সরকারিভাবে অস্ট্রেলিয়া যাওয়ার উপায় - আজকের এই আর্টিকেলে আমরা সরকারিভাবে অস্ট্রেলিয়া যাওয়ার উপায় বিষয়টি নিয়ে আজকে আলোচনা করবো। কোভিট-১৯ সময়কালে অস্ট্রেলিয়ার ব্যবসা, অর্থনীতি, শিক্ষা এবং অন্যান্য খাতে ব্যাপক কর্মী সংকট দেখা দেয়।
ঠিক এই কারণে অস্ট্রেলিয়ান সরকার প্রতি বছর প্রায় ২ লক্ষ স্থায়ী অভিবাসী গ্রহণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।এর ফলে বাংলাদেশ থেকে সরকারিভাবে অস্ট্রেলিয়া যাওয়ার সুবর্ণ সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। বাংলাদেশ সরকার এবং অস্ট্রেলিয়ান সরকারের মধ্যে ’ওয়ার্ক অ্যান্ড হলিডে ভিসা’ সংক্রান্ত এক চুক্তির আওতায় এই আবেদন প্রক্রিয়া শুরু হযেছে।
কোন প্রকার দালাল ধরার প্রয়োজন নেই, শুধু একটি আবেদন করুন যদি ভাগ্য ভালো থাকে তাহলে বাড়িতে বসেই পেয়ে যেতে পারেন অস্ট্রেলিয়ার যাওয়ার পারমিট। চলুন তাহলে সরকারিভাবে অস্ট্রেলিয়া যাওয়ার উপায় সম্পর্কে জেনে নেইঃ
অস্ট্রেলিয়া সম্পর্কে কিছু তথ্য
অস্ট্রেলিয়া একটি সার্বভৌম রাষ্ট্র। অস্ট্রেলিয়ার মোট আয়তন ৭৬,১৭৯৩০ বর্গকিলোমিটার। আয়তনের দিক থেকে এটি পৃথিবীর ৬ষ্ঠ রাষ্ট্র। অস্ট্রেলিয়ার মোট জনসংখ্যা ২ কোটি ৬০ লক্ষ টাকা। অস্ট্রেলিয়া একটি উন্নত রাষ্ট্র এবং উচ্চ আয়ের অর্থনীতির দেশ। অস্ট্রেলিয়া পৃথিবীর ১২ তম বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ। মাথাপিছু আয়ের দিক থেকে অস্ট্রেলিয়া দশম রাষ্ট্র এবং মানব সূচকে অষ্টম রাষ্ট্র।
সরকারিভাবে অস্ট্রেলিয়া যাওয়া উপায় - ভিসা ক্যাটাগরি
সরকারিভাবে অস্ট্রেলিয়ায় যাওয়ার জন্য ০৩টি ক্যাটাগরিতে ভিসা প্রদান করা হয়।
- প্রবাসী
- উচ্চ শিক্ষিত শ্রেণি
- শিক্ষার্থী শেণি
প্রবাসীঃ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে বসবাস করছেন এবং ইংরেজিতে ভালোভাবে কথা বলতে পারেন তারা প্রবাসী শ্রেণি ক্যাটাগরিতে ভিসার জন্য আবেদন করতে পারবেন।
উচ্চ শিক্ষিত শ্রেণিঃ নূন্যতম সম্মান পাস থেকে উচ্চ শিক্ষিত শ্রেণি বা পিএইচডি হোল্ডার এবং ভালোভাবে ইংরেজিতে কথা বলতে পারেন তারা উচ্চ শিক্ষিত শ্রেণি ক্যাটাগরিতে ভিসার জন্য আবেদন করতে পারবেন।
শিক্ষার্থী শ্রেণিঃ যারা পড়াশোনার জন্য অস্ট্রেলিয়া যেতে চান তাদের জন্য এই ক্যাটাগরিতে আবেদন করতে পারবেন।
সরকারিভাবে অস্ট্রেলিয়া যাওয়ার আবেদন
সরকারিভাবে অস্ট্রেলিয়া যাওয়ার জন্য অস্ট্রেলিয়ার সরকারি ওয়েবসাইট ভিজিট করুন এখানে ক্লিক করে। এই ওয়েবসাইটের মাধ্যমে কাজের জন্য আবেদন করতে পারবেন।
এই ওয়েবসাইট এর মাধ্যমে সাধারণত সাময়িক/টেম্পোরারি কাজের ভিসার নিয়ে অস্ট্রেলিয়া যেতে পারবেন। অস্ট্রেলিয়া যাওয়ার পূর্বে আপনাকে কাজ খুঁজে বের করতে হবে। অস্ট্রেলিয়া জব খোঁজার ওয়েবসাইট ভিজিট করুন এখানে ক্লিক করে।
আপনার পছন্দমতো জব ও কোম্পানির খূঁজে আপনার সিভি জমা দিবেন। সিভিতে আপনার সকল সঠিক তথ্য ও অভিজ্ঞতা উপস্থাপন করুন। কোন প্রকার অসত্য তথ্য প্রদান করবেন না।
আপনি যে জবের জন্য আবেদন করবেন ঐ জবের কোম্পানির ঠিকানা থেকে ইমেইল নম্বর সংগ্রহ করে আপনার কভার লেটার এবং সিভি পিডিএফ ফরমেটে আপলোড করে কোম্পানির ইমেইলে সাবমিট করুন।
এভাবে আপনি কাজরে জন্য অস্ট্রেলিয়া যাওয়ার আবেদন করতে পারবেন। বাংলাদেশ থেকে অস্ট্রেলিয়া কাজের জন্য বয়স ১৮ থেকে ৩০ নির্ধারণ করা হয়েছে এবং অবিবাহিত হতে হবে।
আরাে পড়ুনঃ সরকারিভাবে কানাডা যাওয়ার উপায়
স্টুডেন্ট ভিসা - সরকারিভাবে অস্ট্রেলিয়া যাওয়ার উপায়
বাংলাদেশ থেকে যারা অস্ট্রেলিয়া যাওয়ার জন্য স্টুডেন্ট ভিসায় আবেদন করার কথা চিন্তা করছেন তাদের বেশ কিছু নিয়ম কানুন মেনে আবেদন করতে হবে। নিন্মে নিয়ম কানুন তুলে ধরা হলোঃ
শিক্ষার্থী ভিসার জন্য আপনার বেশ কিছু দরকারি কাগজপত্রের প্রয়োজন হবে। আপনাকে ইংরেজিতে দক্ষ হতে হবে এর জন্য আপনাকে ইংরেজির জন্য পরীক্ষায় অংশ গ্রহণ করতে হবে। পরীক্ষা দিতে হবে অনলাইনের মাধ্যমে।
স্টুডেন্ট বা শিক্ষার্থী ভিসার জন্য আপনার বৈধ পাসপোর্ট এর প্রয়োজন হবে। আপনার ব্যাংক একাউন্টের স্টেটমেন্ট এর প্রয়োজন হবে। পাসপোর্ট এর মাধ্যমে আপনি বৈধ নাগরিক নাগরিক কিনা পরীক্ষা করা হবে। আপনার ব্যাংক স্টেটমেন্ট এর মাধ্যমে পরীক্ষা করা হবে অস্ট্রেলিয়ায় স্টুডেন্ট হিসাবে পড়াশোনার জন্য আপনার যথেষ্ট অর্থ রয়েছে কিনা।
অস্ট্রেলিয়া দূতাবাস কর্তৃক প্রয়োজনীয় নির্দেশনা পালন করার পর। আপনি নির্বাচিত হলে এবং ভিসা পাওয়ার পর যেকোনো এয়ারলাইন্সের মাধ্যমে আপনি অস্ট্রেলিয়া যেতে পারবেন।
ভ্রমন ভিসা বা টুরিস্ট ভিসা - সরকারিভাবে অস্ট্রেলিয়া যাওয়ার উপায়
বাংলাদেশ থেকে অনেক লোক টুরিস্ট ভিসায় অস্ট্রেলিয়া যাওয়ার জন্য আবেদন করেন বা অনেকে নতুন করে টুরিস্ট ভিসায় অস্ট্রেলিয়া যাওয়ার জন্য আবেদন করতে চান। তাদের জন্য ভ্রমন বা টুরিস্ট ভিসার আবেদন করার নিয়ম গুলো উল্লেখ করা হলোঃ
অস্ট্রেরিয়ার টুরিস্ট ভিসার জন্য আপনার বৈধ পাসপোর্ট থাকতে হবে। সদ্য তোলা এক কপি ছবি লাগবে। তারপর অস্ট্রেলিয়ার টুরিস্ট ওয়েবসাইটে লগইন করে টুরিস্ট ভিসার নির্ধারিত ফরমে আবেদন করতে হবে।
তাছাড়া আপনার বিএসএফের ওয়েবসাইটে গিয়ে টুরিস্ট আবেদন ফরমটি পূরণ করতে পারেন।অস্ট্রেরিয়ায় আপনার কোন নিকট আত্নীয়স্বজন এর কাছ থেকে একটি ইনভাইটেশন লেটার গ্রহণ করে নিতে হবে। আপনার যদি কোন পরিচিত জন না থাকে তাহলে আপনার অস্ট্রেলিয়া যাওয়ার ভ্রমন ইতিহাস দীর্ঘ হতে পারে।
আপনাকে আপনার ব্যাংক হিসাবের বিবরনী দাখিল করতে হবে। আপনার ব্যাংক হিসাবের ০৬ মাসের ব্যাংক বিবরনী গ্রহণ করে জমা দিতে হবে এবং ব্যাংক হতে হিসাবের অনুকূলে ব্যাংক সলভেনসি নামক প্রত্যয়ণ/ সার্টিফিকেট সংগ্রহ করতে হবে।
আপনার কভার লেটারে পরিষ্কার ভাবে তা উল্লেখ করতে হবে। গুগলে সার্চ করে কভার লেটার ডাউনলোড করে নিতে পারেন। তারপর তা লিখে নিবেন। আপনার কভার লেটার লিখতে সমস্যা হলে একজন অভিজ্ঞ ব্যক্তির সাহায্য নিয়ে কভার লেটার লিখে নিবেন। এরপর আপনার ভ্রমন ইতিহাসের বিষয় গুলো আপনাকে ইমিগ্রেশনের সাথে সঠিকভাবে ফাইল করে জমা দিতে হবে।
এরপর আপনাকে বুকিং দিতে হবে অর্থাৎ ইয়ার্কিটে বুকিং এর একটা কাগজ দিতে হবে। কারণ অস্ট্রেলিয়া কর্তৃপক্ষ যেন জানতে পারে আপনি কত দিন কত তারিখে অস্ট্রেলিয়ার উদ্দেশ্যে রওনা করছেন।
আপনি যে হোটেল বুকিং দিয়েছেন সে হোটেলের রিজার্ভেশন কপি আপনাকে জমা দিতে হবে। আপনি যদি ব্যবসায়ী হন তাহলে আপনার বিজনেস ম্যান একাউন্টটা জমা দিতে হবে।
আপনি যদি চাকুরিজীবি হন তাহলে আপনাকে এনওসি পত্রের কপি জমা দিতে হবে এবং আপনি কত দিনের ছুটি অনুমোদন পেয়েছেন আপনার জিও এর কপি জমা দিতে হবে। আপনি স্টুডেন্ট হন তাহলে আপনার বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি লিভ লেটার জমা দিতে হবে।
আরো পড়ুনঃ বাংলাদেশ সরকার অনুমোদিত ট্রাভেল এজেন্সি
কাজের চাহিদা - সরকারিভাবে অস্ট্রেলিয়া যাওয়ার উপায়
বাংলাদেশ থেকে সরকারিভাবে অস্ট্রেলিয়া গিয়ে কি ধরনের কাজ করতে পারবে তা উল্লেখ করা হলো- বাংলাদেশ থেকে অস্ট্রেলিয়া যাওয়ার পর নার্সারি সুপারভাইজার হিসাবে কাজ করতে পারবেন, গাড়ী পরিচালনা করতে পারবেন/ট্রাক চালক হিসাবে কাজ করতে পারবেন, ক্লিনার এর কাজ করতে পারবেন,
কারিগর-যান্ত্রিক, ইলেকট্রনিক্স হিসাবে কাজ করতে পারবেন, কোয়ালিটি ম্যানেজার বা বিভিন্ন হোটেলে কাজ করতে পারবেন। তাছাড়া আপনি যদি কোন কাজে দক্ষ হন যেমন ডাক্তার, নার্স, প্রকৌশলী, চার্টাট একাউন্টেন্ট প্রভৃত্তি পেশায় অস্ট্রেলিয়া কাজ করতে পারবেন।
কাজের বেতন - সরকারিভাবে অস্ট্রেলিয়া যাওয়ার উপায়
বাংলাদেশ থেকে অনেকে কাজের জন্য অস্ট্রেলিয়া যেতে আগ্রহী। আবার অস্ট্রেলিয়াতে কাজ করে কত টাকা আয় করতে পারে বা কোন কাজের বেতন কত হতে পারে তা জানার আগ্রহ আছে সবারই।একজন বাংলাদেশি কর্মী অস্ট্রেলিয়ায় কাজ করেন তাহলে প্রতি ঘন্টায় অস্ট্রেলিয়ান ২০ ডলার আয় করতে পারবেন।
যা বাংলাদেশি টাকায় ১৩০০ (এক হাজার তিনশত টাকা)। অর্থাৎ আপনি অস্ট্রেলিয়া দৈনিক এক ঘন্টা কাজ করে বাংলাদেশি টাকায় এক হাজার তিনশত টাকা আয় করতে পারেন। আপনি যদি নিয়মিত কাজ করেন তাহলে প্রতিমাসে আপনি বাংলাদেশি টাকায় আনুমানিক ৯০ হাজার থেকে প্রায় ১ লক্ষ টাকা আয় করতে পারেন।
আশা করি যারা সরকারিভাবে অস্ট্রেলিয়া যেতে আগ্রহী তারা এই ব্লগটি পড়ে সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের পাশাপাশি একটি দিক নির্দেশনা পেয়েছে। যেহেতু অস্ট্রেলিয়া যেতে দালাল এর প্রয়োজন হয় না তাই আপনি ভালোভাবে জেনে সঠিক উপায়ে অস্ট্রেলিয়া যাওয়ার আবেদন করবেন। মহান আল্লাহ তায়ালা সকলের ভালো করুক এবং সকলের মনের আশা পূরণ করুক।