গর্ভবতী মায়ের প্রথম তিন মাসের সতর্কতা - গর্ভবতী মায়েরা প্রথম তিন মাসের সতর্কতা অনেকেই জানতে চায়। প্রত্যকটি গর্ভবতী মায়েদের গর্ভাবস্থায় সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত। কেননা গর্ভবতী মায়েদের প্রথম তিন মাসে শারীরিক এবং মানসিক পরিবর্তন ঘটে।
গর্ভাবস্থায় মায়ের স্নেহ এবং ভালোবাসায় শিশু ধীরে ধীরে বড় হতে থাকে। যদি আপনি একজন গর্ভবতী মা হয়ে থাকেন তবে আজকের এই পোস্টটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়ুন। তাহলে গর্ভবতী মায়ের প্রথম তিন মাসের সতর্কতা নিয়ে বিস্তারিতভাবে বুঝতে পারবেন।
গর্ভবতী মায়ের প্রথম তিন মাসের সতর্কতা নিয়ে কিছু কথা
একজন গর্ভবতী মায়ের উচিত প্রথম তিন মাসে বেশ কিছু সতর্কতা মেনে চলা উচিত। কেননা এসময় মায়েদের শারীরিক এবং মানসিক কিছু পরিবর্তন দেখা যায়। এমনকি শিশু এসময়ে বড় হতে শুরু করে। বিশেষ করে গর্ভবতী মায়ের প্রথম তিন মাসের সতর্কতার সাথে চলাফেরা করতে হবে। আজকের এই পোস্টে গর্ভবতী মায়ের প্রথম তিন মাসের সতর্কতা নিয়ে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হয়েছে। এই পোস্টটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়ার অনুরোধ রইল।
আরো পড়ুনঃ গর্ভবতী হওয়ার প্রথম সপ্তাহের লক্ষণ
গর্ভবতী মায়ের প্রথম তিন মাসের সতর্কতা
গর্ভাবস্থায় মেয়েদের সাবধানে চলাফেরা করা উচিত এসময়ে ভারি কোন ধরনের কাজ করা যাবে না। বেশী বেশী ঘুমাতে হবে এবং বিশ্রাম নিতে হবে। এই সময়ে নিয়মিত খাবার গ্রহণ করতে হবে। গর্ভবতী মায়ের প্রথম তিন মাসের খাবার তালিকা জেনে নিতে পারেন। নিচে গর্ভবতী মায়ের প্রথম তিন মাসের সতর্কতা নিয়ে আলোচনা করা হলো।
ক্যাফেইন জাতীয় খাবার পান করা থেকে বিরত থাকতে হবে
আপনার প্রেগন্যন্সি পরীক্ষা হয়ে গেলে খুব সাবধানে চলাচল করতে হবে। বিশেষ করে ক্যাফেইন জাতীয় চা, কফি ইত্যাদি পান করা থেকে বিরত থাকতে হবে। এমনকি অ্যালকোহেল, ধূমপান কোন অবস্থাতেই করা করা যাবে না। কেননা এসব জিনিস গর্ভের বাচ্চার অনেক ক্ষতি করে।
ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী চলাচল করতে হবে
যেহেতু আপনি এখন অন্তঃসত্ত্বা, তাই আপনাকে নিয়মিত ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী চলাফেরা করতে হবে। আপনার নিয়মিত পরামর্শের জন্য একটি ডাক্তার নির্বাচন করতে হবে। ডাক্তার নির্বাচন করার আগে কিছু বিষয় খেয়াল রাখবেন আপনার বাসা থেকে ডাক্তারের চেম্বারের দূরত্ব কতটুকু।
আপনি দ্রুত সেখানে যেতে পারবেন কি না এসব জেনে ডাক্তার নির্বাচন করা উচিত। কারণ এই সময়ে আপনি বেশী হাঁটা বা চলাফেরা করতে পারবেন না। তাই একটি ভালো ডাক্তার নির্বাচন করে নিয়মিত ডাক্তারের পরামর্শগুলো গ্রহণ করতে হবে।
হরমোন পরিবর্তন ঘটতে পারে
গর্ভাবস্থায় আপনার শরীরে হরমোন জনিত কারণে শারীরিক পরিবর্তন ঘটতে পারে। যেহেতু আপনি এখন অন্তঃসত্ত্বা, তাই আপনার শরীরে স্তনের আকারে পরিবর্তন হওয়া শুরু হতে পারে ধীরে ধীরে। সেই কারণে স্তনে ব্যথা হবে ও স্তন নরম হয়ে যাবে। এমনটা হলে ভয় পাবেন না। আপনি সব সময় মনে রাখবেন এই পরিবর্তন হওয়াটা আপনার সন্তানের জন্য জরুরি । তাই এসব বিষয় নিয়ে আপনি কখনোই ঘাবড়ে যাবেন না।
শারীরিক পরিবর্তন হতে পারে
গর্ভাবস্থায় মেয়েদের শারীরিক পরিবর্তন ঘটবে এটা স্বাভাবিক ব্যাপার। তবুও আপনাকে সতর্কতার সাথে কাজ করতে হবে। যেহেতু সন্তান জরায়ুতে ধারণ করা হয় ও জরায়ুর অবস্থান থাকে প্রসাবের নালীর উপরে,তাই বাচ্চার বৃদ্ধির সাথে সাথে জরায়ু প্রসাবের নালির উপরে কিছুটা চাপ ফেলে। ফলে প্রসাবের পরিমান বেড়ে যাবে। এই সমস্যা প্রথম তিন মাস এবং শেষ তিন মাস পর্যন্ত প্রবল থাকবে।
বিভিন্ন ধরনের উপসর্গ দেখা দিতে পারে
গর্ভবতী মহিলাদের গর্ভকালীন সময়ে বিভিন্ন ধরনের উপসর্গ দেখা দিতে পারে যেমনঃ মাথা ব্যাথা, বমি হওয়া, মেজাজ খিটখিটে, শরীর খারাপ ইত্যাদি ভাব হতে পারে। তবে সব মহিলাদের এসব উপসর্গ দেখা না ও দিতে পারে। তাই এসব উপসর্গ দেখা দিলে বিশ্রাম নিতে হবে।
বুক জালাপোড়া করতে পারে
গর্ভবতী মায়েদের কোষ্ঠকাঠিন্য ও বুক জালাপোড়া করতে পারে। গর্ভবতী মহিলাদের খাবার হজম হতে ও পেট খালি হতে অন্যন্য মহিলাদের তুলনায় বেশি সময় লাগে, কারণ গর্ভস্থ বাচ্চার খাবার থেকে পুষ্টি গ্রহন করতে সময় লাগে একটু বেশি।
আর এর ফলেই বুক জালাপোড়া করতে পারে ও কোষ্ঠকাঠিন্য হতে পারে। তবে এতে আপনি ঘাবড়ে যাবেন না। ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ সেবন করলে ঠিক হয়ে যাবে।
ভারী কাজ করা থেকে বিরত থাকতে হবে
গর্ভবতী মায়েরা কোন ভাবেই ভারী কাজ করতে পারবে না। কেননা অতিরিক্ত ভারি কাজ করার কারণে গর্ভবতী মায়েরা অসুস্থ হয়ে যেতে পারে তাই ভারী কাজ থেকে নিজেকে বিরত রাখতে হবে।
পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘুমাতে হবে
আপনি যেহেতু এখন গর্ভবতী তাই আপনি এই সময়ে ক্লান্ত অনুভব করতে পারেন। তাই এই ক্লান্ত দূর করতে চাইলে আপনাকে পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘুমাতে হবে। প্রতিনিয়ত অন্ত্যত আট থেকে দশ ঘন্টা ঘুমাতে হবে। এছাড়াও কাজ করার পর কিছু সময় বিশ্রাম নিবেন তাহলে ক্লান্ত দূর হয়ে যাবে।
ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ সেবন করতে হবে
ডাক্তারের প্রেসক্রিপশন মোতাবেক যদি কোন ওষুধ থাকে তা নিয়মত খাবেন। ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া কোন ভাবেই সেবন করবেন না। এমনি গ্যাসের ব্যাথা, মাথা ব্যাথা,জ্বর হলেও ডাক্তারের পরামর্শ সেবন করবেন না। এতে বাচ্চার ক্ষতি হতে পারে। তাই এই ব্যাপারে সতর্ক থাকবেন এবং ডাক্তারের পরামর্শ নিবেন।
আরো পড়ুনঃ গর্ভবতী মায়ের প্রথম তিন মাসের খাবার
প্রেগনেন্সি সেফ কিনা যাচাই করতে হবে
আপনার প্রেগনেন্সি সেফ বা সুরক্ষা আছে কি না তা যাচাই করে নিতে হবে। আপনি কোন ভাবেই ভারি কাজ করতে পারবেন না। মনে রাখতে হবে প্রেগনেন্সির প্রথম তিন মাস খুব সাবধানী হতে হবে। কারণ এই সময়ে এবরশনের হার সবচাইতে বেশি থাকে।
আর আপনি এমন কোন খাবার খাবেন না যাতে গর্ভের সন্তানের কোন ধরনের ক্ষতি হয়। বিশেষ করে পেঁপে, আনারসের সাথে সাথে কাঁচা বা আধা সিদ্ধ প্রোটিন যেমন মাছ, মাংস, ডিম এসব পরিহার করে চলতে হবে। বাচ্চার কথা চিন্তা করে পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে।
বহুল জিজ্ঞাসিত প্রশ্নের উত্তর
গর্ভবতী মায়ের প্রথম তিন মাসের সতর্কতা নিয়ে আপনার বেশ কিছু প্রশ্ন উঁকি দিতে পারে। তবে চলুন জেনে নেই সেই সকল গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নের উত্তর।
গর্ভবতী মা কিভাবে ঘুমাবে?
একজন গর্ভবতী মায়ের ঘুমের প্রয়োজন বেশী। কেননা গর্ভাবস্থায় গর্ভবতী মায়েরা ক্লান্ত থাকে তাই এই ক্লান্ত দূর করার জন্য ঘুমের গুরুত্ব অপরিসীম। একজন গর্ভবতী মা শান্ত পরিবেশে ঘুমানো উচিত। শোবার সময় ঘরের দক্ষিণ-পশ্চিম দিকে ঘুমানো উচিত। উত্তর- পশ্চিম দিকে ঘুমানো এড়ানো উচিত।
গর্ভাবস্থায় প্রথম ৩ মাসের গুরুত্ব কেমন?
একজন গর্ভবতী মায়ের প্রথম তিন মাসের গুরুত্ব অনেক বেশী। কারণ এই সময়ে, আপনার শিশুর শরীরের গঠন এবং অঙ্গ সিস্টেমের বিকাশ ঘটে। বেশিরভাগ গর্ভপাত এবং জন্মগত ত্রুটিগুলো এই তিন মাসের সময়ের মধ্যে ঘটে থাকে। তাই গর্ভাবস্থায় প্রথম ৩ মাসের গুরুত্ব অনেক বেশী।
আরো পড়ুনঃ নরমাল ডেলিভারি হওয়ার খাবার
শেষ কথাঃ গর্ভবতী মায়ের প্রথম তিন মাসের সতর্কতা নিয়ে
গর্ভবতী মায়ের প্রথম তিন মাসের সতর্কতা অবলম্বন করতে ঘবে কেননা আপনার সন্তানের শরীরের গঠন এবং অঙ্গ সিস্টেমের বিকাশ ঘটে এই তিন মাসের মধ্য। সম্মানিত পাঠিকা, আজকে আমি আপনাদের সাথে গর্ভবতী মায়ের প্রথম তিন মাসের সতর্কতা নিয়ে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করেছি। আপনি এই পোস্টটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়লে জানতে পারবেন। এই পোস্টটি আপনার কাছে তথ্যবহুল মনে হলে শেয়ার করতে পারেন। ধন্যবাদ।