নতুন ল্যাপটপ কেনার পর করণীয়

হাসিবুর
লিখেছেন -
0

নতুন ল্যাপটপ কেনার পর করণীয় — বর্তমানে ল্যাপটপ আমাদের দেশে সহজলভ্য একটি ডিভাইস। অনেকেই এখন ল্যাপটপ কিনছে কেউ কাজের জন্য আবার কেউ বা তাদের বাচ্চার শখ পূরণ করার জন্য। কারণ যেটাই হোক আমরা কিন্তু বেশিরভাগ মানুষই জানি না ল্যাপটপের সঠিক ব্যবহার সম্পর্কে। 

নতুন ল্যাপটপ কেনার পর করণীয়

ফলে ল্যাপটপ কেনার কিছু দিন পরেই কোনো না কোনো সমস্যা নিয়ে হাজির হচ্ছি সার্ভিসিং এর দোকানে। অথচ নতুন ল্যাপটপ কিনার পর সামান্য কিছু সেটিংস ঠিক করে নিলেই আমাদের এই ধরণের সমস্যার সম্মুখীন হতে হয় না। আসুন জেনে নেই নতুন ল্যাপটপ কেনার পর করণীয় কিছু কাজ।

১। অপারেটিং সিস্টেম আপডেট করতে হবে

যেকোনো ল্যাপটপ গ্রাহকের কাছে পৌছানোর আগে মার্কেটে আসে। উৎপাদনকারী কোম্পানী হতে মার্কেটে আসার পর সেটি গ্রাহকদের জন্য ডিসপ্লেতে রাখা হয়। গ্রাহক পণ্য কিনার আগে দীর্ঘদিন পর্যন্ত পণ্য এরকম মার্কেটে পড়ে থাকে। এতে করে যে ভার্সনটিতে এটি তৈরি করা হয় সেটি দূর্বল হয়ে পড়ে বা ব্যাকডেটেড হয়ে পড়ে। তাই ল্যাপটপ কিনার পরই ইন্টারনেট সংযোগ দিয়ে অপারেটিং সিস্টেম আপডেট করে নিতে হবে। এতে করে আপনি লেটেস্ট ফিচার গুলোর এক্সেস পাবেন এবং উপরন্তু আপনার সিস্টেমকে সুরক্ষিত রাখতে সহায়তা করবে।

আরো পড়ুনঃ কম্পিউটার হার্ডওয়্যার কি | কম্পিউটার হার্ডওয়্যার পরিচিতি

২. ব্লোটওয়্যার রিমুভ করতে হবে

ব্লোটওয়্যার হল অবাঞ্ছিত বা অপ্রয়োজনীয় সফ্টওয়্যার যা আপনার অপারেটিং সিস্টেমে আগে থেকে ইনস্টল করা আছে। এই অ্যাপ্লিকেশনগুলি প্রায়শই অকেজো হয়। এছাড়াও তারা ড্রাইভের জায়গা এবং সিস্টেম রিসোর্স নষ্ট করে। উইন্ডোজ ল্যাপটপ এ এই ধরণের সমস্যা বেশি থাকে। যেখানে অন্যান্য অপারেটিং সিস্টেম যেমণঃ ম্যাক, লিনাক্স এবং ক্রোম ও.এস ল্যাপটপের ক্ষেত্রে ব্লোটওয়্যার তেমন সমস্যা করে না।

৩. অ্যান্টিভাইরাস সফ্টওয়্যার রিভিউ করতে হবে

উইন্ডোজ ১০ মাইক্রোসফ্ট ডিফেন্ডার বিল্ট-ইন সহ আসে, যা বেশিরভাগ লোকের জন্য যথেষ্ট ভালো। আপনি যদি আরো অতিরিক্ত সুরক্ষা চান তবে আপনি এটিকে অন্যান্য শক্তিশালী কম্পিউটার সিকিউরিটি টুলস গুলির সাথে যুক্ত করতে পারেন। কয়েকটি অ্যান্টিভাইরাস সফ্টওয়্যারঃ ১. Quick Heal Total Security ২. Kaspersky Internet Security ৩. Quickheal Internet Security ৪. Guardian Internet Security by Quickhea

৪. এন্টি-থিফ টুল কনফিগার করতে হবে

আপনি একটি নতুন ল্যাপটপ কিনেছেন সেটি অবশ্যই যথেষ্ট যত্নের সহিত রাখতে হবে। কিন্তু দূর্ঘটনা বশত যদি এটি হাড়িয়ে যায় তখন? এখানে শুধু ডিভাইস হাড়িয়ে গেলে অতটা সমস্যা ছিলো না কিন্তু এখানে আপনার ডিভাইসের সাথে আপনার সকল তথ্য, ডেটা, গোপনীয় কিছু থাকলে সেগুলোও হাড়িয়ে যাবে এবং এর জন্য আপনি বড় ধরণের বিপদেও পড়তে পারেন। 

তাই আপনার ডিভাইস যেন ফেরত পেতে পারেন সেই রকম একটি ব্যবস্থা করে রাখা আবশ্যক। উইন্ডোজ ১০ এ ফাইন্ড মাই ডিভাইস নামে একটি অপশন আছে। নিশ্চিত করুন যে আপনি এটি চালু করেছেন। এখানে আপনি আপনার মাইক্রোসফট অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে আপনার ল্যাপটপটি সনাক্ত করতে পারেন।

আরো পড়ুনঃ কম্পিউটার নেটওয়ার্ক কি | কম্পিউটার নেটওয়ার্ক কত প্রকার

৫. আপনার ল্যাপটপের পাওয়ার সেটিংস অপ্টিমাইজ করতে হবে

ল্যাপটপের পাওয়ার সেটিংস হলো ল্যাপটপের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশ। তাই খেয়াল রাখতে হবে এটি যেন ড্যামেজড না হয়ে যায়। তাই ল্যাপটপ কেনার পরেই ল্যাপটপের পাওয়ার সেটিংস অপ্টিমাইজ করতে হবে। তবেই ব্যাটারি লাইফ ভালো থাকবে। এক্ষেত্রে ডিসপ্লের উজ্জ্বলতা কমাতে হবে, কারণ স্ক্রীনকে অত্যন্ত উজ্জ্বল রাখা ব্যাটারি লাইফ কমার অন্যতম বড় কারণ। যাইহোক, এটিকে খুব বেশি ম্লান করলে চোখের ক্লান্তি হতে পারে, তাই সুবিধা মতো উজ্জ্বলতা কমাতে হবে।

৬. স্বয়ংক্রিয় ব্যাকআপ কনফিগার করতে হবে

ল্যাপটপ কেনার পর যতদিন যাবে তা তত পুরনো হবে এবং আপনার ল্যাপটপে ডকুমেন্ট, প্রজেক্ট, ছবি এবং অন্যান্য সমস্ত ধরণের ব্যক্তিগত ডেটাতে পূর্ণ হয়ে যাবে। এখন এটি হঠাৎ কাজ করা বন্ধ করে দিলে কী হবে? আপনি সেই সমস্ত ডেটা গুলো হারিয়ে ফেলবেন, যা মোটেও আপনার জন্য একটি ভালো সংবাদ হবে না। তাই আপনার ডেটা সুরক্ষিত করতে আপনার ল্যাপটপে একটি ব্যাকআপ প্ল্যান সেট আপ করতে হবে। এতে করে হঠাত যদি ল্যাপটপ বন্ধ হয়ে যায় সেক্ষেত্রে আপনার ডাটা গুলো ব্যাকআপ হয়ে থাকবে পরে আবার সেই ডাটা গুলো ফিরে পাবেন।

আরো পড়ুনঃ ভালো ল্যাপটপ চেনার উপায়

৭. ক্লাউড স্টোরেজ সিঙ্কিং সেট আপ করতে হবে

ধরলাম আপনার নতুন ল্যাপটপের সেটিং প্রায় সবই সম্পন্ন, কিন্তু ল্যাপটপে এখনও অনেক কিছু করার আছে। ক্লাউড স্টোরেজ সেটআপ করলে আপনার কাজ করার অনুভুতি আরো ভালো হবে। ক্লাউড স্টোরেজ পরিষেবাগুলির মধ্যে রয়েছে ড্রপবক্স, Google ড্রাইভ ইত্যাদি। আপনি এগুলোর ভিতরে যা কিছু রাখেন তা প্রথমে সিঙ্ক করে। তারপরে আপনি যে কোনো ডিভাইস থেকে সেই ফাইলগুলি অ্যাক্সেস করতে পারবেন যেখানে আপনি সাইন ইন করেছেন। এর মানে আপনি আপনার ল্যাপটপে কাজ করার সময় আপনার ডেস্কটপে রয়েছে এমন একটি ফাইল আপনি সহজেই আপনার ল্যাপটপে নিয়ে কাজ করতে পারবেন।

৮. হিট ড্যামেজ এর ঝুঁকি কমিয়ে আনতে হবে

ল্যাপটপ সাধারণত অন্যান্য ধরনের মেশিনের তুলনায় তাপের জন্য বেশি সংবেদনশীল। ডেস্কটপ কেসগুলি ভালো বায়ুচলাচলের জন্য যথেষ্ট বড় তাই সেগুলোর জন্য খুব বেশি চিন্তা করতে হবেনা। কিন্তু ল্যাপটপ সেরকম নয়। তাই এর হিট ড্যামেজের সমস্যা একটি সাধারণ সমস্যার মতোই। 

সাধারণত সময়ের সাথে সাথে, বায়ুচলাচলের অভাব এবং ধুলো জমার ফলে অতিরিক্ত তাপ হয়। এই ক্ষতির কারণে আপনার CPU কম তাপ উৎপন্ন করায় কম পারফর্ম করবে, যার মানে সিস্টেমের কর্মক্ষমতা ধীর হয়ে যাবে। অতিরিক্ত তাপ অভ্যন্তরীণ স্টোরেজ ড্রাইভের আয়ুও কমিয়ে দিতে পারে এবং ব্যাটারির চার্জিং ক্ষমতা অকালে হারাতে পারে।

এখানে কয়েকটি প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা দেয়া হলোঃ যদি সম্ভব হয় আপনার ল্যাপটপটি কার্পেটে, বিছানায়, একটি পালঙ্কে বা এমনকি আপনার কোলে ব্যবহার করবেন না কারণ এতে এটি ভেন্টগুলিকে বাধা দেয়। ফলে যথেষ্ট বাতাস ঢুকতে পারে না। এটিকে একটি শক্ত, সমতল পৃষ্ঠে রাখুন যাতে ধূলিকণা কম হয় এবং বায়ু প্রবাহিত হয়। প্রতিবার, আপনার ল্যাপটপটি যতটা সম্ভব ধুলো অপসারণের জন্য পরিষ্কার করুন। অপ্রয়োজনীয় অ্যাপ গুলো বন্ধ করুন এতে হিট একটু কমে যাবে।

আরো পড়ুনঃ ল্যাপটপ ভালো রাখার উপায়

৯. আপনার প্রিয় অ্যাপ গুলো ইনস্টল করুন

এখন যেহেতু আপনার ল্যাপটপটি ভালো দেখাচ্ছে, আপনার প্রয়োজনীয় সমস্ত অ্যাপ ইনস্টল করার সময় এসেছে। আপনার OS-এর উপর নির্ভর করে, আপনি মাইক্রোসফট স্টোর, ম্যাক অ্যাপ স্টোর, ক্রোম ওয়েব স্টোর বা লিনাক্স অ্যাপের সংগ্রহস্থলে এগুলি পেতে পারেন। অনেক অ্যাপ শুধুমাত্র ডেভেলপারের ওয়েবসাইট থেকে ডাউনলোড করার যায়। সেক্ষেত্রে আপনাকেও তাই করতে হবে।

১০। একটি VPN ব্যবহার করা শুরু করুন

একটি ভার্চুয়াল প্রাইভেট নেটওয়ার্ক (VPN) ব্যবহার আপনার কাছে বিভ্রান্তিকর মনে হতে পারে। যদি আপনি ভিপিএন শব্দটির সাথে পরিচিত না হন তবে এটির ব্যবহার করা কিন্ত সহজ। এক্ষেত্রে, আপনাকে একটি ভিপিএন অ্যাপ ডাউনলোড করতে হবে এবং সেখানে সাইন ইন করতে হবে। এটি ফ্রি ভার্সন ও রয়েছে আবার পেইড ভার্সনও রয়েছে। অবশ্যই ফ্রি ভার্সনের থেকে পেইড ভার্সন ভালো হয়। 

যাই হোক এই অ্যাপটি আপনার নেটওয়ার্ক কানেকশনকে এনক্রিপ্ট করে, আপনাকে থার্ডপার্টি নজরদারীর বিরুদ্ধে আরও সুরক্ষা দেয়। আপনাকে রিজিওন ব্লকড অর্থাৎ আপনার এরিয়ায় ব্লক করা এমন ধরণের সাইট বা বিষয়বস্তু অ্যাক্সেস করার অনুমতি দেয় এবং আপনার ওয়েব অ্যাক্টিভিটি ট্রেস করা আরও কঠিন করে তোলে।

উপরের ১০ টি পয়েন্ট যদি মেনে চলতে পারেন তবে আশা করা যায় আপনার ল্যাপটপটি অনেক বেশি দিন সার্ভিস দিবে। অবশ্যই অনেক সাবধানে ব্যবহার করতে হবে এই জিনিসগুলি। সুস্থ্য থাকবেন, ভালো থাকবেন। ধন্যবাদ।

আপনার মতামত জানান এখানে

0 কমেন্ট

আর্টিকেল সম্পর্কিত তথ্য জানতে কমেন্ট করুন। আপনার প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

কমেন্ট করুন (0)

#buttons=(Ok, Go it!) #days=(20)

Our website uses cookies to enhance your experience. explore more
Ok, Go it!