বেনাইন টিউমার চেনার উপায়

হাসিবুর
লিখেছেন -

বেনাইন টিউমার চেনার উপায় বিনাইন টিউমার চেনার উপায় - আমরা জানি যে, শরীরের অস্বাভাবিক কোষ বা টিসু খন্ড হলো টিউমার, যা স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক দ্রুত ও অনিয়ন্ত্রিতভাবে বৃদ্ধি পেয়ে থাকে।

বেনাইন টিউমার চেনার উপায়

আমাদের মানব শরীরে দুই ধরনের টিউমার হয়। তারমধ্যে একটি হচ্ছে বেনাইন টিউমার আরেকটি হচ্ছে ম্যালিগন্যান্ট টিউমার। মূলত আজকের এই আলোচনার মাধ্যমে আমরা বেনাইন টিউমার চেনার উপায় সমূহ সম্পর্কে বিস্তারিত জানাবো।

তো সুপ্রিয় পাঠক বন্ধুরা, আপনারা যারা বেনাইন টিউমার চেনার উপায় এবং ম্যালিগন্যান্ট টিউমার সম্পর্কে এ টু জেড জানতে চান তারা আমাদের আজকের এই প্রবন্ধটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত মনোযোগ সহকারে পড়ুন। তাহলে আসুন কথা না বাড়িয়ে আমাদের আলোচনা পর্ব শুরু করা যাক।

(toc) #title=(সুচিপত্র)

বেনাইন টিউমার চেনার উপায়

বেনাইন টিউমার চেনার জন্য আপনি উপায় হিসেবে বেশ কয়েকটি পদ্ধতি অবলম্বন করতে পারেন। তবে সেই পদ্ধতি গুলো গ্রহনের পূর্বে অবশ্যই আপনাকে এটা জানতে হবে যে, শরীরে যদি বেনাইন টিউমার হয়ে থাকে তাহলে কি কি বৈশিষ্ট্য প্রকাশ পেতে পারে?

তাই আসুন আলোচনার এ পর্যায়ে বেনাইন টিউমারের লক্ষণ বা বৈশিষ্ট্য সমূহ ধারাবাহিক ভাবে জেনে নেওয়া যাক। যেগুলো দেখে আপনি প্রাথমিক অবস্থায় চিহ্নিত করতে পারবেন যে আপনার শরীরে বেনাইন টিউমার হয়েছে কি না! 

বেনাইন টিউমার এর লক্ষণ

১। বেনাইন টিউমারটি শুধুমাত্র একটি আবরণ দ্বারা আবৃত থাকে 

২। বেনাইন টিউমার ধীরে ধীরে শরীরে বৃদ্ধি পায় 

৩। বেনাইন টিউমার শরীরের অন্য কোন স্থানে ছড়িয়ে পড়ে না 

৪। অপারেশন করালে বেনাইন টিউমার দ্রুত ঠিক হয়ে যায় এবং সাধারণ অবস্থা থেকে আর বড় হয় না।

সুতরাং এই ধরনের টিউমার যদি আপনার শরীরে হয় তাহলে আপনি নিশ্চিত হতে পারেন যে সেটা আপনার বেনাইন টিউমার, যা শরীরের জন্য খুব একটা ক্ষতিকর নয়। তবে এ বিষয়ে সুনিশ্চিত হতে আপনি আপনার চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করুন, পাশাপাশি টিউমার পরিমাপ করুন এক্স-রে অথবা স্ক্যান করান।

আরও পড়ুনঃ টিউমার অপারেশন খরচ কত বাংলাদেশ

বিনাইন টিউমার কেন হয়

টিউমার মূলত বংশগত কারণে অথবা অতিরিক্ত ওজন বৃদ্ধির, অস্বাস্থ্যকর জীবন যাপন এবং অপুষ্টিকর খাদ্য গ্রহণের কারণে হয়ে থাকে। বিনাইন টিউমার কেন হয়, যারা এই ধরনের প্রশ্ন করে থাকেন– তাদেরকে বলব এই টিউমার মূলত বংশগত এবং আপনার লাইফস্টাইল এর ওপর ভিত্তি করেই হয়ে থাকে।

আর শুধু বিনাইন টিউমার নয়, ম্যালিগন্যান্ট টিউমারও আমাদের শরীরে এই কারণগুলোর জন্যই হয়ে থাকে। তাই আমাদের উচিত সুস্থ ও স্বাস্থ্যসম্মত জীবনযাপন গড়ে তোলা নিজের ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা এবং শারীরিক বিষয়ে সতর্কতা অবলম্বন করা। এবার আসুন জেনে নেই ম্যালিগন্যান্ট টিউমারের লক্ষণ সমূহ সম্পর্কে।

ম্যালিগন্যান্ট টিউমারের লক্ষণ

ম্যালিগন্যান্ট টিউমার শরীরের জন্য ক্ষতিকর। কেননা এটি এক পর্যায়ে ক্যান্সারের সৃষ্টি করে। তাই ম্যালিগন্যান্ট টিউমার হলে আপনার শরীরে কি কি লক্ষণ প্রকাশ পাবে সেগুলো মনোযোগের সাথে পড়ুন এবং মনে রাখার চেষ্টা করুন। শরীরের মূলত এই টিউমার হলে যে লক্ষণগুলো আপনি চিহ্নিত করতে পারবেন সেগুলো হলো:-

১। ম্যালিগন্যান্ট টিউমার শরীরে অধিকহারে বৃদ্ধি পায়।

২। বেনাইন টিউমারের মত একটি মাত্র আবরণ দ্বারা আবৃত নয় বরং এটি অনিয়ন্ত্রিত ও অগোছালোভাবে আবৃত থাকে এবং দ্রুত শরীরের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে পড়ে। 

৩। ম্যালিগন্যান্ট টিউমার রক্তের মাধ্যমেও ছড়িয়ে পড়ার ক্ষমতা রাখে।

৪। এটি মূলত ক্যান্সার, তবে প্রাথমিক অবস্থায় চিকিৎসা করলে ভালো হয়ে যায়। 

ম্যালিগন্যান্ট টিউমার বা ক্যান্সারের বৈশিষ্ট্যসমূহ আমরা উল্লেখ করেছি। এ পর্যায়ে জানাবো ক্যান্সার আক্রান্ত রোগীদের শারীরিক অবস্থা কেমন হয় এবং লক্ষণ হিসেবে কি কি সাধারণভাবে প্রকাশ পেয়ে থাকে। যথা: রক্তশূন্যতা, ক্ষুধা মন্দা, বমি বমি ভাব, অতিরিক্ত ওজন কমে যাওয়া, দুর্বল হয়ে পড়া ইত্যাদি ইত্যাদি।

সুতরাং আপনার শরীরের যদি কোন অংশ অস্বাভাবিকভাবে ফুলে যায় এবং তা দেখে যদি আপনার মনে হয় যে সেটা টিউমার তাহলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করুন এবং নিশ্চিত হয়ে যান যে এটা আপনার বেনাইন টিউমার নাকি ম্যালিগন্যান্ট টিউমার।

ম্যালিগন্যান্ট টিউমার ছবি

ম্যালিগন্যান্ট টিউমার ছবি

ম্যালিগন্যান্ট টিউমার ছবি

ম্যালিগন্যান্ট টিউমার ছবি

টিউমার দেখতে কেমন হয়

টিউমার দেখতে সাধারণত বিভিন্ন রকমের হয়ে থাকে। তবে টিউমার হচ্ছে একটি শক্ত গোল আকৃতির বস্তু যেটা শরীরের অভ্যন্তরে হয়ে থাকে। তবে হ্যাঁ কিছু টিউমার রয়েছে যেগুলো চামড়ার উপর ছোট স্পট হিসেবে দেখা দেয়। আবার কিছু কিছু টিউমার রয়েছে যেগুলো মাংসপেশি সম্পর্কিত।

আপনারা যদি ওপরে উল্লেখিত টিউমার গুলোর ছবি দেখে থাকেন তাহলে কিছুটা ধারণা পাবেন যে টিউমার সাধারণত দেখতে কেমন হয়। তবে সঙ্গে আকারে বললে বলা যায় শরীরের অতিরিক্ত এবং অস্বাভাবিক কোষগুলো কোথাও জমা হয়ে থাকলে যে চাকতি আকৃতির গোলক তৈরি হয় তাই হচ্ছে টিউমার। 

যেগুলোর কিছু কিছু আপনি হাত দিয়ে স্পর্শ করে অনুভব করতে পারবেন আবার কিছু কিছু টিউমার চোখে দেখা যায় না যেগুলো দেখার জন্য সিটিস্ক্যান করার প্রয়োজন পড়বে। 

কি খেলে টিউমার ভালো হয়

টিউমার মূলত অস্বাস্থ্যকর লাইফস্টাইল এবং খাদ্যভাসের কারণে হয়ে থাকে আমরা তা ইতোমধ্যে জানিয়েছি। তবে এ পর্যায়ে টিউমারের বিরুদ্ধে প্রতিরোধকারী পাঁচটি উদ্ভিজ্জ খাদ্যের নাম আমরা সাজেস্ট করব। 

যে খাবারগুলো খেলে আপনি টিউমারের সমস্যা থেকে মুক্তি পাবেন অর্থাৎ আপনার টিউমার ভালো হয়ে যাবে। যথা: সবুজ শাকসবজি, মাছ মাংস, মাশরুম, দুধ বা দুগ্ধচাত খাবার, হলুদ এবং বিভিন্ন ধরনের ফলফলাদি। এ সম্পর্কে আরও বিস্তারিত জানতে ক্লিক করুন– কি খেলে টিউমার ভালো হয়ে যায় লিংকে। 

ম্যালিগন্যান্ট টিউমার কোথায় হয়

বেনাইন টিউমার থেকে অধিক বেশি বিপদজনক ম্যালিগন্যান্ট টিউমার, এ কারণে অধিক বেশি জানার আগ্রহ প্রকাশ করে থাকেন যে ম্যালিগন্যান্ট টিউমার গুলো মূলত শরীরের কোন কোন অংশে হয়ে থাকে! তাই এ পর্যায়ে ম্যালিগন্যান্ট কোথায় কোথায় হতে পারে সেই অংশসমূহের নাম আমরা আপনাদেরকে সাজেস্ট করব। যথা: মস্তিষ্ক, শ্বাসযন্ত্র, স্তন, ঘাড়, নাক এবং পেট।

মাথায় টিউমার চেনার উপায়

মাথা আমাদের শরীরের একটি গুরুত্বপূর্ণ এবং সেনসিটিভ অংশ। মাথায় অর্থাৎ মস্তিষ্কে যদি টিউমার হয়ে থাকে তাহলে তা বাইরে থেকে জানার বা বুঝতে পারার কোনই সম্ভাবনা থাকে না। তবে আপনার মাঝে যদি কিছু লক্ষণ প্রকাশ পায় এবং আপনি কোন সমস্যায় ভুগেন তাহলে কয়েকটি উপায়ে জানতে পারবেন যে আপনার মাথায় টিউমার হয়েছে। যথা: সিটি স্ক্যান, মেমোগ্রাম, এক্সরে, এম আর আই স্ক্যান।

সাধারণত চিকিৎসকরা টিউমারের জাতীয় কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার জন্য এই চারটি মাধ্যম সাজেস্ট করে থাকেন। তাই মাথায় যদি আপনার টিউমার হয়ে থাকে তাহলে এতোটুকু দেরি না করে সঠিক সময়ে সঠিক চিকিৎসা গ্রহণ করার ব্যবস্থা করুন।

টিউমার চিকিৎসা

টিউমারের চিকিৎসা কি? কখন চিকিৎসকের দরকার? আপনার শরীরে যদি টিউমার হয়ে থাকে তাহলে আপনি কতদিন পর চিকিৎসকের শরণাপন্ন হবেন? এ নিয়ে কি সন্দেহ রয়েছে! 

যারা টিউমারকে অবহেলা করেন বা কোন রকম সমস্যা হচ্ছে না বলে ভাবেন যে এটা আপনার কোনই ক্ষতি করবে না তাহলে এমন ধারণা আপনার সম্পূর্ণ ভুল এবং এটা ভবিষ্যতের জন্য অত্যন্ত ভয়ংকর।

অতএব যখনই আপনার শরীরের কোন অংশে আপনি অস্বস্তি অনুভব করবেন এবং বুঝতে পারবেন যে টিউমার হয়েছে তাহলে দেরি না করে দ্রুত আপনার পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা উচিত। 

মূলত ওই টিউমার থেকে যাতে এতোটুকু আর বাড়তে দেওয়া না হয় সেই পদ্ধতি গ্রহণ করা জরুরী। তাই লক্ষণ গুলো চিহ্নিত করার সাথে সাথে আপনি পরামর্শ গ্রহণ করুন চিকিৎসকের এবং সঙ্গে সঙ্গে চিকিৎসা গ্রহণ করুন।

টিউমার কি ব্যথা হয় - টিউমার হলে কি ব্যথা হয়

অনেকেই প্রশ্ন করে থাকেন টিউমার কি ব্যথা হয়? এটা মূলত টিউমারের আকার আকৃতি এবং ধরণের উপর নির্ভর করে। তাই কিছু কিছু টিউমার রয়েছে যেগুলো ব্যথা অনুভব করায় আবার কিছু টিউমার রয়েছে যেগুলো কোন প্রকার সমস্যার সৃষ্টি করে না কিন্তু দীর্ঘদিন থাকার পরবর্তীতে ভয়াবহ শারীরিক বিঘ্নতার সৃষ্টি করে, এমনকি ক্যান্সারের মতো ভয়াবহ রোগের আবির্ভাব ঘটায়।

টিউমার ভালো করার দোয়া

আলোচনার শেষ পর্যায়ে আমরা টিউমার ভালো করার দোয়া সম্পর্কে আপনাদেরকে অবগত করব। কেননা মুসলিম ধর্মাবলম্বীর অন্তর্ভুক্ত মানুষ এটা বিশ্বাস করেন দোয়া বা আমল করার মাধ্যমে যেকোনো রোগ নিরাময় করা সম্ভব। আর তাছাড়াও কোরআন ও হাদিসে এমন অনেক দোয়ার কথা উল্লেখ রয়েছে যেগুলো পাঠ করার মাধ্যমে অনেক কঠিন ও জটিল রোগ নিরাময় হয়ে যায়।

আমাদের বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রোগ নিরাময়ের জন্য অনেক দোয়া উল্লেখ করেছেন। তার মধ্যে একটি হচ্ছে, ‘ওয়া ইজা মারিদতু ফা হুয়া ইয়াশফি-নি’

এছাড়াও আরো যে সকল দোয়া আপনি পড়তে পারেন সেগুলো হলো: ‘রাব্বি আন্নি মাস্‌সানিয়াদ দুর্‌রু, ওয়াআন্তা আরহামুর রাহিমিন’

তবে হ্যাঁ কোরআনুল কারীমে এটা উল্লেখ নেই যে, শুধুমাত্র নির্দিষ্ট একটি দোয়া পাঠ করার মাধ্যমে আপনি টিউমার বা ক্যান্সার থেকে পরিত্রাণ পাবেন। মূলত যে কোন রোগ আল্লাহর দেওয়া এক একটি পরীক্ষা বা নেয়ামত। 

তাই মহান আল্লাহ তায়ালার উপর বিশ্বাস রাখুন নিজের লাইফস্টাইল পরিবর্তন করুন এবং সঠিক চিকিৎসা গ্রহণ করুন। মহান আল্লাহ তা'আলা আমাদের সবাইকে সঠিক বুঝ দান করুন এবং সুস্থ জীবন অতিবাহিত করার তৌফিক দিন। আমিন।

শেষ কথাঃ বেনাইন টিউমার চেনার উপায়

তো পাঠক বন্ধুরা আজ এ পর্যন্তই, পরবর্তীতে আবারও নতুন টপিকের নতুন কোন আলোচনায় আপনাদের সাথে দেখা হবে কথা হবে। ততক্ষণ পর্যন্ত সবাই ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন আল্লাহ হাফেজ।

#buttons=(Ok, Go it!) #days=(20)

Our website uses cookies to enhance your experience. explore more
Ok, Go it!