বাংলাদেশের প্রাকৃতিক দুর্যোগ রচনা - বাংলাদেশের প্রাকৃতিক দুর্যোগ রচনা ২০ পয়েন্ট - প্রাকৃতিক দুর্যোগ সম্প্রতি বাংলাদেশের নিত্যদিনের সঙ্গী হয়ে দাঁড়িয়েছে। নানা রকমের দুর্যোগে কবলিত হলো বাংলার হাজারো মানুষ। এই কারণে স্কুল-কলেজের নানারকম পরীক্ষায় অত্যন্ত জরুরি ১টি রচনা হলো বাংলাদেশের প্রাকৃতিক দুর্যোগ রচনা। এইজন্য আপনাদের সুবিধার্থে রইল বাংলাদেশের প্রাকৃতিক দুর্যোগ নিয়ে রচনা।
প্রাকৃতিক দুর্যোগ বাংলাদেশের একটি অনতম সমস্যা। বাংলাদেশের প্রাকৃতিক দুর্যোগ রচনা ৬ষ্ঠ, ৭ম, ৮ম, ৯ম, এসএসসি ও এইচএসসি শ্রেণির জন্য। নিন্মে রচনাটি সহজ ও সাবলীল ভাষায় লিখা হলো।
বাংলাদেশ প্রাকৃতিক দুর্যোগপ্রবণ দেশ। প্রায় প্রতি বছরই ঝড়, বন্যা, জলোচ্ছ্বাস এদেশের মানুষের জীবনকে কাবু করে তোলে। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটের সাথে প্রাসঙ্গিক বিবেচনায় “বাংলাদেশের প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও তাঁর প্রতিকার” রচনাটি প্রায়ই এইচএসসি ও এসএসসি পরীক্ষায় এসে থাকে। এইজন্য শিক্ষার্থীদের জন্য ২৩ পয়েন্ট সহ এই রচনাটি তুলে ধরা হল।
(toc) #title=(সুচিপত্র)
ভূমিকা - বাংলাদেশের প্রাকৃতিক দুর্যোগ রচনা
হাজার বছর ধরে প্রকৃতি ধারণ করে আসছে মানুষসহ প্রাণীজগতের সবার প্রয়োজনীয় রসদ। প্রকৃতিকে ব্যবহার করে জীবন সংগ্রামী মানুষ গড়ে তুলেছে সভ্যতা। প্রাণশক্তিতে ভরপুর মানুষ প্রকৃতিতে প্রতিষ্ঠা করেছে নিজের আধিপত্য।
প্রাণীজগতের এই আবাসস্থল পৃথিবীর প্রকৃতি বড়ই রহস্যময়। প্রকৃতি নিজের বুকে ধারণ করে আছে প্রানীজগতের বেঁচে থাকার সব উপাদান। আবার এই প্রকৃতিই খেয়ালবশে হয়ে ওঠে বৈরী, প্রমত্ত, উদ্ধত। আকস্মিক বিপর্যয়ে প্রকৃতি মুহূর্তের মধ্যেই তছনছ করে দেয় মানুষের সাজানো সংসার, স্থাপনা, সৌধ।
আধুনিক পৃথিবী সভ্যতার চরম শিখরে পৌঁছে গেলেও প্রকৃতিকে এখনো মানুষ বশ মানাতে পারেনি। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির এ যুগেও মানুষ অনেক সময় প্রকৃতির কাছে পুরোপুরি অসহায়। পৃথিবীর সব দেশেই কমবেশি প্রাকৃতিক দুর্যোগ আঘাত করে। বাংলাদেশও এর ব্যতিক্রম নয়।
প্রাকৃতিক দুর্যোগ বলতে এমন কিছু দুর্ঘটনা বা বিপর্যয়কে বোঝায়, যা প্রকৃতির স্বাভাবিক নিয়মে ঘটে এবং যার পিছনে মানুষের প্রত্যক্ষ ভূমিকা থাকে না। ভৌগোলিক অবস্থানের কারণেই নানা ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ বাংলাদেশের মানুষের নিত্যসঙ্গী।
প্রতি বছর এখানে বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগ দেখা দেয়, যার মধ্যে আছে বন্যা, খরা, ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস, নদীভাঙন, ভূমিধস, ভূমিকম্প ইত্যাদি। এসব প্রাকৃতিক দুর্যোগ সম্পর্কে একে একে আলোচনা করা হচ্ছে।
প্রাকৃতিক দূর্যোগ কিঃ বন্যা, ঘূর্নিঝড়, নদীভাঙ্গনের মত মানবসৃষ্ট নয় তেমন দুর্ঘটনা সমূহকে বলা হয় প্রাকৃতিক দুর্যোগ। সহজ কথায়, প্রাকৃতিকভাবে সৃষ্ট দুর্যোগসমূহ হচ্ছে প্রাকৃতিক দুর্যোগ। সাধারণত, ভৌগালিক কারণে প্রাকৃতিক দুর্যোগ সৃষ্টি হয়ে থাকে৷ প্রাকৃতিক দুর্যোগের মাত্রা ছোট হোক কিংবা বড় এর ক্ষতিকর প্রভাব পরিবেশ ও মানবজীবনের উপর দীর্ঘদিন থেকে যায়।
বাংলাদেশে প্রাকৃতিক দুর্যোগ - বাংলাদেশের প্রাকৃতিক দুর্যোগের নাম
পৃথিবীর অন্যান্য দেশগুলোর মতো বাংলাদেশেও প্রাকৃতিক দুর্যোগ আঘাত হানে। ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে প্রাকৃতিক বিপর্যয় এখানে নিয়মিত। এদেশের মানুষ তাই অনেকটা অভ্যস্ত এবং পরিচিত এসব দুর্যোগের সাথে। বাংলাদেশের প্রাকৃতিক দুর্যোগসমূহ নিচে বর্ণনা করা হলো-
- বন্যা
- ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাস
- নদী ভাঙ্গন
- ভূমিকম্প
- ভূমিধস
- খরা
১। বন্যা - বাংলাদেশে প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণ
প্লাবন বা বর্ষার ভয়াল রূপ হলো বন্যা। নদী-মাতৃক বাংলাদেশের বন্যা একটি অন্যতম প্রাকৃতিক দুর্যোগ হিসেবে চিহ্নিত। মৌসুমী বায়ুর প্রভাবে প্রচুর বৃষ্টিপাতের ফলে এদেশের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়। কখনো কখনো বন্যা ভয়াবহ রূপ নিয়ে দেশের ব্যাপক জনপদকে প্লাবিত করে।
বিগত পাঁচ দশক থেকে বন্যা বাংলাদেশের একটি বার্ষিক ব্যাপারে পরিণত হয়েছে। ১৯৫৪, ৫৫ ও ৬৪ সালের বন্যা এদেশের মানুষের মনে এখনো বিভীষিকা রূপে বিরাজমান। ১৯৫৫ ও ১৯৬৪ সালের বন্যায় বাংলাদেশের প্রায় সব অঞ্চল মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। ১৯৭০ ও ১৯৭৪ সালের বন্যার বিভীষিকাও মানুষের মনে দাগ কেটে আছে। ১৯৭০ সালের বন্যা দেশের ব্যাপক অংশ প্লাবিত করে।
১৯৮৮ সালে দেশের ৬৪টি জেলার মধ্যে ৫৩টি জেলাই বন্যা কবলিত হয়। ১৯৮৮ সালের বন্যা রাজধানী ঢাকাসহ পুরো দেশের মানুষকে বন্দী করে দেয়। ১৯৯৮ সালের বন্যাও দীর্ঘস্থায়ী ছিল। এ সময়ে অপরিবর্তিত অবস্থায় পাঁচ মাস পানিবন্দী জীবন যাপন করেছে লক্ষ লক্ষ দুর্গত মানুষ। এই বন্যার ক্ষয়ক্ষতি ও দুর্ভোগ ছিল সীমাহীন।
১৯৯৮ সালের বন্যা ফসল হানি, প্রাণহানি, সম্পদের ক্ষয়ক্ষতি ও স্থায়িত্বের দিক থেকে ছিল শতাব্দীর সবচেয়ে ভয়াবহতম প্রাকৃতিক দুর্যোগ। এই বন্যায় ঘরবাড়ি, রাস্তাঘাট, ব্রিজ-কালভার্ট, কৃষি, শিল্পখাতসহ অন্যান্য খাতে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ কয়েক হাজার কোটি টাকা।
২০০১, ২০০২, ২০০৪ ও ২০০৭ সালের বন্যাতেও মানুষ, গবাদিপশু ও ফসলের মারাত্মক ক্ষতি হয়। ২০০৪ সালের বন্যায় ২২০ জনের প্রাণহানি ঘটে। সরকারি হিসাব মতে এ বন্যায় আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ ৪০ হাজার কোটি টাকা।
বর্ষাকালে অতিবৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলের কারণে নদীর পানি বৃদ্ধি পায়। এর ফলে বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বন্যা দেখা দেয়। বন্যাকবলিত অঞ্চলগুলোতে মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত হয় এবং ফসলের ক্ষতি হয়। বন্যার ফলে জনপদের ঘরবাড়ি ও রাস্তাঘাট নষ্ট হয়। বহু গৃহপালিত পশু প্রাণ হারায়।
আরো পড়ুনঃ বাংলাদেশের সেরা মসজিদ
২। ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাস - বাংলাদেশে প্রাকৃতিক দুর্যোগ
বাংলাদেশে ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাস এক ভয়াবহ প্রাকৃতিক দুর্যোগ। ঘূর্ণিঝড় এক ধরণের উষ্ণ কেন্দ্রিয় লঘুচাপ, যার চতুর্দিকে উষ্ণ ও আর্দ্র বাতাস প্রচন্ডভাবে ঘুরতে থাকে। একটি পূর্ণাঙ্গ ঘূর্ণিঝড় প্রবাহিত হওয়ার সময় অতিক্রান্ত এলাকায় তিন ধরণের প্রভাব বিস্তার করে। ক) প্রবল বাতাস, খ) বন্যা ও গ) জলোচ্ছ্বাস।
ঘূর্ণিঝড়ের সময় সমুদ্রের পানি স্ফীত হয়ে ঘূর্ণিঝড়ের সঙ্গে উপকূলের কাছাকাছি যে উঁচু ঢেউয়ের সৃষ্টি করে তাকেই জলোচ্ছ্বাস বলা হয়। ঘূর্ণিঝড় উপকূল অতিক্রম করার সময় উঁচু জলোচ্ছ্বাস উপকূলবর্তী এলাকার অসংখ্য প্রাণহানি ও সম্পদের বিনাশের কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
বছরের এপ্রিল - মে ও অক্টোবর - নভেম্বর মাসের দিকে বাংলাদেশে ছোটো – বড়ো নানা ধরনের ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানে। ঘূর্ণিঝড়ে বাতাসের তীব্রতা থাকে খুব বেশি। এর ফলে কখনো কখনো সমুদ্রে জলোচ্ছ্বাসের সৃষ্টি হয়।
এ ধরনের দুর্যোগ প্রায় প্রতিবছরই চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, নোয়াখালী, বরিশাল, খুলনা প্রভৃতি উপকূলবর্তী এলাকায় ও দ্বীপসমূহে আঘাত হানে। এর নিষ্ঠুর আঘাতে হাজার হাজার মানুষের প্রাণহানি ঘটে। আশ্রয়হীন হয় লক্ষ লক্ষ মানুষ।
বিপন্ন হয় মানুষ নিসর্গ ও বিপর্যস্ত হয় লোকালয়। মানুষ পতিত হয় অবর্ণনীয় দুঃখ - দুর্দশায়। লবণাক্ততার জন্য প্লাবিত এলাকার ভূমি চাষের অযোগ্য হয়ে পড়ে। ফসলের ক্ষয়ক্ষতির কারণে কৃষি উৎপাদন মারাত্মকভাবে ব্যাহত হয়।
জলোচ্ছ্বাসের সময় খাদ্য, আসবাবপত্র ও অন্যান্য দ্রব্যাদি বানের জলে ভেসে যায়। গাছ-পালা উৎপাটিত হয়, জমির ফসল বিনষ্ট হয়, পশুপাখি প্রাণ হারায়, জলাশয় ও নলকূপের পানি দুষিত হয়ে জনজীবনের বিপর্যয় ডেকে আনে।
১৯৭০ সালে বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলের উপর দিয়ে প্রবাহিত ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসে ৩ লক্ষ লোকের মৃ- ত্যু হয়। ১৯৭০ সালে মেঘনা মোহনায় প্রবল ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসে প্রায় তিন লক্ষ মানুষ প্রাণ হারিয়েছিল। ১৯৯১ সালে বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চল দিয়ে বয়ে যাওয়া প্রচণ্ড ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসে দেড় লক্ষ মানুষের মৃ- ত্যু হয়।
২০০৭ সালে দেশের দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলে আঘাত হানে ঘূর্ণিঝড় ' সিডর '। ২০০৭ সালের নভেম্বর মাসে বঙ্গোপসাগরে সৃষ্টি ঘূণিঝড় সিডর বাংলাদেশে মারাত্মক দুর্যোগপূর্ণ পরিস্থিতির সৃষ্টি করে। এতে প্রায় এক হাজার লোকের প্রাণহানি ঘটে। ছয় লক্ষ টনেরও বেশি ধান নষ্ট হয়, ছিয়ানব্বই হাজার ঘরবাড়ি ধ্বংস এবং একুশ হাজার হেক্টর জমির ফসল নষ্ট হয়। এছাড়া সুন্দরবনের অনেক প্রাণী মারা যায়।
এছাড়া ২০০৯ সালের মে মাসে উত্তর ভারত মহাসাগরে জন্ম নেয়া ঘূর্ণিঝড় আইলার আঘাতে বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। ২০০৯ সালের ঘূর্ণিঝড় ' আইলা ' ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি সাধন করে। বিশ্বের অন্যতম প্রাকৃতিক ঐতিহ্য সুন্দরবন এই দুই ঘূর্ণিঝড়ে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
এসব ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে দেশের অভ্যন্তরেও অপূরণীয় ক্ষয়ক্ষতি হয়। প্রায় দুই লক্ষ একর জমি লোনা পানিতে তলিয়ে যায়। খুলনা, সাতক্ষীরার উপকূলীয় অঞ্চলে প্রাণ হারায় প্রায় দুইশত মানুষ। ৮০টি পরিবারের প্রায় ৫০০ মানুষ হয় গৃহহীন।
আরো পড়ুনঃ থার্টি ফার্স্ট নাইট এর ইতিহাস
৩। নদী ভাঙ্গন - বাংলাদেশে প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণ
নদীমাতৃক বাংলাদেশের বুকে ছোটো বড়ো বহু নদী প্রবহমান। নদীর ধর্মই হলো এক কূল ভাঙা আর অন্য কুল গড়া নদীর এই ভাঙা - গড়ার খেলায় এ দেশের কত মানুষকে যে বাস্তুচ্যুত হতে হয়, তার ইয়ত্তা নেই। নদীর তীরে বাস করা মানুষের ঘরবাড়ি, সহায় - সম্বল নদীর গর্ভে বিলীন হয়ে যায়। এই দুর্যোগের কবলে পড়ে মানুষ উদ্বাস্তুর জীবন যাপন করে এবং কিছু কালের জন্য হলেও হয়ে পড়ে ঠিকানাবিহীন।
নদী-মাতৃক বাংলাদেশে অসংখ্য ছোট-বড় নদী জালের মতো বিস্তৃত হয়ে আছে। বর্ষা মৌসুমে প্রতিটি নদীই খরস্রোতা ও বেগবান হয়। নদীর চিরন্তন ধর্মই হলো একূল ভেঙে ওকূল গড়া। এ দেশের বড় বড় নদীসমূহ যেমন পদ্মা, মেঘনা, যমুনা, ব্রহ্মপুত্র বর্ষা মৌসুমে ভয়ঙ্কর সর্বনাশা রূপ ধারণ করে।
প্রতি বছরই নদীর ভাঙনে প্রচুর সম্পদ, স্থলভূমি ও জনপদ নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায়। নদীমাতৃক বাংলাদেশে নদী-ভাঙন এক সর্বনাশা প্রাকৃতিক দুর্যোগ। এ দুর্যোগে প্রতি বছরই বহুলোক ঘরবাড়ি, বসত-ভিটা, জমি-জমা হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে উদ্বাস্তু জীবন যাপন করছে।
৪। ভূমিকম্প - বাংলাদেশে প্রাকৃতিক দুর্যোগ
অন্যান্য দুর্যোগের মতো ভূমিকম্পও বাংলাদেশে মাঝে মাঝে আঘাত হানে। ভূমিকম্পের মাত্রা বেড়ে গেলে ঘরবাড়ি, রাস্তাঘাট ভেঙে পড়ে। তাতে যোগাযোগ ব্যবস্থার অবনতি ঘটে। গত একশো বছরে বাংলাদেশে মারাত্মক কোনো ভূমিকম্প হয়নি। তবে অপরিকল্পিত নগরায়ণের কারণে যে কোনো সাধারণ ভূমিকম্পেও ঢাকা চট্টগ্রামসহ বড়ো বড়ো শহর মারাত্মক ক্ষতির মুখোমুখি হতে পারে।
বাংলাদেশে এ পর্যন্ত বড় ধরণের কোনো ভূমিকম্প হয়নি। তবে বহুবার হালকা কম্পন অনুভূত হয়েছে। রিখটার স্কেলে এ কম্পন বিপদসীমা না পেরোলেও গবেষকগণ এ দেশে শক্তিশালী ভূমিকম্পের আশঙ্কা করছেন। এখানে হালকা ভূমিকম্প এতো নিয়মিত হচ্ছে যে, যেকোনো সময় বড় ধরণের ভূমিকম্প হতেও পারে।
এ সময়ে মানুষ তাই সবচেয়ে বেশি শঙ্কিত সম্ভাব্য ভূমিকম্পের জন্য। কারণ এদেশের নগর পরিকল্পনা ও ভূমি মোটেও ভূমিকম্প প্রতিরোধসম্পন্ন নয়। একটু জোরে কম্পন হলেই ক্ষয়ক্ষতির মাত্রা চরমে পৌঁছে যাবে।
আরো পড়ুনঃ অলিম্পিক গেমের ইতিহাস
৫। ভূমিধস - বাংলাদেশের প্রাকৃতিক দুর্যোগ
ভূমিধস বাংলাদেশের একটি প্রাকৃতিক দুর্যোগ, যা পাহাড়ি এলাকায় সংঘটিত হয়। চট্টগ্রাম, রাঙামাটি বান্দরবান, খাগড়াছড়ি, কক্সবাজার, সিলেট প্রভৃতি পাহাড়ি অঞ্চলে প্রায় প্রতি বছর ভূমিধসের ঘটনা ঘটে। পাহাড়ের গায়ে অপরিকল্পিতভাবে গৃহ নির্মাণের কারণে ভূমিধসে অনেক প্রাণহানির ঘটনা ঘটে। প্রবল বায়ুপ্রবাহ, অধিক বৃষ্টিপাত, নির্বিচারে পাহাড় কাটা ভূমিধসের মূল কারণ।
এই ধরনের আর একটি দুর্যোগের নাম ভূমিক্ষয়। ভূমিক্ষয়ের কারণে প্রত্যক্ষভাবে মানুষের ক্ষতি হয় না বটে, তবে তা দীর্ঘ মেয়াদে মানুষের ক্ষতির কারণ হয়। ভূমিক্ষয়ের মূল কারণ অপরিকল্পিতভাবে বনের গাছ কেটে ফেলা। মাটিকে ক্ষয়ের হাত থেকে বাঁচায় গাছ; এই গাছ কেটে ফেলার ফলে প্রবল বর্ষণে মাটির উপরের স্তর ক্ষয়ে যায়। এতে ভূমির উচ্চতাই শুধু কমে তাই নয় জমির উর্বরতাও নষ্ট হয়।
৬। খরা - বাংলাদেশে প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণ
দেশের উত্তরাঞ্চলে খরা একটি প্রাকৃতিক দুর্যোগ। অনাবৃষ্টি এবং পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ার ফলে এই অবস্থার সৃষ্টি হয়। এর ফলে ফসলের ক্ষেত, এমনকি গাছপালাও পানির অভাবে শুকিয়ে যায়।
মাটিতে পানির পরিমাণ কমে যাওয়াতে সেখানে মরুভূমির লক্ষণ দেখা দিচ্ছে। প্রতি বছরই বিপুল পরিমাণ ফসল নষ্ট হচ্ছে খরায়। এতে খাবারের প্রকট সংকট দেখা দিচ্ছে, মঙ্গায় মারা যাচ্ছে অনেক মানুষ।
দুঃখের বিষয় হলেও সত্য যে, নদীবহুল হওয়া সত্ত্বেও বাংলাদেশের বিশাল এলাকা প্রতিবছর খরায় আক্রান্ত হচ্ছে। বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের নদীগুলো প্রায় শুকিয়ে গেছে। এর প্রভাবে প্রায় পুরো উত্তরাঞ্চলে সেচের অভাব পড়েছে।
বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ করার পরে রাজশাহী বিভাগ ও রংপুর বিভাগের কিছু অঞ্চলে খরাকে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয়েছে। তবে এখনো উত্তরাঞ্চলের বহু জেলায় খরা পরিস্থিতি মানুষের জীবনকে দুর্বিষহ করে তোলে। অত্যধিক তাপদাহে নানা রোগ বালাইয়ের প্রাদুর্ভাব ঘটে। বিশুদ্ধ খাবার পানির অভাবে মানুষের ও পশুপাখির কষ্ট হয়।
বাংলাদেশে প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণ
প্রাকতিক দুর্যোগের কারণঃ বিজ্ঞানীরা প্রাকতিক দুর্যোগের কারণ হিসেবে জলবায়ু পরিবর্তনকে চিহ্নিত করে থাকে। প্রাকতিক দুর্যোগের সম্ভাব্য কিছু কারণ নিম্নে উল্লেখ করা হলঃ
- গ্রিন হাউস গ্যাসের পরিমাণ বেড়ে যাওয়া
- কলকারখানা ও গাড়ি থেকে অতিমাত্রায় কার্বন ডাইঅক্সাইড নিঃসরণের ফলে বায়ুমণ্ডলের ওজোন স্তর ক্ষয়ে যাওয়া
- মেরু অঞ্চলের বরফ গলে যাওয়ার ফলে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি পাওয়া
- পলিমাটির কারণে নদী ভরাট হওয়া
- একের পর এক বন উজাড়।
বাংলাদেশে সৃষ্ট প্রাকৃতিক দুর্যোগের ধরনঃ বাংলাদেশ প্রায় প্রতিবছরই কোন না কোন প্রাকৃতিক দুর্যোগের সাক্ষী হয়। সৃষ্ট প্রাকৃতিক দুর্যোগ সমূহকে তিনভাগে ভাগ করা যেতে পারেঃ
- বায়ুমণ্ডলে সংঘটিত দুর্যোগ (ঝড়, ঘূর্ণিঝড়, হারিকেন, টর্নেডাে, কালবৈশাখি, অতিবৃষ্টি ইত্যাদি)
- ভূপৃষ্ঠে সৃষ্ট দুর্যোগ (ভূমিধস, নদীভাঙন, বন্যা, ভূ-অভ্যন্তরস্থ পানিদূষণ প্রভৃতি।)
- ভূ-অভ্যন্তরে সৃষ্ট দুর্যোগ (ভূমিকম্প, অগ্ন্যুৎপাত। যদিও বাংলাদেশে অগ্ন্যুৎপাতের সম্ভাবনা নেই৷)
প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলায় করণীয় - প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলায় করণীয় কি কি
প্রাকৃতিক দুর্যোগের ব্যাপারে আমরা অনেকটা অসহায়। যেমন- ভূমিকম্প বা জলোচ্ছ্বাস ঠেকানোর ক্ষমতা আমাদের নেই। কিন্তু যথাযথ পূর্বপ্রস্তুতি, উদ্ধার তৎপরতা ও দুর্যোগ পরবর্তী কার্যক্রমের মাধ্যমে ক্ষয়ক্ষতি সহনীয় পর্যায়ে আনা যায়। প্রাকৃতিক দুর্যোগের সম্ভাবনা কমানো ও ক্ষয়-ক্ষতি সহনীয় পর্যায়ে আনার জন্য কিছু প্রস্তাবিত পদক্ষেপ হলো-
- অগভীর নদী ড্রেজিং করতে হবে
- রাস্তাঘাট মজবুত করে বানাতে হবে
- ঝুঁকিপূর্ণ নদীর তীরে বাঁধ নির্মাণ করতে হবে
- প্রয়োজনীয় আশ্রয় কেন্দ্র নির্মাণ করতে হবে
- সম্ভাব্য দুর্যোগের ব্যাপারে ব্যাপক প্রচার চালাতে হবে
- যথাযথভাবে দুর্যোগ মোকাবেলার পরিকল্পনা করতে হবে
- জনগণকে দুর্যোগ মোকাবেলায় সচেতন করে তুলতে হবে
- দুর্যোগ পরবর্তী ত্রাণ দ্রুত ভুক্তভোগীদের কাছে পৌঁছাতে হবে।
উপরের ব্যবস্থাগুলো গ্রহণ করা হলে দুর্যোগে ক্ষয়-ক্ষতির পরিমাণ অনেক কমবে বলে আশা করা যায়। এসবের জন্য অবশ্যই জাতীয় দুর্যোগ মোকাবেলার পরিকল্পনা থাকতে হবে। সেই সাথে লাগবে আগাম প্রস্তুতি।
প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও মোকাবেলা
দুর্যোগ মোকাবেলায় বাংলাদেশ সরকার সব সময়েই প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করে থাকে। এজন্য দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ব্যুরো নামে সরকারের একটি সংস্থা রয়েছে। প্রচার মাধ্যমগুলোও দুর্যোগকালের পূর্বপ্রস্তুতি ও সম্ভাব্য মোকাবেলার বিষয়টি দেশের প্রান্তিক পর্যায় পর্যন্ত প্রচারের ব্যবস্থা করে। দুর্যোগের আগে ও পরে সরকারের সবগুলো সংস্থা সতর্ক থাকে, যাতে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ যথাসাধ্য কমিয়ে রাখা যায়।
বাংলাদেশের প্রাকৃতিক দুর্যোগের নাম
- বন্যা
- ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাস
- নদী ভাঙ্গন
- ভূমিকম্প
- ভূমিধস
- খরা ইত্যাদি।
বাংলাদেশে প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলা ব্যাবস্থা
প্রতি বছর ছোট-বড় দুর্যোগের সাথে লড়তে হয় বাংলাদেশকে। তাই এদেশে যথাযথ দুর্যোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা থাকা আবশ্যক, বাংলাদেশ ইতোমধ্যে বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে। এগুলো হলো:-
- ১৯৯৫ সালে বাংলাদেশ জাতীয় পরিবেশ ব্যবস্থাপনা কর্ম পরিকল্পনা গৃহীত হয়েছে। এতে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা নীতিমালা নির্ধারণ করা হয়েছে।
- নদী শাসনের মাধ্যমে বন্যা প্রতিরোধের জন্য Flood Action Plan প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। যেখানে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার বিষয় অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
- উপকূলীয় ঘূর্ণিঝড় পুনর্বাসন প্রকল্পে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্মসূচির ওপর জোর দেওয়া হয়েছে।
- বহু সংখ্যক উপকূলীয় আশ্রয় কেন্দ্র নির্মাণ করা হয়েছে।
- উপকূলীয় বনায়ন প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে।
- দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কাজ সমন্বয় করার জন্যে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ব্যুরো প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
- দুর্যোগের ক্ষয়ক্ষতি কমানোর জন্যে ব্যাপক প্রচার করা হচ্ছে জনগণের সচেতনতা সৃষ্টির জন্যে।
বাংলাদেশের প্রাকৃতিক দুর্যোগ কয়টি
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা-সংক্রান্ত জাতীয় পরিকল্পনায় মোট ১২টি প্রাকৃতিক দুর্যোগের কথা উল্লেখ আছে।
বাংলাদেশের প্রাকৃতিক দুর্যোগ নিয়ে কবিতা
দুর্যোগ
আব্দুল মান্নান মল্লিক
রণ-সাজে সাজলো গগন সূর্য গেল ঢাকি,
নিগ্রো মেঘের আড়াল হতে বিদ্যুৎ মারে উঁকি।
রক্তে রাঙা আকাশ ভাবি খেলছে রঙের হোলি,
মেঘের গর্জন ঝড়ের তান্ডব চলছে সেথা কলি
তান্ডব লীলাই মাতাল গগন ধরণী হলো অন্ধ,
মাঠের মানুষ দাঁড়িয়ে পড়ে করলো কেতন বন্ধ।
মেঘের গর্জন শুনে সবে ফিরছে নিজের ঘর,
কেউ ছুটতে খাচ্ছে হোঁচট পড়ছে কারো উপর।
পালের গরু ভয়েতে সব হারিয়ে ফেলে পথ,
দিশা হারিয়ে ছুটছে যেন আকাশ পথের রথ।
গোঁ-গোঁড়ামী ঝড়ের তান্ডব বৃষ্টির সঙ্গে শিল,
শিল নয়তো হবে হয়তো টুকরো পাথর ঢিল।
দুর্যোগের এই দুর্দিনে আজ কে কাহারে দেখে,
মাঠের রাখাল ছুটে পালায় ঘাসের বোঝা রেখে।
বিদীর্ণ বক্ষে লোহিত রঙে রঙিন হলো নভ,
নেইতো শান্ত চলছে অনন্ত দূর্যোগ এক অভ।
বিরাম মাঝে গর্জে ওঠে কড়-কড় কড়,কড়,
গগণ ফাটিয়ে ছুটছে আগুন ভূ-পৃষ্ঠের পর।
অগ্নি ছুটে পড়লো এসে তাল গাছটির মাথায়,
দপাং করে জ্বলে উঠলো গাছের কাঁচা পাতায়।
অগ্নি বারুদ কোথা আছে নেইকো কারো জানা,
আঘাত সদা ছলছে হেথা শোনেনা কারো মানা।
উপসংহার
এক সময়ে মানুষ প্রকৃতির খেয়ালখুশির উপর নিজেদের ছেড়ে দিতে বাধ্য হতো। কিন্তু মানুষ এখন ক্রমান্বয়ে প্রকৃতিকে নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছে। ভূমিকম্পের আগামবার্তা এখনো আবিষ্কার করা সম্ভব না হলেও ভূ উপগ্রহের মাধ্যমে মানুষ এখন ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাসের মতো দুর্যোগের আগাম খবর পায়। অচিরে হয়তো ভূমিকম্পের আগাম বার্তাও পেয়ে যাবে। হয়তো সেদিন আর দূরে নয়, যখন প্রকৃতির যাবতীয় দুর্যোগকে মানুষ তার প্রযুক্তি দিয়ে নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে।
ভৌগোলিক অবস্থান এবং বিশেষ বৈশিষ্ট্যপূর্ণ জলবায়ুর কারণে বাংলাদেশে প্রতি বছরই কোনো না কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ আঘাত হানে। বর্তমানে প্রাকৃতিক দুর্যোগের বিপুল ক্ষয়ক্ষতি এড়াবার পক্ষে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় দুর্যোগ মোকাবেলার দিকটিকে বিশেষভাবে গুরুত্ব দিচ্ছে।
প্রাকৃতিক দুর্যোগসমূহ পুরোপুরি প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব না হলেও এগুলো মোকাবেলার উপায় জানা থাকলেও জীবন ও সম্পদের ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ অনেকাংশে কমিয়ে আনা সম্ভব।
আর্টিকেল সম্পর্কিত তথ্য জানতে কমেন্ট করুন। আপনার প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।