কিভাবে গার্মেন্টস ব্যবসা শুরু করব - প্রিয় পাঠক, আপনি কি কিভাবে গার্মেন্টস ব্যবসা শুরু করব এই কথা ভাবছেন? কিন্তু কিভাবে গার্মেন্টস ব্যবসা শুরু করব এই বিষয়ে কোনো সঠিক তথ্য পাচ্ছেন না। তবে আপনার জন্য আমরা সাজিয়েছি আজকের আমাদের এই পোস্টটি।
সূচীপত্রঃ কিভাবে গার্মেন্টস ব্যবসা শুরু করব
বাংলাদেশে অনেক ব্যবসায়ী আছে তারা গার্মেন্টস ব্যবসা শুরু করার প্রতি আগ্রহ আছে। এর প্রধান কারণ হচ্ছে বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি পণ্যর জন্য। প্রতি বছর পোশাক গার্মেন্টস থেকে বাংলাদেশ প্রচুর পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা আয় করছে।
তাই যাদের নতুন গার্মেন্টস ব্যবসা করার আগ্রহ আছে তারা আজকের এই কিভাবে গার্মেন্টস ব্যবসা শুরু করব পোস্টটি মনোযোগ সহকারে সম্পূর্ণ পড়ুন। আজকের পোস্টে আমরা আপনাদের জানাব, কিভাবে গার্মেন্টস ব্যবসা শুরু করব, গার্মেন্টস ব্যবসা করার নিয়ম, ফিলিপাইনে গার্মেন্টস ব্যবসা।
গার্মেন্টস ব্যবসা করতে কত টাকা লাগে, গার্মেন্টস ব্যবসা শুরু করার উপায়, গার্মেন্টস ব্যবসার আইডিয়া, গার্মেন্টস ব্যবসা আইডিয়া, গার্মেন্টস ব্যবসা শুরু করার প্রক্রিয়াসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করব। তাহলে চলুন কিভাবে গার্মেন্টস ব্যবসা শুরু করব এই সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে আসি।
গার্মেন্টস ব্যবসা করার নিয়ম - গার্মেন্টস ব্যবসা শুরু করার ধাপগুলো কি কি
আপনি যদি নতুন গার্মেন্টস ব্যবসা শুরু করতে চান তবে আপনাকে কিছু ধাপ অতিক্রম করতে হবে তবেই আপনি গার্মেন্টস ব্যবসা শুরু করতে পারবেন। গার্মেন্টস ব্যবসা শুরু করার আগে আপনি আগেই ভেবে নিবেন আপনি কি ধরনের গার্মেন্টস ব্যবসা করবেন।
আমাদের দেশে বিভিন্ন ধরনের গার্মেন্টস কারখানা রয়েছে যেমনঃ পোশাক তৈরির গার্মেন্টস, কাগজ তৈরি গার্মেন্টস, জুতা তৈরি গার্মেন্টস, কেউ নীট গার্মেন্টস আবার কেউ বিশেষায়িত গার্মেন্টস কারখানা তৈরি করে থাকেন। প্রতিটি গার্মেন্টসের উপর নির্ভর করে ডকুমেন্টসের কিছু পার্থক্য হয়ে থাকে।
গার্মেন্টস ব্যবসা শুরু করার ধাপসমূহ
১। নিবন্ধন এবং লাইসেন্স গ্রহণ প্রক্রিয়া ২। আইনি প্রক্রিয়া ৩। কারখানা স্থাপন এবং ব্যবসা শুরু
আরো পড়ুনঃ জমি খারিজ করার পদ্ধতি
নিবন্ধন এবং লাইসেন্স গ্রহণ প্রক্রিয়া
আপনই যদি নতুন গার্মেন্টস ব্যবসা শুরু করতে চান তাহলে আপনাকে নিবন্ধন এবং লাইসেন্স গ্রহণ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে হবে। গার্মেন্টস ব্যবসা নিবন্ধনের প্রথম ধাপ হচ্ছে নামের ছাড়পত্র সংগ্রহ করা।
ছাড়পত্র সংগ্রহ করার জন্য আপনাকে যৌথমূলধন কোম্পানি ও ফার্মসমূহের পরিদপ্তর বরাবর নির্দিষ্ট ফি প্রদান করে গার্মেন্টসের নামের ছাড়পত্রের জন্য আবেদন করতে হবে।
নামের ছাড়পত্র করার জন্য ২০০ টাকা লাগবে এবং মূলধন ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত নিবন্ধন ফি ফ্রী এছাড়াও অন্যান্য সুবিধা পাবেন। নিবন্ধন এবং লাইসেন্স গ্রহণ প্রক্রিয়ার জন্য সকল কার্যক্রম অনলাইনের মাধ্যেমে করতে পারবেন এবং অনলাইনে পেমেন্ট করতে পারবেন।
নামের ছাড়পত্র পাওয়ার পর নিবন্ধনের জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র যেমন নামের ছাড়পত্র, মেমোর্যান্ডাম অব অ্যাসোসিয়েশন (মেমোরেন্ডাম অব এসোসিয়েশন হলো একটি কোম্পানীর প্রাণ বা সংবিধান) এবং আর্টিকেল অব অ্যাসোসিয়েশন ইত্যাদি সংযুক্ত করে নিবন্ধনের জন্য আবেদন করতে হবে।
তবে আমাদের সকলের জেনে রাখা উচিত পাবলিক এবং প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানির ক্ষেত্রে কাগজপত্রের কিছু পার্থক্য রয়েছে। আপনার কগজপত্র যদি সঠিক থাকে তাহলে আপনি ৭ দিনের মধ্যেই নিবন্ধন পেয়ে যাবেন।
কোম্পনি সংক্রান্ত সকল কাজ সম্পন্ন হয়ে গেলে আপনাকে গার্মেন্টস ব্যবসা শুরু করার জন্য লাইসেন্সের জন্য আবেদন করতে হবে। আপনি যে ধরনের গার্মেন্টস করবেন তার উপরে নির্ভর করেই প্রয়োজনীয় কাগজপত্র লাগবে।
গার্মেন্টস ব্যবসা শুরু করতে কি কি কাগজ পত্র লাগবে
আপনি যদি নতুন গার্মেন্টস ব্যবসা শুরু করার চিন্তা করেন তবে আপনার বেশ কিছু প্রয়োজনীয় কাগজপত্র লাগবে নিচে গার্মেন্টস ব্যবসা শুরু করার জন্য যেসব ডকুমেন্ট লাগবে তার একটি তালিকা দেওয়া হলোঃ
১। ট্রেড লাইসেন্স ২। সার্টিফিকেট অব ইনকরপোরেশন ৩। ট্যাক্স আইডেন্টিফিকেশন নাম্বার (টিন) ৪। ব্যাংক সলভেন্সি সার্টিফিকেট ৫। ভ্যাট নিবন্ধন সার্টিফিকেট ৬। ফায়ার লাইসেন্স ৭। পরিবেশ ছাড়পত্র ৮। কারখানার ছাড়পত্র ৯। কারখানার লেআউট পরিকল্পনার অনুমোদন ১০। বন্ড লাইসেন্স
১১। বয়লার লাইসেন্স ১২। রপ্তানি নিবন্ধন সার্টিফিকেট ১৩। আমদানি নিবন্ধন সার্টিফিকেট ১৪। চেম্বার অব কমার্সের সদস্যপদ ১৫। বিজিএমইএ/বিকেএমইএ সদস্যপদ ১৬। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোতে তালিকাভুক্তির সনদ।
আপনার গার্মেন্টস কারখানা ব্যবসার ধরণ অনুযায়ী কাগজপত্র জমা দেওয়ার পর যদি আপনার গার্মেন্টস ব্যবসা অনুমোদিত হয় তবে আপনি গার্মেন্টস ব্যবসা করার জন্য খুব দ্রুতই লাইসেন্স পেয়ে যাবেন।
আইনি প্রক্রিয়া গার্মেন্টস ব্যবসা শুরু করার জন্য
আপনি যদি নতুন গার্মেন্টস ব্যবসা শুরু করেন তবে আপনাকে বেশ কয়েকটি আইনি প্রক্রিয়া মোকাবেলা করতে হবে। আর এই আইনগত বিষয়গুলো শুরু হয় আপনি যখন নতুন গার্মেন্টস ব্যবসা শুরু করবেন তখন থেকেই।
যেমন আপনি যখন মেমোর্যান্ডাম অব অ্যাসোসিয়েশন এবং আর্টিকেল অব অ্যাসোসিয়েশন তৈরি করবেন যখন সেখানে আইনগত বিভিন্ন ধরনের বিষয় থাকবে যা আপনাকে আইন বিষয়ে অভিজ্ঞ কাউকে দিয়ে তৈরি করাতে হবে।
এছাড়াও আপনি যখন গার্মেন্টস ব্যবসা শুরু করার জন্য জমি ক্রয় করবেন তখন বেশ কিছু আইনগত বিষয় আছে। যদি আপনি আইনজীবী দিয়ে এসব কাজ না করান তবে ভবিষ্যতে জমির মালিকানা হিসেবে আপনি বিভিন্ন ধরনের সমস্যায় পড়তে পারেন।
কারখানা স্থাপন এবং ব্যবসা শুরু
নতুন গার্মেন্টস ব্যবসা শুরু করার জন্য আপনাকে কারখানা স্থাপন করার জন্য জমি ক্রয় করতে হবে অথবা ৫ বছর বা ১০ বছর মেয়াদী জমি লিজ নিতে হবে এরপর আপনি আপনার গার্মেন্টস কারখানা স্থাপন করতে পারবেন।
আপনার গার্মেন্টস কারখানা একজন দক্ষ ইঞ্জিনিয়ার দিয়ে ডিজাইন করাবেন, যাতে করে আপনার গারমেন্টস কারখানা অনেক দিন ধরে স্থায়ী হয়। কারখানার পর্যাপ্ত পরিমাণ গ্যাস, বিদ্যুৎ এবং পানির লাইনের ব্যবস্থা রাখবেন। আপনার গার্মেন্টস কারখানা স্থাপন করা শেষ হলেই আপনি গার্মেন্টস ব্যবসা শুরু করতে পারেন।
গার্মেন্টস ব্যবসা করতে কত টাকা লাগে
আপনি যদি ব্যবসা শুরু করতে চান তাহলে আপনাকে বিভিন্ন কাগজপত্র সংগ্রহ করার পর আপনাকে নিবন্ধন ফি প্রদান করতে হবে। এরপর আপনার গার্মেন্টস কারখানার জন্য জমি ক্রয় করতে হবে বা জমি লিজ নিতে হবে। এরপর আপনার গার্মেন্টস ব্যবসা চালু করতে হবে।
কারখানা পরিচালনা করার জন্য কর্মকর্তা ও কর্মচারী নিয়োগ দিতে হয়। সকল কাজ সম্পন্ন করার জন্য আপনাকে বড় ধরণের টাকা বিনিয়োগ করতে হবে। আর এই ব্যবসা শুরু করার জন্য আপনাকে ৮ থেকে ১০ কোটি টাকা খরচ হতে পারে। আর আপনি যদি বড় পরিসরে গার্মেন্টস ব্যবসা শুরু করতে চান তাহলে আপনার আপনার ৫০ কোটি টাকা থেকে ১০০ কোটি টাকা খরচ হতে পারে।
আরো পড়ুনঃ রোমানিয়া কোন কাজের চাহিদা বেশি
গার্মেন্টস ব্যবসা আইডিয়া - কিভাবে গার্মেন্টস ব্যবসা শুরু করব
আপনি বিভিন্ন ধরনের গার্মেন্টস ব্যবসা শুরু করতে পারেন। তবে আমরা আপনাদের বাংলাদেশের সেরা কয়েকটি গার্মেন্টস ব্যবসা আইডিয়া নিয়ে কথা বলব। বাংলাদেশের সেরা গার্মেন্টস ব্যবসা আইডিয়া হচ্ছে পোশাক তৈরি গার্মেন্টস ব্যবসা, জুতা তৈরী গার্মেন্টস ব্যবসা, কাগজ তৈরি গার্মেন্টস ব্যবসা, পেট্রোল-ডিজেল গার্মেন্টস ব্যবসা ইত্যাদি।
পোশাক তৈরি গার্মেন্টস ব্যবসা
বাংলাদেশের সবচেয়ে লাভজনক গার্মেন্টস ব্যবসা হচ্ছে পোশাক তৈরি ব্যবসা। বাংলাদেশের তৈরি পোশাক থেকে প্রায় ৭০% বৈদেশিক মুদ্রা আসে। আমাদের দেশের অধিকাংশ ব্যবসায়ীরা পোশাক তৈরি গার্মেন্টস ব্যবসা করে অনেল লাভবান হচ্ছে। তবে এই পোশাক তৈরি গার্মেন্টস ব্যবসা শুরু করতে আপনার অনেক বেশী বিনিয়োগ করতে হবে।
জুতা তৈরী গার্মেন্টস ব্যবসা
বাংলাদেশের অন্যতম লাভজনক গার্মেন্টস ব্যবসা হচ্ছে জুতা তৈরী গার্মেন্টস ব্যবসা। এই ব্যবসা আমাদের দেশে অনেক চাহিদা রয়েছে। জুতা তৈরী ব্যবসা থেকে অনেক টাকা লাভ করা সম্ভব। প্রতি বছর জুতা রপ্তানি করে বেশ ভালো পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা আয় করছে।
কাগজ তৈরি গার্মেন্টস ব্যবসা
আপনারা যারা ছোট বা মাঝারী পরিসরে গার্মেন্টস ব্যবসা শুরু করতে চাচ্ছেন তারা কাগজ তৈরি গার্মেন্টস ব্যবসা শুরু করতে পারেন। এখানে মূলধন অন্যান্য গার্মেন্টস ব্যবসা থেকে কম। বাংলাদেশে বেশ লাভজনক ব্যবসা হচ্ছে কাগজ তৈরি গার্মেন্টস ব্যবসা।
গার্মেন্টস ব্যবসার লাভ এবং ক্ষতি
আপনারা অনেকেই জানতে চেয়েছেন গার্মেন্টস ব্যবসা শুরু করলে লাভ হবে না কি ক্ষতি হবে। এটা নির্ভর করে আপনার ব্যবসার পণ্যর উৎপাদন, বিক্রির এবং খরচের উপর। প্রথমত আপনাকে গার্মেন্টস কারখানা স্থাপন করতে হলে ফ্যাক্টারি দিতে হবে এখানে বড় ধরনের বিনিয়োগ করতে হবে এবং সেখানে কর্মচারীদের বেতন দিতে হবে। তাই গার্মেন্টস ব্যবসার লাভ এবং ক্ষতি রয়েছে।
শেষ কথাঃ কিভাবে গার্মেন্টস ব্যবসা শুরু করব
পরিশেষে আমি আপনাদের সাথে কিছু কথা বলতে চাই, আপনারা যারা কিভাবে গার্মেন্টস ব্যবসা শুরু করব এই কথা ভাবছেন তাদের জন্য আজকের পোস্টটি সুন্দরভাবে সাজানো হয়েছে। আপনারা যারা নতুন গার্মেন্টস ব্যবসা করবেন তাদের জন্য পরিপূর্ণ ধারণা দেওয়ার চেষ্টা করেছি। ধন্যবাদ!
আর্টিকেল সম্পর্কিত তথ্য জানতে কমেন্ট করুন। আপনার প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।