তুলসী পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা

25427 Sakhawat
লিখেছেন -

আপনারা নিশ্চয়ই তুলসী পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা জানতে আমাদেরই পোস্টটি ভিজিট করেছেন। আজকের এই পোস্টটিতে আমরা তুলসী পাতা সম্পর্কে আপনাদের জন্য কিছু তথ্য নিয়ে হাজির হয়েছি। তুলসী পাতা একটি ঔষধি গাছ। বিভিন্ন রোগের প্রতিরোধ করে থাকে তুলসী পাতা। তাহলে চলুন তুলসী পাতার সুবিধা ও অসুবিধা গুলো কি তা জেনে নেইঃ

তুলসী পাতার উপকারিতা

তুলসী পাতা একটি উপকারী ভেষজ উদ্ভিদ। আমরা প্রায় সবাই তুলসী পাতা চিনি। ওষুধ হিসেবে তুলসী পাতা বেশ পুরনো। তুলসী পাতা বিভিন্ন রোগের প্রতিকার করে থাকে। তুলসী পাতা হাজার গুনে গুণান্বিত। তুলসী পাতা প্রাচীনকাল থেকে এখন পর্যন্ত ঔষধি হিসেবে ব্যবহার করে আছে। চলুন তাহলে তুলসী পাতার উপকারিতা গুলো কি তা জেনে নেই।

১। সর্দি কাশি রোধ করতে সাহায্য করে

তুলসী পাতা আমরা বেশি সর্দি কাশির সময় খেয়ে থাকি। সর্দি কাশি সারাতে তুলসী পাতায় একটি মহা ঔষধ। আমাদের ঠান্ডা লেগে অনেক সময় বুকে কফ বসে যায়। সে কফ সারাতে প্রতিদিন সকালে তুলসী পাতা আদা ও চা পাতা দিয়ে ভালোভাবে ফুটিয়ে তাতে মধু ও লেবুর রস মিশিয়ে ভালোভাবে খাবেন। দেখবেন আপনার সর্দি কাশি সহ বুকে চাপ জমা সমস্যা দূর হয়ে গেছে।

২। গলা ব্যথা দূর করতে সাহায্য করে

আমরা অনেক সময় গলা ব্যথা ও শ্বাসকষ্ট ভোগে থাকি এই রোগটি সারাতে আপনি তুলসী পাতার ওপর ভরসা রাখতে পারেন। তুলসী পাতা গলা ব্যথা ও শ্বাসকষ্ট জনিত রোগগুলো প্রতিরোধ করে থাকে। তাই আপনি নিয়মিত তুলসী পাতা খাওয়ার অভ্যাস করুন এবং তুলসী পাতা দিয়ে পানি ফুটিয়ে গার্গল করলে নিমিষে আপনার গলা ব্যথা দূর হয়ে যাবে।

৩। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে

তুলসী পাতা একটি মহা ঔষধ এবং হাজার গুণান্বিত। বিভিন্ন অসুখ সারাতে তুলসী পাতার জুড়ি মেলা ভার। আমাদের শরীরের এজমা, ফুসফুসের সমস্যা ও ব্রঙ্কাইটিস মোকাবেলায় তুলসী পাতা বিশেষ কার্যকরী। তুলসী পাতার সাথে এলাচ মিশিয়ে পানি ফুটিয়ে নিয়মিত সেবন করলে আমাদের শরীরে বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়বে।

৪। ক্যান্সার প্রতিরোধে

ক্যান্সার প্রতিরোধ করতে তুলসী পাতা বিশেষ কার্যকরী। এটি একটি প্রাণঘাতী মহামারী রোগ। তাই এটি দূরে রাখতে নিয়মিত তুলসী পাতা ব্যবহার করুন। তুলসী পাতায় রয়েছে রেডিওপ্রটেকটিভ উপাদান। এটি টিউমারের কোষগুলোকে মেরে ফেলে। এছাড়া তুলসী পাতা বেস্ট ক্যান্সার প্রতিরোধ করে থাকে। তুলসী পাতায় রয়েছে বিভিন্ন প্রকার ফাইটোকেমিক্যাল রোসমারিনিক অ্যাসিড, লিউটিউলিন মাইরেটিনাল, লিউটিউলিন এবং এপিজেনিন। এসব উপাদান গুলো ক্যান্সারের বিরুদ্ধে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে থাকে।

৫। ওজন কমাতে কার্যকর

তুলসী পাতা খেলে আপনার রক্তের সুগার কমবে। এক গবেষণায় দেখা গেছে ২৫০ মিলিগ্রামের একটি ক্যাপসুল প্রতিদিন খাওয়ার ফলে লিপিড নিয়ন্ত্রণ করা যায়। তুলসী পাতা খাওয়ার ফলে আপনার শরীরের অতিরিক্ত কোলেস্টেরল মাত্রা কমে যাবে। যা আপনার ওজন কমাতে সাহায্য করবে।

৬। ডায়াবেটিস রোধে

তুলসী পাতা ইনসুলিন এর কাজ করে থাকে। প্রতিদিন সকালে দুইটি করে তুলসী পাতা খান এবং আপনার ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখুন। তুলসীতে রয়েছে এন্টি ডায়াবেটিস ঔষধের কাজ। নিয়মিত তুলসী পাতা খেলে আপনার রক্তের সুগারের মাত্রা কম থাকে। তুলসীর পাতায় থাকা উপাদান স্যাপোনিন, ত্রিতারপিনিন ও ফ্ল্যাবোনয়েড ডায়াবেটিস রোধে বিশেষ কার্যকরী।

৭। পেটের সমস্যা

পেটের সমস্যায় তুলসী পাতা এক মহা ঔষধ। আমাদের পেটের বিভিন্ন পিড়াই তুলসী পাতা বিশেষ কার্যকরী উপাদান। গ্যাস, অম্বল, পেট ব্যথা, পেট ফোলা, ইত্যাদি। রোগ সাড়িয়ে তুলতে তুলসী পাতা সারিয়ে তুলতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে।

তুলসী পাতার অপকারিতা

তুলসী পাতা একটি ঔষধি গুন সম্পন্ন গাছ। এর ফল ফুল ও পাতা শিকড় সবাই উপকারী একটি উপাদান। এটির অনেক উপকারিতা রয়েছে। তাই তুলসী পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে আমাদের জানতে হবে। কিছু কিছু কাজে এটি এড়িয়ে চলা এবং না খাওয়াই উত্তম। কারণ প্রত্যেকটা জিনিসের ভালো-মন্দ দিক রয়েছে। তুলসী পাতার অপকারিতা গুলো কি কি তা চলুন জেনে নিই।

১। রক্তপাতের সমস্যা

অতিরিক্ত তুলসী পাতা খাওয়ার ফলে আপনার রক্তের মাত্রা বেড়ে যেতে পারে। যার ফলে আমাদের স্বাভাবিক রক্ত জমাটের বিঘ্ন ঘটে। এই কারণে অতিরিক্ত রক্তপাতের সমস্যা দেখা দিতে পারে। আপনার শরীরের যে কোন সার্জারি করার কমপক্ষে দুই সপ্তাহ আগে থেকে তুলসী পাতা খাওয়া বন্ধ করুন।

২। গর্ভাবস্থায় ও মাতৃদুগ্ধ অবস্থায়

আপনি যদি নিয়ম মেনে তুলসী পাতা সেবন করেন। তাহলে সেটি ক্ষতির কারণ হবে না। কিন্তু আপনি যখন অনিয়মিত ভাবে অতিরিক্ত তুলসী পাতা সেবন করে থাকেন। তাহলে আপনার শরীরে নানা রকম জটিলতা সৃষ্টি হতে পারে। সে কারণে গর্ভাবস্থায় ও দুধ পান অবস্থায় তুলসী পাতা খাওয়ার জন্য আমাদের তুলসী পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে আগে সচেতন হওয়া দরকার। এ সময় আপনার তুলসী পাতা এড়িয়ে চলায় উত্তম। কারণ অতিরিক্ত তুলসী পাতা সেবনের ফলে মহিলাদের বন্ধ্যাত্ব সম্ভাবনা থাকে।

৩। নিম্ন রক্তচাপ

অতিরিক্ত তুলসী পাতা খাওয়ার ফলে আপনার রক্তের চাপ কমে যেতে পারে। কারণ তুলসী পাতায় রয়েছে অতিরিক্ত পটাশিয়াম। তাই আপনার যদি নিম্ন রক্তচাপ থাকে তাহলে আপনি তুলসী পাতা এড়িয়ে চলুন।

ত্বকের যত্নে তুলসী পাতা

আপনারা অনেকেই আছেন যারা তুলসী পাতা খেয়ে থাকেন। কিন্তু তুলসী পাতার ব্যবহার ও তুলসী পাতার কি কি কাজে লাগে ও এর উপকারিতা সম্পর্কে অনেকে জানেন না। উপরে আমরা ইতিমধ্যে তুলসীপাতার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে আপনাদের জানিয়েছি। তুলসী পাতা শুধু বিভিন্ন রোগ সারাতে নয়, এটি ত্বকের যত্নেও প্রসাধনী হিসেবে কাজ করে থাকে। চলুন তাহলে ত্বকের যত্নে তুলসী পাতার রূপটান সম্পর্কে জেনে নিন।

১। তুলসির রূপটান

আপনি দাগ হীন উজ্জ্বলতার পেতে চান তাহলে ১০ থেকে ১৫ টি পাতা ভালোভাবে বেটে মুখে লাগিয়ে নিন। তুলসী পাতায় আছে আন্টি অক্সিডেন্ট যা আপনার ত্বকে সতেজ করে তুলবে।

২। তুলসী ও চন্দনের রূপটান

দুই চামচ তুলসী রস ও চন্দন বাটা আর কিছুটা গোলাপজল মিশিয়ে ভালোভাবে মুখে লাগান। দেখবেন আপনার মুখে ব্রণের সমস্যা দূর হয়ে গেছে। এবং আপনার ত্বকটি হয়ে উঠেছে দাগ হীন।

৩। তুলসী মধু ও মুলতানি মাটি ব্যবহার

তুলসীর কয়েকটি পাতা ভালোভাবে ধুয়ে নিন। দুই টেবিল চামচ মধু ও মুলতানি মাটি এবং পাতি লেবুর রস দিয়ে ভালোভাবে প্যাক করে নিন এবং মুখে লাগানোর পর আপনার মুখের সব ব্ল্যাক সার্কেল গুলো দূর হয়ে যাবে।

৪। তুলসী পাতার চা

চা আমাদের নিত্য পানিও খাবার। এক কাপ চা আপনার সকল ক্রান্তি দূর করে দিতে পারে। চা অপছন্দ করে এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া যাবে না। আর সেই চা যদি হয়ে ওঠে সকল রোগের মহা ঔষধ, তাহলে তো কোনো কথাই নেই।

আমাদের নিত্য প্রয়োজনীয় চায়ের চাইতে তুলসীত চা বিশেষ উপযোগী। এটি বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধের ক্ষমতা বাড়িয়ে থাকে। তুলসী চা শুধু আমাদের সকলের শরীরের ক্লান্তি দূর নয়, এটি আমাদের শরীরের উচ্চরক্ত চাপ নিয়ন্ত্রণ রাখতে বিশেষ উপযোগী। তুলসী চা আপনার শরীরের কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ রাখতে সমান ভাবে কাজ করে থাকে।

যারা হৃদরোগে আক্রান্ত তাদের হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে তুলসীপাতার চা বিশেষ উপযোগী। এবং লিভারের কর্মক্ষমতা ও বৃদ্ধি করে থাকেন। তুলসী পাতার চা স্তন ক্যান্সারে একটি মহা ঔষধ। এছাড়া রাতে তুলসী পাতার চা খেলে আপনার ভালো ঘুম হবে। আপনারা যারা শ্বাস প্রশ্বাস বা সাইলেসিয়া রোগী আছেন, তারা নিত্যদিনের চায়ের তালিকায় তুলসীপাতার চা রাখতে পারেন।

শেষ কথা

প্রিয় পাঠক আজকের এই পোস্টটিতে আমরা তুলসী পাতা সম্পর্কে আপনাদের সামনে তুলে ধরেছি। আপনারা যারা চা প্রেমী আছেন তারা সাধারণ চায়ের জায়গায় তুলসী পাতার চা রাখতে পারেন। কারন তুলসী পাতা বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধের ক্ষমতা রেখে থাকে।

বিশেষ করে সর্দি কাশিতে তুলসী পাতার ব্যবহার বহুকাল ধরে চলিত আছে। তাই আপনারা যারা তুলসী পাতা খেতে চান তারা তুলসী পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা গুলো ভালোভাবে জেনে নিবেন। আশা করি আমাদের পোস্টটি আপনার অনেক উপকারে আসবে।

#buttons=(Ok, Go it!) #days=(20)

Our website uses cookies to enhance your experience. explore more
Ok, Go it!