কলা খাওয়ার উপকারিতা - কলা খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা – প্রিয় পাঠক আপনি কি কলা খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে জানতে চান? আপনি নিশ্চয়ই আজ অবধি অনেক জায়গায় পড়েছেন এবং শুনেছেন যে "প্রতি দিন একটি করে আপেল খেলে তা আপনাকে ডাক্তার থেকে দূরে রাখবে" এর অর্থ হল প্রতিদিন একটি আপেল খেলে আমাদের কখনই ডাক্তারের কাছে যেতে হবে না।
সূচীপত্রঃ কলা খাওয়ার উপকারিতা
কিন্তু আপনি কি জানেন যে, প্রতিদিন একটি করে কলা খেলে আপনি সারা জীবন সম্পূর্ণ সুস্থ থাকতে পারবেন। আপনার দৈনন্দিন রুটিনে কলা অন্তর্ভুক্ত করে আপনি সুস্থ থাকতে পারবেন। কলা খাওয়ার এত উপকারিতা আছে যা আপনি কল্পনাও করতে পারবেন না।
আজকের পর আমার লেখাটি পড়ে আপনি কলা নিয়ে সেভাবে ভাববেন না। আজ আপনাদের বলব স্বাস্থ্যের জন্য কলা খাওয়ার উপকারিতা। কলা আপনার ওজন বাড়ার পাশাপাশি কমাতে সাহায্য করে, আপনার শরীরে অনেক পুষ্টি জোগায়, হৃৎপিণ্ড ও চোখকে রক্ষা করে।
আজ আমরা আপনাদের জন্য নিয়ে এসেছি কলা খাওয়ার উপকারিতা। কলার বিশেষ বিষয় হল এটি অন্যান্য ফলের তুলনায় অনেক সস্তা, কলায় পাওয়া ভিটামিন, প্রোটিন এবং অন্যান্য পুষ্টি সুস্থ শরীরের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আপনি যদি শারীরিক দুর্বলতায় ভুগেন বা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে চান, তাহলে অবশ্যই ডায়েটে কলা অন্তর্ভুক্ত করুন, এটি আপনাকে আশ্চর্যজনক উপকার দেবে।
কলাকে সেই নির্বাচিত সুস্বাদু ও উপকারী ফলের মধ্যে গণ্য করা হয়, যা তাৎক্ষণিক পেট ভরাট করে। এর সেবন শুধু স্বাস্থ্যের জন্যই উপকারী নয়, ত্বকে ভালো প্রভাবও দেখায়। এই কারণেই টেকনিক্যাল কেয়ার বিডির এই বিশেষ আর্টিকেলে আমরা কলা খাওয়ার উপকারিতা এর কথা বলছি। এর সাথে কলার ব্যবহার, এর সঠিক পরিমাণ এবং বেশি কলা খাওয়ার অপকারিতা সম্পর্কিত তথ্যও এখানে পাওয়া যায়। চলুন তাহলে প্রথমেই জেনে নেওয়া যাক কলা মানুষের জন্য কতটা উপকারী।
আরাে পড়ুনঃ পেয়ারা খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা
কলা খাওয়ার উপকারিতা
কলা একটি গুণের ভান্ডার, যার কারণে এটি স্বাস্থ্যের জন্য অনেক উপকার করে থাকে। মনে রাখবেন শুধু কলা কোনো রোগের নিরাময় নয়। বরং এর সেবন রোগ প্রতিরোধে এবং রোগের উপসর্গের প্রভাব কমাতে কিছুটা হলেও সহায়ক ভুমিকা পালন করে।
প্রতিদিন একটি আপেল খাওয়া সুস্বাস্থ্যের উন্নতি করে, কিন্তু খুব কম লোকই জানে যে প্রতিদিন একটি করে কলা খাওয়াও ডাক্তার থেকে দূরে রাখতে পারে। কলায় অনেক ভিটামিন এবং পুষ্টি উপাদান রয়েছে যা স্বাস্থ্য উপকারে কার্যকর।
কলাতে কিছু পুষ্টি উপাদান এবং যৌগ রয়েছে যেমন কার্বোহাইড্রেট, ভিটামিন A, C এবং B6, আয়রন, ফসফরাস, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, জিঙ্ক, সোডিয়াম, পটাসিয়াম এবং প্রাকৃতিক শর্করা যেমন সুক্রোজ, ফ্রুক্টোজ এবং গ্লুকোজ। এই সব কলাকে একটি সুপারফুড করে তোলে যা একটি স্বাস্থ্যকর দৈনন্দিন খাদ্যের অবিচ্ছেদ্য অংশ।
ডায়েট বিশেষজ্ঞ ডাক্তাররা বলেন, প্রতিদিন ১টি করে কলা খেলে অনেক রোগ থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। কলাতে পটাশিয়াম পাওয়া যায়, যা আমাদের পেশীতে ক্র্যাম্প সৃষ্টি করে না। কলায় কার্বোহাইড্রেট পাওয়া যায়, যা আমাদের শরীরকে সতেজ রাখে এবং আমরা কম ক্লান্ত বোধ করি। সকালে ব্যায়ামের আগে দুটি কলা খেয়ে নিলে ব্যায়ামের সময় খুব একটা ক্লান্তি অনুভব করবেন না।
আমাদের দেশের যেকোনো জায়গায় কলা সহজেই পাওয়া যায়। এটি কোনো মৌসুমি ফল নয়, এটি ১২ মাস সহজেই পাওয়া যায়। তবে বর্ষায় কলা খাওয়ার সবচেয়ে বড় উপকারিতা। কলা কাঁচা ও রান্না উভয় ক্ষেত্রেই উপকারী। কাঁচা কলা খেলে আমরা জ্বালাপোড়া, পিত্ত, ক্ষত, কফের উপশম পাই। পাকা কলা খেলে চোখ ও হৃৎপিণ্ড রক্ষা হয় এবং ক্ষুধা ও তৃষ্ণাও মেটে।
কলা খাওয়ার কারনে টেনশন বা মানসিক চাপ কমায়। মস্তিষ্ক আরো জোরালোভাবে কাজ করে। হ্যাং ওভার দূর করতে সাহায্য করে। সকালে কলা খেলে সারাদিন ভালো লাগে। কিডনি ক্যান্সার প্রতিরোধ করে। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সহায়ক। কলে খেলে দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধি পায়।
এগুলি হল কলা খাওয়ার কিছু স্বাস্থ্য উপকারিতা, যা আপনি হয়তো জানেন। কিন্তু স্বাস্থ্যের জন্য কলা খাওয়ার উপকারিতা আরও অনেক, যা আজ আমি এই আর্টিকেলের মাধ্যমে আপনাকে বিভিন্ন উপায়ে বলতে যাচ্ছি।
আরো পড়ুনঃ ড্রাগন ফলের উপকারিতা
কলা খাওয়ার উপকারিতা
হার্ট ভালো রাখতে কলার উপকারিতা
হার্টের স্বাস্থ্যের জন্যও কলা খাওয়ার উপকারিতা দেখা গেছে। একটি বৈজ্ঞানিক গবেষণায় বলা হয়েছে যে, কলায় ভালো পরিমাণে পটাসিয়াম থাকে, যা রক্তচাপ স্বাভাবিক রাখতে এবং কার্ডিয়াক ফাংশন সঠিকভাবে করতে সাহায্য করে। শুধু তাই নয়, কলায় রয়েছে ভিটামিন-বি৬, যা হার্টের স্বাস্থ্যের জন্য অপরিহার্য বলে বিবেচিত হয়।
কলা পটাসিয়াম সমৃদ্ধ, একটি খনিজ ইলেক্ট্রোলাইট যা আপনার হার্টের স্বাস্থ্যের জন্য অপরিহার্য। পটাসিয়াম আপনার মস্তিষ্কে অক্সিজেন সরবরাহ করে সংবহনতন্ত্রকে সাহায্য করে। কলা হার্টবিট এবং শরীরে পানির সঠিক ভারসাম্য বজায় রাখতেও সাহায্য করে।
যারা খাবারে কলার মতো পটাশিয়াম সমৃদ্ধ খাবার খান তাদের স্ট্রোক, রক্তচাপের সমস্যা এবং বিভিন্ন হৃদরোগের ঝুঁকি অনেকাংশে প্রতিরোধ করা যায়।
প্রতিদিন কলা খেলে আমাদের হার্ট ঠিকঠাক কাজ করে। কলাতে প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম থাকে। আমরা যখন কলা খাই তখন পটাশিয়াম আমাদের শরীরে যায় এবং তা রক্তে মিশে শিরার মাধ্যমে সারা শরীরে ছড়িয়ে পড়ে। কলা হার্টকে সম্পূর্ণ সুস্থ রাখতে সাহায্য করে। এটি স্বাস্থ্যের জন্য কলা খাওয়ার সবচেয়ে বড় উপকারিতা।
কলা শরীরে দুর্বলতা কমায়
কলায় রয়েছে প্রচুর পরিমাণে কার্বোহাইড্রেট। এটি খেলে দ্রুত পেট ভরে যায়। অফিস বা কলেজে যাওয়ার কারণে যদি সকালের নাস্তা মিস হয়ে যায়, তাহলে কলা খেয়ে বাইরে যান, কারণ কলা খেলে তাৎক্ষণিক শক্তি পাওয়া যায়। এটি আপনাকে সারা দিনের জন্য শক্তি দিবে।
দুর্বল ব্যক্তিকে কলা খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। যদি আপনার ওজন কম হয় এবং আপনি তা বাড়াতে চান, তাহলে বাজারে পাওয়া প্রোটিন পাউডার খাওয়ার দরকার নেই। আপনি দুধে কলা ম্যাশ করে দিনে কয়েকবার খেতে পারেন বা ১-২টি কলা খাওয়ার পর দুধ পান করতে পারেন। এটি খেতে সুস্বাদু ও পুষ্টিকর। এটি খাওয়ার সাথে সাথে আপনি সুস্থ বোধ করবেন।
কলা প্রাকৃতিক শক্তি সরবরাহ করে
কলায় ভিটামিন, মিনারেল এবং কার্বোহাইড্রেট থাকে যা দ্রুত প্রাকৃতিক শক্তির সরবরাহ করে। এছাড়াও, কলা হল গ্লুকোজ, সুক্রোজ এবং ফ্রুক্টোজের মতো তিনটি প্রাকৃতিক সুগারের একটি স্বাস্থ্যকর মিশ্রণ, যা আরো বেশি শক্তি জোগায়।
কলা এমন একটি ফল যার মধ্যে জটিল এবং সাধারণ উভয় ধরনের কার্বোহাইড্রেট থাকে। জটিল কার্বোহাইড্রেট আপনাকে স্ট্যামিনা শক্তি দেয় এবং সাধারণ কার্বোহাইড্রেট আপনাকে দ্রুত শক্তি দিবে। মাত্র দুটি কলা আপনাকে 90 মিনিটের জন্য উজ্জীবিত রাখতে পারে।
কলা উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে
কলা খাওয়ার উপকারিতার মধ্যে রয়েছে উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করা। আমরা আগেই বলেছি যে কলায় প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম পাওয়া যায়। এই পটাসিয়াম রক্তনালীগুলির দেয়াল শিথিল করে রক্তচাপ কমাতে কাজ করতে পারে।
কলা রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে এবং উচ্চ রক্তচাপের রোগীদের জন্যও কলা খাওয়া ভালো বলে মনে করা হয়, উচ্চ রক্তচাপের রোগীদের জন্য কলা খাওয়া বিশেষভাবে উপকারী হতে পারে।
কলা ওজন নিয়ন্ত্রণ করে
আপনি যদি অন্যদের মতো মনে করেন যে কলা খেলে ওজন বাড়ে, তাহলে আজ থেকেই আপনার চিন্তাভাবনা পরিবর্তন করুন। কলায় ক্যালরি থাকলেও তা উপকারী। কলা খেলে ক্যালরির পাশাপাশি আরও অনেক পুষ্টি পাওয়া যায়। তাই আজ থেকে স্বাস্থ্যের জন্য কলা খাওয়ার উপকারিতার কারণে খাবারে কলাকে স্থান দিন এবং এমন অন্যান্য খাবার বাদ দিন যা ওজন বাড়ায় এবং কোনো উপকার হয় না।
কলায় রয়েছে প্রাকৃতিক মিষ্টি (natural sweetener) যা আপনার মিষ্টি খাওয়ার ইচ্ছা পূরণ করে। অনেক সময় যাদের ওজন কমে তাদের সাথে এমন হয় যে তাদের ভেতর থেকে খুব দ্রুত মিষ্টি কিছু খাওয়ার ইচ্ছা জাগে।
এই পরিস্থিতিতে, তারা যেকোনো চকলেট বা মিষ্টি খায় যাতে প্রচুর ক্যালরি থাকে এবং পুষ্টি থাকে না। এটি আপনার সমস্ত পরিশ্রম নষ্ট করে দেয়। এমন সময়ে আপনি কলা খান এবং আপনি সম্পূর্ণ উপকার পাবেন। কলায় প্রচুর পরিমাণে ফাইবার থাকে, যা খেলে দ্রুত ক্ষুধা লাগে না এবং পেট ভরে যায়।
কলায় প্রচুর পরিমাণে ফাইবার থাকে। এছাড়া কলায় স্টার্চও পাওয়া যায়। ওজন কমানোর জন্যও কলা একটি সঠিক অপশন। কলাতে চর্বি কম, ফাইবার এবং ভিটামিন বেশি। একজন ব্যক্তি যদি সকালের নাস্তায় একটি কলা খান, তাহলে তার দীর্ঘক্ষণ ক্ষুধা লাগে না। এভাবে ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়।
সকালে খালি পেটে কলা খাওয়ার উপকারিতা ওজন কমাতে পারে। ওজন কমানোর জন্যও উচ্চ ফাইবার ডায়েট প্রয়োজন এবং কলা ফাইবার সমৃদ্ধ। এটি শরীরে বেশি ক্যালরি না যোগ করে পেট ভরাতে কাজ করবে, যার কারণে ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকবে। এছাড়াও, কলা স্টার্চ সমৃদ্ধ, যা ওজন নিয়ন্ত্রণ করতে পারে।
কলা হজম শক্তি ঠিক রাখে
কলা খেলে পাকস্থলীর পরিপাকতন্ত্র সুচারুভাবে কাজ করে। খাবারের পর সবসময় কলা খান, এটি হজমে সাহায্য করে। কলা খেলে হজম সংক্রান্ত সমস্যা দূর হয়। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, কলায় থাকা স্টার্চ আমাদের পরিপাকতন্ত্রের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভালো ব্যাকটেরিয়ার জন্য উপকারী। কলা অ্যাসিড-বিরোধী, তাই আপনার যদি বুক জ্বালাপোড়ার সমস্যা থাকে, তাহলে কলা খেলে উপকার পাবেন।
হজমের জন্যও কলার খাওয়ার উপকারিতা রয়েছে অনেক। আসলে কলায় উপস্থিত ফাইবার পরিপাকতন্ত্র ঠিক রাখতে পারে। এছাড়াও, ফাইবার সঠিকভাবে খাবার হজম করে এবং মলত্যাগের প্রক্রিয়াকে সহজ করে তুলতে পারে। এছাড়াও ফাইবার কোষ্ঠকাঠিন্যের মতো পেট সংক্রান্ত সমস্যা দূর করতেও বিশেষ ভাবে সাহায্য করে। শুধু তাই নয়, কলায় প্রতিরোধী স্টার্চ থাকে, যা পেটের জন্য ভালো বলে বিবেচিত হয়।
কলা মানসিক চাপ দূর করে
কলায় ট্রিপটোফ্যান (ট্রিপ্টোফ্যান প্রোটিন গঠনকারী অ্যামিনো অ্যাসিডদের মধ্যে বৃহত্তম। ইন্ডোল গ্রুপযুক্ত এই অ্যামিনো অ্যাসিডটি ২২টি আদর্শ অ্যামিনো অ্যাসিডদের একটি ও মানুষের জন্য অত্যাবশ্যকীয় অ্যামিনো অ্যাসিডগুলির অন্যতম) নামক উপাদান রয়েছে। এই ট্রিপটোফ্যানের কারণে আমাদের শরীরে সেরোটোনিন তৈরি হয়। সেরোটোনিনকে সুখী হরমোনও বলা হয়। এটি মানসিক চাপ থেকে দূরে রাখে।
কলার গুণাগুণ মানসিক চাপ দূর করতেও সাহায্য করতে পারে। NCBI (ন্যাশনাল সেন্টার ফর বায়োটেকনোলজি ইনফরমেশন) ওয়েবসাইটে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, কলায় ভিটামিন-বি থাকে এবং ভিটামিন-বি মানসিক চাপ কমাতে এবং কাজের ক্ষমতা বাড়াতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
কলা অনিয়মিত মলত্যাগের সমাধান
অনিয়মিত মলত্যাগ এমন একটি স্বাস্থ্য সমস্যা যা নিয়মিত কলা খেলে সহজেই সমাধান করা যায়। কলায় প্রচুর পরিমাণে অদ্রবণীয় ফাইবার থাকে যা পরিপাকতন্ত্রের মধ্য দিয়ে চলে, বর্জ্য পদার্থ পরিষ্কার করে এবং মলত্যাগে সুবিধা দেয়।
তবে খুব বেশি কলা এবং অল্প পরিমাণ পানি খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য হতে পারে। এছাড়া সম্পূর্ণ পাকা কলা না খেলেও কোষ্ঠকাঠিন্য ও গ্যাস হতে পারে। এছাড়াও, কলা ডায়রিয়ায় বিশেষভাবে উপকারী কারণ এতে পেকটিন নামক উপাদান রয়েছে, যা কলায় পাওয়া দ্রবণীয় ফাইবার। এটি অন্ত্রে তরল শোষণ করতে সাহায্য করে।
ডায়রিয়া সমস্যায় কলা খান
শিশুর ডায়রিয়া হলে একটি কলা নরম বা থেথো করে চিনির সঙ্গে মিশিয়ে দিনে তিনবার খাওয়ান। ইনশাআল্লাহ শিশুর ডায়রিয়া সমস্যা ঠিক হয়ে যাবে। কলার ঔষধি গুণাবলী ডায়রিয়ার ক্ষেত্রে সহায়ক হতে পারে। গবেষণায় বলা হয়েছে যে এতে পেকটিন পাওয়া যায়, যা এক ধরনের ফাইবার। এটি ফাইবার বাউয়েল মুভমেন্ট নিয়ন্ত্রণ করে ডায়রিয়া থেকে মুক্তি পেতে কাজ করে। ডায়রিয়া এবং ডিহাইড্রেশন হলে কলা খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। এর ফলে শরীরে পটাশিয়াম ও পানি সরবরাহ হয়।
চোখের জন্য কলা খাওয়ার উপকারিতা
কলায় রয়েছে ভিটামিন এ, যা খেলে চোখ নিরাপদ থাকে এবং এটি আপনার দৃষ্টিশক্তিও বাড়ায়। কলায় ভিটামিন এ রয়েছে, একটি চর্বি-দ্রবণীয় ভিটামিন (ভিটামিন 'এ' 'ডি' 'ই' এবং 'কে' চর্বিতে দ্রবণীয়) যা চোখের স্বাস্থ্যের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিদিন পর্যাপ্ত ভিটামিন এ গ্রহণ রাতকানা হওয়ার ঝুঁকিও কমায়।
আর্কাইভস অফ অফথালমোলজিতে প্রকাশিত একটি সমীক্ষা অনুসারে, যারা দিনে তিন বা তার বেশি কলা খান তাদের বার্ধক্যজনিত ম্যাকুলার ডিসঅর্ডারের ঝুঁকি 36% কমে যেতে পারে তাদের তুলনায় যারা প্রতিদিন ১.৫ বা তার কম কলা খান। ম্যাকুলার ডিসঅর্ডার প্রাপ্তবয়স্কদের দৃষ্টিশক্তি হ্রাসের প্রধান কারণ।
কলার ঔষধিগুণ চোখের জন্যও উপকারী। প্রকৃতপক্ষে, কলা ক্যারোটিনয়েড সমৃদ্ধ, যা এক ধরনের ভিটামিন এ। ভিটামিন-এ চোখের রেটিনায় পিগমেন্ট বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। উপরন্তু, ভিটামিন এ রাতের অন্ধত্ব থেকে রক্ষা করতেও পরিচিত তা আমরা সবাই জানি।
শুধু তাই নয়, কলা খাওয়া বয়স-সম্পর্কিত ম্যাকুলার অবক্ষয়ের ঝুঁকি কমাতে পারে, অর্থাৎ দৃষ্টিশক্তি হ্রাস এবং চোখের ছানি পড়ার ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে। এর ভিত্তিতে বলা যায় কলা চোখের জন্য ভালো।
রক্তশূন্যতার রোগে কলা খাওয়ার উপকারিতা
রক্তস্বল্পতা একটি মারাত্মক রোগ, যা শরীরে লাল রক্ত কণিকার অভাবের কারণে ঘটে। ফোলেট লোহিত রক্তকণিকা গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে, তাই ফোলেটের অভাবও রক্তাল্পতা সৃষ্টি করে। এই সমস্যায় কলা খাওয়াও উপকারী হতে পারে।
রক্তস্বল্পতা হলে কলা খান, কলা শরীরে হিমোগ্লোবিনের ঘাটতি পূরণ করে। যারা রক্তস্বল্পতায় ভুগছেন তাদের জন্য কলা আয়রনের একটি ভালো উৎস। আয়রনের ঘাটতি রক্তশূন্যতার প্রধান কারণ এবং কলা এই অভাব দূর করে। অন্যান্য আয়রন-সমৃদ্ধ খাবারের সাথে নিয়মিত কলা খেলে ক্লান্তি, মাথা ঘোরা, মাথাব্যথা, শ্বাসকষ্ট এবং দ্রুত হৃদস্পন্দন সহ রক্তস্বল্পতার সাথে যুক্ত অন্যান্য উপসর্গগুলি ধীরে ধীরে হ্রাস করে থাকে।
মর্নিং সিকনেসে কলার খাওয়ার উপকারিতা
গর্ভাবস্থায় সকালের অসুস্থতা সাধারণ, প্রায় 70 থেকে 85 শতাংশ গর্ভাবস্থাকে প্রভাবিত করে। এই সময়, মহিলাদের সারা দিনের যেকোনো সময় বমি বমি ভাব হয়। এর থেকে মুক্তি পেতে কলার উপকারিতা দেখা যায়। আসলে, কলা রক্তে শর্করার মাত্রা বজায় রেখে মর্নিং সিকনেস থেকে রক্ষা করতে পারে।
এছাড়াও, কলায় ভিটামিন-বি6 রয়েছে, যা সকালের অসুস্থতার সমাধানের জন্য ভালো বলে মনে করা হয়। এছাড়াও, এতে রয়েছে ভালো পরিমাণে ম্যাগনেসিয়াম। নিউট্রিশন থেরাপিস্ট ম্যাগনেসিয়ামও মর্নিং সিকনেস কিছুটা কমাতে পারে।
আপনি যদি গর্ভবতী হন এবং সকালের অসুস্থতা (গর্ভাবস্থার প্রথম মাসগুলিতে সকালের বমি বমি ভাব) মোকাবেলার উপায় খুঁজছেন তবে একটি কলা খাওয়া আপনার সমস্যার সমাধান করতে পারে। কলাতে থাকা দরকারি উপাদান শরীরকে পুনরায় সতেজ করতে এবং স্বাস্থ্যকর রক্তে শর্করার মাত্রা বজায় রাখতে সহায়তা করে। এটি বমি বমি ভাবও কমায়।
গর্ভবতী মহিলাদের সকালে ঘুম থেকে উঠে প্রতিবার খাবারের পর একটি কলা খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। এছাড়াও, কলায় অনেক পুষ্টি উপাদান রয়েছে যা আপনার মেজাজ ভালো করতে এবং আপনার অনাগত শিশুর শারীরিক বিকাশে সাহায্য করে।
মশার কামড়ে চুলকানি এবং ব্যথার জন্য কলার প্রতিকার
মশার কামড় খুব চুলকায় এবং কখনো কখনো তা বেদনাদায়ক হয়। আপনি কলার খোসা দিয়ে এই উপসর্গগুলির চিকিৎসা করতে পারেন। মশার কামড়ের জায়গায় কলার খোসার ভেতরটা দিয়ে পাঁচ থেকে দশ মিনিট ঘষুন। এটি চুলকানি এবং ফোলা ভাব কমাতে সাহায্য করবে। আসলে, এই সহজ প্রতিকার প্রায়ই ক্রিম বা ওষুধের চেয়ে ভাল কাজ করে।
কলার ঔষধিগুণ মশার কামড়ের প্রভাব কমাতে সাহায্য করে। একটি চিকিৎসা গবেষণায় বলা হয়েছে যে কলার খোসায় অ্যান্টি-মাইক্রোবিয়াল গুণ রয়েছে। এটি শরীরে ঘষে মশার কামড় নিরাময় করতে সাহায্য করে। এর জন্য কলার খোসা আক্রান্ত স্থানে ২ থেকে ৩ মিনিট অথবা এর বেশি সময় ধরে ঘষতে পারেন।
মস্তিষ্কের স্বাস্থ্য কলা খাওয়ার উপকারিতা
মস্তিষ্কের স্বাস্থ্যের জন্যও কলার উপকারিতা রয়েছে। একটি গবেষণায় দেখা গেছে, ভিটামিন-বি6-এর অভাবে প্রাপ্তবয়স্কদের মস্তিষ্কের কার্যকারিতা দুর্বল হয়ে পড়ে। এই ভিটামিন-বি6 কলায় থাকে। উপরন্তু, কলা ম্যাগনেসিয়াম সমৃদ্ধ, যা স্নায়ুর কার্যকারিতা উন্নত করতে পারে। এমন পরিস্থিতিতে কলাকে মস্তিষ্কের স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী বলা যেতে পারে।
কলার খাওয়ার উপকারিতা হাড় ভালো রাখে
হাড়ের জন্য কলা খাওয়ার উপকারিতা দেখা যায়। কলাতে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম থাকে এবং ক্যালসিয়াম হাড়ের বিকাশ এবং শক্তিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এছাড়া কলায় উপস্থিত ম্যাগনেসিয়ামও হাড়ের স্বাস্থ্যের জন্য অপরিহার্য। ম্যাগনেসিয়াম হাড়ের বিকাশ এবং শরীরে ক্যালসিয়াম প্রবাহে সাহায্য করে।
ডায়াবেটিস রোগে কলা খাওয়ার উপকারিতা
ডায়াবেটিস রোগে কলার উপকারিতা পরিলক্ষিত হয়েছে। একটি চিকিৎসা গবেষণা অনুসারে, ডায়াবেটিসের চিকিৎসার জন্য কলা একটি ঐতিহ্যবাহী ওষুধ হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে। এর পাশাপাশি কলার কাণ্ড (ডাঁটা) এবং এর ফুলও ডায়াবেটিসে উপশম দিতে পারে। এছাড়াও, কলায় পটাসিয়াম পাওয়া যায়। এই পটাসিয়াম ডায়াবেটিসের চিকিৎসা ও প্রতিরোধে সহায়ক ভূমিকা পালন করে থাকে।
কলা গাছের কাণ্ডের সাদা অংশের রস বের করে প্রতিদিন পান করলে ডায়াবেটিস রোগ গোড়া থেকে নির্মূল হয়। কলা পাতা মাথা ব্যথার জন্য ব্যবহার করা হয়। কলার গুঁড়ো শিকড় রক্তাল্পতা এবং ক্যাচেক্সিয়ার চিকিৎসার জন্য ব্যবহৃত হয়।
কলার বীজ নাক এবং শ্লেষ্মা ঝিল্লির প্রদাহের চিকিৎসা করে। পাকা কলার ফুল ডায়াবেটিসের জন্য ব্যবহার করা হয়। পাকা কলার ফুলও বুকজ্বালার চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়। এই ফুলের রস কানের চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়।
দুধ কলা ভাত খাওয়ার উপকারিতা - দুধের সাথে কলা খাওয়ার উপকারিতা
১। দুধ কলা খেলে শরীরে বেশি ক্যালরি পাওয়া যায়, সেই সঙ্গে ভিটামিন, ফাইবার, প্রোটিন ও মিনারেলও পাওয়া যায়। যারা মোটা হতে চান বা যারা উচ্চ প্রোটিন গ্রহণ করেন তাদের জন্য দুধ কলা খুবই ভালো।
২। ওজন বাড়ানোর জন্য আপনার খাদ্যের পাশাপাশি অতিরিক্ত ক্যালরির জন্য দিনে দুবার দুধ কলা খান। এতে আপনার ওজনের প্রভাব খুব দ্রুত বোঝা যাবে, আপনিও ভেতর থেকে শক্তি অনুভব করবেন।
৩। আবার দুধের সাথে কলা খাবারও আপনার ওজন কমাতে ভালো। আসলে, দুধে ও কলাতে উচ্চ ক্যালরির কারণে, অনেকেই শুধুমাত্র দুধ কলার ডায়েট গ্রহণ করেন। দুধ কলা ডায়েট গ্রহণ করলে তাদের শরীরে প্রয়োজনীয় ক্যালরির পরিমাণ পূরণ হয়, যার কারণে তাদের আর খাওয়ার প্রয়োজন হয় না এবং এই ডায়েট অনুসরণ করে তারা ওজন কমাতে পারেন।
(প্রসঙ্গক্রমে, যারা দুধ কলার খাদ্য গ্রহণ করেন তাদের কিছু বিশেষ বিষয়ের প্রতি খেয়াল রাখা উচিত। অনেকেই দুর্বলতা অনুভব করতে শুরু করে, মাথা ঘোরা শুরু করে। এমন পরিস্থিতিতে একবারে একবেলা খাবার খান, আর একবারে কলা দুধ খান। যদি এমন সমস্যা হয় তবে এটি এড়ানোর জন্য আপনি একজন ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করতে পারেন।)
১। গর্ভবতী ও ঋতুস্রাবের সমস্যায় দুধ কলা খাবার গ্রহণ করা উচিত নয়, এমন সময়ে মহিলাদের অন্যান্য সকল পুষ্টির সাথে আয়রন প্রয়োজন, কিন্তু তারা দুধ কলা থেকে আয়রন পায় না।
২। ব্যায়ামের পর দুধ কলা খেতে হবে, এতে যেমন শক্তি পাওয়া যায়, তেমনি মাংসপেশিও মজবুত হয় ৩। দুধ কলা থেকে উপকারিতা পায় শরীর। এতে হাড়ও মজবুত হয় ৪। দুধ কলা খেলে মুখের উন্নতি ঘটে, প্রাকৃতিক সৌন্দর্য বৃদ্ধি পায় ৫। দুধ কলা খেলে দাঁতের সাদা ভাব বৃদ্ধি পায়।
মাসিকের সময় ব্যথা উপশম করতে কলা খাওয়ার উপকারিতা
মাসিকের সময় ব্যথা থেকে মুক্তি পেতে কলা খাওয়ার উপকারিতা দেখা গেছে। একটি প্রতিবেদন অনুসারে, কলা খাওয়ার ফলে অতিরিক্ত রক্তপাত এবং মাসিকের ব্যথা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। একই সময়ে, ঋতুস্রাবের সময় পেটে ব্যথা হয়। কলায় উপস্থিত পটাসিয়াম তা উপশম প্রদান করতে পারে, কারণ পটাসিয়াম ক্র্যাম্পের সমস্যা কমাতে সাহায্য করে।
অনিদ্রা ভাব দূর করতে কলার উপকারিতা
অনিদ্রা হলো একটি ঘুমের ব্যাধি যাতে মানুষের ঘুমে সমস্যা হয়। রাতে কলা খাওয়ার উপকারিতা নিদ্রার ক্ষেত্রে ভালাে ভুমিকা পালন করে। আপনার যদি অনিদ্রার রোগ থাকে তবে কলা খেয়ে তা কাটিয়ে উঠতে পারেন। দুধের সাথে কলা ও মধু মিশিয়ে খান। এই রোগকে মূল থেকে আলাদা করবে এবং আপনি শান্তিতে ঘুমাতে সক্ষম হবেন।
আসলে, কলায় ট্রিপটোফ্যান নামক অ্যামিনো অ্যাসিড সমৃদ্ধ। এই পদার্থটি মেলাটোনিন, ঘুমের হরমোন উৎপাদন শুরু করে, যা ঘুমকে আরো বেশি ভালো করতে সাহায্য করে। এমন পরিস্থিতিতে ঘুমানোর কয়েক ঘণ্টা আগে একটি কলা খেলে রাতে ভালো ঘুম হয়।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়
শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে কলা খাওয়া যেতে পারে। আসলে, কলা ম্যাগনেসিয়ামের একটি ভালো উৎস, যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে বৃদ্ধি করে শরীরকে সুস্থ রাখতে কাজ করতে পারে। এছাড়াও, কলাতে ক্যারোটিনয়েড রয়েছে, যা এক ধরনের ভিটামিন এ। এটি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে কাজ করতে পারে।
কলা শরীরে শক্তি বৃদ্ধি করে
খালি পেটে কলা খাওয়ার উপকারিতা শরীরে শক্তির প্রবাহ বাড়াতে দেখা যায়। একটি চিকিৎসা গবেষণায় বলা হয়েছে যে কলা শক্তির একটি ভালো উৎস। এটি ব্যায়ামের সময় শরীরের প্রয়োজনীয় শক্তি বজায় রাখতেও সাহায্য করতে পারে। এই কারণেই ক্রীড়াবিদরাও শরীরের শক্তি বাড়াতে কলা খা। শরীর পর্যাপ্ত শক্তি পেলে শারীরিক ও মানসিক ক্লান্তিও দূর করা যায়
হ্যাংওভার সমস্যায় কলা খাওয়ার উপকারিতা
আপনি যদি হ্যাংওভারে সমস্যায় পড়ে থাকেন তবে আপনি কলা খেতে পারেন। প্রকৃতপক্ষে, অতিরিক্ত পরিমাণে অ্যালকোহলের কারণে, পটাসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম এবং সোডিয়ামের মতো খনিজ উপাদান গুলি শরীরে ভারসাম্যহীন হয়ে পড়ে এবং তরল স্তরের অবনতি ঘটে। একই সময়ে, কলায় প্রচুর পরিমাণে পটাসিয়াম এবং ম্যাগনেসিয়াম থাকে। এতে হালকা সোডিয়ামও রয়েছে। এই কারণে, কলা হ্যাংওভারের জন্য ভালো বলে বিবেচিত হতে পারে।
যদি কেউ হ্যাংওভারের সমস্যায় ভুগে থাকেন তবে কলার দুধ মধুর সাথে খেতে পারেন। কলা পেট ও শরীর শান্ত করতে সাহায্য করে। উপরন্তু, এটি গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল সিস্টেমকে স্থিতিশীল করে এবং রক্তে শর্করার মাত্রা উন্নত করে ব্যক্তিকে শক্তি সরবরাহ করে।
মেজাজ ভালো রাখতে কলা খাওয়ার উপকারিতা
কলা খাওয়ার সুবিধার মধ্যে মেজাজের পরিবর্তনও অন্তর্ভুক্ত। একটি চিকিৎসা গবেষণায় বলা হয়েছে, কলায় ট্রিপটোফ্যান নামক প্রোটিন থাকে। হজমের পরে, ট্রিপটোফ্যান সেরোটোনিন নামক রাসায়নিক নিউরোট্রান্সমিটারে রূপান্তরিত হয়।
এটি মস্তিষ্কের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ রাসায়নিক, যা প্রেসার, দুশ্চিন্তা দূর করার পাশাপাশি মেজাজ ভালো করতে সাহায্য করে। কলায় উপস্থিত এক ধরনের কার্বোহাইড্রেটও মেজাজ ভালো করতে সাহায্য করে।
দাঁত সাদা করতে কলার উপকারিতা
যদি আপনি ভাবেন যে কলা কীভাবে দাঁতকে উজ্জ্বল করতে পারে, তবে আসুন আমি আপনাকে বলি যে কলার খোসা দাঁত সাদা করার জন্য একটি কার্যকর ঘরোয়া উপায়। শুধু এর জন্য কলার খোসা দিয়ে দাঁতে কিছুক্ষণ ঘষতে হবে। আপনি সপ্তাহে তিন থেকে চার বার এটি করতে পারেন।
বিউটি স্লিপ
ঘুমানোর সময় ত্বক সুন্দর করতে চাইলে কলা খেতে পারেন। আসলে, কলায় ট্রিপটোফ্যান নামক অ্যামিনো অ্যাসিড থাকে। ট্রিপটোফ্যান মেলাটোনিনের উৎপাদন বাড়ায়, ঘুমের হরমোন, যা ঘুম ভালো করতে কাজ করে। এর ভিত্তিতে বলা যায় যে, রাতে ঘুমানোর কয়েক ঘণ্টা আগে কলা খেলে ভালো ঘুম হয় এবং ঘুমানোর সময় ত্বক সুন্দর করতে সাহায্য করে।
পেটের আলসার
পেটের আলসার একটি মারাত্মক সমস্যা। পেটে, খাদ্যের নালীতে এবং ক্ষুদ্রান্ত্রে ব্যথা হয়। যদি এই রোগের চিকিৎসা না করা হয়, তবে এর পরিণতি মারাত্মক হতে পারে। কলা এখানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। আসলে, কলার অ্যান্টাসিড প্রভাব পেটের আলসার এবং আলসারের ক্ষতি থেকে রক্ষা করতে সাহায্য করে। এছাড়াও, এটি অ্যাসিডিটি কমিয়ে পেটে জ্বালাপোড়া কমাতে সাহায্য করে।
ত্বক ময়শ্চারাইজ করুন
কলার উপকারিতা ত্বকেও দেখা যায়। কলা ত্বকের জন্য দারুণ প্রাকৃতিক ময়েশ্চারাইজার হিসেবে কাজ করে। প্রকৃতপক্ষে, এতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন বি৬, সি এবং পানি রয়েছে। এই সবগুলি ত্বককে হাইড্রেটেড রাখতে কাজ করতে পারে।
ব্যবহারবিধিঃ ১। একটি পাকা কলা নিন এবং ভালো করে ম্যাশ করুন ২। চোখ ছাড়া সারা মুখে ম্যাশ করা কলা লাগান ৩। প্রায় ২০-২৫ মিনিট পরে, হালকা গরম জল দিয়ে আপনার মুখ ধুয়ে ফেলুন ৪। ত্বক খুব শুষ্ক হলে অর্ধেক কলা মধু মিশিয়েও ব্যবহার করতে পারেন ৫। পরিবর্তে, একটি পাকা কলার সাথে এক চামচ দই এবং এক চামচ ভিটামিন-ই তেল যেমন বাদাম তেল মিশিয়ে নিন ৬। এই মিশ্রণটি মুখে ২০-২৫ মিনিট লাগিয়ে হালকা গরম পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলুন।
অ্যান্টি এজিং
কলা ত্বকের বার্ধক্য থেকে মুক্তি পেতে সাহায্য করতে পারে। কলায় ফ্ল্যাভোনয়েড পলি-ফেনোলিক অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যেমন লুটেইন, জেক্সানথিন এবং α-ক্যারোটিন থাকে। এগুলি ফ্রি র্যাডিক্যালগুলির বিরুদ্ধে সুরক্ষা প্রদান করে বার্ধক্য প্রক্রিয়াকে ধীর করে দিতে পারে।
ব্যবহারবিধিঃ ১। এক-চতুর্থাংশ পাকা কলা নিন এবং তাতে এক থেকে দুই চামচ গোলাপ জল মিশিয়ে ভালো করে মিশিয়ে নিন ২। এবার এই মিশ্রণটি মুখে এবং ঘাড়ে লাগান ৩। প্রায় আধা ঘণ্টা পর হালকা গরম পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলুন ৪। এই পদ্ধতি সপ্তাহে দুই থেকে তিনবার করতে পারেন। আশা করা যায় ভালো ফল দেখতে পারবেন।
উজ্জ্বল ত্বকের জন্য কলার ব্যবহার
কলা ত্বককে উজ্জ্বল করতে কার্যকরী ভুমিকা পালন করে। কলা ভিটামিন বি-৬ এবং পানির একটি ভালো উৎস, যা ত্বকে আর্দ্রতা ধরে রাখার পাশাপাশি এটি ত্বক উজ্জ্বল করতে কাজ করতে পারে।
ব্যবহারবিধিঃ ১। অর্ধেক পাকা কলা মেশান এবং এক চা চামচ চন্দনের পেস্ট এবং এক-চতুর্থাংশ মধু যোগ করুন ২। এবার এই মিশ্রণটি মুখে এবং ঘাড়ে প্রায় ২০-২৫ মিনিটের জন্য লাগিয়ে রাখুন এবং পরে হালকা গরম পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলুন।
৩। বিকল্পভাবে, অর্ধেক কলা ম্যাশ করুন এবং এতে এক চা চামচ লেবুর রস যোগ করুন ৪। এই মিশ্রণটি মুখে এবং ঘাড়ে প্রায় ২০ মিনিটের জন্য লাগিয়ে রাখুন এবং তারপরে হালকা গরম জল দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলুন।
৫। আপনি চাইলে কলার সাথে দুধও ব্যবহার করতে পারেন। এর জন্য অর্ধেকটা পাকা কলা ম্যাশ করে তাতে তিন থেকে চার চামচ দুধ মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করুন ৬। এখন এই পেস্টটি মুখে এবং ঘাড়ে ২০ মিনিটের জন্য লাগিয়ে রাখুন এবং তারপরে হালকা গরম জল দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলুন।
মৃত চামড়া কোষ জন্য
ত্বকের মৃত কোষ দূর করতেও কলার উপকারিতা দেখা যায়। এটি ত্বককে স্ক্রাব করতে এবং ত্বক থেকে মৃত কোষ অপসারণ করতে সাহায্য করতে পারে।
ব্যবহারবিধিঃ ১। একটি পাকা কলা ম্যাশ করুন এবং এতে এক চা চামচ চিনি যোগ করুন ২। এবার এই কলার স্ক্রাব মুখে এবং ঘাড়ে লাগান, আঙ্গুল দিয়ে ধীরে ধীরে কয়েক মিনিট স্ক্রাব করুন ৩। এরপর কুসুম গরম পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলুন।
ব্রণ সমস্যার জন্য কলার উপকারিতা
কেউ যদি ব্রণের সমস্যায় ভুগে থাকেন তাহলে আতঙ্কিত হওয়ার দরকার নেই। বাড়ন্ত ব্রণ বন্ধ করতে কলার খোসা ব্যবহার করা যেতে পারে। কলার খোসা অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল গুণে সমৃদ্ধ, যা ব্রণ থেকে মুক্তি দিবে।
ব্যবহারবিধিঃ ১। একটি কলার খোসা নিন এবং এর ভিতরের অংশটি কয়েক মিনিটের জন্য আক্রান্ত স্থানে আলতোভাবে ঘষুন ২। প্রায় 2 থেকে 3 মিনিট পর পরিষ্কার জল দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলুন।
চুলকানি, সোরিয়াসিস এবং ওয়ার্টসের জন্য
কলার খোসা এখানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। কলার খোসায় রয়েছে অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল উপাদান। এই উপাদান চুলকানি ত্বক, সোরিয়াসিস (আঁশযুক্ত ত্বক) এবং আঁচিল থেকে মুক্তি পেতে কাজ করে।
ব্যবহারবিধিঃ ১। চুলকানি ত্বকের জন্য, কলার খোসার ভেতরের অংশ আক্রান্ত স্থানে কিছুক্ষণ ঘষুন ২। আঁচিল এবং সোরিয়াসিসের চিকিৎসার জন্য কলার খোসা আক্রান্ত স্থানে লাগানো যেতে পারে বা কিছুক্ষণ আলতোভাবে ঘষে নিতে পারেন।
দ্রষ্টব্য - উপরে উল্লিখিত ত্বক সম্পর্কিত সমস্যাগুলির জন্য কলার খোসা কতটা কার্যকর তা নিয়ে আরও গবেষণা প্রয়োজন। এসব সমস্যার জন্য চর্মরোগ বিশেষজ্ঞের সঙ্গে কথা বলা ভালো।
ফোলা চোখ
মাঝে মাঝে চোখের চারপাশে ফোলাভাব হয়। এ থেকে মুক্তি পেতে কলার খোসা ব্যবহার করতে পারেন। কলার খোসা প্রদাহ-বিরোধী উপাদান সমৃদ্ধ, যা প্রদাহ উপশম করতে সাহায্য করে। কলার খোসা কিভাবে ব্যবহার করবেন তা নিচে জেনে নিন।
ব্যবহারবিধিঃ ১। একটি কলার খোসা নিয়ে চোখের চারপাশের ফোলা জায়গায় কিছুক্ষণ লাগিয়ে রাখুন বা কিছুক্ষণ ধীরে ধীরে ঘষুন ২। ১৫ থেকে ২০ মিনিট পর হালকা গরম পানি দিয়ে মুখ পরিষ্কার করুন।
পায়ের যত্নে কলার খাওয়ার উপকারিতা
পায়ের জন্যও কলা খাওয়ার উপকারিতা দেখা যায়। পায়ের যত্নে কলার খোসা এখানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। এটি পায়ের জন্য একটি অ্যাস্ট্রিংজেন্ট হিসাবে ব্যবহৃত হয়। অ্যাস্ট্রিনজেন্ট হল এক ধরনের রাসায়নিক, যা পা এক্সফোলিয়েট করে এবং অতিরিক্ত তেল দূর করতে পারে। নিচে এর ব্যবহার দেয়া হলো।
ব্যবহারবিধিঃ ১। একটি কলার খোসা নিয়ে পা ও গোড়ালিতে আলতোভাবে ঘষুন ২। আপনি এই প্রক্রিয়াটি প্রতিদিন পাঁচ থেকে দশ মিনিটের জন্য করতে পারেন।
চুলের জন্য কলা খাওয়ার উপকারিতা
চুল পড়ার সমস্যাঃ চুল পড়ার সমস্যায় অস্থির থাকলে একটি কলার সাথে তাতে লেবুর রস মিশিয়ে নিন। এবার চুলে কিছুক্ষণ থাকতে দিন। তারপর পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। চুল পড়ার সমস্যা দ্রুত দূর হবে।
চুল নরম রাখতেঃ অ্যাভোকাডোর সঙ্গে পাকা কলা মিশিয়ে নারকেলের দুধের সঙ্গে মিশিয়ে নিন। ১৫-২০ মিনিট চুলে লাগানোর পর ধুয়ে ফেলুন। এটি ক্ষতিগ্রস্ত চুলকে হালকা করে। আপনি অ্যাভোকাডোর পরিবর্তে কোকোও ব্যবহার করতে পারেন।
চুল সুস্থ ও ঝলমলে করতেঃ একটি কলায় এক কাপ অলিভ অয়েল এবং একটি ডিমের সাদা অংশ মিশিয়ে নিন। ১৫ মিনিট চুলে লাগিয়ে ধুয়ে ফেলুন। চুল হয়ে উঠবে স্বাস্থ্যকর ও ঝলমলে।
শুষ্ক চুলের জন্যঃ একটি পাকা কলায় ৩ চামচ মধু মিশিয়ে চুলে লাগিয়ে ১৫ মিনিট পর ধুয়ে ফেলুন। এটি চুলে আর্দ্রতা যোগ করবে।
চুলের বৃদ্ধি
চুলের জন্যও কলার অনেক উপকারিতা রয়েছে। সঠিক পুষ্টির অভাবে চুলের বৃদ্ধি বন্ধ হয়ে যায় এবং অকালে ঝরে যেতে পারে। একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কলার রস দিয়ে মাথার ত্বকে ম্যাসাজ করলে চুল বৃদ্ধি পেতে পারে। এছাড়াও চুল পড়ার সমস্যাও কমানো যায়।
ব্যবহারবিধিঃ প্রতিদিন সকালের নাস্তায় কলা যোগ করতে পারেন। এছাড়াও, নীচে দেওয়া হেয়ার মাস্কগুলি বিভিন্ন ধরণের চুলের জন্য গ্রহণ করা যেতে পারে।
নরম চুলের জন্যঃ ১। একটি পাকা কলা নিন এবং এটি ম্যাশ করুন ২। এবার এতে এক চামচ অলিভ অয়েল মিশিয়ে চুলে এবং মাথার ত্বকে ভালো করে লাগান ৩। ১৫ মিনিটের জন্য একটি হেয়ার কভার দিয়ে চুল ঢেকে রাখুন ৪। চাইলে চুলে সারারাত রেখে দিতে পারেন ৫। তারপর চুলে শ্যাম্পু করুন ৬। অ্যাভোকাডো বা কোকোও কলার সাথে মেশাতে পারেন। এটি সম্পূর্ণ ঐচ্ছিক।
চকচকে চুলের জন্যঃ ১। এক কোয়ার্টার কাপ অলিভ অয়েলে একটি পাকা কলা এবং একটি ডিমের সাদা অংশ মিশিয়ে নিন ২। মিশ্রণটি মাথার ত্বক থেকে চুলের পুরো দৈর্ঘ্যে লাগান এবং ১৫ মিনিট পর আপনার পছন্দের শ্যাম্পু এবং কন্ডিশনার দিয়ে চুল ধুয়ে ফেলুন।
মজবুত চুলের জন্যঃ ১। একটি পাকা কলা নিন এবং এতে ২-৩ চামচ দই যোগ করুন ২। এবার এই পেস্টটি আপনার মাথার ত্বকে ভালো করে লাগান এবং ১৫-২০ মিনিট পর শ্যাম্পু করুন।
শুষ্ক চুলের জন্যঃ ১। একটি পাকা কলার সঙ্গে তিন চা চামচ মধু মিশিয়ে নিন ২। এই মিশ্রণটি চুলে এবং মাথার ত্বকে ভালো করে লাগান ৩। তারপর ১৫-২০ মিনিট পর শ্যাম্পু করে কন্ডিশনার লাগান।
ক্ষতিগ্রস্থ চুলের জন্যঃ ১। একটি পাকা কলায় আধা চা চামচ বাদাম তেল মেশান ২। এবার এই মিশ্রণটি চুলে এবং মাথার ত্বকে লাগান এবং ১০ থেকে ১৫ মিনিট পর শ্যাম্পু ও কন্ডিশনার দিয়ে চুল ধুয়ে ফেলুন।
কোলেস্টেরল কমাতে কলার ভুমিকাঃ কোনো মানুষের কোলেস্টেরল বেড়ে গেলে তাকে অবশ্যই কলা খেতে হবে। কলাতে ম্যাগনেসিয়াম থাকে যা রক্ত পাতলা করতে সাহায্য করে।
হাঁপানিঃ কলা হাঁপানির ঘরোয়া পদ্ধতিতে সমাধানের জন্য খুবই উপকারী এবং কলা স্বাস্থ্যের জন্য খুব ভালো উপকারী। একটি গবেষণা অনুসারে, প্রতিদিন একটি কলা খেলে হাঁপানি হওয়ার সম্ভাবনা ৩৪% কমে যায়।
বুকে ব্যথাঃ বুকে ব্যথা হলে কলা মধু মিশিয়ে খান। ব্যথা দ্রুত ভালো হয়ে যাবে।
মুখের ঘাঃ মুখে ফোসকা পড়লে মানুষ নানা ধরনের প্রতিকারের কথা বলে। আমি আপনাকে একটি সহজ সমাধান বলব। মাত্র ১টি কলা গরুর দুধ বা দই মিশিয়ে খান। এটা একটানা ২-৩ দিন করলে আপনার ফোসকা পুরোপুরি সেরে যাবে।
পিত্তরোগঃ পিত্তের রোগ হলে কলা ঘি মিশিয়ে খান। স্বাস্থ্যের জন্য কলা খাওয়ার উপকারিতা অনুযায়ী শিগগিরই আরাম পাবেন।
নবজাতকের জন্যঃ যখন শিশুর বয়স ৪ মাস হয় এবং কিছু খেতে শুরু করে, প্রথমে তাকে একটি কলা দেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। কলার তরল নরম এবং পুষ্টিকর যা শরীরের প্রতিটি অভাব পূরণ করে। দুধে কলা মাখিয়ে বাচ্চাদের খাওয়ান। শিশুরা সহজেই এর স্বাদ নিতে পারে এবং খেতে পারে।
হার্পিস স্ক্যাবিস চুলকানির ক্ষেত্রেঃ শরীরের কোনো অংশে দাদ হলে একটি কলা থেঁতো করে তাতে লেবুর রস লাগান। যার কারণে এই হারপিস স্ক্যাবিস চুলকানির ওষুধ ও চিকিৎসায় খুব তাড়াতাড়ি উপশম দেবে।
মূত্রনালীর রোগঃ ঘন ঘন প্রস্রাবের রোগ হলে একটি কলা চূর্ণ করে ঘি মিশিয়ে খান, খুব উপকার পাওয়া যাবে।
ক্যান্সারঃ ছোটবেলা থেকেই যদি প্রতিদিন কলা খাওয়ার অভ্যাস করা হয় তাহলে ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা অনেকটাই কমে যায়। কলায় রয়েছে ভিটামিন সি। এটি খেলে ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা কমে যায়।
কলা খাওয়ার সঠিক সময় - কলা খাওয়ার উপযুক্ত সময়
কলা মূলত সকাল বেলা খাওয়া উচিৎ। সকাল বেলা কলা খেলে সারাদিন কলা খাওয়ার উপকারিতা পাওয়া যায়। তবে হ্যাঁ সকাল বেলা কলা কলা খেলেও খালি পেটে কিন্ত খাওয়া উচিত না। মোটকথা খালি পেটে কোনো ভাবেই কলা খাওয়া উচিৎ নয়।
সকালে কলা খেতে হলে অন্য কোনো খাবারের সঙ্গে মিশিয়ে কিংবা অন্য কোনো নাস্তা খাওয়ার পরে কলা খাওয়া উচিৎ। তবে হ্যাঁ শুধুমাত্র সকাল বেলায় যে কলা খাওয়া যায় বাপারটি কিন্ত এমন না। আপনি দিনের যেকোনো সময়ে কল খেতে পারবেন। তবে যা সকালে কলা খাওয়ার উপকারিতা অনেক বেশি পাওয়া যায় আর কি।
(১) কলা খাওয়ার সঠিক সময় সকাল ৮টা থেকে ৯টা (২) ওয়ার্কআউটের পরে কলা অবশ্যই খাওয়া উচিত, এটি তাৎক্ষণিক শক্তি দেয়।
৩। আপনি যদি কোনো খেলাধুলার সঙ্গে যুক্ত হন এবং শারীরিক ব্যায়াম বেশি করেন তাহলে কলা খাওয়া উচিত। লক্ষ্য করবেন কোনো খেলার সাথে যুক্ত খেলোয়াড়রা মাঝে মাঝে কলা খায়, এটি তাদের তাৎক্ষণিক শক্তি দেয় এবং তাই যখনি আপনি ব্যায়াম অথবা খেলাধুলা করবেন চেষ্টা করবেন তখন কলা খাওয়ার।
৪। মানসিক চাপ থাকলে কলা খাওয়া উচিত। কলায় উপস্থিত অ্যামিনো অ্যাসিড শরীরে স্ট্রেস হরমোন কমায়। তাই মানসিক চাপ দূর করার জন্য এটি একটি ভালো প্রতিকার।
৫। শিক্ষার্থীদের পরীক্ষার আগে কলা খাওয়া উচিত, কারণ কলা স্মরণ শক্তি বৃদ্ধি করে এবং কলায় উপস্থিত উচ্চ পটাসিয়াম তাদের মস্তিষ্ককে তীক্ষ্ণ করে তোলে, যা পরীক্ষার লিখতে অনেক সাহায্য করবে।
৬। সকালের নাস্তায় কলা খেতে হবে, এর কারণে দুপুরের খাবার পর্যন্ত ক্ষুধা লাগবে না। কিন্তু খালি পেটে কলা খাওয়া উচিত নয়। কলায় উপস্থিত ম্যাগনেসিয়াম খালি পেটে শরীরে ক্যালসিয়ামের মাত্রা ব্যাহত করে, যার অনেক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হতে পারে।
কলার পুষ্টি উপাদান
কলা বিভিন্ন গুণাগুণে সমৃদ্ধ একটি ফল। এর পুষ্টিগুণ অধিক। এতে রয়েছে দৃঢ় টিস্যু গঠনকারী উপদান যথা আমিষ, ভিটামিন এবং খনিজ। কলা ক্যালরির একটি ভাল উৎস। এতে কঠিন খাদ্য উপাদান এবং সেই সাথে পানি জাতীয় উপাদান সমন্বয় যে কোন তাজা ফলের তুলনায় বেশি। একটি বড় মাপের কলা খেলে ১০০ ক্যালরির বেশি শক্তি পাওয়া যায়।
কলাতে রয়েছে সহজে হজমযোগ্য শর্করা। এই শর্করা পরিপাকতন্ত্রকে সহজে হজম করতে সাহায্য করে। কলার মধ্যে থাকা আয়রন রক্তে হিমোগ্লোবিন উত্পাদনে সাহায্য করে। গবেষকরা জানান, রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ এবং স্বাভাবিক রক্তপ্রবাহ নিশ্চিত করতে দেহে পটাশিয়ামের উপস্থিতি অত্যন্ত জরুরি।
এছাড়াও দেহে পটাসিয়ামের আদর্শ উপস্থিতি নিশ্চিত করা গেলে কমে যায় স্ট্রোকের ঝুঁকিও। আর এই উপকারী পটাশিয়াম কলায় আছে প্রচুর পরিমাণে। গবেষকরা দেখেছেন, একটি কলায় প্রায় ৫০০ মিলিগ্রাম পটাসিয়াম থাকে। আর মানবদেহে প্রতিদিন ১৬০০ মিলিগ্রাম পটাশিয়ামের যোগান দেয়া গেলেই স্ট্রোকের হাত থেকে বছরে বেঁচে যেতে পারে ১০ লক্ষ মানুষ।
কলায় পাওয়া পুষ্টিগুণ লক্ষ্য করলে দেখা যাবে, এতে রয়েছে ভিটামিন-এ, ভিটামিন-বি এবং ম্যাগনেসিয়াম ছাড়াও ভিটামিন-সি, পটাশিয়াম ও ভিটামিন-বি৬, থায়ামিন, রিবোফ্লাভিন। কলায় রয়েছে ৬৪.৩ শতাংশ পানি, ১.৩ শতাংশ প্রোটিন, ২৪.৭ শতাংশ কার্বোহাইড্রেট। এই সমস্ত উপাদান একটি সুস্থ শরীরের জন্য অতীব প্রয়োজনীয়।
পাকা কলার প্রতি ১০০ গ্রাম খাদ্যাংশে জলীয় অংশ- ৬২.৭ গ্রাম, আঁশ- ০.৪ গ্রাম, আমিষ- ৭.০ গ্রাম, চর্বি- ০.৮ গ্রাম, খনিজ পদার্থ- ০.৯ গ্রাম, লৌহ- ০.৯ মিলিগ্রাম, ক্যালসিয়াম- ১৩.০ মিলিগ্রাম, ভিটামিন বি-১- ০.১ মিলিগ্রাম, ভিটামিন বি-২- ০.০৫ মিলিগ্রাম ও ভিটামিন সি- ২৪ মিলিগ্রাম ও খাদ্যশক্তি- ১০৯ কিলোক্যালোরি রয়েছে। কাঁচা কলায় রয়েছে প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম ও ফসফেট।
আরো পড়ুনঃ নরমাল ডেলিভারি হওয়ার উপায়
গর্ভাবস্থায় কলা খাওয়ার উপকারিতা
গর্ভাবস্থায়, মহিলাদের প্রায়ই সেই জিনিসগুলি খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়, যা তাদের এবং তাদের শিশু উভয়েরই উপকার করে। আজকে আমরা আবার একটি পুষ্টিকর জিনিস নিয়ে এসেছি, যার নাম কলা। গর্ভাবস্থায় কলা খাওয়া কতটা উপকারী এবং কতটা ক্ষতিকর সে সম্পর্কে গর্ভবতী মহিলাদের জানা জরুরি।
কলার পুষ্টিগুণ সম্পর্কে বলতে গেলে এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম, আয়রন, ম্যাগনেসিয়াম, ফসফরাস, পটাসিয়াম, সোডিয়াম, জিঙ্ক, ফাইবার, পানি, প্রোটিন, শক্তি, কার্বোহাইড্রেট, চিনি, ভিটামিন বি১২, ভিটামিন বি৬, ভিটামিন এ, ভিটামিন ডি, ভিটামিন।
সি এমন পরিস্থিতিতে গর্ভাবস্থায় কলা খাওয়া উচিত কি না, এমন প্রশ্ন আসা স্বাভাবিক। আজকের আর্টিকেলটি গর্ভাবস্থায় কলা খাওয়ার উপকারিতা এই বিষয়ে। আজ গর্ভাবস্থায় কলা খাওয়ার উপকারিতা এই আর্টিকেলের মাধ্যমে আমরা আপনাদের জানাবো গর্ভাবস্থায় কলা খাওয়া কতটা উপকারী এবং কতটা ক্ষতিকর। এর সাথে, আপনি এটি খাওয়ার সময় কী কী সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে সে সম্পর্কেও জানতে পারবেন।
গর্ভাবস্থায় খাদ্যতালিকায় তাজা ফল এবং শাক সবজি অন্তর্ভুক্ত করা উচিত কেননা এগুলো প্রয়োজনীয় পুষ্টিগুণে ভরপুর এবং ফাইবারযুক্ত। গর্ভাবস্থায় খাদ্যতালিকায় শাক সবজি তাজা ফলমূল রাখা প্রয়োজন কেননা এগুলো বাচ্চাকে তার বৃদ্ধির জন্য প্রয়োজনীয় খনিজ ও ভিটামিন সরবরাহ করে। ঠিক এরকম একটি স্বাস্থ্যকর ও সুস্বাদু এবং পুষ্টিকর ফল হচ্ছে কলা।
প্রিয় পাঠক কলা সারাবিশ্বে স্বাস্থ্যকর ফলের তালিকার শীর্ষস্থানে উঠে আসছে। খাদ্যতালিকার শীর্ষে আসার কারণ এর অধিক পুষ্টি, ঔষধি গুণ এবং সহজ প্রাপ্যতা। কলাতে প্রয়োজনীয় ভিটামিন, খনিজ, কার্বোহাইড্রেট এবং ডায়েটরি ফাইবার থাকে।
কলা ক্যালরির একটি ভাল উৎস। একটি বড় মাপের কলা খেলে ১০০ ক্যালরির বেশি শক্তি পাওয়া যায়। কলাতে রয়েছে সহজে হজমযোগ্য শর্করা। এই শর্করা পরিপাকতন্ত্রকে সহজে হজম করতে সাহায্য করে। কলার মধ্যে থাকা আয়রন রক্তে হিমোগ্লোবিন উত্পাদনে সাহায্য করে যা গর্ভবতী মা ও শিশুর জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
গর্ভাবস্থায় কলা খাওয়া একেবারে সিকিউর। কলাতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে পুষ্টি যে পুষ্টিগুলো মা ও শিশুর উভয়ের জন্যে বেশ উপকারী। গর্ভবতী মায়েদের শিশুর সঠিক বৃদ্ধি এবং বিকাশের জন্য সে যেন সঠিক পুষ্টি পায় তা নিশ্চিত করার জন্য স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া উচিত।
কলা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে গর্ভবতী মহিলাদের জন্য কলা খুবই উপকারী। গর্ভাবস্থায় মহিলাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ভালো হওয়া উচিত। এমন পরিস্থিতিতে, কলা খাওয়ার মাধ্যমে তারা কেবল রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাই শক্তিশালী করে না, তবে কলার অভ্যন্তরে পাওয়া ভিটামিন এ এবং ভিটামিন-সি, ভিটামিন-ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে পারে।
শিশুর বৃদ্ধি এবং বিকাশের জন্য
কলা ফলিক এসিড এর একটি ভালো উৎস, যা শিশুর বৃদ্ধি বিকাশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। গর্ভাবস্থায় কলা খাওয়ার কারণে শরীরে ফলিক এসিডের মাত্রা ভালো হয়ে থাকে। যার কারণে শরীরে ফলিক এসিডের ঘাটতির সম্ভাবনা হ্রাস পায়। তাই গর্ভবতী মহিলাদের জন্য প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় কলা থাকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
পায়ে ক্র্যাম্পের সমস্যা
গর্ভবতী মহিলারা প্রায়শই তাদের ক্রমবর্ধমান ওজনের কারণে তাদের পায়ে ক্র্যাম্পের সম্মুখীন হন। এমন পরিস্থিতিতে কল ঠান্ডা দূর করতে কার্যকর ভুমিকা পালন করতে পারে। কলার অভ্যন্তরে প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম পাওয়া যায় যা শুধু পায়ের পেশীই মজবুত করে না স্নায়ুকেও শক্তিশালী করে।
শিশুর মস্তিষ্কের বিকাশে
কলা হচ্ছে ভিটামিন-বি৬ ও আয়রন এবং ফলিক এসিড সমৃদ্ধ উৎস, যা গর্ভে থাকা সন্তানের কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রের বিকাশের জন্য অনেক বেশি প্রয়োজন। তাই গর্ভাবস্থায় নিয়মিত কলা খেলে তা শিশুর মস্তিষ্কের বিকাশের জন্য অনেক বেশি উপকারী।
গ্যাস্ট্রিক প্রতিরোধে সহায়তা করে
প্রিয় পাঠক কলা খাওয়ার ফলে পেট এবং এসোফাগেয়াল প্রাচীরকে গ্যাস্ট্রিক এসিড থেকে ভালো রাখতে সাহায্য করে। আমরা সবাই জানি গর্ভাবস্থায় অ্যাসিডিটি বা অম্বল একটি কমন প্রবলেম। কলা খাওয়ার ফলে পেটে ও খাদ্যনালীতে এসিডিটির মাত্রা হ্রাস করতে সহায়তা করে। কলা খেলে হজম শক্তিতে সাহায্য করে।
রক্তাল্পতা দূর করে
গর্ভাবস্থায় রক্তশূন্যতার সমস্যা মা ও শিশু উভয়ের স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। এমন অবস্থায় শরীরে রক্তের অভাব যেন না হয়। শরীরে আয়রনের অভাবের কারণে রক্তাল্পতার মুখোমুখি হতে পারে। এমন অবস্থায় কলার ভেতরে প্রচুর পরিমাণে আয়রন পাওয়া যায়, যা শুধু রক্তের অভাবই পূরণ করে না, রক্তশূন্যতা প্রতিরোধে উপকারী।
পাঁকা কলা গর্ভবতী মহিলাদের রক্তাসল্পতায় দূর করতে সাহায্য করে। রক্তাল্পতা হচ্ছে এমন একটি অবস্থা যেখানে রক্তে হিমোগ্লোবিনের ঘাটতি থাকে, যা দেহের লাল রক্তকোষের স্তরকে কমিয়ে আনতে পারে। অনেক গর্ভবতী মহিলা আছেন যারা গর্ভকালীন সময়ে রক্তাল্পতা সমস্যায় ভোগেন। রক্তাল্পতার অন্যতম প্রধান কারণ হচ্ছে দেহে আয়রনের ঘাটতি। আর যদি আপনি বা গর্ভাবস্থায় কলা খাওয়া যায় তাহলে আয়রনের স্তরকে বৃদ্ধি করতে সাহায্য করবে।
এছাড়াও শাক-সবজি খেলে আয়রনের ঘাটতি অনেক কমে। বিটের মতো আনাজ হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ বাড়াতে সাহায্য করে। বিটে বিদ্যামান ফোলেট গর্ভস্থ শিশুর জন্মগত ত্রুটি প্রতিরোধ করে। যারা উচ্চ রক্তচাপের সমস্যায় ভুগছেন তারা সকালে কিংবা বিকালে নাস্তায় বিটের জুস খেতে পারেন।
এতে বিদ্যমান পটাশিয়াম রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে এবং নাইট্রেট মস্তিষ্কে রক্ত সঞ্চালন বাড়িয়ে তোলে। লো ফ্যাট থাকায় ওজন নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। টমেটো, কুমড়ো, ব্রকোলি বা পালং শাকে প্রচুর আয়রন থেকে। এগুলি খেলেও রক্তাল্পতার সমস্যা কমতে পারে।
কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে মুক্তি দেয় - কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে
গর্ভাবস্থায় কোষ্ঠকাঠিন্য একটি সাধারণ সমস্যা। গর্ভবতী মহিলারাও কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা দূর করতে কলা খেতে পারেন। কলার অভ্যন্তরে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার পাওয়া যায়, এটি হজমের জন্য প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান।
ফাইবার শুধু হজমই উন্নত করে না কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা দূর করতেও বেশ উপকারী। ফাইবার অন্ত্রের গতিকে উত্তেজিত করতে এবং পেটে গ্যাসের ফলে হওয়া পেট ফোলাভাব কমাতে সাহায্য করে। কলা খাওয়ার ফলে নিয়মিত অন্ত্রের গতিবিধি ঠিক রাখে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য সমস্যা সমাধানে সাহায্য করে।
কলা শরীরে দ্রুত শক্তি সরবরাহ করে
কলাতে উচ্চমাত্রায় কার্বোহাইড্রেট এবং শর্করা থাকে। কারণ এতে গ্লুকোজ, ফ্রুক্টোজ এবং সুক্রোজ জাতীয় শর্করা থাকে যা তাৎক্ষণিক শক্তি বৃদ্ধির জন্য শরীর দ্বারা দ্রুত বিপাক হতে পারে। কলা দ্রুত শক্তি সরবরাহ করতে পারে।
গর্ভবতী মহিলারা যদি কলা খান তবে কলার ভিতরে থাকা ভিটামিন, আয়রন এবং ক্যালসিয়াম মহিলাদের শক্তি যোগাতে খুব সহায়ক ভুমিকা পালন করে। সুতরাং, গর্ভবতী মায়েরা কলা হাতের কাছে রাখুন। কলা খাওয়ার ফলে আপনাকে ক্লান্তির সঙ্গে লড়াই করতে এবং আপনার শক্তির স্তর বৃদ্ধি করতে সাহায্য করবে। একইসঙ্গে মহিলারাও এটি খেলে প্রচুর শক্তি পান।
কলা বমি বমিভাব কমায় - সকালের অসুস্থতা প্রতিরোধ করে
মর্নিং সিকনেস সারাতেও কলা একটি চমৎকার অপশন। উল্লেখ্য, গর্ভাবস্থায় মহিলারা যদি মর্নিং সিকনেসের সম্মুখীন হন, তবে তাদের দিনে এক বা দুটি কলা খাওয়া উচিত, এটি করলে মর্নিং সিকনেসের সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
বমি বমিভাব এবং সকালের অসুস্থতা কমাতে কলা সাহায্য করে। কলাতে রয়েছে ভিটামিন বি-৬। আর এই ভিটামিন বেশিরভাগ বমি বমিভাব এবং সকালের অসুস্থতা কমাতে সাহায্য করে। বিশেষত গর্ভাবস্থায় প্রথম ত্রৈ-মাসিকে কলা খাওয়া গর্ভবতী মায়েদেরকে সুপারিশ করা হয়।
কলা খাওয়ার সময় যেসব সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে
গর্ভবতী মহিলারা যদি তাদের খাদ্যতালিকায় কলা যোগ করে থাকেন, তাহলে তাদের সেই সময়ে কিছু সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। এই সতর্কতাগুলি নিম্নরূপঃ
১। গর্ভাবস্থাকালীন ডায়াবেটিসে আক্রান্ত মহিলাদেরও খুব বেশি কলা খাওয়া উচিত নয়। আপনি যদি গর্ভবতী হন এবং গর্ভাবস্থাকালীন ডায়াবেটিস থাকে তবে কলা খাওয়ার বিষয়ে ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করুন ২। অতিরিক্ত পাকা বা কালশিটে কলা খাওয়া এড়িয়ে চলুন ৩। শুধুমাত্র তাজা কলা খান ৪। অরগানিক কলা নির্বাচন করুন।
সকালে কলা খাওয়ার উপকারিতা
আমাদের শরীরে সহজেই ক্যালরির চাহিদা মেটাতে সবচেয়ে সহজলভ্য ফল হচ্ছে কলা। কলাতে ক্যালরির পরিমাণ হচ্ছে ১০০। এছাড়াও কলাতে আরো আছে ভিটামিন, খনিজ পদার্থ, অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট। যে উপাদান গুলো আমাদের শরীর ও স্বাস্থ্য ভালো রাখতে অনেক বেশি সাহায্য করে।
অনেকেই আছেন যারা সকালের নাস্তায় কলা খেয়ে থাকেন। আবার অনেকেই আছেন যারা আবার দিনের অন্য যেকোনো সময়ে কলা খেয়ে থাকেন। তবে হ্যাঁ বিশেষজ্ঞরা সকালবেলা কলা খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন। কেননা সকালে কলা খাওয়ার ফলে শরীরে শক্তির পরিমাণ বৃদ্ধি হয়। তবে হ্যাঁ জেনে রাখা ভালো খালি পেটে কলা খাওয়া উচিত নয়। সকালে কলা খাওয়ার উপকারিতা গুলো নিম্নে থেকে জেনে নিনঃ
কলা এবং মধু ব্রেকফাস্ট
সকালের নাস্তায় কলা ও মধু খেলে অনেক স্বাস্থ্য সমস্যা এড়ানো যায়। কলা এবং মধু উভয়ই পুষ্টিগুণে ভরপুর। কলা ও মধু একসাথে মিশিয়ে সকালে খালি পেটে খেতে পারেন। মধুর সাথে কলা খেলে ওজন বাড়বে। এছাড়া এটি হার্টের স্বাস্থ্যের জন্যও উপকারী। খালি পেটে কলা ও মধু খেলেও কোষ্ঠকাঠিন্য রোধ হয়। তাই আপনি চাইলে সকালের নাস্তায় কলা ও মধুর মিশ্রণ খেতে পারেন। কলা ও মধু খুবই উপকারী।
সকালের নাস্তায় কলা খাওয়ার উপকারিতা
সকালের নাস্তায় টোস্ট, ডিম কিংবা কর্নফ্লেক্সের সাথে অনেক মানুষ কলা খান। এই খাবার খাওয়ার ফলে যেমন পুষ্টিও পাওয়া যায় ঠিক তেমনি পেট ভরা থাকে। যদি আপনি নিয়মিত শরীরচর্চা করে থাকেন তবে অবশ্যই আপনি সকালের নাস্তায় কলা রাখবেন। বিশেষজ্ঞরা হজমের সমস্যা থাকলেও কলা খেতে বলছেন। তবে হ্যাঁ কলা যখন খাবেন তখন সবসময় হেলদি ফ্যাটের সাথে খাবেন।
কলা এবং ঘি
কলা ও ঘি দুটোই স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। সকালে খালি পেটে এই দুটি একসাথে খেতে পারেন। কলা এবং ঘি এর সংমিশ্রণ রোগা এবং দুর্বল মানুষের জন্য খুবই উপকারী। এর জন্য আপনি দুটি কলা নিন, ১ চা চামচ দেশি ঘি দিয়ে মেখে নিন। এবার খালি পেটে খান। এতে আপনার ওজন বাড়বে এবং পরিপাকতন্ত্রের উন্নতি হবে। কলা ও ঘি শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও বাড়ায়।
কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা সমাধানে কলা খান
যদি পেট পরিষ্কার না হয়ে থাকে তবে শরীরে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা দেখা যায়। আর এই কারণে যাতে অরে সকালে উঠেই পেট ক্লিয়ার হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখা আমাদের সকলের উচিত। এছাড়া যাদের আলসার রোগের মতো সমস্যা আছে এবং যারা কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যায় ভোগেন তারা নিয়ম করে প্রতিদিন ১টি কলা খান। ইনশাআল্লাহ আপনার সকল সমস্যা ঠিক হয়ে যাবে।
সকালে কলা এবং দুধ একসাথে খান
কলা এবং দুধ নিজেই একটি সম্পূর্ণ খাদ্য। এই দুটি একসঙ্গে খাওয়া হলে পুষ্টিগুণ বহুগুণ বেড়ে যায়। সকালে খালি পেটে কলা ও দুধ খেতে পারেন। এর জন্য আপনি এক গ্লাস দুধে ২টি কলা পিষে নিন। এবার এই শেকটি সকালের নাস্তায় নিন। কলা ও দুধের মিশ্রণ হাড়কে মজবুত করে। জয়েন্ট, পেশী ব্যথা উপশম করে। দুধ ও কলা খেলে শরীর মজবুত হয়, সারাদিন শরীর থাকে অনলস।
ওজন নিয়ন্ত্রণে কলা খান
অনেকেই আছেন যারা মনে করেন যে, কলা খেলে ওজন বৃদ্ধি পায়। আর মুলত এই কারণে অনেকেই ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য তাদের খাদ্য তালিকা থেকে কলা অর্থাৎ অতীব জরুরি খাদ্যকে বাদ দিয়ে দেন। কিন্ত হ্যাঁ জেনে রাখা ভালো যে কলা হচ্ছে খুবই পুষ্টিকর একটি ফল।
এটি রক্তচাপকে ঠিক রাখা থেকে শুরু করে হৃদরোগের বিভিন্ন সমস্যা সহ আরো বিভিন্ন রোগ দূরে ঠেলে দেয়। তাছাড়া পাকা হলুদ কলাতে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট থাকার কারণে তা শরীরের বিভিন্ন উপকার করে থাকে।
সকালে কলা এবং শুকনো ফল খান
এছাড়া সকালে খালি পেটে কলা ও শুকনো ফল একসঙ্গে খেতে পারেন। এর জন্য আপনি ২টি কলা নিন, এতে কিছু বাদাম, কিশমিশ, আখরোট যোগ করুন। সব ভালো করে পিষে নিন। আপনি চাইলে এতে দুধও যোগ করতে পারেন।
সকালে খালি পেটে এই সংমিশ্রণটি সেবন করলে সারাদিন আপনি নিজেকে শক্তিমান রাখতে পারবেন। শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও বাড়বে। হাড় এবং পেশী শক্তিশালী হবে। এছাড়া কলা হৃদরোগের জন্যও উপকারী।
রাতে কলা খাওয়ার উপকারিতা
রাতে কলা খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে আমরা অনেকেই জানি না। উপরোক্ত আলোচনা হতে জানতে পারছেন যে কলা হচ্ছে অন্যতম পুষ্টিকর খাবার যা আমরা আমাদের নিত্যদিনের ডায়েটে অন্তর্ভুক্ত করতে পারি। আপনি হয়তোবা কোথাও শুনে থাকবেন যে রাতে কলা খাওয়ার উপকারিতা এবং রাতে কলা খাওয়ার অপকারিতা রয়েছে। রাতে কলা খাওয়া উপকারিতা বা রাতে কলা খাওয়ার অপকারিতা গুলো কি হতে পারে?
সব ফলই স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী হলেও আজ আমরা কলার কথা বলছি। কলা এমন একটি ফল যা পটাসিয়াম, ভিটামিন বি৬, ভিটামিন সি, ম্যাগনেসিয়াম, কপার, ফাইবার এবং কার্বোহাইড্রেট সমৃদ্ধ। এটি খেলে শরীর তাৎক্ষণিক শক্তি পায়। সেজন্য আপনি নিশ্চয়ই খেলোয়াড়দের মাঠে বা খেলার মাঝখানে কলা খেতে দেখেছেন।
কলা খেলে পরিপাকতন্ত্রের উন্নতি ঘটে, হার্ট সুস্থ রাখতে সাহায্য করে, রক্তস্বল্পতা দূর করে এবং রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে। এত উপকারিতা জানার পর, আপনিও যে প্রতিদিন কলা খেতে চাইবেন তা স্পষ্ট। কিন্তু কলা খাওয়া অনেকের মনে আরেকটি প্রশ্ন আসে যে কলা রাতে খাওয়া উচিত কিনা? এই একটি সমস্যা হতে পারে? যদি এই প্রশ্নটি আপনাকে প্রায়শই তাড়া করে, তবে আসুন উত্তরটি খুঁজে বের করা যাক।
রাতে কলা খাওয়ার উপকারিতা
প্রিয় পাঠক কলা হচ্ছে অত্যন্ত পুষ্টিকর একটি খাবার। রাতে কলা খাওয়ার উপকারিতা রয়েছে ব্যাপক। রাতে কলা খাওয়ার উপকারিতা এর মধ্যে অন্যতম হলো-
ঘুম বাড়াতে সাহায্য করে
যদি আপনার দিনটি খুব ক্লান্তিকর হয়ে থাকে এবং এই কারণে শরীরে ব্যথা হয়, তবে এর জন্য অবিলম্বে একটি কলা খান। এটি আপনাকে ভাল ঘুম এবং ভাল বোধ করতে সাহায্য করবে। কলাতে প্রচুর পরিমাণে পটাসিয়াম থাকে, যা পেশী শিথিল করতে সাহায্য করে।
রক্তচাপ কমায়
আপনি যদি উচ্চ রক্তচাপের রোগী হন, তাহলে আপনার খাদ্যতালিকায় সোডিয়ামের পরিমাণ কমিয়ে পটাসিয়ামের পরিমাণ বাড়াতে হবে। এমন পরিস্থিতিতে কলা আপনার জন্য উপকারী প্রমাণিত হতে পারে। এতে উপস্থিত প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করবে।
অম্বল থেকে মুক্তি দেয়
অনেক সময় রাতে ভারী ডিনার বা বেশি মশলাদার খাবার খেলে অ্যাসিডিটি ও বুকজ্বালা হয়। এমনটা হলে ঘুমানোর আগে একটা কলা খেয়ে নিলে অ্যাসিডিটির সমস্যা থাকবে না। পাকস্থলীতে উপস্থিত অ্যাসিডকে নিষ্ক্রিয় করতে কলা উপকারী।
মিষ্টি খাবারের লোভ কমায়
আপনিও যদি সেই ব্যক্তিদের একজন হন যাদের খাওয়ার পর মিষ্টি খাওয়ার প্রবল ইচ্ছা থাকে, তাহলে মিষ্টির পরিবর্তে একটি কলা খেতে পারেন। এতে মিষ্টির লোভ কমবে এবং স্বাস্থ্যের জন্যও উপকার হবে।
আয়ুর্বেদ কি বলে?
আয়ুর্বেদ অনুসারে, রাতে কলা খেলে কোনো সমস্যা হয় না, তবে আপনার যদি সর্দি-কাশি, হাঁপানি, সাইনাসের মতো সমস্যা থাকে, তাহলে রাতে কলা খাওয়া উচিত নয়। কারণ ঘুমানোর আগে কলা খেলে শ্লেষ্মা তৈরি হওয়ার আশঙ্কা থাকে, যা আপনার সর্দি-কাশির সমস্যা বাড়িয়ে দেয়। এছাড়া কলা হজম হতে বেশি সময় লাগে বলে রাতে কলা খেলে ওজন বাড়ার ভয়ও থাকে। কিন্তু এত কিছুর পরও কলা খাওয়া উপকারী।
নিয়মিত কলা খাওয়ার উপকারিতা
আমরা অনেক ধরনের ফল খেয়ে থাকি যাতে আমাদের শরীর তাদের উপকার পেতে পারে। তেমনই একটি ফল হল কলা, যা আমাদের সবচেয়ে বেশি শক্তি দিতে কাজ করে। এটি প্রোটিন, ভিটামিন এবং অন্যান্য অনেক পুষ্টিতে ভরপুর। তাই চিকিৎসকরাও কলা খাওয়ার পরামর্শ দেন।
প্রতিদিন একটি কলা খাওয়া আমাদের শরীরকে রোগের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে অনেক সাহায্য করতে পারে। এটি একটি অত্যন্ত সস্তা ফল এবং এটি যেকোনো ঋতুতে সহজেই পাওয়া যায়। তো চলুন আপনাদের বলি নিয়মিত কলা খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে, যা আমরা এর সেবনে পেতে পারি।
মানুষ তাদের ওজন কমানোর জন্য অনেক উপায় বা পদ্ধতি ব্যবহার করে, কিন্তু তারা বুঝতে পারে না যে একটি কলা আমাদের ক্রমবর্ধমান ওজন কমাতে খুব সহায়ক। শরীরের ওজন বৃদ্ধি এবং স্থূলতা আমাদের ফিট শরীর নষ্ট করতে কাজ করে।
এ ছাড়া স্থূলতা বৃদ্ধির কারণেও আমরা নানা রোগে আক্রান্ত হতে পারি। প্রতিদিন সকালে একটি কলা খান তারপর গরম পানি পান করুন। এটি করা আপনাকে ওজন কমাতে এবং আপনাকে ফিট রাখতে সাহায্য করবে।
পটাশিয়াম ও ম্যাগনেশিয়াম সমৃদ্ধ কলা হাড় মজবুত রাখতে সাহায্য করে। কলায় থাকে পেকটিন নামক ফাইবার। কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যায় দীর্ঘ দিন ধরে ভুগছেন যাঁরা, তাঁরা প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় কলা রাখতে পারেন।
হার্ট সুস্থ রাখতে কলা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। কলায় পটাশিয়াম, ভিটামিন-সি, ফাইবার এবং ক্যালসিয়াম খুব ভালো এবং প্রয়োজনীয় পরিমাণে রয়েছে। অতএব, প্রতিদিন মাত্র একটি কলা খাওয়া আমাদের কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে অনেক সাহায্য করে।
এবং এটি সর্বজনবিদিত যে বেশিরভাগ হৃদরোগ কোলেস্টেরল বৃদ্ধির কারণে হতে পারে। আপনি যদি আপনার হৃদপিণ্ডকে সুস্থ ও সুস্থ রাখতে চান, তাহলে প্রতিদিন নিয়মিত একটি করে কলা খাওয়া উচিত।
শরীরে শক্তি জোগাতে কলার জুড়ি মেলা ভার। গরমে রোদ থেকে ফিরে অনেক সময় খুব দুর্বল লাগে। তখন চাঙ্গা হতে একটি কলা খেয়ে নিতে পারেন। ওজন কমে গেলেও চিকিৎসকরা অনেক সময় কলা খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন।
অনেক সময় সকালে স্কুল, কলেজ, অফিস বা অন্য কোথাও যাওয়ার কারণে আমরা নাস্তা করতে পারি না। এমন পরিস্থিতিতে সকালের নাস্তার পরিবর্তে একটি কলা খেতে পারেন, কারণ এতে প্রচুর পরিমাণে কার্বোহাইড্রেট থাকে, যা খাওয়ার চেয়েও তাড়াতাড়ি পেট ভরে যায়।
এর পাশাপাশি কলা খেলে শরীর তাৎক্ষণিক শক্তি পায়। শুধু তাই নয়, কলা আমাদের রক্তে হিমোগ্লোবিন বাড়াতেও কাজ করে। তাই রক্তশূন্যতা অর্থাৎ রক্তশূন্যতার রোগীদের কলা খেতে বলা হয়।
কলায় ক্যারোটিনয়েডের মতো অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট রয়েছে। শরীরের যাবতীয় দূষিত পদার্থ দূর করতে এই অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট দারুণ কাজ করে। প্রতি দিন কলা খাওয়ার অভ্যাসে শরীরের অনেক সমস্যা দূর হয়।
কলায় অ্যামিনো অ্যাসিড ট্রিপটোফ্যান থাকার কারণে এটি সেরোটোনিন হরমোন তৈরি করে, যার কারণে এটি মানসিক চাপ উপশম করতে এবং মেজাজ উন্নত করতে সহায়তা করে। কলা আমাদের হাড়ের জন্যও খুব উপকারী বলে মনে করা হয়।
কলায় বিশেষ প্রোবায়োটিক ব্যাকটেরিয়া থাকে, যার কাজ হল আপনার খাবার থেকে ক্যালসিয়াম শোষণ করা এবং হাড় মজবুত করা। এছাড়াও কলায় প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম থাকে যা রক্ত সঞ্চালন ঠিক রাখতে সাহায্য করে। এছাড়াও, এটি আমাদের মনকে চটপটে এবং সতর্ক রাখে।
দ্রষ্টব্য: এই পরামর্শ শুধুমাত্র সাধারণ তথ্যের উদ্দেশ্যে। কিছু খাওয়া বা কোন ঘরোয়া প্রতিকার গ্রহণ করার আগে, আপনার ডাক্তার বা বিশেষজ্ঞের সাথে পরামর্শ করুন।
আরো পড়ুনঃ জাম খাওয়ার উপকারিতা
বাচ্চাদের কলা খাওয়ার উপকারিতা
কলা এমন একটি ফল যা সর্বত্র সহজেই পাওয়া যায়। এটি কোনো মৌসুমি ফল নয় তবে প্রতি মৌসুমে ১২ মাস বাজারে সহজেই পাওয়া যায়। কলা আমাদের শরীরে এমন অনেক পুষ্টি যোগায়, যা হৃদয় ও চোখকে রক্ষা করে। যারা খেলাধুলা বা জিমের সঙ্গে যুক্ত বা যারা ওজন বাড়াতে চান, তাদের অবশ্যই প্রতিদিন দুটি করে কলা খেতে হবে।
কলার প্রকারঃঃ কলা দুই ধরনের হয় ১। কাঁচা কলা ২। পাকা কলা
কলা কাঁচা হোক বা পাকা, দুই ধরনের কলাই তাদের নিজস্ব উপকারিতা দেয়। কাঁচা কলা খেলে রক্তের ব্যাধি, পোড়া, ক্ষত ও কফ নিরাময় হয়, পাকা কলা খেলে সুস্বাদু ও পুষ্টিকর, ক্ষুধা দূর হয় ও ওজন বৃদ্ধি পায়।
কলা খাওয়ার সঠিক সময়
আপনি 6 মাস পর বাচ্চাদের কলা ম্যাশ করে খাওয়াতে পারেন। সকালে কলা খেলে এবং তারপর দুধ পান করলে সর্বাধিক উপকার পাওয়া যায়। আয়ুর্বেদ অনুসারে সকালে কলা খাওয়া ভালো। আপনি এটি দিনের বেলা খাওয়ার পরেও নিতে পারেন।
আপনি যদি খুব ক্লান্ত হয়ে পড়েন বা কোনো খেলাধুলা বা ব্যায়াম করে থাকেন, তাহলে কলা খাওয়া উপকারী কারণ এটি তাৎক্ষণিক শক্তি দেয়। কিন্তু রাতে ঘুমানোর সময় কখনই কলা খাওয়া উচিত নয়। সব সময় রাতে যেকোনো ফল খাওয়া থেকে বিরত থাকুন।
বাচ্চাদের কলা খাওয়ার উপকারিতা
পেট ভরাতে সাহায্য করে কলা
কলা এমন একটি ফল যা আমাদের পেট ভরাতে সাহায্য করে। অন্যান্য ফল খেতে সুস্বাদু হলেও পেট ভরে না। যেখানে ক্ষুধার্ত হলে দুই-তিনটি কলা খেলে সঙ্গে সঙ্গে পেট ভরে যায়। এটি শরীরে প্রয়োজনীয় শক্তিও জোগায়। কলা মাখিয়ে বা পিউরি বানিয়ে বাচ্চাদের দিতে পারেন।
একটি সুস্থ এবং ফিট শরীরের জন্য
কলায় পাওয়া যায় উপকারী উপাদান যা আমাদের ওজন বাড়াতে সহায়ক। কলা আমাদের হজমশক্তিকেও উন্নত করে, যার কারণে আমাদের খাদ্য ও পানীয় আমাদের শরীরে ভালো লাগে। আপনি যদি আপনার বাচ্চাকে 2 থেকে 3 মাস একটানা প্রতিদিন 1টি করে কলা দেন তাহলে তাদের ওজন বাড়বে। ওজন বাড়ানোর পাশাপাশি এটি চর্বিও নিয়ন্ত্রণ করে, যা এর একটি আলাদা বৈশিষ্ট্য।
আয়রন
অ্যানিমিয়া অর্থাৎ শরীরে হিমোগ্লোবিনের অভাবও কলা খেলে দূর করা যায়। কলা খেলে শরীরে আয়রনের ঘাটতি ধীরে ধীরে কমে যায় এবং আপনার শিশু রক্তশূন্যতার সমস্যা থেকে ভালো হয়ে যায়।
কোষ্ঠকাঠিন্য এবং ডায়রিয়া থেকে মুক্তি
কলা পেটের কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা থেকে মুক্তি দেয়। প্রতিদিন রাতে শোবার সময় ইসবগুলের ভুসি বা দুধের সাথে খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য এবং পেটে গ্যাসের সমস্যা থেকে মুক্তি মিলবে। ডায়রিয়া হলে শিশুদের কলা দই মিশিয়ে খাওয়ালে দ্রুত উপশম হবে।
নবজাতকের জন্য
বাচ্চা যখন প্রথমবার কিছু খেতে শুরু করে তখন আমরা প্রথমে দুধের সাথে কলা মাখিয়ে বাচ্চাদের খাওয়াই। কলা একটি নরম ও পুষ্টিকর খাবার যা শরীরের প্রতিটি অভাব পূরণে সহায়ক। দুধে কলা মাখিয়ে বাচ্চাদের খাওয়ান।
পাচনতন্ত্রের জন্য
কলা খেলে পাকস্থলীর পরিপাকতন্ত্র সুচারুভাবে কাজ করে। খাওয়ার পরও কলা খাওয়া হজমে সাহায্য করে।
ডায়রিয়া বা ডিহাইড্রেশন
ডায়রিয়া হলে কলা খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়, যার কারণে শরীরে পটাসিয়াম এবং জল সরবরাহ হয়।
শুকনো কাশিতে সহায়ক
আপনার বা আপনার সন্তানের যদি শুকনো কাশি বা দীর্ঘস্থায়ী কাশির সমস্যা থাকে, তাহলে কলার শরবত পান করলে আরাম পাওয়া যায়। কলার সিরাপ তৈরি করতে, কলাকে একটি মিক্সারে ভাল করে বিট করুন, এবার এতে দুধ এবং সাদা এলাচ যোগ করুন এবং আপনার সন্তানকে দিন।
রোগ নিরাময়
পেট সংক্রান্ত কোনো সমস্যা থাকলে কলা খাওয়া শুরু করা উচিত। পেটের সমস্যার জন্য কলা একটি ওষুধ। যখনই আপনার অ্যাসিডিটি বা আমাশয়ের সমস্যা হবে, কলা খেতে ভুলবেন না। এছাড়াও কলা পেটের তাপ দূর করতে এবং পাইলস দূর করতেও উপকারী।
শক্তি লাভ
কলা আমাদের দিনের প্রয়োজনীয় শক্তি পূরণ করে। কলাতে অনেক উপকারী উপাদান রয়েছে। আপনি যখনই আপনার সন্তানকে ক্লান্ত মনে করেন বা খেলা শেষে আসে, তখনই আপনি তাকে একটি কলা খাওয়ান। এটি তাৎক্ষণিক শক্তি দিবে।
আরো পড়ুনঃ বাচ্চাদের জন্য কোন সাবান ভালো
সাগর কলার উপকারিতা
প্রিয় পাঠক বিভিন্ন প্রকার কলার মধ্যে থেকে সাগর কলার উপকারিতা অন্যতম। আমাদের দেশে এই কলা সবচেয়ে বেশি পরিমাণে চাষ করা হয়ে থাকে এবং বাংলাদেশের সকল জায়গায় সহজেই পাওয়া যায়। সাগর কলা হচ্ছী প্রচুর পরিমাণে পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ একটি ফল। সাগর কলার ছাল থেকে শুরু করে আশ পর্যন্ত সবকিছুই আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য অনেক বেশি উপকারী। সাগর কলার উপকারিতা গুলো নিম্নে দেওয়া হলোঃ
১। হজমশক্তি বৃদ্ধি করতে সাগর কলা ভালো কাজ করে এবং হজমের সমস্যা দূর করে ২। রক্তচাপের সমস্যা দূর করে সাগর কলা ৩। সাগর কলা পেশীর বিভিন্ন সমস্যা দূর করে পেশীকে শক্তিশালী এবং মজবুত করে গঠনে সাহায্য করে
৪। শরীরের পুষ্টি উপাদান ঠিক রাখতে সাগর কলা ভালো কাজ করে ৫। গর্ভবতী মায়েদের শারিরীক এবং মানসিক চাপ দূর করতে সাহায্য করে ৫। গ্যাস্ট্রিক অথবা আলসার রোগীদের জন্যে সাগর কলা প্রাকৃতিক এন্টাসিড হিসাবে কাজ করে থাকে।
খালি পেটে কলা খাওয়ার উপকারিতা
১। খালি পেটে কলা খেলে শরীর ডিটক্স করতে সাহায্য করে। শরীরে জমে থাকা টক্সিন সহজেই বেরিয়ে যায় ২। কলা পুষ্টিগুণে ভরপুর। খালি পেটে কলা খেলে সারাদিন শক্তি থাকে ৩। খালি পেটে কলা খেলে ওজন বাড়তে পারে ৪। খালি পেটে কলা খেলে হজম প্রক্রিয়ার উন্নতি ঘটে। গ্যাস, কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা সেরে যায়।
৫। কলায় রয়েছে ভিটামিন এ, ভিটামিন সি। এটি ইমিউন সিস্টেমকে শক্তিশালী করে তোলে ৬। কলাতে পটাশিয়াম থাকে। খালি পেটে কলা খাওয়া হার্টের জন্য ভালো ৭। খালি পেটে কলা খেলে শরীর সহজেই এতে উপস্থিত পুষ্টি শুষে নেয় ৮। খালি পেটে কলা খেলে মানসিক চাপ ও দুশ্চিন্তা কমে।
এছাড়াও সকালে খালি পেটে ঘি, মধু, দুধ এবং শুকনো ফল দিয়ে কলা খেতে পারেন। সকালে কলা খেলে সারাদিন শরীর সতেজ থাকে। শরীর প্রয়োজনীয় সব পুষ্টি পায়। আপনি যদি ইতিমধ্যেই কোনও ডায়েট প্ল্যান অনুসরণ করেন তবে অবশ্যই এটি গ্রহণ করার আগে বিশেষজ্ঞের মতামত নিন। এছাড়াও, আপনার ওজন বেশি হলেও বিশেষজ্ঞের পরামর্শ প্রয়োজন। কারণ কলা ওজন বাড়াতে পারে।
পাকা কলা খাওয়ার উপকারিতা
কলা খেতে কেইনা পছন্দ করেন বলেন। কলা সকলেই খেতে অনেক বেশি পছন্দ করেন। তবে হ্যাঁ দেখতে বেশি সুন্দর না হওয়ার কারণে অতিরিক্ত পাকা অর্থাৎ বেশি পাকা কলা খেতে অনেকেই অপছন্দ করেন না। যার ফলে সেই কলা জমা হয় ডাস্টবিনে।
তবে হ্যাঁ পুষ্টিবিদদের মতে, কলা বেশি পাকার ফলে তার পুষ্টিগুলো চেঞ্জ হয়ে যায়। তারমানে এই না যে অতিরিক্ত পাকা কলাটি তার পুষ্টিগুলো হারিয়ে ফেলছে। বরং অতিরিক্ত পাকার ফলে কলা আরো বেশি পুষ্টিগুণে ভরপুর হয়ে যায়।
আর হ্যাঁ এই তত্ত্বের সাথে একমত পোষণ করেছেন যুক্তরাষ্ট্র্যের করনেল ইউনিভার্সিটি কলেজ অব হিউম্যান ইকোলজি। অতিরিক্ত পাকা কলা ভিটামিন এবং মিনারেলে ভরপুর থাকে। নিম্নে পাকা কলা খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরা হলোঃ
কোষের ক্ষতি প্রতিরোধ করেঃ অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট থাকার কারণে অতিরিক্ত পাকা কলা ইন্টারনাল কোষ এবং রেডিক্যাল কোষের ফলে হওয়া ক্ষতি প্রতিরোধে সহায়তা করে। এতে করে রোগের ঝুঁকি হ্রাস পায়।
উচ্চ রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করেঃ অতিরিক্ত পাকা কলাতে উচ্চ পরিমাণ পটাশিয়াম থাকে এবং অল্প পরিমাণে সোডিয়াম থাকে। নিয়মিত পাকা কলা খেতে পারলে উচ্চ রক্তচাপ কমতে সহায়তা করে। এতে করে স্ট্রোক এবং হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি হ্রাস পায়।
রক্তস্বল্পতা প্রতিরোধ করেঃ কলায় আয়রন থাকার ফলে অতিরিক্ত পাকা কলা রক্তস্বল্পতা প্রতিরোধে সহায়তা করে।
দ্রুত শক্তি জোগায়ঃ কলাতে উচ্চ পরিমাণে কার্বোহাইড্রেট এবং সুগার থাকার ফলে বেশি পরিমাণে পাকা কলা শরীরে শক্তি জোগাতে সাহায্য করে। জেনে অবাক হবেন যে, দুটো পাকা কলা টানা ৯০ মিনিট ব্যায়াম করার শক্তি যুগিয়ে থাকে।
কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করেঃ কলাতে আঁশ থাকার ফলে এটি কোষ্ঠকাঠিন্যের মতো সমস্যা কমাতে সাহায্য করে। কলা হজম শক্তি ভালো করতে অনেক বেশী কার্যকর।
কলা খাওয়ার অপকারিতা
কলা খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা উভয়ই আছে, তবে কলা যে একটি উপকারী ফল তাতে কোনো সন্দেহ নেই, তবে এর অতিরিক্ত সেবনের ফলে নিম্নলিখিত সমস্যাগুলিও হতে পারে। নিচে জেনে নিন কলা খাওয়ার অপকারিতা।
অতিরিক্ত কলা খেলে কি কি সমস্যা হতে পারে সে সম্পর্কে সকল প্রশ্নের উত্তর আমাদের আজকের এই লেখায় সম্মিলিত ভাবে তুলে ধরা হয়েছে। তাই আজকের এই কলা খাওয়ার উপকারিতা এর লেখার এই অংশ থেকে দেখে নিন কলা খাওয়ার অপকারিতা গুলো কি কি।
বলা হয়ে থাকে যে, খুব বেশি কিছু ভালো নয়। একইভাবে বেশি করে কলা খেলেও আমাদের স্বাস্থ্যের ওপর খারাপ প্রভাব ফেলতে পারে। বেশি করে কলা খেলে পেটে ভারি ভাব থাকবে, অলসতা অনুভূত হতে থাকবে। যাদের কাফা প্রবণতা রয়েছে তাদের কলা খাওয়া উচিত নয়। আর যদি কখনো খান, তাহলে শুধু সম্পূর্ণ পাকা কলা খান।
খালিপেটে কলা খেলে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা বেড়ে যাবে। কলায় স্টার্চ থাকে, যার কারণে এটি অতিরিক্ত খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য হতে পারে। আপনি যদি চরম লেভেলের ডায়াবেটিস রোগী হয়ে থাকেন তাহলে আপনি একেবারে পাকা কলা খাবেন না। কেননা এটি খাওয়ার ফলে আপনার সুগার লেভেল বিপদমাত্রা অতিক্রম করে যাবে।
বেশি পরিমাণে কলা খেলে ওজন বেড়ে যায়, মাইগ্রেনের সমস্যা, দাঁতের ক্ষয়, স্নায়ুর ক্ষতি, শ্বাসকষ্ট, পেটে ব্যথা, গ্যাসের সমস্যা হতে পারে। বেশি মাত্রায় কলা খেলে শরীরে উচ্চ মাত্রার ম্যাগনেশিয়ামের ভারসাম্যহীনতা দেখা দেয় ফলে হার্টের রোগ হতে পারে। যদি আপনার মাইগ্রেনের সমস্যা থেকে থাকে তবে আপনার কলা না খাওয়াই ভালো হবে। কেননা কলাতে টাইরামাইন নামের এক প্রকার উপাদান থাকে যেটি মাইগ্রেনের অন্যতম কারণ হিসেবে ধরা হয়।
আপনি যদি অতিরিক্ত পরিমাণে পাকা কলা না খান, তাহলে আপনার পেটে প্রচণ্ড ব্যথার সম্মুখীন হতে পারেন। আপনার পেটে ব্যথার সাথে বমি বমি ভাবও অনুভব করতে পারেন।
কলাতে থাকা উচ্চ পরিমাণে কার্বোহাইড্রেট এবং ট্রিপটোফেন থাকে। এটি একজন ব্যক্তির ঘুমকে আরো বেশি বৃদ্ধি করে দিতে পারে। এমন পরিস্থিতিতে বেশি কলা খেয়ে গাড়ি চালানোর কারণে দুর্ঘটনার আশঙ্কা থাকে।
অ্যাল-কোহল পান করার পর কলা খেলে মাথাব্যথা হতে পারে। কিছু লোকের কলা সেবনে অ্যালার্জি হতে পারে। অত্যধিক ফাইবার শরীরে আয়রন, জিঙ্ক, ম্যাগনেসিয়াম এবং ক্যালসিয়ামের শোষণকে বাধাগ্রস্ত করতে পারে। প্রকৃতপক্ষে, কলায় ফাইবার থাকে, তাই এর অত্যধিক সেবনের কারণে এই অবস্থা দেখা দিতে পারে।
কলা পটাশিয়ামেরও ভালো উৎস। এমন অবস্থায় কেউ যদি পটাসিয়াম সাপ্লিমেন্টের সাথে অতিরিক্ত পরিমাণে কলা খায়, তাহলে তার শরীরে অতিরিক্ত পটাসিয়াম (হাইপারক্যালেমিয়া) হতে পারে। কলা আঁশের একটি বড় উৎস এবং অত্যধিক ফাইবার খাওয়ার ফলে গ্যাস, পেট ফাঁপা এবং পেট ফাঁপা হতে পারে।
যদি আপনার কিডনি ঠিকমতো কাজ না করে, তাহলে কলা খাওয়া কমিয়ে দিন। ডায়েটে অত্যধিক পটাসিয়াম আপনার কিডনিতে আরও রক্ত পাম্প করতে এবং আরও চাপ দিতে পারে। যা পরবর্তীতে খুব বিপজ্জনক হতে পারে। যাঁদের শ্বাসযন্ত্রের সমস্যা রয়েছে তারা বেশি পরিমাণে কলা খেলে তা বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
যাদের শরীরে পটাসিয়াম লেভেলের পরিমাণ বেশি আছে তাদের সকলের কলার খাওয়ার অপকারিতা সম্পর্কে ভালোভাবে জেনে রাখা উচিৎ। কেননা কলাতে থাকা পটাশিয়াম দেহের পটাশিয়াম লেভেলকে আরও বেশি বৃদ্ধি করে দিবে যার ফলে হাইপারক্যালিমিয়া রোগের সৃষ্টি হবে।
ফলাফলস্বরূপ দেখা দিবে পেশির খিঁচুনি, কিডনি জটিলতা, মাথা ব্যাথা ও মাথা ঘুরতে থাকে, হৃৎপিণ্ডের স্পন্দন অনিয়মিত হওয়ার মতো আরো বিভিন্ন সমস্যা দেখা জেতে পারে।
যদিও আমরা আপনাকে কলা খাওয়ার অপকারিতা সম্পর্কে কথা বলছি, তবুও এটা অস্বীকার করা যাবে না যে সঠিক পরিমাণে খাওয়া হলে কলা আপনার স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী হতে পারে।
কলা স্বাস্থ্যের জন্য ভালো এবং শরীরে তাৎক্ষণিক শক্তি জোগায়। এই কারণে যারা শারীরিক কার্যকলাপ করেন তারা এটি বেশি গ্রহণ করেন। যাইহোক, এই ফলটি সবার জন্য উপকারী, তাই আপনি এটিকে আপনার ডায়েটের অংশও করতে পারেন। কারো যদি কোনো গুরুতর রোগ থাকে বা কোনো ওষুধ সেবন করে থাকেন তাহলে ডায়েটে কলা অন্তর্ভুক্ত করার আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে পারেন।
উন্নত জাতের কলার নাম
বারি কলা -১, বারি কলা -২ এবং বারি কলা -৩, বারি কলা – ৪। সারা বছরই চাষ করা যায়। তাছাড়া কিছু স্থানীয় জাত যেমন সবরি, বিচি কলা, আনাজি কলা, মিহের সাগর উল্লেখযোগ্য।
সম্পূর্ণ বীজমুক্ত কলাঃ যেমন- সবরি, অমৃতসাগর, অগ্নিশ্বর, দুধসর, দুধসাগর প্রভৃতি।
দু-একটি বীজযুক্ত কলাঃ যেমন-চাম্পা, চিনিচাম্পা, কবরী, চন্দন কবরী, জাবকাঠালী ইত্যাদি।
বীজযুক্ত কলাঃ এটেকলা যেমন- বতুর আইটা, গোমা, সাংগী আইটা ইত্যাদি।
আনাজী কলাসমুহঃ যেমন- ভেড়ার ভোগ, চোয়াল পউশ, বর ভাগনে, বেহুলা, মন্দিরা, বিয়েরবাতি প্রভৃতি।
শেষ কথা - কলা খাওয়ার উপকারিতা
কলা খাওয়ার উপকারিতা ও উপকারিতা সম্পর্কে আলোচনা করলাম। এখন কলার প্রতি আপনার দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন করুন এবং এটি আপনার দৈনন্দিন খাদ্যতালিকায় অন্তর্ভুক্ত করুন। আমাদের দেশে কলা সহজলভ্য, এটি অন্যান্য ফলের মতো দামি নয়। সবাই সহজেই কিনে খেতে পারেন।
কলা খাওয়ার উপকারিতা এবং কলা খাওয়ার অপকারিতা সম্পর্কে লেখাটি আপনার কাছে কেমন লেগেছে তা কমেন্ট করে আমাদেরকে জানিয়ে দিন। কলা খাওয়ার উপকারিতা লেখাটি শেষ পর্যন্ত মনোযোগ সহকারে পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।
বিশেষ দ্রষ্টব্যঃ আজকের এই কলা খাওয়ার উপকারিতা আর্টিকেলে উল্লিখিত পরামর্শগুলি শুধুমাত্র সাধারণ তথ্যের উদ্দেশ্যে এবং প্রফেশনাল চিকিৎসা পরামর্শ হিসাবে নেওয়া উচিত নয়। আপনার কোন প্রশ্ন বা উদ্বেগ থাকলে সর্বদা আপনার ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করুন।
আর্টিকেল সম্পর্কিত তথ্য জানতে কমেন্ট করুন। আপনার প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।