কিভাবে বিদেশে যাওয়া যায় - বিদেশ যাওয়ার প্রয়োজনীয় কাগজ, প্রশিক্ষণ এবং খরচ - কিভাবে বিদেশে যাওয়া যায় বা বিদেশ যাওয়ার উপায় এই বাক্যটি বাংলাদেশ থেকে প্রতিদিন গড়ে দুই থেকে তিন হাজার লোক সার্চ করেন। যারা বিদেশ যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে বা চিন্তা-ভাবনা করছে তাদের কাছে খুবই পরিচিত একটি বাক্য এটি।
সূচীপত্রঃ কিভাবে বিদেশে যাওয়া যায়
সরকারের তথ্য মতে প্রতিবছর গড়ে ১০ থেকে ১৫ লাখ লোক বিভিন্ন ভাবে শ্রমবাজারে প্রবেশ করে। এদের মধ্যে পাঁচ থেকে ছয় লক্ষ লোকের প্রতিবছর কর্মসংস্থান হচ্ছে বিদেশে। বিএমইটির তথ্য মতে প্রতিদিন গড়ে ২ থেকে ২.৫০ হাজার বাংলাদেশী চাকরী নিয়ে বিদেশে যাচ্ছে।
পৃথিবীর এমন কোন দেশ খুঁজে পাওয়া যাবে না যেখানে বাংলাদেশীরা নেই। লেখাপড়া বা স্থায়ীভাবে বসবাস করতে গেলেও বেশীরভাগ বাংলাদেশী গিয়েছেন কাজ বা চাকরি নিয়ে।
বাংলাদেশের প্রায় ১ কোটির ২৫ লক্ষ মানুষ বিদেশে অবস্থান করছে। মানুষ বিদেশে যান নিজের ভাগ্যের চাকা পরিবর্তন করতে এবং দেশের অর্থনীতির চাকা সচল করতে। অনেকেই কিভাবে বিদেশে যাওয়া যায় বা বিদেশ যাওয়ার উপায় না জেনে বিদেশ যাওয়ার আগে এবং বিদেশ যাওয়ার পরে অনেকেই ভুল করেন।
তাই নিরাপদে বিদেশ যাওয়ার উপায় বা কিভাবে বিদেশে যাওয়া যায় তা নিয়ে আজকে আলোচনা করবো। যা আপনাকে নিরাপদে বিদেশ যেতে সাহায্য করবে। কিভাবে বিদেশে যাওয়া যায় তা জানা না থাকলে আপনি প্রতারণার শিকার কিংবা বিপদে পড়ার আশংকা থেকে যাবে।
আপনি যদি নিরাপদে বিদেশে যেতে চান তাহলে বিদেশ যাওয়ার উপায় জেনে যান। এবং আপনাকে কিছু জিনিস জানতে হবে। তাহলোঃ
১। সরকারের কোন বৈধ প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে আপনি বিদেশে যাচ্ছেন কিনা?
২। যে কাজের জন্য যাচ্ছেন সেই কাজে দক্ষ কিনা?
৩। কত টাকা বেতনে বিদেশে যাচ্ছেন? কাজ করে বেতন নিয়ে খরচের টাকা তুলে আনতে পারবেন কিনা? এই গুলো হলো বিদেশ যাওয়ার উপায়ের অন্যতম উপাদান।
নিম্নে কিভাবে বিদেশে যাওয়া যায় এবং বিদেশ যাওয়ার উপায় ও বিদেশ যাওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় কাগজ, প্রশিক্ষণ এবং বিদেশ যাওয়ার খরচ নিয়ে আলোচনা করা হলো।
সরকারি ভাবে বিদেশ যাওয়ার উপায়
সরকারি ভাবে বিদেশ যাওয়ার অনেক উপায় রয়েছে এর মধ্যে আপনি শ্রমিক হিসেবে যেতে পারেন, চাকরি প্রার্থী হিসেবে অথবা স্কলারশিপ নিয়ে সরকারি খরচে শিক্ষার্থী হিসেবে বিদেশে যেতে পারেন। অথবা শুধু ভ্রমনের উদ্দেশ্যে বিদেশে যেতে পারেন।
- শ্রমিক
- চাকরি প্রার্থী
- শিক্ষার্থী
- ভ্রমনকারী
কিভাবে বিদেশে যাওয়া যায় ১ম ধাপ কোথায় যাবেন, কোন দেশে যাবেন
বিদেশ যাওয়ার উপায় বা কিভাবে বিদেশে যাওয়া যায় তার প্রথম ধাপ হচ্ছে আপনি কোথায় যাবেন, কোন দেশে যাবেন। বাংলাদেশের একটি বড় অংশ হঠাৎ করে বিদেশ যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। অনেকে মনে করেন বিদেশে যেতে পারলেই হলো, আর কোন সমস্যা থাকবে না পরিবর্তন আসবে ভাগ্যের চাকা।
কিন্তু বিষয়টি এত সহজ নয়। তাই বিদেশ যাওয়ার আগে ভালোভাবে চিন্তাভাবনা করতে হবে। প্রথমে চিন্তা করতে হবে আপনি কোনো কাজ জানেন কিনা বা আপনি কোন কাজে অভিজ্ঞ।
এরপর ভাবুন আপনি কোন দেশে যাবেন এবং ঐ দেশে আপনার কাজের মূল্য কি রকম মানে আপনি যে কাজ নিয়ে যাবেন ঐ কাজের বেতন কেমন।
আপনি যে টাকা খরচ করে বিদেশে যাচ্ছেন যাওয়ার পর আপনার বেতন, আপনার নিজের খরচ, আপনার বিনিয়োগ দিয়ে আপনার লাভ থাকবে কিনা বা আপনার খরচের টাকা উঠে আসবে কিনা।
তাছাড়া যে দেশে শ্রমিক বেশী সে দেশে বেতন কম। নির্দিষ্ট কিছু দেশ রয়েছে যে বাংলাদেশী শ্রমিকের সংখ্যা অনেক বেশী যেমন মধ্যপ্রাচ্য। এছাড়া মরিশাস, লেবানন, জর্ডান, দক্ষিন কোরিয়া, ব্রুনেই, ইতালি, গ্রিস, ব্রিটেন, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশে মানুষ কাজের জন্য যাচ্ছেন। এসব দেশে শ্রম বাজার ভালো। তাই আপনি কোন দেশে যাবেন আগে ভেবে নিন তার পর যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করুন।
আরো পড়ুনঃ সরকারিভাবে কানাডা যাওয়ার উপায়
২য় ধাপ প্রশিক্ষণ কিভাবে বিদেশে যাওয়া যায়
কিভাবে বিদেশে যাওয়া যায় বা বিদেশ যাওয়ার উপায় ২য় ধাপ কাজের প্রশিক্ষণ। আপনি যে দেশে যাওয়ার জন্য সিদ্ধান্ত নিয়েছেন উক্ত দেশে যে কাজের শ্রম বাজার বা বেতন সবচেয়ে ভালো এবং অন্যান্য সুযোগ সুবিধা রয়েছে আপনি সে কাজের প্রশিক্ষণ গ্রহন করে নিজেকে একজন দক্ষ কর্মী হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করুন।
দক্ষ কর্মীর মূল্যায়ন দেশে এবং দেশের বাহিরে সব জায়গায় রয়েছে। বিভিন্ন ট্রেডে প্রশিক্ষণ নেয়ার জন্য বাংলাদেশে অনেক প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান রয়েছে। যেমন বায়রা, জেলা প্রশাসকের কার্যালয়, জনশক্তি রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান বোয়েসের এবং বাংলাদেশের প্রতিটি বিভাগীয় শহর, জেলা শহরে কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র রয়েছে।
বাংলাদেশ জার্মান টেকনিক্যাল ট্রেনিং সেন্টার, বাংলাদেশ কোরিয়া টেকনিক্যাল ট্রেনিং সেন্টার এ ২টি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র প্রতিটি বিভাগীয় শহরে রয়েছে। এসব প্রশিক্ষণ কেন্দ্র হতে আপনি যেকোনো একটি ট্রেডের প্রশিক্ষণ নিয়ে দক্ষ হয়ে বিদেশে গিয়ে ভালো অবস্থান তৈরি করতে পারবেন।
বিদেশ যাওয়ার উপায় ৩য় ধাপ পাসপোর্ট তৈরি
বিদেশ যাওয়ার উপায় ৩য় ধাপ হচ্ছে পাসপোর্ট। পাসপোর্ট হচ্ছে সরকারের দেওয়া বৈধ জাতীয়তার পরিচিতিপত্র। যার মাধ্যমে আপনি দেশের বাইরে যাবার অনুমতি পাবেন। যে দেশেই যেতে চান, প্রথমেই আপনার প্রয়োজন হবে নিজের পাসপোর্ট। আর পাসপোর্ট এর আবেদন ফরম পাওয়া যাবে পাসপোর্ট অফিস অথবা ওয়েবসাইটে।
বর্তমানে মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট চালু হয়েছে। মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট পাওয়ার প্রক্রিয়া অনেক সহজ। কোন দালালের সহায়তা না নিয়ে সরাসরি আপনার নিজ জেলার অথবা ঢাকা পাসপোর্ট অফিসে যেগাযোগ করুন।
৪র্থ ধাপ কাজের চুক্তিপত্র ও ওয়ার্ক পারমিট
বিদেশে কাজের জন্য যেতে হলে অবশ্যই কোন কোম্পানির সাথে আপনার কাজের চুক্তিপত্র বা জব কন্ট্রাক্ট করতে হবে বা থাকতে হবে। এই জব কন্ট্রাক্টে আপনার বেতন-ভাতা, ছুটিসহ কোম্পানির সকল সুযোগ-সুবিধা, কোম্পানির নিয়ম-নীতি উল্লেখ থাকবে।
বিদেশ যাওয়ার পূর্বে চাকরির চুক্তিপত্র ভালোভাবে জেনে যাবেন। এছাড়া আপনার ওয়ার্ক পারমিটটি ভালোভাবে যাচাই করুন। ওয়ার্ক পারমিট হচ্ছে নির্দিষ্ট দেশে নির্দিষ্ট সময় বা মেয়াদ পযর্ন্ত কাজ করার অনুমতিপত্র।
৫ম ধাপ ভিসা
ভিসা হচ্ছে কোন দেশের ইমিগ্রেশন থেকে সেদেশে যাওয়ার অুনমতিপত্র। ভিসা ছাড়া আপনি কোনো দেশে বৈধভাবে প্রবেশ করা যায় না। ভিসা ছাড়া কেউ বিদেশ যাওয়ার চেষ্টা করলে বা প্রবেশ করলে অবৈধ অনুপ্রবেশ এর দায়ে অভিযুক্ত হবেন অথবা আটক হবেন।
ভিসা আপনি রিক্রটিং এজেন্সি বা আপনার পরিচত জনদের কাছ থেকে সংগ্রহ করুন না কেন তা বৈধ কিনা যাচাই করুন। ভিসা যাচাইয়ের জন্য বাংলাদেশে অবস্থিত সে দেশের দূতাবাস কিংবা বিএমইটিতে খোঁজ নিতে পারেন।
আরো পড়ুনঃ বাংলাদেশ সরকার অনুমোদিত ট্রাভেল এজেন্সি
৬ষ্ঠ ধাপ মেডিকেল সনদ
আপনি যে দেশে যেতে ইচ্ছুক সে দেশের চাহিদা অনুযায়ী মেডিকেল সনদ নিতে হবে। দূতাবাস কর্তৃক নির্ধারিত ক্লিনিকে মেডিকেল পরীক্ষা করতে হবে।
৭ম ধাপ বিমানের টিকেট
বিদেশ যাওয়ার জন্য অবশ্যই বিমানের টিকেট লাগবে। বিমানের টিকেটে প্লেন ছাড়ার সময় ও এয়ারপোর্টে পৌছানোর সময় উল্লেখ থাকে। টিকেটের সময়সূচি সঠিকভাবে বুঝে নিন। পথে কোথাও ট্রানজিট আছে কিনা সেটিও ভালোভাবে জেনে নিন।
৮ম ধাপ ব্যাংক একাউন্ট খোলা
বিদেশ যাওয়ার সকল বিষয় চূড়ান্ত হয়ে গেলে প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকে অথবা আপনার সুবিধাজনক কোন বাণিজ্যিক ব্যাংকে ২টি হিসাব খুলুন। একটি নিজের নামে অপরটি আপনার পরিবারের নামে হিসাব খুলুন। টাকার প্রয়োজন হলে প্রবাসী ব্যাংক হতে শতকরা ৯% সুদে লোন গ্রহন করতে পারেন। বিদেশ থেকে অর্থ ব্যাংকের মাধ্যমে প্রেরণ করুন। দালাল বা হুন্ডির মাধ্যমে প্রেরন করবেন না।
বিদেশ যাওয়ার উপায় সর্বশেষ ধাপ – যাওয়ার পূর্ব মুহুর্তে করণীয়
বিদেশ যাওয়ার পূর্বে আপনাকে আপনার নিজস্ব কাগজপত্র ঠিক রাখতে হবে। আপনার ভিসা, সিলসহ পাসপোর্ট, মেডিকেল সনদ, বিএমইটির বহির্গমন ছাড়পত্র, স্মার্ট কার্ড, ওয়ার্ক পারমিট, চুক্তিপত্র অবশ্যই দেখে নিন। কোন প্রকার ভুল থাকলে শুধরে নিন।
সর্বশেষ বলতে চাই বিদেশ যাওয়ার জন্য নিজেকে শারীরিক ভাবে ফিট রাখতে হবে। কাজের দক্ষতা অর্জন করতে হবে। টাকার ব্যবস্থা গ্রহন করতে হবে। মূল্যবান সম্পদ বিক্রির প্রয়োজন হলে সময় নিয়ে কাজ করুন।
যে পরিমান ব্যয় করছেন সে পরিমান আয় করতে পারবেন কিনা বিবেচনা করুন। আপনি যদি মনে করেন দেশেই আপনার পক্ষে কিছু করা সম্ভব তাহলে সুযোগ থাকলে সেটি গ্রহণ করুন। আপনার অনুপস্থিতে আপনার পরিবারের কোনো সমস্যা হবে কিনা বিবেচনা করুন।
আশা করি বিদেশ যাওয়ার উপায় বা কিভাবে বিদেশে যাওয়া যায় গুলি নিয়ে যে আলোচনা করা হয়েছে তা যদি একজন কর্মী বা বিদেশ গমনে ইচ্ছুকপার্থী জানা থাকে তাহলে তার বিদেশ যাওয়া সহজতর হবে।
আর্টিকেল সম্পর্কিত তথ্য জানতে কমেন্ট করুন। আপনার প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।