ফেসবুক আসক্তি থেকে মুক্তির উপায় — বর্তমান সময়ে ফেসবুক আমাদের প্রত্যেকের জীবনে একটি অপরিহার্য অংশ হিসেবে পরিণত হয়েছে। আমাদের মাঝে অনেকের সকালই শুরু হয় ফেসবুক ব্যবহার করার মাধ্যমে। তবে হ্যাঁ ফেসবুকের এই সকল ইতিবাচক দিকের পাশাপাশি আছে বেশকিছু নেতিবাচক দিক।
আরো পড়ুনঃ মোবাইল টাওয়ারের ক্ষতিকর দিক
পেজ সূচীপত্রঃ ফেসবুক আসক্তি থেকে মুক্তির উপায়
অনেকই এখন ফেসবুকে সময় দিতে বেশ স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করছে। অবশ্য স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করবেই না কেন, ফেসবুক আমাদের ন্ধুবান্ধব, আত্মীয়-স্বজন, পরিচিত মানুষজনদের সঙ্গে যোগাযোগে কতই না ভূমিকা পালন করছে। এমন কি আমাদেরকে কত রকমের বিনোদন দিয়ে আমাদের মনকে প্রফুল্ল করে তুলছে। তাহলে এখন কথা হচ্ছে ফেসবুক ব্যবহার করতে কিংবা ফেসবুকে সময় দিতে আমাদের সমস্যা কোথায়?
কিন্তু হ্যাঁ, ফেসবুক ব্যবহারে সমস্যাতো তখনি হয়ে ওঠে যখন আমরা ফেসবুকের ব্যবহার না করতে চাওয়া স্বত্ত্বেও আমরা ফেসবুক ব্যবহার করে থাকি। ফেসবুকের অতিরিক্ত ব্যবহার করা থেকে বের হতে চাই কিন্তু কোনো ভাবেই বাহির হতে পারিনা। অর্থাৎ, তখন আমরা ফেসবুকে আসক্ত হয়ে পরি। আপনিও কি ফেসবুক আসক্তিতে ভুগছেন?
হয়তোবা ফেসবুক আসক্তি আপনার একটি বিরাট সমস্যায় পরিণত হয়ে পড়েছে। তা নাহলে আপনি আমাদের আজকের এই ফেসবুক আসক্তি থেকে মুক্তির উপায় লেখাটি পড়তেন না। তাহলে চলুন আর দেরি না করে, ফেসবুক আসক্তি সম্পর্কৃত খুটিনাটি বিষয়াদি এবং ফেসবুক আসক্তি থেকে মুক্তির উপায় গুলো জেনে নিই।
প্রিয় পাঠক আপনি কি ফেসবুকে আসক্তি হয়ে পড়েছেন? চেষ্টা করেও ফেসবুক আসক্তি থেকে মুক্তির উপায় খুঁজে পাচ্ছেন না? তাহলে আজকের এই লেখাটি আপনার জন্য। ফেসবুক ব্যবহারের আসক্তি থেকে মুক্তির জন্য আমরা কি কি করতে পারি সেই বিষয়গুলো নিয়ে টিপস এন্ড ট্রিক দেওয়া হয়েছে এখানে।
আরো পড়ুনঃ হারানো ফেসবুক আইডি ফিরে পাওয়ার উপায়
ফেসবুক আসক্তি কি?
ইন্টারনেট জগতে ফেসবুক বা অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম নিয়ে আসা হয়েছিল আমাদেরকে কাছে আনার জন্য কিন্তু এখন ঠিক তার বিপরীত হয়। ফেসবুক আসক্তি থেকে মুক্তির উপায় সম্পর্কে জানার আগে জেনে নিই ফেসবুক আসক্তি কি। ফেসবুক আসক্তি হচ্ছে ইচ্ছাকৃত ভাবে অথবা অনিচ্ছাকৃত ভাবে অপ্রয়োজনে ফেসবুকে অনিয়মিত ঘুরাঘুরি কিংবা ব্যবহার করা। অনিয়ন্ত্রিতভাবে ফেসবুকে চলাফেরা করা, ফেসবুক ব্যবহার করা এবং ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও ফেসবুকে সময় নষ্ট করা থেকে নিজেকে থামাতে না পারাই হচ্ছে ফেসবুক আসক্তির মধ্যে গণ্য।
ফেসবুক কিংবা যেকোনো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম আসক্তি একটি আচরণগত নেশা। বিষেশজ্ঞরা এটাকে সোসাল মিডিয়া ডিজর্ডার বলে আখ্যায়িত করেছেন। এটি ফেসবুক সম্পর্কে আসক্তদের অত্যধিক পরিমাণে উদ্বিগ্ন করে তোলে। যার কারণে আমরা আমাদের নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলি এবং আমরা চাইলেও ফেসবুক থেকে সহজেই বাহির হতে পারিনা।
আপনি হয়তো ভেবে থাকবেন যে, আমরা ফেসবুক বিনামূল্যে চালাচ্ছি। কিন্তু আসলে আমরা ফেসবুক ফ্রিতে চালাচ্ছি নাহ তারা আমাদের কাছ থেকে টাকার চেয়ে মূল্যবান জিনিস নিচ্ছে আর সেটা হচ্ছে সময়। আপনি ফেসবুকে যতবেশি সময় ব্যয় করবেন ততবেশি তাদের লাভ হওয়ার চ্যান্স থাকবে।
এটি হচ্ছে সব কোম্পানিরই বিজনেস পলিসি এটা নিয়ে আমাদের করার কিছু নেই। কিন্তু আমরা যদি নিজেদেরকে কট্রোল করতে পারি তাহলে এই ফেসবুক আসক্তি থেকে বের হয়ে আসতে পারবো। ফেসবুক আসক্তি থেকে মুক্তির জন্য তার আগে বের করতে হবে কেন আমরা ফেসবুক আসক্ত হই?
আরো পড়ুনঃ ফেসবুক থেকে ভিডিও ডাউনলোড
কেন আমরা ফেসবুকে আসক্ত হই?
আমাদের মধ্যে বেশিরভাগ মানুষ কারণ বসতই ফেসবুকে আসক্ত হয়ে যাই। উদাহরণস্বরূপ, ফেসবুকে কোনো একটি পোস্ট করার পরে এটি আমাদেরকে ফেক রিওয়ার্ড দিয়ে থাকে। আপনি হয়তো অবশ্যই খেয়াল করেছেন যে, আপনি যখনি ফেসবুকে কোনো প্রকার পোস্ট করেন তখন সেই পোস্টের ভিতরে অন্যেরা লাইক, কমেন্ট কিংবা রিয়াক্ট দিয়ে থাকে। আর তখনি সেটার একটা নোটিফিকেশন ফেসবুকের নোটিফিকেশন বারে চলে আসে।
উক্ত নোটিফিকেশনে ক্লিক করে দেখার পর আপনার মাঝে কিছুটা ভালো লাগা কাজ করে। এটাই হচ্ছে মূলত ফেক রিওয়ার্ড। যা অন্যের দেয়া রিয়াক্ট বা কমেন্ট হলেও ফেসবুক নোটিফিকেশনের মাধ্যেমে এভাবে আমাদেরকে ফেসবুক একটু ভালো অনুভব করায়। এই ফেক রিওয়ার্ডটি আমাকে আপনাকে ফেসবুকে ঢুকতে বাধ্য করে।
এছাড়াও ফেসবুকে ম্যাসেঞ্জারের মাধ্যমে তো প্রিয়জন, বন্ধুবান্ধব, আত্মীয় স্বজনের সঙ্গে ম্যাসেজিং করার সুযোগ তো আছেই। বর্তমান সময়ে আবার ফেসবুকে ভিডিও সেকশন যুক্ত করা হয়েছে। যাতে বিভিন্ন ধরনের কন্টেন্ট ক্রিয়েটররা বিনোদন থেকে শুরু করে বিভিন্ন ধরনের ভিডিও তৈরি করে শেয়ার করে। এক্ষেত্রে ফেসবুক প্রত্যেকের রুচি অনুযায়ী ভিডিও প্রত্যকের ভিডিও সেকশন টাইমলাইনে পাঠিয়ে দেয়।
যার ফলে ফেসবুকের ভিডিও সেকশনে একবার ঢুকলেই সময় কোন দিক দিয়ে শেষ হয়ে যায় তা বোঝায় যায়না। ফেসবুক প্রতিষ্ঠান কর্তৃক ভিডিও সেকশন যুক্ত করার পর থেকে ফেসবুক আসক্তি হওয়ার এটি নতুন একটি স্কোপ হিসেবে রূপলাভ করেছে। এটিই মূলত হচ্ছে বর্তমানে ফেসবুক আসক্তি হওয়ার সবচেয়ে বড় এবং প্রধান কারণ হিসেবে ধরা হয়।
কিভাবে বুঝবেন আপনি ফেসবুক আসক্ত কি না? বর্তমানে ফেসবুক আসক্তি অনেক ফেসবুক ব্যবহারকারীর মধ্যেই লক্ষ করা যাচ্ছে। অনেক ফেসবুক ইউজারকারীর মধ্যেই ফেসবুক আসক্তির লক্ষণ গুলো ফুটে উঠছে। আপনি ফেসবুক আসক্তিতে কিনা সেটা বুঝতে হলে নিম্নে উল্লেখ করা লক্ষণ গুলো মনযোগ সহকারে পড়ুন। আর মিলিয়ে নিন নিজের সাথে। যদি আপনি আলোচনা করা উপসর্গ গুলোর মধ্যে বেশিরভাগ আপনার মাঝে খুজে পান তবে বুঝে নিবেন আপনিও ফেসবুক আসক্তি হয়ে পড়েছেন।
আরো পড়ুনঃ বাংলাদেশে অনলাইনে লোন পাওয়ার উপায়
ফেসবুক আসক্তির লক্ষণ
ফেসবুক আসক্তি হওয়ার অনেকগুলো লক্ষণ রয়েছে যেগুলো সোশ্যাল মিডিয়া Disorder বিষেশজ্ঞরা চিহ্নিত করেছেন। ফেসবুক আসক্তি নিম্নে বর্ণিত উপসর্গ গুলো উল্লেখযোগ্য।
১। ঘুম থেকে উঠেই সর্বপ্রথম স্মার্টফোনটি হাতে নিয়েই ফেসবুকে ঢু মেরে আসা ২। নিজের সম্পর্কে অতিরিক্ত শেয়ার ৩। মাঝ রাতে জাগাপেলেও ফেসবুকে একবার ঘুড়ে আসা ৪। প্রোফাইলের ছবিটি নিয়ে মাত্রাতিরিক্ত প্রতিক্রিয়া ৫। যখন-তখন কারণ ছাড়াই ফেসবুকে ঢোকা ৬। প্রায়ই মানুষকে ট্যাগ করা বা যেকোন পোস্টে ফ্রেন্ডদের ট্যাগ করা ৭। কাউকে বন্ধু করতে পাগলের মতো আচরণ করা ৮। ফ্রেন্ড লিস্ট বারানোর জন্য অপরিচিতদের কেউ তালিকা ভুক্ত করার প্রবনতা।
৯। ফোনের নোটিফিকেশন বা কোনো নোটিফিকেশনের চিহ্ন দেখলেই উত্তেজিত হয়ে ওঠা ১০। ঘণ্টার পর ঘণ্টা নিউজ ফিড পড়া এবং এগুলো নিয়ে সময় পার করা ১১। কাজের সময় লুকিয়ে গোপনে ঘণ্টার পর ঘণ্টা ফেসবুক ব্যবহার করা ১২। অনলাইনের জন্য বাস্তবের জীবনকে জলাঞ্জলি দেওয়া ১৩। কোথাও গেলে সঙ্গে সঙ্গে চেক ইন করার মাধ্যমে নিজের অবস্থান জানিয়ে দেওয়া ১৪। ফেসবুক না চালালে নিজেকে ফাকা ফাকা অনুভব করা।
১৫। যেকোনো কাজ করার সময় কিছুক্ষণ অন্তর অন্তর ফেসবুকে ঢুকে অযথা স্ক্রোলিং করা ১৬। ফেসবুকের একটি নোটিফিকেশন sound! বেজে উঠল! কি নোটিফিকেশন সেটা দেখতে গেলেই ঘন্টার পর ঘন্টা কোন দিক দিয়ে চলে যায় সেটা টের না পাওয়া ১৭। নিজের সম্পর্কে ফেসবুকে মাত্রাতিরিক্ত পোস্ট করা ১৮। নিজের ফেসবুক প্রোফাইল পিকচার নিয়ে অতিরিক্ত প্রতিক্রিয়া দেখানো বা অনুভব করা।
১৯। বাস্তব জীবনে অন্যের সাথে মেলামেশা, কথা বলার চেয়ে ফেসবুকে মেলামেশা, কথাবলাকে অধিক প্রাধান্য দেওয়া ২০। পোস্টে কেউ কমেন্ট না করলে কিছুটা হতাশ হয়ে পড়া ২১। ফেসবুকে কাউকে বন্ধু বানানোর জন্য অস্বাভাবিক আচরণ করা ২২। ঘুমানোর আগমূহুর্ত পর্যন্ত ফেসবুকে ঘুরাঘুরি করা।
তো উল্লেখ করা কয়টি লক্ষণ আপনার মাঝে খুঁজে পেলেন? যদি ২-৩টি লক্ষণ আপনার মাঝে লক্ষণীয় হয় তবে কোনো সমস্যা নেই। নিশ্চিন্ত থাকুন যে আপনি ফেসবুক আসক্তিতে নেই। কিন্ত হ্যাঁ, যদি অধিকাংশ লক্ষণ গুলোই আপনার মাঝে বিদ্যমান থাকে তাহলে আপনি ফেসবুক আসক্ত হয়ে পরেছেন। কোনো মতেই মেনে নেয়া যাবেনা যে আপনি ফেসবুক আসক্তি নন।
এখন এটাই স্বাভাবিক ব্যাপার যা অন্যান্য আসক্তির মতো ফেসবুক আসক্তিও আপনার আচরণ এবং মানসিক অবস্থার উপরে ব্যাপক ভাবে প্রভাব বিস্তার করবে এবং আপনার জন্য অমঙ্গল সাধন করবে। এমতাবস্থায় আপনার মনে অবশ্যই প্রশ্ন আসতে পারে যে, এখন তাহলে আমার ফেসবুক আসক্তি থেকে বাঁচতে কি করণীয়? তাই তো? বেশি কিছু না শুধু নিম্নে উল্লেখ করা ফেসবুক আসক্তি থেকে মুক্তির উপায় গুলো মনযোগ সহকারে পড়ে নিন এবং নিজের উপরে পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে প্রয়োগ করুন। তাহলেই আপনি এই ফেসবুক আসক্তি থেকে মুক্তি পেতে পারেন।
আরো পড়ুনঃ বাংলাদেশের জনপ্রিয় ওয়েবসাইট
ফেসবুক আসক্তির ক্ষতিকর দিক
কোনো কিছুর আসক্তি কিংবা নেশা কখনোই আমাদের জন্য ভালো কিছু বয়ে নিয়ে আসেনা। বরং যেকোনো আসক্তিই আমাদের সর্বদা ধ্বংসের দিকে ঠেলে দেয়। হোকনা সেটা বাস্তব জগতের কোনো কিছু অথবা অনলাইন জগতের। হয়তোবা সেটা আমাদেরকে কিছুটা সাময়িক সময়ের জন্য আনন্দ দেয় কিংবা বিভিন্ন উপকারে আসে।
কিন্তু, যখন কোনো কিছুর দ্বারা আমরা উপকৃত হই তখন, কোনো ভাবেই আমরা এটা ধরে নিতে পারবো না যে, সেটা আমাদের কোনো ক্ষতি করেনা কিংবা ক্ষতি করবে না। কারণ, সবকিছুরই কিন্ত ভালো-মন্দ উভয় দিকই বিদ্যমান। ফেসবুক কিংবা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম গুলোর ক্ষেত্রেও ব্যাপারটা একই রকম। ফেসবুক আমাদের জীবনে যেমন বিভন্ন ক্ষেত্রে সহজ করে তুলেছে ঠিক তেমনি আমদের প্রতিনিয়ত অনেক ক্ষতি সাধনও করছে।
১। আবেগ-অনুভূতির ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে ২। আসক্ত ব্যক্তি একাকী বোধ হয় ও নিজেকে দোষী ভাবতে শুরু করে ৩। নিজেকে অন্যর সঙ্গে তুলনা করে ঈর্ষাবোধ হতে শুরু করে ৪। হতাশা ও দুশ্চিন্তা পেয়ে বসে ৫। দায়-দায়িত্ব ভুলে মনোযোগ ডুবে থাকে ফেসবুকে ৬। কাজের সময় ঠিক থাকে না, কাজের আগ্রহ হারিয়ে যায় ৭। সময়জ্ঞান লোপ পায়, অসৎ পথে পরিচালিত হতে বাধ্য করে
এছাড়াও ফেসবুক আসক্তির ফলে শারীরিক এবং মানসিক যা যা পরিবর্তন ঘটেঃ ১। আসক্ত ব্যাক্তির আবেগের উপর নেতিবাচক প্রভাব পরে ২। বেশিক্ষন কোন কিছুতে মনযোগ ধরে রাখতে পারে না ৩। কাজ-কর্ম পড়াশোনাসহ সবকিছুতেই অনিহা তৈরি করে ৪। আসক্ত ব্যাক্তিকে হতাশা, দুশ্চিন্তার মতো খারাপ আবেগ গুলোর প্রকোপ প্রবলভাবে পেয়ে বসে ৫। আসক্ত ব্যাক্তি নিজেকে একাকী ও দোষী ভাবতে শুরু করে।
৬। কাজের প্রতি আগ্রহ হারিয়ে যায়। যার ফলে কোন কাজই ঠিকঠাক করতে পারে না ৭। শারীরিক সমস্যা গুলোর মধ্যে মাথাব্যথা, পিঠব্যথা বা মেরুদণ্ডে সমস্যা ইত্যাদি দেখা দেয় ৮। সকল দায়-দায়িত্ব ভুলে গিয়ে ডুবে থাকে ফেসবুকের মধ্যে ৯। সময় জ্ঞান লোপ পায়, যাতে করে সময়ানুবর্তিতা হারিয়ে ফেলে ১০। ইনসমনিয়া বা ঘুমের ব্যাঘাত ঘটে। যার ফলে চোখের নানান সমস্যা দেখা দেয় ১১। ওজনের ভারসাম্য নষ্ট হয়ে যায়। এক্ষেত্রে কারও ওজন কমে আবার কারও ওজন বাড়ে।
গবেষণায় জানা গেছে যে, অন্যান্য আসক্তির মতো ফেসবুক আসক্তিতেও আমাদের আচরণগত পরিবর্তন ঘটে। সেটা আপনি কয়েকদিন ফেসবুক না চালালেই নিজেই বুঝতে পারবেন। এই ক্ষতিকর দিকগুলো ছাড়াও ফেসবুক আসক্তির কারণে আমাদের বিভিন্ন ধরনের মানসিক ক্ষতিসাধন হয়ে থাকে। যা স্বল্পমেয়াদে বুঝতে না পারলেও দীর্ঘ মেয়াদে খুবই ভয়ংকর রূপ ধারণ করে।
এছাড়াও ফেসবুক আসক্তি যে ক্ষতি করছে সেটি হচ্ছে আমাদের প্রজন্মকে অলস প্রকৃতির করে তুলছে। আমরা নিজেরাও ধীরে ধীরে কি পরিমাণে অলস হয়ে উঠছি সেটাও কিন্ত লক্ষ্য করার মতো। এমন কি আপনি একটু লক্ষ্য করলেই দেখতে পাবেন আমাদের এই প্রজন্মের সকল ছেলেমেয়েরাই আসতে আসতে কতটা অলস প্রকৃতির হয়ে উঠছে। ফেসবুক আসক্তির ফলে আরেকটি যেই ক্ষতি হচ্ছে সেটা হচ্ছে আমাদের নিজেদের উপরে নিজেদের নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা কমিয়ে ফেলছে।
যেমনঃ যখন আমরা ফেসবুক কিংবা যেকোনো সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করি তখন আমরা আমাদের নিজেদের প্রতি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলি। চাইলেও আমরা সেখান থেকে সহজেই বের হতে পারিনা। এছাড়াও ফেসবুক আসক্তি আরো কি কি ক্ষতি করছে সেটা উপরোক্ত ধাপগুলো পড়ে বুঝতে পারছেন।
আরো পড়ুনঃ ফ্রিল্যান্সিং কিভাবে শিখবো
ফেসবুক আসক্তি থেকে মুক্তির উপায়
ফেসবুক আসক্তি থেকে মুক্তির উপায় এর জন্য আপনাকে আহামরি তেমন কোনো কিছু করার দরকার হবেনা। ফেসবুক আসক্তি থেকে মুক্তির জন্য শুধু কয়েকটি বিষয় মাথায় রাখলেই হবে। চাইলে আপনি কিছু সহজ-সরল নিয়ম অনুসরণ করে চলার মাধ্যমে আপনি এই ফেসবুক আসক্তি থেকে পুরোপুরি ভাবে মুক্তি পেতে পারেন। আমরা আপনার জন্য বেছে বেছে কয়েকটি টিপস এবং ট্রিকস নিম্নে শেয়ার করেছি। যেগুলোর আপনি আপনার উপরে যথাযথ ভাবে প্রয়োগ করলে অবশ্যই এই ফেসবুক আসক্তি থেকে সম্পূর্ণ মুক্তি পাবেন। তাহলে ফেসবুক আসক্তি থেকে মুক্তির উপায় গুলো জেনে নেওয়া যাকঃ
ফেসবুক আসক্তি থেকে মুক্তির উপায়
১। সর্বপ্রথম মেনে নিন যে আপনি ফেসবুকের প্রতি অনেক বেশি আসক্ত। কারণ, যদি আপনি আপনার নিজের সমস্যা স্বীকার না করেন, তাহলে সেটার সমাধান করবেন কিভাবে। তাই সর্বপ্রথমেই আপনি নিজে স্বীকার করেন যে, আপনি ফেসবুকের প্রতি আসক্ত।
২। ফেসবুকে যেসব আজে বাজে পেজ, গ্রুপ আছে সেসব গ্রুপ থেকে বাহির বা লিভ নিয়ে নিন। কেননা এইসব গ্রুপের বিভিন্ন রকম ভিডিও দেখে আপনার প্রয়োজনীয় সময় নষ্ট হয়।
৩। ফেসবুক আসক্তির কারণ চিহ্নিত করুন। কোন কারণে আপনি ফেসবুকের প্রতি আসক্ত সেটা নিশ্চিত হয়ে নিন। কি কারণে আপনি বারবার ফেসবুকে ব্যবহার করে সেটা ভাবুন।
৪। অনেকেই আছেন যাদের ঘণ্টায় ঘণ্টায় ফেসবুকে পোস্ট কিংবা স্ট্যাটাস না দিলে ভালোই লাগে না। এটা কিন্ত অন্যরা কিন্তু ভালো চোখে দেখে না, সেটা কি আপনি জানেন? সারাদিনের মনের যা কথা একটি স্ট্যাটাসেই দিয়ে দিন। যার ফলে আপনার বারবার ফেসবুকে আসার পরিমাণও কমে যাবে। আবার অন্যেরা বিরক্তির উদ্রেগ করবে না।
অনেকেই আছেন যারা অপ্রয়োজনীয় বিভিন্ন পেজ, গ্রুপে লাইক দিয়ে রাখেন। যার ফলে অপ্রয়োজনীয় নিউজ ফিডে আপনার মহা মূল্যবান সময়গুলো নষ্ট হয়ে যায়। তাই ফেসবুক থেকে অপ্রয়োজনীয় পেজগুলো আনলাইক করে দিন। এটি করার ফলে অনেক সময় সাশ্রয় ঘটবে এবং ফেসবুক আসক্তি থেকে মুক্তি পাবেন।
৫। কখনোই সকাল বেলা ঘুম থেকে ওঠার পরে এবং রাতে ঘুমানোর পূর্বে ফেসবুক ব্যবহার করবেন না। কেননা এই সময়টুকু আমাদের মন একদম শান্ত ও ফ্রেশ থাকে। এই সময় যদি আপনি কোনো কাজ করেন তাহলে সেটার প্রতি আপনার একেবারে অন্য রকম একটা আকর্ষণ তৈরি হয়।
৬। সপ্তাহের একটি দিনকে “ফেসবুক মুক্ত দিন” হিসেবে ঘোষণা করে দিন! দেখবেন আপনার ফেসবুক আসক্তি নিয়ন্ত্রণের মধ্যে চলে এসেছে। ভাবছেন, এতে করে আপনার ফেসবুক বন্ধুরা আপনাকে খুঁজে না পেয়ে আপনার উপরে রাগ করবে। সেটা যাতে তারা না করেন, সেজন্য আপনি আগে থেকেই একটি স্ট্যাটাস দিয়ে দিন যে, অমুক দিন আমার ফেসবুকহীন দিবস। ব্যস হয়ে গেল কেল্লাফতে!
আরো পড়ুনঃ মোবাইল দিয়ে টাকা ইনকাম করার উপায়
৭। ফেসবুক আসক্তি থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ হবে ফেসবুক আইডিটি Deactivate করে রাখা লম্বা সময়ের জন্য। মনে করুন ৩ থেকে ৪ সপ্তাহের জন্য। হয়তোবা প্রথম দিকে সবাই লম্বা সময় ধরে ফেসবুক বন্ধ করে রাখতে পারবেন না। তাই তারা ৭ দিনের একটি চ্যালেঞ্জ নিতে পারেন। আর তারপরেও যদি থাকতে না পারেন তাহলে আবার ফেসবুক এক্টিভ করে নিয়েন।
গবেষণায় জানা গেছে লম্বা সময় ধরে ফেসবুক বন্ধ রাখার কারণে ব্যবহারকারী মাঝে একটা আগ্রহ হারিয়ে ফেলে ফেসবুক ইউজ করার জন্য। এই সময়ে আপনি অন্য কোনো সামাজিক যোগাযোগ ব্যবহার করতে পারেন এতে করে দেখবেন ফেসবুক ব্যবহার করার আগ্রহ কম যাবে। হয়তোবা ফেসবুকে না আসার কারণে কিছু জিনিস আসলেই পাবেন না কিন্তু সেগুলোর বলিদান দিতে হবেই ফেসবুক আসক্তি কমাতে হলে।
৮। যে সময়টা আপনি ফেসবুকে দিতেন চেষ্টা করবেন সেই সময়টা আপানার পছন্দের অন্য কোনো কাজে ব্যয় করার। আপনার কোন শখের কাজও করতে পারেন। যেমন, বই পড়া, গান সোনা, সিনেমা দেখা, ছবি অঙ্কন করা, ফুলের বাগান তৈরি করা কিংবা গাছ লাগানো ইত্যাদি। অর্থাৎ, ফেসবুক বাদে অন্য কোথাও সময় কাটানোর অপশন খুঁজে বাহির করুন।
৯। ফেসবুক অ্যাপ ব্যবহার করার পরবর্তীতে আপনি কোনো ব্রাউজারে লগ ইন করে ফেসবুক ব্যবহার করার চেষ্টা করুন। এতে ফেসবুক বাদে অন্য কোনো কিছু ব্যবহার করার সময়ে নোটিফিকেশন চলে আসবে না যার ফলে আপনি প্রবেশও করবেন না। অর্থাৎ যদি আপনার কম্পিউটার, ল্যাপটপ থাকে তবে শুধুমাত্র কম্পিউটারে বা ল্যাপটপে ফেসবুক ব্যবহার করার চেষ্টা করুন। যার ফলে মোবাইলের মতো বারবার আপনাকে নোটিফিকেশন দিবে না, শুধু যখন আপনার দরকার পড়বে তখনি আপনি ফেসবুকে প্রবেশ করবেন।
১০। ফেসবুকে এতো এতো অপশন রয়েছে যে কিভাবে সময় কেটে যায়, তা বুঝতেই পাওয়া যায় না। ভিডিও, গেমসসহ আজব অনেক কান্ড-কারখানার লিংক ফেসবুকে খুঁজে পাওয়া যায়। আর এতে মত্ত হয়ে পড়লে সময়ের হিসাব থাকবে না সেটাই স্বাভাবিক ব্যাপার। তাই আপনি যথাসম্ভব চেষ্টা করুন এই সকল লিংক গুলো প্রবেশ না করতে। মনে রাখবেন, ফেসবুক হচ্ছে একটি গোলকধাঁধা। এখানে একবার ঢুকলে তা থেকে বাহির হওয়া অনেক কষ্টের!
১০। ফেসবুকে যদি আপনার একান্তই কোনো প্রয়োজন থাকে তাহলে দিনের একটি নির্দিষ্ট সময় নির্বাচন করুন ফেসবুক ব্যবহার করার জন্য। দিনের যেকোনো একটি সময় ফেসবুক ব্যবহার করার জন্য নির্ধারন করে নিন। কিন্ত হ্যাঁ সেই সময় ফেসবুক ব্যবহার করা যেন ৩০ মিনিটের বেশি না হয়ে থাকে। তারপর নিজের প্রতি দৃঢ় প্রতিজ্ঞা বদ্ধ থাকুন যে “আমি সেই নির্দিষ্ট’ সময় ব্যতীত দিন রাত ২৪ ঘন্টার মধ্যে আর অন্য কোনো সময় ফেসবুক ব্যবহার করবে না।
১১। অনেকেই আছেন যারা ফেসবুকে কোনো পোস্ট করার পরে লাইক, কমেন্ট ইত্যাদি চেক করে থাকেন যে, কে কে পোস্টে লাইক করলো, কে কে পোস্টে কমেন্ট করল। যেগুলো হচ্ছে ফেক রিওয়ার্ড যার দ্বারা আমাদের কোনো প্রকার লাভ হয়না। এগুলো শুধুমাত্র আমাদের ফেসবুকে বেশি সময় ধরে রাখার একটা সিস্টেম বলতে পারেন। তাই আপনার যদি পোস্ট করার পরে লাইক, কমেন্ট চেক করার ইচ্ছে তবে এই অভ্যাস এখনই পরিহার করুন ফেসবুক থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য।
আরো পড়ুনঃ ফেসবুক আইডি সিকিউরিটি টিপস
১২। যাদের সাথে আপনার ভালোভাবে জানা শোনা নেই তাদের কি আপনার বন্ধু বানানোটা অনেক বেশী জরুরি? দেখা যায় ফেসবুকে অনেক বেশি বন্ধু হওয়ার পড়ে কাছের বন্ধুদের কথাই অনেক সময় ভুলে যায়। তাই ফেসবুকে অপিরিচিত হাজার হাজার বন্ধু বানানো থেকে বিরত থাকুন, আর ফ্রেন্ডলিস্ট থেকে বেছে বেছে অপ্রয়োজনীয় বন্ধুদেরকে রিমুভ করে দিন। বন্ধুর মতোন বন্ধু সামান্য কয়েকজন থাকলেই যথেষ্ট, সেটা আপনি ভালো ভাবেই জানেন।
১৩। যোগ বিয়াম কিংবা মেডিটেশন করুন। মেডিটেশন হচ্ছে মনকে নিয়ন্ত্রণ করার সবথেকে সহজ এবং কার্যকরি উপায়। যেকোনো ধরনের আসক্তি থেকে মুক্তির জন্যই এটি সবচেয়ে কার্যকরী মাধ্যম।
১৪। ফেসবুক অ্যাপের নোটিফিকেশন বন্ধ করে রাখুন। নোটিফিকেশন বন্ধ করার কারণে আপনি অন্য কিছু ব্যবহার করার সময়ে বিভিন্ন কিছুর নোটিকেশন চলে আসলে আপনি সেগুলো চেক করার জন্যে বার বার ফেসবুক ব্যবহার করবেন না এবং ফেসবুকে ঢুকার পরিমাণ টা কমে যাবে।
১৫। যদি আপনার মোবাইলে মেসেঞ্জার ইন্সটল করা থাকে বা মেসেঞ্জার ব্যবহার করে থাকেন তবে সেটিও আনইন্সল করে দিন এবং শুধুমাত্র ব্রাউজারে ফেসবুক ব্যবহার করার চেষ্টা করুন। আর যদি মেসেঞ্জার আনইন্সটল না করতে চান তাহলে মেসেঞ্জারের নোটিফিকেশন টাও বন্ধ করে রাখুন সাথে Chat Head টাও বন্ধ রাখুন।
১৬। নোটিফিকেশন অফ করে দিন। কেননা এটি আপনাকে চুম্বকের মতো টেনে নিয়ে যাবে ফেসবুক ব্যবহার করার জন্য। অর্থাৎ আমি বলতে চাচ্ছি, আপনার মাঝে ফেসবুক লগইন করার তাগিদ সৃষ্টি করবে। কে কখন কি করলো, কে কোথায় লাইক দিলো, কখন কে কমেন্ট করলো তার সবই আপনার জানার দরকার আছে কি? উত্তর হবে নেই। তাই ফেসবুকের নোটিফিকেশন অপশনটি অফ করে দিন। দেখবেন ফেসবুক ব্যবহার করার প্রবণতা আপনার মাঝে অনেকখানী কমে গেছে।
এই ছোটাে টিপস গুলো অনুসরণ করার চেষ্টা করুন। তাহলে আশা করি কিছুটা হলেও আপনি ফেসবুক আসক্তি থেকে মুক্তি পেয়ে যাবেন। উপরের নিয়মগুলো সম্পূর্ণ রুপে প্রয়োগ করার মাধ্যমে আপনি ফেসবুক আসক্তি থেকে পুরোপুরি মুক্তি পেতে পারেবন। আর হ্যাঁ একটি কথা হলো ফেসবুক আসক্তি থেকে মুক্তি পাওয়ার উপায় সম্পর্কে যতই টিপস ট্রিক দিই না কেন যদি আপনি আমল না করেন তবে কিন্ত কাজ হবে নাহ। আপনার হাতেই সকল কিছু আপনি ফেসবুককে ব্যবহার করবেন নাকি ফেসবুকই আপনাকে ব্যবহার করবে সেটি আপনার নিজেকে চিন্তা করতে হবে।
বিঃদ্রঃ আমাদের আজকের এই ফেসবুক আসক্তি থেকে মুক্তির উপায় আর্টিকেলটির মূল উদ্দেশ্য হলো আপনাকে ফেসবুক আসক্তি থেকে মুক্তি দেয়া। মোটেও আপনাকে ফেসবুক বিদ্বেষী করে তোলা নয়। আর্টিকেলটি শেষ পর্যন্ত মনোযোগ সহকারে পড়ার জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ।
আর্টিকেল সম্পর্কিত তথ্য জানতে কমেন্ট করুন। আপনার প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।