রমজানের বিশেষ আমল সমূহ - পবিত্র মাহে রমজানে বেশী বেশী নেকী ও সাওয়াব লাভের আশায় মুসলমানেরা বিশেষ আমল করে থাকে। কেননা রমজান মাসে ইবাদত করলে দোয়া কবুল দ্রুত হয়। প্রতিটি মুসলমান এই মাসে সিয়াম সাধনা করে থাকেন। রমজান মাস রহমতের মাস, মাগফিরাতের মাস এবং নাজাতের মাস।
আরবী অন্য সব মাস থেকে এই রমজান মাস বেশী ফজিলতপূর্ণ। মহান আল্লাহ তায়ালা এই মাসেই পবিত্র কোরআন মাজিদ নাজিল করেছেন। তাই এই গুরুত্বপূর্ণ মাসে আমাদের সকলের উচিত বেশী বেশী ইবাদত করা।
রমজানের বিশেষ আমল রয়েছে যেগুলো নিয়মিত পালন করলে বেশী নেকী পাওয়া সম্ভব। তাই আজকের এই পোস্টটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়ুন। তাহলে চলুন জেনে নেই রমজানের বিশেষ আমল সমূহ।
(toc) #title=(সুচিপত্র)
মাহে রমজান মাস নিয়ে কিছু কথা
বছর ঘুরে শুরু হয় রমজান মাস। এই মাসে প্রত্যক মুসলিম সম্প্রদায়ের লোকেরা সিয়াম পালন করে থাকে দীর্ঘ একমাস যাবৎ ধরে। রমজান মাস মুসলমানদের কাছে অধিক প্রিয় একটি মাস। কেননা এই রমজান মাসেই পবিত্র কোরআন মাজিদ অবতীর্ণ হয়েছে আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহম্মদ (স.) এর উপর।
তাই এই মাসে আমাদের সকলের উচিত একমাস সিয়াম পালন করা এবং আল্লহর কাছে বেশী বেশী ক্ষমা চাওয়া। রমজান মাসে বিশেষ আমল রয়েছে যেগুলো অনুসরণ করার ফলে আপনি আল্লাহর একজন প্রিয় বান্দা হতে পারবেন। নিচে রমজানের বিশেষ আমল সমূহ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।
আরো পড়ুনঃ রমজানের কুরআন তেলাওয়াতের ফজিলত
রমজানের বিশেষ আমল সমূহ
পবিত্র রমজান মাসে ছোট ছোট আমলের পাশাপাশি কিছু বিশেষ আমল আছে। যেগুলো যদি আপনি নিয়মিত পালন করেন তবে আপনি অনেক সাওয়াব পাবেন। আজকের এই পোস্টে আমি আপনাদের সাথে রমজানের বিশেষ আমলগুলো নিয়ে আলোচনা করব। নিচে রমজানের বিশেষ আমল সমূহ উল্লেখ করা হলো।
সময়মতো পাঁচ ওয়াক্ত সালাত আদায় করা
রমজানের বিশেষ আমলের মধ্য সময়মতো পাঁচ ওয়াক্ত জামায়তের সাথে সালাত আদায় করা অন্যতম। কেননা আপনি রোজা রাখলেন কিন্তু সময়মত সালাত আদায় করলেন না। এতে আপনার সাওয়াব কম হবে কারণ রোজা যেমন ফরজ ইবাদত তেমন পাঁচ ওয়াক্ত সালাত ও ফরজ ইবাদত। তাই রমজানের প্রথম বিশেষ আমল হলো সময়মতো পাঁচ ওয়াক্ত সালাত আদায় করা।
তারাবিহ নামাজ আদায় করা
তারাবিহ এর নামাজ আদায় করা এই রমজান মাসে বিশেষ একটি আমল। যে ব্যক্তি রমজান মাসে তারাবিহ এর নামাজ পড়ে সে নিজের হক আদায় করে। হাদিসে এসেছে, যে রমজানের মাসে তারাবিহ এর সালাত আদায় করে তার পূর্ববর্তী সকল গুনাহ মাফ করে দেওয়া। তাই আমাদের সকলের উচিত সালাতুত তারাবীহ নামাজ আদায় করা। আপনি যদি রমজান মাসে বিশেষ আমল করতে চান তবে তারবির নামাজ পড়তে পারেন।
বেশী বেশী আল্লাহর জিকির করা
রমজানের বিশেষ আমল হচ্ছে মহান আল্লাহর জিকির করা। আপনি পবিত্র থাকা অবস্থায় যেকোন সময় আল্লাহর জিকির করতে পারেন। তবে প্রতি ফরজ নামাজ পড়ার পর সুবাহানাল্লাহ, আলহামদুলিল্লাহ, আল্লাহ আকবার ও আল্লাহর গুণবাচক নাম নিয়ে জিকির করতে পারেন।
বেশী বেশী আল্লাহর জিকির করলে আপনি আপনার মনের মধ্য আলাদা এক ধরনের প্রশান্তি পাবেন। তাই এই পবিত্র রমজান মাসে অবসর সময়ে দুনিয়াবি গল্প-গুজব না করে আল্লাহর জিকির করুন। অনেক সাওয়াব অর্জন করতে পারবেন।
সালাতুত তাহাজ্জুদ নামাজ পড়া:
রমজান মাস ছাড়াও সালাতুত তাহাজ্জুত নামাজ পড়া যায়। তবে রমজান মাসে এই সালাতুত তাহাজ্জুদ নিয়মিত পড়লে বেশী সাওয়াব এবং মর্যাদা রয়েছে। যেহেতু সেহরি করার সময় ঘুম থেকে ওঠতে হয় তাই প্রত্যক মুসলমানের এই নামাজ আদায় করার সুযোগ থাকে। সালাতুত তাহাজ্জুতদের নামাজ ২ রাকাত করে পড়তে হয়। তাই এই ফজিলতপূর্ণ মাসে সালাতুত তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করে আপনার নেকি ভারি করতে পারেন।
আরো পড়ুনঃ রমজানের ডায়াবেটিস রোগীর করণীয়
সহীহ শুদ্ধভাবে কুরআন পাঠ করা
রমজান মাসের অন্যতম বিশেষ একটি আমল হচ্ছে সহীহ শুদ্ধভাবে নিয়মিত কুরআন মাজিদ পাঠ করা। বিভিন্ন ব্যস্ততার কারণে আমাদের কুরআন মাজিদ সহীহ শুদ্ধভাবে পাঠ করার সুযোগ কিংবা সময় থাকে না। তাই এই রমজান মাসে আপনি সহীহ শুদ্ধভাবে কুরআন পাঠ করতে পারেন।
যদি আপনি সহীহ শুদ্ধভাবে কুরআন তিলওয়াত করতে না জানেন তবে বিজ্ঞ আলেমের কাছ থেকে কুরআন মাজিদ সহীহ শুদ্ধ পড়া শিখে নিন। আর আপনি যদি সহীহ শুদ্ধভাবে কুরআন তিলওয়াত করতে জানেন তবে অন্যকে কুরআন পাঠ করা শিখিয়ে দিন।
রমজানে কম খাবার খেতে হবে
রমজানের বিশেষ আমলের মধ্য কম খাওয়া এক ধরনের আমল বলা যেতে পারে। কেননা কম খেলে আমাদের শরীরের জন্য ভালো এবং স্বাস্থ্য ঠিক থাকে। আর যদি আপনি এই মাসে বেশী বেশী খাবার খান তবে আপনার শরীর খারাপ হতে পারে। তাছাড়া বেশী খাবার গ্রহণের ফলে খাবার অপচয় হতে পারে।তাই এই ব্যাপারে আমাদের প্রত্যকের সচেতন থাকতে হবে।
কম ঘুমাতে হবে
পবিত্র রমজান মাসে কম সময় ঘুমাতে হবে। ঘুমের থেকে এই মাস ইবাদত করা অনেক গুরুত্বপূর্ণ। তবে পর্যাপ্ত পরিমাণ ঘুমিয়ে তারপর আপনি ইবাদত বন্দেগী করতে পারেন। ঘুমের থেকে এই মাস ইবাদত করলে আপনি অনেক সাওয়াব পাবেন।
কম কথা বলা
রমজান মাসে আমাদের প্রত্যকের প্রয়োজনীয় কথা ছাড়া অন্য কথা বলা উচিত নয়। কেননা বেশী কথা বললে আমাদের বিভিন্ন কারণে মিথ্যা কথা মুখ দিয়ে বেরিয়ে যেতে পারে। তাছাড়া অতিরিক্ত বেশী কথা বলার কারণে আমরা ক্লান্ত হয়ে যেতে পারি। তাই আমাদের এই রমজান মাদের কম কথা বলা উচিত।
হারাম থেকে দূরে থাকা
রমজান মাসে আমাদের প্রত্যকের হারাম থেকে দূরে থাকতে হবে। কেননা হারাম মানুষকে ক্ষতির দিকে নিয়ে যায়। তাই রমজান মাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিশেষ আমল হচ্ছে হারাম থেকে দূরে থাকা। কয়েকটি হারাম জিনিস রমজান মাসে করা উচিত নয় যেমনঃ অন্যর হক আদায় না করা, হারাম গান শোনা, হারাম রিলেশনশিপ করা, সুদ খাওয়া, মিথ্যা বলা ইত্যাদি।
বেশি বেশি পরিমাণ দান-খয়রাত করা
রমজানের বিশেষ আমল করতে হলে আপনি এই রমজান মাসে আপনার সামর্থ্য অনুযায়ী বেশী বেশী দান খয়রাত করতে হবে। বিশেষ করে সমাজের বঞ্চিত মানুষ, বিধবা, মিসকিন, ইয়াতিম, হত দরিদ্র, ফকির ইত্যাদি লোকদের দান করতে হবে। রমজান মাসে দান করলে আপনার সম্পদ আরও বৃদ্ধি পাবে।
রমজানের শেষ দশ দিন ই‘তিকাফ করা
রমজান মাসের বিশেষ আমল সমূহের মধ্যে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ আমল হচ্ছে রমজানের শেষ দশ দিন অর্থাৎ নাজাতের ১০ দিন ই‘তিকাফ করা। স্বয়ং মুহম্মদ (স.) রমজানের শেষ দিন ই‘তিকাফ থাকতেন। ইতিকাফে থাকলে আপনার আল্লাহর ইবাদত করতে আরও সহজ হবে।
সামর্থ্য থাকলে উমরা পালন করা
আপনার যদি নিজের সামর্থ্য থাকে তবে আপনি উমরা পালন করতে পারেন। এই মাসে উমরা পালন করলে একটি হজ্জ করার মত সমান সাওয়াব হয়। তাই আপনার যদি উমরা করার মত সামর্থ্য থাকে তবে আপনি এই মাসে উমরা হজ্জ পালন করতে পারেন।
আরো পড়ুনঃ রমজানের ছোট ছোট আমল
শেষ কথাঃ রমজানের বিশেষ আমল সমূহ নিয়ে
রমজান মাসে আমাদের প্রত্যকের বেশী বেশী আল্লাহর ইবাদত করা প্রয়োজন। কারণ রোজার মাস হচ্ছে গুনাহ মাফের একটি শ্রেষ্ঠ মাস। তাই রমজানের এই মাসে বিশেষ কিছু আমলের মাধ্যমে বেশী নেকী পাওয়া সম্ভব।
সুপ্রিয় পাঠক, আজকের এই পোস্টে রমজানের বিশেষ আমল সমূহ নিয়ে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করেছি। আপনার যদি এই বিষয়ে কোন কিছু জানার থাকে তবে এই পোস্টের নিচে কমেন্ট করে জানতে পারেন। এছাড়াও পোস্টটি তথ্যবহুল হলে আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন। ধন্যবাদ।