নোটবুক ও ল্যাপটপের মধ্যে পার্থক্য - প্রথমে যখন কম্পিউটার আবিষ্কার হয়, তখন একটি সাধারণ কম্পিউটার রাখার জন্য বিশাল ঘরের প্রয়োজন হতো। কিন্তু বর্তমানে প্রযুক্তির উৎকর্ষতার ফলে, একটি কম্পিউটারকে আমাদের ব্যবহৃত ব্যাগের মধ্যেই বহন করা যায়। প্রযুক্তির উন্নতির ফলে আমাদের সামনে এসেছে ল্যাপটপ এবং নোটবুক এর মত পার্সোনাল কম্পিউটার।
পেজ সূচিপত্রঃ নোটবুক এবং ল্যাপটপের মধ্যে পার্থক্য
- সাইজের উপর ভিত্তি করে নোটবুক এবং ল্যাপটপের পার্থক্য
- কার্যকারিতার উপর ভিত্তি করে নোটবুক এবং ল্যাপটপের মধ্যে পার্থক্য
- ব্যাটারি লাইফের কারণে নোটবুক এবং ল্যাপটপের মধ্যে পার্থক্য
- ল্যাপটপ এবং নোটবুকের মূল্যের কারণে এদের মধ্যে পার্থক্য
- নোটবুক এবং ল্যাপটপের পার্থক্য নিয়ে শেষ কথা
আমরা হয়তোবা অনেকেই ল্যাপটপ এবং নোটবুক সম্পর্কে শুনে থাকবো। কিন্তু, আপনার হয়তোবা এখনো পর্যন্ত এ বিষয়ে জানেন না যে, ল্যাপটপ এবং নোটবুকের মধ্যে পার্থক্য কী?
ল্যাপটপ এবং নোটবুক এর মধ্যে তেমন কিছু পার্থক্য নেই। তবে, আমরা যখন একটি পারসোনাল কম্পিউটার ক্রয় করা সিদ্ধান্ত নিব অথবা আমরা এই বিষয়ে জানতে চাইবো, তখন আমাদের অবশ্যই ল্যাপটপ এবং নোটবুক এর পার্থক্য সম্পর্কে জানতে হবে।
শুরুতেই বলতে গেলে, একটি ল্যাপটপ কম্পিউটার হলো মূলত একটি পোর্টেবল কম্পিউটার, যার ওজন ২ থেকে ৪ কিলোগ্রাম হতে পারে। একটি ল্যাপটপের ডিসপ্লের আকার, হার্ডওয়্যার এবং অন্যান্য কম্পোনেন্ট এর উপর নির্ভর করে এই ওজন হয়ে থাকে।
অন্যদিকে, একটি নোটবুক হল একটি পার্সোনাল কম্পিউটার, যা একটি ল্যাপটপের চাইতে ছোট এবং এর কার্যকারিতা ও অনেক কম। যাইহোক, এবার আমরা ল্যাপটপ এবং নোটবুকের পার্থক্য স্টেপ বাই স্টেপ জানবো।
সাইজের উপর ভিত্তি করে নোটবুক এবং ল্যাপটপের পার্থক্য
একটি নোটবুক সাধারণত ল্যাপটপের চাইতে ছোট হয়ে থাকে এবং এটি ল্যাপটপের চাইতে বেশি হালকা হয়। ল্যাপটপের তুলনায় একটি নোটবুকে খুব সহজে বহন করার জন্য ডিজাইন করা হয়েছে। অন্যদিকে, একটি ল্যাপটপ সাধারণত বেশ বড় এবং ভারী হয়ে থাকে। নোটবুক গুলো সাধারণত ল্যাপটপের চাইতে ছোট হয় এবং যার ফলে এটি বিভিন্ন জায়গায় বহন করা অনেক সহজ হয়।
একটি ল্যাপটপের ক্ষেত্রে সাধারণত ১৫ ইঞ্চির বেশি ডিসপ্লের সাইজ হতে পারে। কিন্তু অন্যদিকে, একটি নোটবুকের ক্ষেত্রে সাধারণত ১১ থেকে ১৪ ইঞ্চি পর্যন্ত ডিসপ্লে দেখা যায়। নোটবুক গুলোকে মূলত পোর্টেবল ভাবে ডিজাইন করা হয়েছে, যাতে সেটি বিভিন্ন স্থানে নিয়ে ব্যবহার করা যায়। বিশেষ করে এমন সব ব্যক্তিদের জন্য এটি বেশ উপযোগী হতে পারে, যাদেরকে প্রতিদিন বিভিন্ন জায়গায় গিয়ে কাজ করতে হয়।
একটি ল্যাপটপের চাইতে নোটবুক অনেক কম দামে পাওয়া যেতে পারে, যা অনেক ব্যক্তির ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে হতে পারে।
অন্যদিকে আমরা যদি একটি ল্যাপটপের সাথে নোটবুকের পার্থক্য খুঁজে, তাহলে ল্যাপটপ সাধারণভাবে নোটবুক এর চাইতে অনেক বেশি বড় এবং ভারী হয়ে থাকে। একটি ল্যাপটপের ক্ষেত্রে সাধারণত ১৫ থেকে ১৭ ইঞ্চি পর্যন্ত ডিসপ্লে হয়ে থাকে এবং সেগুলোর ওজন দুই থেকে চার কেজি পর্যন্ত হতে পারে।
একটি ল্যাপটপের ক্ষেত্রে এরকম অতিরিক্ত ওজন এবং সাইজ বড় হওয়ার পেছনে মূল কারণ হলো, এগুলোকে অনেক শক্তিশালী এবং বিভিন্ন কাজের জন্য ডিজাইন করা হয়েছে, যা একজন প্রফেশনাল ব্যক্তির জন্য দরকারি।
একটি ল্যাপটপ দিয়ে অনেক জটিল সফটওয়্যার চালানো, গ্রাফিক্স ডিজাইন করা, ভিডিও এডিটিং সহ আরো অনেক ভারী কাজ করা যায়, যা নোটবুক দিয়ে করা সম্ভব নয়। নোটবুকের তুলনায় একটি ল্যাপটপের এরকম অতিরিক্ত সাইজ দেওয়ার অর্থ হল, যাতে সেটি দিয়ে এরকম অনেক ভারী কাজ করা যায়। তাই, একটি ল্যাপটপ এবং নোটবুক এর মধ্যে সবচাইতে বড় পার্থক্য হল এর সাইজ।
আরো পড়ুনঃ পুরাতন মোবাইল আগে যা জানা জরুরী
কার্যকারিতার উপর ভিত্তি করে নোটবুক এবং ল্যাপটপের মধ্যে পার্থক্য
শুধুমাত্র বহন যোগ্যতার মতো সুবিধার যোগ করে একটি ডেস্কটপ কম্পিউটারের মতো সুবিধার ডিভাইস আনার জন্যই ল্যাপটপ তৈরি করা হয়েছিল। প্রাথমিকভাবে একটি ল্যাপটপে হার্ড ড্রাইভ, Ram এবং অন্যান্য হার্ডওয়্যার অনেক বেশি পরিমাণে থাকে।
যাইহোক, বর্তমানে যেহেতু চিপসের এবং কার্য ক্ষমতা অনেক বেশি প্রসারিত হয়েছে, তাই একটু ল্যাপটপ এবং নোটবুক কম্পিউটারের মধ্যে পার্থক্য গুলো তুলনা করা বেশ জটিল হয়ে গিয়েছে। কেননা, একই সাইজের ল্যাপটপ এবং নোটবুক এর পারফরম্যান্স কমবেশি হতে পারে।
আমরা যদি একটি ল্যাপটপ এবং একটি নোটবুকের পার্থক্য দেখে নজর দেই, তাহলে আমরা এই দুইটি ডিভাইসের কার্যক্ষমতার ক্ষেত্রে বেশ কিছু পার্থক্য দেখতে পাবো। হার্ডওয়্যারের ক্ষমতা বৃদ্ধির সাথে সাথে ল্যাপটপ কম্পিউটার গুলো ও বেশ শক্তিশালী হয়ে উঠছে এবং এগুলো ও একটি ডেক্সটপ কম্পিউটারের মতো পারফরম্যান্স দিতে পারছে।
যদিও একই পারফরমেন্স এর একটি ডেক্সটপ কম্পিউটারের চাইতে ল্যাপটপ কম্পিউটার অনেক বেশি ব্যয়বহুল, কিন্তু তবুও বর্তমানে অফিস কিংবা স্কুলের কাজের জন্য এ ধরনের ব্যক্তিগত কম্পিউটার গুলো অনেক বেশি ব্যবহৃত হচ্ছে। একটি ল্যাপটপ কিংবা নোটবুক ব্যবহার করার পেছনে মূল কারণ হলো, এর সহজ বহনযোগ্যতা।
ল্যাপটপগুলোতে সাধারণত নোটবুক এর চাইতে অনেক শক্তিশালী হয়ে থাকে। কেননা, একটি ল্যাপটপে নোটবুক এর চাইতে অনেক বেশি ফাস্টার প্রসেসর, স্টোরেজ স্পেস এবং ভালো মানের গ্রাফিক্স কার্ড থাকে। অন্যদিকে, একটি নোটবুকে মূলত বেশি কম্পিউটিং কাজের জন্য ডিজাইন করা হয়েছে। আর তাই, এটিতে ল্যাপটপের চাইতে অনেক কম Ram, Hard disk এবং প্রসেসর ব্যবহার করা হয়।
একটি নোটবুককে এমনভাবে ডিজাইন করা হয়েছে, যাতে করে এটি দিয়ে ওয়েব ব্রাউজিং, ওয়ার্ড প্রসেসিং এবং ইমেইলের মত সাধারণ কাজ গুলো করা যায়। ল্যাপটপ এবং নোটবুকের মধ্যে যদি পার্থক্য তুলনা করা হয়, তাহলে এই দুইটি ডিভাইসের মধ্যে পারফরম্যান্সের বিষয়টি সবচাইতে বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
আরো পড়ুনঃ মোবাইল রেডিয়েশন থেকে বাঁচার উপায়
ব্যাটারি লাইফের কারণে নোটবুক এবং ল্যাপটপের মধ্যে পার্থক্য
আমরা যদি একটি ল্যাপটপ এবং নোটবুকের মধ্যে ব্যাটারি লাইফ এর পার্থক্য করি, তাহলে একটি নোটবুক এর ব্যাটারি সব সময় বেশি ব্যাকআপ দিতে পারে। নোটবুক গুলো যেহেতু বিভিন্ন জায়গায় নিয়ে ব্যবহার করার জন্য ডিজাইন করা হয়েছে, তাই একটি নোটবুকে সাধারণত একটি ল্যাপটপের চাইতে বেশি ব্যাটারি লাইফ থাকে।
সাধারণভাবে একটি ল্যাপটপ আনপ্লাগ অবস্থায় ৬ থেকে ১০ ঘণ্টা পর্যন্ত ব্যাটারি ব্যাকআপ দিতে পারে। কিন্তু অন্যদিকে, সাধারণ নোটবুক ৭ থেকে ১৪ ঘণ্টা পর্যন্ত আন-প্লাগ অবস্থায় ব্যাটারি ব্যাকআপ দিতে সক্ষম।
একটি ল্যাপটপকে সাধারণত ডেক্সটপ কম্পিউটারের অল্টারনেটিভ হিসেবে ব্যবহার করা হয়। তাই, একটি ল্যাপটপ ব্যবহার করার সময় অবশ্যই সেটিকে প্লাগ-ইন করতে হয়। একটি নোটবুকের ব্যাটারি লাইফ একটি ল্যাপটপের চাইতে অনেক বেশি হওয়ার অন্যতম কারণ হলো, এটি ল্যাপটপের আকারের চাইতে অনেক ছোট এবং অনেক কম পাওয়ার খরচ করে। আর যে কারণে, একটি নোটবুক সবসময় ল্যাপটপের চাইতে আলাদা।
একটি ল্যাপটপের চাইতে নোটবুকে সাধারণত বিভিন্ন হার্ডওয়্যার কম পরিমাণে দেওয়া হয়। যেমন ধরুন, নোটবুকের ছোট ডিসপ্লে থাকে এবং এখানে থাকা অন্যান্য কম শক্তিশালী কম্পোনেন্টগুলোর কারণে, এটিতে কম শক্তির প্রয়োজন হয়। আর যে কারণে, একটি ল্যাপটপ এবং নোটবুকের মধ্যে ব্যাটারি লাইফ জনিত পার্থক্য দেখা যায়।
ল্যাপটপ এবং নোটবুকের মূল্যের কারণে এদের মধ্যে পার্থক্য
আমরা যখন কোন ভারী কিংবা জটিল কাজ করার জন্য একটি ল্যাপটপ বাছাই করি, তখন সেটির ডেস্কটপ কম্পিউটারের তুলনায় অনেক বেশি দামের হয়ে থাকে। একই কনফিগারেশনের ল্যাপটপ এবং ডেস্কটপ কম্পিউটারের মধ্যে দামের অনেক পার্থক্য থাকে। আর একইভাবে, একটি নোটবুক সবসময় ল্যাপটপের চাইতে অনেক কম ব্যয়বহুল হয়।
নোটবুক গুলো যেহেতু সাধারণত ল্যাপটপের তুলনায় অনেক কম কাজের জন্য ডিজাইন করা হয়েছে, তাই এই ডিভাইসটির হার্ডওয়্যার কম্পোনেন্ট ও অনেক কম এবং এটি ল্যাপটপের চাইতে কম দামের হয়।
আপনি যখন একটি ল্যাপটপ এবং নোটবুক নিতে চাইবেন, তখন এই দুইটি ডিভাইসে একই লেভেলের পারফরম্যান্স বা ফিচার নেই। যেখানে, নোটবুক গুলোতে সাধারণ কাজের জন্য কিছু ফিচার থাকে, যা একটি ল্যাপটপের তুলনায় কম।
একটি নতুন ল্যাপটপ কম্পিউটারের দাম সেটির স্ক্রিনের আকার এবং হার্ডওয়্যার কনফিগারেশন এর উপর নির্ভর করে। একটি ল্যাপটপ কম্পিউটারের চাইতে, একটি নোটবুককে যেহেতু উন্নত কাজ করার জন্য ডিজাইন করা হয় না, তাই দামের ক্ষেত্রে ল্যাপটপ এবং নোটবুকের মধ্যে ব্যাপক পার্থক্য দেখা যায়।
আরো পড়ুনঃ মোবাইল আসক্তি থেকে বাঁচার উপায়
নোটবুক এবং ল্যাপটপের পার্থক্য নিয়ে শেষ কথা
নোটবুক এবং ল্যাপটপ উভয় ডিভাইস দেখতে ল্যাপটপ কম্পিউটারের মতই। তবে, এই দুইটি ডিভাইসে ফিচার এবং পারফরমেন্সের ক্ষেত্রে বেশ কিছু পার্থক্য রয়েছে। আর যে কারণে, একটি নোটবুক এবং ল্যাপটপ সবসময় আলাদা। একটি ল্যাপটপ যেখানে ডেক্সটপ কম্পিউটারের বিকল্প হিসেবে কাজ করে, সেখানে একটি নোটবুক শুধুমাত্র সাধারণ অফিসিয়াল কাজগুলো করার জন্য ব্যবহার হয়। আর এটিও একটি পোর্টেবল কম্পিউটারের মত কাজ করে।
এবার আশা করছি যে, আপনি নোটবুক এবং ল্যাপটপের পার্থক্য বুঝতে পেরেছেন। সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি করার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
আর্টিকেল সম্পর্কিত তথ্য জানতে কমেন্ট করুন। আপনার প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।