আর্টিকেল লিখে আয় করার উপায় - কন্টেন্ট লিখে আয় - বর্তমানে বাংলাদেশে অনেকেই ফ্রিল্যান্স কন্টেন্ট রাইটিং করে দেশের ভেতরে এবং দেশের বাইরে থেকেও আয় করে চলেছেন। আবার এমন অনেকেই রয়েছেন যাদের আর্টিকেল রাইটিং এ দক্ষতা আছে, কিন্ত বুঝতে পারছেন না যে কিভাবে এই বড় দক্ষতাকে কাজে লাগিয়ে টাকা আয় শুরু করে দিবেন। তাদের জন্যই মূলত আজকের লেখা।
সূচীপত্রঃ আর্টিকেল লিখে আয় করার উপায়
যারা ফ্রিল্যান্স কন্টেন্ট রাইটিং করছেন, তারা এই আর্টিকেল থেকে জানতে পারবেন কন্টেন্ট রাইটিং করে আরো কিছু আয়ের মাধ্যম সম্পর্কে। আর যারা শুরু করি করি করেও শুরু করতে পারছেন না তারাও কিছু রোডম্যাপ পেয়ে যাবেন। আসুন তবে জেনে নেই, ফ্রিল্যান্স কন্টেন্ট রাইটিং করে টাকা আয় করার কিছু উপায় সম্পর্কে।
আর্টিকেল লিখে আয় করার উপায় নিয়ে শুরু করার আগে কিছু কথাঃ বাংলাদেশে ফ্রিল্যান্সিং সম্পর্কে এখনো অনেকের কিছু ভুল ধারনা রয়েছে। শুধু কম্পিউটার ক্রয় করে এবং ব্রডব্যান্ড কানেকশন নিয়ে নিলেই আপনার টাকা আয় শুরু হয়ে যাবে না। ফ্রিল্যান্সিং করতে চাইলে আপনাকে অবশ্যই ফ্রিল্যান্সিং সম্পর্কে সঠিক ধারণা অর্জন করতে হবে।
ফ্রিল্যান্সিং কোনো কাজ নয়, এটি শুধুমাত্র কাজ করার একটি পদ্ধতি। আপনি যদি নির্দিষ্ট কোনো কাজের বিনিময়ে কোনো কোম্পানী বা প্রতিষ্ঠান থেকে মাস শেষে একটি নির্দিষ্ট হারে অর্থ উপার্জন করেন, তবে তাকে আমরা বলি “চাকরি”।
অন্যদিকে ফ্রিল্যান্সিং বলতে বোঝায়, কোনো নির্দিষ্ট কোম্পানীর অধীনে নির্দিষ্ট বেতনে কাজ না করে মুক্তভাবে কাজ করা। এই ক্ষেত্রে আপনার মাসিক আয় নির্ভর করবে আপনি উক্ত মাসে ঠিক কতোটা কাজ কমপ্লিট করতে পারছেন তার উপর।
আপনি যদি বেশি কাজ করতে পারেন, তবে আপনার আয় বেশি হবে। আর যদি কম কাজ করে থাকেন, তবে আপনার আয়ও কম হবে। ফ্রিল্যান্সার হিসবে বিভিন্ন ধরণের কাজ করা যায়। কেউ ফ্রিল্যান্স গ্রাফিক্স ডিজাইনার হিসেবে কাজ করেন, কেউ ফ্রিল্যান্স ওয়েব ডেভেলপার হিসেবে অথবা কেউ কেউ ফ্রিল্যান্স ডিজিটাল মার্কেটার হিসেবে।
এখন আসি ফ্রিল্যান্স কন্টেন্ট রাইটিং নিয়ে। ফ্রিল্যান্স কন্টেন্ট রাইটিং বলতে বোঝায়, একটি নির্দিষ্ট রেটে বিভিন্ন ক্লায়েন্টের জন্য কন্টেন্ট লেখা। এটা হতে পারে ব্লগ লেখা, প্রোডাক্ট রিভিউ, স্ক্রিপ্ট রাইটিং, এসাইনমেন্ট রাইটিং, প্রমোশনাল কপিরাইটিং ইত্যাদি।
ফ্রিল্যান্সাররা এইক্ষেত্রে আর্টিকেল প্রতি চার্জ করেন অথবা শব্দপ্রতি’ও চার্জ করতে পারবেন। যেমন: আর্টিকেল প্রতি ৫০০ টাকা অথবা ৮০০ টাকা এবং ০.৫ টাকা প্রতি ওয়ার্ড অথবা ০.৮ টাকা প্রতি ওয়ার্ড ইত্যাদি।
আশা করি ফ্রিল্যান্স কন্টেন্ট রাইটিং সম্পর্কে আপনাদের বেসিক কিছু ধারণা দিতে পেরেছি। এখন চলুন জেনে নেয়া যাক, ফ্রিল্যান্স কন্টেন্ট রাইটিং করে টাকা আয় করার কিছু উপায় সম্পর্কে।
১। বাংলা আর্টিকেল লিখে আয়
কন্টেন্ট রাইটিং সেক্টরে প্রবেশ না করলে কখনো জানতেই পারতাম না যে বাংলায় এতো মানুষ প্রতিদিন ব্লগিং করছেন এবং টাকা আয় করছেন। প্রতিদিন প্রচুর পরিমাণে মানুষ বাংলা ব্লগিং শুরু করছেন, ফলস্বরুপ, বাংলা ব্লগের সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলেছে।
তবে যারা ব্লগ শুরু করছেন, তাদের অনেকেই কিন্তু নিজে মানসম্মত কন্টেন্ট লিখতে পারেন না। তাই যারা মানসম্মত এবং এসইও ফ্রেন্ডলি কন্টেন্ট লিখতে পারেন, তাদের চাহিদাও দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।
তাই আপনি যদি সুন্দর বাংলা কন্টেন্ট লিখতে পারেন তবে এই সেক্টর থেকেও আপনার একটি আয়ের উপায় তৈরি করে নিতে পারবেন। লেখালেখির স্বভাব এবং মানসম্মত লেখা সম্পর্কে যাদের ধারণা রয়েছে তাদের আর আলাদাভাবে বিশেষ কিছু করতে হবে।
শুধু এসইও সম্পর্কে বেসিক কিছু ধারণা অর্জন করতে হবে, যাতে করে আপনি যেই আর্টিকেল লিখে দিবেন, আপনার ক্লায়েন্ট যেন সহজেই সেই লেখাটিকে সার্চ ইঞ্জিনগুলোয় র্যাংক করাতে পারেন। বিভিন্ন বিষয়ে বাংলা কন্টেন্ট এর চাহিদা রয়েছে। সেগুলোর মাঝে প্রধাণত, দৈনিক খবর, টেকনোলজি, লাইফ হ্যাকস, শিক্ষা, ট্রিকস এন্ড টিপস ইত্যাদি বিষয়ে সবচেয়ে বেশি মানুষ কাজ করছেন।
এখন কথা হলো, বাংলা কন্টেন্ট লিখবেন, কিন্তু ক্লায়েন্ট পাবেন কিভাবে? মার্কেটপ্লেসগুলোতে বাংলা কন্টেন্ট এর কাজ বিশেষ একটা পাওয়া যায় না। তাই আপনি বাংলা ব্লগারদের কিছু ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করতে পারেন। এই গ্রুপগুলোতে প্রতিদিন ভালো পরিমাণে কন্টেন্ট রাইটিং এর কাজ সম্পর্কে পোস্ট করা হয়। যেমন :
1. Content Writers । Bangladesh
2. Blogger Friends BD
3. Content Writers in Bangladesh
4. Content Writer Group BD
আরো পড়ুনঃ লোকেশন শেয়ার কিভাবে করে - লোকেশন শেয়ার করার নিয়ম
২। ইংরেজি আর্টিকেল লিখে আয়
বাংলা কন্টেন্ট রাইটিং এর চাহিদা প্রতিদিন বৃদ্ধি পেতে থাকলেও, তা ইংরেজি কন্টেন্ট রাইটারদের চাহিদার তুলনায় নগণ্য। তাই আপনার যদি ইংরেজি ভাষায় ভালো দখল থাকে, তবে আমি বলবো বাংলায় কাজ না করে ইংরেজিতে কাজ করতে। এর পেছনে বেশ কিছু কারণ রয়েছে।
প্রথমত, বাংলাদেশে ইংরেজিতে দক্ষ মানুষের পরিমাণ এখনো তুলনামূলক কম। তাই মানসম্মত ইংরেজি কন্টেন্ট লিখতে পারেন এমন রাইটারদের চাহিদা অনেক বেশি। ইংরেজিতে অনেকেই কাজ করলেও, সবাই কিন্তু ভুল-ত্রুটিহীন কন্টেন্ট লিখতে পারেন না।
তাই আপনি যদি নির্ভুল কন্টেন্ট লিখতে পারেন তবে সম্ভাবনা আছে আপনার ক্লায়েন্ট আপনাকে ছাড়তে চাইবেন না। অথবা পরবর্তী কোনো প্রজেক্টে কাজ করার জন্য তিনি সর্বপ্রথম আপনাকেই নক করবেন।
দ্বিতীয়ত, বাংলাদেশে প্রচুর মানুষ ব্লগিং করলেও, তার বড় একটি অংশ মূলত কাজ করছেন ইংরেজি ভাষায় অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং নিয়ে। তাই, উপরে আমি যেই গ্রুপগুলোকে রেফার করেছি, সেগুলোতে বেশিরভাগ অফারই আসে ইংরেজিতে কাজ করার জন্যে। তাই অ্যাফিলিয়েট কন্টেন্ট লেখার বেসিক ধারণা অর্জন করে নিতে পারলেই আশা করি আপনার কাজের অভাব হবে না।
তৃতীয়ত, ইংরেজি ভাষায় দক্ষ হলে আপনি মার্কেটপ্লেসগুলোতেও (যেমন : Fiver, Upwork) কাজ করতে পারবেন। মার্কেটপ্লেসে পেমেন্টেও তুলনামূলক বেশি পাওয়া যায় এবং এটি এক প্রকার রেমিট্যান্স হিসেবেও কাজ করে।
কিন্তু টাকা বেশি বলেই ভুলেও ইংরেজি কন্টেন্ট রাইটিং-এ ঢুকে পরবেন না। মনে রাখবেন, এই সেক্টরে প্রবেশের পূর্বশর্ত হচ্ছে আপনাকে ইংরেজি ভাষায় অবশ্যই দক্ষ হতে হবে। নয়তো, ভূলভাল ইংরেজি দিয়ে আপনি শুধু ক্লায়েন্টেরই সময় নষ্ট করবেন না, সেই সাথে বাংলাদেশের অন্য একজন রাইটার-এর কাজ পাওয়ার সম্ভাবনাও শেষ করে দিবেন।
আরো পড়ুনঃ পুরাতন আইফোন কেনার আগে যা যা জানা দরকার
৩। ইউটিউবারদের স্ক্রিপ্ট লিখে করে টাকা আয়
বর্তমানে বাংলাদেশে প্রচুর পরিমাণ মানুষ ফু লটাইম ইউটিউবিং করছেন। প্রতিনিয়ত ইউটিউবারদের সংখ্যা এবং আয় দুটোই বেড়ে চলেছে। যারা নতুন নতুন ইউটিউবিং শুরু করেন, তারা শুরুতে স্ক্রিপ্টিং নিজেরাই করে থাকেন। তবে চ্যানেল বড় হওয়ার সাথেই সাথেই স্ক্রিপ্টিং, রেকর্ডিং, এডিটিং এর মতো সব কাজ কারো পক্ষে একা করা সম্ভব হয় না।
তাই ইউটিউবাররা প্রতিটি কাজের জন্য আলাদা আলাদা টিম মেম্বার রাখেন। স্ক্রিপ্টিং এর জন্যেও প্রয়োজন পরে একজন টিম মেম্বার-এর। রিসার্চ করে ভালো স্ক্রিপ্ট তৈরি করতে পারলে আপনিও হয়ে যেতে পারেন একজন ইউটিউবারের টিম মেম্বার।
অনেকে মাসিক বেতনভিত্তিক টিম মেম্বার নিয়ে থাকেন, আবার অনেকেই প্রতি স্ক্রিপ্ট হিসেবে পেমেন্ট করেন। আপনার যেভাবে সুবিধে আপনি সেভাবেই এই সেক্টরে কাজ করতে পারবেন।
চাইলে একই সময়ে একাধিক ইউটিউবারের জন্যেও স্ক্রিপ্টিং করতে পারবেন আপনি। তবে এই সেক্টরে কাজ করতে চাইলে অবশ্যই আপনার রিসার্চ করার স্কিল থাকতে হবে। যাতে আপনার স্ক্রিপ্ট যথেষ্ট তথ্যপূর্ণ হয়।
৪। এসাইনমেন্ট লিখে টাকা আয়
বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের জন্য একটি পার্ট টাইম আয়ের উপায় হতে পারে ফ্রিল্যান্স এসাইনমেন্ট রাইটিং। যারা বিশ্ববিদ্যালয়ে বিবিএ বা এমবিএ করছেন, তাদের অনেকেই ব্যস্ততা অথবা সময়ের স্বল্পতার কারণে নিজেদের এসাইনমেন্ট কমপ্লিট করতে পারেন না।
এইক্ষেত্রে তারা এমন শিক্ষার্থীদের খোজ করেন যারা তাদের জন্য এসাইনমেন্টগুলো লিখে দিবেন। আপনার যদি এসাইনমেন্ট লেখার হাত ভালো থাকে এবং রিসার্চ করার মানসিকতা থাকে তাহলে আপনি বন্ধু-বান্ধব অথবা সিনিয়রদের এসাইনমেন্ট লিখে দিয়ে তাদের থেকে একটি নির্দিষ্ট ফি কালেক্ট করতে পারেন।
আপনার নেটওয়ার্কিং স্কিল ভালো থাকলে আপনি নিজেই অন্যদের সাথে যোগাযোগ করে কাজের ব্যবস্থা করে নিতে পারবেন। আবার মোটামুটি সব বিশ্ববিদ্যালয়েই এসাইনমেন্ট রাইটারদের গ্রুপ থাকে। তাদের সাথে যুক্ত হয়েও আপনি কাজ করতে পারবেন।
এসাইনমেন্ট লিখতে যেহেতু সময় বেশি লাগে এবং তুলনামূলক বেশি রিসার্চের প্রয়োজন হয়, তাই এই কাজে পেমেন্টও অন্যান্য সেক্টরগুলোর তুলনায় বেশি। তবে সাবধান, অন্যদের এসাইনমেন্ট করে দিতে গিয়ে যেন আপনার নিজের পড়ালেখা হেলার সম্মুখীন না হয়।
৫। ব্যক্তিগত ব্লগে কন্টেন্ট লিখে টাকা আয় করুন
অন্যদের জন্য কাজ করার পাশাপাশি আপনি নিজের একটি ব্লগ শুরু করতে পারেন। এইক্ষেত্রে ইন্সট্যান্ট টাকা আয় হবে না, অন্তত ৬ মাস থেকে ১.৫ বছর আপনাকে ব্যক্তিগত ব্লগে সময় দিতে হবে। ব্লগ যখন মোটামুটি বড় হয়ে যাবে এবং নিয়মিত অডিয়েন্স আসা শুরু করবে তখন আপনি অ্যাডসেন্স যুক্ত করে মাসিক কিছু পরিমাণ আয় করতে পারবেন।
আবার আপনার ব্লগকে জনপ্রিয় করে তুলতে পারলে আপনি সাইটে বিভিন্ন বিজ্ঞাপণ স্থায়ী বিজ্ঞাপন দিয়েও টাকা আয় শুরু করতে পারবেন। বর্তমান সময়ে পারসোনাল ব্র্যান্ডিং-এর জন্য সকলেরই দরকার একটি ব্যক্তিগত ওয়েবসাইট শুরু করা। আপনার ওয়েবসাইট আপনার ব্যক্তিগত পোর্টফোলিও অথবা আপনার ব্যবসায়ের জন্য ভরসা অর্জনে অনেক ভূমিকা রাখবে।
৬। কন্টেন্ট রাইটিং এজেন্সি শুরু করে টাকা আয়
আপনি নিজে যদি ভালো কন্টেন্ট লিখতে পারেন এবং আপনার এমন মানুষদের সাথে নেটওয়ার্ক রয়েছে যারা এই কাজে আগ্রহী, তবে তাদের সাথে ছোটখাটো একটি টিম তৈরি করে আপনি কপিরাইটিং এজেন্সি শুরু করতে পারবেন।
ফ্রিল্যান্স কন্টেন্ট রাইটার হিসেবে যেভাবে ক্লায়েন্টদের সার্ভিস দিবেন, এখানেও ঠিক সার্ভিস আপনার ক্লায়েন্টদের প্রোভাইড করবেন। তবে এজেন্সি শুরু করার মাধ্যমে আপনার ফ্রিল্যান্সিং একটি প্রাতিষ্ঠানিক রুপ লাভ করবে। আপনি হয়ে উঠতে পারবেন একজন ফ্রিল্যান্সার থেকে একজন উদ্যোক্তা।
আর্টিকেল সম্পর্কিত তথ্য জানতে কমেন্ট করুন। আপনার প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।