সুন্নতি চুল রাখার নিয়ম - একজন মুসলমান হিসেবে আপনার অবশ্যই সুন্নতি চুল রাখার নিয়ম জেনে রাখা প্রয়োজন। কেননা মুসলমানদের কাছে অধিক জনপ্রিয় চুলের কাটিং হচ্ছে সুন্নতি চুলের কাটিং।
সম্মানিত পাঠকবৃন্দ, আজকে আমি আপনাদের সাথে সুন্নতি চুল রাখার নিয়ম, রাসূলুল্লাহ (সা:) এর চুল কেমন ছিল? সুন্নতি চুলের কাটিং ছবি ইত্যাদি বিষয় নিয়ে আপনাদের সাথে বিস্তারিত ভাবে আলোচনা করব। তাই আপনি যদি সুন্নতি চুল কাটার নিয়ম জানতে চান তবে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত আজকের এই আর্টিকেলটি পড়ুন। তবে চলুন সুন্নতি চুল রাখার নিয়ম ব্যাপারে জেনে আসি।
(toc) #title=(সুচিপত্র)
সুন্নতি চুল রাখার নিয়ম নিয়ে কিছু কথা
প্রত্যক মুসলমান ভাই চায় সুন্নতি চুল রাখার। তবে কিভাবে সুন্নতি চুল রাখতে হয় ব্যাপারটি সম্পর্কে ধারণা না থাকার জন্য অনেক মুসলিম ভাইয়েরা সুন্নতি চুল রাখতে পারে না। তবে চিন্তার কোন কারণ নেই আজকের এই পোস্টে আমি আপনাদের সাথে সুন্নতি চুল রাখার ব্যাপারে ধারণা দেওয়ার চেষ্টা করব। তাই আপনি আজকের এই পোস্টটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত মনোযোগ সহকারে পড়ুন।
রাসূল (সাঃ) এর মাথার চুল কেমন ছিল
প্রত্যক মুসলমানের কাছে আমাদের প্রিয় নবী ও রাসূল হযরত মুহম্মদ (সাঃ) ছিলেন অনুকরণীয়। কেননা রাসূল (সা.) এর দেখানো পথ অনুসরণ করলে একজন মুমিন বান্দা হওয়া সম্ভব। রাসূল (সা.) যেভাবে চুল রাখতেন এটা জানতে হলে আপনাকে অবশ্যই আগে জানতে হবে প্রিয় নবী হযরত মুহম্মদ (সাঃ) কিভাবে তার মাথার চুল রাখতেন। রাসূল (সাঃ) কিভাবে চুল রাখতেন তা বিভিন্ন হাদিসে উল্লেখ পাওয়া যায়। নিচে রাসূল (সা.) এর মাথার চুল কেমন ছিল তা তুলে ধরা হলো।
আল-বারা' ইবনে আযিব (রা) আনহু থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূল (সা) মধ্যমাকৃতির দেহবিশিষ্ট ছিলেন। তার দু’কাঁধের মধ্যবর্তী স্থান ছিল অনেক প্রশস্ত। তার মাথার চুল ছিল কানের লতি পর্যন্ত লম্বা (বুখারি, মুসলিম)
উপরোক্ত হাদিস থেকে আমরা বুঝতে পারি, রাসূল (সা.) এর চুল কাঁধ পর্যন্ত ছিল। এখন আপনারা অনেকেই জানতে চাইবেন। নবীজির চুল মোবারক কোকড়া ছিল না কি সোজা ছিল। চলুন তবে জেনে নেই।
হযরত আবু কাতাদা রাঃ বর্ণনা করেন যে, রাসূলুল্লাহ (সা:) এর চুল সম্পর্কে আমি আনাস (রা:) এর কাছে জিজ্ঞাসা করলে তিনি উত্তরে বলেন, "রাসুলুল্লাহ (সা) এর চুল অত্যাধিক কোকড়ানো কিংবা একেবারে সোজা ও ছিল না। বরং নবীজির পবিত্র চুল মোবারক উভয় কানের লতি পর্যন্ত ছিল।" (বুখারি, মুসলিম)
এই হাদিসের আলোকে আমরা বুঝতে পারলাম, নবীজি (সা) এর চুল মোবারক অত্যধিক কোকড়ানাে ছিল না আবার একেবার সোজা ছিল না। নবীজির চুল মোবারক ছিল মাঝারী বর্ণের।
নবীজি কি চুলে সিঁথি করতেন কিনা তা অনেক মুসলিম ভাইয়েরা জানতেন না। মহানবী (সাঃ) প্রথম দি্কে চুলে সিঁথি করতেন না। তবে কয়েকটি হাদিস পর্যালোচনা করলে জানা যায় পরে প্রিয় নবী হযরত মুহম্মদ (সাঃ) চুলে সিথি করতেন।
তাই আপনিও যদি বাবরি চুল রেখে চুলে সিঁথি করেন তবে তা করতে পারেন। কেননা এটি নবীজির সুন্নত ছিল। আপনি সব সময় পরিপাটি থাকার চেষ্টা করবেন। কেননা রাসূল (সাঃ) অগাছোলো মানুষদের পছন্দ করতেন না। তাই আপনি সুন্নতি তরিকায় চুল রাখতে চাইলে রাখতে পারেন।
আরো পড়ুনঃ কি আমল করলে মনের আশা পূরণ হয়
সুন্নতি চুল রাখার নিয়ম
প্রত্যক ধর্ম প্রাণ মুসলমান ভাইয়েরা সুন্নতি তরিকায় চুল রাখতে চায়। কিন্তু সুন্নতি চুল রাখার নিয়ম জানা না থাকার কারণে আর সুন্নতি তরিকায় চুল রাখতে পারে না। বর্তমান সময়ের ছেলেরা চুলের এমন কাটিং দেয় যা ইসলাম ধর্ম কোন ভাবেই সমর্থন করে না।
অথচ কিছু ছেলে ফ্যাশন বলে তাদের নিজেদের চুলের স্টাইল করে। তবে প্রিয় ভাই, আপনি কি জানেন ইসলামে চুল কাটার সুনির্দিষ্ট নিয়ম রয়েছে যেগুলো অনুসরণ করলে আপনি নবীজির সুন্নত আদায় করতে পারবেন।
আমাদের চুল কাটার ব্যাপারে অবশ্যই সতর্ক অবলম্বন করা উচিত। কেননা নিজেদের ইচ্ছানুযায়ী চুল কাটলে তা কোন ভাবেই ইসলাম সম্মত হবে না। নিচে সুন্নতি সুন্নতি চুল রাখার নিয়ম জেনে নিন।
বাবরি চুল রাখাঃ নবীজি বাবরী চুল রাখতেন। বাবরী চুল রাখার সুন্নত এ ব্যাপারে বিভিন্ন হাদীসে শরীফে উল্লেখ করা হয়েছে। হযরত আনাস (রা:) থেকে বর্ণিত আছে তিনি বলেন, রাসূল(সা:) এর চুল তাঁর দুই কানের লতি পর্যন্ত লম্বা ছিল। তার মানে হযরত মুহম্মদ (সাঃ) বাবরি চুল রাখতেন। - (সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং-৪১৮৫)।
চুল ছোট রাখাঃ আপনি চাইলে আপনার মাথার চুল ছোট ছোট রাখতে পারেন। তবে উভয়ই জায়গায় চুল ছোট রাখতে হবে। বর্তমানে ট্রেন্ডিং চুল কাটার স্টাইল অনুসরণ করলে হবে না।
চুল পরিপাটি করে রাখাঃ আপনার চুল ছোট হোক কিংবা বড়। আপনার চুল অবশ্যই পরিপাটি রাখতে হবে। চুল এলোমেলো করে রাখা উচিত নয়। পরিপাটি চুল নবীজি (সাঃ) পছন্দ করতেন। এছাড়াও পরিপাটিভাবে চলাফেরা করা নবীজির সুন্নত।
মাথা মুন্ডন করে রাখাঃ কিছু কিছু ওলামায়ে কেরামগণ মাথা মুন্ডন করার কথা বলেছে। এটি তারা মাকরুহ বলেছেন। যারা মাথা মুন্ডন করে তারা মনে করেন হযরত মুহম্মদ (সাঃ) হজ ও ওমরাহ ব্যাতীত আর কোন সময়ে মাথা মুন্ডন করেনি।
মাথায় তেল ব্যবহার করাঃ আপনি মাথায় তেল ব্যবহার করতে পারেন। কেননা মাথায় তেল ব্যবহার করা নবীজির সুন্নত। নবীজি মাথায় তেল ব্যবহার করতেন এবং চুলে সিঁথি করতেন।
আশা করি সুন্নতি চুল রাখার নিয়ম এই ব্যাপারে আপনারা ধারণা পেলেন। আপনারা যারা সুন্নতি তরিকায় চুল রাখতে চান তা এই পোস্টের এই অংশটুকু পড়লে জানতে পারবেন।
আরো পড়ুনঃ আতরের নামের তালিকা
সুন্নতি চুল রাখার নিয়ম ভিডিও
ইসলামে যেভাবে চুল রাখা নিষেধ
এই সময়ের কিছু কিছু মুসলমান ভাইয়েরা যা করে, তারা মাথার কিছু অংশের চুল কামাই করে, আর কিছু অংশ রেখে দেয় এটি ‘কুযা’ এর অন্তর্ভুক্ত, যা করতে রাসুলুল্লাহ (সাঃ) নিষেধ করেছেন। ইসলাম এই ভাবে চুল রাখতে নিষেধ করেছে। নিচে ইসলামে যেভাবে চুল রাখা নিষেধ তা উল্লেখ করা হলো।
- মাথার সাইডের চুলগুলো ছাটাই করে মাঝখানের চুলগুলো রেখে দেওয়া।
- মাথার মাঝখানের চুলগুলো ছাটাই করে সাইডের চুলগুলো রেখে দেওয়া।
- মাথার সামনের চুলগুলো ছাটাই করে পিছনের চুলগুলো রেখে দেওয়া।
- মাথার পিছনের চুলগুলো ছাটাই করে সামনের চুলগুলো রেখে দেওয়া।
- মাথার এক পার্শ্বের কিছু চুল ছাটাই করে বাকীগুলো রেখে দেওয়া।
উপরোক্ত আলোচনায় আপনারা জানতে পারলেন ইসলামে যেভাবে চুল রাখা নিষেধ এই ব্যাপারে। প্রিয় মুসলিম ভাই, ইসলাম যে ব্যাপারে নিষিদ্ধ করেছে তা মেনে চলার চেষ্টা করবেন। কেননা ইসলামের কোন ব্যাপারে মহান আল্লাহ অসন্তুষ্টি হলে তা খুব খারাপ ব্যাপার। এতক্ষণে আপনারা ইসলামে যেভাবে চুল রাখা নিষেধ তা কিছুটা হলেও বুঝতে পারলেন।
ইসলামে যেভাবে চুল রাখা নিষেধ
সুন্নতি চুল রাখার নিয়ম এই ব্যাপারে আপনার মনে বেশ কিছু প্রশ্ন উঁকি দিতে পারে। তবে চলুন জেনে নেই সেই সকল প্রশ্ন ও উত্তরগুলো।
চুলের আগা কাটলে কি হয়?
চুলের আগা কাটলে কি হতে পারে তা আপনারা অনেকেই জানতে চান তবে চলুন জেনে নেই। চুলের আগা কাটলে চুলের স্বাস্থ্য ভালো থাকে। তাই নিয়মিত আমাদের প্রত্যকের চুলে আগা কেটে ফেলা উচিত।
চুল কত প্রকার ও কি কি?
সাধারণত চুল চার প্রকারের দেখা যায়। যথাক্রমেঃ সোজা চুল, ঢেউ খেলানো চুল, কোঁকড়ানো চুল ও কোমল চুল।
শেষ কথাঃ সুন্নতি চুল রাখার নিয়ম
প্রত্যক মুসলিম ভাইদের উচিত সুন্নতি তরিকায় চুল রাখা। কেননা আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহম্মদ (সাঃ) এর দেখানো সকল পথ উম্মতের জন্য কল্যাণকর। সম্মানিত পাঠকবৃন্দ, আজকে আমি আপনাদের সাথে সুন্নতি চুল রাখার নিয়ম নিয়ে বিস্তারিতভাবে আপনাদের সাথে আলোচনা করেছি। আজকের এই পোস্টটি আপনার কাছে তথ্যবহুল মনে হলে শেয়ার করে আপনাদের বন্ধুদের জানাতে পারেন। ধন্যবাদ।
আর্টিকেল সম্পর্কিত তথ্য জানতে কমেন্ট করুন। আপনার প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।