হতাশা থেকে মুক্তির ইসলামিক উপায়

হাসিবুর
লিখেছেন -
0

হতাশা একটি বিশেষ্য পদ। হতাশাকে ইংরেজিতে Disappintment, Frustration, Depression বলা হয়। মূল কথা হচ্ছে কোন ইচ্ছেপূরণ না হলে বা কাজের আশানুরূপ কোন ফল না পেলে যে মানসিক অবসাদের সৃষ্টি হয় তাকে হতাশা বলে।

হতাশা হচ্ছে একটি মানবিক অনুভূতি। হতাশার মাত্রাতিরিক্ত উপস্থিতি কখনও বড় বিপর্যয় সৃষ্টি করে। জীবনে না পাওয়ার বেদনায় মানবিক চাপ বা হতাশা অনুভব করা স্বাভাবিক বিষয় এটা নতুন কিছু নয়। জীবনে চলার পথে চাপ, না পাওয়ার বেদনা কিংবা বিপদ আপদ যতবেশিই হোক না কেন একজন প্রকৃত মুসলমান কোন অবস্থায়ই হতাশ হবেনা। কারণ হতাশ হওয়া প্রকৃত ঈমানদারের কাজ নয়।

বরং যেকোনো পরিস্থিতিতে যেকোনো অবস্থায় মহান আল্লাহ সুবান্নাহতালার ওপর আস্থা রাখাই একজন মুমিনের বুদ্ধিমানের কাজ। সব সময় মনে রাখা উচিৎ, যেকোনো সময় আপনার স্বাভাবিক পরিস্থিতি পরিবর্তন হতে পারে বা আপনি পরিবর্তন পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে পারেন।

মহান আল্লাহ কুরআনুল কারিমে এমন উঙ্গিত দিয়েছেন অনেকবার। যখনই বিপদে পরবে বা হতাশা পড়বে তখনই আল্লাহর বানী ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউনস্মরণ করবে। আল্লাহ তাআলা তার বান্দাদের পরীক্ষা করার জন্য হতাশা, রোগ-শোক, বিপদ-আপদ আল্লাহর পক্ষ থেকে দিয়ে থাকেন। আল্লাহ তাআলা বলেন-'আমি অবশ্যই তোমাদের পরীক্ষা করবো ক্ষুধা, ভয় এবং জান-মাল ও ফসলের কিছুটা ক্ষতি দিয়ে।

আর তুমি ধৈর্যশীলদের সুসংবাদ দাও-যখনই কোন বিপদ আসে তারা যেন বলে ’ইন্না রিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন’-নিশ্চয়ই আমরা আল্লাহর আর অবশ্যই আমরা তাঁর কাছেই ফিরে যাব।’(সুরা বাকারাঃ আয়াত ১৫৫-১৫৬)

সুতরাং যেকোনো হতাশা থেকে মুক্তির জন্য ইসলামিক উপায়ে বা কুরআন-সুন্নাহর আমল করা। যেকোনো পরিস্থিতিতে সব সময় আল্লাহর সাহায্য প্রার্থনা করা আবশ্যক। আজকের এই আর্টিকেলে আমরা আলোচনা করবো হতাশা থেকে মুক্তির ইসলামিক উপায় গুলো কি কি? তাই মানসিক চাপ বা হতাশা বেড়ে গেলে ইসলামিক উপাযে যে আমলগুলো করা জরুরি তাহলোঃ

হতাশা থেকে মুক্তির ইসলামিক উপায়

(toc) #title=(এক নজরে সম্পূর্ণ লেখা পড়ুন)

১. নামাজে মনোযোগী হওয়া

হতাশা থেকে মুক্তির ইসলামিক উপায় হলো নিয়মিত নামাজে মনোযোগী হওয়া। সকল প্রকার মসিবত, পেরেশানির সময় নামাজের মাধ্যমেই প্রশান্তি লাভ করা যায়। কেবলমাত্র নামাজের মাধ্যমেই কোন বান্দা মহান আল্লাহর সাহায্য লাভ করে থাকেন।

তাই হতাশা বা মানসিক পরিস্থিতি থেকে প্রশান্তি পেতে নামাজে মনোযোগী হওয়া আবশ্যক। আল্লাহ তাআলা বলেন-’ তোমরা নামাজ ও ধৈর্যের মাধ্যমে আমার সাহায্য প্রার্থনা কর। অবশ্য তা পালন যথেষ্ট কঠিন। কিন্তু যারা বিনয়ী কেবল মাত্র তাদর পক্ষেই তা সম্ভব।’ (সুরা বাকারা : আয়াত ৪৫)

হাদিসে উল্লেখ এসেছে হযরত মোহাম্মদ সাল্লআল্লাহু আলাইহি সাল্লাম যখন কোন কঠিন সমস্যার মুখোমুখি হতেন তখন নামাজ আদায় করতেন। ( আবু দাউদ)

সাহাবায়ে কেরামও একই আমলে অভ্যস্থ ছিলেন। তাঁরা অতি ছোট বিষয়ের জন্যও নামাজে দাঁড়িয়ে আল্লাহর নিকট সাহায্য চাইতেন। এমনকি সামান্য জুতার ফিতা ছিড়ে গেলেও নামাজের মাধ্যমে আল্লাহর নিকট সমস্যার সমাধান চাইতেন।

এখান থেকে আপনি বুঝতেই পারছেন নামাজ আমাদের জন্য কতটা গুরুত্বপূর্ণ। আশা করি হতাশা থেকে মুক্তির ইসলামিক উপায় টি আপনার অনেক কাজে দিবে।

আরো পড়ুনঃ দ্রুত বিয়ে হওয়ার আমল

২. নিয়মিত কুরআন তেলাওয়াত করা

হতাশা থেকে মুক্তির ইসলামিক উপায় অর্থাৎ ২য় উপায়টি হলো নিয়মিত আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য কুরআন তেলাওয়াত করা। নিয়মিত কুরআন তেলাওয়াত মনকে প্রফুল্ল করে তোলে যার ফলে হতাশা ও মানসিক চাপ কমে।

তাই মানসিক চাপ ও হতাশা কমাতে কুরআন তেলাওয়াতের কোন বিকল্প নেই। মহান আল্লাহর মধুর বাণী কুরআন তেলাওযাত মানুষের মনকে পবিত্র করে তোলে। কারণ কুরআন তেলাওয়াত মানুষের অন্তরের শুদ্ধতার অন্যতম উৎস। কুরআন তেলাওয়াত মাধ্যমেই মানুষের মানসিক প্রশান্তি পেয়ে থাকে। হতাশা ও দুঃশ্চিন্তা থেকে মুক্তি পেতে হরে নিয়মিত কুরআন তেলাওয়াত করতে হবে।

৩. আল্লাহর প্রতি তাওয়াক্কুল করা

হতাশা থেকে মুক্তির অন্যতম ইসলামিক উপায় হলো আল্লাহর প্রতি তাওয়াক্কুল করা। হতাশা, অশান্তি ও মানসিক হতাশা থেকে মুক্ত থাকতে মহান আল্লাহর প্রতি তাওয়াক্কুলের বিকল্প নেই। কেননা আল্লাহ স্বয়ং বলেছেন- যে মহান আল্লাহর প্রতি তাওয়াক্কুল বা ভরসা করে, তার জন্য আল্লাহই যথেষ্ট। (সুরা তালাক: আয়াত-৩)

আর দুনিয়ার যে ব্যক্তি সর্বাবস্থায় মহান আল্লাহর প্রতি তাওয়াক্কুল করতে জানে তার কোনো চিন্তা নেই।হাদিসে পাওয়া যায় আমাদের নবীজি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লিহিু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন- আল্লাহ তাআলা ঘোষনা করেছেন- আমি সেরূপ, যেরূপ বান্দা আমার প্রতি ধারনা রাখে। (বুখারি)

আরো পড়ুনঃ ঋণ পরিশোধের দোয়া

৪. বেশি বেশি দোয়া ও জিকির করা

সব ধরনের হতাশা থেকে মুক্তির জন্য এবং মনের প্রশান্তির জন্য বেশি বেশি আল্লাহর নামে জিকির করা ও আল্লাহর নিকট দোয়া চাওয়া। কারন বেশি বেশি দোয়া এবং জিকিরের মাধ্যমে সকল মসিবত, হতাশা থেকে মুক্তি মেলে এবং মনে প্রশান্তি আসে এবং তা আল্লাহ নিজে স্বয়ং ঘোষনা করেছেন। কুরআনে আল্লাহ বলেছেন- الَّذِينَ آمَنُواْ وَتَطْمَئِنُّ قُلُوبُهُم بِذِكْرِ اللّهِ أَلاَ بِذِكْرِ اللّهِ تَطْمَئِنُّ الْقُلُوبُ

যারা বিশ্বাস স্থাপন করে এবং তাদের অন্তর আল্লাহর জিকির দ্বারা শান্তি লাভ করে; জেনে রাখ! আল্লাহর জিকির দ্বারা অন্তরে স্থিরতা ও শান্তি আসে।’ (সুরা রাদ:আয়াত ২৮)

হজরত আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন কোনো দুঃখ-কষ্ট বা চিন্তা,হতাশাগ্রস্থ বা কোন কারণে অস্থির হতেন তখন বলতেন- يَا حَيُّ يَا قَيُّوْمُ بِرَحْمَتِكَ أَسْتَغِيْثُ

বাংলা উচ্চারণ: ইয়া-হাইয়ু ইয়া-ক্বাইয়ূ-মু বিরাহমাতিকা আস্তাগিছ। অর্থ: ’হে চিরঞ্জীব!হে চিরস্থায়ী! আপনার রহমতের মাধ্যমে আপনার নিকটে সাহায্য চাই।’(তিরমিজি,মুসতাদরেকে হাকেম,মিশকাত)

لَا اِلَهَ اِلَّا اَنْتَ سُبْحَانَكَ اِنِّى كَنْتُ مِنَ الظَّالِمِيْنَ

বাংলা উচ্চারণ : ‘লা ইলাহা ইল্লা আনতা সুবহানাকা ইন্নি কুনতু মিনাজ জ্বলিমিন।’

অর্থ: হে আল্লাহ! হে আমার প্রতিপালক! তুমি ছাড়া কোনো সত্য উপাস্য নেই; আমি তোমার পবিত্রতা বর্ণনা করছি। নিঃসন্দেহে আমি জালিমদের অন্তর্ভুক্ত।’ (তিরমিজি)

আমাদের প্রিয় নবীজি হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দুচিন্তাগ্রস্থ ও পেরেশানির সময় এ বিশেষ দোয়াটি বেশি বেশি পড়তেন। তাহলো- اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنَ الْهَمِّ وَالْحَزَنِ، وَالْعَجْزِ وَ أَعُوذُ بِكَ مِنَ الْبُخْلِ وَالْجُبْنِ، وَ أَعُوذُ بِكَ مِنَ ضَلَعِ الدَّيْنِ، وَغَلَبَةِ الرِّجَالِ

উচ্চারণ: ‘আল্লাহুম্মা ইন্নি আউযু বিকা মিনাল হাম্মি ওয়াল হাযানি, ওয়া আউযু বিকা মিনাল বুখলি ওয়াল জুবনি, ওয়া আউযু বিকা মিন দ্বালা’য়িদ্দাইনি ওয়া গালাবাতির রিজাল।’ (বুখারি, মুসলিম, মিশকাত)

বাংলা অর্থ: হে আল্লাহ! নিশ্চয়ই আমি দুশ্চিন্তা ও দুঃখ থেকে আপনার আশ্রয় চাই, অপারগতা ও অলসতা থেকে আপনার আশ্রয় চাই, কৃপনতা ও ভীরুতা থেকে আপনার আশ্রয় চাই আর ঋণের ভার ও মানুষদের দমন-পীড়ন থেকেও আপনার আশ্রয় চাই।

৫. সব সময় হাসি-খুশি থাকার চেষ্টা করা

হতাশা এবং অস্থিরতা থেকে মুক্তির জন্য হাসি-খুশি থাকার কোনো বিকল্প নেই। যে কাজ করলে আপনার কোন বাঁজে চিন্তা আসবে না এবং যে কাজের মাধ্যমে আপনার মনে শান্তি আসবে; সে কাজে নিজেকে অভ্যস্ত রাখা; তবে কাজটি অবশ্যই হালাল কাজ হতে হবে।

আপনাকে কোনো ভাবেই হারাম কাজের সাথে জড়িত রাখা যাবে না। হারাম- হালাল মেনা চলা খুবই জরুরি। হালাল উপার্জন, ইসলামিক নিয়ম অনুযায়ী চলা, হালাল বিনোদন উপভোগ করা, সৎ পথে চলা এবং সব সময় হাসি-খুশির মাধ্যমে আল্লাহর শুকরিয়া আদায়ের মাধ্যমে হতাশা থেকে মুক্তি পেতে পারেন।

৬. বেশি বেশি তাওবাহ-ইসতেগফার পড়া

হতাশা থেকে মুক্তির ইসলামিক উপায় বা হতাশা থেকে মুক্তির অন্যতম উপায় হলো বেশি বেশি তাওবাহ-ইসতেহফার পড়া। বেশি বেশি তাওবাহ-ইসতেগফার পড়লে হতাশা ও মানসিক চাপ কমে। রিজিক বাড়ে গোনাহ মাপ হয়। আল কুরআনে মহান আল্লাহ তা আলা বলেছেনঃ

وَّ یُمۡدِدۡکُمۡ بِاَمۡوَالٍ وَّ بَنِیۡنَ وَ یَجۡعَلۡ لَّکُمۡ جَنّٰتٍ وَّ یَجۡعَلۡ لَّکُمۡ اَنۡهٰرًایُّرۡسِلِ السَّمَآءَ عَلَیۡکُمۡ مِّدۡرَارًا فَقُلۡتُ اسۡتَغۡفِرُوۡا رَبَّکُمۡ ؕ اِنَّهٗ کَانَ غَفَّارًا

‘তারপর বলেছি- তোমরা তোমাদের পালনকর্তার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা কর। তিনি অত্যন্ত ক্ষমাশীল। তিনি তোমাদের উপর অজস্র বৃষ্টিধারা ছেড়ে দেবেন। তোমাদের ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্তুতি বাড়িয়ে দেবেন, তোমাদের জন্যে উদ্যান স্থাপন করবেন এবং তোমাদের জন্যে নদীনালা প্রবাহিত করবেন।’ (সুরা নুহ : আয়াত ১০-১২)

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি নিয়মিত ইসতেগফার করবে, আল্লাহ তাআলা তার সব সংকট দূর করে দেবেন। সমাধানের পথ বের করে দেবেন। তার সব দুঃশ্চিন্তা মিটিয়ে দেবেন এবং অকল্পনীয় উৎস থেকে তার রিজিকের ব্যবস্থা করে দেবেন।’ (আবু দাউদ)

অতএব কোন অবস্থাতেই হতাশ হওয়া যাবে না। মহান আল্লাহর ওপর অগাধ বিশ্বাস এবং আস্থা রাখা সকলেরই উচিৎ। হতাশা থেকে মুক্তির ইসলামিক উপায় কিংবা হতাশা থেকে মুক্তি লাভের জন্য নামাজে মনোযোগী হওয়া, বেশি বেশি তাওবাহ-ইসতেহফার পড়া, বেশি বেশি দোয়া ও জিকির করা এবং সর্বদা আল্লাহর নিকট শুকরিয়া আদায় করা।

মহান আল্লাহ তা আলা প্রত্যেক মুসলমানকে হতাশার সময় উল্লেখিত আমলগুলো যথাযথভাবে আদায় করার তাওফিক দান করুন। সকল প্রকার বিপদ ও হতাশা থেকে ইসলামিক উপায়ে মুক্তি দান করুন। আমিন।

আরো পড়ুনঃ বিপদ থেকে মুক্তির দোয়া

হতাশা থেকে মুক্তির দোয়া

দুশ্চিন্তা এবং মানসিক অস্থিরতা মানুষকে কুড়ে কুড়ে খায়। হতাশা বা টেনশন মানুষের স্বাভাবিক জীবন যাত্রাকে বাহ্যত করে। কষ্ট এবং চাপা যাতনার জগদ্দল পাথর বুকে বসিয়ে দিয়ে থাকে। এছাড়াও এই হতাশা, দুশ্চিন্তা, টেনশন শরীরে নানাবিধ অসুখ-বিসুখের সৃষ্টি করে। সেজন্য দুশ্চিন্তা, হতাশা এবং মানসিক যন্ত্রণা থেকে দূরে থাকতে আমরা সকলেই চাই।

একজন প্রকৃত মুমিন কখনোই হতাশ কিংবা দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হোন না। দুশ্চিন্তা, টেনশন এবং মানসিক অস্থিরতা থেকে মুক্তি পেতে হাদিসে অনেক দোয়া শিক্ষা দেয়া হয়েছে। হতাশা থেকে মুক্তির ইসলামিক উপায় হিসেবে হতাশা থেকে মুক্তির দোয়া গুলো বেশি বেশি পাঠ করুন। আপনি লক্ষ্য করবেন আপনার দুশ্চিন্তা এবং টেনশন, পেরেসানি, বিষাদ-ক্লিষ্টতা ক্রমে ক্রমে দূরে চলে যাবে ইনশাআল্লাহ।

এক হাদিসে প্রিয় নবী হযরত মোহাম্মাদ (সাঃ) বলেন, আমি এমন একটি দোয়া সম্পর্কে অবগত আছি- কোনো বিপদগ্রস্ত লোক তা পাঠ করলে, মহান আল্লাহ তায়ালা তার সেই বিপদ দূর করে দেন। বিপদ থেকে মুক্তির দোয়া হচ্ছে আমার ভাই ইউনুস (আ.) এর দোয়া।

দোয়াটি হলোঃ لَا إِلَهَ إِلَّا أَنْتَ سُبْحَانَكَ، إِنِّي كُنْتُ مِنَ الظَّالِمِينَ

বাংলা উচ্চারণঃ লা ইলাহা ইল্লা আনতা সুবহানাকা ইন্নি কুনতু মিনাজ জ্বালিমিন

অর্থঃ হে আল্লাহ! তুমি ছাড়া কোনো সত্য উপাস্য নেই; আমি তোমার পবিত্রতা বর্ণনা করছি। নিঃসন্দেহে আমি নিজের প্রতি অবিচার করেছি।’ (তিরমিজি, হাদিস : ৩৫০৫)

চিন্তা এবং হতাশা থেকে মুক্তির দোয়া

প্রিয় নবী হযরত মোহাম্মাদ (সাঃ) চিন্তা এবং পেরেশানির সময়ে একটি বিশেষ দোয়া পাঠ করতেন। হতাশা থেকে মুক্তির দোয়া হচ্ছেঃ اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنَ الهَمِّ وَالحَزَنِ، وَالعَجزِ وَالكَسَلِ، وَالبُخلِ وَالجُبنِ، وَضَلَعِ الدَّينِ وَقَهْرِ الرِّجَالِ

উচ্চারণঃ আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজু বিকা মিনাল হাম্মি ওয়াল হুযনি, ওয়া আউজু বিকা মিনাল আজযি ওয়াল-কাসালি, ওয়া আউজু বিকা মিনাল বুখলি ওয়াল জুবনি, ওয়া আউজু বিকা মিন গালাবাতিদ দাইনি ওয়া কাহরির রিজাল।

অর্থঃ হে আল্লাহ! নিশ্চয়ই আমি আপনার আশ্রয় নিচ্ছি দুশ্চিন্তা ও দুঃখ থেকে, অপারগতা ও অলসতা থেকে, কৃপণতা ও ভীরুতা থেকে, ঋণের ভার ও মানুষদের দমন-পীড়ন থেকে। আনাস (রা.) বর্ণনা করেন, রাসুল (সা.) চিন্তাগ্রস্ত অবস্থায় এই দোয়া পড়তেন। (বুখারি, হাদিস : ২৮৯৩)

হতাশা থেকে মুক্তির আয়াত

হতাশা থেকে মুক্তি পেতে এবং মনের ভিতর প্রশান্তি অর্জন করতে বেশি বেশি করে মহান আল্লাহ তায়ালার জিকির এবং দোয়া করতে হবে। কারণ দোয়া ও জিকিরের মাধ্যমে মনের ভিতর প্রশান্তি চলে আসে বলে ঘোষণা করেছেন স্বয়ং আল্লাহ তায়ালা- الَّذِينَ آمَنُواْ وَتَطْمَئِنُّ قُلُوبُهُم بِذِكْرِ اللّهِ أَلاَ بِذِكْرِ اللّهِ تَطْمَئِنُّ الْقُلُوبُ

অর্থঃ ‘যারা বিশ্বাস স্থাপন করে এবং তাদের অন্তর আল্লাহর জিকির দ্বারা শান্তি লাভ করে ‘জেনে রাখ! আল্লাহর জিকির দ্বারা অন্তরে স্থিরতা এবং শান্তি আসে।’ (সুরা রাদঃ আয়াত ২৮)

হজরত আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন কোনো দুঃখ-কষ্ট বা চিন্তা, অস্থিরতা তথা হতাশাগ্রস্ত হতেন তখন বলতেন- يَا حَيُّ يَا قَيُّوْمُ بِرَحْمَتِكَ أَسْتَغِيْثُ

উচ্চারণঃ ইয়া- হাইয়ু ইয়া- ক্বাইয়ূ-মু বিরাহমাতিকা আস্তাগিছ

অর্থঃ ‘হে চিরঞ্জীব! হে চিরস্থায়ী! আপনার রহমতের মাধ্যমে আপনার নিকটে সাহায্য চাই।’ (তিরমিজি, মুসতাদরেকে হাকেম, মিশকাত)

হতাশা ও দুশ্চিন্তা থেকে মুক্তির দোয়া

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম চিন্তা ও পেরেশানির সময় এ বিশেষ দোয়াটি বেশি বেশি পড়তেন। তাহলো- اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنَ الْهَمِّ وَالْحَزَنِ، وَالْعَجْزِ وَ أَعُوذُ بِكَ مِنَ الْبُخْلِ وَالْجُبْنِ، وَ أَعُوذُ بِكَ مِنَ ضَلَعِ الدَّيْنِ، وَغَلَبَةِ الرِّجَالِ

উচ্চারণ: ‘আল্লাহুম্মা ইন্নি আউযু বিকা মিনাল হাম্মি ওয়াল হাযানি, ওয়া আউযু বিকা মিনাল বুখলি ওয়াল জুবনি, ওয়া আউযু বিকা মিন দ্বালা’য়িদ্দাইনি ওয়া গালাবাতির রিজাল।’ (বুখারি, মুসলিম, মিশকাত)

অর্থ: হে আল্লাহ! নিশ্চয়ই আমি দুশ্চিন্তা ও দুঃখ থেকে আপনার আশ্রয় চাই, অপারগতা ও অলসতা থেকে আপনার আশ্রয় চাই, কৃপনতা ও ভীরুতা থেকে আপনার আশ্রয় চাই আর ঋণের ভার ও মানুষদের দমন-পীড়ন থেকেও আপনার আশ্রয় চাই।

দুশ্চিন্তা ও ঋণ থেকে মুক্তির দোয়া

হজরত আবু সাইদ খুদরি (রা.) থেকে বর্ণিত, আল্লাহর রাসূল হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) বলেছেন, যিনি এই দোয়াটি সকাল ও সন্ধ্যা পাঠ করবে, আল্লাহ তায়ালা তার সকল ঋণ ও দুশ্চিন্তা থেকে মুক্তি দিবেন বা দুশ্চিন্তা ও ঋণ দূর করবেন।

দুশ্চিন্তা ও ঋণ থেকে মুক্তির দোয়া হলোঃ اللَّهُمَّ إِنِّيْ أَعُوْذُ بِكَ مِنْ الْهَمِّ وَالْحَزَنِ وَالْعَجْزِ وَالْكَسَلِ وَالْبُخْلِ وَالْجُبْنِ وَضَلَعِ الدَّيْنِ وَغَلَبَةِ الرِّجَالِ

দুশ্চিন্তা ও ঋণ থেকে মুক্তির দোয়া বাংলা উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজুবিকা মিনাল হাম্মি ওয়াল হাযানি ওয়াল আঝযি ওয়াল কাসালি ওয়াল বুখলি ওয়াল ঝুবনি ওয়া দালায়িদ-দাইনি ওয়া গালাবাতির-রিঝালি।

দুশ্চিন্তা ও ঋণ থেকে মুক্তির দোয়া বাংলা অর্থ: হে আল্লাহ! আমি দুশ্চিন্তা ও পেরেশানি থেকে আশ্রয় চাই, অক্ষমতা ও অলসতা থেকে আশ্রয় চাই, কৃপণতা ও ভীরুতা থেকে আশ্রয় চাই, ঋণভার ও মানুষজনের প্রাধান্য থেকে আপনার কাছে মুক্তি চাই। (বুখারি)

দুশ্চিন্তা ও ঋণ থেকে মুক্তি লাভের দোয়া ঋণ পরিশোধের নিয়ত এবং প্রচেষ্টার পাশাপাশি নামাজের ০২ সেজদার মাঝে বসে মহান আল্লাহ তায়ালার কাছে বেশি বেশি কামনা করা উচিত। এছাড়াও বিশুদ্ধ নিয়তে আল্লাহ তায়ালার কাছে ঋণমুক্তির জন্য আশ্রয় চাইলে ঋণগ্রস্ত ব্যক্তিদের তা থেকে মুক্ত করবেন মহান আল্লাহ পাক, ইনশাআল্লাহ।

বিপদ থেকে মুক্তির দোয়া

প্রিয় পাঠক বিপদ-আপদ কিন্ত বলে কয়ে আসেনা। বিপদে পড়লে আমাদেরকে মহান আল্লাহ তায়ালার কাছে সাহায্য চাইতে হয়। আল্লাহ পাক চাইলেই মুহূর্তেই বিপদ থেকে মুক্তি দিতে পারেন। বিপদ থেকে মুক্তির জন্য ক্ষমা চাইতে হয় আল্লাহ তায়ালার কাছে। 

১। আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রা.) থেকে বর্ণিত রয়েছে, প্রিয় নবী হযরত মোহাম্মাদ রাসুল (সাঃ) সকাল-সন্ধ্যায় কখনো নিম্নোক্ত উল্লেখ করা দোয়া গুলো পড়া বাদ দিতেন না। বিপদ থেকে মুক্তির দোয়া আরবিতে - اللهم إني أسألك العافية في ديني ودنياي وأهلي ومالي، اللهم استر عوراتي وآمن روعاتي واحفظني من بين يدي ومن خلفي وعن يميني وعن شمالي ومن فوقي، وأعوذ بعظمتك أن أغتال من تحتي

বিপদ থেকে মুক্তির দোয়া বাংলা উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা ইন্নি আসআলুকাল আফিয়াতা ফি দ্বীনি ওয়া দুনইয়া-য়া, ওয়া আহলি ওয়ামালি; আল্লাহুম্মাসতুর আওরাতি, ওয়ামিন রাওআতি; আল্লাহুম্মাহফাজনি মিন বাইনি ইয়াদাইয়া ওয়া মিন খালফি, ওয়ান ইয়ামিনি ওয়ান শিমালি ওয়া মিন ফাওকি; ওয়া আউজুবিকা বিআজমাতিকা আন আগতালা মিন তাহতি।

বিপদ থেকে মুক্তির দোয়া অর্থ: হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে আমার দ্বীন-দুনিয়া, পরিবার ও ধন-সম্পদের নিরাপত্তা কামনা করছি। হে আল্লাহ! আমার দোষ-ত্রুটি গোপন রাখুন, আমার সৌন্দর্যগুলো নিরাপদ রাখুন। হে আল্লাহ আমাকে আমার সামনে-পেছনে, আমার ডানে-বামে ও ওপরের দিক থেকে রক্ষা করুন। আমি আপনার কাছে আপনার মহত্ত্বের অসিলায় আমার নিচ দিকে গুম হয়ে যাওয়া থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করছি। (নাসায়ি, হাদিস : ৫৫৩০; আবু দাউদ, হাদিস : ৫০৭৪; ইবনু মাজাহ, হাদিস: ৩৮৭১)

২। আনাস (রা.) বলেন, ‘যখন রাসুলুল্লাহ (সা.)- এর উপর কোনো কাজ কঠিন হয়ে দেখা দিত, তখন তিনি নিম্নোক্ত দোয়াটি পড়তেন।’ বিপদ থেকে মুক্তির দোয়া আরবিতে - يَا حَيُّ يَا قَيُّومُ بِرَحْمَتِكَ أَسْتَغِيثُ أَصْلِحْ لِي شَأْنِي كُلَّهُ وَلا تَكِلْنِي إِلَى نَفْسِي طَرَفَةَ عَيْنٍ

বিপদ থেকে মুক্তির দোয়া উচ্চারণ: ‘ইয়া হাইয়্যু ইয়া কাইয়্যুমু বিরাহমাতিকা আসতাগিছ।’

বিপদ থেকে মুক্তির দোয়া অর্থঃ হে চিরঞ্জীব! হে বিশ্ব চরাচরে ধারক! আমি তোমার রহমতের আশ্রয় প্রার্থনা করছি। (তিরমিজি মিশকাত, হাদিস নম্বর: ২৪৫৪) আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) এ সমস্ত বিষয় থেকে মহান আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাইতেন। (বুখারি, হাদিস : ৬৩৪৭; মুসলিম, হাদিস : ২৭০৭)

৩। বিপদ থেকে মুক্তির দোয়া আরবিতে - اللهمَّ إنِّي أعُوذُ بِكَ مِنْ جَهْدِ الْبَلَاءِ، وَدَرَكِ الشَّقَاءِ، وَسُوءِ الْقَضَاءِ، وَشَمَاتَةِ الْأَعْدَاءِ

বিপদ থেকে মুক্তির দোয়া উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজুবিকা মিন জাহদিল বালা-ই, ওয়া দারাকিশ শাকা-ই, ওয়া সু-ইল কদা-ই, ওয়া শামাতাতিল আ‘দা-ই।

বিপদ থেকে মুক্তির দোয়া অর্থ: হে আল্লাহ, আমি আপনার কাছে আশ্রয় চাই কঠিন বিপদ, দুর্ভাগ্যে পতিত হওয়া, ভাগ্যের অশুভ পরিণতি এবং শত্রুর আনন্দিত হওয়া থেকে।

৪। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন দেখতেন কোনও মানুষ বিপদে বা সমস্যায় পড়েছেন, তখন তিনি তাদের বিপদ-আপদ থেকে মুক্তির জন্য দোয়া করতেন। হজরত ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘কেউ বিপদগ্রস্ত লোক দেখলে এ দোয়া পড়বে- الْحَمْدُ لِلَّهِ الَّذِي عَافَانِي مِمَّا ابْتَلاَكَ بِهِ وَفَضَّلَنِي عَلَى كَثِيرٍ مِمَّنْ خَلَقَ تَفْضِيلاً

বিপদ থেকে মুক্তির দোয়া উচ্চারণ: ‘আলহামদুলিল্লাহিল্লাজি আফানি মিম্মানিবতালাকা বিহি, ওয়া ফাদ্দালানি আলা কাছিরিম মিম্মান খালাকা তাফদিলা।’ (তিরমিজি)

বিপদ থেকে মুক্তির দোয়া অর্থ: সব প্রশংসা আল্লাহর জন্য যিনি তোমাকে বিপদাক্রান্ত করেছেন, তা থেকে আমাকে নিরাপদ রেখেছেন এবং আমাকে তিনি তার সৃষ্টি থেকে সৃষ্টির ওপর শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছেন।’ (তিরমিজি)

৫। এছাড়া রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বিভিন্ন ধরণের আজাব থেকে রক্ষার জন্য এ দোয়াও পড়তেন- اللَّهُمَّ لاَ تَقْتُلْنَا بِغَضَبِكَ وَلاَ تُهْلِكْنَا بِعَذَابِكَ وَعَافِنَا قَبْلَ ذَلِكَ

বিপদ থেকে মুক্তির দোয়া উচ্চারণ: ‘আল্লাহুম্মা লা তাক্বতুলনা বিগাদ্বাবিকা ওয়ালা তুহলিকনা বিআজাবিকা ওয়া আফিনা ক্বাবলা জালিকা।’ (মুসনাদে আহমাদ, তিরমিজি)

বিপদ থেকে মুক্তির দোয়া অর্থ: হে আল্লাহ! তুমি আমাদেরকে তোমার ক্রোধ দ্বারা হত্যা করো না আর তোমার আজাব দিয়ে ধ্বংস করো না বরং এর পূর্বে তুমি আমাদেরকে ক্ষমা কর।

আপনার মতামত জানান এখানে

0 কমেন্ট

আর্টিকেল সম্পর্কিত তথ্য জানতে কমেন্ট করুন। আপনার প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

কমেন্ট করুন (0)

#buttons=(Ok, Go it!) #days=(20)

Our website uses cookies to enhance your experience. explore more
Ok, Go it!