধ্যমে ই-টিকেট - অনলাইনে ট্রেনের টিকিট
বাংলাদেশ রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ পরিচালিত "রেল সেবা" অ্যাপটি গুগলের প্লে স্টোর থেকে ডাউনলোড করে নিতে হবে প্রথমে।
অ্যাপটি ইনস্টল করার পর প্রথমে সাইন আপ করে নিতে হবে।
সাইন আপ করার জন্য প্রথমে সাইন আপ লেখাটিতে ক্লিক করতে হবে। তারপর সেখানে নাম, ফোন নাম্বার, ইমেইল এড্রেস ও পাসওয়ার্ড দিয়ে একাউন্টের জন্য সাইন আপ কমপ্লিট করতে হবে।
সকল তথ্য সঠিক ভাবে দেয়ার পর সাইন আপ লেখাটিতে ক্লিক করতে হবে। যদি সাইন আপ সঠিকভাবে হয়ে থাকে তাহলে যে মোবাইল নাম্বারটি দেয়া হবে সেই মোবাইল নাম্বারে ভেরিফিকেশন কোড আসবে। ভেরিফিকেশন কোড দেয়ার পর সাইন আপ কমপ্লিট হবে। এরপরই হোম পেজে প্রবেশ করে আরো কিছু ইনফর্মেশন আপডেট করতে হবে। এর জন্য হোম লেখা জায়গার বাম পাশের তিনটা দাগ দেওয়া অপশনে ক্লিক করতে হবে।
আরো পড়ুনঃ গ্রামে বিজনেস আইডিয়া - গ্রামে ব্যবসার আইডিয়া
এখানে সেটিংস অপশনে গিয়ে ইউজার সেটিংস অপশন টিতে ক্লিক করতে হবে।
এখানে জাতীয় পরিচয়পত্র অনুসারে সবকিছু পূরণ করে দিতে হবে ও জাতীয় পরিচয়পত্র নাম্বারটিও দিতে হবে। কারো কাছে জাতীয় পরিচয়পত্র না থাকে তাহলে জন্ম নিবন্ধন এর মাধ্যমে ও ই-টিকিট কাটা যাবে।
এরপর পারচেস টিকিট অপশন এ গিয়ে আপনি কোন রুটের ট্রেন চাচ্ছেন এবং সেটি কোন তারিখে সেটা সিলেক্ট করে দিতে হবে।
এবং সেই অনুযায়ী কোন কোন ট্রেন সেই দিন অনুযায়ী পাওয়া যাবে তার একটি লিস্ট দেয়া হব।
ট্রেন সিলেক্ট করার পর আপনি সিট ব্যবহার করবেন বা এসি বার্থ ব্যবহার করবেন যেটা প্রয়োজন সেই অনুযায়ী সিলেক্ট করে দিতে হবে। একটি একাউন্টের মাধ্যমে সর্বোচ্চ চারটি টিকেট নেয়া সম্ভব এর বেশি টিকেট নেয়ার প্রয়োজন হলে তাহলে অন্য একাউন্ট খুলে তারপর টিকেটের জন্য আবেদন করতে হবে। এবং এর মধ্যে যদি বাচ্চা থাকে তাহলে এডাল্ট ও বাচ্চা কাউন্ট করে দিতে হবে। নিজের পছন্দমত সিট বাছাই করে নিতে হলে সিলেক্ট সিট অপশনটিতে ক্লিক করতে হবে।
আরো পড়ুনঃ টিন সার্টিফিকেট কি - টিন সার্টিফিকেট কিভাবে করবো
এখান থেকে নিজের পছন্দমতো বেছে নিতে হবে লাল মার্ক করা সিট গুলো বুক করা এবং অবশিষ্ট সিট গুলো হচ্ছে সবুজ মার্ক করা। সবুজ মার্ক করা সিটগুলো থেকে নিজের পছন্দ অনুযায়ী সিট বেছে নিতে হবে। তারপর কন্টিনিও অপশনে ক্লিক করে পেমেন্ট অপশনের দিকে যেতে হবে।
এখানে টিকেটের Class ভাড়ার পরিমাণ ভ্যাট, ব্যাংক চার্জ ও মোট খরচের পরিমাণ দেয়া থাকবে। Pay Now বাটনে ক্লিক করে নেয়ার আগে সব ভালোভাবে দেখে নিয়ে তারপর আপনার সুবিধামত পেমেন্ট অপশনে পেমেন্ট করতে হবে। Debit/Credit Card, bKash, Rocket ইত্যাদি মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে পেমেন্ট করা যাবে।
পেমেন্ট কমপ্লিট হয়ে গেলে সাইন আপের সময় দেওয়া ইমেইল নাম্বারে একটি অনলাইন টিকিট পিডিএফ দেয়া হবে। এই টিকেটটি a4 কাগজে প্রিন্ট করে নিতে হবে এবং ভ্রমণের দিন অবশ্যই ভ্রমণকারীর কাছে এ টিকেট থাকতে হবে। ভ্রমণের দিন এই অনলাইন টিকিটের পিডিএফ প্রিন্ট কাউন্টারে জমা দেয়ার পর কাউন্টার থেকে আসল টিকিট দিয়ে দেওয়া হবে।
রেল সেবা আ্যপটি খুবই সহজ ভাবে ব্যবহার করা যায়। কোন ধরনের কোচ নিতে চাচ্ছেন তা নেয়ার আগে কোচ সাবমিট অপশনটিতে সাবমিট করলে কোচের ছবিটি দেখা যাবে। এছাড়া বিভিন্ন ধরনের খাবার এবং এর দাম সহ তালিকা আ্যপে এর মাধ্যমে পাওয়া যাবে। অ্যাপ এর মাধ্যমে টিকিট কাটার সময় নিজের পছন্দ মত বগী বাছাই করে নেয়া যাবে। এছাড়া ভ্রমণের অনুভূতি সমস্যা ইত্যাদি জানানোর জন্য রেটিং সিস্টেম ও কমপ্লেইন সেকশন রয়েছে। আশা করা যায় এই অ্যাপ অনেক সুদূরপ্রসারী হবে।
আরো পড়ুনঃ জন্ম নিবন্ধন সংশোধন - জন্ম নিবন্ধন সংশোধন অনলাইন
অনলাইনে ট্রেনের টিকিট কাটার নিয়ম
আ্যপ ছাড়া বাংলাদেশ রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের ওয়েব সাইটের মাধ্যমেও টিকেট কাটার ব্যবস্থা রয়েছে। যে কোন ব্রাউজার থেকে ভিজিট করতে হবে Bangladesh Railway E-Ticketing Service (www.esheba.cnsbd.com) এর ওয়েবসাইটে। বাংলাদেশ রেলওয়ের ওয়েবসাইটে প্রবেশ করার পর মোবাইল নাম্বার এবং ইমেইল দিয়ে রেজিষ্ট্রেশন বা সাইন আপ করতে হবে আ্যপ মতো করে। রেজিষ্ট্রেশনের জন্য উপরের ডান পাশ থেকে Register বাটনে ক্লিক করতে হবে।
ইংরেজিতে নিজের নাম, ইমেইল, ফোন নাম্বার ও ৮ অংকের একটি পাসওয়ার্ড দিতে হবে এবং এরপর সাইন আপ অপশনে ক্লিক করতে হবে। এরপর রেজিস্ট্রেশন বা সাইন আপের সময় দেয়া মোবাইল নাম্বারে একটি ভেরিফিকেশন কোড দেয়া হবে। মোবাইলে আসা ভেরিফিকেশন কোডটি সঠিকভাবে লিখে ভেরিফাই অপশনে ক্লিক করতে হবে। ভেরিফাই হয়ে গেলে একাউন্ট রেজিস্ট্রেশন কমপ্লিট হয়ে যাবে।
এরপর লগইন করে প্রোফাইল আপডেট করে নিতে হবে। জাতীয় পরিচয়পত্র অনুসারে প্রোফাইল আপডেট করতে হবে। জাতীয় পরিচয় পত্র অনুযায়ী নাম, লিঙ্গ, জন্মতারিখ, ঠিকানা ও পরিচয় পত্রের নাম্বার দিয়ে প্রোফাইল আপডেট করে নেয়ার জন্য আপডেট প্রোফাইল অপশনে ক্লিক করতে হবে।
প্রোফাইল আপডেট করার পর ওয়েব সাইটটির হোম পেইজে আসতে হবে। কোন স্টেশন থেকে রওনা হতে হবে আর কোন স্টেশনে নামতে হবে সেই অনুসারে ট্রেন সার্চ করতে হবে। এরপর ভ্রমণের তারিখ বাছাই করে নিয়ে, কয়জন ভ্রমণে যাবে সেটা নির্দিষ্ট করে দিতে হবে অ্যাডাল্ট হলে অ্যাডাল্ট এর জায়গায় এবং বাচ্চা হলে বাচ্চার জায়গায় সংখ্যা বসিয়ে দিতে হবে। অপশন গুলো পূরণ করার পর ফাইন্ড অপশনে ক্লিক করুন। এরপর বাছাই করা তারিখের সকল ট্রেনগুলো দেখানো হবে।
তারপর যে ট্রেনে যাতায়াত করতে ইচ্ছুক সে ট্রেনের নামের পাশে ডিটেইলস অপশনে ক্লিক করতে হবে। ডিটেইলস দেখার পর পারচেস অপশনে ক্লিক করতে হবে। তারপর বাস টিকেট এ ক্লিক করে এগ্রি করে দিতে হবে। তারপর পেমেন্ট মেথড (বিকাশ, রকেট, নেক্সাসপে এবং ভিসা কার্ড) সেলেক্ট করে পেমেন্ট করে দিলেই টিকেট কাটা হয়ে যাবে। এর পর কপিটি প্রিন্ট করে নিতে হবে। ভ্রমণের দিন এই কপিটি কাউন্টারে জমা দিলেই আসল টিকিট পাওয়া যাবে।
আরো পড়ুনঃ
আর্টিকেল সম্পর্কিত তথ্য জানতে কমেন্ট করুন। আপনার প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।