আপনি কি পায়খানা ক্লিয়ার করার উপায় সম্পর্কে জানতে চাচ্ছেন। শরীরের অনেক মারাত্মক রোগের অন্যতম কারণ হলো পেট ক্লিয়ার না হওয়া। আমাদের মাঝে বেশিরভাগ মানুষের প্রায় সময়ই দেখা যায় যে, হঠাৎ করেই পায়খানা শক্ত হয়ে গেছে এবং মলত্যাগের জন্য টয়লেট দীর্ঘসময় ধরে বসে থাকতে হয়।
তারপরেও মনে হয় যেন পায়খানা ঠিকঠাক ভাবে ক্লিয়ার হয়নি। মনে হতে থাকে যেন আরো পায়খানা করতে হবে। অর্থাৎ অনেক সময় দেখা যায় যে, পায়খানা করতে গেলে অল্প আকারে মলত্যাগ বা পায়খানা করেই পরবর্তীতে আর পায়খানা হতে চায়না। কিন্ত আবার কিছুক্ষণ পরে মলত্যাগের জন্য চাপ দেয় কোনো ভাবেই যেনো পায়খানা ক্লিয়ার হতে চায়না।
(toc) #title=(সুচিপত্র)
আজকের এই পোস্টে আমরা আলোচনা করবো পায়খানা ক্লিয়ার করার উপায় সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য। কি কি খেলে পায়খানা নরম হয় এবং কি কি খাবার খেলে পায়খানা ক্লিয়ার হবে? প্রিয় পাঠক যদি আপনি ওষুধ ছাড়াই ঘরোয়া উপায়ে আপনার পায়খানা ক্লিয়ার এবং দুর্গন্ধমুক্ত করতে চান তবে এই আর্টিকেলটি শুধুমাত্র আপনার জন্য।
আজকের এই লেখা থেকে আপনি পায়খানা ক্লিয়ার করার উপায় সম্পর্কে তথ্য জানতে পারবেন এবং আরো কিছু গুরুত্বপূর্ণ আয়ুর্বেদী চিকিৎসা সম্পর্কে জানতে পারবেন পায়খানা শক্ত বা কোষ্ঠকাঠিন্য রোগ থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য। আপনি ঘরে বসেই ৫ থেকে ৩০ মিনিটের মধ্যে পায়খানা ক্লিয়ার করতে পারবেন এবং কোষ্ঠকাঠিন্য রোগ থেকে সহজেই মুক্তি পাবেন।
আপনার কাছে একটাই অনুরোধ যে আপনি সম্পূর্ন আর্টিকেলটি শেষ পর্যন্ত পড়বেন তাহলে আপনার অথবা আপনার পরিবারের যেকারোর এই পায়খানা ক্লিয়ার না হওয়া সমস্যা থেকে মুক্তি পাবেন। তাই নিম্নে যেসকল টিপসগুলো দেয়া হবে সেগুলো অনুসরণ করতে পারলে আপনি আপনার পায়খানা ক্লিয়ার করতে পারবেন। "পায়খানা ক্লিয়ার করার উপায়" জানার জন্য লেখাটি শেষ পর্যন্ত পড়ুনঃ
পায়খানা ক্লিয়ার করার জন্য আমরা অনেকেই ডাক্তারের শরণাপন্ন হই, কিন্ত হ্যাঁ ডাক্তারেরা বলেন যে ঘরে বসেই পায়খানা ক্লিয়ার না হওয়ার সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায় খুব সহজেই। চলুন ঘরে বসে পায়খানা ক্লিয়ার করার উপায় গুলো জেনে নেই।
যাদের প্রতিদিন অথবা দুদিনে ১ থেকে ২ বার পায়খানা হয়ে থাকে তাদের পায়খানা স্বাভাবিক রয়েছে অর্থাৎ তাদের কোনো সমস্যা নেই এবং যাদের ১-২ দিনে ১ বার পায়খানা হয় না তাদের পায়খানা স্বাভাবিক না।
পায়খানা শক্ত হয়ে গেলে পায়খানা করার সময়ে ব্যাথা অনুভব হয়। পায়খানা শক্ত হয়ে যাওয়ার কারণে অনেকের একটানা ২–৪ দিন কোনো পায়খানা নাও হতে পারে। যদি এই রকম সমস্যা দেখায় যায় তবে সাধারণত এগুলো কোষ্ঠকাঠিন্যের লক্ষণ হিসেবে ধরা হয়।
যদি আপনার কোষ্ঠকাঠিন্য হয়ে থাকে তবে আপনার কখনো অলসতা করা উচিৎ হবে না। কেননা দীর্ঘসময় ধরে কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যায় ভুগতে থাকলে এর ফলাফল স্বরূপ পাইলস কিংবা অর্শ রোগ বা এনাল ফিসার অথবা গেজ রোগগুলির মতো বড় বড় সমস্যা পায়ুপথে তৈরি হওয়ার সম্ভবনা থাকে।
তাই আমাদের সকলের উচিৎ হবে আগে থেকে জেনে রাখা যে, কেন পায়খানা শক্ত কিংবা পায়খানা কষা হয় অথবা পায়খানা ক্লিয়ার না হওয়ার কি কারণ সেই সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে কিছু সাধারণ নিয়ম অনুসরণ করে চললে কোনো ধরনের ঔষধ খাওয়া ব্যতীত সম্পূর্ণ ঘরোয়া পদ্ধতিতে এই পায়খানা ক্লিয়ার না হওয়ার সমস্যা থেকে চিরতরে মুক্তি পাওয়া যাবে।
আজকে আমরা এই লেখার মাধ্যমে জানবো পায়খানা শক্ত কিংবা কষা হওয়ার লক্ষণসমূহ, পায়খানা ক্লিয়ার না হওয়ার কারণ, পায়খানা না হলে করণীয়, পায়খানা নরম করার উপায়, পায়খানা ক্লিয়ার করার উপায়, পায়খানা ক্লিয়ার করার ঔষধ ইত্যাদি সম্পর্কে জেনে এবং সেগুলো সঠিক ভাবে অনুসরণ করার চেষ্টা করবো। তাহলে আর আপনাকে কখনো পায়খানা ক্লিয়ার না হওয়ার সমস্যায় ভুগতে হবেনা। চলুন তাহলে জেনে নেই পায়খানা ক্লিয়ার করার উপায় সম্পর্কে বিস্তারিতঃ
আরো পড়ুনঃ জরায়ু ইনফেকশনের লক্ষণ
কোষ্ঠকাঠিন্য কি
কোষ্ঠকাঠিন্য কি তা আমাদের মাঝে অনেকেই আছেন তারা জানেন না। যখন পায়খানা একেবারেই হয়না তখন তাকে কোষ্ঠ্যকাঠিন্য রোগ বলা হয়। যখন কারো ৩ দিন থেকে ৪ দিন ধরে পায়খানা না হয় তবে তার কোষ্ঠকাঠিন্য রোগ হয়েছে বলে গণ্য করা হয়। আশা করি কোষ্ঠকাঠিন্য রোগ কি সে সম্পর্কে সহজেই বুঝতে পারলেন।
কোষ্ঠকাঠিন্যে রোগের লক্ষণ
কোষ্ঠকাঠিন্যে রোগের বিভিন্ন লক্ষণ আছে তারমধ্যে থেকে যে লক্ষণটিকে আমরা মেইন লক্ষণ হিসেবে বুঝি সেটা হচ্ছে সপ্তাহে ৩-৪ বারের কম সময় পায়খানা হওয়া। কেননা সাধারণত সপ্তাহে যদি ৩-৪ বার কম সময় পায়খানা হয়ে থাকে তবে সেটাকে কোষ্ঠকাঠিন্য রোগ বলা হয়ে থাকে। এছাড়াও আরো বেশ কয়েকটি কোষ্ঠকাঠিন্যে রোগের লক্ষণ আছে তা নিম্নে তুলে ধরা হলোঃ
- পেট ক্লিয়ার হচ্ছে না এমন ভাব মনে হলে বুঝতে হবে আপনার কোষ্ঠকাঠিন্যে সমস্যা আছে।
- পায়খানা শুকনো এবং শক্ত চাকার মতো হলে।
- পায়খানা করতে খুবই কষ্ট এবং ব্যাথা অনুভব হলে।
- পায়খানার আকৃতি স্বাভাবিকের থেকে অনেক বড় হলে।
- সবসময় পেটের মধ্যে ব্যাথা করলে।
- বমি বমি ভাব হলে বুঝতে হবে আপনার কোষ্ঠকাঠিন্যে সমস্যা আছে।
- পেট ফেঁপে থাকা মনে হলে।
উক্ত কারণ গুলো কোষ্ঠকাঠিন্যে রোগের লক্ষণ।
আরো দেখুনঃ পাতলা পায়খানা হলে করণীয় কি - পাতলা পায়খানার ট্যাবলেট এর নাম
কোষ্ঠকাঠিন্য রোধে যেসব খাবার এড়িয়ে চলতে হবে
কোষ্ঠকাঠিন্য সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে হলে আপনাকে কয়েকটি খাবার এড়িয়ে চলতে হবে। যেমনঃ চা, কফি, অত্যাধিক মশলাযুক্ত খাবার, অতিরিক্ত তেল, কোক জাতীয় ড্রিঙ্কস, চকলেট, ঘি, মাখন, ভাজা খাবার না খাওয়া ভাল।
মিহি চালের ভাত, পরাটা, লুচি, ময়দার রুটি, পাউরুটি, চিড়া, মুড়ি ইত্যাদি খাবার না খাওয়াই বাঞ্ছনীয়। ধূমপানের মাত্রা কমাতে হবে, খুব ভালো হয় একেবারে এটা বন্ধ করলে। মদজাতীয় পানীয় খাওয়া একেবারেই উচিত নয়। খাসীর মাংস এবং গরুর মাংস সামান্য পরিমাণে খাওয়া ভালো।
খাবারে পরিবর্তন এনে, ব্যায়াম করে এবং নিম্নোক্ত আলোচনা করা নির্দেশিত নিয়মগুলো অনুসরণ করে যদি আপনার কোষ্ঠকাঠিন্য সমস্যা সমাধান না হয় তবে সেক্ষেত্রে আপনাকে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ঔষধ খেতে হবে।
আরো দেখুনঃ কিডনি ভালো আছে কিনা বোঝার উপায় | কিডনি সমস্যা বোঝার উপায়
পায়খানা শক্ত হওয়ার কারণ
পায়খানা শক্ত হওয়ার জন্য কিছু রয়েছে যেগুলো জানতে পারলে আপনাদের জন্য অনেক উপকার হবে। বিভিন্ন কারণে পায়খানা শক্ত বা কোষ্ঠকাঠিন্য হওয়ার মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে। এখানে আমরা সবচেয়ে সাধারণ এবং গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি কারণ তুলে ধরেছিঃ
- প্রতিদিন পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি পান না করা
- রুটি, বার্গার, বিস্কুট ইত্যাদি বেশি খাওয়ার ফলে আপনাদের পায়খানা শক্ত হতে পারে
- দৈনন্দিন খাবারের তালিকায় যথেষ্ট পরিমাণ ফাইবার জাতীয় বা আঁশ জাতীয় খাবার না থাকা
- মানসিক চাপ ও উদ্বেগ কিংবা বিষণ্ণতায় ভুগলে এই সমস্যা দেখা দিতে পারে।
- শুয়ে, বসে থাকলে এবং শারীরিক কোনো পরিশ্রম না করার কারণে এই সমস্যা দেখা দেয়
- পায়খানার বেগ আসলে তা চেপে ধরে রাখলে
- বিষন্নতার ঔষধ, প্রেসারের ঔষধ এবং ব্যাথানাশক ঔষধের কারণে কোষ্ঠকাঠিন্য হতে পারে। মোট কথা কোনো ঔষধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার ফলে এই রোগ হতে পারে। উক্ত কারণ গুলোর কারণে পায়খানা শক্ত হয়ে থাকে এছাড়াও আরো অন্যান্য কারণ রয়েছে পায়খানা শক্ত হওয়ার।
আরো পড়ুনঃ জ্বর কমানোর ঘরোয়া উপায়
পায়খানা কালো হওয়ার কারণ
আমাদের মধ্যে অনেকের দেখা যায় পায়খানা কালো হয়ে থাকে। কিন্তু হ্যাঁ কি কারণে পায়খানা কালো হয়ে থাকে তা আমরা অনেকেই জানি না, যার ফলে আমরা অনেকেই ভয় ও আতঙ্কিত হয়ে যাই। পানি কালো হওয়ার কারণ হতে পারে আপনার পানি কম খাওয়া। যদি আপনি ঠিকমতো পানি পান না করেন তবে আপনার এই সমস্যাটি দেখা দিতে পারে।
যদি আপনি প্রতিদিন ১০ গ্লাস থেকে ১২ গ্লাস পানি পান করতে পারেন তবে আপনার পায়খানা কালো হবেনা। এছাড়াও বাহিরের খাবার বেশি বেশি খাওয়ার কারণেও পায়খানা কালো হতে পারে। তাই সুস্থ থাকতে আমাদের বাহিরের খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকা উচিত।
পায়খানা কষা হওয়ার কারণ
আমাদের মাঝে অনেকেরই পায়খানা কষা হয়ে থাকে। আর তাই অনেকেই জানতে চান পায়খানা কষা হওয়ার কারণ কি। পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি না খাওয়ার কারণে এবং ভাঁজাপোড়া, অতিরিক্ত তেল জাতীয় খাবার সহ আরো উল্টাপাল্টা খাবার খাওয়ার কারণে পায়খানা কষা হয়ে থাকে।
আপনার যদি কষা পায়খানা হয়ে থাকে তবে আপনি অবশ্যই চিরতা খাবেন। যদি আপনি চিরতা খেতে পারেন তবে আপনার কষা পায়খানা দূর হয়ে যাবে। চিরতা ২০ মিনিট থেকে ৩০ মিনিট পানিতে ভিজিয়ে রেখে তারপর আপনি খালি পেটে খাবেন তাহলে আপনি আপনার কষা পায়খানা সহজেই দূর করতে পারবেন।
আরো দেখুনঃ সিজারের পর ইনফেকশন হলে করণীয়
পায়খানা না হওয়ার কারণ কি
পায়খানা না হওয়ার কারণ কি সে সম্পর্কে আমরা অনেকেই জানিনা, আর্টিকেলের এই অংশে আপনি জানতে পারবেন পায়খানা না হওয়ার কারণ কি তার সঠিক তথ্য।
- বাহিরের বিভিন্ন ধরনের শুকনাে খাবার খাওয়ার কারণে পায়খানা ক্লিয়ার হয়না। যদি আপনি বাহিরের শুকনো খাবার বেশি না খান তবে আপনার পায়খানা ক্লিয়ার হবে।
- পায়খানা না হওয়ার আরেকটি কারণ হিসেবে ধরা হয় সঠিক সময়ে খাবার না খাওয়া অর্থাৎ ঠিকমতো খাবার না খাওয়া। আমাদের মাঝে অনেকেই আছেন যারা ঠিকঠাক ভাবে সঠিক সময়ে খাবার খাইনা, এক বেলার খাবার আরেক বেলায় খেয়ে থাকেন। অর্থাৎ নির্দিষ্ট সময়ে খাবার না খাওয়ার কারণে পায়খানা হয়না।
- অতিরিক্ত রাত জাগার ফলে অনেক সময় ঠিকমতো পায়খানা হয়না। কেননা অতিরিক্ত রাত জাগার ফলে শরীলের পানিসল্পতা দেখা দেয় যার ফলে পায়খানা ঠিকঠাক ভাবে ক্লিয়ার হয়না। পায়খানা না হওয়ার কারণ হিসেবে রাত জায়গা ব্যাপক ভুমিকা পালন করে। এখান থেকে পরিত্রাণ পেতে আমাদের রাত জাগা উচিত নয়।
- তরল জাতীয় খাবার কম পরিমাণে খাওয়ার ফলে পায়খানা ঠিকঠাক ভাবে হয়না। যারা সঠিক পরিমাণ মতো তরল জাতীয় খাবার গ্রহণ করেন না শুধুমাত্র শুকনো খাবার খান তাদের পায়খানা না হওয়ার সমস্যা দেখা যায়।
পাতলা পায়খানা হলে করণীয়
নিম্নে কিছু ঘরোয়া উপায় সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে যেগুলো প্রয়োগ করে আপনি সহজেই পাতলা পায়খানা থেকে রেহাই পাবেন। অনেক মানুষ আমাকে বলেন যে পাতলা পায়খানা হলে করণীয় কি বা পাতলা পায়খানা বন্ধ করার উপায় কি। আর্টিকেলের এই অংশে, আমরা পাতলা পায়খানা হলে করণীয় কি বা পাতলা পায়খানা থেকে রেহাই পাওয়ার উপায় সম্পর্কে আলোচনা করবো।
পাতলা পায়খানা হলে করণীয় হিসেবে প্রথম কাজটি হচ্ছে রোগীকে পরিমাণমতো ডাবের পানি খাওয়ানো, স্যালাইন খাওয়ানো এবং শরবত খাওয়াতে হবে। রোগীর অবস্থা খুব বেশি জটিল হলে ডাক্তারের পরামর্শ নিন বা ডাক্তারের শরণাপন্ন হোন। তবে হ্যাঁ রোগীকে ডাক্তারের কাছে নেওয়ার পূর্বে অবশ্যই স্যালাইন, ডাবের পানি ইত্যাদি খাওয়ানো প্রয়োজন ও করণীয়। অবশ্যই স্যালাইন পরিমাণ মতো খাওয়াতে হবে।
রোগীর বেশি পানিশূন্যতা দেখা দিলে অথবা খাওয়ার স্যালাইন খাওয়ানোর পরেও যদি পানিশূন্যতা না কমে সেক্ষেত্রে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী শিরার মধ্যে (ইন্ট্রাভেনাস) স্যালাইন দিয়ে পানিশূন্যতা পূরণ করতে হয়।
বাচ্চাদের পাতলা পায়খানা হলে করণীয়
যদি বাচ্চাদের পাতলা পায়খানা হয় তবে আপনাকে একটু বেশি সতর্ক হতে হবে। কেননা বাচ্চারা বয়স্ক মানুষদের মতো ডাবের পানি, শরবত, স্যালাইন ইত্যাদি খেতে চাইবে না সুতরাং এমন অবস্থায় বাচ্চাদের ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাওয়াটাই হবে সবচেয়ে ভালো।
ডায়রিয়া বা পাতলা পায়খানা হলে শরীরে পানিশূন্যতা দেখা যায়। যদি পানিশূন্যতা তীব্র হয়ে থাকে তবে তা শরীরের জন্য বিপদজনক আকার ধারণ করতে পারে বিশেষ করে শিশু, বাচ্চা বা কিশোরদের জন্য।
বাচ্চাদের পাতলা পায়খানা বা ডায়রিয়া হলে মায়ের বুকের দুধ খাওয়ানোর পাশাপাশি খাবার স্যালাইন খাওয়ান। এছাড়াও শিশুদের বা বাচ্চাদের মধ্যে নিম্নের উপসর্গ গুলোর মতো দেখা গেলে সরাসরি একজন ডাক্তারের পরামর্শ নেয়া প্রয়োজন।
- যদি ১০২ ডিগ্রী কিংবা তার বেশি জ্বর থাকলে
- ২৪ ঘন্টার বেশি ডায়রিয়া হলে
- পানিশূন্যতার লক্ষণ দেখা দিলে
- মলের সাথে যদি রক্ত বের হয়, মলের রং যদি কালো হয়
- তলপেট বা মলদ্বারে গুরুতর ব্যথা অনুভব করা।
প্রাপ্ত বয়স্কদের পাতলা পায়খানা হলে করণীয়
প্রাপ্তবয়স্কদের পাতলা পায়খানা হলে বার বার খাবার স্যালাইন, ডাবের পানি সহ তরল খাবার এবং পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে। এছাড়াও নিম্নের উপসর্গ গুলো দেখা গেলে সরাসরি একজন ডাক্তারের পরামর্শ নেয়া প্রয়োজনঃ
- বারে-বারে বমি হলে
- ডায়রিয়া বা পাতলা পায়খানা যদি ২ দিনের বেশি হয়ে থাকে
- যদি শরীরে ১০২ ডিগ্রী জ্বর কিংবা এর বেশি জ্বর হয়ে থাকে
- পানিশূন্যতার লক্ষণ দেখা দিলে
- ২৪ ঘন্টার মধ্যে ৬ বার কিংবা তারবেশি বার পায়খানা হলে
- মলের সঙ্গে যদি রক্ত বাহির হয়। মলের রং যদি কালো হয়ে থাকে
- তলপেট কিংবা মলদ্বারে গুরুতর ব্যথা অনুভব হলে।
ডায়রিয়া বা পাতলা পায়খানা প্রতিরোধের উপায়ঃ ডায়রিয়া বা পাতলা পায়খানা প্রতিরোধরে জন্য নিম্ন আলোচনা করা নির্দেশাবলী অনুসরণ করুনঃ
- শিশুদের জন্মের ৬ মাস পর্যন্ত শুধুমাত্র বুকের দুধ খাওয়ান
- বিশুদ্ধ পানি পান করুন বা নিরাপদ পানি পান করুন
- সুষম খাবার গ্রহণ করুন। অতিগরমে তৈলাক্ত ও পঁচাবাসি খাবার গ্রহণ বর্জন করুন এবং অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ হতে খাবার গ্রহণ করা হতে বিরত থাকুন
- রাস্তার খোলা খাবার খাবেন না
- সম্ভব হলে রোটা ভাইরাসের ভ্যাকসিন গ্রহণ করুন
- বেশি পিপাসা পেলে শরবতের পরিবর্তে ডাব কিনে খেতে পারেন।
- পানি সবসময় ফুটিয়ে খেতে হবে
- স্বাস্থ্য সচেতনতা বৃদ্ধি করুন। বিশেষ করে সংক্রামক রোগ সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন
- বাসন-কোসন ভালোভাবে ধুতে হবে
- যদি ডাইরিয়া বা বমি শুরু হয় তাহলে তৎক্ষণাৎ খাবার স্যালাইন খাওয়া শুরু করুন এবং চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন
- খাওয়ার আগে হাত ভালো করে ধুতে হবে।
- অত্যধিক গরম পরিবেশে কাজ না করা। যদি করতে হয়, সেক্ষেত্রে নির্দিষ্ট সময় পরপর ঠাণ্ডা পরিবেশে বিশ্রাম গ্রহণ করুন
- খাবার ঠিকমতো ঢেকে রাখুন
- যতটা সম্ভব টাটকা খাবার খাওয়ার চেষ্টা করুন। কয়েক দিন ধরে ফ্রিজে রাখা আছে এমন খাবার খাওয়াও ঠিক না।
- ব্যক্তিগত পরিচ্ছন্নতা (যেমন- পায়খানা থেকে বের হয়ে এবং খাবার আগে হ্যান্ড ওয়াশ/ সাবান দিয়ে হাত ধোয়া, নিয়মিত নখ কাটা, পরিষ্কার বস্ত্র পরিধান করা এবং নিয়মিত গোসল করা) নিশ্চিত করুন।
আরো পড়ুনঃ পাইলস থেকে চিরতরে মুক্তির উপায়
পায়খানা ক্লিয়ার করার ঘরোয়া উপায়
আপনি পায়খানা ক্লিয়ার করার ঘরোয়া উপায় সম্পর্কে জানতে চাচ্ছেন? যাদের আমাশয় সমস্যা হয় তাদের এই সমস্যা থেকে সমাধানের জন্য এই অংশে আলোচনা করা হয়েছে। আজকের এই টিপসটি পায়খানা এবং এসিডিটির জন্য অনেক উপকারে আসবে।
যদি আপনার পেটে গরম আটকে যায় এবং আমাশয় জাতীয় পায়খানার সমস্যা হয়ে থাকে তবে আপনি তাহলে প্রতিদিন দুপুর বেলা একটি বেল পুড়ে জুস কিংবা শরবত করে খেতে পারেন। বেলের জুস কিংবা শরবত শরীরের জন্য অনেক উপকারি।
বৃদ্ধ লোকেদের মুখে থেকে জানতে পারবেন যে বেলের জুস বা বেলের শরবত শরীরের পক্ষে কতটা উপকারী। তাই বেলের জুস বা বেলের রস খাওয়ার অভ্যাস করুন এতে করে আপনার পেটের যাবতীয় সমস্যা দূর হয়ে যাবে।
বেশি বেশি পানি তরল জাতীয় খাবার পান করুন
যখন পাতলা পায়খানার মতো সমস্যায় দেখা দেয় তখন শরীর থেকে প্রচুর পরিমাণে পানি বেরিয়ে যায় যার ফলস্বরূপ শরীর পানিশূন্য হয়ে যায় বা শরীর থেকে পানিশূন্যতা হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। তাই বেশি বেশি পরিমাণে পানি খাওয়া উচিৎ যাতে করে শরীর ডিহাইড্রেট না হয়ে যায়।
পাতলা পায়খানা সমস্যা ভালো করতে ৮ গ্লাস থেকে ১২ গ্লাস পানি পান করুন। স্বাস্থ্যকর স্যুপ এবং ফলের রস খান বেশি বেশি। এছাড়াও আপনি পানির মধ্যে ইলেক্ট্রোলাইট পাউডার মিশিয়ে পান কতে পারেন এতে করে আপনি পেটের ব্যাথা থেকেও আরাম পাবেন। পাতলা পায়খানা ভালো করতে ডাবের পানি খেতে পারেন যা আপনার শরীরকে হাইড্রেট রাখতে সাহায্য করে।
সরিষা বীজ
সরিষা বীজে রয়েছে কিছু এন্টিব্যাক্টেরিয়াল উপাদান যা পাতলা পায়খানা বন্ধ করতে ভূমিকা পালন করে। ১ চামচ পানিতে ১/৪ চা-চামচ সরিষা বীজ মেশান এবং সেটিকে ১ ঘণ্টা যাবত রেখে দিন। তারপর এই পানি পান করুন যেমন ভাবে আপনি নিয়মিত পানি পান করেন। পাতলা পায়খানা থেকে মুক্তি পেতে দিনে ২ বার থেকে ৩ বার করে এই পদ্ধতি ব্যবহার করুন।
লেবুর রস
লেবুর রসে আছে অ্যান্টিইনফ্লেমেটরি উপাদান, আর এই উপাদান সহজেই পেট ক্লিয়ার করতে সহায়তা করে এবং পাতলা পায়খানা বন্ধ করতে লেবুর রস ব্যবহার করা হয়। একটি লেবুর থেকে রস বাহির করুন, তাতে ১ চা-চামচ লবণ এবং এক চামচ চিনি জুক্ত করুন আর ভালো ভাবে মেশিয়ে নিন।
এখন প্রতি ঘন্টায় এই শরবত পান করুন যতক্ষণ পর্যন্ত না আপনার পাতলা পায়খানা সমস্যা বন্ধ হচ্ছে। আপনার পেট ক্লিয়ার করার জন্যে ০৩ দিন ধরে এই উপায় ব্যবহার করুন আশা করা যায় ভালো ফল পাবেন। পেট নিয়মিত চেষ্টা করুন স্যুপ কিংবা তরল জাতীয় খাবার খাওয়ার।
কাঁচা পেঁপে
কাঁচা পেঁপে পাতলা পায়খানা ভালো করার জন্য হচ্ছে একটি আদর্শ উপাদান। এছাড়াও কাঁচা পেপে পেটের ব্যাথা ভালো করতে সাহায্য করে। একটি পাত্রে ০৩ কাপ পানির সঙ্গে কাঁচা পেঁপেকে প্রায় ১০ মিনিট সময় পর্যন্ত ফুটিয়ে নিন।
পানি গরম হয়ে গেলে সেটিকে ছেঁকে নিয়ে পান করুন। এবার আপনি দিনে ০২ থেকে ০৩ বার পান করতে পারেন অথবা যতক্ষণ না আপনি পরিপূর্ণ সুস্থ অনুভব করছেন ততক্ষণ খেতে পারেন।
দুগ্ধজাত পণ্য এড়িয়ে চলুন
আপনার যদি পাতলা পায়খানা হয়ে থাকে তবে ৩-৪ দিন পর্যন্ত দুধ কিংবা দুগ্ধজাত পণ্য গুলো খাওয়া থেকে এড়িয়ে চলুন, যতক্ষণ না পর্যন্ত আপনি পাতলা পায়খানা সমস্যা থেকে মুক্তি পাচ্ছেন।
কেননা দুধ পাতলা পায়খানা সমস্যাকে সমাধান করেনা বরং দুধ এই পাতলা পায়খানার সমস্যাকে আরো বৃদ্ধি করে দেয়। পাতলা পায়খানা হওয়া অবস্থায় যেসকল খাবার এড়িয়ে চলবেন
- দুধ
- চিজ
- দুধের গুঁড়ো
- মার্জারিন
- ক্যাফিনযুক্ত পানীয়
- উচ্চ ফাইবার বা তৈলাক্ত খাবার।
পাতলা পায়খানার মতো সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য এবং পেটের ব্যাথা উপশম বা পেট ব্যাথা থেকে আরাম পাওয়ার জন্যে আপনি মাড়সমৃদ্ধ খাবার খেতে পারেন, মাড়সমৃদ্ধ খাবার খেলে আপনার হজম শক্তি বৃদ্ধি পায়। পাতলা পায়খানা মুক্তি পেতে কিছু খাবার রয়েছ যেগুলো আপনি গ্রহণ করতে পারেনঃ ১। সেদ্ধ আলু ২। রান্না করা সাদা ভাত ৩। রান্না করা গাজর ৪। ট্যাপিওকা ৫। ক্যামোমিল চা
মধু
মধু হচ্ছে একটি প্রাকৃতিক ঔষধ যা স্বাস্থ্যের অনেক সমস্যা নিরাময় করতে সাহায্য করে এবং পাতলা পায়খানা বন্ধ করার জন্য এটি অত্যন্ত কার্যকরী ঘরোয়া উপায়। ১ চা চামচ ফ্রেশ এবং খাঁটি মধু নিন। প্রাকৃতিক মধু হলে আরও ভালো হবে।
এক গ্লাস উষ্ণ পানিতে ১/২ এক চা-চামচ দারুচিনি গুঁড়ো এবং খাঁটি মধু ভালো ভাবে মেশিয়ে নিন। সকাল বেলা খালি পেটে এই পানি পান করুন। পাতলা পায়খানার সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে দিনে ২ বার করে এই উপায় ব্যবহার করুন।
আরো দেখুনঃ টিউমার চেনার উপায়
পায়খানা নরম করার উপায়
আপনার যদি পায়খানা শক্ত হয়ে যায় তবে এই বিষয়টি নিয়ে আপনি টেনশন করবেন না। জেনে রাখা ভালো যে পেটে প্রচুর পরিমাণে এসিডিটি বা গ্যাস হয়ে থাকলে পায়খানা শক্ত হয়। তাই পায়খানা নরম করার জন্যে আপনাকে নিয়মিত পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি কিংবা তরল জাতীয় খাবার গ্রহণ করতে হবে।
পায়খানা নরম করার জন্য প্রতিদিন বেশি বেশি শাক-সবজি খাওয়ার চেষ্টা করুন। সবুজ শাকসবজি খাওয়ার ফলে আপনার শক্ত পায়খানা নরম করতে সাহায্য করবে। এছাড়াও বেল এর শরবত এবং পেপে খাওয়ার ফলে পায়খানা নরম হয়ে থাকে।
কোষ্ঠকাঠিন্য রোগ হচ্ছে একটি দীর্ঘমেয়াদি সমস্যা। প্রাথমিক ভাবে এই রোগের চিকিৎসা হলো প্রচুর পরিমাণে পানি পান করা, শরবত কিংবা তরল জাতীয় খাবার গ্রহন করা।
পায়খানা নরম করার জন্য বেশি করে শাকসবজি এবং আঁশযুক্ত খাবার খান এতে করে শক্ত পায়খানা নরম হবে। পায়খানা নরম করার জন্য নিয়মিত ব্যায়াম ও হাঁটাচলা করুন। সোনাপাতা ও এলোভেরা কিংবা ঘৃতকুমারী খাওয়ার ফলে অনেক উপকার পাওয়া যায়। বেল, পেপে, ইসবগুলের ভুষি ইত্যাদি নিয়মিত খেলে পায়খানা ক্লিয়ার থাকবে। এছাড়াও নিয়মিত হালকা গরম দুধ পান করলে আপনার পায়খানা নরম করতে সাহায্য করবে।
এই পদ্ধতিগুলো অনুসরণ করে যদি উপকার না হয় তবে আপনার নিকটস্থ বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করুন। অনেকেই আছেন যারা কোষ্ঠকাঠিন্যের কারণ গুলো শনাক্ত না করে কিংবা উপরোক্ত আলোচনা করা প্রাথমিক ব্যবস্থাগুলো না নিয়ে শুরু থেকে পায়খানা নরম করার জন্য বিভিন্ন ধরনের ওষুধ, সিরাপ এবং মল-দ্বারের ভিতরে দেয়ার ওষুধ প্রতিনিয়ত ব্যবহার করেন, যে কাজটি করা একজন ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী করা উচিত নয়।
নিয়মিত এসকল ওষুধ, সিরাপ ব্যবহার করলে তা পরবর্তীতে অভ্যাসে পরিণত হয়ে যেতে পারে। আর এই কারণে মলদ্বারের স্বাভাবিক কার্যক্ষমতা আর আগের মতো থাকেনা। সুতরাং এই পায়খানা নরম করার জন্য উপরোক্ত বিষয় গুলো সঠিক ভাবে অনুসরণ করুন।
কি খেলে পায়খানা নরম হবে
আপনার যদি কোষ্ঠকাঠিন্য বা পায়খানা কষা কিংবা পায়খানা শক্ত হয়ে থাকে তবে আপনি প্রচুর পরিমাণে পানি খাওয়ার চেষ্টা করবেন। কেননা পানি খাওয়ার মাধ্যমে আপনার কোষ্ঠকাঠিন্য বা পায়খানা কষা সমস্যা অনেকখানি দূর হবে। পাশাপাশি সকালে ঘুম থেকে উঠে খালি পেটে পানি পান করুন এবং ব্যায়াম করবেন এছাড়াও প্রচুর শাকসবজি বা আঁশ জুক্ত খাবার বেশি বেশি খাবেন এবং বেশি বেশি ফলফ্রুট খাবেন বেশি বেশি।
জেনে রাখা ভালো যে খাবারে যদি আঁশ না থাকে তবে কোষ্ঠকাঠিন্য বা কষা পায়খানা থেকে মুক্তি পাওয়া কঠিন। তো এখন আপনি কিভাবে খাবারে আঁশ বাড়াবেন? ১-২ দিনের মধ্যে হয়তো তো আপনি খাবারে পরিবর্তন আনতে পারবেন না এই অবস্থায় আমি এখন আপনাকে খাবারে আঁশ বাড়ানোর সহজ উপায় বলবো।
খাবারে আঁশ বাড়ানোর সহজ উপায় হচ্ছে ইসবগুলো ভুসি খাওয়া। এটা আপনি ফার্মেসি থেকে কিনতে পারবেন এবং প্যাকেটে লেখা অনুযায়ী পরিমাণ মতো নিয়ে পানিতে ভালোভাবে মিশিয়ে সাথে সাথে খেয়ে ফেলবেন।
এখানে চিনি দেয়ার কোনো প্রয়োজন নেই অনেকেই আছেন যারা রাতে গুলিয়ে সকালে খান মূলত সেটা সঠিক নিয়ম না। ইসবগুলের ভুসি খাওয়ার সঠিক নিয়ম হলো সাথে সাথে খাওয়া। দিনে দুবেলা করে খাবেন ভরা পেটে।
আর হ্যাঁ ইসবগুলো ভুসি খেলে অবশ্যই দিনে ২ লিটার পানি খাবেন তা নাহলে পেটে ব্যাথা হতে পারে অথবা পেটে বিভিন্ন জটিলতা হতে পারে। জেনে রাখা ভালো খাবারে আঁশ বাড়ানোর জন্য এই ইসবগুলের ভুসি একটি সাময়িক সমাধান মাত্র। এটি দীর্ঘ সময় ধরে খাওয়া যাবে না তাতে ডায়রিয়া সহ আরো অন্যান্য সমস্যা দেখা দিতে পারে।
পায়খানা ক্লিয়ার করার উপায়
পায়খানা ক্লিয়ার না হওয়ার জন্য এমন কিছু খাবার রয়েছে অর্থাৎ এমন কিছু খাবার রয়েছে যেগুলো খেলে পায়খানা ক্লিয়ার হয়না। খাবারগুলো হচ্ছে, অতিরিক্ত পরিমাণে তেল জাতীয় খাবার খাওয়া, ভাজাপোড়া বেশি বেশি খাওয়া, ধূমপান করা, শুকনো খাবার বেশি বেশি খাওয়া। এসকল খাবার খেলে পেটে গ্যাস কিংবা এসিডিটির সৃষ্টি হয়ে থাকে।
আর পেটের এই গ্যাস বা এসিডিটির ফলে পেটের মধ্যে যে সকল মহল আছে সেগুলো শক্ত হয়ে যায়। আর এই কারণে মূলত পায়খানা ক্লিয়ার হয় না। তাই যদি আপনি পায়খানা ক্লিয়ার করতে চান তবে আপনি উপরোক্ত আলোচনা করা ভাঁজাপোড়া, অতিরিক্ত তেল জাতীয় খাবার, ধুমপান করা থেকে বিরত থাকতে হবে।
আপনি নিম্নে আলোচনা করা যেকোনো ১টি পদ্ধতি অনুসরণ করার মাধ্যমে সহজেই পায়খান ক্লিয়ার করতে পারবেন। পায়খানা ক্লিয়ার করার উপায় গুলো মনোযোগ সহকারে পড়ুন এবং সঠিক পদ্ধতিতে অনুসরণ করুনঃ
১। যাদের পায়খানা ক্লিয়ার হয়না অর্থাৎ পায়খানায় সমস্যা হয় তারা রাতে ঘুমানোর পূর্বে ১ গ্লাস হালকা গরম দুধের সঙ্গে ইসবগুলের ভুসি যুক্ত করে নিবেন ৩-৪ চামচের মতো। দুধের সঙ্গে ইসবগুলের ভুসি একত্রিত করার পরে ১০ মিনিট থেকে ২০ মিনিট অপেক্ষা করুন এবং তারপর খেয়ে নিন।
গরম দুধের সঙ্গে ইসবগুলের ভুসি খাওয়ার পরে ১০ মিনিট থেকে ১ ঘন্টার মধ্যে আশা করা যায় আপনার পায়খানা ক্লিয়ার হয়ে যাবে। আর যদি আপনার পায়খানার সমস্যাটি বেশ জটিল হয়ে থাকে তবে এই গরম দুধের সাথে ইসবগুলের ভুষি খাওয়ার ফলে পরদিন সকালবেলা ঘুম থেকে উঠে পায়খানা ক্লিয়ার হবে। কেননা ইসবগুলের ভুষি সবসময় পেট ঠান্ডা রাখে এবং পেটের গ্যাস থেকে আপনাকে অনেকটা মুক্ত করে।(alert-success)
২। যদি আপনি নিম পাতা সঠিক ভাবে খেতে পারেন তবে আপনার পায়খানা সমস্যা সমাধান হয়ে পায়খানা ক্লিয়ার হবে। নিম পাতা খাওয়ার ফলে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে। আপনারা প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে ১০ থেকে ১২ গ্রাম এর মতো নিম পাতার রস খাবেন তাহলে ১০ থেকে ২০ মিনিটের ভিতরে আপনাদের পায়খানা ক্লিয়ার হবে।(alert-passed)
৩। বেশি বেশি শাকসবজি খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য সমস্যা অনেক ক্ষেত্রেই ঠিক হয়ে যায় ফলে পায়খানা ক্লিয়ার হতে সাহায্য করে। তাই যদি আপনি এই সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে চান তবে আপনার খাবার মেন্যুতে যতটা সম্ভব হয় শাক সবজির পরিমাণ বৃদ্ধি করুন।
প্রতি ১ হাজার কিলোক্যালোরি খাবারে ১৪ গ্রাম ফাইবার কিংবা আঁশ জাতীয় খাবার থাকতে হবে। যদি আপনার সারাটা দিনে ২ হাজার কিলোক্যালোরি খাবারের প্রয়োজন হয় তবে আপনাকে ২৮ গ্রাম ফাইবার কিংবা আঁশ জাতীয় খাবার খাওয়া উচিত। শস্য, শিম বরবটি, মটর, বিভিন্ন ধরনের ডাল, গমের রুটি, শাক-সবজি বিশেষত পাতা জাতীয় সবজি এবং টাটকা ফলগুলোতে যথেষ্ট পরিমাণে আঁশ থাকে।
পায়খানা ক্লিয়ার করার উপায় হিসেবে আমাদের দৈনন্দিন আমরা খাবার তালিকায় যেসকল খাবার রাখি সেগুলোতে ফাইবার কিংবা আঁশযুক্ত খাবার বেশি পরিমাণে রাখতে হবে। যেমনঃ সবুজ শাক-সবজি, ফলমূল, বিভিন্ন ধরনের ডাল-মটর, লাল আটা এবং লাল চালের মতো গোটা শস্যদানা খাবার তালিকায় বেশি পরিমাণে রাখা প্রয়োজন। ডাক্তাররা কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা এবং পায়খানা শক্ত হওয়ার সমস্যা দূর করার জন্য দৈনিক প্রায় ৩০ গ্রাম আঁশযুক্ত খাবার বা ফাইবার খাওয়ার পরামর্শ প্রদান করে থাকেন।
পায়খানার ক্লিয়ার করার জন্য বিভিন্ন প্রকার শাক-সবজি, তরি-তরকারি যেমন- পেপে, আলু, গাজর, সিম, কাঁচা ডাটা, লাউ, বরবটি, কুমড়া এগুলোর বাইরের আবরণ হচ্ছে মূলত সেলুলোজ। আর এই সেলুলোজকে আঁশও বলা হয়। শাকসবজি কাঁচা ও টাটকা খাওয়া হলে বেশি উপকার পাওয়া যায়।
আলু, পটল, মূলা সবজি গুলো খোসা না ছিলে রান্না করে খাওয়াই উত্তম। আপেল খোসাসহ খাওয়া ভালো। আমরা জানি তুষের সেলুলোজ কোষ্ঠবদ্ধতা দূর করতে সাহায্য করে তাই মেশিনে ছাঁটা চালের থেকে ঢেঁকিতে ছাঁটা চাল খুব বেশি উপকারী শরীরের জন্য।
কমলালেবু, কাগজিলেবু, বাতাবিলেবু, আপেল, টমেটো এগুলোতে জৈব এসিড বিদ্যামান। এই এসিড অন্ত্রে উত্তেজনার সৃষ্টি করে যা মলত্যাগে সহায়তা করে। এজন্য সকালবেলা খালি পেটে এই ধরনের ফলমূল বা ফলের রস খেলে কোষ্ঠবদ্ধতা দূর করা সহজেই।(alert-success)
৪। কখনও কখনও কিছু ঔষধ সেবনের কারণে ঔষধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার ফলে পায়খানা কষা বা পায়খানা শক্ত হয়ে যায় অথবা কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা দেখা দিতে পারে। কোনো নতুন ঔষধ সেবন করার পর যদি আপনার মনে হয় আপনার কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা দেখা যাচ্ছে কিংবা বৃদ্ধি পাচ্ছে।
তবে আপনি আপনি ডাক্তারের সঙ্গে যোগাযোগ করুন। যদি আপনি ডাক্তার দেখান তবে তিনি এই ঔষধ গুলো পরিবর্তন করে দিতে পারেন অথবা কোষ্ঠকাঠিন্যের চিকিৎসার জন্যে অন্য কোনো ঔষধ সঙ্গে খাওয়ার জন্যে পরামর্শ দিতে পারেন।(alert-success)
৫। যদি আপনি তালমাখনা নিয়মিত রাতে খেতে পারেন তবে আপনার পায়খানা ক্লিয়ার হবে এবং পেট থাকবে পরিষ্কার। তালমাখনা হচ্ছে একটি উপকারী ভেষজ ওষুধ। তালমাখনা বীজ, পাতা এবং শিকড় ঔষধ হিসেবে ব্যবহার করা হয়ে থাকে।
তালমাখনা গনোরিয়া, জন্ডিস, বাতব্যথা এবং মূত্রাশয়ের প্রদাহ সারাতে ব্যাপক ভাবে ব্যবহৃত হয়। তালমাখনা খাওয়ার নিয়ম মেনে খেলে হজমের গন্ডগোল থেকেও খুবই সহজে মুক্তি পাওয়া যায়।
তালমাখনা আপনি রাতে ঘুমানোর পূর্বে খাবেন আর সকালবেলা ঘুম থেকে উঠে ১ বার খাবেন। এই পদ্ধতি অনুসরণ করার মাধ্যমে আপনার ১ থেকে ২ দিনের মতো সময় প্রয়োজন হবে পায়খানা ক্লিয়ার হওয়ার জন্য। এই তালমাখনা খাওয়ার কারণে আপনার শুধুমাত্র পায়খানার সমস্যাই দূর হবে না সেই সাথে আপনার প্রস্রাবের বিভিন্ন সমস্যা থাকলেও তা থেকে সহজেই সমাধান হয়ে যাবে।(alert-success)
৬। পায়খানার বেগ আসলে তা চেপে রাখা উচিত নয়। পায়খানা আসলে তা কখনো জোড় করে চেপে রাখা যাবেনা। কেননা পায়খানা জোড় করে চেপে রাখলে তা পরবর্তীতে কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যাকে আরো মারাত্মক আকারে ধারণ করতে সাহায্য করবে।
পায়খানার বেগ চেপে রাখার কারণে আপনার জন্য বড় ধরনের সমস্যা হতে পারে যেমনঃ পাইলস এবং এনাল ফিসার সহ গেজ রোগের মতো আরো বিভিন্ন রকমের সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে। তাই আপনার উচিত যখন পায়খানার বেগ আসবে তখন তা চেপে না রেখে যতটা দ্রুতসম্ভব টয়লেটে যাওয়া।
যাদের কোষ্ঠকাঠিন্য কিংবা পায়খানা কষা বা পায়খানা শক্ত হওয়ার মতো সমস্যা রয়েছে এবং পায়খানা ক্লিয়ার হয় না তাদের মলত্যাগ করার জন্য সবথেকে ভালো উপায় হচ্ছে প্যান অর্থাৎ লো কমোডে পায়খানা করা।
যদি লো কমোডে বসে পায়খানা করা সম্ভবপর না হয় একান্তই যদি হাই কমোড ব্যবহার করা লাগে তবে সেক্ষেত্রে পায়ের নিচের ছোট টুল কিংবা এই জাতীয় উঁচু কোনো কিছু দিয়ে বসার চেষ্টা করবেন যেন পা উঁচু করে বসা যায়। এভাবে বসার ফলে ২ হাঁটু কোমরের ওপরে থাকে ফলাফল স্বরূপ মলত্যাগ করতে সহজ হয়। পায়খানা ক্লিয়ার করার উপায় হিসেবে এই পদ্ধতি অনেক গুরুত্বপুর্ণ।(alert-success)
৭। প্রতিদিন কিছু সময় ব্যায়াম কিংবা শরীরচর্চা করা উচিত। নিয়মিত শরীরচর্চা কিংবা ব্যায়াম আমাদের শরীরের জন্যে অত্যন্ত উপকারি। কেননা শরীরচর্চা করার কারণে আমাদের শরীরের কোষগুলো থাকে সতেজ থাকে আর কোষ সচল থাকলে তা শরীরকে সচল রাখে ফলাফল স্বরূপ আমাদের শরীরের বিভিন্ন কার্যক্রম স্বাভাবিক থাকে সাথে পায়খানা নরম করতে সাহায্য করে। তাই প্রতিদিন কিছুক্ষণ হলেও শরীরচর্চা বা ব্যায়াম করার অভ্যাস করা আমাদের উচিত।
শরীরচর্চা আপনি বিভিন্ন মাধ্যমে করতে পারবেন। যেমনলঃ দ্রুত হাঁটাহাটি বা সাইকেলিং করা অথবা দৌড়া দৌড়ি করা, ফুটবল খেলা বা ক্রিকেট খেলা, সাঁতার কাটা, দড়ি লাফ ইত্যাদি ব্যায়ামগুলো আপনি যতটুকু পারেন করুন।
শুরুতে আস্তে আস্তে করুন যদি অ্যান্য ব্যায়ামগুলো না করতে পারেন তাহলে আপনি হাটাহাটি দিয়েই শুরু করুন। গবেষণায় জানা গেছে, শক্ত পায়খানা ক্লিয়ার করার জন্য কিংবা কোষ্ঠকাঠিন্য কমানোর জন্য হাঁটাহাঁটি কিংবা হালকা শরীরচর্চা খুবই কার্যকরী ভূমিকা পালন করে থাকে। পায়খানা ক্লিয়ার করার উপায় হিসেবে নিয়মিত ব্যায়াম করুন।(alert-success)
৮। পায়খানা ক্লিয়ার করার উপায় হিসেবে মানসিক ভাবে নিজেকে সবসময় হাসিখুশি রাখুন। হাসিখুশি থাকার জন্য সবসময় এমন ধরনের কাজ করবেন যে কাজ করলে আপনি খুশি থাকবেন আপনার মন সব সময় সতেজ ও ভালো থাকবে।
আর আপনি যদি কোনো কারনে ডিপ্রেশনে থাকেন কিংবা নানা রকম দুশ্চিন্তা ও হতাশায় ভুগেন, তবে সেই রোগের জন্যে আপনি আলাদাভাবে চিকিৎসা গ্রহণ করুন। কেননা যদি আপনি মানসিক সমস্যায় থাকেন তবে আপনার শরীর নিস্তেজ থাকবে এবং শরীরের কোষগুলো দুর্বল হয়ে পড়বে যার ফলাফল স্বরূপ পায়খানা ক্লিয়ার হবেনা।
তাই যদি আপনি মানসিক অবস্থার উন্নতি করতে পারেন তবে এর সঙ্গে সঙ্গে কোষ্ঠকাঠিন্যও দূর করতে পারবেন। পায়খানা ক্লিয়ার করার উপায় হিসেবে এই পদ্ধতি অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ।(alert-success)
৯। পায়খানা ক্লিয়ার করার উপায় হিসেবে দিনে অন্তত ০২ লিটার পানি পান করতে হবে। আমরা সকলেই জানি পানি পেটের যেকোনো প্রকার সমস্যা দূর করতে অনেক কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। পানি কষা পায়খানা বা শক্ত পায়খানা নরম করে কোষ্ঠকাঠিন্য সমস্যা দূর করতে সহায়তা করে।
যখন আপনি ফাইবার জাতীয় খাদ্য বেশি পরিমাণে খাবেন তখন সঙ্গে প্রচুর পরিমাণে পানি এবং তরল খাবার খেতে হবে। কেননা ফাইবার সমৃদ্ধ খাদ্য পানি বেশি শোষণ করে। যথেষ্ট পরিমানে ফাইবার জাতীয় খাবার এবং পানি খেতে পারলে দ্রুত পায়খানা ক্লিয়ার হয়ে যায় এবং কয়েকদিনের মাঝে কোষ্ঠকাঠিন্য সমস্যা দূর হয়ে যায়।
তাই পায়খানা ক্লিয়ার এবং কোষ্ঠকাঠিন্য সমস্যা থেকে রেহাই পাওয়ার জন্য প্রতিদিন মিনিমাম ২ লিটার পানি পান করা অবশ্যই প্রয়োজন।পায়খানা ক্লিয়ার করার উপায় হিসেবে নিয়মিত ০২ লিটার পানি পান করার কোনো বিকল্প নেই।(alert-success)
উপরোক্ত আলোচনা থেকে পায়খানা ক্লিয়ার করার উপায় সম্পর্কে জানতে পারলেন। এই পদ্ধতি গুলো অনুসরণ করে সঠিক ভাবে প্রয়োগ করে পায়খানা ক্লিয়ার করতে পারবেন সহজেই। আমরা যেসকল উপায় সম্পর্কে কথা বলাম সেগুলো প্রয়োগ করার কারণে আপনার শরীরের কোনো ক্ষতি হবে না এবং দ্রুত পায়খানা ক্লিয়ার করে আপনি উপকার পাবেন।
পায়খানার রাস্তায় ব্যথা হলে করণীয়
পায়খানার রাস্তায় ব্যথা হলে এবং রক্তপাত হলে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হোন। বর্তমানে পায়ুপথের বেশিরভাগ সমস্যাই কিন্ত নিরাময়যোগ্য, এমনকি প্রথম অবস্থায় ক্যান্সার ধরা পড়লে তারও চিকিৎসা আছে। অনেকেই আছেন যারা ফিসার এবং পাইলস সমস্যা ভোগেন।
প্রাথমিক অবস্থাতে অ্যানাল ফিসার এবং পাইলস রোগের চিকিৎসা করালে পরে অস্ত্রোপচারেরও প্রয়োজন হয়না। তবে হ্যাঁ ফিস্টুলা, পলিপ, অ্যাবসেস ও ক্যান্সার নিরাময়ে অস্ত্রোপচার করা আবশ্যক। পায়ুপথের সমস্যা সমাধানে ছোটো কিংবা মাঝারি ধরনের অস্ত্রোপচার করার দরকার হতে পারে। প্রিয় পাঠক অস্ত্রোপচারের নাম শুনেই ঘাবরাবেন না।
পায়ুপথ রোগের জটিলতা
পায়ুপথ রোগের যদি সময়মতো চিকিৎসা না করাতে পারেন তবে পায়ুপথের সমস্যা অনেক জটিল আকার ধারণ করতে পারে। দুঃখের বিষয় অ্যানাল ফিসার থেকে আপনার হতে পারে অ্যানাল স্টেনোসিস অর্থাৎ পায়ুপথ সংকীর্ণ বা ছোট হয়ে আসা। এটি হওয়ার কারণে মলত্যাগে কষ্ট আরো বৃদ্ধি পাবে। সংক্রমণ হলে সেখান থেকে অ্যাবসেস অর্থাৎ ফোড়া হয়ে থাকে, যা অনেক বেশি বেদনাদায়ক।
এই সমস্যা দেখা দিলে মলত্যাগ তো দূরের কথা, ঠিকভাবে বসতে এবং দাঁড়াতে পারবেন না অর্থাৎ তখন অনেক বেশি কষ্ট হয়ে থাকে। যদি আপনি এই ফোড়া সঠিক সময় কাটতে এবং অ্যান্টিবায়োটিক দিয়ে চিকিৎসা না করাতে পারেন তবে এখান থেকে আপনার হতে পারে ফিস্টুলা। ফিস্টুলা হচ্ছে আরেক বিব্রতকর ব্যাপার। যদি ফিস্টুলা হয়ে যায় তবে মলমূত্রের নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে বা নষ্ট হয়ে যায়, যার ফলে এমনিতেই মলমূত্র বের হয়ে আসে।
পাইলসের সমস্যা সঠিক চিকিৎসা না করাতে পারলে মলের সাথে রক্তক্ষরণ হতে হতে রোগীর রক্তশূন্যতা হয়েও যেতে পারে। আবার অনেক সময়ে পরীক্ষা না করে বোঝা সম্ভবপর না যে পায়ুপথের এসকল সমস্যা নিরীহ কিছু, নাকি ক্যান্সারের পূর্বলক্ষণ।
আর যদি ক্যান্সার শনাক্ত করতে দেরি হয়ে যায় তবে তা শরীরের আরো বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা থাকে ফলে মৃ- ত্যুঝুঁকি বেড়ে যায়। তাই এসকল রোগ কখনোই লুকিয়ে রাখা উচিত নয়। সঠিক সময়ে যদি পদক্ষেপ নেয়া যায় তবে সকল জটিলতা এড়ানো সম্ভবপর হয়।
পায়ুপথের সমস্যা প্রতিরোধে করণীয় - পায়খানার রাস্তায় ব্যথা হলে করণীয়
- প্রচুর পরিমাণে পানি পান করুন। পানি পান করার কারণে কোষ্ঠকাঠিন্য সমস্যা দূর হবে।
- যাদের কোষ্ঠকাঠিন্য সমস্যা আছে তাঁরা প্রয়োজনে নিয়মিত ইসবগুলের ভুষি খান। এত করে অনেক উপকার পাবেন।
- পায়খানার বেগ পেলে তা চেপে রাখবেন না, অর্থাৎ পায়খানার চাপ এলেই সাথে সাথে টয়লেটে যান।
- খাদ্যাভ্যাস এবং জীবনাচরণে স্বাস্থ্যকর পরিবর্তন আনুন এতে করে আপনার পায়ুপথের সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।
- কোষ্ঠকাঠিন্য সমস্যা দূর করতে নিয়মিত হাঁটাহাটি করা এবং ব্যায়াম করা জরুরি। প্রতিদিন চেষ্টা করুন কিছু কায়িক শ্রম করার।
- প্রতিদিন কমপক্ষে ৬ গ্রাম আঁশযুক্ত খাবার খাওয়া উচিত। আঁশ কিংবা ফাইবার টাটকা শাক-সবজি, খোসাসহ ফলমূল এবং গোটা শস্য প্রভৃতিতে পাওয়া যাবে।
- কারো কারো পায়খানা অনিয়মিত হয়ে থাকে। তবে হ্যাঁ ০৩ দিনের বেশি পায়খানা না হলে তবে আপনাকে বুঝতে হবে যে আপনি কোষ্ঠকাঠিন্যে সমস্যায় ভুগছেন।
- ধূমপান একেবারে বর্জন করুন কেননা এটি আপনার ক্ষতি ব্যতীত কোনো লাভ দিবে না। ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা করুন। খাসির মাংস বা গরুর মাংস খুব বেশি খাবেন না। অতিরিক্ত তেলচর্বিযুক্ত খাবার, ফাস্টফুড এগুলো থেকে বিরত থাকুন বা বেশি পরিমাণে খাবেন না। কারণ এই খাবার গুলো বৃহদন্ত্রের স্বাস্থ্যের জন্যে ব্যাপক খারাপ।
- ৪০ (চল্লিশ) বছর বয়সের পরে আমাদের সকলের নিয়মমাফিক পায়ুপথ এবং পায়ুনালির (কোলোরেক্টাল) ক্যান্সারের স্ক্রিনিং পরীক্ষা করানো প্রয়োজন, বিশেষ করে যাঁদের পরিবারে কারো এই ধরনের রোগের সমস্যা আছে।
পাতলা পায়খানার ট্যাবলেট এর নাম
পাতলা পায়খানার ঔষধ হিসেবে ফ্লাজিল এবং মেট্রোনিডাজল অনেক বেশি প্রচলিত। কিন্ত হ্যাঁ মনে রাখা ভালো প্রয়োজন ব্যতীত এই সকল খাওয়া উচিত নয়। লপেরামাইড (Loperamide) হচ্ছে অ্যান্টিমটিলিটি ঔষধ। অর্থাৎ এটি খেলে অন্ত্রের চলন হ্রাস পায়, যার ফলে বারে বারে টয়লেটে যাওয়ার প্রবণতা কমে যায়। উক্ত ঔষধ গুলো ব্যতীত নিম্নে পাতলা পায়খানার ট্যাবলেট এর নাম দেওয়া হলোঃ
- Metryl মেট্রিল ৫০০ (১ টা করে খাবার খাওয়ার পরে দিনে ৩ বার)
- Aprocin এপ্রোসিন ৫০০ (১ টা করে খাবার খাওয়ার পর দিনে ২ বার)
যদি মেট্রিলে ঔষধে কাজ হয় তবে আপনি Nitoxin নিটক্সিন ৫০০ ( ১ টা করে খাবার খাওয়ার পর দিনে ২ বার) খেতে পারেন। সাথে Aprocin 500 চলবে। মেট্রিল ৫০০ খাওয়া বন্ধ করে দিবেন। এছাড়াও এ্যামোডিস এই ধরনের ঔষধ খেতে পারেন।
উপরোক্ত আলোচনা করা ঔষধ যদি কাজ না করে তবে আপনি নিম্নের ২ টি ঔষধ এক সঙ্গে খাবেন। Probio Tablet এই ঔষধটি চুষে খেতে হবে। দিনে ২ বার ১ টা করে খেতে হবে। Receca এই ঔষধটি ১ টি করে দিনে ৩ বার খাবেন এবং আপনার পাতলা পায়খানা বন্ধ হয়ে গেলে সঙ্গে সঙ্গে ট্যাবলেট খাওয়া বন্ধ করে দিতে হবে। প্রিয় পাঠক অবশ্যই যেকোনো ঔষধ খাওয়ার পূর্বে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী খেতে হবে।
পায়খানা হওয়ার ঔষধের নাম
পায়খানা হওয়ার ঔষধে নাম হচ্ছে দূরালেক্স (Duralax)। সাধারণত কোষ্ঠকাঠিন্য কিংবা পায়খানা ক্লিয়ার করার জন্যে আপনি Duralax ঔষধটি খেতে পারেন। আপনি যদি এই ঔষধটি খেতে পারেন তবে আপনার পায়খানা ক্লিয়ার হবে। পায়খানা হওয়ার জন্যে এই ঔষধটি অনেক ভালো।
পায়খানা হওয়ার ঔষধ হিসেবে ডাক্তাররা বেশিরভাগ সময়ই Duralax ঔষধটি খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন। প্রিয় পাঠক যদি আপনার পায়খানা ক্লিয়ার না হয় কিংবা কোষ্ঠকাঠিন্যে সমস্যায় ভুগেন তবে এই ঔষধটি খেতে পারেন। আমাদের দেশের অনেক মানুষ এই Duralax ঔষধটি খেয়ে থাকে, আর এই Duralax ঔষধটি খেয়ে অনেক মানুষ উপকার পেয়েছেন।
পায়খানা ক্লিয়ার হওয়ার ঔষধের নাম হলোঃ কোষ্ঠকাঠিন্যের ফলে পায়খানা ক্লিয়ার করার জন্যে ডাক্তাররা যেসকল ট্যাবলেট খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন তা হচ্ছেঃ
- Duralax 5mg
- Bisacodyl 5mg
- Dulcolax 5mg
জেনে রাখা ভালো দীর্ঘ মেয়াদে এসকল ঔষধ খাওয়া উচিত নয়। কেননা এগুলো খাওয়ার কারণে রক্তে পটাসিয়াম এবং শরীরে পানিশূন্যতার মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাই যেকোনো ঔষধ বা যেকোনো চিকিৎসা ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী করুন।
পায়খানার পাইলস এর কিছু ছবি
পায়খানার পাইলস এর কিছু ছবি |
পায়খানার পাইলস এর কিছু ছবি |
লেখকের শেষকথা
আমাদের আজকের এই আর্টিকেলে আলোচনা করলাম পায়খানা ক্লিয়ার করার উপায় সম্পর্কে। বর্তমান দেখা যায় প্রায় মানুষ পায়খানা ক্লিয়ার হয় না কিংবা কোষ্ঠকাঠিন্যে সমস্যায় ভোগেন। পায়খানা ক্লিয়ার না হওয়ার সমস্যা দূর করার জন্য আমরা এখানে বিস্তারিত ভাবে আলোচনা করেছি।
এই পদ্ধতি গুলো অনুসরণ করলে আপনি খুবই সহজে কোষ্ঠকাঠিন্যে সমস্যার সমাধান করতে পারবেন এবং আপনার পায়খানা ক্লিয়ার হবে। পায়খানা ক্লিয়ার করার উপায় লেখাটি কেমন লেগেছে এবং আপনার এই বিষয়ে আরো বিস্তারিত জানার থাকলে অবশ্যই তা কমেন্টে জানিয়ে দিবেন। পায়খানা ক্লিয়ার করার উপায় লেখাটি শেষ পর্যন্ত মনোযোগ সহকারে পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।