কিভাবে মোবাইল নাম্বার দিয়ে লোকেশন বের করা যায় - আপনার ক্ষেত্রে আজকের এই আর্টিকেলটি পড়ার উদ্দেশ্য হচ্ছে, কিভাবে মোবাইল নাম্বার দিয়ে লোকেশন বের করা যায়। আপনি হয়তোবা এমন কোন পরিস্থিতিতে পড়েছেন, যার কারণে আপনাকে মোবাইল নাম্বার দিয়ে লোকেশন বের করার উপায় খুঁজতে হচ্ছে।
যদি আমাদের সামনে নাম্বার দিয়ে লোকেশন বের করার প্রশ্ন আসে, তবে আপনার সেই প্রশ্নটিকে আরও বেশি ক্লিয়ার করে নেওয়া জরুরী। কেননা, মোবাইল নাম্বার দিয়ে দুই ভাবে লোকেশন বের করা যেতে পারে। একটি হলো, নিজের হারিয়ে যাওয়া মোবাইল খুঁজে বের করার জন্য মোবাইল নাম্বার দিয়ে লোকেশন বের করা এবং অন্যদিকে অপর কোন ব্যক্তির নাম্বার দিয়ে লোকেশন বের করা।
যাইহোক, আজকের এই আর্টিকেলটিতে আমি এই দুইটি আলাদা আলাদা বিষয় নিয়েই আলোচনা করব। কিভাবে একটি মোবাইল নাম্বার দিয়ে লোকেশন বের করা যায় এবং কারা মোবাইল নাম্বার দিয়ে লোকেশন বের করতে পারবেন, সেই উপায় গুলো জানতে চলেছেন আজকের এই ব্লগে।
প্রথমত আপনাকে বলে রাখি যে, পুলিশ এবং যেকোনো ব্যক্তি উভয়ই মোবাইল নাম্বার দিয়ে লোকেশন বের করতে পারে। তবে, পুলিশ কিংবা আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী খুব সহজেই যেকোনো ব্যক্তির মোবাইল নাম্বার দিয়ে লোকেশন বের করতে পারে।
কিন্তু অন্যদিকে, কোন একজন সাধারণ ব্যক্তির যেকোনো ব্যক্তির নাম্বার দিয়ে তার লোকেশন বের করতে পারেন না। আমাদের মত সাধারণ ব্যক্তিদের কে মোবাইল নাম্বার দিয়ে লোকেশন বের করার জন্য ভিন্ন কিছু কৌশল অবলম্বন করতে হয়।
চলুন তবে প্রথমেই দেখানো যাক, আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীরা কীভাবে মোবাইল নাম্বার দিয়ে লোকেশন বের করে।
আরো পড়ুনঃ মোবাইল রেডিয়েশন থেকে বাঁচার উপায়
পুলিশের দ্বারা কিভাবে মোবাইল নাম্বার দিয়ে লোকেশন বের করা যায়?
পুলিশ কিংবা আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীরা হারিয়ে যাওয়া ফোন উদ্ধার করতে কিংবা অপরাধীকে ধরার জন্য মোবাইল নাম্বার ট্র্যাক করে থাকে। এক্ষেত্রে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীরা কোন ব্যক্তিকে ধরার জন্য অথবা সেই মোবাইলের লোকেশন জানার জন্য মোবাইল অপারেটর থেকে প্রাপ্ত তথ্যের সহযোগিতা নেয়।
মোবাইল নাম্বার দিয়ে কিভাবে লোকেশন বের করা যায়, আমরা যদি এই বিষয়টির দিকে নজর দেই, তাহলে এই টেকনোলজিটি আমাদের কাছে খুবই সিম্পল বলে মনে হবে। মোবাইল নাম্বার দিয়ে লোকেশন বের করার প্রক্রিয়ার জানার জন্য আমাদেরকে প্রথমেই সেল টাওয়ার সম্পর্কে জেনে নিতে হবে। এজন্য আমাদেরকে জানতে হবে, সেল টাওয়ার গুলো কীভাবে কাজ করে।
মোবাইল সেল টাওয়ার কিভাবে কাজ করে এবং এটির দ্বারা কিভাবে লোকেশন জানা যায়?
আমরা এটি সকলেই লক্ষ্য করব যে, মোবাইল অপারেটরেরা তাদের সার্ভিস দেওয়ার জন্য টাওয়ার স্থাপন করে। মোবাইল অপারেটরদের স্থাপন করা এসব টাওয়ার গুলো একটি নির্দিষ্ট সেল বা এরিয়া জুড়ে কাজ করে। এখন, আপনি যখন কোন একটি অপারেটরের সিম আপনার মোবাইলে প্রবেশ করান এবং আপনার ফোনটি চালু করেন, তখন আপনার সিমটির সিগন্যাল নিকটবর্তী টাওয়ার এর কাছে চলে যায়।
এবার, সেই টাওয়ার আপনার থেকে প্রাপ্ত তথ্যকে তাদের সেন্ট্রাল সার্ভারে জমা করে। এখন, আপনি যে এই মুহূর্তে সেই টাওয়ারের অধীনে রয়েছেন, এটি তাদের সার্ভারের জমা থাকে এবং যখন পরবর্তীতে আবার এই এলাকা থেকে অন্য একটি এলাকাতে যান, তখন একইভাবে সেই সেল টাওয়ারে আপনার সিগন্যাল যায়। এভাবে করে প্রতিনিয়ত আপনার অবস্থানের উপর ভিত্তি করে তাদের ডেটাবেজ আপডেট হতে থাকে।
এখন কোন একজন ব্যক্তি যদি আপনার মোবাইল নাম্বারে কল করে, তখন সরাসরি কলটি সেই অপারেটরের সেন্ট্রাল সার্ভারে যায় এবং সেখান থেকে দেখা হয় যে, এই মুহূর্তে মোবাইল নাম্বারটি কোন টাওয়ারের অধীনে রয়েছে। সেই সার্ভারে যেহেতু জমা রয়েছে আপনি এই টাওয়ারের অধীনে রয়েছেন, তাই কলটি সরাসরি সেই টাওয়ারে নিয়ে আসা হয় এবং আপনার মোবাইলটিকে খোঁজা হয়। আর এই প্রক্রিয়াটি সম্পূর্ণ হতে কয়েক সেকেন্ড সময় নেয় এবং যে কারণে কল দিতে কিছুটা সময় যায়।
আপনি যখন কোন একজন ব্যক্তিকে কল দেন, তখন অপর প্রান্তের ব্যক্তির মোবাইল নম্বর খোঁজার জন্য পুরো দেশ জুড়ে স্ক্যানিং করা হয় না। বরং, অপর প্রান্তের ব্যক্তি সর্বশেষ যে টাওয়ারের অধীনে ছিল এবং তাদের ডেটাবেজে যে তথ্য রয়েছে, সেই টাওয়ার এই সিগনাল আসে এবং তার কাছে কল ভেসে ওঠে। আর সেই মুহূর্তে মোবাইলটি যদি বন্ধ অবস্থায় থাকে, তাহলে আপনার কাছে ফোনটি বন্ধ আছে বলে জানানো হয়।
যাইহোক, এটি তো গেল একটি সিম্পল প্রক্রিয়া, যে প্রক্রিয়ায় তারা গ্রাহকদের সার্ভিস দেয়।
এখানে আমি পূর্বে বলেছি যে, মোবাইল অপারেটরদের স্থাপন করা এসব সেল টাওয়ার গুলো একটি নির্দিষ্ট এরিয়া জুড়ে কাজ করে। এবার, আপনি যখন একটি এলাকা থেকে অন্য একটি এলাকায় যান, তখন নিকটবর্তী টাওয়ারটি আপনার থেকে সিগনাল গ্রহণ করে এবং তা তাদের সেন্ট্রাল সার্ভারে জমা করে।
কিন্তু, সারা দেশ জুড়ে মোবাইল অপারেটরদের স্থাপন করা এসব টাওয়ার গুলো শুধুমাত্র একটি নির্দিষ্ট এরিয়া জুড়ে কাজ করার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে না। যদিও, এসব টাওয়ার গুলো একটি নির্দিষ্ট এরিয়ার মধ্যে থাকা গ্রাহকদের আলাদা আলাদা করে সার্ভিস দেয়, তবে আপনি এই মুহূর্তে যে অবস্থানে রয়েছেন, এর পার্শ্ববর্তী কয়েকটি সেল টাওয়ার থেকে আপনার অবস্থানের তথ্য সার্ভারে জমা করা হয়।
আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী যদি আপনার অবস্থান জানার চেষ্টা করে, তাহলে তারা আপনার সেই মোবাইলটির লোকেশন জানার জন্য কয়েকটি সেল টাওয়ারের সিগন্যাল বিশ্লেষণ করে।
আমরা যদি এই বিষয়টিকে আরও সহজভাবে উদাহরণের মাধ্যমে উপস্থাপন করি, তাহলে আপনি আরো সহজ ভাবে বুঝতে পারবেন।
মনে করুন, আপনার কোন বন্ধু আপনার বাড়িতে আসার সময় অচেনা কোন জায়গায় আটকে গেছে। এবার আপনি ফোন করে তার কাছে তার অবস্থান জানতে চাইলেন। কিন্তু, সে কোনভাবেই তার সঠিক অবস্থান বলতে পারছে না। তবে, সে তার আশেপাশের অবস্থান সম্পর্কে একটি সঠিক ধারণা দিতে পারছে।
এক্ষেত্রে সে বলছে যে, সে শরীয়তপুর থেকে এত কিলোমিটার দূরে আছে, হাজীগঞ্জ থেকে এত কিলোমিটার দূরে আছে এবং মুন্সিগঞ্জ থেকে এত দূরে আছে। এবার আপনি কিন্তু আপনার বন্ধুর দেওয়া বর্ণনা অনুযায়ী খুব সহজেই তার একটি লোকেশন ধারণা করে নিতে পারবেন। আমরা যদি উপরের এই বর্ণনা অনুযায়ী একটি বৃত্তচাপ আঁকি, তাহলে আমরা ধরে নিতে পারি যে, সেই ব্যক্তি এই মুহূর্তে চাঁদপুর জেলায় রয়েছেন।
একইভাবে আমরা যদি কোন একজন ব্যক্তির কোন একটি নির্দিষ্ট অবস্থান থেকে সঠিক দূরত্ব জানতে পারি, তাহলে আমরা কিন্তু খুব সহজেই তিনদিক থেকে অনুমান করে তার অবস্থান জানতে পারব। এই বিষয়টি আপনি আরো সহজভাবে বোঝার জন্য নিচের ছবিটি লক্ষ্য করতে পারেন।
মোবাইল নাম্বার দিয়ে লোকেশন বের করার জন্য এভাবে করে তিনটি অথবা তার বেশি টাওয়ার থেকে যদি কোন একজন ব্যক্তির অবস্থান কল্পনা করা হয়, তাহলে সেই ব্যক্তির মোবাইলটি বর্তমানে কোন অবস্থানে রয়েছে, তা খুব সহজেই সনাক্ত করা যাবে।
যদিও মোবাইল নাম্বার দিয়ে লোকেশন বের করার এই প্রক্রিয়াটি ম্যানুয়ালি করা হয় না। এটি মূলত অপারেটরদের থেকে প্রাপ্ত ডেটা গুলোর সমন্বয়ে সফটওয়্যার এর মাধ্যমে লোকেশন বের করা হয়। আর আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী মোবাইল নাম্বার দিয়ে লোকেশন বের করার জন্য কোন টেকনোলজি ব্যবহার করে, শুধু শুধুমাত্র তারাই জানেন।
সাধারণভাবে মোবাইল নাম্বার দিয়ে লোকেশন বের করার জন্য অবশ্যই মোবাইল সার্ভিস প্রোভাইডারদের সহযোগিতা প্রয়োজন অথবা নাম্বার দিয়ে লোকেশন সিগন্যাল ট্র্যাক করার জন্য অত্যাধুনিক প্রযুক্তির প্রয়োজন হয়। আর এই দুইটি প্রক্রিয়ায় কোন একজন ব্যক্তির মোবাইল নাম্বার দিয়ে লোকেশন বের করার জন্য আইনি অনুমোদনের প্রয়োজন হয় এবং এটি শুধুমাত্র আইন প্রয়োগকারী সংস্থা এবং অনুমোদিত কিছু সংস্থার কাছেই Available রয়েছে।
আরো পড়ুনঃ মোবাইল আসক্তি থেকে বাঁচার উপায়
সাধারণ ব্যবহারকারী কীভাবে মোবাইল নাম্বার দিয়ে লোকেশন বের করতে পারেন?
আপনাকে অবশ্যই এটি মনে রাখা উচিত যে, মোবাইল নাম্বর দিয়ে যে কেউ চাইলেই কোন ব্যক্তির লোকেশন বের করতে পারেন না। মোবাইল নাম্বার দিয়ে লোকেশন বের করার প্রক্রিয়াটি সর্বজনীন Available নয়।
যেকোনো ব্যক্তির মোবাইল নাম্বার দিয়ে লোকেশন বের না করা গেলেও, আপনি কিছু অনুমোদিত অনলাইন টুল এবং সার্ভিস ব্যবহার করে আপনার পরিচিত জন এবং পরিবারের সদস্যদের ট্র্যাক করতে পারেন। বর্তমানে এমন কিছু অনলাইন টুল এবং সার্ভিস রয়েছে, যারা দাবি করে যে, তাদের সার্ভিস ব্যবহার করে মোবাইল নাম্বার দিয়ে লোকেশন বের করা যায়।
তবে আপনি যদি এসব টুল এবং সার্ভিসগুলো ব্যবহার করতে চান, তাহলে এজন্য অবশ্যই আপনাকে প্রথমে সতর্ক হতে হবে। কেননা, এসব সার্ভিসগুলো সর্বদা সঠিক বা নির্ভরযোগ্য নাও হতে পারে। অনেক ক্ষেত্রেই এসব পরিষেবা গুলো ব্যবহারকারীদের প্রাইভেসি পলিসি লঙ্ঘন করতে পারে এবং যা আপনার জন্য ব্যবহার করা হুমকিস্বরূপ হতে পারে।
আর তাই, এ ধরনের সার্ভিসগুলো ব্যবহার করার আগে সেগুলোর ব্যাপারে সত্যতা এবং বৈধতা যাচাই করে নেওয়া এবং তারপরেই এ ধরনের মোবাইল নাম্বার দিয়ে লোকেশন বের করার সার্ভিস ব্যবহার করার কথা বিবেচনা করা উচিত।
কোন একজন সাধারণ ব্যবহারকারী চাইলেই অপরিচিত কোন ব্যক্তির মোবাইল নাম্বার দিয়ে তার লোকেশন বের করতে পারেন না। তবে, এমন কিছু প্রিমিয়াম সার্ভিস যুক্ত রয়েছে, যেগুলো উভয় ডিভাইসে ইন্সটল এবং সেটআপ করার মাধ্যমে মোবাইল নাম্বার দিয়ে লোকেশন বের করা যায়। এসব সার্ভিসগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো mSpy, Mobilstealth, TiSPY এবং FlexiSPY ইত্যাদি।
যাইহোক, আমি আপনাকে মোবাইল নাম্বার দিয়ে লোকেশন বের করার জন্য কখনোই এসব প্রিমিয়াম অ্যাপ্লিকেশন কিংবা গুগল প্লে স্টোর থেকে ডাউনলোড করা কোন অ্যাপ্লিকেশন ব্যবহার করার পরামর্শ দিব না। কেননা, গুগল প্লে স্টোরে মোবাইল নাম্বর দিয়ে লোকেশন বের করার যেসব এপপ্স গুলো পাওয়া যায়, সেগুলোর প্রায় শতভাগ ই মিথ্যা এবং এগুলো কোন কাজ করে না।
আপনার যদি সত্যিই মোবাইল নাম্বার দিয়ে লোকেশন বের করার প্রয়োজন হয়, তাহলে আপনি সর্বপ্রথম আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সহযোগিতার নিন। আপনি যদি এমন কোন সমস্যায় পড়েন, যাতে সেই মোবাইল নাম্বারের লোকেশন জানা এবং তাকে খুঁজে বের করা অপরিহার্য হয়ে যায়, তাহলে সেটি করার জন্য পুলিশের দ্বারস্থ হতে পারেন। তারা আপনাকে অল্প সময়ের মধ্যে সেই মোবাইলের অবস্থান খুঁজে বের করে দিতে পারে। এভাবেই মূলত আপনি মোবাইল নাম্বার দিয়ে লোকেশন বের করতে পারেন।
আরো পড়ুনঃ পুরাতন মোবাইল আগে যা জানা জরুরী
মোবাইল নাম্বার দিয়ে লোকেশন বের করা নিয়ে শেষ কথা
উপরের আলোচনা থেকে আপনার পরিষ্কার ধারণা হলো যে, আপনি সরাসরি মোবাইল নাম্বার দিয়ে কোন ব্যক্তির লোকেশন বের করতে পারবেন না। মোবাইল নাম্বার দিয়ে লোকেশন বের করার জন্য আপনাকে অবশ্যই আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সহযোগিতা নিতে হবে। কোন ব্যক্তির মোবাইল নাম্বার দিয়ে লোকেশন বের করার মত অ্যাক্সেস সাধারণ ব্যবহারকারীদের কাছে নেই এবং কোন ব্যক্তি চাইলেই মোবাইল নাম্বার দিয়ে কারো লোকেশন বের করতে পারেন না।
তাহলে আজ থেকেই আপনি মোবাইল নাম্বার দিয়ে লোকেশন বের করার জন্য সকল অনুসন্ধান করা বাদ দিন।
আর্টিকেল সম্পর্কিত তথ্য জানতে কমেন্ট করুন। আপনার প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।