টাকা জমানোর জন্য কোন ব্যাংক ভালো - জীবনের আর্থিক নিরাপত্তার কারণে অনেকেই আয়ের একটা অংশ বছর শেষে সঞ্জয় করার কথা ভাবেন। কিন্তু আপনারা অনেকে জানেন না টাকা জমানোর জন্য কোন ব্যাংক ভালো কেননা টাকা জমানো আমাদের জীবনের খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটা অংশ।
সূচিপত্রঃ টাকা জমানোর জন্য কোন ব্যাংক ভালো
- টাকা জমানোর জন্য কোন ব্যাংক ভালো
- সকল ব্যাংকের ডিপিএস সিস্টেম
- ডাচ বাংলা ব্যাংক ডিপিএস
- সিটি ব্যাংক লিমিটেড ডিপিএস
- ঢাকা ব্যাংক ডিপিএস
- স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক ডিপিএস
- পূবালী ব্যাংক ডিপিএস
- ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক ডিপিএস
- ট্রাস্ট ব্যাংক লিমিটেড ডিপিএস
- সোনালী ব্যাংক লিমিটেড ডিপিএস
- কোন ব্যাংকে টাকা রাখা সবচেয়ে ভালো
- কোন ব্যাংকে টাকা রাখা নিরাপদ
- টাকা জমানোর জন্য সুদ মুক্ত মাধ্যম কোনটি
কিন্তু কথা হচ্ছে, কোথায় সুনিশ্চিত হয়ে সেই টাকা জমিয়ে রাখা সম্ভব হবে! আর তাইতো আমাদের মাঝে এমন অনেকেই রয়েছেন, যারা কিনা জানতে চান- টাকা জমানোর জন্য কোন ব্যাংক ভালো। যে বা যারা টাকা জমানোর বিষয়ে চিন্তিত এবং সর্বদা টাকা জমানোর জন্য কোন ব্যাংক ভালো এ সম্পর্কে জানতে আগ্রহী– তারা অবশ্যই আজকের আর্টিকেলটি স্কিপ না করে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়ুন।
তা নাহলে আপনারা জানতে পারবেন না টাকা জমানোর জন্য কোন ব্যাংক ভালো। তো পাঠক বন্ধুরা, আসুন শুরু করি টাকা জমানোর জন্য কোন ব্যাংক ভালো বিস্তারিত জেনে নিই।
টাকা জমানোর জন্য কোন ব্যাংক ভালো
টাকা জমানার জন্য কোন ব্যাংক সবচেয়ে ভালো এ সম্পর্কে জানতে হলে সেই সব ব্যাংকের ডিপিএস সম্পর্কে সমস্ত বৃত্তান্ত জানতে হবে। কেননা আপনি যদি ব্যাংকের ডিপিএস সিস্টেম সম্পর্কে অবগত হয়ে থাকেন, তাহলে খুব সহজেই বুঝে উঠতে পারবেন টাকা জমানোর জন্য কোন ব্যাংক ভালো সম্পর্কে। তাই ধারাবাহিকভাবে আমরা এ পর্যায়ে আলোচনা করব-
১। সকল ব্যাংকের ডিপিএস সিস্টেম।
২। বিশ্বস্ত ও ভালো ব্যাংকের বৈশিষ্ট্য।
৩। টাকা জমানোর জন্য সুদমুক্তো মাধ্যম সহ আরো বিস্তারিত।
তাহলে আসুন জেনে নেই- কোন ব্যাংকে টাকা রাখা নিরাপদ, কোন ব্যাংকে সুদের হার কত এবং কোন ব্যাংকে ডিপিএস লাভ বেশি ইত্যাদি বিষয়াবলীর বিস্তারিত।
আরো পড়ুনঃ বিনা জামানতে ঋণ দেয় কোন ব্যাংক
সকল ব্যাংকের ডিপিএস সিস্টেম
বর্তমান সময়ে গ্রাহকরা অনেক বেশি উদ্বিগ্ন। আর এই উদ্বিগ্নতার কারণ হচ্ছে, মুদ্রাস্ফীতি। সম্প্রতি সময়ে মানুষের মনে একটা দুশ্চিন্তা বাসা বেধেছে। অনেকেই ব্যাংক থেকে টাকা তুলে নিজের কাছে রাখছে। আবার কেউ এক ব্যাংক থেকে টাকা তুলে অন্য ব্যাঙ্কে স্থানান্তর করছে।
সঠিকভাবে বুঝে উঠতে পারছে না কোথায় টাকা রাখাটা অধিক বেশি নিরাপদ। আমাদের দেশে মূলত টাকা ফেরত না পাওয়ার ঘটনা ঘটেছে ইতোমধ্যে। আপনি হয়তো জেনেও থাকবেন, আইসিবি ইসলামিক ব্যাংকে টাকা রেখে এখনো অনেক গ্রাহক টাকা ফেরত পাননি।
তাই বিষয়টা বেশ চিন্তার। তবে আপনি যদি ঠান্ডা মাথায় বেশ কিছু বিষয় বুঝে উঠতে পারেন তাহলে নির্বাচন করতে পারবেন বিশ্বস্ত ও সঠিক ব্যাংকটিকে। যা আমরা পর্যায়ক্রমে আলোচনা করব। তবে এ পর্যায়ে আমরা আপনাদেরকে জানাবো- সকল প্রকার ব্যাংকের ডিপিএস লিমিট এর বিস্তারিত।
ডাচ বাংলা ব্যাংক ডিপিএস
আপনি ডাচ বাংলা ব্যাংকের একজন গ্রাহক হয়ে থাকলে, ডাচ বাংলা ব্যাংক ডিপিএস সিস্টেমে টাকা জমা করতে পারবেন। আর আপনি যদি এই সিস্টেমে টাকা জমা রাখেন তাহলে টাকা জমার মেয়াদকাল হবে ৩,৫,৮, অথবা ১০ বছর। সুদের হার হবে ৭.৫ টাকা এবং আপনি ৫০০ টাকা গুণিতকে আপনার ইচ্ছা মতো জমা করতে পারবেন, পাশাপাশি ডাচ বাংলা ব্যাংক লিমিটেড সঞ্চয়ী হিসাবের জন্য সুদ দিবে ০৪ টাকা পর্যন্ত।
সিটি ব্যাংক লিমিটেড ডিপিএস
সিটি ব্যাংকে যদি আপনি ডিপিএস সিস্টেমে টাকা রাখতে চান সে ক্ষেত্রে ব্যাংকের টাকা জমানোর মেয়াদকাল হবে ৩. ৫. ৭ অথবা ১০ বছর। সুদের হার হবে ৮.৫% এবং আপনি ৫০০ থেকে ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত সেখানে জমা করতে পারবেন ইচ্ছামত। পাশাপাশি সিটি ব্যাংক লিমিটেড এর সঞ্চয়ী হিসাবের জন্য সুদ হিসেবে ০৪ টাকা পর্যন্ত ভোগ করতে পারবেন।
ঢাকা ব্যাংক ডিপিএস
স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক ডিপিএস
স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক ডিপিএস সিস্টেমে টাকা জমাদানের মেয়াদকাল তিন বছর পর্যন্ত। সেখানে আপনি প্রাথমিক হিসেবে ১০ হাজার থেকে ১০০০ টাকা পর্যন্ত জমা করতে পারবেন। আর মজার ব্যাপার হলো এখানে আরেকটি হিসাব বিদ্যমান রয়েছে সেটি হচ্ছে আপনি যদি মোট ৪৬ হাজার টাকা জমা করেন তাহলে আপনাকে ৫৩ হাজার টাকা প্রদান করা হবে।
পূবালী ব্যাংক ডিপিএস
পূবালী ব্যাংক লিমিটেডের মাসিক কিস্তির হার ৫০০ থেকে শুরু করে দুই হাজার টাকা পর্যন্ত। এখানে আপনি মেয়াদকাল হিসেবে তিন থেকে পাঁচ বছর সময় পাবেন এবং সঞ্চয়ী হিসেবে সুদের হার ৪.৫% ভোগ করতে পারবেন।
ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক ডিপিএস
আপনি যদি এই ব্যাংকে ডিপিএস সিস্টেমে টাকা রাখতে চান তাহলে মেয়াদকাল হিসেবে চার থেকে দশ বছর পর্যন্ত সময় পাবেন। সর্বনিম্ন ৫০০ থেকে শুরু করে ২৫ হাজার টাকা মাসিক কিস্তিতে জমা করতে পারবেন ব্যাংকে। এই ব্যাংকে সুদের হার শতকরা ০৯ টাকা এবং সঞ্চয়ী হিসাব খুললে গ্রাহকদের জন্য সুদের হার ৫ টাকা পর্যন্ত।
ট্রাস্ট ব্যাংক লিমিটেড ডিপিএস
ট্রাস্ট ব্যাংক লিমিটেড ডিপিএস সিস্টেমের মেয়াদকাল ৩,৫,৭, এবং ১০ বছর পর্যন্ত। এখানে আপনি সর্বনিম্ন ৫০০ থেকে ৫০০০ টাকা পর্যন্ত মাসে রাখতে পারবেন সুদ হিসেবে শতকরা 8% ভোগ করার সুবিধা পাবেন।এছাড়া বিভিন্ন রকমের সুযোগ সুবিধা পাবেন। ট্রাস্ট ব্যাংক লিমিটেড ডিপিএস একটি বিস্তত ব্যাংক।
সোনালী ব্যাংক লিমিটেড ডিপিএস
অপর দিকে আপনি যদি সোনালী ব্যাংকে ডিপিএস অ্যাকাউন্ট তৈরি করে টাকা রাখতে চান সে ক্ষেত্রে, আপনি পাঁচ বছর সময় পাবেন। সেখানে মাসিক কিস্তিতে ৫০০ টাকা থেকে শুরু করে ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত রাখতে পারবেন আপনি সেই সাথে সুদের হার শতকরা দাঁড়াবে ৮.৫০ টাকা।
ঠিক একইভাবে ন্যাশনাল ব্যাংক, আইএফআইসি ব্যাংক লিমিটেড, শাহজালাল ইসলামী ব্যাংক, মার্কেন্টাইল ব্যাংক লিমিটেড, অগ্রণী ব্যাংক এবং জনতা ব্যাংক সহ বেশ কিছু ব্যাংকে আপনি জিপিএস অ্যাকাউন্ট ক্রিয়েট করে আপনার অর্থ নির্দিষ্ট সময় কালের জন্য জমা করতে পারবেন।
আরো পড়ুনঃ কোন ব্যাংকে টাকা রাখলে লাভ বেশি
কোন ব্যাংকে টাকা রাখা সবচেয়ে ভালো
এখন আমরা আলোচোনা করব টাকা জমানোর জন্য কোন ব্যাংক ভালো অথবা কোন ব্যাংকে টাকা রাখা সবচেয়ে ভালো। যে বা যারা পত্রপত্রিকা পড়েন তারা নিশ্চয়ই ইতিমধ্যে এটা জানেন, কয়েক বছর আগে পদ্মা ব্যাংকে টাকা রেখে সেই টাকা ফেরত পেতে ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে অসংখ্য গ্রাহকদের। আমাদের এই দেশের এক ডজন আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমানো টাকা ফেরত না পাবার ঘটনা ছড়িয়ে পড়েছিল সোশ্যাল মিডিয়া তে।
একটা সময় ছিল যখন ব্যাংকের বিভিন্ন সূচক অর্থাৎ মূলধন পরিস্থিতি, ক্রেডিট রেটিং, ক্যামেলস রেটিং, খেলাপি ঋণের হার সহ নানা বিষয় বিচার বিবেচনা করা হতো। কিন্তু বর্তমানে এই সুযোগগুলো তাদের গুরুত্ব হারিয়েছে।
তাই একটা ব্যাংকে নিরাপত্তা নির্বাচন করা খুবই দুঃসাধ্য হয়ে উঠেছে যে টাকা জমানোর জন্য কোন ব্যাংক ভালো। এমন অনেক ব্যাংক রয়েছে যারা অত্যন্ত খারাপ এবং দুর্বল তারপরেও তারা ভালো রেটিং পাচ্ছে। আবার কিছু ব্যাংক রয়েছে যারা নানার সুযোগ সুবিধার কারণে অনেক ঋণ থাকা সত্ত্বেও ঋণ খেলাপি হিসেবে দেখানো হচ্ছে না।
তাই বর্তমান সময়ে দাঁড়িয়ে টাকা জমানোর জন্য কোন ব্যাংক ভালো আর কোন ব্যাংক খারাপ তার সহজে বলে ওঠাটা খুবই মুশকিল।
কোন ব্যাংকে টাকা রাখা নিরাপদ
সাধারণ গ্রাহকরা যখন এমন প্রশ্ন করে থাকেন তখন তার উত্তরে কিছু ব্যাংকার পরামর্শ প্রদান করেছেন। তাদের মতে, গ্রাহকেরা টাকা জমানোর সময় সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের দিকে খেয়াল রাখতে পারেন। যে ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের ভাবমূর্তি যত বেশি স্বচ্ছ সেই ব্যাংক ততটাই নিরাপদ।
আর আরেকটি বিষয় হচ্ছে প্রতিটি ব্যাংকের ওয়েবসাইটে পরিচালকের নাম ও পরিচয় দেওয়া থাকে পাশাপাশি কোন ব্যাংকের বড় গ্রাহক অর্থাৎ আমানতের টাকা ব্যাংক কাকে দিচ্ছে তার খোঁজখবরও নেওয়া সম্ভব হয়ে ওঠে। তাই কোন ব্যাংকে টাকা রাখা নিরাপদ সেটা মূলত আপনাকে সেই ব্যাংক সম্পর্কে সমস্ত বৃত্তান্ত খুঁটিনাটি বিষয়ে জেনে বুঝতে হবে।
তবে একটা বিষয় মাথায় রাখবেন যেই ব্যাংক আমানতের যত বেশি সুখ প্রদান করে সেই ব্যাংক ততটা দুর্বল। কেননা তারা বেশি তারল্য সংকটে ভুগছে বলেই বেশি সুদ দিয়ে গ্রাহকদেরকে আকৃষ্ট করছে এবং তাদের কাছ থেকে টাকা আনার চেষ্টা করছে। তাই এরা আপনাকে বেশি সুদ প্রদান করবে ঠিকই তবে একটা সময় পর আসল টাকাটা ফেরত পাবেন কি না এ নিয়ে ভোগান্তিতেও করতে হতে পারে। অতএব সাবধান।
আরো পড়ুনঃ অগ্রণী ব্যাংক একাউন্ট খোলার নিয়ম | অগ্রনী ব্যাংক একাউন্ট খুলুন মোবাইল অ্যাপে
টাকা জমানোর জন্য সুদ মুক্ত মাধ্যম কোনটি
অনেকেই টাকা জমাতে চান তবে সুদ মুক্ত উপায়ে। আমরা সবাই জানি এবং অনেকেই এটা বিশ্বাস করি ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড হল সুদ মুক্ত ব্যাংক। যেখানে সব কিছু হালাল উপায় করা হয়ে থাকে। তবে আপনি যদি আপনার টাকা ব্যাংকে রাখেন আর বলে দেন সুদ যেন না দেয়। তাহলে আপনি শোধমুক্ত উপায়ে আপনার টাকা সংগ্রহ করতে পারবেন।
তবে হ্যাঁ সব ব্যাংকেই এই সুযোগটি রয়েছে। তবে প্রত্যেকটি ব্যাংক আবার আপনার সেই টাকা সুদে খাটাবে এটা কিন্তু মাথায় রাখবেন। মূল কথা হচ্ছে ইসলামি হোক বা ইহুদী হোক, আপনি যে ব্যাংকেই টাকা রাখেন না কেন ব্যাংক মানেই সুদি কারবার। সেখানে সুদের আনাগোনা থাকবে এটা স্বাভাবিক।
পরিশেষে: তো সুপ্রিয় পাঠক বৃন্দ, আশা করি টাকা জমানোর জন্য কোন ব্যাংক ভালো এ বিষয়ে আপনি সুস্পষ্ট ধারণা আমাদের আজকের এই আর্টিকেল থেকে পেয়ে গেছেন। তবুও যদি টাকা জমানোর জন্য কোন ব্যাংক ভালো কোন প্রশ্ন বা মন্তব্য থেকে তাকে আমাদের কমেন্ট করে জানান।
আশা করি টাকা জমানোর জন্য কোন ব্যাংক ভালো এই সম্পর্কে জানতে পেরে খুব উপকারি হইছেন। নিয়মিত গুরুত্বপূর্ণ আর্টিকেল সবার আগে পেতে আমাদের সাথে থাকুন। আল্লাহ হাফেজ।