নরমাল ডেলিভারি হওয়ার উপায় - নরমাল ডেলিভারি হওয়ার সহজ উপায় — সন্তান জন্ম দেওয়া প্রত্যেক মায়ের জন্য একটি বিশেষ অভিজ্ঞতা। গর্ভাবস্থায়, প্রতিটি মা একটা বিষয় নিয়ে চিন্তিত থাকেন তাহলো যে তার সন্তানটির নরমাল ডেলিভারি হবে নাকি সিজারিয়ান হবে। অর্থাৎ প্রতিটি গর্ভবতী মহিলাই উদ্বিগ্ন যে তার স্বাভাবিক প্রসব হবে নাকি সিজারিয়ান হবে।
সূচীপত্রঃ নরমাল ডেলিভারি হওয়ার উপায়
প্রেগন্যান্সি গ্লো-তে এখন চকচক করছে আপনার চোখ এবং মুখ। মা হওয়ার অনুভূতি সবসময় আনন্দে রাখছে আপনাকে। চিন্তা শুধু একটা বিষয় নিয়েই। নরমাল ডেলিভারি হবে তো? নাকি সেই কাঁটাছেঁড়ার মধ্যে দিয়েই যেতে হবে? তাই আমরা আপনাকে বলবো চিন্তা করবেন না। যদি আপনার বড়সড় কোনো জটিলতা না থাকে তবে গর্ভাবস্থায় কিছু জিনিস মেনে চললেই স্বাভাবিক ভাবে সন্তানের জন্ম দিতে পারবেন।
প্রত্যেক মেয়েই চায় তার সন্তানটি স্বাভাবিক প্রসব করুক। কারণ এতে কষ্ট কম যেখানে সিজারিয়ান ডেলিভারির অনেক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া রয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে, আপনি যদি গর্ভবতী হয়ে থাকেন এবং স্বাভাবিক ডেলিভারি চান, তাহলে আপনার খাদ্যাভাসে কিছু পরিবর্তন আনতে হবে। আজ আমরা আপনাকে এমন কিছু জিনিস সম্পর্কে বলতে যাচ্ছি যার মাধ্যমে আপনি আপনার শরীরকে নরমাল ডেলিভারির জন্য প্রস্তুত করতে পারেন। প্রিয় পাঠক চলুন তাহলে জেনে নিই নরমাল ডেলিভারি হওয়ার উপায় গুলো কি কিঃ
আরো পড়ুনঃ গর্ভবতী মায়ের প্রথম তিন মাসের খাবার তালিকা
১। নরমাল ডেলিভারি কি
নরমাল ডেলিভারির মানে হচ্ছে সন্তান প্রসব করার স্বাভাবিক কিংবা প্রাকৃতিক পদ্ধতি। সাধারণত একজন মহিলার মাসিকের রাস্তা বা ভ্যাজাইনা দিয়ে সন্তান প্রসব করার পদ্ধতিকে চিকিৎসা ভাষায় এটাকে নরমাল ভ্যাজাইনাল ডেলিভারি বলা হয়ে থাকে। শিশুর মাথাটি জরায়ুর মুখ থেকে বাহির হতে পারলেই সন্তানটির নরমাল ডেলিভারি হওয়া সম্ভবপর। সন্তানের গ্রোথ এবং মাথার অবস্থানের উপরে ভিত্তি করে ডেলিভারি কেমন হবে নরমাল নাকি সিজারিয়ান। গর্ভে শিশুর অবস্থান যদি উল্টা অবস্থায় থাকে তাহলে সন্তানটির নরমাল ডেলিভারি সম্ভবপর নয়।
২। নরমাল ডেলিভারি কেন গুরুত্বপূর্ণ
নরমাল ডেলিভারি করা আপনার বা আপনার শিশু উভয়ের জন্যই কোনো ঝুঁকির কারণ হয় না, তবে এটি উভয়ের জন্যই ভালো। মা ও শিশুর উভয়ের জন্যেই স্বাস্থ্যকর এবং নিরাপদ হচ্ছে সন্তানের নরমাল ডেলিভারি। সন্তান যদি স্বাভাবিক প্রসব কিংবা নরমাল ডেলিভারি হয় তাহলে গর্ভবতী মা সুস্থ হতেও অল্প সময় লাগে। সন্তান যদি নরমাল ডেলিভারিতে প্রসব করে তাহলে কিছু ব্যাকটেরিয়া সন্তানের শরীরের মধ্যে প্রবেশ করে যা সন্তানের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে বৃদ্ধি করে দেয়।
নরমাল ডেলিভারিতে সন্তান প্রসব করার সময় অ্যামনিয়োটিক নামের তরল পদার্থের সংস্পর্শে সন্তানটি আসে, যার কারণে সন্তানটির শ্বাসকষ্টের সম্ভাবনা অনেকাংশে কমে যায়। আর সিজারিয়ান পদ্ধতিতে জরায়ুতে অক্সিজেন কম পরিমাণে প্রবেশ করে যার ফলে সেরে উঠতে অনেক সময় লাগে। আর ঠিক নরমাল ডেলিভারিতে তার বিপরীতটা ঘটে। এছাড়াও নরমাল ডেলিভারিতে আরো যেসকল সুবিধা আছে। যেমনঃ
১। নরমাল ডেলিভারি হওয়ার ক্ষেত্রে সন্তান অতি সহজেই মায়ের বুকের দুধ পান করার পদ্ধতি শিখে যায়
২। নরমাল ডেলিভারিতে সন্তান প্রসব বেদনা একটু বেশি সহ্য করতে হয় ঠিকই কিন্তু ১ বার সন্তান প্রসব হয়ে গেলে নেক্সট টাইম আর কোনো সমস্যা হয়না
৩। নরমাল ডেলিভারিতে সন্তান প্রসব করার ফলে শরীরে কোনো ধরনের কাটাকাটি করার ঝামেলা থাকে না যার কারণে গর্ভবতী মায়ের সেরে উঠতে অল্প সময় লাগে
৪। যেসকল গর্ভবতী মা নরমাল ডেলিভারিতে সন্তান জন্ম দিতে সক্ষম তারা সিজার করা মায়েদের থেকে বেশি কর্মক্ষম এবং অনেক বেশি সাহসী হয়ে থাকেন
৫। সন্তান প্রসবের জন্য নরমাল ডেলিভারি শরীরের জন্য যে কতটা ভালো সেটা সন্তান ডেলিভারির পরেই বুঝতে পারবেন
৬। ইসলাম ধর্মে বলা হয়ে থাকে নরমাল ডেলিভারি করার জন্য।
আরো পড়ুনঃ গর্ভবতী মায়ের খাবার তালিকা
৩। যে বিষয় গুলো নরমাল ডেলিভারির সম্ভাবনা বাড়ায়
নীচে আমরা এমন কিছু কারণ সম্পর্কে বলছি, যা নরমাল ডেলিভারির সম্ভাবনা বাড়িয়ে দিতে পারেঃ
১। যদি গর্ভবতী মহিলার আগে স্বাভাবিক প্রসব হয়ে থাকে
২। গর্ভবতী মহিলার কোনো প্রকার শারীরিক রোগ না থাকলে (যেমন- হাঁপানি ইত্যাদি)
৩। গর্ভবতী মহিলা এবং গর্ভের শিশুর স্বাভাবিক ওজন থাকলে
৪। যদি গর্ভবতী মহিলার গর্ভাবস্থায় কোনো গুরুতর স্বাস্থ্য সমস্যা না হয়
৫। যদি গর্ভবতী মহিলা গর্ভাবস্থায় শারীরিকভাবে সক্রিয় থাকে
৬। গর্ভবতী মহিলার রক্তচাপ, রক্তে সুগার ও হিমোগ্লোবিনের মাত্রা স্বাভাবিক থাকলে।
দ্রষ্টব্য: উপরে উল্লিখিত কারণগুলি নরমাল ডেলিভারির গ্যারান্টি দেয় না। এগুলো শুধুমাত্র স্বাভাবিক প্রসবের সম্ভাবনা বাড়ায়।
৪। কখন নরমাল ডেলিভারি সম্ভব না?
১। প্রথমবার অন্তঃসত্ত্বা হলে অনেকেই রিলাক্স থাকতে পারেনা। তখন বার্থ ক্যানেল ফ্রি থাকে। সেক্ষেত্রে শিশুর ওজন অনেক বৃদ্ধি পায় আর সেসময় চিকিৎসক নরমাল ডেলিভারি করার পরামর্শ দেন না ২। দেখা যায় খাটো কিংবা আকারে ছোট মহিলাদের জরায়ু ছোট হয়ে থাকে আর হ্যা স্বাভাবিক ভাবে তাদের সন্তানও কিন্ত ছোটো হবে। অনেক সময়ে দেখা যায় যে, জরায়ুর আকার ছোটো কিন্তু পেটে সন্তানের সাইজ বড়। যদি এই রকম হয়ে থাকে তবে নরমাল ডেলিভারি সম্ভব হবেনা
৩। গর্ভফুল সাধারণত জরায়ুর উপরে অথবা সামনে কিংবা পেছনের দিকে থাকতে পারে। নরমাল ডেভিভারি করার জন্য শিশু নিচের দিকে এবং গর্ভফুল উপরের অংশে থাকতে হয়। আর হাঁ যদি এটার বিপরীত হয় তাহলে কিন্ত নরমাল ডেলিভারি সম্ভবপর হবে না।
৪। নরমাল ডেলিভারিতে সন্তান প্রসব করবে কি-না তা সন্তান পেটে থাকা অবস্থায় পানির পরিমাণ দেখে বুঝতে পারা যায়। পেটে পানির পরিমাণ বেশি থাকলে সন্তান প্রসব করার সময় নবজাতকের মুখ সহজেই খুঁজতে সুবিধে হয়। আর শরীরে পানির পরিমাণ কম থাকলে যে নালি দিয়ে শিশু মায়ের শরীর থেকে খাবার নেয়, তাতে সমস্যা দেখার সম্ভাবনা থাকে। ৮-২২ সেন্টিমিটার হচ্ছে নরমাল পানির পরিমাণ। যদি শরীরে তার কম পরিমাণে পানি থাকে তাহলে নরমাল ডেলিভারি সম্ভবপর হয়না।
৫। সবকিছু ঠিকঠাক থাকার পরেও নরমাল ডেলিভারির সিদ্ধান্ত কিন্ত চেঞ্জ হতে পারে। কারণ কেবলমাত্র এই সিদ্ধান্তটি একমাত্র আপনি এবং আপনার ডাক্তার নিতে পারেন। কেননা এই দীর্ঘ সময়ে গর্ভবতীর শরীরে বিভিন্ন প্রকার পরিবর্তন আসে।
আরো পড়ুনঃ কি খেলে টিউমার ভালো হয়
৫। নরমাল ডেলিভারির লক্ষণ সমূহ
হ্যাঁ, কিছু লক্ষণ ও উপসর্গের ভিত্তিতে নরমাল ডেলিভারির পূর্বাভাস দেওয়া যায়। সাধারণত প্রসবের ৪ সপ্তাহ আগে গর্ভবতী মহিলার শরীরে এই লক্ষণগুলি দেখা দিতে শুরু করে। নরমাল ডেলিভারির লক্ষণ গুলি নিম্নরূপ। একজন সঠিক স্বাস্থ্যবতী মহিলার নরমাল ডেলিভারির জন্য এর সম্ভাব্য লক্ষণ গুলো নিম্নে উল্লেখ করা হলোঃ
১। ৩০ থেকে ৩৪ সপ্তাহের মধ্যে গর্ভের বাচ্চাটি সিফালিক অবস্থানে চলে আসে। শিশুর মাথা নিচের দিকে চলে আসে এবং দেহটি অনেকটা নিচের দিকে নেমে আসে। গর্ভাবস্থার 34 তম সপ্তাহ থেকে 36 তম সপ্তাহের মধ্যে, যদি ভ্রূণের মাথা নিচু হয়ে যায়, তবে এটি নরমাল ডেলিভারির সম্ভাবনা বাড়িয়ে দেয়।
২। ভ্রূণের মাথা গর্ভবতী মহিলার যোনিপথে চাপ দেয়, যার ফলে মহিলার ঘন ঘন প্রস্রাব হয়। এটি ভ্রূণের নিচে নেমে আসার লক্ষণ হতে পারে। ঘন ঘন মলত্যাগ হতে পারে নরমাল ডেলিভারির লক্ষণ। কারণ বাচ্চার মাথা পেলেভিক অঞ্চলের নিচের দিকে চাপ সৃষ্টি করে মূত্রাশয়কে সঙ্কুচিত করে
৩। যোনি স্রাব বৃদ্ধি পাবে। এটি সাদা এবং গোলাপী রঙের হয়ে থাকে এবং কোনো ক্ষেত্রে এটাতে রক্ত মিশে থাকতে পারে। এটি একটি সুস্থ এবং নরমাল ডেলিভারির লক্ষণ বলে ধরা হয়।
৪। শরীরের অস্থিরতা বৃদ্ধি নরমাল ডেলিভারির লক্ষণ
৫। পিঠের নিম্ন অংশে ব্যাথা হতে পারে কেননা গর্ভস্থ শিশুটি ঐঅংশের উপরে চাপ দিতে থাকে। যদি এমনটি হয় তবে তা নরমাল ডেলিভারির লক্ষণ
৬। গর্ভবতী মহিলার যদি ভ্রূণের নিচের দিকে চলাফেরার কারণে নড়াচড়া করতে অসুবিধা হয়, তাহলে তা নরমাল ডেলিভারির লক্ষণ হতে পারে।
৭। প্রসবের সময় ঘনিয়ে আসার সাথে সাথে গর্ভবতী মহিলার মলদ্বারের পেশী আলগা হয়ে যায়। এই কারণে, মহিলা পাতলা মলত্যাগ করতে পারে। এটি নরমাল ডেলিভারির লক্ষণ হিসাবেও বিবেচিত হতে পারে
৮। স্তনের ফোলাভাব নরমাল ডেলিভারির লক্ষণ হিসেবে ধারনা করা হয়। প্রেগন্যান্সির শেষের দিকে পৌঁছানোর পরে অনেক সময় স্তনকে ভারী বলে মনে হয়।
৯। সাধারণত সন্তান প্রসব যন্ত্রণা উঠলে জলের থলি ভেংগে যায় কিংবা যেতে পারে। অনেক সময় এটি যন্ত্রণা শুরু হওয়ার পূর্বেও ভেঙ্গে যেতে পারে। এক্ষেত্রে দ্রুত ডাক্তারের সঙ্গে যোগাযোগ করা দরকার কিংবা রোগীকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে।
সকলের ক্ষেত্রে উপরোক্ত নরমাল ডেলিভারি হওয়ার লক্ষণ গুলো প্রকাশ নাও হতে পারে। দেখা যায় অনেকের ক্ষেত্রে স্বাভাবিক ভাবেই নরমাল ডেলিভারি হয়ে থাকে, আবার অনেকেই বিভিন্ন ধরনের জটিলতায় ভুগে থাকে। নরমাল ডেলিভারি হওয়ার সময় যেসকল জটিলতা দেখা যায়ঃ
১। তলপেটে গরম গরম ভাব অনুভব করা
২। পিঠে তিব্র আকারে ব্যাথা অনুভব করা
৩। পেশির সংকোচ বৃদ্ধি পায়
৪। যোনি পথ থেকে রক্তপাত হয়ে থাকে।
৬। গর্ভাবস্থায় কিছু বিষয় মনে রাখতে হবে
গর্ভাবস্থার সময়টি হচ্ছে অনেক গুরুত্বপূর্ণ একটি সময়। এই সময়ে শুধুমাত্র খাদ্যাভ্যাসের দিকে নজর দিলেই হবেনা এছাড়া আরো অন্যান্য বিষয় সমূহের প্রতি বিশেষ ভাবে খেয়াল রাখতে হবে। কেননা এসকল বিষয় আপনাকে একটি সুস্থ শিশু জন্ম দিতে সহায়তা করবে। সেই সঙ্গে গর্ভবতী মাকেও সুস্থ রাখবে। গর্ভাবস্থায় ডায়েটে কি কি জিনিস খাওয়া উচিত আর কি কি জিনিস এড়িয়ে চলা দরকার তা মেনে চলতে হবে। মনে রাখবেন নরমাল ডেলিভারি হচ্ছে অনেক কিছু মিশ্রনের ফল।
১। মানসিক চাপমুক্ত থাকতে হবে
২। হাসিখুশি থাকতে হবে
৩। নিজেকে যতটা সম্ভব সুস্থ সচল রাখতে হবে
৪। সময় মতো চেকআপ করতে হবে
৫। প্রার্থনায় মনোনিবেশ থাকতে পারেন
৬। ফাস্ট ফুড এবং কোল্ড ড্রিংক গুলো এড়িয়ে চলুন
৭। ক্যাফেন থেকে বিরত থাকুন
৮। সিগারেট এবং সকল প্রকার অ্যালকোহল থেকে দূরে থাকুন
৯। পরিবারকে যথেষ্ট সময় দিন
১০। ভালো মুভি, গান শুনুন।
১১। ফলমূল বেশি খাওয়া উচিত
১২। মানসিক অবসাদ মুক্ত থাকা উচিত
১৩। পেটে চাপ দেওয়া এড়ানো উচিত
১৪। রেগুলার ডায়াবেটিস পরীক্ষা করা উচিত
১৫। প্রতিদিন প্রচুর ভিটামিন প্রয়োজন
১৬। দীর্ঘ সময় ধরে মাথা নিচের দিকে রাখা উচিত নয়
১৭। নিয়ম করে ওমেগা এসিড গ্রহন করা উচিত
১৮। গর্ভাবস্থায় স্বাভাবিক প্রসবের বিষয়ে খেয়াল রাখা দরকার
১৯। ফলের রস এবং দুধ খাওয়া উচিত
২০। সবুজ সবজি ডায়েটে থাকা উচিত
২১। শরীরের ওজনের বৃদ্ধি ও হ্রাসের চার্ট করা উচিত
নরমাল ডেলিভারি মূলত স্বাস্থ্যর উপরে নির্ভর করে। দেখা যায় সকল বিষয় গুলো মেনে চলার পরেও কিছু সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। তাই কোনো প্রকার সমস্যা দেখা দিলে দেরি না করে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ডাক্তারের পরামর্শ নিন।
৭। নরমাল ডেলিভারি হওয়ার উপায়
ডায়েটঃ গর্ভবতী জানার পরে থেকে আপনার নিজের প্রতি পূর্বের থেকে আরো বেশি যত্ন নেওয়া শুরু করা উচিত। এই সময়ে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ডায়েট চার্ট অনুসরণ করুন। গর্ভবতী অবস্থায় স্বাস্থ্যকর খাবার, টাটকা সবুজ শাকসবজি, প্রচুর পরিমাণে ফলমূল খান। এগুলো ব্যতীত খাবার তালিকায় মাল্টিভিটামিন, ক্যালসিয়াম এবং আয়রন সমৃদ্ধ খাবার রাখার। মনে রাখবেন শরীরের পেশি যত শিথিল থাকবে নরমাল ডেলিভারির সম্ভাবনা ততবেশি বৃদ্ধি পাবে।
মানসিক চাপ থেকে দূরে থাকুনঃ গর্ভবতী মহিলারা যারা নরমাল ডেলিভারি করতে চান তাদের গর্ভাবস্থায় চাপ থেকে দূরে থাকার চেষ্টা করা উচিত। এ জন্য তারা চাইলে ধ্যান করতে পারেন, গান শুনতে পারেন বা বই পড়তে পারে।
নিজেকে হাইড্রেটেড রাখুনঃ আপনি যদি নিজে থেকে স্বাভাবিক ডেলিভারি চান, তাহলে নিজেকে হাইড্রেটেড রাখুন। এ সময় বেশি করে পানি পান করুন। এটি শিশুর বিকাশের চাহিদা পূরণ করে। পানি হচ্ছে আমাদের শরীরের অত্যাবশকীয় একটি জিনিস। শরীরের ফ্লুইড চলাচলের জন্যে পানি খুব জরুরি। তাই গর্ভাবস্থায় প্রতিদিন ৮-১০ গ্লাস পানি পান করুন। এতে করে রক্ত চলাচল ভালোভাবে হয়। কোষ্ঠকাঠিন্যর সমস্যা হয়না। সুতরাং গর্ভাবস্থায় যতবেশি পানি খাওয়া যায় ডেলিভারি ততবেশি সহজ হবে।
স্ট্রেচিং করবেনঃ স্বাভাবিক প্রসবের জন্য গর্ভবতী মহিলাদের অবশ্যই স্ট্রেচিং করতে হবে। এতে স্বাভাবিক প্রসবের সম্ভাবনা অনেকাংশে বেড়ে যায়।
স্ট্রেসঃ নরমাল ডেলিভারির জন্যে শরীর সুস্থ্য এবং ঝরঝরে রাখা অতীব জরুরী। স্ট্রেস বাড়লেই শরীর খারাপ হয়ে যাবে। গর্ভাবস্থায় যতটা সম্ভব স্ট্রেস কম নেয়া যায় ততবেশী ভালো। গর্ভাবস্থায় নিজেকে সবসময় হাসিখুশি এবং প্রফুল্ল রাখতে হবে। দরকার হলে মনোবিদের কাছে গিয়ে পরামর্শ নিতে পারেন।
ব্যায়ামঃ গর্ভাবস্থায় নিয়মিত ব্যায়াম করলে নরমাল ডেলিভারির সম্ভাবনা বেড়ে যায়। এর জন্য আপনি হাঁটা, জগিং ইত্যাদি করতে পারেন। এ ছাড়া চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে ব্যায়াম বেছে নিতে পারেন। এর পাশাপাশি, ডাক্তারের পরামর্শে প্রতিদিনের গৃহস্থালির কাজ করতে থাকুন।
খেজুর খানঃ আপনি যদি নরমাল ডেলিভারি চান, তাহলে গর্ভাবস্থার ৯ম মাসে অবশ্যই খেজুর খান। দুধের সাথে খেজুর খেতে পারেন। এতে পেশির সংকোচন হয় না।
ম্যাসাজঃ গর্ভাবস্থার ৭ম মাসের পর মহিলাদের শরীরের নিচের অংশে মালিশ করা উচিত। এতে স্বাভাবিক প্রসবের সম্ভাবনা বেড়ে যায় এবং এটি মানসিক চাপ থেকেও মুক্তি দেয়।
নেতিবাচক জিনিস চিন্তা করবেন নাঃ গর্ভাবস্থায় নেতিবাচক জিনিস থেকে দূরে থাকুন। ডেলিভারি সম্পর্কে শোনা নেতিবাচক জিনিস এবং উপাখ্যানগুলিতে কোন মনোযোগ দেবেন না। মনে রাখবেন যে প্রতিটি মহিলার অভিজ্ঞতা ভিন্ন হতে পারে। অতএব, অন্যের খারাপ অভিজ্ঞতার কারণে নিজের মধ্যে ভয় তৈরি করবেন না।
সন্তান জন্মদান সম্পর্কে সঠিক তথ্য জানুনঃ সঠিক তথ্য ভয় দূর করে। অতএব, ডেলিভারি সম্পর্কে যতটা সম্ভব সঠিক তথ্য পাওয়ার চেষ্টা করুন। এটি গর্ভবতী মহিলাকে প্রসবের প্রক্রিয়াটি আরও ভালভাবে বুঝতে সহায়তা করে।
প্রিয়জনের সাথে থাকুনঃ প্রিয়জনের সাথে থাকা একজন গর্ভবতী মহিলাকে মানসিকভাবে শক্তিশালী করে তোলে। তাই, গর্ভাবস্থায় সবসময় আপনার প্রিয়জনের সাথে থাকার চেষ্টা করুন।
সঠিক ডাক্তার নির্বাচন করুনঃ গর্ভবতী মহিলার প্রসবের জন্য খুব সাবধানে ডাক্তার নির্বাচন করা উচিত। নরমাল ডেলিভারির জন্য, এমন একজন ডাক্তার বেছে নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ, যিনি গর্ভবতী মহিলার শরীরের অবস্থা সম্পর্কে সঠিক তথ্য দিতে থাকেন এবং নরমাল ডেলিভারির চেষ্টা করেন।
সাহায্য করার জন্য একজন অভিজ্ঞ মিডওয়াইফ নিয়োগ করুনঃ যে মহিলারা নরমাল ডেলিভারি করতে চান তাদের সাথে একজন অভিজ্ঞ ধাত্রী রাখার পরামর্শ দেওয়া হয়। এই ধরনের মিডওয়াইফদের নরমাল ডেলিভারি করার ভালো অভিজ্ঞতা থাকে, তাই তারা প্রসবের সময় গর্ভবতী মহিলাদের জন্য খুবই সহায়ক হতে পারে। এছাড়াও, শিশুর জন্মের পর যে যত্ন নেওয়া দরকার সে সম্পর্কে মিডওয়াইফরা ভালভাবে পারদর্শী।
গর্ভাবস্থায় খাদ্যের যত্ন নিনঃ সঠিক খাবার খাওয়া আপনার নরমাল ডেলিভারির ক্ষেত্রে অনেক সাহায্য করে। তাই গর্ভাবস্থায় খাবার ও পানীয়ের দিকে বিশেষ নজর দিতে হবে। ক্যালসিয়াম বা আয়রনের ঘাটতি না হওয়ার চেষ্টা করুন। আপনার খাদ্যতালিকায় সবুজ শাকসবজি, জুস, ডিম, ফল ইত্যাদি অন্তর্ভুক্ত করুন। এগুলো আপনার অনাগত শিশুকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে। যদি কোন সমস্যা হয়, তাহলে আপনি আপনার ডাক্তারের সাথে খাবার সম্পর্কিত বিষয়গুলি নিয়ে কথা বলতে পারেন।
প্রেশার এবং ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখুনঃ গর্ভাবস্থার আগে থেকেই যাদের প্রেশার ও ডায়াবেটিস সমস্যা রয়েছে তাদের তা নিয়ন্ত্রনে রাখতে হবে। নিয়মিত ডাক্তারের পরামর্শ মেনে চলতে হবে। যাতে এগুলো নিয়ন্ত্রণে থাকে।
উঠতে এবং বসতে সঠিক অবস্থানের যত্ন নিনঃ গর্ভাবস্থায় আপনার উঠা, বসা এবং ঘুমানো এই তিনটি জিনিসই আপনার অনাগত শিশুকে প্রভাবিত করতে পারে। একজন গর্ভবতী মহিলার বসা থেকে শোয়া পর্যন্ত অবস্থান গর্ভের শিশুর উপর প্রভাব ফেলে। অতএব, তাদের সর্বদা তাদের শরীরকে সঠিক অবস্থানে রাখার চেষ্টা করা উচিত। সঠিকভাবে উঠুন, বসুন এবং ঘুমান যাতে শিশুর উপর কোন প্রভাব না পড়ে।
এই জিনিসগুলি এড়িয়ে চলুনঃ কাঁচা ডিম, সিগারেট, অ্যালকোহল, ক্যাফেইন, মাছ, কাঁচা পেঁপে, কাঁচা স্প্রাউট, পনির, কাঁচা মাংস, ঘরে তৈরি আইসক্রিম, জাঙ্ক ফুড, ফাস্ট ফুড, উচ্চ তেল এবং মশলাদার জিনিসগুলি এড়িয়ে চলুন। এগুলো আপনার জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।
কাজের প্রতি একটিভ থাকুনঃ অনেকেই দেখা যায় গর্ভবতীর খবর শুনেই শুয়ে, বসে সময় কাটাতে চান বা শুরু করেন। অনেকেই ভাবেন এই সময়ে কোনো প্রকার কাজকর্ম করা যাবেনা। কিন্তু আপনার এই ব্যাপারটা একদমই ভুল ধারণা। বরং গর্ভাবস্থার সময় নিজেকে যতবেশি কাজের প্রতি একটিভ রাখা যায় ততবেশি ভালো। এতে করে নরমাল ডেলিভারি হওয়ার সুযোগ ততবেশি থাকে।
কাজের প্রতি একটিভ রাখতে যে সকল বিষয় করতে পারেনঃ ১। বাড়িতে হালকা কাজকর্ম করতে পারেন ২। চিকিৎসক এর কাছে থেকে পরামর্শ নিয়ে হালকা ব্যায়াম কিংবা যোগাব্যায়াম করুন। এছাড়া সকাল সন্ধ্যা হাটাহাঁটি করুন। হাঁটাহাঁটি করার কারণে ওজন কমবে এবং আপনার শরীর সুস্থ থাকবে,এটি করার কারণে নরমাল ডেলিভারির চান্সও ততবেশী বৃদ্ধি পাবে।
ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখুনঃ গর্ভাবস্থায় ওজন বৃদ্ধি স্বাভাবিক, তবে গর্ভবতী মহিলাদের খুব বেশি ওজন বাড়ানো উচিত নয়। অতিরিক্ত ওজনের কারণে প্রসবের সময় সমস্যা হতে পারে। আসলে মা বেশি মোটা হলে বাচ্চা বের হতে অসুবিধা হয়।
প্রয়োজনমতো ঘুমঃ ভালো এবং প্রয়োজনমতো ঘুম আপনার নরমাল ডেলিভারির সম্ভাবনা বাড়ায় এবং সেই সাথে আপনাকে ফিট রাখে। পর্যাপ্ত ঘুম এবং বিশ্রাম আপনার এবং আপনার শিশুর জন্য স্বাস্থ্যকর। রাতে যথাসময়ে ঘুমানোর চেষ্টা করুন এবং সকালে তাড়াতাড়ি উঠুন। গভীর রাত পর্যন্ত টিভি দেখা এড়িয়ে চলুন এবং সাত থেকে আট ঘণ্টা ঘুমানোর চেষ্টা করুন।
আরো পড়ুনঃ অবিবাহিত মেয়েদের মাসিক বন্ধ হওয়ার কারণ
৮। গর্ভাবস্থায় কি খাবেন
গর্ভবতী মহিলাদের নরমাল ডেলিভারির জন্য তাদের খাদ্য তালিকায় দুগ্ধজাত খাবার, সবুজ শাক-সবজি, শুকনো ফল, চর্বিবিহীন মাংস, মৌসুমি ফল, ডিম, বেরি এবং লেবু ইত্যাদি অন্তর্ভুক্ত করা উচিত। উপরন্তু, তাদের সারাদিন প্রচুর পানি পান করে নিজেদেরকে হাইড্রেটেড রাখতে হবে।
৯। গর্ভাবস্থায় কি খাবেন না?
কাঁচা ডিম, অ্যালকোহল, সিগারেট, উচ্চ পরিমাণে ক্যাফেইন, উচ্চ পারদের মাত্রা সহ মাছ, কাঁচা পেঁপে, কাঁচা স্প্রাউট, ক্রিম দুধ থেকে তৈরি পনির, কাঁচা মাংস, ঘরে তৈরি আইসক্রিম এবং জাঙ্ক ফুড ইত্যাদি এড়িয়ে চলুন।
১০। নরমাল ডেলিভারির সুবিধা
নরমাল ডেলিভারি করা আপনার বা আপনার শিশু উভয়ের জন্যই কোনো ঝুঁকির কারণ হয় না, তবে এটি উভয়ের জন্যই ভালো। প্রসবের পরে সুস্থ হতে আপনার খুব কম সময় লাগে এবং আপনি নরমাল ডেলিভারি পর মা তার শিশুকে অবিলম্বে দুধ খাওয়াতে সক্ষম হন। নরমাল ডেলিভারিতে আপনার কোনো কাটা, সেলাই বা রক্তপাত হয় না। অতএব, প্রসবের পরে, আপনার কোন ধরনের ব্যথা বা অস্বস্তি নেই এবং সংক্রমণের কোন ঝুঁকি নেই।
নরমাল ডেলিভারিতে বাচ্চা নিজে থেকেই কাছে থাকে। আর অপারেশনের ক্ষেত্রে বাচ্চাকে কিছু সময়ের জন্য আপনার থেকে দূরে রাখা হয়। আপনার শিশুকে আপনার সাথে রাখলে, সে অবিলম্বে বুকের দুধ পায়, যার কারণে পোলিও, শিশুর জন্ডিসের ঝুঁকি কমে বা অন্যান্য সমস্যা হওয়ার ঝুঁকি দূর হয়। সামগ্রিকভাবে, স্বাভাবিক প্রসব আপনার এবং আপনার শিশু উভয়ের জন্যই খুব উপকারী। এতে কোন সমস্যা নেই এবং আপনারা দুজনেই ফিট এবং ফিট।
১১। নরমাল ডেলিভারির জন্য কতক্ষণ সময় লাগে?
সাধারণত, নরমাল ডেলিভারির সময় গর্ভবতী মহিলার শারীরিক অবস্থার উপর নির্ভর করে। যদি একজন গর্ভবতী মহিলার প্রথমবারের মতো নরমাল ডেলিভারি হতে থাকে, তবে এই প্রক্রিয়াটি 7-8 ঘন্টা পর্যন্ত সময় নিতে পারে। একই সময়ে, এটি যদি গর্ভবতী মহিলার দ্বিতীয় প্রসব হয়, তবে এই প্রক্রিয়াটি কিছুটা কম সময় নিতে পারে।
১২। নরমাল ডেলিভারি কতটা বেদনাদায়ক?
নরমাল ডেলিভারির সময় প্রতিটি মহিলার অভিজ্ঞতা ভিন্ন হতে পারে। প্রসবের সময় মহিলা কতটা ব্যথা অনুভব করবেন তা তার শারীরিক এবং মানসিক ক্ষমতার উপর নির্ভর করে।
আর্টিকেল সম্পর্কিত তথ্য জানতে কমেন্ট করুন। আপনার প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।