বুলগেরিয়া গার্মেন্টস ভিসা - বুলগেরিয়ার সংক্ষিপ্ত ইতিহাস - বুলগেরিয়া গার্মেন্টস ভিসা বা বুলগেরিয়া কাজের ভিসা যায় বলি না কেন উক্ত বিষয় নিয়ে আলোচনার আগে জেনে নেই বুলগেরিয়া দেশটি সম্পর্কে।
সূচীপত্রঃ বুলগেরিয়া গার্মেন্টস ভিসা
বুলগেরিয়া ইউরোপ মহাদেশে অবস্থিত অন্যতম প্রাচীনতম একটি দেশ যে দেশে প্রস্তরযুগের মানব সভ্যতার নিদর্শন পাওয়া গেছে। বুলগেরিয়ার আয়তন প্রায় ৪২,৮৫৫ বর্গমাইল। এই দেশে ইউরোপ মহাদেশের পূর্ব এবং পশ্চিমভাগের সংস্কৃতির মেলাবন্ধন খুঁজে পাওয়া যায়।
বুলগেরিয়ার রাজধানী সোফিয়া। সোফিয়া শব্দটি এসেছে গ্রীক পুরান থেকে যার অর্থ জ্ঞানের দেবী।বুলগেরিয়ার জাতীয় মুদ্রাকে বলা হয় লেভ। ১ বুলগেরিয়া লেভ = বাংলাদেশী টাকায় ৫২.৩১ টাকা এবং ১ বুলগেরিয়া লেভ=০.৫১ ইউরো।
বুলগেরিয়া দেশটির সরকার প্রধান প্রধানমন্ত্রী। বুলগেরিয়া দেশটির উত্তরে রোমানিয়া, দক্ষিণে গ্রিস এবং তুরস্ক,পূর্বে ব্ল্যাক-সি ও পশ্চিমে মেসিডোনিয়া দ্বারা পরিবেষ্টিত।
১ম ও ২য় বিশ্বযুদ্ধের পর ১৯৪৬ সাল থেকে ১৯৯০ সাল পযর্ন্ত প্রায় ৪৫ বছর কমিউনিস্ট শাসনের অধীন ছিলো। ১৯৯০ সালের ১৫ই নভেম্বর সাংবিধানিক আধুনিক বুলগেরিয়া রাষ্ট্রের সৃষ্টি হয়। আন্তর্জাতিক মানব উন্নয়ন সূচকে বুলগেরিয়ার বর্তমান অবস্থান ৫৬ তম। বর্তমানে বুলগেরিয়ার জনসংখ্যা ৭.১ মিলিয়নের কিছু বেশি।
বুলগেরিয়ার মোট জনসংখ্যার ৭৮% জনগোষ্ঠী খ্রিস্টান এবং ১৮% জনগোষ্ঠীর ধর্ম ইসলাম। দেশটির শিক্ষিতের হার ৯৮.৬ ভাগ। বুলগেরিয়ার জনপ্রিয় খেলা ফুটবল।
১৯৯৪ সালে অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপ ফুটবল টুর্নামেন্টে বুলগেরিয়া কোয়ার্টার ফাইনালে শক্তিশালী জার্মানিকে হারিয়ে সেমি-ফাইনাল খেলার যোগ্যতা অর্জন করেছিলো। একই বছর ব্যালন ডি’আর জেতা ফুটবলার হ্রিস্ট্রো স্টোইচ কোভ একজন বুলগেরিয়ান।
পুর্ব ইউরোপের মধ্যে সবচেয়ে স্থিতিশীল মুদ্রা হচ্ছে বুলগেরিয়ার লেভ এবং বর্তমানে ইউরোপ তথা সারা বিশ্বে দ্রুত অগ্রসর হওয়া অর্থনীতিগুলোর মধ্যে একটি হচ্ছে বুলগেরিয়ার অর্থনীতি।
বুলগেরিয়ার অর্থনীতে হচ্ছে মুক্ত বাজার অর্থনীতি। বিশ্ব ব্যাংকের তথ্য অনূযায়ী বুলগেরিয়া হচ্ছে শিল্পায়িত উচ্চ-আয়ের দেশ। বুলগেরিয়া ই.ইউ, ওএসসিই, বিএসইসি এর সদস্যভুক্ত দেশ।
বুলগেরিয়ার অর্থনীতি ১৩.১৫ বিলিয়ন ডলার থেকে শুরু করে উল্লেখযোগ্য প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে। মোট দেশীয় পণ্য-জিডিপি-৬৭.৯ বিলিয়ন ডলার (২০১৯) বা ১১৭১.৮৫ বিলিয়ন (পিপিপি,২০১৯ প্রায়)।
বুলগেরিয়ার মাথাপিছু আয় ২৪৫৯৫ ডলার(পিপিপি-২০১৯ ইস্ট)। কোন কর্মীর গড় মাসিক বেতন ১৩৪৯ লেভ বা ৬৯০ ইউরো যা বাংলাদেশী টাকায় প্রায় ৭০ হাজার টাকা।
আরো পড়ুনঃ সৌদি আরবে কোন কাজের চাহিদা বেশি
বুলগেরিয়া গার্মেন্টস ভিসা
আমি বুলগেরিয়ার সংক্ষিপ্ত বর্ণনা দিয়েছি। বুলগেরিয়া ইউরোপের একটি উন্নত রাষ্ট্র এখানে বিভিন্ন সাইটে, কারখানায় বা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কাজের সুযোগ তৈরী হয়েছে। বর্তমানে বুলগেরিয়ার বিভিন্ন গার্মেন্টস প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন দেশে থেকে দক্ষ এবং কমদক্ষ উভয়কর্মী নিয়োগ দিচ্ছে।
বাংলাদেশ থেকে পূর্বে অনেক দক্ষ গার্মেন্টস কর্মী বুলগেরিয়া কাজের জন্য গিয়েছে। বর্তমানে নতুন ভাবে বুলগেরিয়ায় গার্মেন্টস কর্মী পেশায় লোক নেয়া শুরু হয়েছে।
তাই যারা একজন পেশাদার গার্মেন্টস কর্মী রয়েছেন তারা খুব সহজেই কিছু প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ করে বুলগেরিয়ায় গার্মেন্টস কর্মী কাজের ভিসা নিয়ে যেতে পারবেন এবং গার্মেন্টস কর্মী হিসাবে কোন প্রতিষ্ঠানে কাজ করে দেশের জন্য বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করতে পারবেন।
বুলগেরিয়া উন্নত দেশ হওয়ায় এখানে দক্ষ কর্মীদের সুযোগ সুবিধা বেশি। এই আর্টিকেলে বুলগেরিয়ায় গার্মেন্টস ভিসা নিয়ে যাওয়ার বিভিন্ন বিষয় নিযে আলোচনা করা হয়েছে।
বুলগেরিয়ার বিভিন্ন গার্মেন্টস শিল্পপ্রতিষ্ঠানে দক্ষ কর্মী নিয়োগ দেয়ার জন্য নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে। (বায়েসেল) বাংলাদেশ প্রবাসী কল্যাণ ভবন এবং বিএমআইটি মাধ্যমে বুলগেরিয়ায় গার্মেন্টস ভিসার মাধ্যমে বাংলাদেশের যেকোনো গার্মেন্টস কর্মী বুলগেরিয়া যেতে পারবে। একজন দক্ষ গার্মেন্টস কর্মীর ক্ষেত্র বিশেষে বেতন ৩৫ হাজার থেকে শুরু করে ৬০ হাজার টাকা পযর্ন্ত হতে পারে।
একজন দক্ষ কর্মী হিসাবে বুলগেরিয়ায় উচ্চ বেতনের জন্য প্রয়োজনীয় রিকোয়ারমেন্ট অনুযায়ী আপনাকে ভিসার জন্য আবেদন করতে হবে। আপনাকে গার্মেন্টস কর্মী হিসাবে নির্দিষ্ট কোন কাজে নিয়োজিত থাকতে হবে এবং কর্মীর বয়স ২৫ বছর থেকে ৪৫ বছরের মধ্যে হতে হবে। কর্মী পদে বর্তমান প্রতিষ্ঠানের প্রত্যয়নপত্র বিবেচনা করা হবে।
আরো পড়ুনঃ কুয়েত কোন কাজের চাহিদা বেশি
বুলগেরিয়ায় গার্মেন্টস প্রতিষ্ঠানে কি কি পদে কর্মী নিয়োগ করা হবে
বুলগেরিয়া গার্মেন্টস শিল্প প্রতিষ্ঠানে সুইং সুপারভাইজার, সুইং অপারেটর, আয়রন ম্যান, কোয়ালিটি কন্ট্রোলার স্পেলারিস্ট এই সমস্ত ক্যাটাগরিতে গার্মেন্টস ভিসার আওতায় নিয়োগ দেবে। এসব পদে নিয়োগ লাভের জন্য কর্মীর বয়স ২৫ থেকে ৪৫ বছর মধ্যে হতে হবে।
এই সমস্ত পদে কাজে নিয়োগ লাভের জন্য অবশ্যই অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। যে সব কর্মীর বয়স ২৫ থেকে ৪৫ এর মধ্যে এবং উল্লেকিত পদের কাজের অভিজ্ঞতা আছে তারা বোয়েসেল অথবা বিএমআইটি মাধ্যমে পরীক্ষা দিয়ে ভিসার জন্য আবেদন করতে পারবেন। এবং ২০২২ এর আগষ্ট এর নতুন নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে শুধুমাত্র মহিলাদের গার্মেন্টস ভিসায় যাওয়ার সুযোগ রয়েছে।
একজন কর্মীর বুলগেরিয়ায় গার্মেন্টস ভিসায় যেতে কি পরিমাণ অর্থ ব্যয় হবে
বাংলাদেশের একজন কর্মীর সরকারি ভাবে বুলগেরিয়ায় গার্মেন্টস ভিসায় যাওয়ার জন্য জনপ্রতি খরচ পড়বে ৫২ হাজার ৭০০ টাকা। অন্যান্য আনুষঙ্গিক খরচসহ বিমান ভাড়া সহ কিছু কিছু ব্যয় কোম্পানি বহন করবে।
থাকা এবং খাওয়ার ব্যবস্থা ইত্যাদি বিষয় কোম্পানির সাতে আলোচনা করে জানা যাবে বা বিএমইটির ওয়েবসাইটে অথবা নোটিশ বোর্ডে বিস্তারিত দেওয়া আছে।
নতুন বিজ্ঞপ্তি মাধ্যমে জানানো হয়েছে থাকার জন্য রুম দেয়া হবে তবে রুমের বিদ্যুৎ বিল, পানির বিল নিজে বহন করতে হবে। এছাড়া চাকরিরত অবস্থায় কোন সমস্যা হলে বুলগেরিয়ার আইন ও নিয়ম অনুযায়ী কর্মীদের সহায়তা দেয়া হবে। বুলগেরিয়াতে অন্যান্য দেশের তুলনায় সুযোগ-সুবিধা বেশি রয়েছে।
বুলগেরিয়ায় গার্মেন্টস ভিসায় আবেদন করার নিয়ম
আপনার যদি গার্মেন্টসের উল্লেখিত পদে অভিজ্ঞতা বা দক্ষতা থাকে তাহলে আপনি বাংলাদেশের বিএমইটি অথবা বোয়েসেল (প্রবাসী কল্যান ভবন) এর সহায়তায় ভিসার জন্য আবেদন করতে পারবেন।
অভিজ্ঞতা সহ প্রয়োজনীয় কাগজপত্র যা প্রয়োজন সে সকল কাগজপত্রাদি নিয়ে বাংলাদেশের এই ২ টি প্রতিষ্ঠানে সরকারি ভাবে গার্মেন্টস ভিসার জন্য আবেদন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে পারবেন।
গার্মেন্টস ভিসার জন্য আবেদন করতে হলে আপনার প্রয়োজনীয় কাগজপত্র আপনার এলাকার চেয়ারম্যান কর্তৃক সত্যায়িত করতে হবে। আপনার বাবা-মায়ের একটি অনুমোদিত পত্র।
বুলগেরিয়ায় ভিসার জন্য কি কি কাগজপত্র প্রয়োজন। বুলগেরিয়া ভিসার জন্য নিন্মোক্ত কাগজপত্র প্রয়োজনঃ
২। আপনার পাসপোর্ট এর মেয়াদ নূন্যতম ৬ মাস থাকতে হবে।
৩। আপনার সদ্য তোলা পাসপোর্ট সাইজের ৪ কপি ছবি।
৪। আপনার জাতীয় পরিচয়পত্র/এনআইডি কার্ডের সত্যায়িত ফটোকপি।
৫। বাবা-মায়ের এনআইডি কার্ডের সত্যায়িত ফটোকপি।
৬। এলাকার চেয়ারম্যান কর্তৃক স্বাক্ষরিত সনদপত্র।
৭। গার্মেন্টসে যে কাজের জন্য অভিজ্ঞ তার প্রমানপত্র।
৮। বর্তমানে কোন প্রতিষ্ঠানে কাজে নিয়োজিত আছেন তার প্রমানক।
৯। পূর্বে কাজের অভিজ্ঞতা থাকলে তার প্রমানক।
আপনাকে ভিসার পরীক্ষা/ইন্টারভিউ এর জন্য ডাকা হবে তখন আপনার উপরোক্ত সকল কাগজপত্র সাথে নিয়ে যেতে হবে। আপনার সকল কাগজাদি সঠিক এবং নির্ভুল রাখবেন কারন কাগজপত্রে কোন প্রকার ভুল পাওয়া গেলে আপনার ভিসা পাওয়ার পরীক্ষায় উর্ত্তীণ হতে পারবেন না। তাই অবশ্যই আপনার সকল কাগজপত্র সঠিক রাখবেন।
বুলগেরিয়ায় একজন দক্ষ গার্মেন্টস কর্মীর বেতন ক্ষেত্র বিশেষে ৩৫ হাজার থেকে ৫২ হাজার টাকা। এছাড়া কিছু কাজের জন্য আলোচনার মাধ্যমে বেতন নির্ধারন করা হয়। কর্মীদের যাতায়াত খরচ সহ থাকার খরচের ব্যবস্থা কোম্পানি বহন করবে।
বিঃদ্র
শুধুমাত্র বোয়েসেল অথবা এমআইটির মাধ্যমেই সরকারি খরচে ভিসা এবং চাকরির বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে। বাংলাদেশের অনেক বেসরকারি কোম্পানির মাধ্যমে ভিসা প্রক্রিয়া করতে পারবে সে ক্ষেত্রে ভালোভাবে জেনে নিবেন আর বেসরকারিভাবে আপনার খরচ বেশী হবে।
কোন দালালের মাধ্যমে কাজ হবে না। দালালের মাধ্যম এড়িযে চলবেন। এ জন্য শুধুমাত্র বোয়েসেল অথবা এমআইটি এর মাধ্যমে বুলগেরিয়াতে গার্মেন্টস ভিসায় যেতে পারবেন। আশাকরি সকলে বুলগেরিয়া গার্মেন্টস ভিসা সম্পর্কিত লেখাটি পড়ে সহজে পরিকল্পনা করতে পারবেন।
আর্টিকেল সম্পর্কিত তথ্য জানতে কমেন্ট করুন। আপনার প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।