রমজানের সময় সূচি 2022 — একটি বছর পরে আবারও আমাদের মাঝে এলো পবিত্র মাহে রমজান ২০২২ রহমত ও নাজাতের আহ্বান নিয়ে। রমজানের কথা শুনলেই আমাদের সকলের মন ভরে যায়। এছাড়াও রমজানের কিছু গজল শুনে রমজান মাসের আগাম অধীর আগ্রহের সৃষ্টি হয়। পবিত্র রমজান মাসকে কেন্দ্র করেই মুসলমানের একটি পবিত্র দিন ঈদ-উল-ফিতর উদযাপন করা হয়।
দীর্ঘ প্রায় একমাস রোজা রাখার পরের দিন পালন করা হয় ঈদ-উল-ফিতর। খুব সন্নিকটেই আগামী কয়েক মাস পরেই ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের প্রিয় মাহে রমজান আসছে। প্রিয় পাঠক, আজকের এই আর্টিকেলে আমরা পবিত্র মাহে রমজান ২০২২ আনুমানিক সময় ও পবিত্র মাহে রমজান নিয়ে তাৎপর্য নিয়ে আলোচনা করবে। চলুন তাহলে আর দেরি না করে জেনেই নেই পবিত্র রমজান মাসের তাৎপর্য এবং মাহে রমজান ২২ এবং রমজান মাসের ক্যালেন্ডার ২০২২ ও ২০২২ সালের রমজান কত তারিখ সেই সম্পর্কে।
পবিত্র রমজান মাসের তাৎপর্য
পেজ সূচীপত্রঃ
রোজা কি?
ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের মধ্যে রোজা হচ্ছে একটি। সাওম আরবি শব্দ। এর ফার্সি প্রতিশব্দ হলো রোজা। এর আভিধানিক অর্থ হল বিরত থাকা। ইসলামি শরীয়তের পরিভাষায় রোজা হল- সুবহে সাদিক থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের আশায় কোন কিছু পানাহার ও ইন্দ্রিয় তৃপ্তি থেকে বিরত থাকা। প্রাপ্তবয়স্ক প্রত্যেক নারী ও পুরুষের উপর রমজান মাসের এক মাস রোজা পালন করা ফরজ। যা অবশ্যই করণীয়। আমাদের দৈনন্দিন জীবনে রোজার শিক্ষার গুরুত্ব অপরিসীম।
আরও পড়ুনঃ রমজান সম্পর্কে হাদিস
রোজার নৈতিক শিক্ষা
রোজা কেবল আমাদের জন্য ফরজ নয়। বরং পূর্বের সকল নবী ও রাসুলের উম্মতের উপর ফরজ ছিল। এর মাধ্যমে রোজা পালন কারীর আত্মিক উৎকর্ষ সাধিত হয়। রোজার মাধ্যমে মানুষের ভেতর তাকওয়া (আল্লাহ ভীতি) অর্জন ও আল্লাহর প্রতি ভালবাসার সৃষ্টি হয়। ক্ষুধা ও তৃষ্ণাকাতর হয়েও মানুষ মহান আল্লাহর ভালবাসা ও ভয়ে কিছুই পানাহার করে না ও ইন্দ্রিয় তৃপ্তি লাভ করে না। মহান আল্লাহ বলেন- "তোমাদের উপর রোজা ফরয করা হয়েছে। যেমন করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের উপর। যেন তোমরা তাকওয়া অর্জন করতে পারো" (সূরা আল-বাকারা, আয়াত-১৮৩)। আমরা তাকওয়া অর্জনের জন্য রমজান মাসে রোজা পালন করবো।
মানুষ লোভ-লালসা হিংসা-বিদ্বেষ ও কামভাবের বশবর্তি হয়ে অনেক মন্দ কাজে লিপ্ত হয়। রোজা মানুষকে এসব কাজ থেকে মুক্ত থাকতে শেখায়। রোজা হলো কোনো ব্যক্তি ও তার মন্দ কাজের মাঝে ঢাল স্বরূপ। রোজা সম্পর্কে মহানবী হযরত মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন- “সাওম (রোজা) ঢাল স্বরূপ” (বুখারী ও মুসলিম)। সর্বোপরি সাওম বা রোজা পালনের মাধ্যমে দৈহিক, মানসিক ও আত্মিক প্রশান্তি অর্জিত হয়।
রোজার সামাজিক শিক্ষা
সিয়াম সাধনার ফলে সমাজের লোকদের মাঝে পারস্পরিক সহানুভূতি ও সহমর্মিতা সৃষ্ট হয়। সাওম পালন করে এরূপ ব্যক্তি ক্ষুদার্থ থাকার ফলে সে আরেকজন অনাহারী ক্ষুধার জ্বালা সহজে বুঝতে পারে। ক্ষুধা ও পিপাসার যন্ত্রনা যে কিরূপ পীড়াদায়ক হতে পারে তা সে উপলব্ধি করতে পারে। এতে অসহায় নিরন্ন মানুষের প্রতি সহানুভূতি ও সহমর্মিতা ভাব জাগ্রত হয়। মহানবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন- “এ মাস সহানুভূতির মাস”(ইবনে খুযায়মা)।
মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অন্যদের দান সদকা করতে যেমন উদ্বুদ্ধ করেছেন তিনি নিজেও তেমনিভাবে খুব দান সদকা করতেন। হযরত ইবনে আব্বাস (রা:) বলেন, “রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম লোকদের মধ্যে অধিক দানশীল ছিলেন। বিশেষ করে রমজান এলে তার দানশীলতা আরো বেড়ে যেত” (বুখারী ও মুসলিম)। অতএব রোজা বা সাওম অসহায় ও দরিদ্রকে দান করতে উদ্বুদ্ধ করে।
আরও পড়ুনঃ ইফতারে কি খাওয়া উচিত | সেহরিতে কি খাওয়া উচিত
রোজার ধর্মীয় গুরুত্ব
ধর্মীয় দিক থেকেও রোজার অনেক গুরুত্ব রয়েছে। সকল সৎকাজের প্রতিদান আল্লাহ দশগুণ থেকে সাতশ গুণ পর্যন্ত বাড়িয়ে দেবেন। কিন্তু রোজার প্রতিদান সম্পর্কে হাদিসে কুদসীতে রয়েছে আল্লাহ তাআলা বলেন- “রোজা আমার জন্য আর আমি নিজেই এর প্রতিদান দেবো” (বুখারী)। যেহেতু সোয়াবের আশায় আল্লাহর উদ্দেশ্যে সাওম বা রোজা পালন করা হয় সেহেতু আল্লাহ তায়ালা রোজাদারদের পূর্বের সকল গুনাহ ক্ষমা করে দেন। এ সম্পর্কে মহানবী হযরত মেহোম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন- “যে ব্যক্তি আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস ও সওয়াবের আশায় রমজান মাসের রোজা রাখে, আল্লাহ তায়ালা তার পূর্বের সমস্ত গুনাহ মাফ করে দেন”। এটি একটি মৌলিক ফরজ কাজ। যদি কেউ তা অস্বীকার করে তাহলে সে কাফের হয়ে যাবে।
রোজার সামাজিক গুরুত্ব
একজন রোজা পালনকারী ব্যক্তি অন্যায় ও অশ্লীল কথাবার্তা পরিহার করে চলে। হানাহানি থেকে দূরে থাকে। চুরি, ছিনতাই, ডাকাতিসহ অন্যায় অপকর্ম কাজ একজন রোজাদার ব্যক্তি কখনোই করতে পারে না। এর ফলে সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠা হয়। মানুষে মানুষে ভ্রাতৃত্বের সুদূর প্রসার ঘটে ও বিশ্বাস স্থাপন হয়।
রমজানের সময় সূচি 2022
২০২২ সালের রমজান কত তারিখ
ঘড়ির কাঁটার মতো প্রতি সেকেন্ডে অল্প অল্প করে মানুষের বেঁচে থাকার গড় আয়ু ছোট হয়ে আসছে। স্বল্প এই জীবনে কিভাবে যে সময় চলে যায় তা কল্পনাও করা যায় না। আর মাত্র কয়েক মাস পরেই পবিত্র মাহে রমজান মাস ২০২২ আসছে। ২০২১ সালের মাহে রমজানের তারিখ অনুযায়ী ধারণা করা যায় আগামী ২০২২ সালের এপ্রিলের শুরুতেই ৩ তারিখ অথবা ৪ তারিখ পবিত্র মাহে রমজান হতে পারে। এক্ষেত্রে এটি চাঁদ দেখার উপর নির্ভরশীল। এই পবিত্র মাহে রমজানের হক যাতে আমরা আদায় করতে পারি এর জন্য আমাদের সকলকেই আগে থেকে প্রস্তুতি গ্রহণ করা উচিত।
আরও পড়ুনঃ পবিত্র মাহে রমজানের সুন্নত আমল | মাহে রমজানের কিছু সুন্নত ও আমল
আর্টিকেল সম্পর্কিত তথ্য জানতে কমেন্ট করুন। আপনার প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।