ইশরাকের নামাজ পড়ার নিয়ম - ইশরাক নামাজ পড়ার নিয়ম - আসসালামু আলাইকুম প্রিয় পাঠক আপনারা যারা আমাদের এই পোস্টটি পড়ছেন তারা নিশ্চয়ই ইশরাকের নামাজ পড়ার নিয়ম সম্পর্কে জানতে ইচ্ছুক। যদি আপনি ইশরাকের নামাজ পড়ার নিয়ম সম্পর্কে জানতে চান তাহলে মনোযোগ সহকারে আমাদের পোস্টটি শেষ পর্যন্ত পড়ুন।
আমরা অনেকেই আছি যারা ইশরাকের নামাজ পড়ার নিয়ম সম্পর্কে অবগত নই। আজকের এই পোস্টটিতে আমরা ইশরাকের নামাজ পড়ার নিয়ম, ইশরাকের নামাজ কি, ইশরাকের নামাজ পড়ার ফজিলত সম্পর্কে আলোচনা করব। তাহলে চলুন আর দেরি না করে ইশরাক নামাজ পড়ার নিয়ম সম্পর্কে জেনে নেইঃ
সূচিপত্র - ইশরাকের নামাজ পড়ার নিয়ম
ইশরাক নামাজ কি
ইশরাক নামাজ কি আমরা অনেকেই হয়তো সেটা জানি না। ইশরাক নামাজ কখন পড়তে হয় এবং কিভাবে পড়তে হয় এ সম্পর্কে জেনে নিনঃ
ইশরাক নামাজ হলো নফল নামাজ যা ফজরের নামাজ শেষ করে সূর্য ওঠার ১৫ মিনিট পরে এবং বেলা ওঠার পাঁচ মিনিট আগে পড়তে হয়। আমরা অনেকেই আছি যারা ইশরাক নামাজ সম্পর্কে অবগত নই। এ নামাজের ফজিলত অনেক রয়েছে ইশরাক নামাজ নফল নামাজের অন্তর্ভুক্ত।
অনেক মুসলিমরা ইশরাকের নামাজ ফজরের নামাজের পরে মসজিদে আদায় করে থাকেন এবং মহিলারা বাড়িতেই ফজরের নামাজ শেষে ইশরাকের নামাজ আদায় করে থাকেন।
ইশরাকের নামাজ কত রাকাত
হাদীস-এ ইশরাকের নামাজ পড়ার নিদিষ্ট রাকাত সংখ্যার উল্লেখ না থাকলেও ইশরাকের নামাজ ২ রাকাত থেকে ০৮ রাকাত পর্যন্ত আদায় করা যায়। এছাড়াও কিছু কিছু ওলামায়ে কেরামগণ বলেছেন, ইশরাকের নামাজ ০২ রাকাত করে ১২ রাকাত পর্যন্ত আদায় করা যায়।
তবে হ্যাঁ আমাদের প্রিয় নবী হযরত মোহাম্মাদ (সাঃ) ০২ রাকাত করে ০৪ রাকাত ইশরাকের নামাজ পড়তেন। সেজন্য প্রতেক মুসলমান ভাই-বোনদের উচিত ফজরের নামাজের ১৫ থেকে ২০ মিনিট পরে দুই দুই রাকাত করে ০৪ রাকাত ইশরাকের নামাজ আদায় করা।
ইশরাকের নামাজের নিয়ত
সালাতুল ইশরাক কিংবা ইশরাকের নামাজের জন্যে হাদিসে আলাদা ভাবে কোনো নিয়ত বর্ণিত হয়নি। যার ফলে এই নামাজের নিয়ত আরবিতে বলা আবশ্যক না। তবে হ্যাঁ ইশরাকের নামাজ শুরু করার পূর্বে বাংলাতে নিয়ত করে নিতে পারেন। ইশরাকের নামাজের নিয়ত যেমনঃ "ইশরাকের নামাজ আদায়ের উদ্দেশ্যে কেবলামুখি হয়ে নিয়ত করলাম আল্লাহু আকবার"।
আরো পড়ুনঃ ইসলামে ব্যবসা করার নিয়ম
ইশরাকের নামাজ কেন পড়া হয়
ইশরাকের নামাজ কেন পড়া হয়? আমরা অনেকেই না জেনে এ নামাজ পড়ে থাকি। ইশরাকের নামাজ কেন পড়া হয় এই পোস্টে আপনাদের তা জানাবো। তাহলে চলুন ইশরাকের নামাজ কেন পড়া হয় তা জেনে নেইঃ
সূর্য উদয়ের পর যে ২ বা ৪ রাকাত নফল নামাজ পড়া হয় তাকে ইশরাকের নামাজ বলে। এই নামাজ মাধ্যমে এক হজ্ব ও উমরার সওয়াব পাওয়া যায়। এই নামাজ দ্বারা গুনাহ মাফ হয়। ইশরাকের নামাজ অনেক নেক আমলের জন্য যথেষ্ট।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ হে আদম সন্তান! দিনের প্রথম ভাগে আমার জন্য ০৪ রাকাত নামায আদায় কর, আমি তোমার দিনের শেষ পর্যন্ত প্রয়োজন পূরণ করে দিব। (জামে' আত-তিরমিজী, হাদীস নং ৪৭৫)।
ইশরাকের নামাজ পড়ার নিয়ম
আর্টিকেলের এই অংশে ইশরাকের নামাজ পড়ার নিয়ম সম্পর্কে আমরা জানবো। ইশরাকের নামাজ পড়ার নিয়ম অনেকেই আমরা জানিনা এবং ইশরাকের নামাজ ভুল করে ভুল পন্থায় অবলম্বন করে পড়ে থাকি। ইশরাকের নামাজ পড়ার নিয়ম জেনে নিন-
ফজরের নামাজের পর সূর্য ওঠার ১৫ মিনিট পরে এবং বেলা ওঠার ৫ মিনিট আগে যে দুই রাকাত বা চার নফল নামাজ আদায় করা হয় তাকে ইশরাকের নামাজ বলা হয়। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাই সালাম ইশরাকের নামাজ আদায় করতেন এবং অন্যদেরও পড়ার নির্দেশ দিতেন। ইশরাকের নামাজ নফল নামাজের চাইতেও অনেক গুণ বেশি সওয়াব পাওয়া যায়।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি জামাতের সঙ্গে ফজরের নামাজ পড়লো। এরপর সূর্য উঠা পর্যন্ত সেখানে বসে আল্লাহর জিকির করলো; অতপর দাঁড়িয়ে দুই রাকাত নামাজ পড়লো; সে একটি হজ্ব ও ওমরাহ করার সওয়াব নিয়ে ফিরে গেল।’ (তাবারানি, আত-তারগিব)
ইশরাকের নামাজ পড়ার সময়
ইশরাকের নামাজ পড়ার সময় সম্পর্কে আমরা অনেকেই হয়তো জানি না। তাহলে ইশরাকের নামাজ পড়ার সময় সম্পর্কে জেনে নিন।
ফজরের নামাজের পর সূর্য উঠার ১৫ থেকে ২৫ মিনিট পর দুই দুই রাকাত করে ৪ রাকাত নামাজ আদায় করা। নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সুন্নাতের অনুসরণ করা। নবী করীম সাঃ নিজেই ইশরাকের নামাজ আদায় করতেন এবং সকলকে ইশরাকে নামাজ পড়তে নির্দেশ করতেন।
কারণ এতে নফল নামাজের চাইতেও দ্বিগুণ পরিমাণ সওয়াব পাওয়া যায়। এই নামাজের মাধ্যমে আমরা হজ্ব এবং ওমরা হজ্ব করার সওয়াব পেতে পারি। ইশরাকের নামাজের সঠিক কোন রাকাত নেই তবে কেউ ০২ রাকাত কিংবা ০৪ রাকাত পড়তে পারে।
ইশরাকের নামাজ পড়ার সময় হচ্ছে, সূর্য উদিত হওয়ার পর থেকে এক বর্শা পরিমাণ উদিত মধ্যাকাশে আসার আগ পর্যন্ত এই সময়ের মধ্যে আদায় করলে ইশরাকের নামাজ আদায় হয়ে যাবে। তবে নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সূর্য উদিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এই নামাজ আদায় করতেন না। তিনি এক বর্শা পরিমাণ সূর্য ওঠার অপেক্ষা করতেন।
আরো পড়ুনঃ দুই অক্ষরের মেয়েদের ইসলামিক নাম অর্থসহ
ইশরাকের নামাজ পড়ার ফজিলত
আমরা ইশরাকের নামাজ পড়ার সময়, ইশরাক নামাজ পড়ার নিয়ম, ইশরাক নামাজ কেন পড়তে, হয় সম্পর্কে উপরে আলোচনা করেছি। এখন আমরা ইশরাক নামাজ পড়ার ফজিলত সম্পর্কে কিছু আলোচনা করব। তাহলে চলুন ইশরাকের নামাজ পড়ার ফজিলত কি তা জেনে নিইঃ
আমরা অনেকেই অনেক নফল নামাজ পড়ে থাকি। কিন্তু এই নামাজের ফজিলত নফল নামাজের চাইতেও দ্বিগুণ। এই নামাজের মাধ্যমে আমরা হজ্ব এবং ওমরা হজ্ব করার সওয়াব পেয়ে থাকি।
আমাদের নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাই সালাম ইশরাকের নামাজ নিজে ফজর নামাজের পর সূর্য অস্তের ১৫ মিনিট পর এবং বেলা উত্থিত হওয়ার পাঁচ মিনিট আগে এই নামাজ আদায় করতেন এবং সকলকে আদায় করার নির্দেশ করতেন। আমাদের ওপরে যেমন পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়া ফরজ করা হয়েছে তার পাশাপাশি আমাদের নফল এবাদত করাও জরুরী।
আল্লাহ তা'আলা অধিক নেকির জন্য আমাদের নফল নামাজের ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। আমরা যেন আল্লাহর জিকির আজকার বেশি বেশি করতে পারি। সেজন্য আমাদের নফল নামাজ অনেক পরিমাণে আদায় করতে হবে। ইশরাকের নামাজ এমন একটি নামাজ যা নফল নামাজের চাইতেও বেশি সওয়ার পাওয়া যায়। এ নামাজ আদায় করলে দুনিয়াতে ও পরকালেও অনেক কল্যাণ পাওয়া যাবে।
শেষ কথা - ইশরাকের নামাজ পড়ার নিয়ম
প্রিয় পাঠক আপনারা যারা এতক্ষণ আমাদের সাথে ইশরাকের নামাজ পড়ার নিয়ম পোস্টটি মনোযোগ সহকারে পড়েছেন তারা নিশ্চয়ই ইশরাক নামাজ কি, ইশরাক নামাজ কেন পড়তে হয়, ইশরাকের নামাজ পড়ার সময়, ইশরাকের নামাজ পড়ার নিয়ম, ইশরাকের নামাজের ফজিলত সম্পর্কে সঠিক তথ্য পেয়েছেন।
আসুন আমরা পাঁচ ওয়াক্ত ফরজ নামাজের পাশাপাশি আল্লাহর দেওয়া নফল এবাদতগুলো আদায় করার চেষ্টা করি এবং ইশরাকের নামাজ নিয়ম অনুযায়ী পড়ি এবং অনেক সাওয়াব হাসিল করি।
আর্টিকেল সম্পর্কিত তথ্য জানতে কমেন্ট করুন। আপনার প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।