যাকাত দেয়ার নিয়ম – শরিয়তের পরিভাষায় আল্লহর সন্তুষ্টি লাভের জন্য সম্পদের নির্ধারিত পরিমান অংশ পবিত্র কুরআনে বর্ণিত আট প্রকারের কোনো এক প্রকারের লোক বা সকল কে দান করলে তাকে যাকাত বলা হয়। ইসলামের মোট ০৫ টি স্তম্ভের মধ্যে যাকাত অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ।
যাকাত দেয়া ফরজ যদি কেউ যাকাত কে অস্বীকার করে তবে সে কাফেরের অন্তর্গত হবে। আল্লহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য যাদের উপর যাকাত ফরজ হয়েছে তাদের প্রয়োজন যাকাত প্রদান করা। কিন্তু আমরা অনেকেই জানিনা – আমার উপর যাকাত ফরজ হয়েছে কি না বা যাকাত দেয়ার নিয়ম সম্পর্কে। তাই আজকের আর্টিকেলে তুলে ধরব যাকাত দেয়ার নিয়ম গুলো সম্পর্কে বিস্তারিত আর্টিকেল।
(toc) #title=(সুচিপত্র)
যাকাত দেয়ার নিয়ম
প্রত্যেক মুসলিম নর-নারীর জন্য যাকাত ফরজ। যাকাত এর মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জিত হয়। যাকাত আদায় না করলে এর পরিণাম সম্পর্কে আল্লাহ বলেন – আর যারা স্বর্ণ ও রৌপ্য পূঞ্জীভূত করে এবং তা আল্লাহর রাস্তায় ব্যয় করে না, তাদেরকে মর্মন্তুদ শাস্তির সংবাদ দাও। যেদিন স্বর্ণ ও রৌপ্য জাহান্নামের অগ্নিতে উত্তপ্ত করা হবে এবং তা দ্বারা তাদের ললাট, পার্শ্বদেশ ও পৃষ্ঠদেশে দাগ দেওয়া হবে।
সেদিন বলা হবে, এটা তা যা তোমরা নিজেদের জন্য পূঞ্জীভূত করতে। সূতরাং তোমরা যা পূঞ্জীভূত করেছিলে তা আস্বাদন কর।” (সুরা তওবা-৩৪-৩৫)
তাই আমাদের উচিত নিসাব পরিমান সম্পদের মালিক হলে তার যাকাত প্রদান করা। নিসাব পরিমান সম্পদের মালিক হলে তার মোট হিসাবের ২.৫০% সম্পদ এর যাকাত প্রদান করতে হবে। যাকাত দিলে সম্পদ কমে না বরং বেড়ে যায়। যাকাত দেয়ার বিস্তারিত নিয়ম গুলো নিচে দেখে নিন -
আরো পড়ুনঃ রমজানের ছোট ছোট আমল
বর্তমানে কত টাকা থাকলে যাকাত ফরজ হয়
বর্তমানে আসলে কত টাকা থাকলে যাকাত ফরজ হবে এটা বলা কঠিন। কারণ হলো স্বর্ণ ও রৌপ্যের বাজার মূল্য সবসময় একরম থাকে না। যদি কারো কাছে – সাড়ে সাত ভরি স্বর্ণ অথবা ৫২.৫ ভরি রুপার সমপরিমান অর্থ থাকে অথবা ব্যবসায়িক কোনো সম্পদ মজুদ থাকে তাহলে নিসাব অনুযায়ী তার ২.৫০ পার্সেন্ট যাকাত দিতে হবে।
আপনার কাছে কত টাকা রয়েছে তা দিয়ে বর্তমান বাজার মূল্য অনুযায়ী বিবেচনা করে বের করে নিতে হবে। এটি নির্দিষ্ট করে বলা অসম্ভব।
স্বর্ণের যাকাত দেওয়ার নিয়ম
স্বর্ণ হলো সম্পদের প্রধান একটি দিক। স্বর্ণের যাকাত দেয়ার জন্য মহানবি হযরত মুহাম্মদ (সা) বলেন – “২০ দিনারের কম স্বর্ণের জন্য যাকাত ফরজ নয়। যদি কোনো ব্যাক্তির কাছে এক বছর যাবত ২০ দিনার পরিমান স্বর্ণ থাকে তাহলে তাকে অর্ধ দিনার যাকাত দিতে হবে। এরপরে যা বৃদ্ধি পাবে তার হিসাব ঐ ভাবেই দিতে হবে “
২০ দিরহাম স্বর্ণের হিসাব করলে ওজন হয় ৮৫ গ্রাম। তাহলে কারো কাছে যদি ৮৫ গ্রাম বা তার বেশি স্বর্ণ থাকে এক বছর ধরে তাহলে তার যাকাতের পরিমান মোট স্বর্ণের ২.৫ পার্সেন্ট।
স্বর্ণের যাকাত হিসাব করার নিয়ম
কারো কাছে যদি উক্ত শর্ত পরিমান স্বর্ণ থাকে তাহলে বর্তমান বাজার দর অনুযায়ী হিসাব করতে হবে। যেহেতু স্বর্ণের ক্যারেট এর উপর নির্ভর করে দাম হয় এজন্য ক্যারেট অনুযায়ী স্বর্ণের হিসাব করতে হবে। প্রথমে আপনার কাছে কত পরিমান স্বর্ণ আছে তা পরিমাপ করতে হবে।
এর পরে স্বর্ণের বাজার দর বের করতে হবে। এরপরে এক গ্রাম স্বর্ণের মূল্য দিয়ে যত গ্রাম আছে তা বের করতে হবে তাহলে মোট মূল্য বের হবে। এবার মোট মূল্যের ২.৫% বের করতে হবে। মোট মূল্যের ২.৫% হলো স্বর্ণের যাকাত।
কোন কোন সম্পদের উপর যাকাত ফরজ
কোন কোন সম্পদের উপর যাকাত ফরজ হয় এ সম্পর্কে বহু আলেমগন মত দিয়েছেন যা নিচে বিস্তারিত তুলে ধরলাম –
স্বর্ণ ও রৌপ্য – স্বর্ণ ও রৌপ্য যদি নিসাব পরিমান থাকে ও ১ বছর পূর্ণ হয় তবে যাকাত দেয়া ওয়াজিব। তবে অনেকের মতে ব্যবসার জন্য হলে ব্যবসায়ী হিসেবে যাকাত ওয়াজিব হবে।
অর্থ – নগদ অর্থের উপর যাকাত দিতে হবে। ব্যাংক ব্যলেন্স, ডিপোজিট, বন্ড, ডলার ইতাদি যেগুলো নগদ অর্থের মধ্যে পরে তার যাকাত দেয়া ফরজ।
ব্যবসায়ী – ব্যবসায়ী দের উপর যাকাত দেয়া ওয়াজিব। ব্যবসার পণ্য যা হোক না কেন তার উপর যাকাত দিতে হবে।
ফসল – যে সকল ফসল গুলো ভবিষ্যতের জন্য জমা করে রাখা যায় যেমন – ধান, গম ইত্যাদি সকল ফল ও ফসলের যাকাত দিতে হবে।
চতুস্পদ প্রাণী – হাদিসে আছে, উট, গরু ও ছাগলের যাকাত দিতে হবে। তবে গৃহপালিত প্রাণী যদি ব্যবসার উদ্দ্যেশে হয় তবে ব্যবসা হিসেবে উক্ত প্রাণীর যাকাত দিতে হবে।
আরো পড়ুনঃ রমজানের কুরআন তেলাওয়াতের ফজিলত
যাকাত কাদের উপর ফরজ
যাকাত ফরজ হওয়ার জন্য শর্ত রয়েছে যদি সকল শর্ত কারো মিলে যায় তবে তার জন্য যাকাত ফরজ হয়ে যায়। যাকাত ফরজ হওয়ার শর্ত গুলো হলো –
১। স্বাধিন হওয়া – যাকাত তার উপর ফরজ হয় যিনি স্বাধীন। কোনো গোলাম, দাস-দাসির উপর যাকাত ফরজ নয়। তবে তাদের যাকাতুল ফিতর আদায় করতে হবে।
২। মুসলিম হওয়া – যাকাত ফরজ হয়ে যাবে যে কোনো মুসলমানের উপর। নাবালক সম্পদেরউপর যাকাত ফরজ হয়।
৩। নিসাব পরিমান সম্পদের মালিক হওয়া – নির্দিষ্ট পরিমান সম্পদ কে নিসাব বলে। যাকাত দেয়ার জন্য স্বর্ণ, রৌপ্য, ফসল ইত্যাদি এর যে পরিমান সম্পদ রয়েছে তা নিসাব পরিমান সম্পদ যদি থাকে তাহলে যাকাত দেয়া ওয়াজিব।
৪। সম্পদের ১ বছর পূর্ণ হওয়া – নিসাব পরিমান সম্পদ যদি ১ বছর ধরে থাকে তবে যাকাত দিতে হবে। বছরের গণনা শুরু হবে সম্পদের শুরুর দিন থেকে বছরের শেষ দিন পর্যন্ত। এ সম্পর্কে মহানবি হযরত মুহাম্মদ (স) এর একটি হাদিস পাওয়া যায় তিনি বলেন – “কোনো সম্পদেই যাকাত নেই, যতদিন না তার উপর এক বছর পূর্ণ হয়।
যাকাতের হিসাব
যাকাতের হিসাব বের করতে হবে বর্তমান বাজার মূল্যের উপর নির্ভর করে। যাকাতের নিসাব হলো –
স্বর্ণের জন্য যাকাতের নিসাব হলো সাড়ে সাত ভরি।
রুপার ক্ষেত্রে যাকাতের নিসাব হলো সাড়ে বায়ান্ন ভরি
নগদ অর্থ, সম্পদ ও ব্যবসায়িক পণ্যের ক্ষেত্রে যাকাতের নিসাব হলো সাড়ে বায়ান্ন তোলা রুপার মূল্যের সমপরিমান।
যাকাত কখন দিতে হয়
অনেকেই জানতে চান যাকাত কখন দিতে হয় যাকাত দিতে হবে যদি আপনি নিসাব পরিমান সম্পদের মালিক হোন। যদি নিসাব পরিমান সম্পদ আপনার থাকে ও যদি ১ বছর পূর্ণ হয়ে যায় তাহলে পূর্বের বছরের যাকাত দেয়া ফরজ হবে। আশা করি বুঝতে পেরেছেন যাকাত দেয়ার নিয়ম অনুযায়ী হিসাব করে বের করবেন আপনার নিসাব পরিমান সম্পদ আছে কি না।
যাকাত কাদের দেয়া যাবে
যাকাত কাদের কে দিবেন যাকাত দেয়ার নিয়ম এর মধ্যে এটা অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। যে ০৮ ধরনের লোক কে যাকাত দেয়া যাবে –
ফকির – জীবন যাপনের জন্য যা দরকার তা একেবারেই নেই।
মিশকীণ – মিশকীণ যার কাছে প্রয়োজনের চেয়ে কম আছে।
যাকাত আদায়কারী – রাষ্ট্রীয় কোষাগারে যাকাত প্রদান।
যাদের অন্তর ইসলামের দিকে ঝুকেছে – যারা মুসলিম হতে চায় গরিব ও অসহায় তাদের যাকাত দেয়া যাবে।
ক্রিতদাস মুক্ত করতে – দাস দের মুক্তির ক্ষেত্রেও যাকাত দেয়া যাবে।
ঋণগ্রস্থ - যে সকল গরিব মানুষ ঋণ শোধ করার ক্ষমতা নেই তাদের যাকাত দেয়া যাবে।
আল্লহর রাস্তায় যারা আছে – জিহাদ বা আল্লাহর রাস্তায় নিজেকে সপে দিয়েছে এমন কাউকে অথবা কোনো এতিম খানায়।
মুসাফির – ঐ সব মুসাফির ব্যাক্তি কে দেয়া যাবে যারা অন্য দেশে গেছে কিন্তু টাকার অভাবে দেশে ফিরতে পারছে না তাদের যাকাত দেয়া যাবে।
আরো পড়ুনঃ রমজানের ডায়াবেটিস রোগীর করণীয়
শেষ কথা: যাকাত দেয়ার নিয়ম
যাকাত দেয়ার নিয়ম আর্টিকেলে ইসলামিক স্ক্লার দের তথ্য এর মাধ্যমে আজকের আর্টিকেল টি সাজানো হয়েছে। কোনো ভুল থাকলে সংশোধন করে দিবেন। যাকাত যেন আমরা সকলে সঠিক ভাবে পালন করতে সে তৌফিক আল্লাহ যেন আমাদের দান করেন, আমীন।