ভ্রমণ কিংবা কাজের উদ্দেশ্য আমাদের বিভিন্ন সময় দেশের বিভিন্ন প্রান্তে যেতে হয়। সেখানে রাত্রিযাপন করা এবং গুণগত খাবারের জন্য একটি ভালোমানের হোটেলের প্রয়োজন। এধরনের সার্ভিস শুধুমাত্র আবাসিক হোটেল গুলোতেই পাওয়া যায়। বাজেট অনুযায়ী দেশের বিভিন্ন জায়গায় ভালোমানের হোটেল আছে। এগুলো ডাবল, সিংগেল এবং কাপলদের থাকার জন্য উপযুক্ত। আপনারা চাইলে এসকল হোটেলে ২-১ দিন বা তারবেশী সময় অবস্থান করতে পারবেন।
সম্মানিত পাঠকবৃন্দ, আপনারা অনেকেই জানতে চেয়েছেন কিভাবে আবাসিক হোটেল ভাড়া করব। আজকে এ লেখায় আমি আপনাদের সাথে হোটেল ভাড়া সম্পর্কে অজানা তথ্য ও নিয়মাবলী নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব।
(toc) #title=(সুচিপত্র)
আবাসিক হোটেল মানে কি
আবাসিক হোটেল হচ্ছে মূলত একটি অ্যাপার্টমেন্ট বিল্ডিং একটি ডাইনিং রুম এবং থাকার রুম ও খাবার পরিষেবা প্রদান করে। বাজেট অনুযায়ী বিভিন্ন ধরনের ডাবল, সিংগেল বেডের রুম পাওয়া যায়। আবাসিক হোটেল বিলাসবহুল এবং মাঝারি দামের হতে পারে। আপনি কোন ধরনের হোটেলে থাকবেন তা সম্পূর্ণ আপনার উপরেই নির্ভর করছে।
আরও জানুন: হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর আবাসিক হোটেল তালিকা
আবাসিক হোটেল মানে হলো এমন একটি হোটেল যেখানে অতিথিরা কিছু সময়ের জন্য থাকার সুবিধা পান। এই ধরনের হোটেলে সাধারণত অতিথিরা কয়েক দিন বা সপ্তাহের জন্য থাকতে পারেন। এটি সাধারণত সেই ব্যক্তিদের জন্য সুবিধাজনক যারা ভ্রমণের সময় সাময়িকভাবে থাকার জন্য একটি নিরাপদ ও আরামদায়ক পরিবেশ খুঁজছেন। আবাসিক হোটেলে থাকার জন্য প্রয়োজনীয় সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা যেমন বিছানা, বাথরুম, খাবার, ইন্টারনেট ইত্যাদি প্রদান করা হয়।
আবাসিক হোটেল ভাড়া: আপনার জানা দরকার এই ৮টি নিয়ম
অনেকে কাজের উদ্দেশ্য এক স্থান থেকে অন্য স্থানে যান। উক্ত এলাকায় পরিচিত কোন আত্মীয়স্বজন না থাকলে তখন থাকা খাওয়ার জন্য শরণাপন্ন হতে হয় আবাসিক হোটেলের।
বাংলাদেশে আবাসিক হোটেল ভাড়া নেওয়ার সময় কিছু নির্দিষ্ট নিয়ম ও বিধি-নিষেধ মেনে চলা হয়। এখানে প্রধান কিছু নিয়ম উল্লেখ করা হলো:
- পরিচয়পত্র জমা: হোটেলে প্রবেশের সময় আপনাকে বৈধ পরিচয়পত্র (যেমন, জাতীয় পরিচয়পত্র, পাসপোর্ট, বা ড্রাইভিং লাইসেন্স) জমা দিতে হবে। বিদেশী নাগরিকদের পাসপোর্ট এবং ভিসা দেখাতে হয়।
- বুকিং: অনেক হোটেলে আগেই বুকিং করা হয়। বুকিংয়ের সময় নির্দিষ্ট ফি অগ্রিম প্রদান করতে হতে পারে।
- চেক-ইন ও চেক-আউট সময়: সাধারণত হোটেলে চেক-ইন এবং চেক-আউটের সময় নির্দিষ্ট থাকে। চেক-ইন সাধারণত দুপুর ১২টা বা ১টার দিকে হয় এবং চেক-আউট দুপুর ১১টা বা ১২টার মধ্যে করতে হয়।
- নির্দিষ্ট ফি: হোটেলের ভাড়া নির্দিষ্ট এবং সাধারণত প্রতি রাতের জন্য হয়। কিছু হোটেল অতিরিক্ত সময় থাকার জন্য অতিরিক্ত ফি নিতে পারে।
- হোটেলের নীতিমালা: প্রত্যেক হোটেলের নিজস্ব নীতিমালা থাকে, যা আপনাকে মেনে চলতে হবে। উদাহরণস্বরূপ, কিছু হোটেলে ধূমপান নিষিদ্ধ থাকতে পারে, এবং কিছু হোটেল পোষা প্রাণী রাখার অনুমতি দেয় না।
- নিরাপত্তা: হোটেল রুমে থাকা মূল্যবান জিনিসপত্র সংরক্ষণের জন্য হোটেল কর্তৃপক্ষ সাধারণত একটি নিরাপত্তা সিন্দুক বা লকার সরবরাহ করে।
- বুকিং বাতিল: কিছু হোটেল বুকিং বাতিলের ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট নিয়মাবলী অনুসরণ করে এবং বাতিলের জন্য চার্জ প্রযোজ্য হতে পারে।
- পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা: হোটেল কর্তৃপক্ষ দৈনিক পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার ব্যবস্থা করে, তবে এটি হোটেলের নীতিমালার ওপর নির্ভর করে।
এই নিয়মগুলো সাধারণত সব হোটেলের জন্য প্রযোজ্য, তবে নির্দিষ্ট হোটেলের নিয়মাবলী ভিন্ন হতে পারে। ভাড়া নেওয়ার আগে সংশ্লিষ্ট হোটেলের নীতিমালা ভালোভাবে জেনে নেওয়া উচিত।
আবাসিক হোটেলে থাকতে কি কি কাগজপত্র লাগে
বর্তমানে আবাসিক হোটেলে থাকতে চাইলে বেশকিছু কাগজপত্র প্রয়োজন। কেননা প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ছাড়া কোনও ভাবেই রুম ভাড়া পাওয়া যাবে না।
- অবশ্যই ১৮ বছরের বেশি হতে হবে। এবং বৈধ ভোটার আইডি কার্ড থাকতে হবে।
- ছাত্রছাত্রী অথবা সিঙ্গেল ব্যক্তির রুম ভাড়া নিতে হলে জাতীয় পরিচয়পত্র লাগবে।
- বিবাহিত ব্যক্তি হলে জাতীয় পরিচয়পত্র এবং বিয়ের কাগজপত্র দেখাতে হবে।
- পাসপোর্ট সাইজের ছবি লাগতে পারে।
- বন্ধু বান্ধবীদের সাথে রুম ভাড়া নিতে হলে প্রত্যকের পাসপোর্ট সাইজের ছবি ও জাতীয় পরিচয়পত্র অথবা জন্ম নিবন্ধন লাগবে।
উপরোক্ত কাগজপত্র সংগ্রহ থাকলেই তবে আপনি আবাসিক হোটেলের রুম ভাড়া নিতে পারবেন। কিছু কিছু হোটেল আছে সেগুলোতে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র যাচাই বাছাই করে না। সুতরাং, এখন থেকে আপনি আবাসিক হোটেল ভাড়া করার আগে সঙ্গে করে পাসপোর্ট সাইজের ছবি এবং জাতীয় পরিচয়পত্র রাখবেন।
আবাসিক হোটেলে রুম ভাড়া পদ্ধতি
হোটেলে রুম ভাড়া করার বেশ কয়েকটি পদ্ধতি রয়েছে, যেগুলো অনুসরণ করে আপনি খুব সহজেই আবাসিক হোটেলের রুম বুক করতে পারবেন। অনলাইনে রুম বুক করার জন্য বুকিং.কম ওয়েবসাইট ব্যবহার করতে পারেন। অথবা সরাসরি ম্যানেজারের সাথে বিস্তারিত কথা বলে যেকোনো রুম ভাড়া নিতে পারেন।
কম খরচে সেরা আবাসিক হোটেল ভাড়া করার টিপস
যদি আপনার পূর্বে কোন আবাসিক হোটেলে থাকার অভিজ্ঞতা না থাকে তবে অনেকের কাছে বেশি টাকা ভাড়া রাখেন হোটেল কর্তৃপক্ষ। তাই আপনাকে এই ব্যাপারে সচেতন থাকতে হবে। আপনি কয়েকটি বিষয় মাথায় রেখে হোটেলগুলো ভাড়া নেন তবে এ সমস্য থেকে মুক্তি পেতে পারেন। নিচে কম খরচে আবাসিক হোটেল ভাড়ার নিয়মগুলো উল্লেখ করা হলো।
প্রথমে আপনি যে বিষয় মাথায় রাখবেন তাহলো মেইন রোডের পাশে থাকা আবাসিক হোটেল ভাড়া থেকে এড়িয়ে যাবেন। কেননা এসকল হোটেলগুলোর ভাড়া তুলনামূলক অনেক বেশি। তাই চেষ্টা করবেন শহরের ভেতরের দিকের হোটেলগুলোতে রুম বুক করার।
আপনি যে হোটেলে থাকতে চাচ্ছেন, উক্ত হোটেলের চারপাশে একটু ভালো করে লক্ষ করবেন। যদি দেখেন ভালোভাবে ডেকরেশন করা কিংবা সুন্দরভাবে সাজানো গোছানো রয়েছে তবে বুঝে নিবেন হোটেলটি আপনার কাছ থেকে অতিরিক্ত টাকা চার্জ করবে।
আরও জানুন: ঢাকার পার্শ্ববর্তী দর্শনীয় স্থান
অনেক হোটেল মালিক ভাড়া একটু বেশি চেয়ে থাকে। এক্ষেত্রে আপনি তাদের সাথে দামাদামি করতে পারেন। আপনার বাজেট অনুযায়ী ঠিক থাকলে থাকবেন নাহলে অন্য হোটেল ভাড়া নিবেন।
ভালো আবাসিক হোটেল চেনার উপায়
প্রত্যক ব্যক্তি চায় ভালোমানের হোটেলে থাকতে। কিন্তু বাজেট অনুযায়ী পর্যাপ্ত অর্থ না থাকার কারণে ভালো হোটেলে থাকা হয়না। তবে একটি ভালো আবাসিক হোটেল কেমন হতে পারে সে সম্পর্কে আমাদের কিছু ধারণা থাকা উচিত। নিচে ভালো আবাসিক হোটেল চেনার উপায় উল্লেখ করা হলো।
হোটেলের রিসেপশন ভালোভাবে লক্ষ করুন। যদি আপনি দেখে হোটেলটির রিসেপশন সুন্দরভাবে সাজানো গোছানো রয়েছে। তবে বুঝবেন হোটেলের পরিবেশ অনেক ভালো।
হোটেলের কর্মচারীদের আচার আচারণ লক্ষ করুন। যেসকল আবাসিক হোটেল ভালো হয় সেখানে কর্মচারীরাও বেশ ভালো এবং সুন্দর আচরণ করে। এবিষয়টি আপনি লক্ষ রাখতে পারেন।
হোটেলের রুম নিশ্চিত করার আগে আপনি নিজে গিয়ে রুম দেখে আসুন সবকিছু ঠিকঠাক আছে কিনা। যেমন- ওয়াশরুম, বাথরুম ইত্যাদি।
ফ্রি ওয়াইফাই, এসি, টাইলস করা রুম, বারান্দা সবকিছু আছে কিনা আপনি যাচাই বাছাই করে নিতে পারেন।
আরও জানুন: ময়মনসিংহ আবাসিক হোটেল ভাড়া কত
এভাবে যদি আপনি যাচাই বাছাই করেন তবে খুব সহজেই বুঝে নিতে পারবেন হোটেলটি কেমন। এসব বিষয় মাথায় রেখে একটি ভালোমানের আবাসিক হোটেল রুম ভাড়া নিতে পারেন।
আবাসিক হোটেল ভাড়া কত টাকা লাগে
এতক্ষণ আবাসিক হোটেল ভাড়া নিয়ে ঝামেলা এড়াতে যা যা করণীয় সেগুলো সম্পর্কে জানতে পারলাম। এবার জানব আবাসিক হোটেল ভাড়া করতে কত টাকা লাগে।
আপনারা যারা আবাসিক হোটেল ভাড়া নিতে চান এবং জানতে সেখানে ভাড়া কত? এটা নির্ভর করে সেখানকার পরিবেশের উপর। কিন্তু সাধারণ মানের হোটেলগুলোতে এক রাতের জন্য এক রুমের ডাবল বেডের জন্য ৩০০ থেকে ৫০০ টাকার মধ্য ভাড়া পাওয়া যায়। অনেক সময় ৩০০ টাকার মধ্যে ভালো রুম পাওয়া যায়।
আরও জানুন: গাইবান্ধা জেলার বিখ্যাত স্থান ও দর্শনীয় স্থান সমুহ দেখে নিন
কিন্তু মোটামুটি ভালোমানের ডাবল বেডের এক রাতের জন্য ৬০০ টাকার থেকে বেশি ভাড়া হয়। আবাসিক হোটেল ভাড়া নেওয়ার আগে আপনি যে হোটেলের রুম ভাড়া নিতে চান সে সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে ম্যানেজারের সাথে কথা বলুন। এরপর হোটেল ভাড়া করবেন।
অনলাইনে হোটেল বুকিং করার নিয়ম
আবাসিক হোটেল ভাড়া নিতে চাইলে এখন খুব সহজে অনলাইনে বুকিং দিতে পারবেন। কিভাবে ইন্টারনেটের মাধ্যমে হোটেলের রুম বুক করবেন। চলুন সেটা জেনে নেই।
আবাসিক হোটেল রুম বুক করার জন্য আপনি booking.com সাইট ব্যবহার করতে পারেন। এখানে বাংলাদেশ সহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের আবাসিক হোটেলের রুম বুক করতে পারেন।
বাংলাদেশের সেরা ১০টি আবাসিক হোটেলের তালিকা
বাংলাদেশের ভালোমানের কয়েকটি আবাসিক হোটেল রয়েছে। এই হোটেলগুলোর নামের তালিকা দেখতে পারেন।
- প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও ঢাকা
- ইন্টারকন্টিনেন্টাল ঢাকা
- রেডিশন ব্লু ঢাকা ওয়াটার গার্ডেন হোটেল
- ইউনিক হোটেল এন্ড রিসোর্ট লিঃ
- হোটেল সারিনা লিঃ
- ঢাকা রিজেন্সী হোটেল এন্ড রিসোর্ট
- লো মেরিডিয়ান ঢাকা
- ডরিন হোটেলস এন্ড রিসোর্টস লিঃ
- সী-গাল হোটেল লিমিটড
- মম ইন হোটেল এন্ড রিসোর্ট
- রয়্যাল টিউলিপ সী পার্ল বীচ রিসোর্ট এন্ড স্পা
উপরের বাংলাদেশের সেরা আবাসিক হোটেল উল্লেখ করা হয়েছে। এখান থেকে আপনার পছন্দের হোটেলে থাকতে পারেন।
ঢাকার আবাসিক হোটেল ভাড়া কত?
ঢাকারয় আবাসিক হোটেলের ভাড়া কত টাকা জানতে চান তবে এই অংশটুকু পড়ুন। ঢাকার মধ্যে আবাসিক হোটেলের ভাড়া নির্ভর করে আপনি যে মানের হোটেলে থাকবেন তার উপর। আপনি যদি এসি রুমে থাকতে চান তবে আপনার দৈনিক ভাড়া পড়বে ১০০০ থেকে ২৫০০ টাকা আর এসি ডাবল রুমের ভাড়া ২৭০০ থেকে ৩০০০ টাকা এবং ট্রিপল রুমের ভাড়া পরবে ৩০০০ থেকে ৪০০০ টাকা। নন এসি সিঙ্গেল রুমের ভাড়া ৫০০ থেকে ১৩০০ টাকা ভাড়া হতে পারে।
ঢাকার সবচেয়ে বড় হোটেলের নাম কি?
ঢাকার সবচেয়ে বিলাসবহুল এবং বড় হোটেল হচ্ছে ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেল। যেটি ঢাকার রমনায় অবস্থিত।
সায়েদাবাদ আবাসিক হোটেল ভাড়া কত
ঢাকার মধ্য আবাসিক হোটেলের তালিকায় সেরা মানের হোটেল রয়েছে সায়েদাবাদ এলাকার বেশ কয়েকটি আবাসিক হোটেল। এই হোটেলগুলোর মান অনেক ভালো। ভালোমানের সার্ভিস প্রদান করে থাকে সায়দেবাদের হোটেলগুলো। এখানে সিংগেল ও ডাবল বেড পাওয়া যাবে। সায়েদাবাদ হোটেলগুলোর ভাড়া ৫০০ টাকা থেকে শুরু করে ৬৩০০ টাকা পর্যন্ত হতে পারে।
লেখকের শেষকথা
বেড়াতে গেলে থাকা খাওয়ার জন্য একটি ভালোমানের হোটেল প্রয়োজন। সম্মানিত পাঠকবৃন্দ, আজকে আমি আপনাদের সাথে আবাসিক হোটেল ভাড়ার নিয়ম নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। আপনারা যারা হোটেল ভাড়া নিতে চান তার হোটেলের ম্যানেজারের সাথে কথা বলে হোটেলের রুম বুক করতে পারেন।
আর্টিকেল সম্পর্কিত তথ্য জানতে কমেন্ট করুন। আপনার প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।