শেয়ার বাজার কি - শেয়ার বাজার কিভাবে কাজ করে - শেয়ার মূলত ইংরেজী শব্দ যা বর্তমানে বহুল প্রচলিত বাংলায় ব্যবহৃত হচ্ছে। শেয়ার মানে অংশ, ভাগ, কোম্পানি বা ব্যবসার ক্ষেত্রে কোম্পানির মালিকানার বা ব্যবসার মালিকানার অংশকে বুঝায়।
সুচিপত্রঃ শেয়ার বাজার কি - শেয়ার বাজার কিভাবে কাজ করে
শেয়ার বাজারকে ইংরেজীতে Share Market বা Stock Market বলা হয়। বর্তমানে সংবাদপত্র বা টিভি চ্যানেলে খবরের একটি অংশ জুরে থাকে শেয়ার বাজার বা শেয়ার মার্কেট। অনেক চ্যানেলে শেয়ার বাজার নিয়ে আলাদা খবর প্রচার করে থাকে।
শেয়ার বাজার হলো অর্থ বিনিয়োগে সেরা বিকল্প মাধ্যম। শেয়ার বাজার বিনিয়োগকারী এবং নিবন্ধিত কোম্পানির মধ্যে সম্পর্ক তৈরী করে। শেয়ার বাজার এমন একটি বিকল্প মাধ্যম যার সাহায্যে আপনি অন্যান্য মাধ্যমগুলোর তুলনায় বিনিয়োগের বিপরীতে অধিক পরিমাণে আয় করতে পারবেন।
শেয়ার বাজার মূলত ইলেক্ট্রনিক মাধ্যম। শেয়ার বাজারে আপনি ইলেক্ট্রোনিকাল অ্যাক্সেস ব্যবহার করে আপনার মোবাইল বা কম্পিউটার অ্যাপ এর মাধ্যমে লেনদেন/শেয়ার কেনাবেচা করতে পারবেন।
সিডিবিএল (সেন্ট্রল ডিপোজিটরি বাংলাদেশ লিমিটেড) এর তথ্য মতে বাংলাদেশে বর্তমানে পুজিঁবাজারে বিনিয়োগকারীর সংখ্যা ২৬ লাখ ৫৯ হাজার ৬৩০ জন এবং কোটি টাকার উপরে বিনিয়োগকারীর সংখ্যা ২৩ হাজার ২১০ জন।
শেয়ার বাজার কি
সহজ অর্থে বা সহজ কথায় যে বাজারে শেয়ার বেচাকেনা হয় তাকে শেয়ার বাজার বলা হয়। শেয়ার মার্কেট বা শেয়ার বাজার আপনার সঞ্চিত অর্থ অন্যান্য কোম্পানির সাথে যুক্ত করে অর্থায়ন করাকে বুঝায়।
শেয়ার বাজার হচ্ছে একটি নির্দিষ্ট বাজার/স্থান যেখানে নিয়মিত ভাবে বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান এর ঋণপত্র ক্রয়-বিক্রয়, সাধারন যৌথ মূলধনী কোম্পানি তাদের শেয়ার, স্টক, ডিবেঞ্চার, সিকিউরিটি ইত্যাদি ক্রয়-বিক্রয় সম্বন্ধিত লেনদেন পরিচালনা করা হয়।
শেয়ার বাজার হলো এমন একটি বাজার যেখানে ব্রোকার হাউজের সহায়তায় শেয়ার বন্ড এবং মিউচুয়াল ফান্ডের কেনাবেচার কাজ পরিচালনা করা হয়। এখন বুঝতে হবে ব্রোকার হাউজ কি? বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ এন্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন আইনের ১৯৩ ধারার ১০ এর অধীনে শেয়ার বাজারে বিক্রয় বা ক্রয়ের যাবতীয় কাজ কর্ম করার জন্য একটি অনুমোদিত প্রতিষ্ঠানকে বুঝায়।
ব্রোকার হাউজগুলো ব্যাংকের মতই কাজ করে। বিনিয়োগকারীদের বিও একাউন্ট খুলে প্রাইমারি ও সেকেন্ডারি শেয়ার মার্কেট থেকে শেয়ার কেনার জন্য টাকা জমা নেয়।) শেয়ার বাজার থেকে বিও একাউন্টধারী যে কেউ শেয়ার কেনাবেচা করতে পারেন।
শেয়ার বাজার পরিচালনার জন্য বাংলাদেশে ২ (দুটি) শেয়ার বাজার আছে। একটি ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ, ২য়টি চট্রগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ। বাংলাদেশের শেয়ার বাজার ২টি নিয়ন্ত্রণ করার জন্য রয়েছে সিকিউরিটি অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন বা এসইসি।
এই সংস্থার কাজ হলো শেয়ার বাজার পরিচালনা, নিয়ন্ত্রণ, আইন প্রণয়ন, সংশোধন, পরিমার্জন এবং বিনিয়োগকারীদের প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহন করা। স্টক এক্সচেঞ্জ নিজে সরাসরি শেয়ার কেনাবেচা করেনা। স্টক এক্সচেঞ্জ এর অনুমোদিত এজেন্ট বা ব্রোকারেজ হাউসের মাধ্যমে শেয়ার বাজারে শেয়ার কেনা বেচা হয়।
আরো পড়ুনঃ আমেরিকা থেকে টাকা পাঠানোর নিয়ম
বাংলাদেশের শেয়ার বাজারে শেয়ার এর ধরণ
পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে শেয়ার বাজার রয়েছে। বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন ধরনের শেয়ার কিনতে পাওয়া যায়।বাংলাদেশে ২ (দুই) ধরনের পাবলিক শেয়ার ক্রয় করা যায়। ০১। প্রাইমারি /প্রাথমিক শেয়ারের মাধ্যমে ০২। সেকেন্ডারি শেয়ারের মাধ্যমে।
১। প্রাইমারি শেয়ার
প্রতিটি নিবন্ধিত কোম্পানি প্রাইমারী শেয়ারের মাধ্যমে শেয়ার বাজারে প্রবেশ করে। কোন নতুন কোম্পানিকে বাজারে অন্তর্ভুক্ত হওয়ার জন্যে কোম্পানিকে প্রাইমারী শেয়ার ছাড়তে হবে। প্রাথমিক/প্রাইমারী শেয়ারের একটি লিখিত মূল্য থাকে যা অনুমোদিত মূলধনের একক অংশ।
প্রতিটি কোম্পানি তাদের লাভ, সুনাম, সম্পদ ইত্যাদি বিবেচনা করে ফেস ভেলুর সাথে যুক্ত করে প্রতিটি শেয়ারের দাম নির্ধারন করে থাকে। সিকিউরিটিজ এক্সচেঞ্জ কমিশন অনুমোদন দেয়ার পর কোম্পানি তাদের শেয়ার ক্রয়ের জন্য জনগণেরকাছে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে আহ্বান জানায়। এই পক্রিয়াকে বলে ইনিশিয়াল পাবলিক অফার (আইপিও)।
আগ্রহী ক্রেতাসাধারন বিও একান্ট খোলার মাধ্যমে নির্ধারিত ব্যাংকে টাকা জমা দিয়ে শেয়ার ক্রয়ের জন্য আবেদন করেন। শেয়ার অপেক্ষা আবেদন বেশী হলে লটারির মাধ্যমে বিজয়ীদের শেয়ার ইস্যু করা হয়। যারা বিজয়ী হতে পারেনা তাদের টাকা ফেরৎ প্রদান করা হয়।
২। সেকেন্ডারি শেয়ার
প্রাইমারী শেয়ার ক্রেতাগণ/হোল্ডারগণ যখন তাদের শেয়ার শেয়ার বাজারে বিক্রি করতে যায় তখন উক্ত শেয়ারকে সেকেন্ডারি শেয়ার বলে। সেকেন্ডারি শেয়ারের মূল্য নির্ধারিত থাকে না প্রতিনিয়ত উঠা নামা করে চাহিদার উপর।
শেয়ার বাজার কি ভাবে কাজ করে
শেয়ার বাজার বা শেয়ার মার্কেট বা স্টক মার্কেট কি ভাবে কাজ করে তা সুন্দর ভাবে ধাপে ধাপে উপস্থাপন করা হলোঃ
শেয়ার বাজার বা শেয়ার মার্কেট এর কাজের ধারনাটি বেশ সহজ। শেয়ার মার্কেট বিক্রেতা এবং ক্রেতার মধ্যে দামদর করতে এবং কেনাবেচা করতে সাহায্য করে। ন্যাশনাল স্টক এক্সচেঞ্জ এর কথা আপনি হয়তো শুনেছেন।
কোম্পানিগুলির স্টকের শেয়ারগুলিকে একটি ইনিশিয়াল পাবলিক অফারিং প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বিনিময় করে। বিনিয়োগকারীরা অর্থের বিনিময়ে সেই শেয়ারগুলি ক্রয় করে এবং কোম্পানিগুলি তাদের ব্যবসা বাড়ানোর জন্য অর্থ সংগ্রহ করে।
বিনিময়কারীরা তাদের স্টকশেয়ারগুলি নিজেদের মধ্যে ক্রয় এবং বিক্রি করতে পারে। স্টক এক্সচেঞ্জ প্রতিটি তালিকাভুক্ত স্টক শেয়ারের সরবরাহ এবং চাহিদা নিয়ন্ত্রণ করে। চাহিদা এবং সরবরাহ প্রতিটি স্টকের মূল্য নির্ধারন করতে সাহায্য করে।
শেয়ার বিক্রেতা যে বিনিময় আশা করে বা চেয়ে থাকে ক্রেতা তার চেয়ে কম অর্থ প্রদান করতে ইচ্ছুক তা বিড করে বা অফার করে।এই পার্থক্যই হলো বিড আস্ক স্প্রেড। কেনাবেচা প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ করার জন্য একজন ক্রেতাকে দাম বাড়াতে হয় অথবা একজন বিক্রেতাকে তার মূল্য হ্রাস করতে হয়। সম্পূর্ণ প্রক্রিয়াটি হয় ইলেকিট্রক মাধ্যমে। কম্পিউটার অ্যালগরিদম সাধারনত মূল্য নির্ধারনের গণনা করে।
নিন্মে সংক্ষিপ্ত আকারে শেয়ার বাজার কিভাবে কাজ করে তা ধাপে ধাপে বর্ণণা করা হলোঃ
১। কোন কোম্পানিকে শেয়ার বাজারে লিস্ট করতে হরে আইপিও লঞ্চ করা হয়।
২। কোম্পানি শেয়ার বাজারে লিস্ট হওয়ার পর বিনিয়োগকারীরা কোম্পানির শেয়ারকে কেনাবেচা ও ট্রেডিং করে থাকে।
৩। পূর্বে এই প্রক্রিয়াটি নির্দিষ্ট স্থানে করা হতো বর্তমানে থার্ড পার্টি অ্যাপ ব্যবহার এর মাধ্যমে ডিম্যাট একাউন্ট তৈরী করে বিনিয়োগ করতে পারেন।
৪। নিজে নিজে চাইলেই শেয়ার বিক্রি বা ক্রয় করতে পারবেন না। কারণ আপনার শেয়ারে ক্রয় অর্ডার দেয়ার আগে দেখতে হবে শেয়ার বিক্রি করার জন্য কোন বিক্রেতা আছে কিনা তা নাহলে আপনি কোন শেয়ার কিনতে পারবেন না।
৫। ঠিক তেমনি আপনার শেয়ার বিক্রি করতে চান তাহলেও শেয়ার ক্রয়ের জন্য লোক থাকতে হবে নইলে আপনার শেয়ারটি কেউ ক্রয় করবে না বা আপনি বিক্রি করতে পারবেন না।
৬। বর্তমানে অনলাইনে স্টক এক্সচেঞ্জ অ্যাপ ব্যবহার করে শেয়ার এর বর্তমান বাজারদর এবং বিক্রেতার-ক্রেতার দরদাম জানতে এবং দেখতে পারবেন।
আরো পড়ুনঃ কোটি টাকা আয় করার উপায়
কোন কোম্পানির শেয়ার ক্রয় করবেন ?
শেয়ার বাজার হতে কোন কোম্পানির শেয়ার ক্রয় করতে হলে বা শেয়ার মার্কেটে লাভ করতে হলে আপনাকে ৪ টি বিষয় ভালোভাবে জানতে হবে ১। কোম্পানির শেয়ার প্রতি লভ্যাংশ ২-শেয়ার প্রতি লভ্যংশের প্রবৃদ্ধি
৩। কোম্পানিতে বিনিয়োগের বিপরীতে লাভের হার এবং ৪। কোম্পানিটির শেয়ারের বাজার দর। আপনি যদি কোন কোম্পানির শেয়ার ক্রযের পূর্বে এই ৪টি জিনিস মনে রেখে শেয়ার ক্রয় করেন তাহলে আপনি ক্ষতির সম্মুকীন হবেন না।
শেয়ার বাজারে কেন বিনিয়োগ করবেন
আপনি শেয়ার বাজার বা শেয়ার মার্কেটে বিনিয়োগ করবেন কারন আপনার বিনিয়োগের টাকা দেশের অর্থনৈতিক উন্নতির কাজে ব্যয় করা হবে।সহজ কথায় দেশের উন্নয়নের জন্য নিজের সঞ্চিত টাকা বিনিয়োগ করছি। যে কোম্পানির আর্থিক রিপোর্ট ভালো সে সমস্থ কোম্পানি গুলোর শেয়ার ক্রয় করে অংশীদারি নিতে পারেন।
শেয়ার বাজার কিভাবে কাজ করে ভিডিও
শেয়ার বাজারে লাভ করার উপায়
পরিশেষেঃ শেয়ার বাজার কি - শেয়ার বাজার কিভাবে কাজ করে
পরিশেষে বলা যায় যারা অতি দ্রুত লাভের কথা চিন্তা করে শেয়ার বাজারে শেয়ার ক্রয়ের কথা ভাবছেন তাদের শেয়ার বাজারে না আসাই ভালো। শেয়ার বাজারে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে অবশ্যই সময় নিবেন। যে কোম্পানির শেয়ার ক্রয় করবেন ঐ কোম্পানি বিদ্যমান আছে কিনা জেনে নিবেন।
বৈধ এবং হালাল কোম্পানির শেয়ার ক্রয় করবেন। কোম্পানির ব্যবসা অবশ্যই হালাল হতে হবে। শেয়ার বেচাকেনার সকল নিয়ম নীতি বিদ্যমান থাকতে হবে। কোম্পানির লভ্যংশ অংশীদারদের মাঝে শেয়ারের অংশ অনুপাতে বন্টন করতে হবে।
কোম্পানিটি সুদী ব্যবসার সাথে জড়িত থাকতে পারবেনা। সকল বিষয়গুলো বিবেচনা করে এবং ভালোভাবে বুঝে একজন বিনিয়োগকারীর শেয়ার বাজারে বিনিয়োগ করা উচিৎ। আশা করি শেয়ার বাজার কি এবং শেয়ার বাজার কিভাবে কাজ করে তা নিয়ে যে আলোচনা করা হয়েছে তা একজন নতুন বিনিয়োগকারীকে শেয়ার বাজারে সঠিক পন্থায় লাভ জনক বিনিয়োগ করতে সাহায্য করবে।
আর্টিকেল সম্পর্কিত তথ্য জানতে কমেন্ট করুন। আপনার প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।