ঈদুল ফিতরের নামাজের নিয়ম-জাহিলি যুগের দুটি পর্ব ছিল। এ দুটি পর্বে জাহির সম্প্রদায়ের লোকেরা উৎসব করত। হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন মদিনায় এলেন তখন এই দুটি উৎসব ছিল যাতে তোমরা খেলতে। এ দুটি উৎসব পরিবর্তন করে তোমাদেরকে উত্তম দুটি উৎসব দান করেছেন আল্লাহ তায়ালা। একটি হলো ঈদুল ফিতর দিবস অপরটি হল ঈদুল আযহা দিবস।
তাই আজকে আমরা ঈদুল ফিতর দিবস নিয়ে কথা বলব। আজকের এই আর্টিকেলে আমরা আলোচনা করব ঈদুল ফিতরের নামাজের নিয়ম। আপনারা অনেকেই হয়তো জানেন না ঈদুল ফিতরের নামাজের নিয়ম। আপনাদের সাথে আলোচনা করব ঈদুল ফিতরের নামাজের নিয়ম নিয়ে। আশা করছি আপনারা সম্পূর্ণ পোস্টটি পড়বেন। তাহলে চলুন জেনে নেই ঈদুল ফিতরের নামাজের নিয়ম।
(toc) #title=(সুচিপত্র)
ভূমিকাঃ ঈদুল ফিতরের নামাজের নিয়ম
মুসলিমদের একটি বছরের জনপ্রিয় উৎসব দুইটি একটি হচ্ছে ঈদুল ফিতর এবং অপরটি হচ্ছে ঈদুল আযহা। এই দুইটি ঈদকে মুসলিমরা প্রান পরান দিয়ে পালন করে। আমাদের মহানবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দ্বিতীয় হিজরতের যখন মক্কা থেকে মদিনায় গেলেন। তখন মদিনা বাসীরা দুইটা উৎসব পালন করতো।
একটি হচ্ছে মিল্টন আর অপরটি হচ্ছে নরস। দুই সিজিনে দুইটা উৎসব পালন করতে তারা। আপনি যদি ঈদুল ফিতরের ইতিহাস পুরোটা জানতে চান তাহলে আমাদের আর্টিকেলে চোখ রাখুন। এছাড়াও আজকের আমাদের এই আর্টিকেলে আলোচনা করা হবে ঈদুল ফিতরের নামাজ কি ওয়াজিব, ঈদুল ফিতরের নামাজের নিয়ত বাংলায়, ঈদুল ফিতরের নামাজের নিয়ত আরবিতে,
ঈদুল ফিতরের নামাজের নিয়ম, ঈদুল ফিতরের ইতিহাস ইত্যাদি উক্ত বিষয়গুলোর সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে আজকের এই পোস্টে। আপনারা যারা ঈদুল ফিতরের নামাজের নিয়ম জানতে চান তারা আজকের এই আর্টিকেলটি প্রথম থেকে সম্পূর্ণ মনোযোগ সহকারে পড়বেন। দেরি না করে জেনে নিই ঈদুল ফিতরের নামাজের নিয়ম।
আরো পড়ুনঃ শবে বরাত সম্পর্কে জানতে চাই
ঈদুল ফিতরের নামাজ কি ওয়াজিব ?
আমাদের বছরে দুইটি উৎসব জনপ্রিয় ঈদুল ফিতর এবং অপরটিও যেয়ে ঈদ উল আযহা। কিন্তু এই এর ব্যাপারে অনেক লোক প্রশ্ন করে যে ঈদের নামাজ পড়াটা কি ওয়াজিব না কি তাই এই ব্যাপারে আমরা জানবো এই পোষ্টের মাধ্যমে।
আমাদের সবচেয়ে ধর্মীয় উৎসব হচ্ছে দুটি ঈদ। ঈদের সালাতের মাধ্যমে আনন্দ উৎসব শুরু করি। কিন্তু এই ঈদের সালাতের হুকুম কি অনেকে অনেক মন্তব্য করে। একাধিক মতামত থেকে পাওয়া যায়। মালিকি এবং শাফি মাযহাবে ঈদুল ফিতর এবং ঈদুল আযহা পালন করা সুন্নাতে মুয়াক্কাদা। হামবালি মাযহাবের মতে এটা হচ্ছে ফারজে কেফায়া।
কিন্তু হানাফি মাজহাবের মতে ঈদুল ফিতর এবং ঈদুল আজহার নামাজ কে অনেক গুরুত্বপূর্ণ দেওয়া হয়েছে। হানাফী মাজহাবের মধ্যে ঈদের সালাত আদায় করা হচ্ছে ওয়াজিবন এবং সাইফুল ইবনে তাইমিয়া ইমামের শাওকানি সহ অনেকেই এই মতামত গ্রহণ করেছে যে ঈদের নামাজ হচ্ছে ওয়াজিব। ওয়াজিব হচ্ছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ এটাকে কেউ যদি তরখ করে তাহলে তার গুনা হবে।
কুরআনের মাঝেও এই দুই নামাজকে খুবই গুরুত্বপূর্ণভাবে মর্যাদা দান করা হয়েছে। কোরআনের সূরা কাউসার এর মধ্যে নবীকে বলা হয়েছে যে হে নবী আপনি আগে নামাজ কায়েম করুন এবং পরে উট কোরবানি করুন। কোরানে নামাজ কে বেশি গুরুত্বপূর্ণ দেওয়া হয়েছে।
সহি বুখারী শরীফে উম্মে আফিয়া রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহা বর্ণনা করেন, যেন নারীদেরকে নিয়ে আমরা ঈদগায় প্রবেশ করি। অর্থাৎ ঈদের দিনে যেসব নারীদের মাসিক বা পিরিয়ড চলছে সে সব নারীদেরও নির্দেশ করেছেন ঈদগাহে যাইতে বলা হয়েছে।
এখানে আপনার মনে প্রশ্ন জাগবে যে নারীদের পিরিয়ড বা মাসিক চললে নামাজ কালাম সবই বন্ধ থাকে। কিন্তু আল্লাহ তায়ালা বলেন ঈদের দিনের আনন্দ সবাই মিলে যেন উপভোগ করে। তো তারা নামাজে অংশগ্রহণ করতে পারবেন না মুসল্লিদের সাথে দোয়ায় অংশগ্রহণ করবে। এই হাদিস এবং আয়াত থেকে আমরা যা বুঝতে পারলাম যে ঈদের নামাজ দুটিকে খুবই গুরুত্বপূর্ণ মর্যাদা দান করা হয়েছে।
ঈদুল ফিতরের নামাজের নিয়ত আরবিতে
আমরা অনেকেই ঈদুল ফিতরের নামাজের নিয়ত জানি। তো আমরা অনেকেই ভুলে যাই ঈদুল ফিতরের নামাজের নিয়ত। কারণ বছরে দুই বার আসে কিন্তু অনেক পরদিন আসে তাই আমাদের আর চর্চা থাকে না। জন্য আমরা অনেকেই ঈদুল ফিতরের নামাজের নিয়ত ভুলে যাই। তাই ঈদুল ফিতরের নামাজের নিয়ত আরবিতে জেনে নিন।
আরবিঃ نويت ان اصلي لله تعالي ركعتي صلاة العيد الاضحى مع ستة تكبيرات واجب الله تعالى اقتديت بهذا الامام متوجها الى جهة الكعبة الشريفة الله اكبر
উচ্চারণঃ‘নাওয়াইতু আন উসাল্লিয়া লিল্লাহি তাআলা রাকাআতাইন সালাতিল ইদিল ফিতরি মাআ সিত্তাতিত তাকবিরাতি ওয়াঝিবুল্লাহি তাআলা ইকতাদাইতু বিহাজাল ইমামি মুতাওয়াঝঝিহান ইলা ঝিহাতিল কাবাতিশ শারিফাতি ‘আল্লাহু আকবার’।
ঈদুল ফিতরের নামাজের নিয়ত বাংলায়
আমরা অনেক মানুষ ঈদুল ফিতরের নামাজের নিয়ত আরবিতে পারিনা। কিন্তু আমরা যারা আরবিতে পারিনা তারা বাংলায় নিয়ত করব। চলুন জেনে নিই বাংলায় নিয়ত কি হবে।
বাংলায়: আমি কিবলামুখী হইয়া এই ইমামের পিছনে ঈদুল ফিতরের দুই রাকাত ওয়াজিব নামাজের ৬ তাকবীর সহি আদায় করছি "আল্লাহু আকবার"।
আরো পড়ুনঃ কোরবানির ঈদ কত তারিখে
ঈদুল ফিতরের নামাজের নিয়ম
দেশের বাইরে থাকে এবং সেখানে যদি ঈদুল ফিতরের নামাজের জামাত না হয় তাহলে আমরা একাই নামাজ পড়তে পারবো। অথবা চার-পাঁচজন মিলে নামাজ আদায় করতে পারব। আপনারা চাইলে ঈদের নামাজ ঘরেও পড়তে পারেন। তাহলে চলুন আমরা জেনে নিই ঈদুল ফিতরের নামাজের নিয়ম।
আপনারা যদি জামাতে ঈদুল ফিতরের নামাজ না আদায় করতে পারেন তাহলে বাসায় পড়তে পারেন। ঈদের নামাজে কোন আযান দেওয়া লাগে না কোন একামত দেওয়া লাগে না। কিন্তু আমাদেরকে আওয়াজ করে কেরাত করতে হবে। কিন্তু কিছু অতিরিক্ত তাকবির থাকবে দেওয়া লাগবে। সালাত এর শেষে খুতবা দিতে হয়।
আপনারা যারা ঘরে সালাত আদায় করবেন খুতবা না দিলেও হবে। আমরা জানি যে ঈদের সালাতে অতিরিক্ত তাকবীর দেওয়া লাগে। হানাফী মাজহাবের মতে আমরা ছয়টা অতিরিক্ত তাকবীর দেই। প্রথম রাকাতে অতিরিক্ত তিনটা দ্বিতীয় রাকাতে অতিরিক্ত তিনটা।
শাফি মাযহাবে অতিরিক্ত বারোটি তাকবীর দেওয়া হয়। প্রথম রাকাতে সাতটি দ্বিতীয় রাকাতে পাঁচটি। যেহেতু বাংলাদেশ হানাফী মাযহাবের অনুসারী অনেকগুলো তাই আমরা সহজটাকেই বেছে নেব ছয় তাকবীরের সালাতটি আমরা আদায় করব। ঈদের নামাজ দুই রাকাত।
নামাজের নিয়ম:
১। তাকবীরে তাহরিমা পড়ে আল্লাহু আকবার বলে হাত বাধার পর সানা পড়বেন।
২। সানা পড়ে কেরাত করার আগে অতিরিক্ত আপনি তিনটা তাকবীর দিবেন। আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার
৩। তিনটা তাকবীর দেওয়ার পরে আপনি উচ্চস্বরে সূরা ফাতিহা তেলাওয়াত করবেন এবং একটি অন্য সূরা পড়বেন।
৪। তারপরে আপনি রুকু সিজদাহ করে দ্বিতীয় রাকাত নামাজে চলে যাবেন।
৫। দ্বিতীয় রাকাত নামাজ যাওয়ার পর আপনি আগেই কেরাত করবেন।
৬। সূরা ফাতিহা এবং অন্য একটি সূরা পাঠ করার পর রুকুতে যাওয়ার আগে আপনি তিনটা তাকবির দিবেন আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার।
৭। তিনটা তাকবীর দেওয়ার পর চতুর্থ তাকবীর দিয়ে আপনি রুকুতে যাবেন এবং রুকু সিজদাও শেষ করে অবশেষে সালাম ফিরাবেন।
৮। আপনারা যারা ঘরে বসে ঈদের সালাত আদায় করবেন তাদেরকে খুতবা না দিলেও হবে।
ঈদুল ফিতরের ইতিহাস
প্রিয় বন্ধুরা আমরা অনেকেই ঈদুল ফিতরের ইতিহাস জানতে চাই। কোথা থেকে ঈদুল ফিতর এলো তা আমাদের মাথায় চিন্তা ঘুর পাক করতো। তাই আজকে ঈদের দিনের ইতিহাস সামনে তুলে ধরার চেষ্টা করব।
মুস্তাক আহমেদ ইবনে হাম্বাল এর হাদিস থেকে পাওয়া যায় আনাস ইবনে মালিক রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু তিনি বর্ণনা করেন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন মক্কা থেকে মদিনায় হিজরত করতে জান সেখানকার মদিনা বাসীরা দুইটি উৎসব পালন করতো। তারপর এসে দেখলেন তারা বছরের দুইটি উৎসব পালন করে থাকেন।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদেরকে জিজ্ঞাসা করলেন এগুলো তোমরা কি উৎসব পালন করছো? তারা উত্তরে বলল যে আমরা জাহিলি যুগে দুইটি আনন্দ উৎসব করতাম। খেলাধুলা করতাম উৎসব করতাম এবং নানা আনন্দের মধ্যে থাকতাম।
কিন্তু রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদেরকে বলেন যে আল্লাহ তা'আলা তোমাদেরকে এই দুইটা দিনের পরিবর্তে আরো দুইটা বিশেষ এবং শ্রেষ্ঠ দুইটি উৎসব দান করেছেন এবং একটা হচ্ছে ঈদুল ফিতর এবং অপরটি হচ্ছে ঈদুল আযহা। অর্থাৎ শাওয়ালের এক তারিখে তোমরা আনন্দ উৎসব করবে যেটা আমরা আগামীকাল উদযাপন করব।
আর আরেকটি হচ্ছে জিলহজের ১০ তারিখ আরাফার দিনের পরে হজ পালন শেষে, ১০ তারিখে কোরবানির মধ্য দিয়ে যে উৎসবটা পালন করি সেটা হচ্ছে ঈদুল আযহা। সাথে এটা বলেন যে এই দুইটা দিন হচ্ছে সবচেয়ে খুশির দিন এই দিনে সবার খুশি ভাগাভাগি করে নিবে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো বলেছেন ঈদের দিন এবং বিয়ের দিনে বেশি বেশি করে আনন্দ করতে।
এবং এই দিনে সবাইকে খেলাধুলার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। তোমরা রাসূল সাল্লাল্লাহু সাল্লাম ঈদের দিনে সাহাবীদের সাথে খেলায় মিলে থাকতেন এবং আমরা এই হাদিস থেকে বুঝতে পারলাম যে ঈদের দিনের ছেলেমেয়েরা খেলাধুলা করতে পারবে আনন্দ করতে পারবে এবং রাসূল সাল্লাল্লাহু সাল্লাম মা আয়েশা রাদিয়াল্লাহু তা'আলা কে সাথে নিয়ে খেলা করতেন।
আরো পড়ুনঃ রোজার ঈদ কবে হবে ২০২৩
শেষ কথাঃ ঈদুল ফিতরের নামাজের নিয়ম
প্রিয় পাঠক আমরা প্রায়ই পোস্টের শেষ পর্যায়ে চলে এসেছি। আজকের এই আর্টিকেলে মূল বিষয় নিয়ে যেটি আলোচনা করা হয়েছে সেটি হচ্ছে ঈদুল ফিতরের নামাজের নিয়ম। ঈদুল ফিতরের নামাজের নিয়ম এবং ঈদুল ফিতরের সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা আপনাদের সামনে তুলে ধরার চেষ্টা করেছি।
আশা করি আপনাদের ঈদুল ফিতরের নামাজের নিয়ম এবং ইতিহাস যেন খুব উপকার হবেন। আশা করি আপনারা এতক্ষণে ঈদুল ফিতরের নামাজের নিয়ম জেনে গেছেন। আপনারা এখনো যারা ঈদুল ফিতরের নামাজ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারেননি তারা এই পোস্টটি আবার সম্পূর্ণ মনোযোগ সহকারে পড়ুন।
আশা করি সব তথ্য পেয়ে যাবেন। ঈদের সালাত কে আমরা খুবই গুরুত্বপূর্ণ দিব। এই দিনে আমরা সবাই একে অপরে আনন্দ করবো এবং আনন্দ ভাগাভাগি করে নিব। এতক্ষণ আমাদের সঙ্গে থাকার জন্য অনেক ধন্যবাদ। আশা করি ভালো থাকবেন।