আল আকসা মসজিদ কোথায় অবস্থিত এই সম্পর্কে আপনারা অনেকেই জানতে চান। কেননা আল আকসা মসজিদ সম্পর্কে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ তথ্য রয়েছে যা এখনো অনেকের কাছে অজানা। যদি আপনি আল আকসা মসজিদ সম্পর্কে বিস্তারিত ভাবে জানতে চান তবে এই পোস্টটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত মনোযোগ সহ পড়ার অনুরোধ রইল। আজকের এই পোস্টটি আল আকসা মসজিদ সম্পর্কে সকল গুরুত্বপূর্ণ তথ্য নিয়েই সাজানো হয়েছে। তাহলে চলুন জেনে নেই এ সম্পর্কে।
(toc) #title=(সূচিপত্র)
আল আকসা মসজিদ কোথায় অবস্থিত
মুসলমানদের কাছে সবচেয়ে প্রিয় জায়গা হচ্ছে আল আকসা মসজিদ। আল আকসা মসজিদ মসজিদুল আকসা বা বাইতুল মুকাদ্দাস নামেও পরিচিত। জেরুসালেমের পুরাতন শহরে ইসলামের তৃতীয় পবিত্রতম মসজিদুল আল আকসা অবস্থিত।
আল-আকসা মসজিদ মুসলমানদের কাছে পৃথিবীর দ্বিতীয় পবিত্রতম স্থান। এ মসজিদটি ফিলিস্তিনের প্রাণকেন্দ্র পবিত্র জেরুজালেম নগরীতে অবস্থিত। এটি একটি প্রাচীন মসজিদ, যা হযরত সুলাইমান (আ) নির্মান করেন। মক্কা শরীফের পরেই মুসলমানদের কাছে এ মসজিদের গুরুত্ব।
এই মসজিদের একই প্রাঙ্গণে কুব্বাত আস সাখরা, কুব্বাত আস সিলসিলা ও কুব্বাত আন নবী অবস্থিত রয়েছে। এই স্থানগুলোকে হারাম আল শরীফ বলা হয়। এছাড়াও ইহুদী ধর্ম মতে এই স্থানটিকে "টেম্পল মাউন্ট” বলা হয়ে থাকে।
ইসলাম ধর্মের বর্ণনা অনুযায়ী, হযরত মুহম্মদ (স.) মিরাজের রাতে মসজিদুল হারাম শরীফ থেকে বায়তুল মুক্কাদাস বা আল-আকসা মসজিদে এসেছিলেন এবং এখান থেকে হযরত মুহম্মদ (স.) ঊর্ধ্বাকাশের দিকে যাত্রা শুরু করেন। ইতিহাসদের মতে, হযরত সুলাইমান (আ.) এর প্রার্থনা এর স্থানটির নামই হল এই মসজিদুল আল-আকসা।
সহীহ বুখারী থেকে জানা যায় হযরত আদম (আ.) সর্ব প্রথম এই মসজিদুল আকসা তৈরি করেন। একবার রাসুল (স.) জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল বায়তুল্লাহ নির্মাণের কত দিন পর এই আল আকসা মসজিদ নির্মাণ করা হয়। তিনি উত্তরে বলেন চল্লিশ বছর পর।
সকল মুসলমান বিশ্বাস করেন যে, এই মসজিদ নির্মাণের পর থেকে এটি হযরত ঈসা (আঃ) সহ অনেক নবীর দ্বারা এক আল্লাহকে ইবাদতের স্থান হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে এসেছে।
মুসলমানদের প্রথম কিবলা হচ্ছে এই আল আকসা মসজিদ। পবিত্র কুরআন মাজিদ অবতীর্ণ হওয়ার পর থেকে কাবা শরীফ নতুন কিবলা হয়।
বর্তমানে মসজিদুল আকসা এই মসজিদ কে আল-আকসা মসজিদ বলতে বোঝাায় কিবলি মসজিদ, মারওয়ানি মসজিদ ও বুরাক মসজিদ এই তিনটি মসজিদ এর সমন্বয়কে বোঝায়।
আরো পড়ুনঃ জুমার দিনের আমল - জুমার দিনের ১১ টি আমল
আল আকসা মসজিদের ইতিহাস
ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের প্রথম কিবলা হচ্ছে আল আকসা মসজিদ বা বায়তুল মুকাদ্দাস। একজন মুসলিম হিসেবে আপনার আল আকসা মসজিদের ইতিহাস জেনে রাখা দরকার।
আজকের এই পোস্টের এই অংশে আল আকসা মসজিদের ইতিহাস জানতে পারবেন। তাহলে চলুন জেনে নেই বায়তুল মুকাদ্দাস মসজিদের ইতিহাস জেনে নেই।
হযরত ইবারহিম (আ.) মহান আল্লাহর ইবাদতের জন্য জেরুসালেমেও একটি প্রার্থনার স্থান প্রতিষ্ঠা করছিলেন। কাবা শরীফ নির্মাণের চল্লিশ বছর পর তিনি এটিকে আরও বিস্তৃতকরণ করেন যা পরবর্তীকালে "বাইতুল মুকাদ্দাস" নামে পরিচিত হয়। মসজিদুল হারামের তুলনায় দূরতম উপাসনার স্থান হওয়ায়, ইব্রাহিম (আ.) এটিকে "মাসজিদুল আকসা’ বলেও উল্লেখ করতেন।
হযরত ইবরাহিম (আ.) এর পুত্র হযরত ইসহাক (আ.) ও এখানে ইবাদত করতেন তিনিও তার পিতার মত মক্কার কাবাতে হজ্ব করতে গিয়েছিলেন। ইসহাক (আ.) এর দ্বিতীয় পুত্র হযরত ইয়াকুব (আ.) এই অঞ্চলের মানুষকে আল্লহতে বিশ্বাস করানোর জন্য এটি প্রার্থনার স্থান হিসাবে এটিকে নির্ধারণ করেছিলেন।
মূলত হযরত ইয়াকুব (আ.) কে বায়তুল মুকাদ্দাস মসজদিদ নির্মাণ করেন বলে বিবেচনা করা হয়। পরবর্তী সময়ে হযরত সুলাইমান (আ.)প্রার্থনার স্থানটির স্থাপত্য তৈরি করেন ও সৌন্দর্য বৃদ্ধি করেন। মুসলমানেরা দৃঢ় বিশ্বাস করেন, সুলাইমান (আ.) এই মসজিদুল আকসা মসজিদের স্থাপনা তৈরীতে জ্বীনদেরকে নি য়োগ করেছিলেন। আর সময়ের কালক্রমে এভাবেই আল আকসা বা বায়তুল মুকাদ্দাস মসজিদ নির্মাণ করা হয়।
আরো পড়ুনঃ মহানবী সা এর বিড়ালের নাম কি | নবীজির বিড়ালের নাম
আল আকসা মসজিদের স্থাপত্য তথ্য
মুসলিমদের কাছে আল আকসা মসজিদ সম্পর্কে বিভিন্ন ধরনের তথ্য জানা দরকার। কেননা আল আকসা মসজিদ ছিল মুসলমানদের প্রথম কিবলা। অর্থাৎ এটিই ছিল মুসলিমদের প্রথম প্রার্থনা দিক। আল আকসা মসজিদের স্থাপত্য তথ্যগুলো চলুন জেনে নেই।
আল আকসা মসজিদের দৈর্ঘ্য রয়েছে ২৭২ ফুট এবং প্রস্থ রয়েছে ১৮৪ ফুট। মসজিদের আবৃত স্থান রয়েছে ১,৪৪,০০০ বর্গমিটার। মসজিদটির ২টি বৃহৎ + দশটি ছোট গম্বুজ ও ৪টি মিনার রয়েছে। মিনারগুলো উচ্চতা রয়েছে ৩৭ মিটার বা ১২১ ফুট। ভবণটি চুনাপাথর, সোনা, সীসা ও পাথর, সাদা মার্বেল এবং মোজাইক ব্যবহার করে মসজিদ টি নির্মাণ করা হয়। মসজিদুল আকসা মসজিদের ধারণ ক্ষমতা পাঁচ হাজারের বেশী।
আল আকসা মসজিদ কোন দেশে অবস্থিত
মুসলিম সমাজে আল আকসা মসজিদের অবস্থান কোথায় বা মসজিদুল আকসা মসজিদ কোন দেশে রয়েছে এই ব্যাপারে অনেকেই জানতে চায়। আল আকসা মসজিদ কোথায় অবস্থিত এটা জানারা আগে আপনার আল আকসা মসজিদ কি এটা জানা উচিত। উপরে আল আকসা মসজিদ সম্পর্কে সকল তথ্য দেওয়া আছে আপনারা পড়ে জেনে নিতে পারেন।
আল আল আকসা রয়েছে জেরুজালেমের পুরনো শহরে। অর্থাৎ ফিলিস্তিনির জেরুজালেরমের পুরাতন এক শহরে বায়তুল মুকাদ্দাস মসজিদ অবস্থিত। মুসলমানদের একটি পবিত্র স্থান হচ্ছে এই মসজিদুল আকসা মসজিদ।
আরো পড়ুনঃ নামাজ না পড়ার ১৫ টি শাস্তি - নামাজ না পড়ার শাস্তি
আল আকসা মসজিদ কে নির্মাণ করেন
মুসলমানদের পবিত্র স্থান হচ্ছে এই আল আকসা। মুসলিমদের প্রথম কিবলা হলো এই বায়তুল মুকাদ্দাস। আল আকসা মসজিদ কে নির্মাণ করেন এই ব্যাপারে সকল মুসলমান জানতে চায়, আল আকসা মসজিদ নিয়ে বিশদ ইতিহাস রয়েছে।
তবে ইতিহাস এবং ইন্টারনেট সূত্রে জানা যায় আল আকসা মসজিদ সর্ব প্রথম নির্মাণ করেন হযরত ইব্রাহিম (আ.) এরপর তার নাতি হযরত ইয়াকুব (আ.) অর্থাৎ হযরত ইসহাক (আ.) এর দ্বিতীয় পুত্র এই মসজিদ নির্মাণ করেন। এর পরবর্তী সময়ে হযরত সুলাইমান (আ.) এই মসজিদ নির্মাণ করতে জ্বীনদেরকে নিয়োগ করেছিলেন।
আল আকসা মসজিদ ছবি
মসজিদুল আকসায় কোন কোন নবীকে কবর দেওয়া হয়েছে
মসজিদুল আকসায় কোন কোন নবীকে কবর দেওয়া আছে এই নিয়ে আপনারা অনেকেই জানতে চান। হযরত ইব্রাহিম (আঃ) এবং হযরত ইসমাইল (আঃ) থেকে তাদের নাতি হযরত ইয়াকুব (আঃ), হযরত মুসা (আঃ), হযরত ইউসুফ (আঃ) প্রভৃতি নবীদের কবর দেওয়া আছে।
FAQ
আল আকসা কোথায় অবস্থিত এই নিয়ে আপনার মনে বেশ কিছু প্রশ্ন আপনার মনে উঁকি দিতে পারে। তাহলে চলুন জেনে নেই সেই সকল প্রশ্ন ও উত্তর।
আল আকসা মসজিদ কোথায় অবস্থিত?
আল আকসা মসজিদ বা বায়তুল মুকাদ্দাস মসজিদ জেরুজালেমের পুরোনো শহরে অবস্থিত। আল আকসা মসজিদের ইতিহাস অনেক রয়েছে।
মুসলমানদের প্রথম কিবলা কোথায় ছিল?
মুসলমানদের প্রথম কিবলা ছিল বায়তুল মুকাদ্দাস মসজিদ বা আল আকসা মসজিদ। এই মসজিদই ছিল সর্ব প্রথম মুসলমানদের প্রথম প্রার্থনার দিক। পরবর্তী সময়ে হিজরতের পর এবং কুরআন মাজিদ অবতীর্ণ হওয়ার পর কাবা শরীফ নতুন কিবলা নির্ধারণ করা হয়।
লেখকের শেষকথা
ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের আল আকসা মসজিদ সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য জেনে রাখা জরূরী। কেননা আমাদের ইসলাম ধর্মের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে এই আল আকসা মসজিদ। এছাড়াও এই বায়তুল মুকাদ্দাস মসজিদ থেকেই আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহম্মদ (স.) মিরাজে গিয়েছিলেন।
সুপ্রিয় পাঠক, আজকের পোস্টটি আল আকসা মসজিদ কোথায় অবস্থিত, আল আকসা মসজিদের সকল গুরুত্বপূর্ণ তথ্যগুলো নিয়েই সাজানো হয়েছে। তাই এই পোস্টটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়ার অনুরোধ জানিয়ে আজকের লেখা শেষ করছি। আল আকসা সম্পর্কে আরও জানতে চাইলে এই পোস্টের নিচে মন্তব্য করতে পারেন। এছাড়াও পোস্টটি তথ্যবহুল হলে আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করতে পারেন। ধন্যবাদ।
আর্টিকেল সম্পর্কিত তথ্য জানতে কমেন্ট করুন। আপনার প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।